প্রবেশগম্যতা সেটিংস

অলংকরণ: মার্শাল লো

রিসোর্স

» গাইড

বিষয়

সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচনী গাইড: রাজনৈতিক বার্তা ও অপতথ্য অনুসন্ধান 

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

সম্পাদকের মন্তব্য: এই গাইডটি ২০২৪ সালের নির্বাচন ঘিরে পরিমার্জন ও হালনাগাদ করা হয়েছে। এটি মূলত ২০২২ সালে প্রকশিত হয়েছিল। আগের সংস্করণের অধ্যায়টি এখানে পড়তে পারেন।

নির্বাচনী অপতথ্যের বিরুদ্ধে কাজ শুরুর একটি কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে স্বচ্ছ ও আপোষহীন থাকা: সাংবাদিকতার কাজ-ই এটা, আর অবশ্যই গণতন্ত্রের পক্ষ নিতে হবে, নেওয়া উচিতও, এবং গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে কাজ করা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কমপক্ষে এইটুকু মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগগুলো মোকাবিলা করাটা সহজ হয়। আর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের উদ্দেশ্যে তৈরি কী ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং অসৎ কোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামা জরুরি, তাও বোঝা যায়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের নির্বাচনী বিভ্রান্তিমূলক বা অপ তথ্য নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নির্বাচন ঘিরে ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর স্বাধীন গণমাধ্যম—যেমন ফিলিপাইনের র‍্যাপলার, ভারতের দ্য কুইন্ট, আর দক্ষিণ আফ্রিকার ডেইলি ম্যাভেরিক—একই ধরনের পথ অনুসরণ করছে। তাদের কাজের মূল শক্তি হলো গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ববোধ আর জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতার প্রতি অঙ্গীকার।

এই সব ঝুঁকিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের বার্তাকক্ষগুলো জনতুষ্টিবাদী প্রার্থীদের উস্কানিমূলক আচরণ ও বিভেদমূলক বক্তব্যকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। এর বদলে তারা এমন সব বিষয় খুঁজে দেখার দিকে জোর দিচ্ছে যেগুলো সরাসরি মানুষের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে। এছাড়া যেসব বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা বেশি ক্ষতি করতে পারে—সেগুলো আগেভাগে শনাক্ত করার দিকেও নজর দিচ্ছে।

আরেকটি কৌশল হচ্ছে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যে বার্তাকক্ষগুলো বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার নেপথ্যের অসৎ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করবে। বার্তাকক্ষের পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার ফলে একদিকে সোর্স ও হুইসেলব্লোয়াররা যেমন আকৃষ্ট হয়, অন্যদিকে রিপোর্টারদের ওপর শুধু মিথ্যা তথ্য খণ্ডন করা নয়, গভীরে গিয়ে সত্য উদঘাটন করার চাপও তৈরি হয়। যেমন ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম একটি ইনফ্লুয়েন্স অপারেশনস প্রকল্প চালু করেছে—যা এআই-নির্ভর একটি মডেলের অংশ। এটি অন্য দেশেও ব্যবহার করা যেতে পারে। কেবল প্রতারণামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভোটারদের প্রভাবিত করার অসৎ উদ্দেশ্য উন্মোচনই এই প্রকল্পের লক্ষ্য নয়, বরং নেপথ্যের ব্যক্তিদেরও সামনে আনা।

অসৎ উদ্দেশ্যের ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে তৈরি ডিজিটাল মারসেনারিজ’ নামের যৌথ আন্তসীমান্ত প্রকল্পটি নির্বাচনী বিভ্রান্তিমূলক তথ্য অনুসন্ধানের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া ও মেক্সিকোসহ ১৬টি দেশের বার্তাকক্ষ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে সংগঠিত একদল বাণিজ্যিক পরামর্শদাতাদের নেটওয়ার্ক উন্মোচিত করে। প্রকল্পটিকে সমন্বয় করে লাতিন আমেরিকান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম—স্প্যানিশ ভাষায় সংক্ষেপে ক্লিপ( CLIP) নামে পরিচিত। প্রতিবেদন সিরিজে দেখানো হয়, কীভাবে এই প্রভাববিস্তারকারী “ভাড়াটে” কর্মীরা বিদেশীদের প্রতি বিদ্বেষ আর দলীয় ঘৃণাকে উস্কে দিয়ে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। এছাড়া ‘ফলো দ্য মানি’ পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে তাদের এসব কৌশল কীভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তথাকথিত এইসব ডার্ক পিআর–এর লোকেরা নিজেদের বড় মাত্রার কৌশলী ব্যক্তি ভাবতে পছন্দ করেন। কিন্তু  বাস্তবে তারা মূলত মানুষকে প্রভাবিত করার কায়দা-কৌশল জানা টেলিভিশন প্রচারকদের মতো। তবে দেখা গেছে, অনেক সময় ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এদের প্রভাব রাজনীতিবিদদের চেয়েও বেশি হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো নিশ্চিতভাবেই  নির্বাচনী রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে এগিয়ে আছে। এর প্রভাব বিশাল ও বিভক্ত। ইতিবাচক দিকের মধ্যে যেমন রয়েছে— তরুণ ও ভোটাধিকারবঞ্চিত ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। তুচ্ছ দিক যেমন— প্রার্থীদের নিয়ে মিম ছড়ানো। আবার কিছু বিভ্রান্তিমূলক দিক যেমন অর্থ দিয়ে তৈরি করা বিজ্ঞাপন বা সবাই মিলে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা। জাতিগত বা দলীয় প্ল্যাটফর্মে ঘৃণাসূচক বক্তব্যকে স্বাগত জানানো। বেশ কয়েকটি প্রধান সামাজিক মাধ্যম তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা—যেগুলো আগে থেকেই নাজুক ছিল—তা আরও সংকুচিত করেছে, আর ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য পর্যবেক্ষণকারী দলের সক্ষমতা কমিয়েছে বা কর্মীদের বাদ দিয়েছে।

বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয় পরিকল্পনা করে, আর টাকার জোরে। কারণ এটি জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘুরিয়ে দিতে পারে—এমন প্রমাণও আছে। এমনকি এটি ভবিষ্যতের নির্বাচনে একতরফা জয়ের পথ তৈরি করতে পারে। কারণ বিভ্রান্তির জোরে নতুন অগণতান্ত্রিক আইনও পাশ করানো যায়। ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিতে আগ্রহী ভোটারদের প্রায় ৪ শতাংশ — যা আসলে নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার মতো — ভুয়া খবরের কারণে তার প্রতি সমর্থন থেকে সরে দাঁড়ায়। এসব ভুয়া খবরের মধ্যে ছিল এমন শিরোনামও: “ক্লিনটন ইসলামিক জিহাদিদের—‘আইএসআইএস সহ’—অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন।” বারাক ওবামার সাবেক ভোটারদের প্রায় ২০ শতাংশ এমন খবরকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।

যা নজরে রাখা জরুরি: বড় ধরনের নতুন-নতুন অপতথ্যের হুমকি


বিদেশি হস্তক্ষেপের নতুন মাত্রা

Elections Guide Chapter 4 small image final

জিআইজেএনের জন্য অলংকরণটি করেছেন মার্শেল লো

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখা গেলেও, ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা ও গণতন্ত্রপন্থী থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠিত স্বৈরশাসক দেশগুলো—যেমন রাশিয়া, ইরান এবং চীন—সম্ভবত ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের সময়সূচি এবং তাদের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করবে। তাদের লক্ষ্য “গণতন্ত্রকে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার আদর্শ হিসেবে অবমাননা করা।”

বিশেষজ্ঞরা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় এবার অনেকে সম্ভবত রাশিয়ার ডপেলগ্যাঙ্গার (Doppelgänger)  কৌশল অনুকরণ করবে। সাম্প্রতিক এই প্রকল্পের অধীনে তারা ১৭টি বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমকে “ক্লোন” করে। অনুরূপ ডোমেইন নাম, নকশা, সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল এমনকি সার্চ রিডাইরেক্ট পর্যন্ত হুবহু নকল করে—আর এআই ব্যবহার করে ভুয়া আর্টিকেল ও পোস্ট বানায়। (ইইউ ডিজইনফোল্যাব–এর গবেষকেরা মেটা অ্যাড লাইব্রেরি, ক্রাউডট্যাঙ্গেল এবং ওপেন–সোর্স ডোমেইন টুল ব্যবহার করে এই রাশিয়ান নেটওয়ার্ক অনুসরণ করেছিলেন।) আরেকটি উদাহরণ হলো চীনের স্প্যামোফ্লেজ (Spamouflage)  অপারেশন। এখানে তারা বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা ছড়ায়। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন কঠোর নজরদারি শুরু করে, তখন তারা খুব সহজেই ছোটখাটো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ও ফোরামে গিয়ে প্রচারণা চালায়।

এদিকে বিদেশী ও দেশীয়—দুই ধরনের সাইবার হামলার সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো ডিডিওএস (ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস) আক্রমণ। এগুলো সাধারণত নির্বাচনী প্রচারণা ওয়েবসাইট বা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সাইটকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। অনেক সময় ইচ্ছে করে এমন দিনে আক্রমণ করা হয়, যখন ভোটার নিবন্ধন বা ভোটগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে।

পরামর্শ: বিদেশি হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত নিশ্চিত কোনো তথ্য না থাকলেও যেসব সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়, সেগুলো জানার জন্য antibot4navalnyএর মতো স্বেচ্ছাসেবী ট্রল ফার্ম ওয়াচডগ গ্রুপের হালনাগাদ তথ্যগুলো দেখতে পারেন।

ডিপফেক এআই ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর নকল করা

ভালো বিষয় হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাস্তবের মতো দেখতে “ডিপফেক” ভিডিও ও ছবি নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেনি—যেমনটি মিডিয়া ম্যানিপুলেশন বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন। তবে কম প্রযুক্তিনির্ভর বিভ্রান্তিমূলক একটি পদ্ধতি, যা “চীপফেক” নামে পরিচিত, বহু দেশে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। এতে প্রার্থীদের আসল ভিডিও ক্লিপের ক্লোজড ক্যাপশন সম্পাদনা করে ভুয়া বা অপ্রত্যাশিত মন্তব্য যোগ করা হয়, যাতে ফোনে অডিও ছাড়া ভিডিও দেখার সময় ভোটাররা সেই মিথ্যা তথ্য বিশ্বাস করতে শুরু করেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা এখন পুরোপুরি আশাবাদী যে, ডিপফেক, বিশেষ করে এআই-নির্মিত কণ্ঠ নকল বহু দেশে নির্বাচনের জন্য হুমকি হয়ে আসতে পারে। কারণ নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলগুলো ব্যবহার এখন সহজলভ্য। তাদের এই আশঙ্কা আরও দৃঢ় হয়েছে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের  সাম্প্রতিক একটি গবেষণা ফলাফল থেকে। সেখানে দেখা গেছে, প্রায় ২৭ শতাংশ ক্ষেত্রে মানুষ কণ্ঠস্বরের ডিপফেক শনাক্ত করতে পারে না— অর্থাৎ যেখানে কোনো ব্যক্তির কণ্ঠকে মেশিন লার্নিং টুল দিয়ে নকল করে ভুয়া বার্তা ছড়ানো হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে স্লোভাকিয়ার নির্বাচনের কয়েক দিন আগে, স্লোভাকিয়ার পশ্চিমাপন্থী প্রগতিশীল একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতার কণ্ঠস্বর নকল করে একটি ডিপফেক অডিও ভাইরাল হয়। এতে নির্বাচনী জালিয়াতি নিয়ে একটি আলোচনা দেখানো হয়েছিল। আর এর সঙ্গে রাশিয়াপন্থী একটি দলের আংশিক জয়ের সম্পর্ক আছে বলে ধরা হয়েছে। ইনফোসিকিউরিটি ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউরোপ ও ভারতের ভোট পর্যন্ত, বিশ্বকে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন সাইবার হুমকির জন্য প্রস্তুত হতে হবে।” প্রতিবেদনে একজন সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের কথাও উল্লেখ করা হয়। যিনি ২০২৪ সালের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে একটি নতুন কৌশলের কথা বলেছেন। যেমন, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াতে দক্ষ ব্যক্তিরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ হিউম্যান ইনফ্লুয়েন্সারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে, যাদের ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এভাবে তাদের “ভক্ত-অনুরাগী-অনুসারীদেরও প্রভাবিত করবে, এবং মিথ্যা কাহিনী তৈরি করবে, যা উত্তেজনা ছড়াবে এবং রাজনৈতিক ভিত্তিগুলোকে আরও বিভক্ত করবে।”

ব্যক্তিগত ভোট জালিয়াতির মিথ

অপতথ্য সম্পর্কিত এমন একটি ঘটনা আসলে খুঁজে পাওয়া কঠিন—যার ব্যাপ্তি অনেক, ভিন্ন ভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ভিত্তিহীন আবার সফলও। যেমন দাবি করা হয়, হাজার হাজার, এমনকি লাখ লাখ ভোটার নাকি বারবার ভোট দিতে গিয়ে বা ভোটকেন্দ্রে অন্য নাগরিকের পরিচয় নকল করতে গিয়ে ফৌজদারি মামলার ঝুঁকি নিচ্ছেন। অথচ  ব্রেনন সেন্টার ফর জাস্টিসের গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে পরিচয় নকল করে ভোট দেওয়ার ঘটনা মাত্র ০.০০০৩ শতাংশ থেকে ০.০০২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘটে। পরিসংখ্যানগতভাবে যা কোনো ব্যক্তির বজ্রপাতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনার চেয়েও কম। এটি নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেয়—এ কথাটি আরও অবাস্তব। তবুও ব্রাজিল থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র আর মায়ানমার পর্যন্ত— জনতুষ্টিবাদীরা ও তাদের সমর্থকরা, এমনকি সামরিক জান্তারা, এই মিথকে কেন্দ্র করে যুতসই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। ফলে সংখ্যালঘু ও অভিবাসী সম্প্রদায়গুলো আরো ভীত ও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। নতুন ভোট সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে— বাস্তবে যা হাজার হাজার নাগরিকের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এগুলো নির্বাচনের ফলাফলও পরিবর্তন করতে পারে।

পরামর্শ: মিথ ভাঙার জন্য ডেটাভিত্তিক গ্রাফিক্স এবং প্রভাবশালী রূপক ব্যবহার করুন। যেমন, ব্যক্তিগত ভোটার জালিয়াতি রোধ করার জন্য ভোটারদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করাটা অনেকটা এমন—গাড়ি দুর্ঘটনার সময় এক বছরে এই ক’জন ড্রাইভারের সিটবেল্ট আটকে গেছে বলে সিটবেল্ট ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া। বা মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার মতো।

বিভ্রান্তির ‘ফ্লাডিং জোন’

সাংবাদিকরা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ঝুঁকির সঙ্গে পরিচিত। তবে অনেক দেশ এখন এমন এক ধরনের তথ্য প্রবাহের শিকার হচ্ছে— কিছু গবেষক যেটিকে “তত্ত্ববিহীন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব” নাম দিয়েছেন। এগুলো মূলত শক্তিশালী বার্তা ছড়ানোর কৌশল। ট্রাম্পের একসময়কার উপদেষ্টা ও ডানপন্থী উস্কানিদাতা হিসেবে পরিচিত স্টিভ ব্যানন যেটিকে “ফ্লাডিং দ্য জোন উইথ শিট” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এটির লক্ষ্য দাবিগুলো সত্য নাকি মিথ্যা—আনুষ্ঠানিক কোনো প্রমাণ ছাড়াই শুধু দাবির পাহাড় তৈরি করা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের জোয়ারে সবকিছু ভাসিয়ে দেওয়া। মানুষ যাতে ভুলগুলো ধরতে না পারে, আর গণমাধ্যম ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে বিশ্বাস হারায়। দলীয় সমর্থকদের কল্যানে আর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদমের মাধ্যমে যা আরো ছড়িয়ে পড়ে। কেননা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদমগুলো উস্কানিমূলক বা উত্তেজক বক্তব্যকে সত্যের উপরে জায়গা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধরনের “নগ্ন দাবিযুক্ত বার্তা” বিশ্বের গণতন্ত্রের জন্য লুকানো হুমকি। কারণ বারবার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে এগুলো বাস্তব হয়ে ওঠে। রোলিং স্টোনের একটি অনুসন্ধানে যেমনটা দেখা গেছে, ট্রাম্প কীভাবে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ডেটা কাঠামো ঘিরে বিভ্রান্তিকর দাবি ছড়ানোর প্রধান উৎস ও প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন।

সার্বিয়ার সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের (সিআইএনএস) পরিচালক ব্রানকো চেচেন সতর্ক করে বলেছেন, বলকান অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক ভোটার সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অনলাইন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রভাবে পড়েছে। চেচেন বলেন, এই নগ্ন দাবির প্রবাহ অন্যান্য নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক উদাসীনতা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে তারা, যারা “ কেবল চোখ বুঝে সহ্য করে গেছেন।”

পরামর্শ: কোনো বিষয় সম্পর্কে সত্যি তথ্যগুলো বারবার তুলে ধরুন এবং যেখানে সম্ভব, ছবিসহ বা গ্রাফ দিয়ে প্রকাশ করুন যাতে পাঠক সহজে বুঝতে পারে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় প্রথাগত গণমাধ্যমগুলো আজও স্বৈরাচারী ও জনতুষ্টিবাদী প্রার্থীদের হয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারক হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। আফ্রিকা ও ভারতের মতো দেশে, এসব গণমাধ্যম জটিল ও সুসংগঠিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মিথ্যা বয়ান তৈরি করেছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর স্বৈরাচারী নেতা ও সমর্থকদের একচেটিয়া দখলদারিত্বের কারণে সার্বিয়া ও পোল্যান্ডের মতো দেশে বিরোধীদলীয় কণ্ঠগুলো চাপা পড়েছে। মিডিয়া ও জার্নালিজম রিসার্চ সেন্টার উল্লেখ করেছে, সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা হয়েছে, কিন্তু দলীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমের নির্বাচনী প্রভাব নিয়ে গবেষণা হয়েছে কম। সেন্টারের পক্ষ থেকে ডিকোডিং দ্য পাওয়ার প্লে: মিডিয়া অ্যান্ড ইলেকশনস ইন ২০২৪ নামে একটি সার্চযোগ্য তথ্য সংগ্রহ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। যা এরই মধ্যে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট এবং নেপথ্যের তথ্য সরবরাহ করেছে। লক্ষ্য ৪০টি নির্বাচনী দেশের গণমাধ্যম সংস্থা ও রাজনৈতিক সংস্থার মধ্যকার সংযোগ তৈরি।

ডেটা শেয়ারিং ও ট্র্যাকিং-এর কারণে অনলাইন নির্বাচনী বিজ্ঞাপন এখন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ছোট ছোট অংশ বা উপগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় বা তাদের সামনে তুলে ধরা যায়। ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ নামের বৈশ্বিক ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান বলছে, “বিভিন্ন ধরনের আইন ও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ঘিরে উদাসীন মনোভাবের কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় জবাবদিহির অভাব তৈরি হয়েছে। এভাবে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক অপতথ্য ছড়িয়ে পড়ছে।”

ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত অনলাইনে মিথ্যা তথ্য উন্মোচন এবং পরিবর্তিত বা বিকৃত ছবি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে। তবে  নির্বাচনী বিভ্রান্তি বা নোংরা কৌশলের পিছনের ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করার কাজগুলো প্রায়ই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের উপরই বর্তায়। সাংবাদিকরাই এখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উন্মোচনের প্রধান উৎস। যেমন: কে অনলাইনে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে? কোন ভোটারদের মধ্যে তারা কী ধরনের আলোচনা উত্থাপন করছে? প্রার্থীদের তহবিল কোথা থেকে আসছে?

ডিসইনফর্মেশন বা  ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার  ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির হুমকিতে আক্রান্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সাংবাদিকদের জন্য মিয়ামি হেরাল্ডের অনুসন্ধানী সাংবাদিক সারা ব্লাস্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন: “গণতন্ত্র আপনার ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি ভঙ্গুর, তাই নির্বাচনের কভারেজ এমনভাবে করুন যেন আপনি একজন বিদেশি সংবাদদাতা।”

এই অধ্যায়ে আমরা অনলাইনে রাজনৈতিক আলোচনা, নির্বাচনী বিজ্ঞাপন, এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ধারাগুলো অনুসরণ করার জন্য কিছু কার্যকর কৌশল সম্পর্কে বলেছি। পাশাপাশি, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া ম্যানিপুলেশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই প্রচারণার উৎস খুঁজে বের করতে তারা আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকদের সতর্ক করতে “ডার্টি ট্রিকস” বা নোংরা কৌশল নামে একটি তালিকাও রয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে এর পেছনের দোষীদের বা সন্দেহজনক আইনগুলোকে উদঘাটন করা যায়।

শব্দ ব্যবহার সম্পর্কিত একটি ছোট পরামর্শ: এই অধ্যায়ে মিসইনফরমেশন শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ ভুল তথ্য। বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য থাকুক বা না থাকুক অজ্ঞতা বা অসতর্কতার কারণে এমন ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। আর ডিসইনফরমেশন কিংবা “ইনফ্লুয়েন্স অপারেশনস” বোঝায় ইচ্ছাকৃত বা  উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর বা পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য প্রকাশ, তথ্য বা ন্যারেটিভ বিকৃত করা, এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানো।

বার্তা প্রচারের যেসব প্রবণতাগুলো নজরে রাখা জরুরি

ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ নির্বাচনী বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের তিনটি প্রধান ধারা চিহ্নিত করেছে।

১. রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের বদনাম করার জন্য তৈরি বিভ্রান্তিমূলক অপতথ্য।

২. ভোটের প্রক্রিয়া ব্যাহত করা ভোটারদের অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে চালানো প্রচারণাযেমন ভোটের সময় বা জায়গা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া।

৩. নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করার জন্য ছড়ানো মিথ্যা তথ্য।

ফার্স্ট ড্রাফট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্লেয়ার ওয়ার্ডল সতর্ক করে বলেছেন, নির্বাচনে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিভ্রান্তিমূলক কৌশল হলো “কোনো পরিস্থিতি বা ঘটনাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা” — যেখানে সত্যিকারের তথ্য বা কনটেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়। এএফপির দুই পর্বের নতুন অনলাইন কোর্স “হাউ টু ট্যাকল ডিসইনফরমেশন ডিউরিং ইলেকশনস” — কোর্সটি ফরাসি, ইংরেজি, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায় পাওয়া যায় — বিশ্বজুড়ে ২০২৪ সালের বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে কাজ করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

জেনারেটিভ এআই বট থেকে শুরু করে সহজে ব্যবহার করা যায় এমন বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপের জনপ্রিয়তা নির্বাচন ঘিরে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এখন কোনো দলের একজন কর্মী চাইলেই এআইয়ের সাহায্যে তৈরি ডজনখানেক কনটেন্ট অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে পারে। যেগুলো দেখতে বার্তাকক্ষের যাচাই-করা প্রতিবেদন বা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত আসল ভিডিওর মতো লাগতে পারে।

ভোটারদের ফোনে বিরক্ত করা বা ভয় দেখানোর মতো প্রভাব-প্রচারণা বন্ধে বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রচারণাগুলো এখন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই নিয়মগুলোর ফাঁকফোকর খুঁজে বের করছে। তারা অচেনা নম্বর থেকে গণহারে বার্তা পাঠিয়ে সমর্থকদের নির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচী বা ভোটকেন্দ্রে ভিড় করার জন্য বার্তা দিতে পারে বা উসকে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন যেমন “অটোডায়ালিং” ব্যবহার করে নাগরিকদের রাজনৈতিক বার্তা পাঠানো নিষিদ্ধ করেছে। এর জবাবে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা নম্বরে কল করার পরিবর্তে হাজারো স্বেচ্ছাসেবক লাগিয়ে এমন একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করছে, যেখানে একজন প্রার্থীর নামে বহু মানুষের কাছে একসঙ্গে বার্তা পাঠানো যায়। এভাবে অনুমতির তোয়াক্কা না করেই বিপুল সংখ্যক ভোটারের ফোনে বিরক্তিকর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

একইভাবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি একটি বিশাল স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যারা আগে থেকে লেখা একই বার্তা ও প্রচারণার মূল কথাগুলো তাদের বন্ধু–পরিবারের মধ্যে বারবার ছড়িয়ে দিচ্ছে।

আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আফ্রিকার বহু দেশে নির্বাচনের সময় ব্যাপক মাত্রায় বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক গবেষক টেসা নাইট কাজ করেন দ্য অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের ডিজিটাল ফরেনসিক রিসার্চ ল্যাব (ডিএফআরল্যাব)-এ। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “আমরা  বিভ্রান্তিমূলক যে প্রচার-প্রচারণাগুলো শনাক্ত করেছি, তা শুধু পানির নীচে থাকা বিশাল বরফখণ্ডের (আইসবার্গ) চূড়ামাত্র। সরকার ও রাজনৈতিক দলের নেতারা যখন ভুয়া, নকল ও সমন্বিত কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগোরিদম নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল শিখছে, তখন এই প্রবণতা আরও বাড়ছে।”

রাজনৈতিক বার্তা অনুসরণের কৌশল

নির্বাচনের সময় তথ্য প্রবাহের মাত্রা এত বেশি থাকে যে বিশেষজ্ঞরা যতটা সম্ভব পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে সাজিয়ে ও স্বয়ংক্রিয় করে নিতে চান। ডিজিটাল মিডিয়া ম্যানিপুলেশন বিশেষজ্ঞ জেন লিটভাইনেঙ্কো বলেন, “যখন আপনি সেই ব্যক্তিদের নজরে রাখছেন যারা আলোচনা চালাচ্ছে, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অ্যালগোরিদমকে কাজ করতে দেওয়া — আপনি একটি অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করলেই ইনস্টাগ্রাম নিজে থেকেই আপনাকে সেই ধরনের আরও অনেক অ্যাকাউন্ট সাজেস্ট করবে।”

কোথায় রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে, তা খুঁজে বের করুন। প্রতিটি দেশ, অঞ্চল, কিংবা মতাদর্শভিত্তিক গোষ্ঠীর নিজস্ব পছন্দের সোশ্যাল মিডিয়া বা ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু জায়গায় হোয়াটসঅ্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয়; চীনে উইচ্যাট; ডানপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে মূলত টেলিগ্রাম বা ভিকে; আর ফিলিপাইন প্রায় পুরোপুরি ফেসবুকের ওপরই নির্ভরশীল। তাই আপনার দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে কোন প্ল্যাটফর্মে এসব আলাপ বেশি হচ্ছে, শুরুতেই তা শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।

Hand holding cellphone with Telegram app imag

আপনার দেশে অনলাইনে রাজনৈতিক আলোচনা কোথায় কোন প্ল্যাটফর্মে চলছে, তা খুঁজে বের করুন। ছবি: শাটারস্টক

লিটভাইনেঙ্কো ব্যাখ্যা করেন, “প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোথায় আলোচনাগুলো  হচ্ছে এবং কী ধরনের প্রবণতা তৈরি হচ্ছে, তা বোঝা। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ব্রাজিলের মতো দেশে টেলিগ্রামের ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তা কমে যাচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, ফেসবুক গ্রুপ এখনো ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর বড় মাধ্যম হিসেবে রয়ে গেছে।”

ভোটাররা কী জানতে চাইছে তা খুঁজে বের করুন। গুগল ট্রেন্ডস টুলের ফিল্টার ব্যবহার করে দেখুন কোন ভোটারগোষ্ঠী কী সার্চ করছে, এবং নির্বাচনী কোনো বিষয় ঘিরে হঠাৎ আগ্রহ তৈরি হচ্ছে ও কত দ্রুত বাড়ছে।

অপতথ্য বিশ্লেষণের সময় ঠিক প্রশ্নটি করুন। জিআইজেএনের ইনভেস্টিগেটিং ডিজিটাল থ্রেটস গাইডের অপতথ্যবিষয়ক অধ্যায়ে লিটভিনেঙ্কো লিখেছেন: “প্রত্যেক রিপোর্টারের প্রথম প্রশ্ন হওয়া উচিত—আমি কি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখছি, নাকি এটি বড় আকারে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা…।” তিনি বলেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও লক্ষণ এখানে সাহায্য করতে পারে: সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলো কখন তৈরি হয়েছে, কবে কন্টেন্ট শেয়ার করা হয়েছে, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কে এই কন্টেন্ট ছড়িয়েছে, এবং কন্টেন্টের মধ্যে কী ধরনের মিল আছে। সময়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ—অনেক সময় দেখা যায় একই ধরনের অ্যাকাউন্ট কয়েক মিনিট বা এমনকি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে একই কন্টেন্ট শেয়ার করছে।

ভুল তথ্য তুলে ধরার সময় ক্ষতি বা প্রভাবের মাত্রা কমান: লিটভিনেঙ্কো বলেন: “শিরোনামে সবসময় সঠিক তথ্যটি লিখুন।” আর লেখার ভেতরের অংশে ‘ট্রুথ স্যান্ডউইচ’ পদ্ধতি ব্যবহার করুন: সঠিক–ভুল–সঠিক। এতে পাঠকরা ভুলের পরিবর্তে সত্য তথ্যটি মনে রাখবেন। লিঙ্ক যোগ করার সময়, পাঠককে ভুল তথ্য সম্পর্কিত প্রতিবেদনের আর্কাইভ করা সংস্করণটি পাঠান, যাতে অপতথ্য সৃষ্টির কারিগরদের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক না বাড়ে।”

সহযোগী পক্ষপাতমূলক ওয়েবসাইটগুলো খুঁজে বের করার জন্য একটি সহজ পদ্ধতি হলোকপিপেস্ট ট্রিকব্যবহার করা। এভাবে সংঘবদ্ধ প্রচারণাকারীদের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চিহ্নিত করা যায়। অতিপক্ষপাতমূলক বা একতরফা রাজনৈতিক ওয়েবসাইটে “About” বা “Home” পেজ থেকে কিছু লেখা কপি করুন এবং গুগলে পেস্ট করুন। সেই লেখা অন্য কোনো সাইটেও ব্যবহৃত হয়েছে কিনা— মুহূর্তের মধ্যেই আপনার সামনে ভেসে উঠবে। এছাড়া, একই ধরনের লোগো বা লেআউটও লক্ষ্য করুন—এগুলো একই ওয়েব ডিজাইনারের সঙ্গে সম্পর্ক নির্দেশ করতে পারে। যদি মিল পাওয়া যায়, তবে মূল সাইটের মালিকানা খুঁজে বের করতে Whoxy.com ব্যবহার করা যেতে পারে, অথবা গাইডের সাংবাদিকদের জন্য নতুন কিছু অনুসন্ধানী টুল অধ্যায়ে বর্ণিত “UA/Pub” পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

স্থানীয় গবেষক যারা এরমধ্যে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করছেন, তাদের খুঁজে বের করুন। প্রো পাবলিকার মিডিয়া ম্যানিপুলেশন বিশেষজ্ঞ ক্রেইগ সিলভারম্যান বলেন: “আপনার দেশে কি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিয়ে গবেষণা করা কোনো গবেষনাবিদ আছেন? প্রায় সব দেশে এমন মানুষরা থাকেন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং দেখুন তারা কী ধরনের গবেষণা ও ডেটা সংগ্রহ করছেন, যা হয়তো প্ল্যাটফর্মগুলো প্রকাশ করা তথ্যের থেকে আলাদা হতে পারে।”

অপতথ্য খুঁজে বের করার নতুন টুল

সিমিলারওয়েব ব্যবহৃত হয় প্ল্যাটফর্মগুলোর ট্রাফিক চিহ্নিত করার জন্য, যেমন হোয়াটসঅ্যাপ। দক্ষিণ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় হোয়াটসঅ্যাপ রাজনৈতিক বার্তা প্রচারের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে বার্তাকক্ষগুলো এমন কিছু পেইড, বাণিজ্যিক টুল বিবেচনা করতে পারে যেগুলো সঠিকভাবে চ্যাট গ্রুপের ট্রাফিক পরিমাপ ও ট্র্যাক করতে পারে। কিছু অনুসন্ধানী সাংবাদিক SimilarWeb কে (যা সাধারণত মার্কেটিং ইনটেলিজেন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়) শক্তিশালী টুল হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এটির মাধ্যমে দেখা যায় যে বিভ্রান্তিমূলক কোন ওয়েবসাইটগুলো প্রাইভেট ও রাজনৈতিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সবচেয়ে বেশি শেয়ার হচ্ছে।

আরেকটি ব্যবহার-বান্ধব হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্লেষণ টুল হলো Palver, যদিও এটি শুধুমাত্র দক্ষিণ আমেরিকাকেন্দ্রিক।

বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করতে জাঙ্কিপিডিয়া। এই গাইডের সাংবাদিকদের জন্য নতুন কিছু অনুসন্ধানী টুল অধ্যায়ে বলা হয়েছে, জাঙ্কিপিডিয়া অন্তত ১২টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের তথ্যভিত্তিক ডেটাবেস এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। এছাড়া সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি, এমনকি ফ্রিঞ্জ পডকাস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রান্সক্রাইব ও সার্চ করার সুযোগ দেয়।

কনটেন্ট বাচাই (ভেরিফিকেশন) টুল। যদিও ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের মিথ্যা তথ্য উন্মোচনে চমৎকার কাজ করে, তবুও অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাছে একটি শক্তিশালী ভেরিফিকেশন টুলকিট থাকা জরুরি, যেন সমস্যা হতে পারে এমন পোস্ট ও কনটেন্টের নেপথ্যের প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়। ক্রেইগ সিলভারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ বই ভেরিফিকেশন হ্যান্ডবুকে  দুইশ’র বেশি ওপেন সোর্স টুলের কথা বলা হয়েছে। এবং অনেকগুলো নির্দিষ্ট ধরনের কনটেন্ট অনুসারে সাজানো। বিশেষভাবে এমন টুল খুঁজুন যা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে তৈরি নির্বাচনী দাবিগুলো পরীক্ষা করে—যেমন Factchequeado পোর্টাল, যা উত্তর আমেরিকার লাতিনো ভোটারদের উদ্দেশ্যে স্প্যানিশ ভাষার কনটেন্ট পরীক্ষা করে।

এদিকে শক্তিশালী WeVerify  প্ল্যাটফর্মটি গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচন বিটের সাংবাদিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লিটভাইনেঙ্কো বলেন, “এটি ব্যবহার করে ছবি বা ভিডিও রিভার্স সার্চ করা যায়, এবং ছবির বিকৃতিগুলোকে তুলনা করা যায়।”

টেলিগ্রাম বিশ্লেষণের জন্য টুল পদ্ধতি। টেলিগ্রামে নির্বাচনী আলোচনা খুঁজে বের করার জন্য তিন ধাপের কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন জেন লিটভাইনেঙ্কো। নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীর যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু টেলিগ্রাম।

১. গুগলে এই অপারেটর ব্যবহার করুন: site:t.me (keywords) — কীওয়ার্ড ব্যবহার করে কয়েকটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুঁজুন যা কাজে লাগতে পারে।

২. এরপর tgstat tool -এ যান এবং খুঁজে পাওয়া আকর্ষণীয় চ্যানেলগুলো সেখানে সংযুক্ত করুন। লিটভাইনেঙ্কো বলেন, “Tgstat খুবই দরকারী। কারণ এটি আপনাকে ইকোসিস্টেমের একটি পূর্ণ চিত্র দেয়, এরপর আপনি সেই চ্যানেলগুলো অনুসরণ করতে পারেন।” সাংবাদিকরা এই অনুসন্ধানের জন্য Telegago tool ব্যবহার করতে পারেন।

৩. টেলিগ্রামের desktop app সরাসরি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করুন। লিটভাইনেঙ্কো উল্লেখ করেছেন, এটি আপনাকে আগের কথোপকথন দেখার সুযোগ দেয়। “এটি যে কোনো ধরনের বাল্ক বিশ্লেষণে সাহায্য করে। টেলিগ্রাম ডেস্কটপ অ্যাপের সুন্দর দিক হলো, একবার বেশকিছু চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করলে, এটিকে সার্চ ইঞ্জিনের মতো ব্যবহার করা যায়।”

তিনি সাংবাদিকদের  metadata2go.com ব্যবহার করারও পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে টেলিগ্রামের ভিডিও ও ছবির মেটাডেটার পেছনের তথ্য সরাসরি খুঁজে পাওয়া যায়।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের জন্য তৈরি নতুন টুল Telepathy এখন দ্রুতই “সুইস আর্মি নাইফ অব টেলিগ্রাম টুল” নামে পরিচিত হয়ে উঠছে। কারণ এটি কেবল কোন কোন চ্যানেল একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত, তা দেখায় না—পুরো চ্যাট আর্কাইভ করতে পারে, সবচেয়ে সক্রিয় পোস্টদানকারীকে শনাক্ত করতে পারে, এমনকি সদস্যদের তালিকাও  সংগ্রহ করতে পারে। ভুল তথ্য নিয়ে কাজ করা গবেষকদের মতে টেলিপ্যাথি বেশ “ব্যবহার-বান্ধব,” তবে এটি ইনস্টল ও ব্যবহার করতে হলে ওপেন সোর্স কম্পিউটার ব্যবহারের মৌলিক দক্ষতা থাকতে হবে। টুলটির ফ্রি এবং পেইড—দুই ধরনের সংস্করণই আছে।

Snapchat Snap Map

কাবুল, আফগানিস্তান থেকে জিও-লোকেটেড পোস্ট দেখানো একটি স্ন্যাপচ্যাট স্ন্যাপ ম্যাপ। ছবি: স্ক্রিনশট

ব্রেকিং নিউজের জন্য স্ন্যাপ ম্যাপ। স্ন্যাপচ্যাটের স্ন্যাপ ম্যাপ (Snap Map) ফিচার মেসেজিং বিষয়ক গতিবিধির হিটম্যাপ দেখায় এবং মানচিত্রে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে জুম করে সেখানে রিয়েল টাইমে তোলা ভিডিও স্ন্যাপ দেখতে দেয়। “এটি খুবই কার্যকর একটি টুল, এবং ব্রেকিং নিউজ পরিস্থিতিতে আরও বেশি প্রেক্ষাপট সংগ্রহে সাহায্য করে,” বলেন ক্রেইগ সিলভারম্যান।
গোপন ডোমেইন মালিক খুঁজে বের করুন Whoxy ব্যবহার করে। যাদের কমান্ড-লাইন ব্যবহার করে WHOIS সার্চ করার কৌশল জানা নেই, তারা Whoxy.com  ব্যবহার করুন। এটি সমস্যা তৈরি করে এমন প্রচারণা–সম্পর্কিত সাইট বা ডোমেইনের মালিক খুঁজে বের করতে ইমেইল, ব্যক্তি বা কোম্পানির নাম দিয়ে সার্চ করার সুযোগ দেয়। মেক্সিকোর বিভ্রান্তিমূলক তথ্য অনুসন্ধানকারী সাংবাদিক ইমিলিয়ানো ফেরনান্দেস আরও দুটি টুল ব্যবহারের পরামর্শ দেন— বিনামূল্যের DNSdumpster সাইট এবং Iris Investigate ড্যাশবোর্ড—এটি ব্যবহারের জন্য টাকা দিতে হয়। এগুলো ডোমেইন–সংক্রান্ত লুকানো তথ্য খোঁজার জন্য বেশ কার্যকর। প্রচারণা–সম্পর্কিত সাইটের আড়ালে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজতে গেলে কোন কোন সূত্র অনুসরণ করা উচিত, সে সম্পর্কিত বিস্তারিত একটি তালিকাও এখানে পাওয়া যাবে

স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচনী অনুসন্ধান বিষয়ক তথ্য আর্কাইভ করুন Hunchly দিয়ে । ইমিলিয়ানো ফেরনান্দেস জোর দিয়ে বলেন, অনলাইন প্রচারণা সংক্রান্ত অনুসন্ধানের একটি নির্ভরযোগ্য রেকর্ড সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। তার মতে, আপনি যেসব ওয়েবপেজে যান  Hunchly-এর ডেস্কটপ সংস্করণ কেবল ওই  ওয়েবপেজগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণই করে না, বরং আলাদা আলাদা অনুসন্ধানী প্রকল্প অনুযায়ী সাইটগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাজিয়েও রাখে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এক্সটেনশনটি চালু থাকলে আপনি যেসব সাইট ভিজিট করেন, সেগুলো নির্দিষ্ট ফোল্ডারের মধ্যে সুন্দরভাবে গুছিয়ে থাকে।”

পক্ষপাতদুষ্ট অ্যাকাউন্ট তুলনা করুন Followerwonk টুল ব্যবহার করে। Followerwonk  টুলটি সাংবাদিকদের টুইটার/এক্স-এর একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন অনুসারীদের চিহ্নিত ও তুলনা করার সুযোগ দেয়।

মোজিলার ইন্টারনেট শাটডাউন বিশ্লেষণ টুল। মোজিলা সারা বিশ্বের ইন্টারনেট বিভ্রাট নিয়ে একটি বৃহৎ ডেটাসেট উন্মুক্ত করেছে, যার কিছু অংশ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে দেখা যায়। এই ডেটাসেট ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বিনামূল্যে প্রবেশ করা যাবে।

অনলাইনে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের উৎস যাচাইয়ের টুল

অনলাইন রাজনৈতিক প্রচারণায় ক্রমেই মাইক্রো-টার্গেটিং কৌশলের ব্যবহার বাড়ছে, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞাপন — বা একই বিজ্ঞাপনের একটু বদলানো সংস্করণ — নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পাঠানো হয়। উদাহরণ হিসেবে, ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ ২০১৯ সালের যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে এক বিশ্লেষণে দেখায় যে, কনসারভেটিভ পার্টির “গেট ব্রেক্সিট ডান!” স্লোগানযুক্ত একটি বিজ্ঞাপন কেবলমাত্র ৩৪ বছরের কম বয়সী পুরুষদের কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু একই বিজ্ঞাপনের প্রায় হুবহু আরেকটি সংস্করণ, যেখানে শুধু স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা বিষয়ে নতুন একটি সাবটাইটেল যোগ করা হয়েছিল, তা কেবল নারীদেরই দেখানো হয়েছিল। প্রতিবেদনটি ব্যাখ্যা করে যে জনগোষ্ঠী প্রথমে বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে বেশি সাড়া দেয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম তাদের প্রতিই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে তা একটি নির্ভরযোগ্য প্রচারণা কৌশলে পরিণত হয়। এ ছাড়া অনলাইন বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য বেশ সাশ্রয়ীও হতে পারে। ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ দেখায় যে স্ন্যাপচ্যাটে একটি বিজ্ঞাপন অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি ‘ইমপ্রেশন’ পেয়েছিল। অথচ সেটি চালাতে খরচ হয়েছিল মাত্র ৭৬৫ মার্কিন ডলার।

ফেসবুকের মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন খুঁজুন। মেটা/ফেসবুকের ডেটা নীতিমালা নিয়ে নানা সংশয় থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের নির্বাচন কর্মসূচির ব্যবস্থাপক জুলিয়া ব্রাদার্সসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন যে মেটা অ্যাড লাইব্রেরি এখন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ও এগুলোর পেছনে থাকা দলগুলো খুঁজে বের করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক টুলে পরিণত হয়েছে।

প্রোপাবলিকার ক্রেইগ সিলভারম্যানও একমত পোষণ করে বলেন: “কী ধরনের রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন চলছে তা দেখার জন্য নির্বাচনের সময় এই লাইব্রেরি নিয়মিত স্ক্যান করা সাংবাদিকদের রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত।” তার মতে, এখানে নির্দিষ্ট পেজ লক্ষ্য করে খোঁজ করা যায়, কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা যায়। তিনি অনুমান করেন ফেসবুক ছোট দেশগুলোতে তুলনামূলক কম নজর দেয়, কিন্তু রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন চালাতে চাইলে বিজ্ঞাপনদাতাদের আগেভাগে নিবন্ধন করতে হয়, ফেসবুকের অনুমোদন নিতে হয়, আর সেই বিজ্ঞাপনগুলো বছরের পর বছর ধরে আর্কাইভে থেকে যায়।

সিলভারম্যান বলেন, সাংবাদিকরা আরও গভীরে যেতে চাইলে অ্যাড লাইব্রেরিতে পাওয়া সন্দেহজনক নামগুলো ওপেনকর্পোরেটস ডেটাবেসেও খুঁজে দেখতে পারেন।

গুগলের পলিটিক্যাল অ্যাডস ট্রান্সপারেন্সি টুলটি পরীক্ষা করুন। গুগলের পলিটিক্যাল অ্যাডস ট্রান্সপারেন্সি সেন্টার দাবি করে যে তারা নির্বাচনসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ও সেগুলো যাচাই করা উৎসের একটি সার্চযোগ্য ও হালনাগাদ ডেটাবেস সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকরা চাইলে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবারসিকিউরিটি ফর ডেমোক্রেসি ইউনিট পরিচালিত অসাধারণ এই এনওয়াইইউ অ্যাড অবজারভেটরিও ব্যবহার করতে পারেন, যা ফেসবুক বিজ্ঞাপনের পেছনে থাকা সংগঠনগুলো সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দেয়।

নির্বাচনসংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্যের নেপথ্যের খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার উপায়

লিটভিনেঙ্কো বলেন, “ভুল তথ্য ছড়ানো, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে—রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে ক্রমশ লাভজনক হয়ে উঠছে। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে ভাবুন: ‘এতে কার লাভ হচ্ছে?’ যদি আপনি রাষ্ট্র-সমর্থিত হস্তক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত হন, তাহলে বিভ্রান্তি ছড়ানো রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকান, যেমন—রাশিয়া, চায়না, ইরান। দেখুন, স্থানীয় নির্বাচনী বর্ণনায় হস্তক্ষেপ করে কূটনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে কি না।” তিনি আরও বলেন, “নিজ দেশে আমরা দেখি রাজনীতিবিদরা ভুল তথ্য ব্যবহার করে নিজেদের এজেন্ডা শক্তিশালী করতে চান; যেন মনে হয় তাদের সমর্থন প্রকৃতপক্ষে যতটা, তার চেয়ে বেশি; অথবা কোনো নির্দিষ্ট নীতি বাস্তবায়ন করতে চান।”

সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের মনোযোগের সময় কমিয়ে দেয়ার কারণে ভিজুয়াল ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ক্রমশ আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠছে, বলেন লিটভিনেঙ্কো। এই ঝুঁকি বোঝার জন্য তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের এই গাইডটি দেখার পরামর্শ দেন।

Washington Post Guide to manipulated video

ভুল তথ্য-বিশ্লেষণ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা ভিডিও পরিবর্তন শনাক্ত করতে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের গাইডটি দেখার পরামর্শ দেন। ছবি: স্ক্রিনশট, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট

নির্বাচনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কারা? এদের মধ্যে থাকতে পারে দেশীয় প্রচারণার পেছনের রাজনৈতিক কর্মী, অতি পক্ষপন্থী সংবাদমাধ্যম, বিদেশী রাষ্ট্র-সমর্থিত ট্রল ফার্ম, অসাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক চরমপন্থী, বিশেষ স্বার্থের গোষ্ঠী, নিবেদিত সোশ্যাল মিডিয়া প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্ক, এবং এমনকি কিশোরেরা যারা প্রতিটি ওয়েবসাইট ভিজিটের খুব সামান্য মূল্যে রাজনৈতিক মিথ্যা তথ্য থেকে অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়ে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ জানতে নাও পারে যে তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফার্স্ট ড্রাফট নিউজ উল্লেখ করে যে, একজন সৎ নাগরিকের আন্তরিক বক্তব্যও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য নির্বাচনী বার্তায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তাদের প্রতিবেদন একটি উদাহরণ দিয়েছে: “কেউ অস্ট্রেলিয়ার বুশফায়ারের কারণ ভুলভাবে অগ্নিসংযোগের ঢেউ হিসেবে রিপোর্ট করে, যা পরে জলবায়ু অস্বীকারমূলক এজেন্ডা থাকা ষড়যন্ত্রবাদীদের দ্বারা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।”

২০১৬ সালে সিলভারম্যানের একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে ম্যাসিডোনিয়ার একটি শহরে  ট্রাম্প সমর্থিত ১০০টিরও বেশি বিভ্রান্তিকর ওয়েবসাইট চালাচ্ছিলেন তরুণ প্রচারকরা। এদের কেউ কেউ ট্রাফিক-নির্ভর বিজ্ঞাপন আয় থেকে মাসে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত উপার্জন করতো। অধিকাংশের জন্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তারা কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প সমর্থকদের শেয়ারকে বেশি লাভজনক মনে করত। তবু, তাদের ভুল ও বিভ্রান্তিকর পোস্টগুলো যুক্তরাষ্ট্রের  ২০১৬ সালের নির্বাচনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল বলে মনে করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে, ফরাসি সাংবাদিক আলেকজান্দ্রে কাপরোঁ দেখেছেন যে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে চালানো একটি ক্ষতিকর বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা অর্থ বা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে নয়, বরং কেবল সামাজিক মাধ্যমে বড়াই করার মতো বিষয় দিয়ে শুরু হয়েছিল

লিটভিনেঙ্কো বলেন, “ভুল তথ্যের প্রথম ধাপ হিসেবে সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ব্যাপক বোমা আকারের কনটেন্ট প্রকাশ করা হয়। যা সাধারণত ভিজুয়াল কনটেন্ট; একদমই প্রাসঙ্গিক কিছু নয়, যা কখনও বিভ্রান্তিকরভাবে কেটে কেটে উপস্থাপন করা হয়।”

নতুন গল্পের সূত্র খুঁজতে দ্রুত ভেরিফিকেশন টুল ব্যবহার করুন। সাধারণত ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো ভুল তথ্য খণ্ডন করার মূল দায়িত্ব পালন করে, তবে বড় অনুসন্ধানের সময় সন্দেহজনক ছবি বা দাবিও উঠে আসে—যা যাচাই করা প্রয়োজন। কেননা এটি নতুন কোনো মূল্যবান লিডও দিতে পারে। জিআইজেএনের ছবি যাচাইয়ের জনপ্রিয় গাইডে সাংবাদিকতার প্রশিক্ষক রেমন্ড জোসেফ বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছেন কিভাবে কয়েকটি ব্যবহার বান্ধব টুল ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যের ফটো শার্লক অ্যাপ এবং ফেক ইমেজ ডিটেক্টর অ্যাপ, যা সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তিত ছবি যাচাই করতে সাহায্য করে। এছাড়া তিনি দেখান ছবির মধ্যে কোন সূত্র বা ক্লু খুঁজে বের করা যায়।

বিশেষভাবে হাতে সময় কম থাকা নির্বাচনী বিটের প্রতিবেদকদের জন্য সহায়ক: তিনি বোঝান কিভাবে সাংবাদিকরা মোবাইল ফোনে কয়েক সেকেন্ডে ছবি যাচাই করতে পারেন—বিশেষ করে ছবির ইউআরএল বা ওয়েব ঠিকানা গুগল ইমেজে দিয়ে।

দর্শকদের নির্বাচনী প্রোপাগান্ডার সাধারণ ধরনগুলো সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরি করুন। দুঃখজনকভাবে, ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এতোই বিস্তৃত যে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ—যেমন অ্যাজিটপ্রপ, যা দর্শকদের নির্দিষ্ট কোনো কাজে প্ররোচিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি, বা গ্যাসলাইটিং, যা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর গল্প ঘুরিয়ে সত্যকে আক্রমন করে এবং বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে—তাই এদের পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করুন। আরও জানতে, অলাভজনক সংস্থা ডেটা অ্যান্ড সোসাইটির সহায়ক ব্যাখ্যা  এবং ফার্স্ট ড্রাফট নিউজের এই ইনফরমেশন ডিসঅর্ডার টুলবক্স দেখুন

অপতথ্য ছড়ানোসুপারস্প্রেডারদেরসনাক্ত করুন। কিভাবে আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে নির্বাচনী বিভ্রান্তি এবং সাধারণ, কিন্তু ভুল বার্তা ছড়ানোর বিষয়গুলো আলাদা করবেন? ইতালির উরবিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি CooRnet প্রোগ্রামটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সন্দেহজনক শেয়ারিং প্যাটার্ন সনাক্ত করে। R প্রোগ্রামিং ভাষার একটি টুল হিসেবে, CooRnet আরও শক্তিশালী হয় যখন এটিকে ওপেন-সোর্স ভিজুয়ালাইজেশন প্ল্যাটফর্ম Gephi -এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

স্বয়ংক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করুন। এই অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ অ্যাপ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সন্দেহজনক ‘বট’ অ্যাকাউন্টগুলো বের করে। উদাহরণস্বরূপ, এর “Daily Rhythm” ফিচার সেই অ্যাকাউন্টগুলোকে চিহ্নিত করে যা স্থানীয় সময় রাত ১টা থেকে ৫টার মধ্যে টুইট পোস্ট করে—যখন সাধারণ মানুষ সাধারণত ঘুমায়। এছাড়া Botometer  টুল পরীক্ষা করছে যে আপনি যে অ্যাকাউন্ট বা তার ফলোয়ারদের যাচাই করছেন তাদের বট হওয়ার সম্ভাবনা কতটা।

মিথ্যা তথ্যকে কাজে লাগাচ্ছে এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টাগুলোকে খুঁজুন। কেন কিছু রাজনীতিবিদ এমন মিথ্যা প্রচার চালান যা এরইমধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং যা তাদের প্রচারণার জন্য সরাসরি উপকারিও নয়? লিটভিনেঙ্কো বলেন, “যখন আপনি কোনো মিথ্যাকে কোনো রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করেন, তখন দেখা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা কোনো নীতি বা পদক্ষেপ আরোপের চেষ্টা করছে কিনা, যা সেই মিথ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” “যুক্তরাষ্ট্রে আমরা দেখেছি, ‘স্টপ দ্য স্টিল’  নামের ভুয়া প্রচারণার (যেখানে দাবি করা হয় ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয় থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে) পর থেকেই ভোটাধিকার কঠোরভাবে সীমিত করার উদ্যোগ চলছে। এই বিষয়টি বুঝলে ভুল তথ্য ছড়ানোর উদ্দেশ্যটাও পরিষ্কার হয়ে যায়।”

নির্বাচনে অসাধু কৌশল খতিয়ে দেখা

সাধারণত অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরাই এসব অসাধু বা প্রতারণামূলক কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা-তা ক্ষতিয়ে দেখেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো খুব কমই এসব অনৈতিক কাজকে গুরুত্ব দেয়। ভোট পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোও অনেক সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে না। গণমাধ্যমের দর্শক-শ্রোতা বা পাঠকেরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব কৌশলের লক্ষ্য বা শিকার হন। আর একটি অসৎ প্রচারণার পেছনের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অনুসরণ করতে পারলে অনেক সময় আরও বড় ধরনের নির্বাচন-সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির সন্ধানও মিলতে পারে।

এসব কৌশল বৈধ রাজনৈতিক কৌশল থেকে আলাদা — যেমন ইচ্ছাকৃতভাবে বিপুল পরিমাণ তথ্য একসঙ্গে ছুড়ে দিয়ে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করা। এর একটি পরিচিত উদাহরণ হলো প্রচারণার শেষ সময়ের দিকে কোনো প্রার্থীর চিকিৎসাবিষয়ক কয়েকশো পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করে দেওয়া।

আমরা এখানে যেসব কৌশল নিয়ে আলোচনা করছি, সেগুলো ভোটারদের বিভ্রান্ত বা প্রতারণা করার জন্য তৈরি।  এদের মধ্যে রয়েছে আইনগতভাবে প্রণীত কিছু নিয়মও, যেগুলো সাংবাদিকরা উন্মোচন করতে পারেন যে সেগুলো গণতন্ত্রবিরোধী, অনৈতিক বা বর্ণবাদী। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা রাজ্যে একটি নতুন আইন প্রণীত হয়, যা ভোট দেওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ফটো আইডি যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্সকে অনুমোদিত প্রমাণ হিসেবে গণ্য করে। কিন্তু এক বছর পর, দলীয় কর্মকর্তারা নিয়ম করে সেই অফিসগুলো বন্ধ করে দেয় যেগুলো এই লাইসেন্স জারি করে, বিশেষ করে সেই অঞ্চলে যেখানে বিরোধী দলের সমর্থক বেশি। কারণ হিসেবে বাজেট কমানোর কথা বলা হয়। নিরপেক্ষ আইন ও নীতি সংস্থা ব্রেনান সেন্টার বাজেট কমানোর দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে একটি সহায়ক মানচিত্র প্রকাশ করে দেখিয়েছে যে রাজ্যের ৩১টি অফিস বন্ধের ঘটনার প্রায় সবই সেই কাউন্টিতে হয়েছে, যেখানে বিরোধী দলের ভোটারদের সংখ্যা বেশি।

ব্রেনান সেন্টার নামের একটি নিরপেক্ষ আইন ও নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ মানচিত্র প্রকাশ করে। যেখানে দেখা যায়, যেসব রাজ্যে ৩১টি সরকারি অফিস বন্ধ করা হয়েছে, সেখানে বিরোধী দলের ভোটারদের সংখ্যা বেশি।

জনসাধারণের সহায়তা নিয়ে তথ্য বের করুন। বিভ্রান্তিকর নির্বাচনী রোবোকল — অর্থাৎ বিপুল সংখ্যায় রেকর্ড করা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া স্বয়ংক্রিয় ফোনকল — এর উৎস খুঁজে বের করাটা খুবই কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন ধরনের প্রচারণা শনাক্ত করতে ক্রাউডসোর্সিং অন্যতম কার্যকর উপায়। ২০১৮ সালে ব্রাজিলে কমপ্রোভা প্রোজেক্ট সফলভাবে ভুয়া তথ্য উদ্ঘাটন করে। ২৪টি গণমাধ্যম একত্রিত হয়ে একই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর প্রকাশ করলে তাদের সম্মিলিত পাঠক–দর্শকদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক তথ্য আসতে শুরু করে।

“ক্রাউডসোর্সিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর শুরুর দিকের ঘটনাগুলো বুঝে উঠতে। আর হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি। তাই একটি টিপলাইন দিন, আর একসঙ্গে কাজ করুন,” বলেন লিটভিনেঙ্কো।

নিচের এই সতর্ক সংকেতগুলো যখন দেখবেন, তখন ডার্টি ট্রিকসবা নোংরা কৌশল নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করবেন।

  • কোনো রাজনৈতিক দল যদি নতুন ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। সাধারণত, যে দল তাদের সমর্থকের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় হাল ছেড়ে দেয় — সমর্থকদের সর্বোচ্চ ভোট নিশ্চিত করা বা জোট গড়ে তোলার বাইরে তাদের জেতার পথ থাকে একটাই: প্রতিপক্ষের ভোট কমিয়ে দেওয়া। আর তা করা হয় গণতন্ত্রবিরোধী কৌশল দিয়ে — যেমন লক্ষ্যভিত্তিক ভোটার দমন, নির্বাচন জালিয়াতি, ভয় দেখানো, বা নির্বাচনী আইনের অপব্যবহার।
  • খুব অল্প কয়েকজন নাগরিকের পক্ষ থেকে হাজার হাজার ভোটারের যোগ্যতা নিয়ে গণআকারে আপত্তি তোলা। এ ধরনের “ভোটার জালিয়াতি পাহারাদার”রা সাধারণত মতাদর্শভিত্তিক গোষ্ঠী বা দলপন্থী ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন ও সমর্থনে পরিচালিত ভয়-ভীতি প্রদর্শনের নেপথ্যের খেলোয়াড়।
  • নির্বাচনের দিন বা ভোটার নিবন্ধন দিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরিকল্পিতভাবে যানজট সৃষ্টি করা।
  • “পুশ-পোলিং”— যেখানে জনমত জরিপের নামে বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন বা বিকৃত বার্তা ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের প্রার্থী বা নীতির প্রতি সমর্থন কমে যাচ্ছে এমন ভুয়া ধারণা ছড়ানো হয়।
  • ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে বিভ্রান্তিমূলক রোবোকল পাঠানো, যেমন নির্বাচনসূচি বা পরিচয়পত্রের শর্ত নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো।
  • নতুন ভোটারদের ভয় দেখানো— যেমন দাবি করা যে ভোটার নিবন্ধন করলে কর কর্তৃপক্ষ বা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বাড়তি নজরদারির মুখে পড়তে হবে।
  • প্রতিযোগিতাবিরোধী আচরণ— যেমন প্রতিপক্ষের প্রচারণাকে দক্ষ কর্মী বা গণমাধ্যম কাভারেজ থেকে বঞ্চিত করা।
  • ডাকযোগে ভোট পাঠানোর নিয়মগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর করে তোলা।
  • “ডার্ক পিআর” কৌশল ব্যবহার করে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ ছড়ানো, যাতে তাদের নেতিবাচক ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে দেখানো যায়।
  • অবৈধ বা অনৈতিকভাবে প্রচারণার কাজে সরকারি সম্পদ ব্যবহার করা।
  • প্রতিপক্ষ প্রার্থীর ভোটার নিবন্ধনে তার ঠিকানা বদলে দিয়ে তাকে নতুন রাজনৈতিক জেলায় পুনরায় নিবন্ধন করানো।
  • বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলার চেষ্টা করা।

বিরোধী ভোটারদের অসুবিধায় ফেলতে যেসব আইন বা নিয়ম করা হয়, সেগুলোও গণতন্ত্রবিরোধী কৌশলের অংশ হতে পারে।

  • নির্বাচনবিধি এমনভাবে পরিবর্তন করা যাতে বিরোধী ভোটাররা ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হয়, বাধার মুখে পড়ে, বা সরাসরি বঞ্চিত হয়। এর মধ্যে এমন আইনও থাকে, যা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষরা বা জনগোষ্ঠী যে সব দিনে ভোটার নিবন্ধন করতে বেশি আগ্রহী—সেসব দিনই নিবন্ধন বন্ধ রাখে; অথবা এমন পরিচয়পত্রের শর্ত আরোপ করে, যা বিরোধী দলের ভোটারদের কাছে সবচেয়ে কম পাওয়া যায়।
  • “স্বৈরশাসকদের নির্বাচন-কাঠামো”তে দেখা যায় এমন ধরনের আইন। এই গাইডের আগের অংশে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার যে কৌশলগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো এখানেও প্রযোজ্য।
  • চরম জেরিম্যান্ডারিং (একটি রাজনৈতিক কৌশল যেখানে কোনো নির্দিষ্ট দলের সুবিধা অনুযায়ী ভোটার এলাকাগুলোর সীমানা পরিবর্তন করা হয়, যাতে সেই দল নির্বাচনে একটি অযাচিত সুবিধা পায়)। রাজনৈতিক সীমানা পুনর্নির্ধারণের অপব্যবহার এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যেখানে ভোটাররা তাদের নেতাকে নির্বাচন করেন না; বরং নেতারাই নিজেদের ভোটার বেছে নেন। ফলে এমনটাও ঘটে যে জনপ্রতিযোগিতায় বড় ব্যবধানে হারলেও কোনো দল প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়—যা গণতন্ত্রের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসরায়েল বা নেদারল্যান্ডসের মতো আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বব্যবস্থা থাকা দেশে এটি তুলনামূলক কম সমস্যা; আবার অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার মতো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা হয় যে দেশগুলোতে, সেখানেও ঝুঁকি কম। তবে হাঙ্গেরি, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, সুদান, এবং ফিলিপাইন্সের মতো জায়গায় জেরিম্যান্ডারিং এখনো ভোটাধিকার হরণের বড় হুমকি।
  • ভোটার জালিয়াতির অভিযোগকে অজুহাত করে ভোটদান আরও কঠিন করা। গবেষণা বলছে, সরাসরি ভোটকেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত বিরল এবং জাতীয় ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলে না। তবু অনেক রাজনৈতিক দল এই তুচ্ছ বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে এমন আইন আনে, যা ভোট দিতে চাওয়া বিরোধী জনগোষ্ঠীর জন্য ইচ্ছাকৃত বাধা তৈরি করে। স্থানীয় তথ্য-উপাত্তে যদি দেখা যায় যে সরাসরি ভোট জালিয়াতির ঘটনা বজ্রপাতে আহত হওয়ার ঘটনার চেয়েও কম, বা কারও জন্মদিনে গলফে “হোল-ইন-ওয়ান” হওয়ার চেয়েও বিরল—তাহলে এই বৈপরিত্যগুলো দৃশ্যমান করতে Flourish এর মতো ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল ব্যবহার করা যায়। “মনে রাখবেন, বেশির ভাগ নির্বাচন-জালিয়াতির গল্প শুরু হয় স্থানীয়ভাবে,”  লিটভিনেঙ্কো বলেন।

সিলভারম্যান বলেন, “বার্তাকক্ষগুলোর উচিত তাদের পাঠক বা দর্শককে ভোটের সময় চোখ-কান খোলা রাখতে উৎসাহ দেওয়া। আপনাদের পাঠক-দর্শকদের জানান: ‘যদি আপনি কোনো ছলচাতুরি বা ভোটে হস্তক্ষেপের চেষ্টা দেখেন বা শুনেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ শেষ পর্যন্ত —গণতন্ত্র তাদেরও।”


Rowan Philp, senior reporter, GIJNরোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তিনি আগে দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বজুড়ে দুই ডজনের বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘর্ষ সম্পর্কিত প্রতিবেদন করেছেন।

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

কেস স্টাডি পরামর্শ ও টুল

ব্রাজিলের রাজনীতি নিয়ে অনুসন্ধান ও ফ্যাক্ট চেকিংয়ের টুল বানান তাই নালন

২০১৫ সালে, ব্রাজিলের বড় এক সংবাদমাধ্যমের চাকরি ছেড়ে নিজেই একটি অনুসন্ধানী ও ফ্যাক্ট চেকিং সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাই নালন। এখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০ জনের একটি পুরস্কারজয়ী দলকে। এই লেখায় তিনি জিআইজেএন-কে জানিয়েছেন, ফ্যাক্ট চেকিংয়ের কাজে তাঁরা কোন ধরনের টুলগুলো বেশি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সুপরিচিত অনেক টুল যেমন আছে, তেমনি আছে তাদের নিজেদের বানানো কিছু টুল।

কেস স্টাডি পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি ব্যবহার করে সিরিয়া থেকে খবর সংগ্রহ

কখনো ভেবে দেখেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার একটি আশ্রয়শিবিরের মানুষ কীভাবে দিনযাপন করেন? কীভাবে চোখের সামনে তারা নিহত হতে দেখেছেন কাছের মানুষজনদের? পুরো বিশ্বের মানুষ যেন তাদের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে এই অভিজ্ঞতাগুলোর ভাগীদার হতে পারে— সেই লক্ষ্যে কাজ করছে ফ্রন্টলাইন ইন ফোকাস। পড়ুন, কীভাবে তারা সিরিয়ার সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের এসব গল্প তুলে ধরতে ব্যবহার করছে ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেট রিয়েলিটির মতো আধুনিক প্রযুক্তি।

কেস স্টাডি পরামর্শ ও টুল

৯ ওয়াচডগ রিপোর্টার ও ভুল থেকে তাঁদের শিক্ষা

আপনার কী এমন কখনো হয়েছে, অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন কোনো ভুল করে বসেছেন যার কারণে গোটা রিপোর্টটিই ভেস্তে গেছে। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে জেনে রাখুন, বড় বড় অনুসন্ধানী রিপোর্টারেরাও প্রায়ই এমন ভুল করে থাকেন। সাংবাদিক হিসেবে তখন একটাই কাজ করার থাকে, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া, এবং ফের একই ভুল না করা। এই লেখায় পাবেন, ভুল থেকে ৯ জন অনুসন্ধানী সাংবাদিক যা যা শিখেছেন। 

কেস স্টাডি পরামর্শ ও টুল

শত কোটি ডলারের জালিয়াতি যেভাবে উন্মোচন করল ফাইনান্সিয়াল টাইমস 

একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, কিন্তু জালিয়াতি ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত; আবার আপনার অনুসন্ধানকে থামিয়ে দিতে তাদের হাতে আছে আইনজীবী, বেসরকারি গোয়েন্দা, হ্যাকার, এমনকি বিদেশি গুপ্তচর বাহিনী লেলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও। কখনো ভেবেছেন, এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে সামাল দেবেন? সেটিই বলছেন, ফাইনান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যান ম্যাকক্রাম, যিনি এক জার্মান প্রতিষ্ঠানের শত কোটি ডলারের জালিয়াতি উন্মোচন করেছেন।