প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

আমার প্রিয় অনুসন্ধানী টুল: লায়োনেল ফল

English

অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা তাদের কাজে কী ধরণের টুল ব্যবহার করেন? জিআইজেএন এই প্রশ্ন রেখেছিল অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের কাছে। দর্শকদের জন্য তাদের প্রিয় সেই টুলগুলোর খবর আমরা তুলে ধরছি এই সিরিজে

লিওনেল ফাওয়েল

এসপ্তাহে আমরা কথা বলেছি লন্ডন ভিত্তিক অনুসন্ধানী নিউজরুম ফাইন্যান্স আনকভার্ডের প্রধান প্রতিবেদক লায়োনেল ফল-এর সঙ্গে। তিনি সেখানে যোগ দেন ২০১৭ সালে। এরপর থেকে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে আছে: শেল ও ইনি কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে নাইজেরিয়ার তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অধিগ্রহণের অভিযোগ, অনলাইন জুয়ায় কেনিয়ান-বুলগেরিয়ান কোম্পানি স্পোর্টপেসার আকাশ ছোঁয়া মুনাফা, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসোউ নুয়েসোর ভাবমূর্তি বাড়াতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্রাজাভিল ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টা, এবং দুবাইয়ের অভিজাত আবাসিক এলাকার হাই-প্রোফাইল যত বাসিন্দা। এছাড়াও ফাইন্যান্স আনকভার্ডের বাৎসরিক কোর্সগুলোতে তিনি অর্থবাণিজ্য বিটের সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী কৌশল শেখান, যেগুলো অনুষ্ঠিত হয় লন্ডন, আবুজা ও জাকার্তায়।

এর আগে পাঁচ বছর তিনি কাজ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান সংবাদপত্র মেইল অ্যান্ড গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী দল আমা বুনগানেতে। সেখানে তিনি উন্মোচন করেছেন পারমানবিক জ্বালানি চুক্তি কেলেঙ্কারি এবং গুপ্তা পরিবারকে রাষ্ট্রের দেয়া সুবিধা। আমা বুনগানে এবং ফাইন্যান্স আনকভার্ডের মাঝে দুই বছর তিনি কাজ করেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে। সেসময় পানামা পেপার্স অনুসন্ধানে অংশ নিয়ে উন্মোচন করেছিলেন ট্যাক্স হ্যাভেন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কুট ব্যাঙ্কের যোগসূত্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যবসায়ী গ্যারি পোরিটের বিদেশী কোম্পানিগুলো।

লায়োনেল জন্মেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন কেনিয়াতে। এরপর রোডস ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা পড়তে চলে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ক্যারিয়ার শুরু করেন রিপোর্টার হিসেবে। ২০১৬ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। এখন তিনি সেখানেই থাকেন।

এখানে থাকছে তাঁর প্রিয় কিছু টুলের কথা:

ওসিআরকিট

“পিডিএফ ফাইলে থাকা বড় আকারের ডেটা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে ওসিআরকিট খুবই উপকারী একটি টুল (ওসিআরের অর্থ অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন)। এটি দিয়ে আপনি বড় আকারের পিডিএফ ফাইলকে, টেক্সট ফাইলে বদলে নিতে পারবেন।

 

“ওপিএল ২৪৫ নিয়ে অনুসন্ধানের সময়, আমরা শেল কোম্পানির হাজার হাজার ইমেইল ও অন্যান্য নথিপত্র পেয়েছিলাম পিডিএফ ফরম্যাটে। ওসিআরের সাহায্যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা সেগুলোকে টেক্সট ফাইলে রূপান্তর করে ফেলেছিলাম এবং তা সার্চ করা শুরু করেছিলাম। এধরণের জিনিস নিয়ে অনুসন্ধানের সময় ওসিআর সত্যিই আপনাকে অনেকখানি এগিয়ে দেবে। যেসব অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ স্ক্যান করা কাগজ নিয়ে কাজ হয়, সেখানে এটি অনেক উপকারী। যেমন আপনি যদি আদালতের অনেক নথিপত্র পিডিএফ ফরম্যাটে পান, তাহলে ওসিআর কাজে লাগবে।

ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার কাগজপত্রও ওসিআর ব্যবহার করে টেক্সটে বদলে নেওয়া যায়। যেমন, স্পোর্টপেসা নিয়ে (যেখানে কেনিয়ার একটি বেটিং কোম্পানিতে বুলগেরিয় বিনিয়োগ ছিল) প্রতিবেদন করার সময়, আমি বুলগেরিয় ভাষায় অনেক কাগজপত্র পেয়েছি। ওসিআরকিট বুলগেরিয় অক্ষরও সনাক্ত করতে পারে। আন্তসীমান্ত জোটের সঙ্গে বিভিন্ন ভাষার কাগজপত্র নিয়ে কাজ করতে গেলে এই টুল খুবই কাজে আসবে। এটি প্রায় নির্ভুলভাবে বিভিন্ন ভাষার শব্দ-অক্ষর সনাক্ত করতে পারে। ফলে বুলগেরিয় ভাষায় লেখা অনুচ্ছেদ গুগল ট্রান্সলেটে ফেলে, আমরা সহজেই তার অর্থ দেখে নিতে পেরেছি। অন্তত এটুকু সহায়তা পাওয়া যাবেই।

“স্ক্যান করা পিডিএফ ফাইল নিয়েই আমাকে কাজ করতে হয় সবচেয়ে বেশি। তাই প্রায় সবসময়ই আমি ওসিআরকিট ব্যবহার করি।”

লাইভস্ক্রাইব ইকো রেকর্ডার পেন

“এই রেকর্ডার পেন আমার বেশ পছন্দ। ব্যবহার করছি প্রায় সাত বছর ধরে। আমি এটা নিয়ে রীতিমতো ধর্মপ্রচারকদের মতো প্রচারণা চালাই। অফিসের সহকর্মীদেরও এটি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছি।

লাইভস্ক্রাইব ইকো রেকর্ডার পেন

এই কলমের ভালো দিক হলো: এটি শুধু আলাপচারিতার অডিও-ই রেকর্ড করে না, একই সঙ্গে আপনার লেখা নোটগুলোও ডিজিটালি রেকর্ড করে। এরপর দুটিকে একসঙ্গে মেলায়। ফলে অডিও নোটগুলো মিলে যায় লিখিত নোটগুলোর সঙ্গে। আর এখান থেকে আপনি বেশ নির্ভুল, ৩৬০ ডিগ্রী রেকর্ড পাবেন।

এর ফলে আপনি পুরো মনোযোগ দিতে পারবেন আপনার সাক্ষাৎকারের দিকে। সবকিছু ঠিকঠাক রেকর্ড হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আপনাকে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না।

এই পেনের সঙ্গে যে নোটবুক থাকে, তার প্রতিটি পৃষ্ঠায় আছে হাজারো মাইক্রোডট। আর পেনের মাথায় আছে একটি ছোট লেজার। ফলে নোট নেওয়া পেজের কোনো এক জায়গায় পেনটি বসালে, এটা বুঝে যাবে আপনি কোন সময়ের অডিও খোঁজ করছেন। অডিও রেকর্ডের সময় আপনি যে নোটগুলো নিচ্ছিলেন, সেগুলোর কাছে পেনটি নিয়ে গেলেই এটি সেই সময়ের অডিও শুনিয়ে দেবে। ফলে আপনি অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন, যেগুলো সাধারণত সাংবাদিকরা মোকাবিলা করে থাকেন। যেমন, তিন ঘন্টার একটি ইন্টারভিউ থেকে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য বের করতে অডিওটা অনেকবার আগে-পিছে করে শুনতে হবে আপনাকে। কিন্তু এই পেন দিয়ে কাজটি করে ফেলা সম্ভব কয়েক সেকেন্ডে।

চাইলে কলমটিকে ল্যাপটপের সঙ্গে যুক্ত করে অডিও এবং নোট – দুটোই আপলোড করে নিতে পারেন। এভাবে আপনার যাবতীয় অডিও ও নোট একটি আর্কাইভে সংরক্ষিত হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানতে, আপনি সার্চও করতে পারবেন আর্কাইভ থেকে। যেমন, কোনো বিষয় বা ব্যক্তি নিয়ে সার্চ করলে, এটি আর্কাইভ থেকে তার সম্পর্কে যাবতীয় সংরক্ষিত তথ্য বের করে আনবে। এটি খুবই জরুরি। ‘না, আমি তো আপনাকে এটা বলিনি’ – পরে যদি কেউ এমন দাবি করে, অথবা আপনার নামে মামলা করে, তখন আপনি বলে দিতে পারবেন, কে কোন কথাটা কোন সময় বলেছে। আমার কাছে এটি অনেক মূল্যবান একটি টুল।

“এটি সাধারণ কলমের মতো নয়। দেখতে কিছুটা বড় এবং সামনে ছোট একটি স্ক্রিনও আছে। গোপনে কথাবার্তা রেকর্ড করার জন্য অনেকে যে ধরণের কলম ব্যবহার করেন, এটি ঠিক তেমনও নয়। কিন্তু সাক্ষাৎকারের সময় নোট নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি খুবই কাজের জিনিস।”

ওপেনকর্পোরেটস ও আলেফ ডেটাবেজ

“কোম্পানি মালিকানা নিয়ে পুরো বিশ্বে যতো রকমের সূত্র থেকে ডেটা পাওয়া সম্ভব, সব জায়গা থেকে ডেটা খুঁজে খুঁজে এক জায়গায় করে ওপেনকর্পোরেটস। তাই কোনো কোম্পানির তথ্য জানার জন্য প্রতিটি রেজিস্ট্রিতে আলাদা করে না খুঁজে, বরং এই সাইটে ঢুঁ মারা ভালো। এখানে এক জায়গাতেই পাওয়া যায় বিভিন্ন কোম্পানি ও মানুষের খোঁজ। এর পাশাপাশি আমি ব্যবহার করি ওসিসিআরপির আলেফ ডেটাবেজ। আলেফ একেবারে আলাদা ধরণের ডেটা সেট হাজির করে, যার মধ্যে ফাঁস হওয়া এবং হ্যাক করা তথ্যও থাকে। এই দুই জায়গায় কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি সার্চ করে, সাধারণত কখনো ব্যর্থ হইনি।

ওপেনকর্পোরেট তথ্যগুলো সামনে নিয়ে আসে খুবই সহজভাবে: আপনি শুরুতেই দেখতে পাবেন, কোম্পানিটি চালু অবস্থায় আছে, নাকি নেই। প্রতিষ্ঠার সময় এর পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার কারা ছিলেন। তার সঙ্গে থাকবে মূল সূত্রের লিংক, যেন প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকলে, তা-ও সেখানে গিয়ে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

এবার আসি আলেফের প্রসঙ্গে। যখনই ওসিসিআরপির কোনো সাংবাদিক ফাঁস হওয়া তথ্যের বড় ভাণ্ডার পান, সেই নথিপত্র আলেফে জমা হয়। একে আসলে ডেটাবেজের ডেটাবেজ বলা যায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য এটি খুব কাজের জিনিস হয়ে উঠছে। আলেফের একটি প্রাথমিক ভার্সন আছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। এরপর আপনি ওসিসিআরপির মাধ্যমে সেখানে বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পারেন। সাংবাদিক হিসেবে আপনার কাজের উদ্দেশ্য ও বিশ্বস্ততা বিচার করে হয়তো আরো ব্যক্তিগত বা অন্য মালিকানায় থাকা ডেটাবেজও উন্মুক্ত হতে পারে। এগুলো বাদ দিলেও, কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই আপনি পুরো বিশ্বের বিপুল পরিমাণ তথ্য পাবেন, যেগুলো অনেক বিস্তৃত জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়।  তুলনামূলকভাবে বেশিরভাগই আসে ওপেন সোর্স থেকে। কিন্তু এখানে অনেক বিষয়ভিত্তিক নথিপত্র ও আর্কাইভও আছে।

স্পোর্টপেসা অনুসন্ধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছিলাম ওপেনকর্পোরেটস থেকে। আমি জানতাম, স্পোর্টপেসা কেনিয়া ও যুক্তরাজ্যে আছে। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি, আইল অব ম্যানেও তাদের পাওয়া যাবে। এখান থেকেই প্রশ্ন ওঠে, ট্যাক্স হ্যাভেনের কম নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার সঙ্গে এই জুয়াড়ি কোম্পানির যোগাযোগ নিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে আমার অ্যান্টেনাও কাজ করতে শুরু করে। আমার পক্ষে আইল অব ম্যানে নিয়ে সেখানকার রেজিস্ট্রি খুঁজে দেখা সম্ভব হতো না। কিন্তু ওপেনকর্পোরেটস আমাকে উত্তরগুলো দিয়েছে; স্পোর্টপেসা যে একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য, তা বুঝতে সাহায্য করেছে।”

এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ

 

“ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে যাদের কথায় আমি ভরসা করি, তারা সিগন্যাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। আমি এবং সোর্স – দুজনের জন্যেই এটি হোয়াটসঅ্যাপের চেয়ে নিরাপদ; মেসেজ এবং কল, দুই ক্ষেত্রেই। সিগন্যাল ব্যবহার করা কঠিন নয়। আপনার সোর্সের প্রযুক্তিজ্ঞান থাকুক বা না থাকুক; এটি সহজেই ব্যবহার করা যায় এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও খুব কাজের।

এছাড়াও আমার একটি পিজিপি (প্রিটি গুড প্রাইভেসি) কি আছে। সহকর্মী বা অভিজ্ঞ সোর্সদের সঙ্গে স্পর্শকাতর যোগাযোগের সময় এটি ব্যবহার করি। এজন্য মেইলভেলাপ নামের একটি প্লাগইন আছে, যার মাধ্যমে আমার কোম্পানি ইমেল ঠিকানা থেকে আমি পিজিপি-এনক্রিপ্টেড ইমেইল পাঠাতে ও গ্রহণ করতে পারি। যাদের কাছে এই ইমেইলগুলো যাচ্ছে, তাদের সেগুলো পড়ার জন্য অবশ্যই এরকম কোনো প্লাগইন ব্যবহার করতে হবে। সেটা যে মেইলভেলাপই হতে হবে, এমন নয়।

কোনো সোর্সের জন্য যদি এটি কঠিন হয়, তাহলে অন্য উপায়ও আছে। যেমন, ফোটনমেইল। এটি একটি এনক্রিপ্টেড ইমেইল সার্ভিস, যা সাধারণ ইমেইল অ্যাকাউন্টের মতো করেই খুলতে পারবেন।  পিজিপি এনক্রিপশনের জটিলতায় যেতে চাইবে না, এমন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমি ফোটনমেইল ব্যবহার করি।

আমার মনে হয়, সোর্সদের ডিজিটাল নিরাপত্তা শেখালে তারা আরো ভালো সাড়া দেয়। প্রথম থেকেই একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা দেখে, আপনি শুধু তাদের ডেটা নিয়েই চিন্তা করছেন না, বরং তাদের সুরক্ষার কথাও ভাবছেন। তখন তারা আপনাকে ভালো সাংবাদিক এবং বিশ্বস্ত মানুষ বলে মনে করে।

ওয়েব্যাক মেশিন

 

অনুসন্ধানের জন্য ওয়েব্যাক মেশিন খুবই উপকারী। অনেক কারণেই কারো ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজ গায়েব হয়ে যেতে পারে। কেউ হয়তো কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছেন বা ইন্টারনেট থেকে তাদের সব তথ্য মুছে দিতে চেয়েছেন। কারণ যা-ই হোক, অনলাইন থেকে ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজ গায়েব হয়ে গেলে, ওয়েব্যাক মেশিন থেকে তার আর্কাইভ করা পুরোনো ভার্সন পাওয়া যেতে পারে। কোনো কোম্পানি নিজেদের চেহারা বদলে ফেলেছে কিনা, তা-ও বোঝা যায় এই টুল দিয়ে।

“ব্রাজাভিল ফাউন্ডেশন যখন প্রথম শুরু হয়, তখন ওয়েবসাইট দেখেই বোঝা যেত, তারা কঙ্গোর দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসকের গুনগান গাইছে। কিন্তু সেই প্রেসিডেন্ট, ডেনিস সাসোউ-নেগুসোর সঙ্গীরা একে একে বিতর্কিত প্রমাণিত হওয়ার পর, তারা সেসব সম্পর্কের রেফারেন্স সরিয়ে ফেলতে থাকে ওয়েবসাইট থেকে। এখনকার সাইট দেখলে মনে হবে, এই ফাউন্ডেশন শুধু আফ্রিকাতে ভালো ভালো কাজই করে। কিন্তু আমি তাদের ওয়েবসাইটের শুরু দিককার ভার্সনও পেয়েছি। তাতে ডেনিস সাসোউ-নেগুসোকে এই ফাউন্ডেশনের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ওয়েব্যাক মেশিনের কল্যানে আমি আমার অনুমানগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারি। আরো খোঁজ চালাতে পারি। কেউ অস্বীকার করলে বলতে পারি, ‘ঠিক আছে; আপনি কার জন্য বা কার সঙ্গে কাজ করেছেন, তা অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু ওয়েবসাইটের পুরোনো ভার্সনে থাকা এসব তথ্য অস্বীকার করবেন কিভাবে?’

“ওয়েব্যাক মেশিন, প্রয়োজনীয় ওয়েব পেজগুলোকে আর্কাইভ করে রাখে। তারা একটি প্লাগইন তৈরি করেছে যা দিয়ে যে কোনো ইউজার, ওয়েবসাইট আর্কাইভ করে রাখতে পারবে সবার ব্যবহারের জন্য। ধরুন, আপনি কোনো অনুসন্ধানের মধ্যে আছেন আর সন্দেহ করছেন, কোম্পানির ব্যাপারে প্রশ্ন তুললেই তারা ওয়েবসাইট থেকে সবকিছু নামিয়ে ফেলা শুরু করবে। এসব ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটটি পরে আর্কাইভড অবস্থায় পাওয়ার জন্য ওয়েব্যাক মেশিন খুবই উপকারী।

হোক্সি

কোনো ওয়েবসাইট শুরুতে কে রেজিস্টার করেছিল, তা দেখার জন্য আমরা হোক্সি নামের এই টুলটি ব্যবহার করি। ধরা যাক, যে কোম্পানির জন্য ওয়েবসাইটটি বানানো হয়েছে তার মালিক সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আপনি ভাবছেন, ‘তাহলে ওয়েবসাইটটি কে রেজিস্টার করেছে? এবং কার নামে?’ এভাবে কখনো কখনো আপনি কোম্পানির মালিকদের পেয়ে যাবেন। কখনো হয়তো পাবেন সেই কোম্পানির কোনো কর্মচারীকে, যার ওপরে ছিল ওয়েবসাইট তৈরির দায়িত্ব।

“অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় – কে ওয়েবসাইটটি রেজিস্টার করেছে, তা গোপন রাখে কোম্পানিগুলো। অথবা দেখা যায় নিবন্ধন করেছে কোনো তৃতীয় পক্ষ, যারা ওয়েবসাইটটির মালিক নয়। কিন্তু এমন হতেই পারে, কেউ হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করে রেখেছে মালিক বা কোনো কর্মচারীর নাম।

দক্ষিণ আফ্রিকাতে গুপ্তাদের নিয়ে কাজ করার সময়, আমি খেয়াল করি: টাকা বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর জন্য গুপ্তাদের প্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে বিভিন্ন প্রক্সি কোম্পানির ব্যবহার। এরকম একেকটা কোম্পানিতে হয়তো একজন কর্মচারী কোথাও না কোথাও বসে কাজ করছে। কোম্পানির অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারা লাখ লাখ টাকা আদানপ্রদান করছে। ব্যবসায়িক নানা কারণে, এই প্রক্সি কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন হয়। হোক্সি ব্যবহার করে আপনি কখনো কখনো বের করে ফেলতে পারবেন , কে এই কোম্পানির ওয়েবসাইট রেজিস্ট্রি করেছিল। প্রায়ই দেখা যায় একজন মানুষই বিভিন্ন ওয়েবসাইট রেজিস্ট্রি করছেন। ফলে বোঝা যায়, সব কিছুই একটা বড় কর্মকাণ্ডের অংশ।

“অবশ্য মাথায় রাখা দরকার, দারুণ ফল দিলেও এসব টুল সবসময় যথেষ্ট নয়। প্রায়ই এই জাতীয় কেস সমাধান করার জন্য, আপনার দরকার হবে মানুষ এবং তথ্য। কোম্পানির পেছনে কে বা কারা আছে, সে বিষয়ে সোর্সের দেয়া তথ্য নিশ্চিত করতে পারে হোক্সি। বলতে পারে সেটি ঠিক, নাকি ভুল।”

অলিভিয়ের হোমি একজন ফরাসী-ব্রিটিশ সাংবাদিক ও অনুবাদক। থাকেন লন্ডনে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় বিনিয়োগ নিয়ে তার অনুসন্ধান ছাপা হয়েছে ইউরোমানি ম্যাগাজিনে। আর দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার জন্য লিখেছেন অবিচুয়ারি।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।