A woman is writing in a notebook. close-up. copyspace
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছেন? এই তথ্য ও পরামর্শ আপনার জন্য
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অনেকেরই স্বপ্নের পেশা। আপনি হয়তো ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে নির্মিত “অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন” কিংবা হালের “দ্য পোস্ট”, “স্পটলাইট” এবং “শি সেইড” এর মতো চলচ্চিত্র দেখেছেন। হলিউড অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেছে- নির্ভীক কোনো সাংবাদিক নিষিদ্ধ কোনো গল্পকে খুঁড়ে বের করতে যুদ্ধ করছেন। চলচ্চিত্রগুলোয় কিছু সত্য আছে, যা অনেককেই এ পেশার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। যদিও বাস্তবের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জীবন আরও অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় ও কঠিন।
রাতারাতি কেউ অনুসন্ধানী সাংবাদিক বনে যায় না। প্রথাগত রিপোর্টিং পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি হয় এখনও। তবে নতুন টুল আর উদ্ভাবনী কৌশলগুলো কাজে লাগিয়ে একজন সাংবাদিক তাঁর দক্ষতা বাড়াতে পারেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক হওয়াটা কারো সাধ্যের বাইরে নয়। কিন্তু এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। সাংবাদিকতার স্কুলে গিয়ে বা শিক্ষানবিশ হিসেবে আপনি তা শিখতে পারেন। শিখতে পারেন বিনামূল্যের অনলাইন রিসোর্সের থেকেও। অন্য বিকল্পটি হচ্ছে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ‘কাজ করতে করতে’ শেখা। কেবল প্রশিক্ষণ দিয়েই হবে না, অন্য যে কোনো পেশার মতো এখানেও আপনার প্রয়োজন ভাগ্য। ঠিক সময়ে ঠিক মানুষদের সঙ্গে পরিচয়। আর কিছু ভালো মেন্টর।
আপনি কী সাংবাদিকতা বা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পড়তে আগ্রহী? কিংবা একজন সাংবাদিক বা স্ব-শিক্ষিত প্রতিবেদক? আরও গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্পর্কে শিখতে চান? অথবা হতে চান একজন দক্ষ ডেটা সাংবাদিক? এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন প্রদান করেন এমন শিক্ষাবিদ ও অনুসন্ধানী রিপোর্টারদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে রিসোর্স আকারে আপনাদের জন্য এ লেখাটি সাজিয়েছে জিআইজেএন।
১. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরি
টম রোজেনস্টিল ও বিল কোভাচ “দ্য এলিমেন্টস অব জার্নালিজম” বইয়ে লিখেছেন, সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র জনসাধারণকে নির্ভরযোগ্য, প্রাসঙ্গিক এবং সত্য তথ্য দেওয়া। এভাবে তাদের সচেতন নাগরিক হিসাবে ক্ষমতায়ন করা সম্ভব হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আসলে কী? জিআইজেএন থেকে এ পেশার সংজ্ঞা হিসেবে যেমন বলা হয়েছে, “অনুসন্ধান” শব্দটির অভিধানিক অর্থ “পদ্ধতিগত” বিশেষণের সঙ্গে সংযোগ; যেখানে মিশে আছে মৌলিক গবেষণা ও রিপোর্টিং। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি এমন কিছু তথ্য সামনে আনে, কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যা সবসময় গোপন রাখতে চায়। তাই কোনো অনুসন্ধান থেকে যদি নতুন কিছু উঠে না আসে, তা কোনো ভাবেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নয়।
কিন্তু সাবধান, সাধারণ নথি ফাঁস করাটা আবার অনুসন্ধান হবে না। নথি ফাঁস থেকে বরং অনুসন্ধানের শুরু হতে পারে। যেমন #পানামাপেপারস, #লাক্সলিকস, বা #উবারফাইলসের অনুসন্ধানে শুরু বড় রকমের তথ্য ফাঁসের ঘটনা দিয়ে। সাংবাদিকেরা এ নথিগুলো বিশ্লেষণ করেছেন এবং সোর্সদের মুখ থেকে কথা বের করে ছেড়েছেন।”
২. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা “আপনার জন্য”— নিশ্চিত হন
কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ান অধ্যাপক ক্লাউডিন ব্লেইস। তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের মধ্যে সবাই কিন্তু অনুসন্ধানী রিপোর্টার হওয়ার মতো মেজাজ ধরে রাখতে পারেন না। তিনি রেডিও-কানাডার এনকুয়েটের প্রাক্তন এডিটর-ইন-চিফ। ক্লাউডিন বলেন,তাঁর ছাত্রদের মধ্যে কারা অনুসন্ধানী রিপোর্টিং করতে পারবেন তিনি তা খুব দ্রুত ধরতে পারেন।
তিনি আরও জানান, “আমার ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই ফোন করেন। অপর পক্ষের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পান না। এরপর হাল ছেড়ে দেন। আমিও বুঝে যাই ওদের দিয়ে কিছু হবে না। এখানে আপনাকে লেগে থাকতে হবে। জোরাজুরি করতে হবে। এক, দুইবার নয়, কমপক্ষে ২০ বার ফোন করতে হবে। দ্রুত হাল ছাড়া যাবে না। কৌশলের সঙ্গে সমস্যার সমাধান বের করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “কেউ ”না” বলার আগে আপনাকে সুকৌশলে তাকে থামিয়ে দিয়ে মনোযোগ ঘুরিয়ে দিতে জানতে হবে।
৩. মনে রাখবেন— এটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ
“আপনি যদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন—তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিন,” বলেন হামাদু টিডিয়ান সাই। তিনি পশ্চিম আফ্রিকার নরবার্ট জঙ্গো সেল ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অবস্থিত ই-জিকম স্কুল অব জার্নালিজমের পরিচালক।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “ভালো সাংবাদিকতা করাটা কঠিন, আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আরও বেশি কঠিন। “আপনি যদি মনে করেন কেউ একটি ’গোপন ফাইল’ আপনাকে দেবে, আর আপনার কাজ হচ্ছে তা প্রকাশ করা। কাজটা কিন্তু মোটেই এমন সহজ নয়। মনে রাখবেন অনুসন্ধান প্রকাশের আগে তা কয়েকধাপে যাচাই-বাছাই করার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া আপনাকে অনুসরণ করতে হবে।”
জিআইজেএনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিষয়ক বিভাগ ‘হাউ দে ডিড ইট’, যেখানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির পর্দার আড়ালের গল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ থেকে আপনি ধারণা পাবেন, একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির পেছনে আপনার কতটা সময় ও শ্রম দিতে হবে।
৪. সবসময় মনে রাখবেন: নীতি-নৈতিকতা
সাংবাদিকতার প্রতিটি ক্ষেত্রে “নৈতিকতা চর্চা” জরুরী— বলেন পিনার দাগ। তিনি জিআইজেএনের তুর্কি সম্পাদক। পাশাপাশি ইস্তাম্বুলের কাদির হাস বিশ্ববিদ্যালয়েল একজন প্রভাষকও।
“তথ্য সংগ্রহ, রিপোর্টিং এবং ব্যাখ্যা তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সৎ, ন্যায্য এবং সাহসী হতে হবে,” বলেন তিনি।
“অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নৈতিকতা চর্চার একটি দিক হল ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমানোর জন্য দুর্বল গোষ্ঠী, শিশু, প্রাণী, সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর ব্যাপারে যত্নশীল ও সংবেদনশীল হওয়া। আপনার অনুসন্ধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, পরিবারের এমন সদস্যদের না জড়ানো,” পরামর্শ দেন তিনি।
শুধু নীতি অনুসরন নয়, নৈতিক মান বজায় রাখা আপনার অনুসন্ধানকে আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। জিআইজেএন নিয়মিতভাবে এ বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশ করে, যেমন স্টোরি পাওয়ার জন্য সাংবাদিক কি আদৌ মিথ্যা বলতে পারেন? আমাদের সিটিজেন ইনভেস্টিগেশন গাইডের নীতিশাস্ত্রের অধ্যায়টিও এ বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছে।
৫. পড়ুন, শুনুন ও দেখুন
অনুকরণ নয়, অনুপ্রেরণাই প্রতিটি পেশাকে এগিয়ে দেয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাও এর বাইরে নয়। আজ আপনি যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো পড়ছেন বা দেখছেন, তিন, পাঁচ, বা দশবছর পর এগুলোই আপনার নিজের অনুসন্ধানের খোরাক হবে। কেননা, বর্তমানের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ধরনগুলো অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। তাই হালের এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো পড়া, দেখা, এবং শোনাটাও একটি মৌলিক কাজ যা আপনাকে ভবিষ্যতে একজন ভালো অনুসন্ধানী সাংবাদিক হওয়ার জন্য দক্ষ করে তুলবে।”
সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে জিআইজেএনের বৈশ্বিক নিউজলেটার (ইংরেজিতে) বা অন্যান্য ভাষায় প্রকাশিত সাতটি আঞ্চলিক নিউজলেটারের যেকোনো একটির সদস্য হোন। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাসিক সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের নির্বাচিত সংগ্রহ তুলে ধরা হয়। আপনার অনুসন্ধানী সাংবাদিক হওয়ার প্রচেষ্টায় অনুপ্রেরণা যোগাবে এমন অন্যান্য কিছু উৎস যেমন— জিআইজেএন এডিটর’স পিক্স সিরিজ। এখানে আমাদের আঞ্চলিক সম্পাদকেরা বছরের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নির্বাচন করেন। দেখতে পারেন জিআইজেএনের গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতিসরূপ তাদের এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়— যারা বিভিন্ন হুমকি, চাপ আর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও অনুসন্ধান চালিয়ে যান।
৬. গল্প শনাক্ত করতে শিখুন
‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো বিষয়বস্তু চিহ্নিত করতে শেখা,’ বলেন গায়তান গ্রাস। তিনি লা লিব্রে বেলজিকের সাংবাদিক এবং ব্রাসেলস স্কুল অব জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন, আইএইচইসিএস-এর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অধ্যাপক। ”আপনাকে সক্রিয় থাকতে হবে এবং খবরের দিকে নজর রাখতে হবে… হোক তা ব্যক্তিগত জীবনের আলাপের সময়, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে, পত্রিকা, সংবাদ সাইট বা প্রতিযোগীদের সম্পর্কে জেনে, এবং আশেপাশের পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে—এগুলো সবই আপনাকে সূত্র কিংবা সম্ভাব্য গল্পের লিড দিতে পারে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন।
ভবিষ্যতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করবেন এমন সাংবাদিকদের বিদেশি পত্রিকার সংবাদ ও শিরোনামের সঙ্গে হালনাগাদ থাকার পরামর্শ দেন: ”অন্য কোনো দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে আপনি আপনার দেশেও ভালো কিছু গল্প তুলে ধরতে পারেন,” তিনি বলেন।
জিআইজেএনের অনেক লেখা কেস স্টাডি থেকে করা, যেখানে একটি দেশে পরিচালিত অনুসন্ধানের উদাহরণগুলো বিশ্বব্যাপী অন্যত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে বেলজিয়ামের দৈনিক লে সোয়ারের অনুসন্ধানী সাংবাদিক জোয়েল ম্যাট্রিশ বলেন, “একই বিষয় নিয়ে এরইমধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বা তথ্যগুলো পাবলিক ডোমেইনে আছে, তাই গল্পটি ‘মৃত’— ভুলেও এমনটা ভাববেন না।
“এমনও হতে পারে যে, কোনো সাংবাদিক মনে করছেন উল্লিখিত ব্যাখ্যাটি সন্তোষজনক নয়, কিছু কিছু বিষয় এখনও অস্পস্ট। যা নিয়ে আরও গভীর অনুসন্ধান করা জরুরী” তিনি উল্লেখ করেন।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, কখনও কখনও আপনি দারুণ কিছু তথ্য বের করতে পারেন। আবার কোনো কিছুই যদি উদ্ধার করতে না পারেননি, তাতেও হতাশ হবেন না। কাজে নেমে আপনি হয়তো বেশকিছু ফোন করেছেন, আপনার নতুন যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, যারা আপনার ভবিষ্যৎ সোর্স হয়ে উঠতে পারে।
আপনি হয়তো আপনার অনুসন্ধানের জন্য দারুণ একটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন— কিন্তু কীভাবে বুঝবেন ? লিল স্কুল অব জার্নালিজমের ডিজিটাল ও অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান ড্যামিয়েন ব্রুনন সবসময় শিক্ষার্থীদের একটি “প্রাক-অনুসন্ধান” পরিচালনার আহ্বান জানান। যেখানে শিক্ষার্থীরা নীচের এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শুরু করবেন।
- সমস্যাটা কি?
- এ বিষয়ের ওপর কি ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয়েছে? (প্রেস রিভিউ দিয়ে আপনি পরীক্ষা করতে পারেন)
- এ বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন করতে আমার কী কী জানা প্রয়োজন? (কী ধরনের তথ্য, কোথায় গেলে সহজে পাওয়া যাবে, এবং কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হতে পারে তা বিবেচনা করুন।)
তিনি জোর দিয়ে বলেন: “আগে থেকে প্রাথমিক যাচাইবাছাই আর গবেষণা ছাড়া ভাল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয় না।”
৭. নজরে পড়ুন
নরওয়েজিয়ান অনুসন্ধানী সাংবাদিক টারজেই লির-সালভেসেন। তিনি বার্গেন এবং স্ট্যাভাঞ্জার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের সবসময় “নজরে পড়ার” পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন “নিউজরুমের কর্তারা ছাত্রদের বলেন সবকিছু একটু একটু করে শেখ, কেননা এতে তাদের কাজ সহজ হয়। তবে আমি কিন্তু এখানে অন্য কৌশলের কথা বলবো। আমার মতে সবকিছু না করে, অল্প কিন্তু উল্লেখযোগ্য কাজে হাত লাগান। যেগুলো সম্পাদকের নজরে আসবে এবং তারা পছন্দ করবে।”
তিনি তাঁর যুক্তির পক্ষে জোরালো কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন:
- আপনি ক্রীড়া সাংবাদিকতায় থাকলে এর সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদন পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধিতে মন দিন। এর ফলে আপনিই একমাত্র সাংবাদিক হবেন যিনি একটি স্পোর্টস ক্লাবের অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে পারবেন।
- আপনি যদি রাজনীতি কভার করতে আগ্রহী হন তবে পরিসংখ্যানও শিখুন। তাহলে শুধু প্রেস কনফারেন্সের কাভার করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে পারবেন। ডেটা খুঁজতে থাকুন,যা আপনাকে কোনো রাজনীতিবিদের সঙ্গে আলাপে সাহায্য করবে।
- আপনি যদি নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিটের সাংবাদিক হন, তাহলে তথ্য অধিকার আইনের (ফোয়া) বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করুন এবং আপনার প্রতিবেদনকে তথ্য উপাত্ত দিয়ে উপাস্থাপন করুন, যে সব তথ্য অন্যদের কাছে নেই।
জিআইজেএন আয়োজিত ফরাসি ভাষার একটি মাস্টারক্লাসে মিডিয়াপার্টের অনুসন্ধানী দলের সহ-প্রধান এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিক ফাব্রিস আরফি সুপারিশ করেন, একজন সাংবাদিককে একদিকে “সব কাজের কাজী” হতে হবে, অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শীও হয়ে উঠতে হবে।
“আমার বিশ্বাস, এই সংমিশ্রণটি, একজন তরুণ সাংবাদিকের জন্য, বিভাগীয় প্রধান ও সম্পাদকদের নজরে আসার একটি উপায়,” তিনি উল্লেখ করেন।
জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারে ধারাবাহিক গাইড ও বিভিন্ন প্রতিবেদন রাখা আছে। এগুলো রিপোর্টারদের সুনির্দিষ্ট বিষয় যেমন—মানব পাচার, নির্বাচন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, যুদ্ধাপরাধের ওপর অনুসন্ধান করতে শেখায়। এছাড়াও সাক্ষাৎকার নেওয়ার কৌশল, বিশেষজ্ঞ সূত্র খুঁজে বের করা, এবং দক্ষতার সঙ্গে অনলাইন অনুসন্ধান করা সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রদান করে।
চাকরির বাজারে আপনার অবস্থান শক্তিশালী করার দুর্দান্ত সুযোগ হতে পারে স্কলারশিপ বা পুরষ্কার জয়। নিয়মিত অনুদান এবং ফেলোশিপের হালনাগাদ তালিকা দেয় জিআইজেএন।
৮. লেখার সময়, পাঠকদের কথা ভাবুন
সাংবাদিকতার স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী বার্তাকক্ষগুলোতে বারবার বলা কথাটি হচ্ছে ‘পাঠকদের কথা ভাবুন।’
পাঠকের কথা মনে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিবেদনটি যেন সহজে পড়া যায়, পড়তে গিয়ে তাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় এবং তারা তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।
“আপনি মাসের পর মাস কাজ করেছেন—এমন একটি বিষয়কে সহজে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে হবে। তাই অপ্রয়োজনীয় বিবরণে ভাসানো প্রতিবেদন লেখা থেকে বিরত থাকুন। মাসের পর মাস বসে আপনি যে বর্ণনাগুলো লিখেছেন, কোনো মায়া না করে প্রয়োজনে তাও ফেলে দিন,” বলেন লা লিব্রে বেলজিকের গ্রাস।
“যখন আপনি কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখতে বসবেন, আপনাকে সংযমী হতে হবে… আমি রসকসহীন ও নিষ্ঠুর তথ্যের পক্ষে,” জিআইজেএনের মাস্টারক্লাসে বলেন ফ্যাব্রিস আরফি।
প্রতিবেদন লেখার কৌশল সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ ও কৌশল পড়ুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
৯. আপনার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন
জার্নালিজম নেটওয়ার্ক আর সংগঠনগুলো সাহায্য সহযোগিতার লক্ষ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি বন্ধু, পরামর্শদাতা, অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক এবং যোগাযোগের জন্যও খুব কার্যকর হতে পারে। যা আপনাকে সাংবাদিকতা বিষয়ক জানাশোনা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। সামাজিক নেটওয়ার্কে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চা বা সমর্থনকারীদের সাবস্ক্রাইব করুন। আপনার অঞ্চলের জিআইজেএন সদস্যদের তালিকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনার অঞ্চলে আয়োজিত সম্মেলন (যেমন ডেটাহারভেস্ট, আফ্রিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সম্মেলন, কপলিন, ইত্যাদি) অনুপ্রেরণাদায়ী সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করার দারুণ উপায়।
এ ধরনের সম্মেলনে যোগদানের প্রবেশ ফি বেশি হতে পারে। তবে এ ধরনের আয়োজনে শিক্ষার্থী হিসেবে ছাড় বা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজের বিভিন্ন সুযোগও থাকে। প্রতি দুই বছর পর পর আয়োজিত গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের কথা ভুলে গেলে চলবে না: বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অবশ্যই এতে অংশ নেওয়া উচিৎ। প্রতিটি সম্মেলনের জন্য ফেলোশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের সাংবাদিকেরা যেখানে বিনামূল্যে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
১০. সবসময় প্রশিক্ষণ নিতে থাকুন
যদি আপনি সাংবাদিকতার ছাত্র হন, তাহলে প্রশিক্ষণের সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগান! মনে রাখবেন, কাজি করতে করতেই শিখবেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং ডেটা সাংবাদিকতায় প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। যেমন (স্যাটেলাইট ছবির ব্যবহার, অনলাইনে পাওয়া যায় না এমন তথ্য বের করার কৌশল জানা, কনটেন্ট যাচাই করা, ওপেন সোর্স গবেষণা, ডেটা বিশ্লেষণ ইত্যাদি)। তাই প্রশিক্ষণ জারি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এ লেখাটি তৈরির সময় যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও এ কথা বলেন।
জিআইজেএনের রিসোর্স, যেমন আমাদের গাইড এবং টিপশীট ব্যবহার করে নিজেকে প্রশিক্ষিত করতেন পারেন। আপনি যদি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নতুন হন, তবে মামলা এড়ানো, সাক্ষাৎকার গ্রহণের কৌশল, তথ্য যাচাই, হুইসেল ব্লোয়ারদের সঙ্গে কাজ করা, ভিডিও দিয়ে শুরু করা, অনুসন্ধানী ম্যানুয়াল, এবং সূত্র খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে আমাদের রিসোর্সগুলো দেখতে ভুলবেন না।
এছাড়া বিখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের বিনামূল্যের ওয়েবিনারে দিকে চোখ রাখুন। যা, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয় ও অনুপ্রেরণা যোগায়। অথবা খ্যাতনামা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের পরামর্শ এবং পছন্দসই টুলগুলো দেখুন। সবশেষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলবো, আমাদের এক্স/টুইটার, ফেসবুক, লিঙ্কডইনের পেজ এবং মেইলিং লিস্টে সাবস্ক্রাইব করুন।
অ্যালসিওন ওয়েমার লিয়নে বসবাসকারী একজন ফরাসি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। প্যারিসে ইউরোপওয়ান এবং ফ্রান্স২৪-এর প্রাক্তন স্টাফ রিপোর্টার। বর্তমানে জিআইজেএনের ফ্রেঞ্চ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি লিয়নের ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের (সায়েন্সেস পো লিওন) সহযোগী অধ্যাপক তিনি। সাংবাদিকতার স্নাতকোত্তর কোর্সে “ডেটা এবং অনুসন্ধান” বিষয়ক বিশেষায়িত শাখার সহ-পরিচালক।