প্রবেশগম্যতা সেটিংস

الصورة : بيكسلز

লেখাপত্র

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার ৭টি কাঠামো, যা আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন

English

ছবি: পেক্সেল

আমাদের চারপাশে গল্পের যেমন শেষ নেই, তেমনি সেই গল্প বলার কৌশলও আছে অনেক। আমরা অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করি সমাজের গভীর সমস্যাগুলোকে, পথ দেখাই সমাধানের; বের করে আনি লুকোনো সত্য, যা এত দিন ছিল সবার চোখের আড়ালে; আমাদের অনুসন্ধান সমাজের দর্পণ হয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষ আর তাদের না-বলা কষ্টকে তুলে আনে গভীর অন্তদৃষ্টি দিয়ে। শেষপর্যন্ত, গল্পটা কেমন – তার ওপরই নির্ভর করে আপনি সেটি কীভাবে বলবেন।

দ্য সেভেন বেসিক প্লট” বইতে গল্প বলার কার্যকর কয়েকটি কাঠামো তুলে ধরেন ক্রিস্টোফার বুকার। যদিও বইটি ফিকশন তথা কাল্পনিক গল্প-উপন্যাসের কথা মাথায় রেখে লিখা, কিন্তু লংফর্ম এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও কাঠামোগুলো ফিরে ফিরে আসে।

অভিযাত্রা

ছবি: ফ্লিকার/হার্টউইগ এইচকেডি

কোনো কিছু পাওয়ার জন্য ছুটে চলা – রিপোর্টারের এমন অভিযাত্রা অনুসন্ধানী গল্প বলার বেশ প্রচলিত একটি ধরন। বিশেষ করে টেলিভিশনে এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় – যেখানে একজন উপস্থাপক, নিজেই বের হন সত্যকে জানার আশায়। আর তার সাথে এগিয়ে চলে গল্পের বর্ণনাও।

অবশ্য এই অভিযাত্রা যে কেবল উপস্থাপক বা রিপোর্টারের হতে হবে তা নয়। যাত্রাটি হতে পারে একজন সাধারণ মানুষের যিনি সমাজে পরিবর্তন চান; হতে পারে একজন হুইসেলব্লোয়ার বা প্রতিবাদী যুবকের যিনি রুখে দিতে চান চারপাশের অনিয়ম; হতে পারে এমন যে কোনো ব্যক্তির, যার চাওয়া সত্য বের করে আনা।

বুকারের বইতে মূল সাতটি কাঠামোর বাইরে “রহস্যের সন্ধানে” নামে আরেকটি স্টোরিটেলিং ফরম্যাটের কথা বলা হয়েছে। এখানেও সত্য বের করে আনার যাত্রা থাকে। তারপরও গল্পের এই ধরন নিয়ে আলাদা করে বলা প্রয়োজন, যেমনটা বুকারও করেছেন।

স্টোরিটেলিংয়ের এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এমন পরিস্থিতিতে – যখন আপনি হয়তো সত্যের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সত্যটাকে পুরোপুরি তুলে আনতে পারেননি, আবার সত্যের সন্ধানে আপনার যাত্রাটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক সময় অনুসন্ধান থেকে আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যায় না; কিন্তু অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে, এমন কিছু বাধা পেরুতে হয়, যা পাঠককে জানানো জরুরী – তখন বিকল্প এই ফরম্যাটের কথা ভাবতে পারেন।

দানবের সাথে লড়াই

ছবি: ফ্লিকার/শারিন মোরো

“দানবের সাথে লড়াই” নামের স্টোরিটেলিং ফরম্যাটটিও “রহস্যের সন্ধানে” ধাঁচের, তবে এখানে নায়কের বিপরীতে একজন খলনায়ক থাকে। সেই খলনায়ক বা দানব যে একজন ব্যক্তি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রভাবশালী মানুষ যেমন খলনায়ক হতে পারে, তেমনি হতে পারে পুলিশ বাহিনী বা মানব পাচারকারী গোষ্ঠীর মত দল বা প্রতিষ্ঠানও।

আবার দানব হতে পারে এমন কিছু, যা কোনো ব্যক্তি বা এলাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে (একটি দেশ অন্যায্য খনিজ সম্পদ আহরণ বা করফাঁকির কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে; পরিবেশে পরিবর্তন বা সংগঠিত অপরাধের কারণে হুমকিতে পড়তে পারে একটি শহরও)। কখনো কখনো হুমকিটি হতে পারে গোটা বিশ্বের জন্যেও (যেমন, জলবায়ূ পরিবর্তন বা পরমাণু অস্ত্র)।

দ্য লইয়ার হু টেইকস দ্য কেইসেস নো ওয়ান ওয়ান্টস হলো এই ফরম্যাটের একটি অনন্য উদাহরণ, যেখানে একজন আইনজীবি তার গ্রাহকদের রক্ষা করতে গিয়ে গোটা ব্যবস্থার (দানব) বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ান।

রেবেলিয়ন অ্যাগেইনস্ট ‘দ্য ওয়ান’ (এটিও মূল সাতটি কাঠামোর মধ্যে নেই) সম্ভবত ঘনঘোর, তমসাচ্ছন্ন আবহ নিয়ে বলা গল্পের এমন একটি উদাহরণ, যেখানে:

“কাহিনীর অর্ধেকটা জুড়ে নায়ক মনে করেন তিনিই ঠিক পথে আছেন, এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি অন্যায় করছেন। কিন্তু পরে গিয়ে নায়ক বুঝতে পারেন বাস্তবতা সম্পর্কে তার ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। বরং উল্টোটাই ঠিক। শেষপর্যন্ত, নায়কের উপলব্ধি হয়, তিনি যাকে দানব ভেবে আসছিলেন, সে আসলে দানব নয়।”

চিন্তা করে দেখুন, কোন গল্পটি এই কাঠামোর সাথে খাপ খায়? এমন কোনো ব্যক্তির গল্প বলতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যিনি কাহিনীর কোনো পর্যায়ে পক্ষ পরিবর্তন করেছেন অথবা যার যিনি বিদ্রোহী অতীত পিছনে রেখে এসেছেন।

শূন্য থেকে শিখরে

ছবি: ফ্লিকার/এড এসকুয়েটা

“শূন্য থেকে শিখর” – এই ফরম্যাটের প্লটে প্রধান চরিত্র নিজেই গল্পকে তুলে ধরেন। যেমন, কোনো ব্যক্তির ক্ষমতাধর হয়ে ওঠার গল্প বলতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে গল্পের একটি শাখাকে তুলে ধরতে এই ফরম্যাট কাজে আসে। আর সাধারণ রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে জীবনালেখ্য বা সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে এই ফরম্যাট প্রচুর ব্যবহার হয়।

ট্র্যাজেডি

‘ট্র্যাজেডি’ হল ‘শূণ্য থেকে শিখর’ ফরম্যাটের একেবারে বিপরীত: কোনো ভুলের কারণে খ্যাতির শীর্ষ থেকে কারো পতনের ঘটনা তুলে ধরতে স্টোরিটেলিংয়ের এই পদ্ধতি কাজে আসে। সাধারণত, সেই ভুলটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে যেসব ঘটনা ঘটে, সেখান থেকেই গল্প শুরু হয়।

“ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো” এই প্রশ্নকে সামনে রেখে যেসব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আবর্তিত হয়, সেখানে এই প্লটের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন: গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড বা ক্যারিলিয়নের পতনের মত ঘটনায় সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে বের করেন, কোন কোন ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে – আর এই ধরনের স্টোরিতে আক্ষরিক অর্থেই ট্র্যাজেডি শব্দটি বেশি ব্যবহার হয়।

বুটস ছিলো ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় ফার্মেসি। মানুষের কল্যাণের লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু এই পারিবারিক ব্যবসার। কিন্তু এক পর্যায়ে মুনাফার সীমাহীন লোভ বুটসকে তার প্রতিষ্ঠাতাদের মূল আদর্শ থেকে সরিয়ে আনে। প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গার্ডিয়ানের লংফর্ম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন “যেভাবে অসৎ হল বুটস,” ট্র্যাজেডিধর্মী স্টোরিটেলিং ফরম্যাটের একটি উদাহরণ।

যাওয়া, ফিরে আসা

ছবি: ফ্লিকার/সাইমন ম্যাটজিংগার

“যাওয়া, ফিরে আসা” ধাঁচের স্টোরিতেও একজন চরিত্রের যাত্রা বা ভ্রমণ তুলে ধরা হয়, যেখানে তিনি আবার সেই শুরুতেই ফিরে আসেন। এই ধরনের গল্পকাঠামোতে আগের জায়গায় ফিরে আসার কারণটি খুব শক্তিশালী হতে হয়।

এই কাঠামো কাজে আসতে পারে, মানবপাচারের ঘটনা অনুসন্ধানে, যেখানে অপরাধীদের মিথ্যা প্রলোভনে কোনো ব্যক্তি বিদেশে পাড়ি জমান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তাকে ফিরে আসতে হয় নিজভূমে। আরেকটি উদাহরণ হতে পারে হুইসেলব্লোয়িং। যেমন: চাকরি পেয়ে হয়ত কোনো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন গল্পের মূল চরিত্র। কিন্তু যোগ দেয়ার পরই বুঝতে পারলেন যেমন ভেবেছিলেন প্রতিষ্ঠানটি তেমন নয়। এখানে নানা রকমের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। এক পর্যায়ে তিনি অনিয়মের খবর ফাঁস করতে লাগলেন। ঠিক এই ধরনের ঘটনার একটি উদাহরণ হল “স্নোডেন” নামের চলচ্চিত্রটি। নিছক পেশা পরিবর্তনের ঘটনাও উঠে আসতে পারে এই কাঠামোতে; যেমন,  কোনো ফুটবলারকে ক্যারিয়ারের মাঝ পথে ইনজুরিতে পড়ে খেলা ছেড়ে দিতে হয়। ফিরে আসতে হয় ঘরে, শুরু করতে হয় নতুন করে।

যাওয়া আর ফিরে আসার এমন একটি অনুসন্ধানী গল্প হল “ফলো দ্য মানি।” আমার সাথে এই প্র্রযোজনায় কাজ করেছেন ইয়েমেসি আকিনবোবোলা এবং ওগেচি ইকেনিয়াউ। প্রতিবেদনটি নাইজেরিয়ার কিছু উদীয়মান ফুটবল খেলোয়াড়কে নিয়ে, যারা সুযোগ পাওয়ার আশায় পাড়ি জমান ক্যামেরুনে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের জায়গা হয় না কোথাও। এই স্টোরি করতে গিয়ে একের পর এক ঘটনা যখন আমাদের সামনে আসে, তখনই বুঝেছিলাম “যাওয়া-আসার” ন্যারেটিভটা এই প্রতিবেদনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

পুনর্জন্ম

ছবি: ফ্লিকার/নেচার থেরাপি

“পুনর্জন্ম” ধাঁচের গল্প কাঠামোয়ও ফিরে আসার বিষয় থাকে, তবে এই ফিরে আসা মৃত্যুর মত কোনো পরিস্থিতি থেকে। এই কাঠামোয় বলা গল্পের অন্যতম উদাহরণ হল স্নো হোয়াইট, যেখানে রাজকুমারী ১০০ বছরের ঘুমের ফাঁদে বন্দী হয়ে পড়েন, যতক্ষণ না একজন রাজকুমার এসে তাকে জাগিয়ে তোলেন। আরো ভালো উদাহরণ বলা যেতে পারে “দ্য ফ্রগ প্রিন্স” বা  “বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট” এর মত গল্পকে: উভয় ক্ষেত্রেই মূল চরিত্র কোনো নির্দিষ্ট অবস্থায় (ব্যাং/পশু) বন্দী হয়ে পড়েন, এবং পরে কোনো না কোনো উপায়ে বেরিয়ে আসেন; তাদের পুনরাবির্ভাব ঘটে।

তবে সাংবাদিকদের জন্য সবচে কার্যকর উদাহরণ হল “আ ক্রিসমাস ক্যারল।” এই গল্পে একজন নীচ ও কপট ব্যবসায়ীর পুনর্জন্ম হয়, একজন উদার-উপকারী মানুষ হিসেবে। কীভাবে এই রুপান্তর হল, তাকে উপজীব্য করেই গল্পটি গড়ে উঠেছে।

এই কাঠামো কোনো ব্যক্তির প্রোফাইল বা সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনেও কাজে আসে। “খলনায়ক থেকে নায়ক” ধাঁচের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বেলায়ও কাঠামোটি কাজে আসতে পারে।

যদি সরাসরি কোনো খবরের উদাহরণ চান, তাহলে বলতে হবে “দ্য আনক্যাচেবল” এর কথা। এই স্টোরিতে তুলে ধরা হয়েছে, গ্রীসের মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী কীভাবে গ্রামীন জনপদের নায়ক হয়ে উঠলেন।

কমেডি

.

কমেডি প্লট অবশ্য সাংবাদিকতায় খুব একটা দেখা যায় না। এর কারণ সম্ভবত, কমেডি গল্পের বিষয়বস্তু, সাধারণত খুব সিরিয়াস হয় না। এ ধরণের প্লটে প্রথমে সব কিছু উল্টো পথে চলে, তারপর সেটিকে ঠিক পথে আনা হয়। এখানে কমেডি বলতে সরাসরি হাস্যরসের উপস্থিতিকে বোঝানো হয় না।

এমন ধাঁচের গল্পের সবচেয়ে বড় উদাহরণ শেকসপিয়ারের কমেডি: যেখানে গল্পের বিষয়ই হল পারষ্পরিক ভুল বুঝাবুঝি, যা শেষ হয় সবার মিলমিশের মধ্য দিয়ে। ইংরেজীতে “কমেডি অফ এররস” বলে একটা কথা আছে, যার মানে হাস্যকর রকমের ভুলে ভরা। কোনো ঘটনার খবর নিতে গিয়ে যদি এমন নজির পান, তখন ভেবে দেখতে পারেন সেই প্রতিবেদনে কমেডি প্লট ব্যবহার করা যায় কিনা।

সাম্প্রতিক সময়ে আমি যত কমেডি প্লট দেখেছি, তার অন্যতম ওপরের টুইটার থ্রেডটি।

জুড়ে দিন আলাদা প্লট

মনে রাখবেন, একটি স্টোরিতে একাধিক প্লট থাকতে পারে। হয়তো গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিযাত্রায় সাক্ষাৎ মিলবে একাধিক খলনায়কের। চার্লস ডিকেন্সের “আ ক্রিসমাস ক্যারল” নিশ্চই পড়েছেন। তার কেন্দ্রীয় চরিত্র স্ক্রুজের গল্পে, শূণ্য থেকে শিখরে ওঠার প্লট যেমন আছে, তেমনি আছে তার বাগদত্তা বেলের সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ট্র্যাজেডিও। দুটো গল্পই সমান্তরালে বলা হয়েছে, গোস্ট অব দ্য ক্রিসমাস পাস্ট অংশে।

যেখানে একাধিক প্লটকে একত্রে আনবেন, সেখানে কোন গল্পটি মুখ্য, কোনটি গৌণ – সেই বিষয়টি আপনাকে পরিষ্কার করতে হবে।

গল্পের প্লটকে প্রশ্ন করা

ছবি: ফ্লিকার/ইলিয়াস রুই মনসেরাত

নির্দিষ্ট গল্পকাঠামো ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল, আপনার পাওয়া তথ্যগুলোকে সহজে বুঝতে সাহায্য করা; যে গল্পটা বলতে চাচ্ছেন তাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলা। কাঠামোর ছাঁচে ঢেলে সত্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা এর উদ্দেশ্য নয়।

কোনো গল্প “শূণ্য থেকে শিখর” কাঠামোয় বলা মানে এই নয়, আপনি তাকে বিকৃত করছেন। বরং কাঠামো দিয়ে আপনি তাকে আরো সহজবোধ্য করে ‍তুলছেন সম্পাদকের কাছে। কাঠামো দিয়ে আপনি গল্পের ইস্যুগুলোকে আরো নিবিড়ভাবে বুঝতে সাহায্য করছেন।

হতে পারে, “শূণ্য থেকে শীর্ষে ওঠার গল্পে অন্য মারপ্যাঁচ আছে” অথবা “চরিত্রের অভিযাত্রা যতটা সরল ভেবেছিলেন ততটা নয়”; এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রশ্ন করুন, সাদা চোখে দেখে যা মনে হচ্ছে, তা-ই কি ঠিক। (নিচের টুইটটি একটি উদাহরণ যেখানে একজন উদ্যোক্তার বড় হয়ে ওঠোর গল্পকে প্রশ্ন করা হচ্ছে।)

.

গল্পের প্লটকে প্রশ্ন করার এই পর্যায়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বিশৃঙ্খলা থেকেই প্যাটার্নের জন্ম দেয়। আর সাংবাদিকরা তো সেই প্যাটার্ন তৈরিতে রীতিমত বিশেষজ্ঞ। আমাদের কাজই হল, ঘটনার পরম্পরাকে একটি সুতোয় বেঁধে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে সবাই গল্পটা বুঝতে পারে।

আমরা প্রতিনিয়তই এই কাজ করছি। তাই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার সময় গল্পের কাঠামো নিয়ে চিন্তা করুন। এই চিন্তা বুঝতে সাহায্য করবে, আপনি কি জেনে বুঝে কোনো কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, নাকি না বুঝেই।

প্রতিবেদনের জন্য গল্পকাঠামো বাছাইয়ের আগে নিজেকে যেসব প্রশ্ন করবেন:

গল্পের “দানব” কি আসলেই দানব — তার এমন পরিণতির কারণ কী? চরিত্রের অভিযাত্রা কি সবসময় ভালোতেই শেষ হয়? (উত্তর: না।) এর আর কী কী অভিঘাত থাকতে পারে? “যাওয়া, ফিরে আসার” গল্পে ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে সব তথ্য কি আপনার কাছে আছে? কেউ কি কোনো তথ্য গোপন করছে, যাতে গল্পটিকে “শূণ্য থেকে শিখরে” ওঠার মত মনে হয়? গল্পে কি আসলেই চরিত্রের “পুনর্জন্ম” হয়েছে? ট্র্যাজেডির গল্পে হেরে যাওয়া মানুষই আসল — কিন্তু আপনি কি জানেন এই ট্র্যাজেডি থেকে কে লাভবান হচ্ছে?

সর্বোপরি, প্রতিবেদন লেখার সময় একটি গল্পকাঠামো ব্যবহার করার সবচে বড় সুবিধা হল, এটি আপনার গল্পের অসম্পূর্ণতাকে দূর করবে।

 

এই লেখা প্রথম প্রকাশিত হয় পল ব্র্যাডশ’র অনলাইন জার্নালিজম ব্লগে। এখানে অনুমতি নিয়ে পুনপ্রকাশ করা হল।

পল ব্র্যাডশ, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে   ডেটা সাংবাদিকতা এবং মাল্টিপ্লাটফরম ও মোবাইল সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতোকোত্তর কোর্স পরিচালনা করেন। তিনি অনলাইন সাংবাদিকতা নিয়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে “অনলাইন জার্নালিজম হ্যান্ডবুক,” “ফাইন্ডিং স্টোরিজ ইন স্প্রেডশিটস,” “ডেটা জার্নালিজম হাইস্ট,” এবং “স্ক্র্যাপিং ফর জার্নালিস্টস।”

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।