Icarus Flights, the new aircraft tracking tool from C4ADS, helps reporters investigate illicit flight activity around the world. Image: Shutterstock
ইকারাস ফ্লাইটস: উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের নতুন শক্তিশালী টুল
উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের টুল ব্যবহার করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা অনেক বড় বড় ঘটনা উন্মোচন করেছেন। যেমন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ উদঘাটন, ফ্রান্সে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার, এবং আমাজন জঙ্গলের অবৈধ খনি থেকে তোলা স্বর্ণ বহন করা বিমানের পরিচয় উন্মোচন।
আকাশপথের এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড উদঘাটনের জন্য এবার সাংবাদিকদের জন্য একটি শক্তিশালী উচ্চমানসম্পন্ন টুল তৈরি করেছে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (C4ADS)। নাম: ইকারাস ফ্লাইটস। দ্বাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের (#জিআইজেসি২১) এক সেশনে ইকারাসের ব্যাপক সক্ষমতা এবং বিমান ট্র্যাকিংয়ের একটি টিউটোরিয়াল দিয়েছেন C4ADS-এর সফটওয়্যার নির্মাতা জেক গ্লাস, এবং তাঁর সহকর্মী, কনফ্লিক্ট ফাইন্যান্স অ্যানালিস্ট ইভা কাহান।
বিমান শনাক্তকরণ
বিমান ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে ডেটা অনুসন্ধানকারীদের খোঁজ করার সবচেয়ে সহজ জায়গা হলো, এর টেইল বা নিবন্ধন নম্বর শনাক্ত করা, বলেছেন গ্লাস। এই নম্বর সাধারণত বিমানের টেইল বা গায়ে লেখা থাকে। বিমানের উৎস বা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে এই টেইল নম্বরই প্রধান সূত্র হয়ে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা কোনো ওপেন সোর্স ছবি থেকেও এটি পাওয়া যেতে পারে।
প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ: চিহ্নিত করা বিমানটি সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব ডেটা সংগ্রহ করা। টেইল নম্বর দিয়ে গুগল সার্চ করলে হয়তো বিমানটির নিবন্ধন নম্বর ও বিমানের ধরন বেরিয়ে আসবে। একই সার্চ থেকে বিমানটির ইউনিক সিরিয়াল বা এমএসএন (ম্যানুফ্যাকচারার’স সিরিয়াল নম্বর) পাওয়া যেতে পারে। সেটি ধরে রিপোর্টাররা রাশিয়ানপ্লেনস ডট নেট-এর মতো বিমানমোদীদের সাইটে খোঁজ করতে পারেন এবং সেই বিমান বা ভ্রমণসংক্রান্ত নথিপত্র পেতে পারেন।
গ্লাস বিভিন্ন বিমানের শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্যগুলো ভেঙে দেখিয়েছেন। কিছু কিছু থাকে অস্থায়ী এবং সহজেই সেগুলো পরিবর্তন করে ফেলা যায়। ফলে সেসব শনাক্ত করাও বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়:
শনাক্তকরণ চিহ্ন | বর্ণনা | উদাহরণ |
মোড-এস হেক্স কোড, ট্রান্সপন্ডার কোড, বা আইসিএও কোড | সংখ্যা ও অক্ষর মিলিয়ে ছয় ডিজিটের এই কোড একটি নির্দিষ্ট বিমানের পরিচয় বহন করে। সাধারণত কোনো দেশের সরকার থেকে এই নির্দিষ্ট নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হয়। তবে বিমানটি যদি অন্য কোনো দেশে পুনরায় নিবন্ধিত হয়, তাহলে নম্বরটি পরিবর্তন হতে পারে। | AC1DD অথবা ac1dd |
সিরিয়াল নাম্বার বা এমএসএন | এই নম্বর বরাদ্দ দেয় বিমানটির নির্মাতারা। প্রায়ই বিমানের প্রধান অংশের গায়ে এটি একটি প্লেটের মাধ্যমে সেঁটে দেওয়া হয়। এবং সাধারণত এই নম্বর আর পরিবর্তন হয় না। | 0053465956 |
নিবন্ধন নম্বর | অক্ষর ও সংখ্যাযুক্ত এই কোডের প্রথম অক্ষরটি দিয়ে বোঝানো হয়: কোন দেশে বিমানটি নিবন্ধন করা হয়েছে। এবং বাকি সংখ্যাগুলো নির্দিষ্ট একটি বিমানকে নির্দেশ করে। তবে, বিমানটি অন্য কোনো দেশে পুনরায় নিবন্ধন করলে এই কোড সহজেই পরিবর্তন করে ফেলা যায়। | N12345 (N = US); EI-DCK (EI = Ireland) |
কলসাইন | অক্ষর ও সংখ্যাযুক্ত এই কোড চলাচলের সময় বিমান থেকে সম্প্রচার করা হয়। যেখান থেকে অপারেটর ও বিমানের নম্বর জানা যায়। বাণিজ্যিক বিমানের ক্ষেত্রে প্রায়ই এটির মাধ্যমে দেখানো হয়: কে বিমানটির মালিক বা পরিচালনা করে। | UAL22 (United Airlines, Flight 22) অথবা RYR96AT |
বিমানের মালিকানা
বেশ কিছু ডেটাবেস ব্যবহার এবং বিমানের শনাক্তকরণ নম্বর চিহ্নিত করার মাধ্যমে, রিপোর্টাররা বের করতে পারেন যে বিমানটির মালিক কে এবং কোথায় নিবন্ধন করা হয়েছিল। শিকাগো কনভেনশন অনুযায়ী, সব বিমানকে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। কিন্তু এটি মালিকের নিজ দেশেই হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এবং এমন অনেক পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে বিমানের মালিকেরা তাঁদের সত্যিকারের পরিচয় লুকাতে পারেন।
করের দায় এবং প্রাইভেসির কারণে মালিকদের অনেকেই তাঁদের বিমানগুলো নিবন্ধন করেন আরুবা বা আইল অব ম্যান-এর মতো এলাকায়, যেখানে তথ্য গোপন রাখা যায়। যাঁর নামে বিমানটি নিবন্ধন করা থাকবে, তিনিই যে এটির আসল মালিক বা ব্যবহারকারী (“বেনিফিশিয়াল ওনার”)- তা না-ও হতে পারে। হয়তো এটি নিবন্ধন করা আছে কোনো ব্যক্তি, শেল কোম্পানি, বা ট্রাস্টের নামে, কিন্তু আসলে ব্যবহার করেন অন্য কেউ। “আমি যদি আমার পরিচয় গোপন করতে চাইতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে আরুবার মতো কোনো জায়গার প্রাইভেট রেজিস্ট্রিতে নিবন্ধন করতাম”, বলেছেন জেক গ্লাস।
বিনা মূল্যের, জাতীয় বিমান ডেটাবেসের তুলনায় প্রাইভেট রেজিস্ট্রিগুলো সাধারণত অনেক ভালো তথ্যসূত্র। কিন্তু কিছু রেজিস্ট্রিতে এত বেশি ফি দিতে হয় যে তা অনেক স্বাধীন সাংবাদিকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সিএইচ এভিয়েশন এবং অ্যারোট্রান্সপোর্ট ডেটা ব্যাংক, যেখানে বেশির ভাগ রেজিস্ট্রারের মধ্যে সার্চের ব্যবস্থা আছে। এটি বিমানসংক্রান্ত তথ্যের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার। কিন্তু এটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে বছরে গুনতে হবে এক থেকে দুই হাজার ডলার।
সামরিক বিমান বা বিশ্বনেতাদের ব্যবহার করা ব্যক্তিগত বিমান শনাক্তের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে এই ডেটাবেসগুলো:
স্ক্রাম্বল মিলিটারি এয়ারক্রাফট ডেটাবেস পরিচালনা করেন এক শৌখিন ডাচ ব্যক্তি। এবং এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় ওপেন সোর্স ডেটাবেস।
প্রাইভেট জেটস অব ওয়ার্ল্ড লিডারস-এ “বেসামরিক” বিমানের প্রোফাইল আছে, যেগুলো বিশ্বনেতারা ব্যবহার করেন।
বিমান ট্র্যাকিং
গ্লাস বলেছেন, মাটিতে থাকা রাডারের পরিবর্তে, বেশির ভাগ আধুনিক বিমানই এখন ট্র্যাক করা হয় জিপিএস বা স্যাটেলাইটভিত্তিক নেটওয়ার্ক দিয়ে। তিনি উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া এবং পুরো ইউরোপ এটি বাধ্যতামূলক করেছে যে: বিমানগুলোতে অবশ্যই অটোমেটিক ডিপেন্ডেন্ট সারভেইলেন্স ব্রডকাস্ট (এডিএস-বি) প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে, যেন স্যাটেলাইট বা অন্যান্য সেন্সর দিয়ে বিমানের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
যে সাংবাদিকেরা তাঁদের এলাকায় আসা ও ছেড়ে যাওয়া বিমানের ডেটা সংগ্রহ করার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য আমাদের প্রধান পরামর্শ: এডিএস-বি গ্রাউন্ড রিসিভার যে কেউ বসাতে পারেন, যা দিয়ে স্যাটেলাইট ও বিমান ট্রান্সপন্ডার ট্রান্সমিশন সম্ভব। এই রিসিভারগুলো খুবই সহজ-সাধারণ, সেটআপ করতে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। এটি চালু করা মাত্র সেই এলাকায় এডিএস-বি-এর কাভারেজ বিস্তৃত হয়ে যায়। C4ADS এমনকি সেসব মানুষের কাছে এই এডিএস-বি সরঞ্জামগুলো বিনা মূল্যে সরবরাহ করবে, যারা একটি গ্রাউন্ড রিসিভার স্টেশন তৈরি এবং ইকারাস ফ্লাইট টুলের কাভারেজ বিস্তৃত করতে আগ্রহী হবে।
পরিচিত হোন ইকারাস ফ্লাইটসের সঙ্গে
“আগ্রহের বিমানটির শনাক্তকরণ তথ্য জেনে ফেলার পর, আপনি হয়তো জানতে চাইবেন, সেটি কোথায় কোথায় যাচ্ছে। এই জায়গাটিতেই আপনাকে সহায়তা করতে পারে ইকারাস,” বলেছেন C4ADS অ্যানালিস্ট কাহান।
বাণিজ্যিক ডেটাবেসগুলো ব্যবহারের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের কথা মাথায় রেখে বিশেষভাবে অনুসন্ধানকারী ও সাংবাদিকদের জন্য বানানো হয়েছে ইকারাস ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম। এটি বাণিজ্যিক ডেটাবেসগুলো থেকে কিছু তথ্য নেয়। কিন্তু এখানে একই সঙ্গে লাইভ গ্লোবাল ট্র্যাকিং, আনফিল্টার্ড ফলাফল, ঐতিহাসিক সার্চ অ্যাকটিভিটিসহ আরও অনেক বিশ্লেষণী ফিচার পাওয়া যায়। ইকারাসের ভিজিবিলিটি নির্ভর করে এডিএস রিসিভারদের কাছ থেকে কী পরিমাণ কাভারেজ পাওয়া যাচ্ছে, তার ওপর। ফলে একটি এলাকায় রিসিভার বসালে স্থানীয় পর্যায়ে কাভারেজ ব্যাপকভাবে বাড়বে।
আনফিল্টার্ড ফলাফলের ফিচারটি অনুসন্ধানকারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, বাণিজ্যিক ডেটাবেসগুলোতে মালিকদের অনুরোধে বিমান শনাক্তের ডেটা সরিয়ে ফেলা হয়। তার মানে, অনুসন্ধানকারীর খুবই আগ্রহ আছে, এমন কোনো বিমানের ডেটা সরিয়ে বা লুকিয়ে ফেলা হতে পারে। ইকারাস ফ্লাইটস তৈরি করা হয়েছে এই ইস্যু এড়ানোর জন্য এবং বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য।
যে অনুসন্ধানকারীরা দেখতে চান: নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় কোন বিমানগুলো চলাচল করেছে; তাদের জন্য ইকারাসে স্থানভিত্তিক সার্চেরও সুযোগ আছে। এটিকে ঐতিহাসিক সার্চ ফিচারের সঙ্গে মেলালে ইকারাস অনুসন্ধানকারীদের জন্য একটি দারুণ টুল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে তাঁরা একটি সময়পর্বে কোনো ভূতাত্ত্বিক এলাকায় অবৈধ কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করতে পারেন।
একটি উল্লেখ করার মতো বিষয়: ইকারাস ফ্লাইটস পুরোপুরি ওপেন সোর্স টুল নয়। ফলে যাঁরা এটি ব্যবহারে আগ্রহী, তাঁদের সাইন আপ করার জন্য C4ADS-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বিমান ট্র্যাকিংয়ের আরও রিসোর্স
বিমান ট্র্যাকিং নিয়ে জিআইজেএন-এর কিছু রিসোর্স পাবেন এখানে।
জিআইজেএন-এর বিমান ট্র্যাকিং টিপশিট।