প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

ডেটা সাংবাদিকতা শুরু করার ১২টি সহজ টিপস

English

সম্পাদকের নোট: নিলস মুলভাদ জিআইজেএন-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক বোর্ড সদস্য। আর হেলেনা বেংটসন গার্ডিয়ানের ডেটা প্রজেক্ট দলের সাবেক সম্পাদক। কিভাবে প্রতিবেদনের জন্য ডেটা ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে এখানে তাঁরা ১২টি পরামর্শ দিয়েছেন। জার্মানির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অ্যাসোসিয়েশন, নেটওয়ার্ক রিসার্চের ২০১৫ সালের হামবুর্গ সম্মেলনে এটি উপস্থাপন করা হয়েছিল।

১. ছোট প্রকল্প এবং এক্সেল দিয়ে শুরু করুন

ডেটা সাংবাদিকতায় অনেক ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে আপনি সহজে সামলাতে পারবেন, এমন ডেটা ও টুল দিয়ে শুরু করুন। ডেটা সাংবাদিকতার প্রায় ৯০ শতাংশ কাজে এক্সেল ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ডেটা আনা-নেওয়া, পরিস্কার, গোছানো ও কাঠামোবদ্ধ করার প্রায় সব কাজই করা হয় এক্সেল দিয়ে। অন্য কোনো টুল দিয়ে কাজ করার জন্য ডেটা নিয়ে যাওয়ার আগে এক্সেলই হবে আপনার প্রধান টুল।

২. সাংবাদিকদের কাছ থেকে ডেটা টুল সম্পর্কে শিখুন

সাংবাদিকতার কাজে, হিসেবনিকেশের নানা টুল সম্পর্কে বোঝার জন্য কোনো সাংবাদিককেই আপনার শিক্ষক হিসেবে প্রয়োজন হবে। আপনার কাজের পদ্ধতি কেমন হবে এবং রিপোর্টিং ও প্রতিবেদন লেখার কাজগুলো কিভাবে হবে, তা ভালোভাবে মেলাতে পারাটা প্রায়ই খুব জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।

৩. বারবার যাচাই করুন কোনো ভুল আছে কিনা

প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডেটায় ভুল পাওয়া যায়। এমনকি সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়ে থাকলেও। আপনার দায়িত্ব হলো: এটি জনসাধারণের কাছে উপস্থাপনের আগে সব ভুলত্রুটি চিহ্নিত ও সংশোধন করা। সব কিছু যোগ করুন। দেখুন, সব ঠিকঠাক আছে কিনা, অথবা কোনো কিছু বাদ পড়ছে কিনা।

৪. আপনার কাজ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র উন্মুক্ত করে দিন

আপনি কিভাবে কাজটি করেছেন, তা ধাপে ধাপে বর্ণনা করুন, যেন অন্যরাও একইভাবে সেটি যাচাই করে নিতে পারে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আপনার সোর্সের সঙ্গেও আলাপ করে নিতে পারেন ডেটার ব্যবহার নিয়ে। এতে করে কোনো ভুলত্রুটি থেকে যাচ্ছে কিনা, তাও যাচাই করে নিতে পারবেন এবং কাজের পদ্ধতির ব্যাপারেও একমত হতে পারবেন। ফলে পরবর্তীতে কোনো ভুল প্রকাশিত হওয়া বা পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া; ইত্যাদি বিষয় এড়াতে পারবেন। পাঠক-দর্শকও পুরোপুরি নজর দিতে পারবেন প্রতিবেদনের বিষয়টির দিকে।

৫. সূত্র গড়ে তুলতে ভুলকে কাজে লাগান

কোনো ডেটায় ভুল খুঁজে পেলে, সেগুলো ব্যবহার করে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন সরকারী বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা মানুষদের সাথে।

৬. ডেটা কিভাবে পাবেন

ডেটা পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ জানাতে পারেন এবং তারা হয়তো তথ্যগুলো ইমেইল করে পাঠিয়ে দিতে পারে। অথবা আপনি সেটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। অথবা তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে ডেটা পেতে পারেন। এই পদ্ধতিগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিতে হবে। ঠিক যেমনটা আপনি করেন সাক্ষাৎকার নেওয়ার ক্ষেত্রে। এগুলো সবই বৈধ সাংবাদিকসুলভ পদ্ধতি।

৭. ডেটা বিশ্লেষণ করুন — প্রতিবেদনের বিষয়ে নজর দিন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, ডেটা সাংবাদিকতায় অনেক অনেক ডেটা এবং খুবই কম সাংবাদিকতা থাকে। কিন্তু আমরা কাজটি করি গল্প বলার জন্য। যদি ডেটার মধ্যে কোনো গল্প না থাকে, তাহলে সেটি বলারও দরকার নেই। ডেটা থেকে গল্পগুলো খুঁজে বের করুন এবং সেগুলো এক এক করে বলুন। ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্রাফিক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রতিটি গ্রাফিক বা ম্যাপের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট বিষয় তুলে আনুন। এবং সেটি এমনভাবে বর্ণনা করুন যেন খুবই সহজে বোঝা যায়। অনেকগুলো অ্যাঙ্গেল দিয়ে ঠাসা, বড় কোনো প্রতিবেদন দিয়ে একসাথে সব কিছু বলে ফেলতে চাইবেন না।

৮. গল্পটা আসলে কী — ডেটার চূড়ায় গিয়ে দেখুন

ডেটায় গল্প খুঁজে পেতে ভাবুন, এবং আবার ভাবুন — এবং তারপর বাস্তবতার সাথে মেলান। গল্প খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, ডেটার চূড়ায় কী আছে দেখা। ভুল খুঁজে পেতে অথবা বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করতে র‌্যাংকিং সবচেয়ে ভালো টুলগুলোর একটি। ব্যবহার করুন। এটাই সাংবাদিকতা।

৯. ডেটা সাংবাদিকতা কখনো গল্প দিয়ে শুরু হয় — এবং কখনো ডেটা দিয়ে

অনেক সাংবাদিকই মনে করেন, তাদের প্রতিবেদনটি শুরু হওয়া উচিৎ একটি গল্প দিয়ে এবং সেটিকে কেন্দ্র করে ডেটাগুলো সাজানো উচিৎ। কিন্তু শুধু এই একভাবেই ডেটা সাংবাদিকতা করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কখনো কখনো আপনি খুবই ভালো কিছু ডেটা পেয়ে যেতে পারেন, যা দিয়ে গল্পটিও স্পষ্ট বোঝা যায়। আবার কখনো কখনো আপনাকে সম্ভাব্য প্রতিবেদনের বিষয় খুঁজে পেতে ডেটাগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং তারপর সেটির সত্যতা যাচাই করতে হবে।

১০. ডেটা পরিস্কার করুন

ডেটা পাওয়া না গেলে, নিজের ডেটাসেট বানিয়ে নিন। এভাবে প্রতিবেদনের জন্য ভালো বিষয়ও পেয়ে যেতে পারেন। ডেটাসেট তৈরি করতে গিয়ে আপনি আপনার প্রতিবেদনটির মধ্যেও গভীরভাবে ডুবে যেতে পারেন এবং এতে আপনার একধরনের তৃপ্তিবোধ হতে পারে। কঠিন কাজগুলো সবসময় গবেষকদের হাতে ছেড়ে দেবেন না। ডেটাকে ভালোবাসুন।

১১. সংখ্যার ব্যবহার পরিহার করুন

ডেটা সাংবাদিকতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ সংশ্লিষ্ট। সংখ্যার কথা ভুলে গিয়ে মানুষকে তুলে আনুন। এভাবেই আপনি আপনার ডেটাগুলোর কথা ভালোভাবে বলতে পারবেন। আসলে কখনো কখনো ডেটা সাংবাদিকতার প্রতিবেদন তৈরির সবচে ভালো উপায় কোনো সংখ্যা ব্যবহার না করা। সেক্ষেত্রে আপনি হয়তো শুধু একটি গ্রাফিক্সের মাধ্যমে সংখ্যাগুলোর কথা বললেন, বা অন্য সময়ের জন্য জমিয়ে রাখলেন। আপনি যদি আপনার খুঁজে পাওয়া বিষয়গুলো, মানুষকে দিয়ে বর্ণনা করতে না পারেন, তাহলে আপনি হয়তো ভুল করছেন।

১২. একসঙ্গে কাজ ও লেনদেন করুন

ডেটা সাংবাদিকতা কমিউনিটিতে নিজেদের মধ্যে তথ্য লেনদেন করার একটি দারুন ইতিহাস আছে। বিভিন্ন টুল ও পদ্ধতি যেভাবে দ্রুতগতিতে বিকশিত হচ্ছে, তার সাথে খাপ খাইয়ে চলার এটিই একমাত্র পদ্ধতি। সাংবাদিকতার অন্য যে কোনো ক্ষেত্রের চেয়ে এখানে বেশি দেখা যায় নিজেদের মধ্যে লেনদেনের ঘটনা।

নিলস মুলভাদ জিআইজেএনএর সহপ্রতিষ্ঠাতা সাবেক বোর্ড সদস্য। তিনি ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ডেনমার্ক-এরও বোর্ড সদস্য। সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, কাস অ্যান্ড মুলভাদ-এ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করেছেন ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যানালিটিক্যাল রিপোর্টিং-এ। ২০০৬ সালে নির্বাচিত হয়েছেন ইউরোপের বর্ষসেরা সাংবাদিক।

হেলেনা বেংটসন গার্ডিয়ানের ডেটা প্রজেক্ট দলের সম্পাদক ছিলেন। সুইডেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগে কাজ করেছেন ডেটাবেজ এডিটর হিসেবে। ২০০৬ ও ০৭ সালে, ওয়াশিংটন ডিসির সেন্টার ফর পাবলিক ইনটেগ্রিটি-তে কাজ করেছেন ডেটাবেজ এডিটর হিসেবে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।