জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের ২০২৪ সালের সেরা গাইড ও টিপশিট
গেল ১২ মাস জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের জন্য ছিল ভীষণ ব্যস্ত একটি বছর। নতুন এবং সর্বসাম্প্রতিক আটটি গাইড প্রকাশের মাধ্যমে সেন্টারটি সাংবাদিকদের দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিসর বাড়াতে সাহায্য করছে। জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারে ১৪টি ভাষায় ২ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন লেখা ও কনটেন্ট রয়েছে—টিপশিট, গাইড থেকে শুরু করে শিক্ষামূলক ভিডিও পর্যন্ত। চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২৪ সালের সেরা কয়েকটি নির্বাচিত রিসোর্স।
গাইড: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভূমিকা
উন্নত গবেষণা কৌশল শেখার বেশ কিছু অনলাইন মঞ্চ রয়েছে। তারপরও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক দক্ষতায় বড় ঘাটতি দেখা যায়। সে কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের লেখাগুলোর সমন্বয়ে আমরা একটি গাইড তৈরি করেছি। দশটি অধ্যায়ের এই নির্দেশিকাতে আলোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থের গতিপথ অনুসরণ, সোর্স খুঁজে বের করা, সাক্ষাৎকার নেয়ার কৌশল, ওপেন সোর্স গবেষণা পদ্ধতি, ডেটা সাংবাদিকতা, ফ্যাক্ট চেকিং, সহযোগিতা এবং সম্পাদনা।
আমাদের প্রত্যাশা, এই গাইডটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে সাংবাদিকতা শিক্ষার্থী এবং বিট রিপোর্টারদের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে আরও জানতে-বুঝতে আগ্রহী।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় প্রকল্প ব্যবস্থাপনাবিষয়ক গাইড
অংশীদারত্ব বর্তমানে সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। একসাথে কাজের মাধ্যমে সাংবাদিকরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে এবং গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলোকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। তবে কাজটি খুব সহজ নয়। এই সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়। কেননা বিভিন্ন ধরনের বই আর লেখা পড়ে শুধু জানতে পারবেন যে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি কীভাবে কাজ করবেন। তবে অনুসন্ধানের বাইরেও কিছু কাজ থাকে। যেমন আপনার অনুসন্ধানী দলের সদস্যদের মধ্যে কে কোন কাজের দায়িত্বে থাকবে, সেখানে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত—তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকা জরুরী। কোকো গুবেলসের লেখা এই গাইডটিতে সাতটি আলাদা আলাদা অধ্যায় রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন কৌশল ও পরামর্শ, পড়ার জন্য অতিরিক্ত উপকরণ, টেমপ্লেট এবং তথ্যের জন্য বিভিন্ন লিংকও যুক্ত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তহবিল সংগ্রহের ভূমিকা
কীভাবে তহবিল সংগ্রহ করতে হয়—এ কাজে আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন, তবে ঠিক এ জায়গা থেকেই আপনার খোঁজ শুরু করুন। সাংবাদিকতা সংস্থার জন্য তহবিল খুঁজে আনাটাও একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। বিশেষ করে, আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি দাতাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে—এমন কেউ না থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কী পরিমাণ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী? অনুমিত একটি হিসাবে ধরা হয়েছে যে, ১ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহের জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ২৫ হাজার ডলার। আর ঠিক এ কারণেই অলাভজনক বার্তাকক্ষগুলো খুব বেশি দিন তহবিল সংগ্রহের দিকটিকে উপেক্ষা করতে পারে না। জিআইজেএনের উন্নয়ন পরিচালক কারেন মার্টিনের লেখা এই গাইডটি তৈরি করা হয়েছে নতুনদের তহবিল সংগ্রহের কাজকে সহায়তা করার লক্ষ্য নিয়ে।
সর্বসাম্প্রতিক গাইড: নিষ্কাশন শিল্প নিয়ে যেভাবে কাজ করবেন
প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন—যেমন তেল ও গ্যাস, কয়লা, কম-মূল্যের খনিজ যেমন বালি, এবং উচ্চ-মূল্যের খনিজ যেমন স্বর্ণ—উত্তোলনের সুবিধা এবং খরচ দুটোই আছে। খনিজ উত্তোলন অনেক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রভাব ফেলে কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রায়। এছাড়াও সবুজ শক্তির রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ যেমন কোবাল্ট, নিকেল, এবং লিথিয়ামের চাহিদা এখন বেশ তুঙ্গে। যা খননের সাথে সম্পর্কিত পরিবেশগত, সামাজিক এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ঘিরে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। এই সংক্ষিপ্ত গাইডটি সাংবাদিকদের খনিজ শিল্পের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং মানবাধিকার বিষয়ক গল্পগুলো চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।
কার্বন অফসেট নিয়ে অনুসন্ধান
সাংবাদিকেরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এরইমধ্যে তাঁরা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতেও সমর্থ হয়েছেন। কার্বন অফসেট (কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেয়া ) নিয়ে কাজ করাটা জরুরী। তবে মোটেও সহজ নয়। কিন্তু স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে কর্পোরেট বোর্ডরুম পর্যন্ত—বিশ্বজুড়ে অনেক গল্প তুলে আনার সুযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালে, আমরা আমাদের কার্বন অফসেট অনুসন্ধান গাইডের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশ করেছি। যেটি লিখেছেন জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক টবি ম্যাকিনটোশ।
কার্বন অফসেটিং হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য নেয়া কোনো প্রকল্পকে “কার্বন ক্রেডিট” নামে বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত করা। ক্রেতারা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ “কমানোর” জন্য এই ক্রেডিটগুলো ব্যবহার করতে পারেন। গত কয়েক বছরে স্বেচ্ছাসেবী কার্বন ক্রেডিটের ( বড় বড় অনেক শিল্প বা কোম্পানি তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। এরা কার্বন ক্রেডিট কিনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবি করতে পারে) বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। এই স্বেচ্ছাসেবী বাজারটি কার্যত কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই পরিচালিত হয়। যেখানে স্বচ্ছতার অভাবও রয়েছে।
তীব্র দাবদাহ নিয়ে অনুসন্ধানের গাইড
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গাইড তৈরির ধারাবাহিকতায়, জিআইজেএনের টবি ম্যাকিনটোশের লেখা এই নির্দেশিকাটি তীব্র দাবদাহের মতো বৈশ্বিক ঘটনাকে বিভিন্ন দিক থেকে অনুসন্ধানের পরামর্শ দেয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিমাণ এবং এর প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে বিষয়টি গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে। মার্কিন বেসরকারি সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়া বিগত ১২ মাস ধরে বিশ্বের ৭৮ শতাংশ জনসংখ্যা—অর্থাৎ ৬৮০ কোটি মানুষকে—অন্তত ৩১ দিন চরম গরম সহ্য করতে হয়েছে। এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, দাবদাহের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। আর খরার কারণে মৃত্যু হবে ৩২ লাখ মানুষের। এই সব তথ্য-উপাত্ত চরম গরম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
সাংবাদিকদের জন্য ধাপে ধাপে গুগল শিটের মৌলিক বিষয়গুলো শেখার গাইড
স্প্রেডশিট ব্যবহার করতে জানাটা সাংবাদিকদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আপনাকে অসংখ্য
ডেটার মাঝ থেকে সম্ভাব্য গল্পটি খুঁজে বের করতে সহায়তা করে। মৌলিক এই গাইডটি আপনাকে বিশাল ডেটাসেট বিশ্লেষণে সাহায্য করবে, যা হয়তো কোনো তথ্য ফাঁসের ঘটনা থেকে বা তথ্য অধিকার আইনের অনুরোধের মাধ্যমে আপনার হাতে এসেছে। এই গাইডটি ডেটা যাচাইবাছাই আর ভিজ্যুয়ালাইজেশন সম্পর্কেও আপনার বোঝাপড়া তৈরিতে সাহায্য করে। আপনার হাতে থাকা জটিল তথ্যগুলো পাঠকের সামনে কীভাবে সহজ করে উপস্থাপনা করবেন—শিখিয়ে দেয় তা-ও।
নিকোলিয়া অ্যাপোস্টলো জিআইজেএনের রিসোর্স সেন্টারের পরিচালক। গত ১৮ বছর ধরে গ্রিস, সাইপ্রাস এবং তুরস্ক থেকে বিভিন্ন তথ্যচিত্র নির্মাণ ও লেখালেখি করছেন। তিনি বিবিসি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এজে+, নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য নিউ হিউমেনিটারিয়ান, পিবিএস, ইউএসএ টুডে, ডয়েচে ভেলে, আল-জাজিরাসহ ১০০-এর বেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে শুরু হওয়া গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট এবং ইউরোপীয় শরণার্থী সমস্যা নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন করেছেন। তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে দেখানো হয়েছে। জয় করে নিয়েছে একাধিক পুরস্কার। নিকোলিয়া কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজম থেকে ডিজিটাল মিডিয়ার ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন গ্রিসের এথেন্সের প্যান্টিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।