প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Man walking on flooded road in Kristiansted, Norway.
Man walking on flooded road in Kristiansted, Norway.

Image: Shutterstock

লেখাপত্র

বিষয়

জলবায়ু স্টোরিটেলিং: নরওয়ের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম থেকে যা শেখার আছে 

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

Man walking on flooded road in Kristiansted, Norway.

শাটারস্টক

ভাবছেন, জলবায়ু-সাংবাদিকতার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ কীভাবে বাড়িয়ে তুলবেন? নরওয়ের সম্প্রচারমাধ্যম এনআরকে-র অনলাইন দলের তৈরি করা এই দুটি পুরস্কারজয়ী প্রকল্প, আপনাকে জলবায়ু কাভারেজে পাঠক-সম্পৃক্তি ও প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করবে।

প্রচলিত ধারণা হলো, জলবায়ুবিষয়ক স্টোরিতে বিপুলসংখ্যক পাঠক বা দর্শক টেনে আনা প্রায় অসম্ভব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, এর কারণ মূলত দুর্বল স্টোরিটেলিং এবং কনটেন্টে প্রাসঙ্গিকতার অভাব।

নরওয়ের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম (টিভি ও রেডিও) এনআরকে-তেও একই রকম ধারণা পোষণ করা হতো।

কিন্তু এনআরকে-র অনলাইন টিম ঠিক করল, নিজেদের সক্ষমতা পরখ করে দেখবে। তাদের পরিকল্পনা ছিল: অনলাইন সাংবাদিকতার সেরাটুকু দিয়ে, মানে অনন্য, এমন একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং দাঁড় করানো, যার মাধ্যমে তারা পাঠকের আগ্রহকে জাগিয়ে তুলবে, যা সাধারণ নরওয়েজিয়ানদের কাছে বোধগম্য হবে এবং এর সঙ্গে তাঁরা নিত্যদিনের জীবনের মিলও খুঁজে পাবেন। 

এনআরকে-র ডিজিটাল স্টোরিটেলিং সম্পাদক রাইডার ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, “আমরা এমন একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রজেক্ট তৈরি করেছি, যেটি অনেকটা টাইম মেশিনের মতো করে, স্থান ও কাল দুইভাবে, জলবায়ু পরিবর্তনের গল্পগুলোকে মানুষের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে।”

২০১৯ সালে তৈরি করা, তাদের একটি প্যাকেজের নাম ছিল চেজিং ক্লাইমেট চেঞ্জ। নরওয়েতে জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার মাধ্যমে, এটি জলবায়ু পরিবর্তনকে পাঠকদের কাছাকাছি আনতে সফল হয়েছে। ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, “মূল বার্তা ছিল জলবায়ু পরিবর্তন সত্যিকারের, এটি সুদূর ভবিষ্যতের কোনো শঙ্কা নয়, বরং এখনই ঘটছে।”

প্রকল্পটি তাদের জন্য একটি বিশাল সাফল্য ছিল। এক মিলিয়ন পেজ ভিউ (মাত্র পাঁচ মিলিয়ন মানুষের দেশে), এবং এটি ডিজিটাল স্টোরিটেলিংয়ের জন্য পুরস্কারও জিতেছিল। ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, স্টোরিটি ছিল মোবাইলের জন্য অপটিমাইজ করা, অত্যন্ত ভিজ্যুয়ালনির্ভর, এতে টেক্সট ছিল সীমিত এবং সব বৈজ্ঞানিক বিবরণ আলাদা পপআপে বাড়তি উপাদান হিসেবে যোগ করা হয়েছিল।

নরওয়েজিয়ান পাবলিক ব্রডকাস্টার এনআরকে সেই দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে আকর্ষণীয় গল্প তৈরি করেছে। ছবি: স্ক্রিনশট

এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দলটি এরপর আরও উচ্চাভিলাষী এবং অত্যাধুনিক জলবায়ু স্টোরিটেলিং প্রকল্প হাতে নেয়। “ইয়োর ক্লাইমেট ফিউচার” নামের এই স্টোরি ২০২০ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে প্রচারিত হয়।

এটি ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং আকর্ষণীয় সাংবাদিকতার একটি  উদাহরণ, যেখানে ৪০ হাজারের বেশি ডেটা পয়েন্ট ছিল। একজন ইউজারের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে, প্রকল্পটি ৩৫৬টি আলাদা গল্প তৈরি করতে পারে; নরওয়ের প্রতিটি পৌরসভার জন্য একটি করে।

এই প্রকল্পে প্রতিটি পৌরসভার জন্য আলাদা ইন্টারঅ্যাকটিভ চিত্র তৈরি হয় পাঠকের প্রবেশ করানো তথ্যের ভিত্তিতেই। সাংবাদিকেরা বসে বসে, প্রত্যেকের জন্য আলাদা গল্প লেখেননি। এর পরিবর্তে, তাঁরা মাত্র একটি টেক্সট লিখেছেন এবং সেখানে কিছু জায়গা ফাঁকা রেখে দিয়েছেন। ইউজাররা সেখানে তাঁদের এলাকা অনুযায়ী তথ্য বসানো মাত্রই সাংবাদিকদের তৈরি করা একটি ম্যাপিং ডেটাবেস থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য টেনে নিয়েউঁচু, নিম্নভূমি, অভ্যন্তরীণ এবং সমুদ্রতীরবর্তীএমন এলাকা অনুযায়ী আলাদা টেক্সট ও অ্যানিমেশন তৈরি হয়ে গেছে।

ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, “হোমপেজে শহর বা জন্মস্থলের নাম প্রবেশ করালেই, একজন ইউজারের সামনে একটি টাইমলাইন ভেসে ওঠে; সেটি অনুসরণ করে তিনি দেখতে পারেন, আগামী ৮০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন তাঁর এলাকায় কী প্রভাব ফেলবে।”

একজন ইউজার তাঁর নিজের এবং আরেকটি শহরের তুলনামূলক চিত্র দেখতে পারেন। এই তুলনা করা হয় নরওয়ের জন্য সবচেয়ে জরুরি বলে বিবেচিত কয়েকটি নির্দিষ্ট ইস্যুর ভিত্তিতে। যেমন: তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠ, বৃষ্টিপাত, আশপাশে কোন ধরনের প্রাণী থাকবে এবং কোনটি বিলুপ্ত হবে, তাপমাত্রা কি স্কিইংয়ে যাওয়ার উপযোগী থাকবে, হিমবাহের কী হবে এবং আপনার কি বর্ষাতি প্রয়োজন হবে?

ক্রিস্টিয়ানসেনের দলে তিনজন সাংবাদিক, দুজন ডিজাইনার এবং দুজন ডেভেলপার ছিলেন। তাঁরা এক বছরের ব্যাপ্তিতে প্রায় ছয় মাস কাজই করেছেন। তাঁরা নরওয়ের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে জলবায়ুসংক্রান্ত প্রক্ষেপণ ও গবেষণা প্রতিবেদন নিয়েছেন এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ডেটাসেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। প্রধান ডেটাগুলো রেখেছেন একটি এক্সেল স্প্রেডশিটে।

সাংবাদিকেরা তাঁদের লেখায় বিতর্কিত, আবেগপ্রবণ বা বিভাজন তৈরি করে এমন বিষয় থেকে দূরে থেকেছেন। তাঁরা বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রমাণভিত্তিক সত্য ব্যবহারে অটল ছিলেন। বিষয়বস্তু যেন বোধগম্য এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়, তা নিশ্চিত করতে তাঁরা এক্সপ্লেইনার ব্যবহার করেছেন। ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, “চেজিং ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ক্লিকযোগ্য পাদটীকা তৈরি করেছিলাম। এখানকার প্রতিটি লিঙ্কে একটি কঠিন শব্দ বা অভিব্যক্তির ব্যাখ্যা মিলবে, যা বিজ্ঞান সম্পর্কে বাড়তি পটভূমি জোগাবে অথবা বিজ্ঞানের অনিশ্চিত বিষয়গুলো বোঝার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব বিবেচনাকে স্বচ্ছ করবে। আর এই পদ্ধতি অনুসরণের কারণে, আমরা পাঠকদের মনোযোগ না হারিয়ে একটি গল্প বলতে পেরেছি।” 

নির্গমন হ্রাসে সফলতার মাঝারি পর্যায়ের থাকা বিশ্বের ওপর ভিত্তি করে জলবায়ু দৃশ্যপটগুলো দাঁড় করানো হয়েছে ।

এখান থেকে ক্রিস্টিয়ানসেন এবং তাঁর দলের জন্য শিক্ষা ছিল, স্থান ও কাল উভয় বিচারে গল্পের সঙ্গে পাঠকের নৈকট্য গুরুত্বপূর্ণ: “স্টোরিটেলিং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি প্রাসঙ্গিক হয়, তাহলে বোধগম্য, ইন্টারঅ্যাকটিভ ও সঠিক তথ্যনির্ভর সাংবাদিকতা পাঠক টানবে। প্রত্যক্ষ সংযোগ তুলে ধরার মাধ্যমে গল্পটিকে পাঠকের যত কাছাকাছি আনতে পারবেন, সেটি ততই পাঠযোগ্য হবে।”

“আমার মতে, ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়ার একটি কারণ হলো, এই দুটি স্টোরিই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিরাচরিত খণ্ডিত রিপোর্টিং থেকে আলাদা। এখানে আমরা বিভিন্ন এলাকা ও উৎস থেকে অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি এবং পাঠকদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সম্ভাব্য ভবিষ্যতের পূর্ণাঙ্গ ছবি আঁকতে পেরেছি। এটি গল্পকে বাস্তব করে তুলেছে”বলছিলেন ক্রিস্টিয়ানসেন।

এই স্টোরিটেলিং প্যাকেজ নিয়ে দেশটির পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। এনআরকে-র ডেটা এবং স্টোরিগুলোকে জলবায়ু অভিযোজন, ক্ষতি ঠেকানোর উপায় এবং ব্যবসা ও প্রকৃতির ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন সাংবাদিকেরা।

“ইয়োর ক্লাইমেট ফিউচার” বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

মূল লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজ পাবলিশার্সের সাইটে। এখানে অনুমতি নিয়ে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। 

আরো পড়ুন

জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া

জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি

নিউ ডেটা টুলস অ্যান্ড টিপস ফর ইনভেস্টিগেটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ


Cherilyn Ireton profile picture শেরিলিন আয়ারটন, ওয়ার্ল্ড এডিটরস ফোরামের নির্বাহী সম্পাদক। এটি ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজপেপারস অ্যান্ড নিউজ পাবলিশারস (ওয়ান-ইফরা)-এর মধ্যে পেশাদার সম্পাদকদের একটি কমিউনিটি। তিনি এখন আছেন যুক্তরাজ্যে।  ২০১২ সালে ওয়ান-ইফরায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি সাংবাদিক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

পরামর্শ ও টুল

ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া একাডেমিক গবেষণা নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন

একাডেমিক গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে নেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। ফলে ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া গবেষণা অনেক সময় তৈরি করতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। পড়ুন, কীভাবে এমন ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন।

গাইড পরামর্শ ও টুল

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অনুসন্ধানের রিপোর্টিং গাইড: সংক্ষিপ্ত সংস্করণ

জাতিসংঘের মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হচ্ছেন বৃহত্তম বিভক্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। কার্যত প্রতিটি রিপোর্টিং বীটেই প্রতিবন্ধী বিষয়ক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা বা কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

Using Social Network Analysis for Investigations YouTube Image GIJC23

পরামর্শ ও টুল

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শক্তিশালী টুল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস

ডেটা-চালিত সাংবাদিকতার যুগে, বিভিন্ন বিষয়কে একসঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে যুগান্তকারী সব তথ্য উন্মোচন করা সম্ভব। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস (এসএনএ) ঠিক এমন একটি কৌশল, যা ব্যবহার করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা ঠিক এ কাজটিই করতে পারেন।

পরামর্শ ও টুল

বৈশ্বিক সহযোগিতা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ গতিপথ 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এ সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিন অভিজ্ঞ সাংবাদিক।