প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

কোভিডের ৬ মাস তো হয়ে গেল, সামনে কী নিয়ে রিপোর্ট করবেন?

English

ছবি: অ্যানা স্কিভেট/পেক্সেলস

“সরকার তথ্য দিচ্ছে না, এই বলে ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করতে হবে সাংবাদিকদের।”

উক্তিটি বসনিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক মিরান্ডা প্যাট্রুচিচের। বার্তাটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য। এর অর্থ হচ্ছে, মহামারির কারণে আমাদের সমাজে যে এক ধরণের মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, তা মেনে নিতে হবে। কোভিড-১৯ থাকবে, তাই আমাদেরও ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত ও তার নেপথ্যের ব্যক্তিদের স্বরূপ উন্মোচনে নতুন ও সৃজনশীল সব কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।

বৈশ্বিক এই সংকটের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নিজেদের আবিস্কার করছেন একটি অনিশ্চয়তা ও হতাশা ভরা জগতে; যেখানে এখন পর্যন্ত চাকরি হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ, আর প্রাণ হারিয়েছেন আট লাখের কাছাকাছি

মহামারি শুরুর পর থেকে গণহারে মৃত্যুর শিকার হওয়া মানুষদের মানবিক গল্পগুলো তুলে এনেছেন সাংবাদিকরা। উন্মোচন করেছেন সরকারি ক্রয় ও সরবরাহ চেইনের নানা দুর্নীতি-অনিয়ম। কখনো কখনো এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা জীবনের ঝুঁকিও নিয়েছেন। তবে এখন অনেক সাংবাদিকই তাদের দৃষ্টি ঘোরাচ্ছেন টিকা তৈরি এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মতো বিষয়ের দিকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন: তথ্যের নতুন উৎস ও দুর্নীতির ডেটা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আরো ভালো কাজ করতে হবে নিউজরুমগুলোকে। তাদের দৃষ্টি দিতে হবে অস্বস্তিকর অনেক বিষয়ের দিকেও। যেমন, লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাব। একই সঙ্গে, মহামারির বাইরের বিষয়গুলো নিয়েও অনুসন্ধান শুরু করতে হবে।

জিআইজেএন-এর ইনভেস্টিগেটিং দ্য প্যানডেমিক ওয়েবিনার সিরিজের সর্বশেষ পর্বে বসনিয়া, ভারত, উগান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রের চার সাংবাদিক আলোচনা করেছেন, কোভিড-১৯ নিয়ে কেমন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে এবং আগামী দিনে কেমন অনুসন্ধান হতে পারে। ভবিষ্যতের রিপোর্টিংয়ের কিছু কৌশলও তারা বাতলে দিয়েছেন।

.

“হ্যাঁ, এটা ঠিক, অনেক সরকারের কর্মকাণ্ডই স্বচ্ছ ছিল না। কিন্তু এ নিয়ে দোষারোপের চেয়ে, আমাদের বরং তথ্য পাওয়ার নতুন নতুন সব উপায় ও সোর্স খুঁজে বের করা দরকার। সব দেশের সরকারই শুরুতে অপ্রস্তুত ছিল। কিন্তু পরেও কী তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে? যেসব যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা উপকরণ দেশে ঢুকেছে, সেগুলো কী সত্যিই হাসপাতালগুলোতে পৌঁছেছে?”, প্রশ্ন রাখেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) মধ্য এশিয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক, প্যাট্রুচিচ।

করোনা পরিস্থিতির ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি কর্মকর্তারা এখন উন্মুক্ত বৈঠকের বদলে, প্রাইভেট অনলাইন সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এসব এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার নথিপত্র প্রায়ই হারিয়ে যাচ্ছে বা গোপন রাখা হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্যাট্রুচিচ।

“আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন… জনসাধারণ কতটা ঝুঁকির মুখে আছে, এবং সরকারগুলো তাদের ক্ষমতা সংহত করার জন্য কী কী করছে, তা বোঝার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ইস্যু। নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকারগুলো, এই মহামারিকে নানাভাবে ব্যবহার করছে এবং সমর্থন আদায় করছে।” — মিরান্ডা প্যাট্রুচিচ

“গত ছয় মাসে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, আর অনুসন্ধানের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে, রাতারাতি বদলে ফেলা নিয়মনীতিগুলো। কারণ, সরকারি অনেক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে অনলাইনে, যার কথা অনেক ক্ষেত্রেই গোপন থেকে গেছে। কোথাও কোথাও সভাগুলোর কার্যবিবরণীও হারিয়ে গেছে। আমার এলাকায় অন্যায়ভাবে বাঁধ তৈরির নজির থেকে বলতে পারি, লকডাউনের এই সময়ে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেগুলো অন্য সময়ে নেওয়া হলে মানুষ প্রতিবাদ করত,” বলেন প্যাট্রুচিচ।

বসনিয়ার এই সাংবাদিকের জন্য, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন। “জনসাধারণ কতটা ঝুঁকির মুখে আছে, এবং সরকারগুলো তাদের ক্ষমতা সংহত করার জন্য কী কী করছে, তা বোঝার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ইস্যু। নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকারগুলো, এই মহামারিকে নানাভাবে ব্যবহার করছে এবং সমর্থন আদায় করছে।”

আরেকটি মারাত্মক বিষয় সাংবাদিকদের মনোযোগ দাবি করে। তা হলো: মহামারির সময়ে অনেক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র তাদের ভাবমূর্তি উন্নয়নের চেষ্টা করছে। প্যাট্রুচিচ বলেন, “আমি এমন কিছু ঘটনা দেখছি, যেখানে সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যরা সামনে আসছেন কোভিডের ত্রাণ নিয়ে। এমনকি তারা প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে, দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিও আছেন।”

ওসিসিআরপি-র এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কিভাবে ইউরোপজুড়ে ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা: এডিন পাসোভিচ। গ্রাফিক: ওসিসিআরপি

চিকিৎসা বিষয়ক মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও লেখক জিন লেনজার বলেছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বার্থ জড়িয়ে আছে এমন বিশেষজ্ঞরাও মহামারির কাভারেজে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক এই তালিকা, রিপোর্টারদের জন্য একটি শক্তিশালী রিসোর্স হয়ে উঠছে। তিনি জানান, খুব সতর্ক পর্যালোচনার মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়েছে, যা ক্রমাগত বড় হচ্ছে।

“এই তালিকা প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা ও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। আমি সব সাংবাদিকদের বলব, এটি কাজে লাগান। চাইলে আপনিও এখানে নাম যোগ করতে পারেন। তাদের কোনো স্বার্থ সংঘাত আছে কিনা, তা যাচাই করে আমরা সেটি প্রকাশ করব,” বলেন লেনজার। একইসঙ্গে, মহামারির সময় চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা দাবির সত্যতা যাচাইয়ের এই টিপশিটের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

“আমরা জানি, চাকরি হারানো ও সম্পদ বৈষম্যের কারণেও মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সহিংসতা ও হতাশাজনিত মৃত্যু বাড়ছে কিনা, সেদিকেও আমরা নজর দিতে পারি।” — জিন লেনজার

অস্বস্তিকর, কিন্তু সত্য – এমন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের নতুন করে ভাবার আহ্বান জানান লেনজার। আর তা হলো: কর্তৃত্বপরায়ন বা উগ্র-ডানপন্থী কোনো নেতা কোভিড-১৯ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ভাষ্য প্রচার করছেন বলেই সেটি মিথ্যা হতে হবে অথবা সেটি আমালে আনা যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। অতীতের মহামারি এবং গত ছয় মাসের টাটকা অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আমরা জানতে পারিনি, কোন ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো কাজ করে। ব্যাপারটিকে বেশ অবাক করার মতো বলেই মনে করেন লেনজার। তিনি বলেন,  “প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ভাইরাসটির চেয়েও বেশি ক্ষতিকর” – কর্তৃত্ববাদী নেতাদের এমন  দাবির পক্ষেও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, এবং বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান দরকার।

“আমি জানি, প্রগতিশীল ব্যক্তি হিসেবে এই কথাগুলো হয়তো আমার বলার কথা না। কিন্তু, বাস্তবে, আমরা দেখছি, মানুষ প্রতিদিন কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে। হয়তো প্রতি ১০ হাজারে একজন, কিন্তু এটি একটি বাস্তব ঝুঁকি। আবার অন্যদিকে, কালই হয়তো আমাকে গৃহহীন হতে হবে, আমার কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে,” বলেন লেনজার।

“আমরা জানি, চাকরি হারানো ও সম্পদ বৈষম্যের কারণেও মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সহিংসতা ও হতাশাজনিত মৃত্যু বাড়ছে কিনা, সেদিকেও আমরা নজর দিতে পারি। কোভিড মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর ক্ষতিকর দিকের পাশাপাশি সুবিধাজনক দিকগুলো নিয়েও আমাদের রিপোর্ট করা উচিৎ।” এ বিষয়ে শেলডন ওয়াটস-এর “মহামারি ও ইতিহাস: অসুখ, ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যবাদ”- বইটির কথা উল্লেখ করেন লেনজার।

আফ্রিকান সেন্টার ফর মিডিয়া এক্সিলেন্স (এসিএমই)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা পিটার মোয়েসিজও লেনজারের কথার প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনিও সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ-নীতিমালার ক্ষতিকর দিকগুলো খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, কোন উদ্দেশ্যে এসব নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কারা সম্পৃক্ত ছিল, তাও সাংবাদিকদের খুঁজে দেখা দরকার।

“রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে কোনো নীতিমালা বা পদক্ষেপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে, কিভাবে সেই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় বা এর পেছনে কী ধরনের প্রভাব বা তৎপরতা থাকে – এ নিয়ে পর্যাপ্ত রিপোর্টিং আমার চোখে পড়েনি,” বলেছেন মোয়েসিজ।

তিনি আরো বলেন, এসিএমই’র সাম্প্রতিক একটি জরিপ থেকে দেখা গেছে, উগান্ডার গণমাধ্যমে কোভিড-১৯ কাভারেজে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অবদান ছিল মাত্র ০.৪ শতাংশ। অনুসন্ধানের কাজে অনভিজ্ঞতা, লকডাউনের সীমাবদ্ধতা, সূত্র ও সম্ভাব্য হুইসেলব্লোয়ারদের মধ্যে ভীতি; এসব কারণ মিলিয়ে এই ভঙ্গুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

দিল্লি-ভিত্তিক ডেটালিডস-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সোসাইটি অব এশিয়ান জার্নালিস্টস-এর সভাপতি সৈয়দ নাজাকত বলেন, টানা ছয় মাস ধরে প্রতিক্রিয়াধর্মী কোভিড কাভারেজ দেখতে দেখতে পাঠকদের মধ্যে ক্লান্তি চলে এসেছে। ফলে এখন প্রতিবেদনের অ্যাঙ্গেল নিয়ে খুবই সতর্কভাবে পরিকল্পনা করতে হবে সম্পাদক ও রিপোর্টারদের।

নাজাকাত বলেন, “এই প্রতিবেদনগুলো, পাঠক-দর্শকদের জন্য আরো বেশি আকর্ষণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলাটা এখন রিপোর্টারদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এবং পরিস্থিতিও এখন খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। ফলে প্রমাণ-ভিত্তিক রিপোর্টিংয়ের দিকে তাদের বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যেন তারা নতুন ঝুঁকি ও গৃহীত পদক্ষেপের ফাঁকফোকর সম্পর্কে পাঠকদের ভালোভাবে জানাতে পারেন। কোন কোন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে, তা নির্ধারণ করতে পারাটাও সম্পাদকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। শুধু প্রতিক্রিয়াভিত্তিক প্রতিবেদন না করে রিপোর্টারদের কাজে লাগাতে হবে বড় ও পরিকল্পিত প্রতিবেদন তৈরিতে।”

“টানা ছয় মাস ধরে প্রতিক্রিয়াধর্মী কোভিড কাভারেজ দেখতে দেখতে পাঠকদের মধ্যে ক্লান্তি চলে এসেছে। ফলে এখন প্রতিবেদনের অ্যাঙ্গেল নিয়ে খুবই সতর্কভাবে পরিকল্পনা করতে হবে সম্পাদক ও রিপোর্টারদের।” — সৈয়দ নাজাকত

কোভিড মহামারির প্রভাব দিনদিন যেভাবে জটিল আকার ধারণ করছে, তা তুলে আনার জন্য আগামী দিনগুলিতে অনেক গভীর ও সৃজনশীল ধারার সহযোগিতামূলক কাজ প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেন নাজাকাত।

তিনি বলেন, “বিষয়টির পরিধি অনেক বড়। এটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক এবং এখানে স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিগত নানা আঙ্গিক জড়িয়ে আছে। এখানে আধাআধি ধরনের কিছু করার সুযোগ নেই। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে: কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমরা একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারি। সাংবাদিকদের বাইরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের খুঁজে বের করতে হবে একসঙ্গে কাজ করার জন্য। আপনি ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে জানতে পারেন: একটি এলাকায় কারা অসুস্থ বা মারা গেছে; সাবেক সেনা কর্মকর্তারাও হতে পারেন ভালো সূত্র। আইনজীবীদের কাছে বিপুল নথিপত্রের ভাণ্ডার আছে। এগুলো থেকেও কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে দারুন সব তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।”

মহামারির সময়ে দারুন কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের উদাহরণও উঠে এসেছে এই ওয়েবিনারে। এগুলোর মধ্যে ছিল:

দোজ উই হ্যাভ লস্ট — নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই সিরিজে, কোভিডে মৃত সংখ্যার পেছনের মানবিক গল্পগুলো তুলে আনা হয়েছে। এই ধরনের বেশ কিছু প্রতিবেদন পুরো বিশ্বজুড়েই দেখা গেছে। কোশ্চেনেবল পেপারওয়ার্ক লেটস ফেক অ্যান্ড ফল্টি মাস্কস ফ্লাড ইউরোপ — ওসিসিআরপির এই ব্যাখ্যামূলক অনুসন্ধানী রিপোর্টিং থেকে দেখা গেছে, অনুমোদন সনদে সমস্যার কারণে গোটা ইউরোপে কিভাবে নিম্নমানের পিপিই আমদানি করা হয়েছে। ‘ডার্ক মানি’ গ্রুপস পুশড ট্রাম্প টু ব্যাক আনপ্রুভেন কোভিড-১৯ ট্রিটমেন্ট — ওপেনসিক্রেটস-এর জন্য এই অনুসন্ধানটি করেছেন তাতিয়ানা মোনে। তিনি দেখিয়েছেন: কোভিড-১৯ এর একটি অপ্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতির কথা প্রচার করতে কিভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে একটি রক্ষণশীল গ্রুপ, এবং এই কাজের জন্য তাদেরকে অনুদান দিয়েছে ওষুধ ব্যবসায়ীদের একটি বড় সংগঠন। দ্য আয়েস হ্যাভ ইট — মহামারি মোকাবিলার জন্য যে বাজেট তৈরি করা হয়েছিল, সেখান থেকে কিভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন উগান্ডার সংসদ সদস্যরা – এনবিএস-এর এই বিশেষ টিভি প্রতিবেদনে সেটিই দেখিয়েছেন সলোমন সেরওয়ানজিয়া। কাউন্টিং দ্য কস্টস অব লকডাউন রাইটস অ্যাবিউজ — উগান্ডায় পুলিশ কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তার বিশদ অনুসন্ধান করা হয়েছে ডেইলি মনিটরের এই প্রতিবেদনে। হোয়াট লকডাউন? ওয়ার্ল্ড’স কোকেইন ট্রাফিকার্স স্নিফ অ্যাট মুভমেন্ট রেস্ট্রিকশন — প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ওসিসিআরপি। দ্য লাস্ট চ্যান্স — ৬০ লাখ নথিপত্র বিশ্লেষণ করে, বৈশ্বিক বন্যপ্রাণী কেনাবেচার ওপর এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে হেলথ অ্যানালিটিক এশিয়া। এখানে দেখানো হয়েছে: সার্স ভাইরাস উদ্ভবের সঙ্গে গভীর সংযোগ থাকা সত্ত্বেও, গত ৩৩ বছরে জীবিত বন্যপ্রাণী কেনাবেচার পরিমাণ বেড়েছে ৭৫০ শতাংশ। আর প্রতিরোধের জন্য নেওয়া নীতিমালা তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। সিটিজ ট্রেড ডেটাবেজের ডেটা ব্যবহার করে, হেলথ অ্যানালিটিকস এশিয়া দেখিয়েছে, কিভাবে বন্যপ্রাণী কেনাবেচা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এই চার্টে দেখা যাচ্ছে ২০১৭ সালে কচ্ছপ কেনাবেচার চিত্র। ছবি কৃতজ্ঞতা: হেলথ অ্যানালিটিকস এশিয়া

শেষপর্যন্ত, সাংবাদিকদের এই প্যানেল যে বিষয়টিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তাদের দৃষ্টিসীমা প্রসারিত করতে হবে। প্যাট্রুচিচ যেমন বলেছেন, “কোভিড এখন আমাদের সঙ্গেই থাকবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আমাদের এখন গুরুত্বপূর্ণ অনেক দিকে নজর রাখতে হবে। অন্যান্য বিষয় নিয়েও ফের অনুসন্ধান শুরু করতে হবে।”

রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।

টিপশীট ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

টিপশিট: আপনার অনুসন্ধানে কীভাবে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহার করবেন

সমুদ্র সংক্রান্ত ডেটার ধরন হতে পারে বহুবিচিত্র। সমুদ্রে দূষণ, জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতি অথবা অর্থবাণিজ্য— এমন বিভিন্ন ধরনের ডেটা, সাংবাদিকেরা ব্যবহার করতে পারেন তাদের রিপোর্টিংয়ে। এই টিপশিটে পাবেন অনুসন্ধানে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহারের পরামর্শ ও রিসোর্সের খোঁজ।