প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

ভালো সাক্ষাৎকার পেতে হলে আপনাকে যা করতে হবে

 

ছবি: নিনা ওয়েইম্যান শুলজ (নিনা-ওয়েইম্যান-শুলজ.কম)

“ভালো সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা আর কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা। কখনো কখনো ভাগ্যের সহায়তাই বেশি দরকার পড়ে। কিন্তু আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন করাটাও জানতে হবে,” ১১তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে কথাগুলো বলছিলেন এনপিআর-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক শেরিল ডব্লিউ. থম্পসন

ভালো সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য চাই প্রস্তুতি।

কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সাক্ষাৎকার নেওয়া যায় তা নিয়ে কিছু টিপস দিয়েছেন থম্পসন ও সিএনবিসি-র জ্যেষ্ঠ অনুসন্ধানী প্রযোজক স্কট জামোস্ট

স্ট্র্যাটেজি তৈরি করুন। “এর মানে হচ্ছে: আপনার কী কী তথ্য জানা দরকার সেটা ভালোমতো বুঝে নিয়ে তারপর সাক্ষাৎকার নিতে যেতে হবে,” বলেছেন থম্পসন, “যার সাক্ষাৎকার নিতে যাচ্ছেন, তার সাক্ষাৎকার দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী বিষয়ে উদ্বেগ থাকতে পারে এবং কীভাবে আপনি তাকে আশ্বস্ত করবেন সেটা ভালোমতো বুঝে নিতে হবে। কেন এই সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরও তৈরি রাখতে হবে। অনুসন্ধান যেন বাধাগ্রস্ত না হয় তা খেয়াল রেখে একটি সত্য উত্তর দিতে হবে।”

যে বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠুন। ১৯৭০-এর দশকে ওয়াশিংটনে ছয়জন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন থম্পসন। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে থম্পসন বলেছেন, “কারো সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়ার আগে আমি শুরুতে এই কেস নিয়ে ও সেই ছয়টি মেয়েকে নিয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জেনেছি।” তিনি সেসময়ের সংবাদ, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দিগুলো পড়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রাসঙ্গিক তথ্যের জন্য, “সেই পরিবারগুলোর সদস্যরা হয়তো পুরোনো বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো ভুলেই যেতে চেয়েছেন। সেগুলো নিয়ে নতুন করে তাদের কাছে জানতে চাওয়াটা ছিল খুব কঠিন ব্যাপার। ফলে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে আমি সম্ভাব্য সবকিছু করেছি। প্রতিবেদনটা ভালোভাবে লেখার জন্য আমাকে অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতে হয়েছে আর এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সব কিছু বিস্তারিত জানতে হয়েছে।”

শেরিল থম্পসন এনপিআরের অনুসন্ধানী সাংবাদিক। ছবি: নিনা ওয়েইম্যান শুলজ (নিনা-ওয়েইম্যান-শুলজ.কম)

প্রশ্নগুলো আগেই তৈরি করুন, আর সেগুলো লিখে রাখুন। থম্পসন বলেছেন, “আপনার মাথায় অনেক প্রশ্ন থাকবে। আর সাক্ষাৎকারদাতার উত্তর শুনতে শুনতে পরবর্তী প্রশ্নের কথা ভাবাও খুব কঠিন ব্যাপার। প্রশ্নগুলো আগেভাগে লিখে রাখতে পারলে আপনি মনোযোগ দিয়ে উত্তরগুলো শুনতে পারবেন। একই সঙ্গে সাক্ষাৎকারের গতিপথও ঠিকঠাক থাকবে।”

কঠিন প্রশ্ন দিয়ে শুরু করবেন না। অবশ্য “আপনার যদি প্রশ্ন করার সুযোগ একটাই থাকে, তাহলে যা জিজ্ঞাসা করা দরকার সেটাই করবেন,” বলেছেন থম্পসন।

লেগে থাকুন। থম্পসনের অভিমত, “আমার কাছে ‘না’ বলতে কিছু নেই। এর মানে ধরে নিই অন্য আরেকদিন আসুন।”

কিন্তু সবসময় বিনয়ী আর শ্রদ্ধাশীল থাকুন। জামোস্টের পরামর্শ, “এরকম বলতে পারেন, আমি শুধু চাই পুরো গল্পটা ভালোমতো বলতে।”

চুপচাপ থাকুন। “বব উডওয়ার্ড বলতেন, ‘নিরবতা দিয়েই সত্য বের হয়ে আসুক।’ কেউই অস্বস্তিকর নিরবতা পছন্দ করে না,” বলেছেন থম্পসন। ফলে দেখা যাবে যে, আপনার সাক্ষাৎকারদাতা কথা বলতেই থাকবেন।

এমন প্রশ্ন করুন, যার উত্তরে ব্যাখ্যা দিতে হয়। থম্পসন বলেছেন, “এরকম প্রশ্ন করুন যে, ‘সেই দিনটা নিয়ে বলুন বা সেই মানুষটা সম্পর্কে বলুন।’ কথাবার্তা শুরু করার জন্য এটা একটা দারুন পদ্ধতি।” নিছক হ্যাঁ বা না-তে উত্তর দেয়া যায় এমন প্রশ্ন এড়িয়ে চলুন।

আপনার প্রশ্নগুলো যেন সুনির্দিষ্ট হয়, তা নিশ্চিত করুন। থম্পসনের মতে, “অষ্পষ্ট প্রশ্ন থেকে আপনি অষ্পষ্ট উত্তরই পাবেন।”

কিছু না বোঝার ভান কাজে দিতে পারে। থম্পসন বলেছেন, “মানুষ এটা দেখাতে পছন্দ করে যে তারা কত বুদ্ধিমান। আপনি যদি এরকম ভান করেন যে, আমি কিছুই জানি না, আপনি কী আমাকে জানাতে পারেন – তাহলে মানুষ সবসময়ই তাতে রাজি হয়।”

সাক্ষাৎকারদাতার সঙ্গে সৎ থাকুন। “মানুষ অনেক কিছু বুঝতে পারে। আপনাকে অবশ্যই অকপট থাকতে হবে,” বলেছেন থম্পসন।

সাক্ষাৎকারদাতাকেই শেষ কথা বলতে দিন। থম্পসনের পরামর্শ, “জিজ্ঞাসা করুন, তারা আরো কিছু বলতে চান কিনা বা কিছু বলতে ভুলে গেছেন কিনা।”

ভালোভাবে নোট নিন, রেকর্ডার ব্যবহার করুন আর রেকর্ডিংগুলো সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেলুন। “সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি অনেক কিছু ভুলে যাবেন। আপনি যদি আমার মতো নোট নেন, তাহলে দেখবেন যে এক সপ্তাহ পর আপনি আর সেগুলো পড়তে পারছেন না,” সতর্ক করেছেন থম্পসন।

ব্রেন্না ডালডোর্ফ থাকেন লন্ডনে (বেড়ে উঠেছেন কানসাসে, আর অনেক বছর কাটিয়েছেন প্যারিসে)। তিনি একজন ফ্রিল্যান্স অডিও প্রোডিউসার এবং সাংবাদিক। পিআরআই-এর দ্য ওয়ার্ল্ড ও দ্য গার্ডিয়ানের সাথে বেশ কিছু কাজ করেছেন। তাঁর বেশিরভাগ রিপোর্ট মানসিক চাপে ভোগা শিশু ও তরুনদের নিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি রিপোর্টিং করেছেন কেনিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও নাইজেরিয়া থেকে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

GIJN এর সদস্যপদ জিআইজেসি২৫

মালয়েশিয়াকিনি: স্বাধীন বার্তাকক্ষ যেভাবে ইটের পর ইট গেঁথে ক্ষমতাবানদের “গলার কাঁটা” হয়ে ওঠে

“মালয়েশিয়াকিনি সবচেয়ে জরুরী কাজটি করেছে। বার্তাকক্ষটি সরাসরি এবং সুস্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে ক্ষমতাবানদের কর্তৃত্বকে। সাধারণ মালয়েশিয়ানদের জন্য নিষিদ্ধ বিষয় যেমন জাতি, রাজপরিবার এবং ধর্ম নিয়ে মতামত প্রকাশের একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করেছে।”

অনুসন্ধান পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

নির্বাসিত লোকেদের ওপর রাষ্ট্রের হামলা: ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী সিরিজ “দমন নীতির দীর্ঘ হাত” থেকে আমরা যা শিখতে পারি

দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী দল রিপ্রেশন’স লং আর্ম ধারাবাহিকে তুলে ধরেছে, কীভাবে নিজ দেশের সীমানার বাইরে থেকেও নিশানা হচ্ছেন ভিন্ন মতাবলম্বীরা।

প্রতিবেদন প্রকাশ বণ্টন ও প্রচার

সাংবাদিকতায় আস্থা ধরে রাখতে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ কীভাবে কাজ করছে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ। উত্তর মেসিডোনিয়ায় এমন একটি বার্তাকক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের আস্থা অর্জন করেছে। তাঁরাই বার্তাকক্ষে ছুটে যাচ্ছেন সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নিজেরাও।

Toxic Waste Pollution Factory Bank

পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে বিনিয়োগ করছে কারা-বিনিয়োগকারীদের খোঁজ করবেন যেভাবে : দ্বিতীয় পর্ব

ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি করছে বা দূষণে ভূমিকা রাখছে—সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের এমন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা বা প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। লক্ষ্য, নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও যেসব দেশে তাঁরা বিনিয়োগ করছে সেসব দেশের টেকসই উন্নয়ন। অনেক সময় খনিজ উত্তোলন ও বন উজাড় করার কাজেও বিনিয়োগ করে থাকে তারা। আর প্রচারণা চালায় উন্নয়ন বিনিয়োগ বলে। এই নিবন্ধটি পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।