২০২৩ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের (#জিএসএলএ২৩) জন্য আবেদন গ্রহণের সময়সীমা শেষ হয়েছে। আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সুইডেনের গোথেনবার্গে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে ঘোষণা করা হয়েছে বিজয়ীদের নাম।
উন্নয়নশীল বা রূপান্তরের পথে থাকা দেশগুলোতে হুমকি, কারাবরণের ঝুঁকি বা বিপদের মধ্যে থেকে যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা হয়, তার সম্মানে প্রতি দুই বছর পর গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক। মহামারির দীর্ঘ বিরতির পরে, আমরা পুরস্কারটি ফিরিয়ে আনতে পেরে আনন্দিত, যা ১ জানুয়ারি, ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য প্রযোজ্য।
পুরস্কারটি দেওয়া হয় দুটি বিভাগে: ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান (যেখানে ফ্রিল্যান্সসহ কর্মী সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ জন বা তার কম) এবং বড় প্রতিষ্ঠান (যেখানে কর্মী ২০–এর বেশি)। শ্রেষ্ঠ হিসেবে নির্বাচিত সাংবাদিকেরা পাবেন সম্মাননা স্মারক, ২৫০০ মার্কিন ডলার, এবং সুইডেনের গোথেনবার্গে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত শত শত সহকর্মীর সামনে এই পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ।
অনেক বেশি আবেদনের কারণে, আমরা আপনাদের রিপোর্টের অনলাইন লিংক পাঠানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। কাজটির যদি কোনো উন্মুক্ত লিংক না থাকে, তাহলে আপনি সেটি গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্সে আপলোড করুন, এবং সেই লিংকটি এই ঠিকানায় শেয়ার করুন: shininglightaward@gijn.org। কোনো সমস্যায় পড়লে, আমাদের ইমেইল করুন। আপনার রিপোর্ট যদি ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় হয়, তাহলে প্রিন্ট বা অনলাইন স্টোরির সঙ্গে অবশ্যই ইংরেজিতে লেখা একটি বিস্তারিত সারাংশ জুড়ে দিতে হবে। প্রতিবেদনটি ব্রডকাস্ট হলে সঙ্গে স্ক্রিপ্টের ইংরেজি প্রতিলিপি যুক্ত করতে হবে।
এই পুরস্কারটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ২০১৯ সালে জমা পড়েছিল ২৯১টি আবেদন। সেগুলোর গুনগত মান ছিল অসাধারণ। ১২টি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মধ্য থেকে বিচারকেরা নির্বাচন করবেন তিনটি পুরস্কার এবং দুইটি শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি।
পটভূমি
প্রতিবছর কেবল সাংবাদিকতা করার জন্য বহুসংখ্যক সাংবাদিককে হত্যা করা হয় এবং আরও শত শত সাংবাদিক হামলা, কারাবন্দিত্ব বা হুমকির শিকার হন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় এমন বাধার ঘটনা উন্নয়নশীল বা উদীয়মান দেশগুলোতে অনেক বেশি দেখা যায়, আর দেখা যায় সামরিক সংঘাতের এলাকাগুলোতে। বাধার মুখেও মতপ্রকাশের চেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কারণ, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁরা উদ্ঘাটন করে চলেছেন সেই সব সত্য, যা ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অস্বস্তিকর। সাংবাদিকেরা সামনে তুলে আনছেন রাষ্ট্রব্যবস্থায় জেঁকে বসা দুর্নীতি। তাঁরা জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করছেন গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের জন্য মুখিয়ে থাকা সমাজে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বলছে, প্রতিবছর যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে যত সাংবাদিক খুন হন, তার চেয়ে বেশি খুন হন দুর্নীতি আর রাজনীতি কাভার করতে গিয়ে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জিআইজেএন সাহসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং তাঁদের কাজকে স্বীকৃতি ও সম্মান দিতে পেরে আনন্দিত। এর আগে যাঁরা এই পুরস্কার জিতেছেন, তাঁদের অসাধারণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্পর্কে এখানে জানতে পারবেন।
আবেদনের শর্ত
স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক, দল বা গণমাধ্যমের তৈরি এমন প্রতিবেদন, যা:
- উন্নয়নশীল বা রূপান্তরশীল দেশকেন্দ্রিক
- ১ জানুয়ারি ২০২১ এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২২-এর মধ্যে প্রচারিত বা প্রকাশিত
- অনুসন্ধানী ধাঁচের
- জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর এমন সমস্যা, অপরাধ বা দুর্নীতি উদ্ঘাটন করেছে
- তৈরি করতে হয়েছে আটক, কারাবরণ, ভীতি, সহিংসতা এবং হুমকির মুখে থেকে
পুরস্কারের বিভাগ
- ছোট এবং মাঝারি আউটলেট (ফ্রিল্যান্সার সহ ২০ বা তার কম কর্মী সহ প্রতিষ্ঠান)
- বড় আউটলেট (২০ জনের বেশি কর্মী সহ প্রতিষ্ঠান)
বিচার প্রক্রিয়া
দক্ষ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সমন্বয়ে তৈরি একটি আন্তর্জাতিক বিচারক-প্যানেল বিজয়ীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিচারকেরা, তাদের বিবেচনার ভিত্তিতে অসামান্য কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একাধিক বিজয়ী নির্বাচন করতে পারেন।
সাবেক বিজয়ী
২০২৩
ছোট সংবাদমাধ্যম বিভাগ
যৌথ বিজয়ী
ব্যাড ব্লাড — ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ল্যাব (উত্তর মেসিডোনিয়া)
দল: সাশকা সিতকোভস্কা, এলেনা মিত্রেভস্কা কুকোভস্কা, মায়া ইয়োভানভস্কা, দায়ানা লাজারেভস্কা, ডেভিড ইলিয়েস্কি, ট্রাইফুন সিতনিকভস্কি, ট্রাজকা আন্তনভস্কি, আতানাস ভেলকভস্কি, গোরিয়ান অ্যাটানোসভ, ম্লাদেন পাভলস্কি, ভ্লাদকো ভ্লাদিমিরভ, লুকা ব্লেজেভ, দেনিকা চাদিকভস্কা, মার্টিনা সিলিয়েনভস্কা, সার্গেই সার্চেভস্কি, বোয়ান স্টোয়েনভস্কি, আলেক্সান্দ্রা দেনকভস্কা, এবং ইভানা নাসতেস্কা।
মহামরির সময় কোভিড-১৯ থেকে মুনাফা করা নিয়ে যেসব উচ্চাভিলাষী অনুসন্ধান পরিচালিত হয়েছে, এই প্রকল্প তার অন্যতম। সম্পূর্ণ নারীদের নিয়ে নিয়ে তৈরি একটি রিপোর্টিং দল উত্তর মেসিডোনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মৃত্যু, চিকিৎসা ও রোগীদের চিকিৎসা খরচের মতো বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। বেশ কয়েকটি সমান্তরাল দৃষ্টিকোন থেকে কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধানের পর, ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ল্যাব (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের স্থানীয় সদস্য কেন্দ্র) দেখতে পায় যে, হাসপাতালটি বেশ কয়েকজন রোগীর ওপর অনুমোদনহীন ও অনিরাপদ রক্ত বিশুদ্ধকরণ চিকিৎসা চালিয়েছে, রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছে এবং সংক্রমণের ডেটায় হেরফের করেছে। কাজটির একটি চমকপ্রদ বিষয় হলো, কোভিড-১৯ চিকিৎসার গভীর কারিগরী জটিলতা এবং হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ক্রমাগত বিভ্রান্তিকর চিকিৎসা তথ্য পাওয়ার পরও রিপোর্টারেরা অবিচল ছিলেন। রিপোর্টার এবং একজন জেষ্ঠ্য সম্পাদককে ক্রমাগত অনলাইনে হয়রানি করা হয়েছে, তাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং মৃত্যুর হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কাজটি সম্পর্কে একজন বিচারক বলেছেন: “এটি একটি প্রভাববিস্তারকারী প্রতিবেদন ছিল, এবং তাদের রিপোর্টিংয়ের প্রক্রিয়া ছিল কঠোর ও পদ্ধতিগত।” আরেক বিচারক যোগ করেছেন: “আমার মনে হয়, কিছু মানুষ এই রিপোর্টারদের অনুসন্ধানকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি – এবং তারা বাজিমাত করেছেন!”
অ্যাবভ দ্য ল — ভিউফাইন্ডার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
রিপোর্টার: ডেনিয়েল নোটজা
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করা অনেক ধ্রুপদী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মতো এই কাজটিও কোনো ব্যক্তির ভুলত্রুটি নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতাকে তাদের মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছিল। কয়েক বছর ধরে চলা অনুসন্ধানী ধারাবাহিকটি ধর্ষণ, নির্যাতন, হামলা এবং এমনকি হত্যার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাব এবং দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশদের আবারও অপরাধে জড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোটিকে উন্মোচন করেছে। প্রতিশোধের ঝুঁকির পরও, এই অনুসন্ধান দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করেছে। দারুন ব্যাপার হলো, ছোট একটি অলাভজনক সংবাদমাধ্যম হলেও ভিউফাইন্ডার একটি অনন্য উন্মুক্ত ডেটাবেস তৈরি করেছে, যেখানে পুলিশের অসদাচরণ নিয়ে হাজার হাজার নিবন্ধিত অভিযোগ আছে। এবং এখানে সহজে সার্চ করা যায়। এই কাজটি প্রসঙ্গে একজন বিচারক বলেছেন, “এখানে খুবই গভীর রিপোর্টিং করা হয়েছে। এটির স্টোরিটেলিংও ছিল খুব ভালো। এবং কয়েক বাক্য পরপরই আপনি একটি লিংক দেখতে পাবেন, যেখানে রিপোর্টার প্রমাণ তুলে ধরেছে। এখানে সব ধরনের নথিপত্র ছিল।”
সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স
সিক্রেট প্রিজনার অব ঢাকা — নেত্র নিউজ (বাংলাদেশ)
দল: তাসনিম খলিল, নাজমুল আহসান, জুলকারনাইন সায়ের খান, ডেভিড বার্গম্যান এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করা চারজন সাংবাদিক।
সুইডেন থেকে পরিচালিত নির্বাসিত অলাভজনক সংবাদমাধ্যম, নেত্র নিউজের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান উন্মোচন করেছে একটি গোপন বন্দীশালার কথা। রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত এই ডিটেনশন সেন্টারে বিস্তৃত পরিসরের ভিন্নমতাবলম্বী ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের রাখা হত। এই অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র ১০ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে সাবেক বন্দীদের জবানবন্দী, বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এবং বন্দীশালার ভেতরের বদ্ধ ও অমানবিক পরিস্থিতির স্থিরচিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। একজন প্যানেলিস্ট উল্লেখ করেছেন যে নেত্র নিউজ “দেশটির আড়ালে থেকে যাওয়া বিষয়গুলো কাভার করে এবং তারা সবসময়ই ঝুঁকির মুখে থাকে। এই নির্দিষ্ট প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ চিত্র উন্মোচন করেছে, যেটি যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী সাংবাদিকতার সবচেয়ে সাহসী উদাহরণ।”
বড় সংবাদমাধ্যম বিভাগ
যৌথ বিজয়ী
কোরেডোর ফারটিভো (ফারটিভ করিডর) — আর্মান্ডোডটইনফো (ভেনেজুয়েলা) ও এল পাইস (স্পেন)
দল: জোসেফ পোলিসজুক, মারিয়া দে লস অ্যাঞ্জেলেস রামিরেজ, ও মারিয়া আন্তোনিয়া সেগোভিয়া
এই প্রকল্পটিতে উন্নতমানের ডেটা ম্যাপিং, উদ্ভাবনী সোর্সিং এবং সাহসী সরেজমিন রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলায় অবৈধ খননকার্যের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ ও আদিবাসী সম্প্রদায় কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে। পুলিৎজার সেন্টারের সহায়তায় পরিচালিত এই অনুসন্ধানটি একই সময়ে প্রকাশিত হয়েছে আর্মান্দোডটইনফো এবং স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস-এ। প্রকল্পটিতে ৩,৭১৮টি অবৈধ খননকার্যের স্থান ম্যাপের মাধ্যমে তুলে আনা হয়েছে। বিস্তৃত যে জায়গাজুড়ে এই খনিগুলো ছড়ানো আছে— তার আয়তন জার্মানির দ্বিগুন। আন্তঃসীমান্ত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো কোন পথ ধরে এসব এলাকায় যায়— সেগুলোও এখানে উঠে এসেছে। এই কাজে অনুসন্ধানী দলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) টুল, ডেটাবেস, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং প্রোগ্রাম ব্যবহার, এবং দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা পথগুলোতে সরেজমিন জরিপের মাধ্যমে এমনভাবে গল্পটি বলেছে যেখানে শক্তিশালী গ্রাফিক্সও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। একজন বিচারক বলেছেন “এই প্রতিবেদনটি আমাদের ঠিক সেদিকেই নিয়ে যায়, যেদিকে সাংবাদিকতা যাচ্ছে। এবং কাজটি এতোই বিস্তৃত পরিসরের যে, এর রহস্য উন্মোচনের জন্য তাদেরকে এআইয়ের ব্যবহার করতে হয়েছে। তা নাহলে বিষয়গুলো অদেখাই থেকে যেত।” আরেকজন বিচারক বলেছেন, “হ্যাঁ, তারা এআইয়ের মতো টুল ব্যবহার করেছে, কিন্তু সেখানে গেরিলা ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধী চক্রেরও ঝুঁকি ছিল। ফলে এটি ছিল কঠিন ও বিপজ্জনক; এবং সত্যিই সাহসী কাজ।
দ্য ব্যান্ডিট ওয়ারলর্ডস অব জামফারা — বিবিসি আফ্রিকা আই (নাইজেরিয়া)
দল: ইউসুফ আনকা, টম সাটের, জামিল মাবাই, ড্যানিয়েল অ্যাডামসন, কাই লরেন্স, কুলামা বুকার্টি, টম রবার্টস
কয়েক বছর পরপরই সাংবাদিকতায় এমন কিছু কাজ দেখা যায় যেগুলো সম্পূর্ণ অজানা এক জগতের চিত্র সামনে আনে – যেগুলো নিয়ে বহির্বিশ্বের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ। অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে দুই বছরব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে বিবিসি আফ্রিকা আই উন্মোচন করেছে নাইজেরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য জামফারায় চলমান সহিংসতা ও ডাকাতির চিত্র। এখানে প্রথমবারের মতো এই সহিংসতার উদ্দেশ্য ও কারণ দেখানো হয়েছে। এই সহিংসতায় ২০২২ সালে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই রিপোর্টিংয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল যুদ্ধবাজ গোত্রপতি ও তাদের ভুক্তভোগীদের কাছাকাছি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের অনন্য সুযোগ। একজন সাংবাদিক মোটরসাইকেলে করে বিপজ্জনক সব পথ পাড়ি দিয়েছেন এবং একাই বিপজ্জনক সেই সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছেন। বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী: “প্রচণ্ড ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে, একজন তরুণ নাইজেরিয়ান সাংবাদিক ও আইনের শিক্ষার্থী ইউসুফ আনকা দূর্গম সব অঞ্চলে ডাকাত দলের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানগেবের একটি হাইস্কুল থেকে প্রায় ৩০০ মেয়েকে অপহরণ করেছিলেন।” গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের একজন বিচারক বলেছেন, “এটি একটি দারুন কাজ, যেখানে রিপোর্টার এক পক্ষ থেকে আরেক পক্ষের কাছে ছুটে বেড়িয়েছেন, আমাদেরকে প্রেক্ষাপটগুলো জানিয়েছেন। অসাধারণ।” আরেকজন বিচারক যোগ করেছেন, “নাইজেরিয়ার জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর এই দ্বন্দ্বের একেবারে কেন্দ্রে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং তিনি কিছু ক্ষেত্রে ঠিক ঘটনাগুলো ঘটার সময়ই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদেরকে এমন সব গল্পের কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন, যেগুলো আমি আগে কাউকে বলতে শুনিনি।”
সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স
হাউ ভলান্টিয়ার্স বারিড সিভিলিয়ানস এন মাস ইন ইজিয়াম — রেডিও লিবার্টি/স্কিমস (ইউক্রেন)
দল: কিরা তলস্তিয়াকোভা, ভ্যালেরিয়া ইয়েগোশিনা, নাতালিয়া সেদলেৎস্কা, কাইরাইলো লাজেরোভিচ, পাভলো মেলনিক, ম্যাক্সিম আসায়কা, হোর্হি শাবায়েভ, এবং আনা পিতারিমোভা
গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের জন্য রেডিও লিবার্টির ইউক্রেন সার্ভিসের অনুসন্ধানী প্রকল্প, স্কিমসের পক্ষ থেকে রাশিয়ার সন্দেহজনক যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বেশ কয়েকটি দারুন প্রতিবেদন জমা পড়েছিল। সবগুলো প্রতিবেদনই তৈরি করা হয়েছিল ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে। এগুলোর মধ্য থেকে বিচারকেরা একটিকে বেছে নিয়েছেন, যেখানে শুধু খারকিভ অঞ্চলের একটি গণকবরের কথাই উন্মোচিত হয়নি, একইসঙ্গে বেসামরিক মানুষদের নির্যাতনের অনেক প্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে এবং এসব পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে রাশিয়ার কোন ব্রিগেড জড়িত ছিল, তাও সনাক্ত করা হয়েছে। রিপোর্টারেরা রাশিয়ান সৈন্যদের আলোচনাও লিপিবদ্ধ করেছে, যেখানে তাদের এসব অপরাধ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। অনুসন্ধানী দলটি নানা নথিপত্র ও ওপেন সোর্স টুল ব্যবহার করেছে। কিন্তু আবেগপূর্ণ এই শক্তিশালী প্রতিবেদনটির কেন্দ্রে ছিল স্বেচ্ছাসেবকদের সাক্ষাৎকার, যারা শত শত স্বদেশী ইউক্রেনিয়ানকে নিজ হাতে কবর দিয়েছেন। একজন বিচারক বলেছেন, “এই প্রতিবেদনটি বেসামরিক মানুষ হত্যার নাটকীয়তাকে তুলে এনেছে, যেটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রিপোর্টারদের এই দলটি একটি একক নিউজরুমে কাজ করেছেন। তাদের একেকজন একেক অঞ্চলে কাজের জন্য নিয়োজিত ছিলেন। তারা এসব অপরাধের চিত্র তুলে এনেছেন এবং রাশিয়ার কোন সেনা ইউনিট এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল সেটিও উন্মোচন করেছেন।”
২০১৯
বড় গণমাধ্যম ক্যাটেগরি
যুগ্ম বিজয়ী: “মার্ডার ইন ম্যানিলা,” র্যাপলার (ফিলিপিন্স)
দল পরিচিতি: প্যাট্রিসিয়া ইভানজেলিস্তা, কার্লো গ্যাবুকো, লিয়ান বুয়েন, র্যাম্বো তালাবং, চে হফিলেনা।
ধারাবহিক এই প্রতিবেদন তুলে ধরেছে, ২০১৬ সালে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তের তথাকথিত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কীভাবে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। র্যাপলারের ছয় মাসব্যাপী এই অনুসন্ধানে শক্তিশালী ইঙ্গিত রয়েছে, যে পুলিশের ভাড়া করা একটি গোষ্ঠীই বিচার বহির্ভূত হত্যা ঘটাচ্ছে।
যুগ্ম বিজয়ী: “#গুপ্তালিকস,” ডেইলি ম্যাভেরিক (স্করপিও ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট), আমাবুনগানে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, নিউজ ২৪, ওপেনআপ, এবং ফাইনান্স আনকভার্ড (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দল পরিচিতি: আদি ইয়াল, অ্যাড্রিয়ান ব্যাসন, এঞ্জেলিক সেরাও, অ্যান্টোয়নেট মুলার, ব্রানিস্লাভ “ব্রাঙ্কো” ব্রিকিচ, ক্রেগ ম্যাককুনে, লেস্টার ফ্রিমন (ছদ্মনাম), লিওনেল ফল, মারিয়ান থাম, মিকাহ রেড্ডি, পলি ভ্যান উইক, পিটার–লুই মাইবার, রেবেকা ডেভিস , রিচার্ড পপলাক, স্যালি ইভান্স, স্টেফান্স ব্রামার, স্টিফেন “স্যাম” সোল, সুসান কমরি, টাবেলো টিমসে।
নব্বইয়ের দশকে ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমান গুপ্তা পরিবারের তিন ভাই। অল্প দিনেই গড়ে তোলেন সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য। যৌথ এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী পরিবার কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিম্মি করে জনগণের টাকা সরিয়ে নিয়েছে নিজেদের কোম্পানিতে। গুপ্তালিকস প্রকাশ হওয়ার কিছুদিন পর জ্যাকব জুমা পদত্যাগ করেন। এই অনুসন্ধানটি এগিয়েছে গুপ্তা পরিবারের ফাঁস হওয়া অসংখ্য ইমেইলের সূত্র ধরে।
সাইটেশন অব এক্সেলেন্স: “দ্য আজারবাইজানি লন্ড্রোম্যাট,” অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) এবং আজারবাইজানের বেশকিছু গণমাধ্যম (আজারবাইজান)
দল পরিচিতি: ইলগার আগা, রোমান আনিন, আনাবা বাবিনেচ, সোফি বেলে, এত্তিলা বিরো, জন ব্রাতানিচ, আনুস্কা ডেলিচ, রিকার্ডো গিনেস, পাভলা হলকোভা, খাদিজা ইসমাইলোভা, এলেনা লোগিনোভা, মিরান্ডা প্যাট্রুসিচ, মদিনা মামাদোভা, পল রাদু, আতানাস চোবানভ, জনি রেট, ক্যারোল কারবেজ , ড্রাগানা পেকো, নাদিয়া শিয়াব, ফ্রেডরিক লিন্ডেনবার্গ, এমি গাই, লায়ন সামারবেল, ইলিয়া লোজোভস্কি, জোডি ম্যাকফিলিপস, ড্রিউ সুলিভান, বার্গিট ব্রুয়ার, লেইলা কামদিচ, রোক্সানা জিপা, আনা পেনারিয়ু এবং অজানা অনেক আজারবাইজানী সাংবাদিক।
সহযোগিতামূলক এই আন্তসীমান্ত অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, আজারবাইজানের ক্ষমতাসীন এলিটরা কীভাবে জটিল একটি মুদ্রাপাচার স্কিম থেকে লাভবান হয়েছেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা ব্যাংকের নথি থেকে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত চারটি ছায়া কোম্পানীর মাধ্যমে তারা ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার পাচার করেছেন, মাত্র দুই বছরে।
ছোট গণমাধ্যম ক্যাটেগরি
বিজয়ী: “কার ওয়াশ” এবং “হোয়াইট কলারস”, আইডিএল রিপোর্টেরোস (পেরু+).
দল পরিচিতি: কার ওয়াশ সিরিজে ছিলেন: গুস্তাভো গরিত্তি, রোমিনা মেলা, হার্নান পি. ফ্লোরিন্দেজ, রোসা লরা, মার্গো দেসাউতেজ। হোয়াইট কলারস সিরিজে ছিলেন:গুস্তাভো গরিত্তি, রোমিনা মেলা, হার্নান পি. ফ্লোরিন্দেজ, রোসা লরা, মার্গো দেসাউতেজ, প্যাট্রিসিয়া মেয়রগা, ক্রুজ সিলভা, লুই মিগুয়েল পুরিজাগা।
ব্রাজিলের শীর্ষ কন্সট্রাকশন কোম্পানী ওডব্রেখটের ঘুষ কেলেংকারি নিয়ে সবার আগে রিপোর্ট করে পেরুর আইডিএল রিপোর্টেরোস। “অপারেশন কার ওয়াশ” নামের সেই দুর্নীতির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল গোটা ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে এবং তার বাইরেও; জড়িয়ে পড়েন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বড় সরকারি কর্মকর্তা আর রাজনীতিবিদরাও। এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাদের সাংবাদিকরা পেরুর শীর্ষ বিচারকদের দুর্নীতির আরেকটি বড় স্টোরি খুঁজে পায়। “হোয়াইট কলারস” শিরোনামের সেই সিরিজের কারণে দেশটির বিচার ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংষ্কার আনা হয়।
সাইটেশন অব এক্সেলেন্স: “দ্য প্রফিটিয়ার্স,” আফ্রিকা আনসেন্সরড (দক্ষিণ সুদান)
দল পরিচিতি: জন –অ্যলান নামু, এলিজাহ কানয়ি, স্যামুয়েল মুনিয়া
তিন পর্বের এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, সুদানের ক্ষমতাসীন এলিটরা কীভাবে গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে দেশটি থেকে কোটি কোটি ডলার মুনাফা করেছে এবং সেই টাকা কেনিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার অন্য দেশে বিনিয়োগ করেছে। এইসব ব্যক্তিরা কোন পদ্ধতিতে টাকা পাচার করেছেন এবং সরকার, অন্য দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও সেনা কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে তারা কীভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন তাও তুলে এনেছেন সাংবাদিকেরা।
২০১৭ (যুগ্ম বিজয়ী)
দক্ষিণ-পূর্ব নাইজেরিয়ায় সংঘটিত ব্যাপক বিচার-বহির্ভূত হত্যার গভীরে এবং ওনিৎশা ম্যাসাকার: যেভাবে বিয়াফ্রা সমর্থকদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়
সাংবাদিক: ইমালুয়েল মায়াহ্, সম্পাদক: মুসিকিলু মোজিদ। (প্রিমিয়াম টাইমস, নাইজেরিয়া)
সাংবাদিক: ইমালুয়েল মায়াহ্, সম্পাদক: মুসিকিলু মোজিদ। (প্রিমিয়াম টাইমস, নাইজেরিয়া)
মায়াহ্ দুই মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে একাধিক গণকবর খুঁজে বের করেন। এগুলোর মাধ্যমে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগটি আরও পাকাপোক্ত হয়। রিপোর্টে ছবিসহ প্রমাণ পাওয়ার পর মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্বাধীন তদন্তের দাবি জানায়, ফলে সামরিক বাহিনী নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দেয়
প্রজেক্ট নম্বর ১
সাংবাদিক: আসাদ আল-জালজালি; চিত্রগ্রহণ: থায়ের খালিদ (বেলাডি টিভি চ্যানেল, ইরাক)
ইরাকের সরকারি স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত ২০ কোটি মার্কিন ডলার যখন উধাও হয়ে গেল, তখন সাংবাদিক আল-জালজালি সেই অর্থ কোথায় গেছে, তা অনুসরণ করলেন। এই অনুসন্ধান তাঁকে একটি ব্যাংক থেকে ভিন্ন আরেক দেশ পর্যন্ত নিয়ে যায়। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির ব্যাপকতা উন্মোচিত হয়। প্রতিক্রিয়ায় অভিযুক্তদের সাজা এবং চুরি হওয়া অর্থের অর্ধেক ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি
মেকিং আ কিলিং
সাংবাদিক: লরেন্স মারজুক, ইভান আঞ্জেলোভস্কি এবং মিরান্ডা প্যাট্রুচিচ; অতিরিক্ত রিপোর্টিং: আতানাস শোবানভ, ডুসিকা তোমোভিচ, ইয়েলেনা কোসিচ, ইয়েলেনা স্ভিরচিচ, লিন্ডিতা চেলা, আরআইএসই মলদোভা, পাভলা হালকোভা, স্টেভান দইচিনোভিচ এবং পাভলে পেত্রোভিচ; সম্পাদক: ড্রিউ সুলিভান, জোডি ম্যাকফিলিপস, রোজমেরি আরমাও, গোরদানা ইগরিচ এবং আনিতা রাইস (বলকান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক এবং অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট)
যৌথভাবে করা এই অনুসন্ধানে, কেন্দ্রীয় ও পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ১২০ কোটি ইউরো মূল্যের একটি অস্ত্র সরবরাহব্যবস্থা উন্মোচিত হয়। অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে পান, অস্ত্রের এই সরবরাহে অর্থায়ন আসছিল সৌদি আরব, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক থেকে, এবং পরবর্তীকালে তা কৌশলে ইসলামিক স্টেস্টের মতো চরমপন্থী সংগঠনগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো।
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্ত্র সরবরাহের ওপর নজরদারি জোরদারের ঘোষণা দেয় এবং অনেকগুলো দেশ তাদের নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন করে।
শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি
গুজরাট ফাইলস: অ্যানাটমি অব আ কাভারআপ
সাংবাদিক: রানা আইয়ুব (স্ব-প্রকাশিত)
সাংবাদিক রানা আইয়ুব গুজরাটে ২০০২ সালে হওয়া দাঙ্গার বিষয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের কথাবার্তা লুকিয়ে রেকর্ড করার জন্য ৯ মাস আত্মগোপন করে ছিলেন। গুজরাটের এই দাঙ্গায় অন্তত ১০০০ মুসলিম মারা যান। যখন জানা যায়, আইয়ুবের অনুসন্ধানের একজন লক্ষ্য দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তখন চুপচাপ হয়ে যায়। কিন্তু হুমকি আর নজরদারির মধ্যেও আইয়ুব তাঁর রিপোর্টের অনুলিপি নিজেই প্রকাশ করেন, যেখানে সেই দাঙ্গায় ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভূমিকার বিষয়টি উন্মোচিত হয়।
২০১৫ (যুগ্ম বিজয়ী)
আনহোলি অ্যালায়েন্সেস
সাংবাদিক: মিরান্ডা প্যাট্রুচিচ, দেয়ান মিলোভাক, স্টেভান দইচিনোভিচ, লেইলা কামজিক, ড্রেউ সুলিভান, যদি ম্যাকফিলিপস, রোজমেরি আরমাও (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট)
বছরব্যাপী এই অনুসন্ধানে প্রকাশিত হয়, একসময়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা মন্টেনেগ্রোর প্রধানমন্ত্রী মিলো ডিয়ুকানোভিচ এবং তাঁর পারিবারিক ব্যাংককে কেন্দ্রে রেখে কীভাবে সরকার, সংগঠিত অপরাধ এবং ব্যবসায়ীদের একটি অশুভ জোট গড়ে ওঠে; এবং ইইউর আদর্শ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে, মন্টেনেগ্রো কীভাবে একটি মাফিয়া রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করছে।
এমপায়ার অব অ্যাশেজ
সাংবাদিক: মাউরি কোনিগ, আলবারি রোসা এবং ডিয়েগো আন্তোনেল্লি (ব্রাজিল); মার্থা সোতো (কলম্বিয়া); এবং রনি রোহাস (কোস্টা রিকা), গাজেতা দো পোভো, ব্রাজিল।
ইউক্রেনে ২০১৪ সালের বিপ্লবের বিশৃঙ্খল দিনগুলোতে সাংবাদিকদের একটি দল জোট বাঁধে পরিত্যক্ত ২৫ হাজার নথি খুঁজে বের করার লক্ষ্য নিয়ে। সেই নথিগুলো ছিল দেশটির পলায়নপর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের এই কাজের মাধ্যমে দুর্নীতির এক অনন্য ইতিহাস সবার সামনে আসে। ইয়ানুকোভিচ ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলার চুরির ফৌজদারি মামলায়, তাঁদের প্রতিবেদন প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
২০১৫ সালের চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের সম্পর্কে আরও তথ্য এখানে এবং ভিডিও এখানে।
২০১৩*
আজারবাইজান করাপশন
সাংবাদিক: খাদিজা ইসমাইলোভা, নিশাবে ফেতুল্লায়েভা, পাভলা হলকোভা এবং জারোমির হাসন, সঙ্গে সহযোগিতায় অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট, রেডিও ফ্রি ইউরোপ এবং চেক সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম।
প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ পরিবারের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবসা তুলে ধরে এই প্রতিবেদন। তিনি স্বর্ণের খনি পরিচালনা করে তার পাহাড় পরিমাণ সম্পর্কে আরও কোটি কোটি ডলার যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। দলটি উন্মোচন করে, কীভাবে একটি ব্রিটিশ এবং তিনটি প্রতিবেশী দেশের প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে এই পরিবার তাদের ব্যবসা চালাত।
শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি
ট্যাক্সেশন উইদাউট রিপ্রেজেন্টেশন
সাংবাদিক: উমর চিমা, সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ইন পাকিস্তান
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টসহ দেশটির সংসদের ৪৪৬ জন সদস্যের আয়কর রেকর্ড জোগাড় করেন এবং তা বিশ্লেষণ করেন উমর চিমা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংসদ সদস্যদের প্রায় ৭০ শতাংশই কর দেন না। এই প্রতিবেদন পাকিস্তানে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তান রাজস্ব সংগ্রহের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোর একটি।
২০১১
সিক্রেট ডায়েরিজ
সাংবাদিক: জেমস আলবেরতি, কাতিয়া ব্রেমবাত্তি, কার্লোস কোলবাখ এবং গায়ব্রিয়েল তাবাতশেইক, গাজেতা দো পোভো এবনগ পিআরসি টেলিভিশন, ব্রাজিল
পারানা রাজ্যের আইনসভা কীভাবে কৌশলে জনতহবিল থেকে অন্তত ৪০ কোটি মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেয়, তা উন্মোচন করতে এই সাংবাদিকেরা দুই বছর ধরে একটি ডেটাবেস তৈরি করেন। ২০১০ সালের এই ধারাবাহিক রিপোর্টটি দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবাদে ৩০ হাজার মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে আনে, এর ফলে ২০টির বেশি অপরাধের তদন্ত শুরু হয়।
ইনভেস্টিগেটিং দ্য ইকোনমিক স্ট্রাকচার বিহাইন্ড দ্য মলদোভান রেজিম
সাংবাদিক: ভিতালি কালুগারিয়ানু (মলদোভা), ভ্লাদ লাভ্রভ (ইউক্রেন), স্টেফান ক্যান্ডিয়া (রোমানিয়া), দুমিত্রু লাজুর (মলদোভা) এবং ইরিনা কডরিয়ান (মলদোভা)।
মলদোভার সাবেক প্রেসিডেন্ট কীভাবে তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের এবং পরিবারের সম্পত্তি বৃদ্ধি করেছেন, তা উন্মোচন করার জন্য সাংবাদিকেরা কাজ করেছেন একসঙ্গে। তাঁরা ১৯৯৬-২০০৯ সালের মধ্যে ভোরোনিন কী পরিমাণ ব্যক্তিগত সম্পত্তি গড়েছেন, তার তথ্য জোগাড় করেন। দেখান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে বাজারে একক আধিপত্য তৈরি করে।
২০০৮
গ্যাংস্টারিজম অ্যান্ড ফল্টি লিগ্যাল সিস্টেম
সাংবাদিক: সোনালি সামারাসিংহে (শ্রীলঙ্কা)
একজন ক্ষমতাশালী মন্ত্রী তাঁর প্রভাব এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে গণমাধ্যম এবং বিচারব্যবস্থাকে কীভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন, তা উন্মোচন করেছেন সোনালি সামারাসিংহে। এই ঘটনার পর সামারাসিংহের স্বামীকে হত্যা করা হয় এবং তাঁর জীবনের ওপরও হুমকি আসতে থাকে। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করেন।
২০০৭
পাওয়ার ব্রোকারস
সাংবাদিক: পল ক্রিশ্চিয়ান রাদু এবং সোরিন ওজন, রোমানিয়া শ্যেনটার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম; এলডিনা প্লেহো এবং অ্যালিসন নেজেভিচ, শ্যেনটার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ইন বসনিয়া; স্টানিমির ভ্লাগলেনভ (বুলগেরিয়া), এবং আলটিন রাশিমি (আলবেনিয়া)।
তাঁরা এই অনুসন্ধান করেছেন রোমানিয়া, বসনিয়া, বুলগেরিয়া ও আলবেনিয়াজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের নেপথ্যে থাকা জ্বালানি সংকট নিয়ে। তাঁদের ধারাবাহিক অনুসন্ধানে উন্মোচিত হয়েছে, কীভাবে পর্দার আড়ালে থেকে বলকান দেশগুলোতে কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। রিপোর্টে তুলে ধরা হয়, ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ লাভ তুলে নিয়ে, কীভাবে দরিদ্র নাগরিকদের ওপর বিদ্যুতের গলাকাটা দাম চাপিয়ে দিচ্ছে।
*দ্রষ্টব্য: ২০১৩ গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন দুজন। কিন্তু একজন সাংবাদিকদের কাজ নিয়ে বিতর্ক থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস ক্যাটো ম্যানর: ইনসাইড আ সাউথ আফ্রিকান পুলিস ডেথ স্কোয়াড এর জন্য দেওয়া পুরস্কারটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।