প্রবেশগম্যতা সেটিংস

রিসোর্স

» গাইড

বিষয়

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: ফ্যাক্ট চেকিং

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

আপনার প্রতিবেদনের খসড়া অংশের কাজ শেষ। এখন কী করবেন?

আপনি আপনার প্রতিবেদনটি লিখতে প্রচুর ঘাম ঝরিয়েছেন, হয়তো কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে গবেষণা ও রিপোর্টিং করেছেন। শেষমেশ আপনি আর আপনার সম্পাদক এই খসড়ার ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন। এ পর্যায়ে আপনাকে সবচেয়ে কঠিন যে কাজটি করতে হবে, তা হচ্ছে ফ্যাক্ট চেকিং—যা নিশ্চিত করবে আপনার প্রতিবেদনের প্রতিটি বিবৃতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে সঠিক।

তবে গবেষণার শুরু থেকেই যদি সঠিক টুল ব্যবহার না করেন, বা কোন কোন উৎস থেকে আপনি কী ধরনের তথ্য যোগাড় করেছেন তা গুছিয়ে না রাখেন বা প্রয়োজনের সময় খুঁজে না পান, তবে আপনার প্রতিবেদনের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রায় অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।

তবে, কাজটা কিন্তু এতোটা কঠিন কিছু নয়। কীভাবে পদ্ধতি মেনে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে আপনি সহজেই এ কাজটি করতে পারেন— এ অধ্যায়ে তা তুলে ধরা হয়েছে।

এখানে আমরা মূলত একটি প্রতিবেদনের ফ্যাক্ট-চেকিং নিয়ে কথা বলবো। প্রতিবেদনটি হতে পারে আপনার নিজের অথবা আপনার কোনো সহকর্মীর। প্রতিবেদনটি প্রকাশ বা সম্প্রচার হওয়ার আগে কীভাবে এর ফ্যাক্ট চেক করতে হয়, সে সম্পর্কে জানবো। যাকে বলা হয় ইন্টার্নাল প্রি-পাবলিকেশন ফ্যাক্ট-চেকিং। তবে এখানে আপনি এক্সটার্নাল বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফ্যাক্ট-চেকিং সম্পর্কে ধারণা পাবেন না। যেমনটা পলিটিফ্যাক্ট, ফ্যাক্টচেকডটঅর্গ, রয়টার্স ফ্যাক্ট চেক, আফ্রিকান ফ্যাক্ট-চেকিং অ্যালায়েন্স, কিংবা ফ্যাক্টচেকারডটইন সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য সাইটে প্রকাশিত মিথ্যা তথ্য যাচাই করে। (এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য, জিআইজেএনের গাইড টু ফ্যাক্ট-চেকিং ইনভেস্টিগেটিভ স্টোরিজ দেখুন।)

চলতি সময়ের ফ্যাক্ট-চেকিং

Chicago Guide to Fact-Checking

“দ্য শিকাগো গাইড টু ফ্যাক্ট চেকিং।” ছবি: স্ক্রিনশট, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস

শিকাগো গাইড টু ফ্যাক্ট-চেকিং-এর লেখক ব্রুক বোরেল। ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের গবেষণা বিভাগের প্রধান জন বান্টারের একটি উদ্ধৃতি টেনে লিখেছেন, “আমরা একটি পরিষেবা দেই, যেখানে সবকিছু ভেঙে ফেলা হয় — আমরা গাড়ি থেকে ইঞ্জিন বের করি, অংশগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে দিই এবং আবার তা একত্রিত করি।”

রিপোর্টিংয়ের প্রতিটি অংশ বিশ্লেষণ করে ফ্যাক্ট-চেকিং নিশ্চিত করে যে তথ্যটি সঠিক, নির্ভুল ও ন্যায্য। এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সংবাদমাধ্যমে বহু বছর আগে থেকেই এর বেশ প্রচলন ছিল, বিশেষ করে যখন সংবাদ ম্যাগাজিনগুলোতে ফ্যাক্ট-চেকাররা সাধারণ কর্মীর মতোই কাজ করতেন।

বর্তমানে, বার্তাকক্ষগুলোতে পূর্ণকালীন ফ্যাক্ট-চেকারদের খুব একটা দেখা পাওয়া যায় না। কেননা গত কয়েক দশকে বাজেট কমে যাওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আর তাদের ধরে রাখতে পারেনি। তবে, কিছু সংবাদ ম্যাগাজিনে এখনও আলাদা ফ্যাক্ট-চেকিং বিভাগ রয়েছে। যেমন, দ্য নিউ ইয়র্কার। অন্যান্য আমেরিকান সংবাদ ম্যাগাজিনগুলো নিজেদের কর্মীদের দিয়েই ফ্যাক্ট-চেক করায়। যেমন দ্য নেশনের রয়েছে শক্তিশালী একটি ইন্টার্ন দল, যাঁরা ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের কাজগুলো করে থাকে। বর্তমানে তাই সাধারণ রিপোর্টাররাই নিজের লেখার ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের জন্য দায়বদ্ধ থাকে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় আইন বিভাগ।

একজন ফ্রিল্যান্স ফ্যাক্ট-চেকার, অনুসন্ধানী দলের একজন সদস্য, অথবা রিপোর্টার নিজে— যে-ই ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের কাজটি করুক না কেন—তিনি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করেন। যেমন, আপনি এমন একটি সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন, যাদের একজন ফ্যাক্ট-চেকার আছে। তাহলে আপনার কাজের প্রক্রিয়াটি এমন হতে পারে: খসড়া প্রস্তুত হওয়ার পর আপনি আপনার সোর্স, নোট আর যে সব তথ্য ব্যবহার করেছেন সব নিয়ে ফ্যাক্ট-চেকারের সাথে আলাপ করবেন। সংবাদমাধ্যমটি যদি “ম্যাগাজিন-স্টাইল” ফ্যাক্ট-চেক অনুসরণ না করে, যেখানে প্রতিটি ফ্যাক্টের বিবৃতি যাচাই করা হয়, তাহলে ফ্যাক্ট-চেকার রিপোর্টারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন যে কোন অংশগুলো পর্যালোচনা করা উচিত এবং কিভাবে।

প্রতিবেদনটির ফ্যাক্ট-চেকিং শেষ করে ফ্যাক্ট-চেকার যে জায়গাগুলোতে হাত দিয়েছেন বা পরিবর্তন করেছেন তা যুক্তিসহ তুলে ধরবেন। এরপর সম্পাদকরা সিদ্ধান্ত নেবেন ফ্যাক্টচেকারের কোন পরিবর্তনগুলো যথাযথ। এ ধাপে চূড়ান্ত খসড়াটি আইন বিভাগে পাঠানো হয় (অথবা কখনও কখনও, আইন বিভাগ ফ্যাক্ট-চেকটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে খসড়াটি পর্যালোচনা করতে পারে)। এরপর প্রতিবেদনের কপিটি ডেস্কে চলে যায়, প্রকাশনার জন্য।

প্রতিবেদনটি যে রিপোর্টারেরই হোক না কেন, প্রতিটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ফ্যাক্ট-চেক করা জরুরি। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? বোরেল তাঁর বইয়ে বিষয়টি খুব সহজভাবে বর্ণনা করেছেন: “তথ্য সংগ্রহের জন্য বইপত্র পড়া, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া কিংবা চিন্তা প্রক্রিয়াতে ছোট কোনো বিচ্যুতি থেকে যেতে পারে। হয়তো সামান্য কোনো ত্রুটি, মামুলি ভুল বোঝাবুঝি বা লেখার ভুল…যদি ছোট কোনো ভুলও হয় এবং বাকি সূত্রগুলো মজবুত থাকে, তাহলে গল্পটা টিকে যেতে পারে। তবুও, অস্বস্তি থেকে যায়। মনোযোগী পাঠক তখন গোটা প্রতিবেদন ঘিরে সন্দেহ করতে শুরু করে।”

আপনার কাজে যদি ঘুরেফিরে এই ‍ভুলগুলো চলে আসে, তবে প্রতিবেদনটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে এবং পাঠকদের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যদি কোনো সোর্সকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়। কিংবা আপনার উদ্ধৃতিটি প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়।

আমরা যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করি সেখানে যেহেতু অফিসের নিজস্ব ফ্যাক্ট-চেকার নেই, তাই এখানে আমরা দেখাব কীভাবে আপনি নিজেই আপনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবেন। আর তা যেন বার্তাকক্ষের ফ্যাক্ট-চেকারের মতোই নির্ভুল হয়।

টিপস টুলস

কাজ করুন গুছিয়ে

ফ্যাক্ট-চেকিংকে সহজ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের মতো করে গুছিয়ে কাজ করা। আপনি নিজের মতো করে এমন একটি পদ্ধতি অনুসরণ করুন যা আপনার জন্য সহজ ও স্বাচ্ছন্দের। যেমন ড্রপবক্স, গুগল ড্রাইভ অথবা আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ (কিন্তু নিশ্চিত করুন যে আপনার একটি ব্যাকআপ ড্রাইভ আছে) ব্যবহার করুন। এবং ফোল্ডারগুলো সহজে চেনা যায় এমন নাম দিয়ে সাজান। আপনি যদি কোনো দলের সাথে কাজ করেন, তবে অন্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করুন যে কীভাবে আপনারা একসাথে মিলে তা করবেন। সবাই মিলে ওই নিয়মগুলোই অনুসরণ করবেন। প্রতিটি সোর্সের বিপরীতে একটি করে যোগাযোগের তালিকা তৈরি করুন। তাদের সাথে কখন কথা বলেছেন তা লিখে রাখুন। সাক্ষাৎকারের রেকর্ডিংয়ের জন্য একটি আলাদা ফোল্ডার করুন।

আপনার গল্পটি শেষমেশ কোথায় গিয়ে থামবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হলেও একটি কাঠামো তৈরি করা ও লেগে থাকাটা জরুরী। আমার প্রাক্তন সহকর্মী ও আর্কাইভিস্ট  টালিয়া কুপারের কাছেও রয়েছে এ সম্পর্কিত দারুণ কিছু পরামর্শ। বিশেষ করে আপনি যখন অনেক বেশি সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন।

আপনার প্রতিবেদনে টীকা বা মন্তব্য যোগ করুন।

প্রতিবেদন লেখার সময় প্রতিটি তথ্যের পাশে নোট করে রাখুন যে, তথ্যটি কোথা থেকে এসেছে। এটি পরে তথ্য যাচাই করার কাজকে সহজ করে।

আপনার খসড়া লেখার সময়, প্রতিটি ফ্যাক্টের সোর্স বা উৎস কোথা থেকে এসেছে তা টুকে রাখুন। এটি করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তবে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ হল ফুটনোট ব্যবহার করে প্রতিটি বাক্যের পাশে সোর্স উল্লেখ করা। কিছু সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদন লেখার সময় টেক্সট এডিটর ব্যবহার করেন। একটি স্প্রেডশিটে আলাদা করে প্রতিটি ফ্যাক্টের বিবৃতি লিখে রাখেন। যেখানে একটি কলামে প্রতিটি ফ্যাক্টের বিবৃতি থাকে। পরবর্তী কলামগুলোতে সোর্স, যেমন লিঙ্ক, ফাইলের নাম, এবং অডিও টাইমকোড থাকে।

আপনি বিন্দুমাত্র বিক্ষিপ্ত হবেন না, অবিচল থাকুন। একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার তথ্য সংরক্ষণ ও গুছিয়ে রাখুন। এভাবে টিকা যুক্ত করার প্রক্রিয়াও সহজ হবে। এবং অপরিচিত কারো হাতে আপনার খসড়াটি পড়লেও প্রতিটি তথ্যের উৎস সে সহজেই বুঝতে পারবে।

আপনার সোর্স নিশ্চিত করুন

যখন রিপোর্ট করছেন, তখন আপনি মূলত প্রাথমিক উৎসগুলো থেকেই বিপুল পরিমান তথ্য সংগ্রহ করবেন, যার মধ্যে (যা মোটেও সীমিত নয়) রয়েছে: সরকারি সংস্থা থেকে পাওয়া নথিপত্র ও ডেটাসেট, আর্কাইভাল উপকরণ, আদালতের রেকর্ড, সাক্ষাৎকার এবং প্রেস রিলিজ। সামাজিক মিডিয়া বা ব্লগ পোস্টের ওপর নির্ভর করবেন না। কারণ এতে তথ্যের উৎস উল্লেখ থাকে না।

গবেষণার শুরুতে উইকিপিডিয়া একটি ভালো উৎস হতে পারে। তবে তা নির্ভরযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস নয়। কারণ যেকোনো সময় যে কেউ কোনো সোর্স ছাড়াই তা সম্পাদনা করতে পারে, কিংবা তথ্য যোগ করতে পারে।

এদিকে, চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাপ্লিকেশনগুলো সাধারণ টুলের মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও নির্ভরযোগ্য নয়। ২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের এক আইনজীবী বিমান সংক্রান্ত একটি মামলায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেঞ্জামিন ওয়াইজারের প্রতিবেদন অনুসারে:  ”সেখানে একমাত্র সমস্যা ছিল: কেউই – এমনকি বিমান সংস্থার কোনো আইনজীবী কিংবা বিচারকও – প্রতিবেদনের ওই কথাগুলো কোথাও খুঁজে পাননি। কারণ চ্যাটজিপিটি সবকিছুই নিজের মতো করে তৈরি করেছিল।”

লিংকগুলোকে সংরক্ষণ করুন

ওয়েবপেজের পুরোনো সংস্করণগুলো দেখার জন্য ওয়েব্যাক মেশিন একটি চমৎকার টুল। ছবি: শাটারস্টক

ওয়েবপেজের পুরোনো সংস্করণগুলো দেখার জন্য ওয়েব্যাক মেশিন একটি চমৎকার টুল। ছবি: শাটারস্টক

বিভিন্ন নথিপত্র, পাবলিক রেকর্ড, এবং সোর্সদের সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি অনলাইনেও আপনি কিছু তথ্য পাবেন। তবে ওয়েবপেজ, প্রবন্ধ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলো এক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা যেতে পারে। তাই কেবল লিংকগুলো সেভ করা নয়, সেগুলো আর্কাইভ করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিংকগুলো যদি কাজ না করে বা তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়, তারপরও আপনার সংগ্রহে সেসব প্রমাণ থাকবে। এক্ষেত্রে ওয়েব্যাক মেশিন একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে কাজ করে। পুরোনো ওয়েবপেজের আর্কাইভ সংস্করণ দেখার জন্য যা একটি দারুণ উপায়। আপনি বিভিন্ন সময় তথ্য বের করতে পারেন। এক বছর এমনকি এক দশক আগের কোনো ওয়েবপেজ কেমন ছিল তাও দেখতে পারেন। যেমন, আপনি যদি এক্স (আগের টুইটার)-এ পাওয়া কোনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট সরক্ষণ করতে চান, তাহলে আর্কাইভ.ইজ (archive.is)-এ তা সংরক্ষণ করতে পারেন।

ফ্যাক্টচেকিংয়ের সবচেয়ে জরুরী প্রশ্ন

দ্য ইন্টারসেপ্টে আমি পূর্ণকালীন ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের কাজ করেছি। সেখানে ফ্যাক্ট-চেকিং ডেস্কের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ নির্দেশিকা তৈরি করে আমাদের দেয়া হয়। ফ্যাক্ট চেক করার সময় আমি যখন সুনির্দিষ্ট কোনো সোর্স খুঁজে পেতাম না, কিংবা সোর্সিং উৎস থেকেও সঠিক বিবৃতি নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না, তখন আমি নিয়মিত ওই নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করতাম। আর ওই সব মূহুর্তে আমি এবং আমার অন্যান্য ফ্যাক্ট চেকার সহকর্মীরা নিচের এই প্রশ্নগুলো করতাম।

  • আমরা কি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে এই বিবৃতিটি সম্পূর্ণ সঠিক?
  • আমরা কি এমন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারি, সংশয়বাদী কোনো ব্যক্তিও যা চোখ-কান বন্ধ করে বিশ্বাস করতে বাধ্য থাকবেন?
  • কিংবা ভবিষ্যতে কী এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যে আমাদের ভুলের জন্য আমাদের প্রকাশনা সংশোধনী দিতে বাধ্য হবে?”

কখনও যদি এমন হতো, এ প্রশ্নগুলোর মধ্য থেকে যে কোনো একটিতে এসে আমরা আটকে গেছি। আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিতে পারছি না। তখন আমরা বুঝে নিতাম, আমাদের আরও সোর্স খুঁজে বের করতে হবে অথবা রিপোর্টারকে বিকল্প শব্দ বসানোর পরামর্শ দিতে হবে। তাই আপনার নিজের রিপোর্টিংয়ের ফ্যাক্ট-চেক করতে বসে আপনিও এই প্রশ্নগুলো মাথায় রাখুন।

ফ্যাক্টচেকিংয়ের সময় যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবেন 

আপনার প্রতিবেদনের প্রতিটি তথ্য নির্ভুল হওয়া জরুরি। সামান্য কোনো ভুল হলেও অনেক বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হতে পারেন—যা বুঝতে পারা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে কটাক্ষ করে দেয়া বিবৃতি, যা মানহানির কারণ হতে পারে;
  •  প্রযুক্তিগত বা আর্থিক তথ্য, যা নিয়ে আগে কোনো রিপোর্ট হয়নি;
  • পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার সারসংক্ষেপ;
  • আইনি যুক্তির বিবরণ (মামলার উভয় পক্ষের নথি পর্যালোচনা করুন);
  • পরিসংখ্যান, নিহতের সংখ্যা, এবং অন্যান্য সংখ্যাগত তথ্য;
  •  ঘটনার তারিখ ও কালক্রম;
  •  অন্য কোনো রিপোর্টারের করা পরিসংখ্যানগত বা অন্য কোনো বিশ্লেষণ;
  • সরকারি নীতি বা আইনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা;
  • অন্য কারও প্রতিবেদনের বর্ণনা;
  •  দাপ্তরিক নামের বানান;
  • বিখ্যাত ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা;
  •  অতিরিক্ত সাধারণীকরণ করা কিংবা চরম ভাষা ব্যবহার, যেমন, ”এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক …”
  •  সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পাওয়া আত্মজীবনীমূলক তথ্য।

 

সাধারণ ত্রুটি এড়ানো

এ সম্পর্কে ফ্যাক্ট-চেকারদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, সাংবাদিকরা যখন কোনো যাঁচাই বাছাই না করে তাদের স্মৃতির ওপর ভরসা করে লিখেন তখনই ভুল বেশি হয়। আর এই ভুলগুলো বিভিন্ন সাধারণ সমস্যার সাথেও সম্পর্কিত।

  • নাম ও উপাধি: কর্পোরেট নির্বাহীদের উপাধি, যেমন চেয়ারম্যান বা সিইও, মিলিয়ে ফেলাটা সহজ।
  • অতিশয়োক্তি: যেমন, আপনি যদি বলেন, “রেকর্ড অনুসারে হারিকেন বেরিল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।” এটি কেন সর্বোচ্চ ভয়াবহ? মাত্রা কীভাবে নির্ণয় করবেন? মৃতের সংখ্যা অনুযায়ী? সর্বোচ্চ শব্দটা ব্যবহার না করে সুস্পষ্ট করে বলাটা ভালো।
  • প্রাসঙ্গিক তথ্য: যেমন তারিখ, সময়, স্থান।
  • সংখ্যাসূচক তথ্য ও পরিসংখ্যান।
  • উদ্ধৃতি।

আপনি বিষয়টি সম্পর্কে আপনি জানেন, তবুও তা যাচাই করাটা জরুরি। মানব স্মৃতি খুব সহজে ভুল করে বসতে পারে, এমনকি অভিজ্ঞ সাংবাদিকেরাও ভুল করতে পারেন। একজন রিপোর্টারও হয়তো ভুলে যেতে পারেন কোন বছর আইনটি প্রণীত হয়েছিল অথবা ওই কর্পোরেট নির্বাহীর উপাধি কী ছিল—যা খুবই স্বাভাবিক। স্মৃতির উপর নির্ভর করবেন না, সবসময় দুইবার করে যাচাই করুন।

যত ভালো সাংবাদিক, তত ভালো প্রতিবেদন

 

এই নির্দেশিকার মূল বিষয়গুলোর সারসংক্ষেপ: প্রতিবেদনে আপনি যে তথ্য, সোর্স ও অন্যান্য নথিপত্র ব্যবহার করেছেন, যে কোনো প্রয়োজনে তা যেন চটজলদি বের করতে পারেন— তাই শুরু থেকেই গুছিয়ে কাজ করুন। খসড়া লেখার সময় টীকা বা নোট নিন। স্মৃতির ওপর নির্ভর করবেন না। প্রতিটি তথ্য বারবার যাচাই করুন। এরপর নিশ্চিত হন।

এভাবে কাজের অভ্যাস করুন, যা ফ্যাক্ট-চেকিংকে আপনার রিপোর্টিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে। এভাবে আপনি আরও ভালো সাংবাদিক হবেন এবং আপনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো আরও বিশ্বাসযোগ্য ও প্রভাবশালী হবে।

এই অধ্যায়টি লিখতে আমাকে সহযোগিতা করেছেন মারগট উইলিয়ামস। 


মারিয়াম এলবা নিউইয়র্কভিত্তিক একজন সংবাদ গবেষক। বর্তমানে তিনি প্রোপাবলিকাতে গবেষণা প্রতিবেদক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় অনুসন্ধান নিয়ে কাজ করছেন। এর আগে, তিনি দ্য ইন্টারসেপ্টে সহযোগী গবেষণা সম্পাদক হিসেবে ফ্যাক্ট-চেকিং ডেস্কের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

 

মারগট উইলিয়ামস ইন্টারসেপ্টের অনুসন্ধানবিষয়ক গবেষণা সম্পাদক। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস, এনপিআর, ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস, এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে কাজ করেছেন। ১৪ বছর কর্মজীবনে তিনি দুটি পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। এর একটি ছিল ১৯৯৮ সালে ওয়াশিংটন ডিসির বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান, এবং অন্যটি ২০০১ সালে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে জাতীয়ভাবে রিপোর্টিংয়ের জন্য।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

অনুসন্ধান পদ্ধতি

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে টিবিআইজে যেভাবে ‘সাইলেন্সড স্টোরিজ’ উন্মোচন করেছে 

আমাদের চারপাশে দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারির খবর চাপা পড়ে যায়। আসলে এসব খবর ধামাচাপা দিতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে চাপ দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। টিবিআইজে কীভাবে সাংসদদের সঙ্গে জোটে বেঁধে চুপ করিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করেছিল পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

নিকার২০২৫ সম্মেলনে আলোচিত আধুনিক, সময় সাশ্রয়ী ও বিনামূল্যের চারটি অনুসন্ধানী ডেটা টুল

যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে থাকেন এই প্রতিবেদনে তাঁদের জন্য থাকছে চারটি ডেটা টুলের সন্ধান। ধরুন, বেশ বড়সড় একটা অডিও ফাইল হাতে এসেছে, গোটাটা শোনারসময় করে উঠতে পারছেন না। সারাংশটা চাই, তাই তো? দেখুন এই প্রতিবেদনে এমন কিছুর সন্ধান মেলে কিনা।

গবেষণা ডেটাবেজ

বেসরকারি ডেটার বিকল্প উৎস ও আর্কাইভের তালিকা দেখুন এখানে

পরিসংখ্যানের জন্য সরকারি উৎসগুলো এককথায় অতুলনীয়। সেই সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলোও ডেটার ভালো উৎস। বেশ কিছু সাংবাদিক সংগঠনও ডেটা সংরক্ষণ করে থাকে এবং দলের সদস্যদের কাছে প্রয়োজনমাফিক তথ্য যোগায়। এই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যবিষয়ক ডেটার খোঁজ কোথায় পাবেন তার সন্ধান থাকল।

সাক্ষাৎকার

কলকারখানার দূষণ উন্মোচন এবং বিট হিসেবে ‘ফরএভার কেমিকেলস’ এর জন্ম হলো যেভাবে

পিএএফএসকে বলা হয় ফরএভার কেমিক্যালস। একাধারে তেল ও তাপ প্রতিরোধী। বছরের পর বছর প্রকৃততি মিশে থেকে দূষণ ঘটায়। দূষণের মতো অদৃশ্য একটা বিষয়কে সবার সামনে দৃশ্যমান করে তোলার প্রক্রিয়াটি সত্যিই রোমাঞ্চকর।