প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক: ছবি ব্যবচ্ছেদ করে যেভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা উদঘাটন করছেন রিপোর্টাররা 

English

সুদানে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে পুলিশের গুলি থেকে বাঁচতে লুকিয়ে আছে আন্দোলনকারীরা। ছবি: বিবিসি আফ্রিকা আই

পালাতে গিয়ে বা পুলিশের ছোঁড়া কাাঁদানে গ্যাসের কবলে পড়ে কোনো বিক্ষোভকারী পড়ে আছেন মাটিতে – এমন দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায়।

এ ধরনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যও থাকে প্রায় একই রকমের: সরকার বা পুলিশ বিভাগ হতাহতের দায়িত্ব অস্বীকার করে।

কিন্তু বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতির মধ্যে আসলে কী ঘটে সেই মাটিতে পড়ে যাওয়া মানুষদের?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা ইদানিং ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি হেফাজতে মিনেসোটার অধিবাসী জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর পুলিশি বর্বরতা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদের ঢল নেমেছে, তাতেও প্রতীয়মান হচ্ছে, রিপোর্টারদের মধ্যে ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক দক্ষতা তৈরি করা, কতটা জরুরী। এখন যা দেখছেন, তা কেবল শুরু। ভবিষ্যতে হয়তো এমন আরো অনেক বিক্ষোভ দেখবেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে, ভবিষ্যতে বিক্ষুব্ধ জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে অহরহ।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে, ভবিষ্যতে বিক্ষুব্ধ জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে অহরহ।

ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক সাংবাদিকতা হুট করে হয় না। আপনি হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নথি পেয়ে গেলেন, বা কোনো হুইসেলব্লোয়ার গোপনে বড় কোনো ঘটনার খবর জানিয়ে দিলো – বিষয়টা এমন নয়। এখানে ধারণ করা দৃশ্য ও সময়কেন্দ্রিক ধাঁধার বিভিন্ন টুকরোকে একসঙ্গে জড়ো করতে হয়। ধাঁধার টুকরোগুলোকে জোড়া দিতে পারলেই কেবল, আপনি তাকে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাতে পারবেন।

এই নির্জলা প্রমাণগুলো দিয়ে শুধু যে নিরাপত্তা বাহিনীর ইচ্ছাকৃত হামলা উন্মোচন করা হয়, তা নয়। আঘাতের ইচ্ছা না থাকলেও কখনো কখনো তাদের অভিযানে মানুষ হতাহত হয় – এমন বাস্তবতাও ভিজ্যুয়াল প্রমাণ দিয়ে বের করে আনা যায়।

যেমন, ২০২০ সালের জুনে, নিউ ইয়র্ক টাইমস কিছু ভিডিও ক্লিপে টাইম মার্কার বসিয়ে দেখিয়েছে, কেনটাকির লুইভিলে কারফিউ বলবৎ করার জন্য কিভাবে পুলিশ মরিচের গুঁড়ো নিক্ষেপ করেছে, এবং এর ফলে এক ব্যক্তি কিভাবে তার নিজ বাড়িতে প্রাণ হারিয়েছে

এই পদ্ধতি দিয়ে বড় আকারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও উন্মোচন করা সম্ভব।

গত বছর, সুদানে একটি বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। তখন আশপাশের অনেকেই নিজের ফোন দিয়ে সেই বিক্ষোভের ছবি সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করছিলেন। সেদিনকার এমন অনেক ফেসবুক লাইভস্ট্রিম ভিডিও সংগ্রহ করে বিবিসি আফ্রিকা আই। পরে সেগুলোকে একসঙ্গে সাজিয়ে, চুলচেরা বিশ্লেষণ করে, তারা দেখিয়েছে: সেখানে অন্তত ৬১ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স মিলিশিয়া। সুদান শাসন করে যেই মিলিটারি কাউন্সিল, তাদের সদস্যরাই সেই মিলিশিয়া বাহিনীকে নিয়োগ দিয়েছিল। ৩০০টিরও বেশি মোবাইল ভিডিও খুব সতর্কভাবে বিশ্লেষণ করে তারা দৃশ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ভিডিওই ছিল কাঁপা কাঁপা। পালিয়ে যেতে যেতে ধারণ করা।

২০১৯ সালের এই গণহত্যার ঘটনা উন্মোচনের জন্য এরকম ৩০০টি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছিল বিবিসি আফ্রিকা আই।

২০২০ সালের এপ্রিলে, অলাভজনক অনুসন্ধানী গ্রুপ বেলিংক্যাটের ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক, নিক ওয়াটার্স জানতে চাচ্ছিলেন, পাকিস্তানী অভিবাসী মুহাম্মদ গুলজার তুরস্কের ঠিক কোন জায়গাটায় মারা গিয়েছিলেন। তার কাছে কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও ছিল, কিন্তু তা দিয়ে সেই জায়গা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা সম্ভব হচ্ছিল না। ভিডিওগুলোতে ছিল শুধু কিছু কৃষি জমির দৃশ্য। ফলে তিনি সেই কৃষি জমির দিকেই নজর দেন। ফসলের ধরণ, জমি চাষের পদ্ধতি – ইত্যাদি খেয়াল করে এবং গুগল আর্থের সাহায্য নিয়ে তিনি জায়গাটি খুঁজে বের করেন।

ফসলের ধরণ, জমি চাষের পদ্ধতি – ইত্যাদি খেয়াল করে এবং গুগল আর্থের সাহায্য নিয়ে জায়গাটি খুঁজে বের করেন ওয়াটার্স। এরপর গুলি ছোঁড়ার সময় বন্দুকের নলে দেখা যাওয়া আলোর ঝলক আর বুলেট বেরিয়ে যাওয়ার সুপারসনিক শব্দের তুলনা করে বন্দুকের সম্ভাব্য অবস্থান বের করেছিলেন এই দলের সদস্যরা।

গুলি ছোঁড়ার সময় বন্দুকের নলে দেখা যাওয়া আলোর ঝলক আর বুলেট বেরিয়ে যাওয়ার সুপারসনিক শব্দের তুলনা করে, ভিডিওতে শোনা যাওয়া গুলির আওয়াজ ধরে বন্দুকের সম্ভাব্য অবস্থান বের করেছিলেন, এই দলের সদস্যরাই। আরো চারটি সহযোগী সংবাদমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াটার্সের দল উদঘাটন করে: গ্রীক নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের সীমান্তে আসা শরণার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাতেই গুলজার মারা গেছেন এবং আরো ছয়জন আহত হয়েছেন।

ওয়াটার্স আরো ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক সাধারণত শুরু হয় একটি ঘটনার যত বেশি সম্ভব ভিজ্যুয়াল তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে। খুবই পদ্ধতিগতভাবে কিওয়ার্ড ব্যবহার করে এই খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু এই কাজে সবচে বেশি প্রয়োজন সমস্যা সমাধানের মানসিকতা।”

জনপরিসরে এমন সহিংস ঘটনা নিয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানকে একসময় সাংবাদিকতায় তথ্য যাচাইয়ের একটি ধরন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কারণ তারা কোনো ব্যক্তি পুলিশ অফিসার বা সেনাসদস্যের তথ্য প্রকাশ করে না। বলে না যে, গুলিটি কে চালিয়েছিল। এখানে অকৃত্রিম তথ্যের বদলে নানারকম “সম্ভাবনার মধ্যে ভারসাম্য” আনার চেষ্টা করা হয়।

তবে নতুন সব টুল ও ফরেনসিক পদ্ধতি, বিশ্বজুড়ে মোবাইল ফোনের ব্যাপক বিস্তার ইত্যাদি মিলিয়ে এখন এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা আরো নির্ভুলতার সঙ্গে অকাট্য-প্রমাণ হাজির করতে পারছে, এবং তার প্রত্যক্ষ প্রভাবও দেখা যাচ্ছে।

২০১৮ সালে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধানী দল একটি বুলেটের উৎস সন্ধান করেছিল। এই বুলেটে মারা গিয়েছিলেন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যকর্মী (মেডিক), রুজান আল-নাজার। আর বুলেটটি এসেছিল ইসরায়েলি এক স্নাইপারের রাইফেল থেকে, যে অন্তত ১১০ মিটার দূরে অবস্থান করছিল। এই দৃশ্যপটগুলো একের পর এক সাজানোর জন্য তাদের অনেক ভিডিও এক জায়গায় করতে হয়েছে। কিন্তু সেই কাজটি খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল, কারণ মোবাইল ফোনে ধারণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজে উল্টাপাল্টা সময় দেখাচ্ছিল। তারা প্রতিটি ভিডিওর মেটাডেটা ম্যানুয়ালি ঠিকঠাক করেছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা এজেন্সি, ফরেনসিক আর্কিটেকচারকে দিয়ে সেই জায়গার একটি বিশেষায়িত অনুসন্ধান করিয়ে নিয়েছেন। এরপর এক অস্ত্র বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন, বুলেটটি সম্ভবত মূল লক্ষ্যবস্তুকে মিস করেছে এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আল-নিজারের বুকে আঘাত হেনেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের সিনিয়র ওপেন সোর্স রিপোর্টার ম্যালাকি ব্রাউন বলেছেন, “আমরা সবসময় এমন জায়গায় যেতে চেষ্টা করি যেখানে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আমরা সব সময় চেষ্টা করি কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিতে। যেমন, গত বছর সিরিয়ায় হাসপাতালে বোমাবর্ষণ নিয়ে করা আমাদের সিরিজ অনুসন্ধানটি হয়তো সেরকম প্রভাব ফেলত না, যদি আমরা বলতাম, ‘এটা খুব সম্ভবত রাশিয়াই করেছে কারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, তারা রাশিয়ান বিমানের শব্দ শুনেছিল।’ আমরা হামলার মুহূর্তগুলো যাচাই করেছি। কোন পাইলটরা বিমান চালিয়েছে, তাদের নাম বলেছি। ফলে এটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এমন অনেক সময়ও থাকে যখন আমরা সবকিছুর বিচারক হতে পারি না। তখন আমাদের শুধু খুঁজে পাওয়া তথ্যগুলোই উপস্থাপন করতে হয়।”

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যান রাইটস ইনভেস্টিগেশন ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সা কোয়েনিগ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ওপেন সোর্স রিপোর্টারদের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। তাদের ল্যাবের অনুসন্ধানী শিক্ষার্থীদের ৯০ শতাংশই নারী। এবং এই পুরো ল্যাবই চলছে নারীদের নেতৃত্বে। এই ল্যাব বড় বড় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পার্টনার হিসেবে কাজ করে।

গত মার্চে, এই ল্যাবের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোট বেঁধে ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল: কিভাবে পশ্চিম সাহারায় রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে পুলিশ মারধর করেছে। কোয়েনিগ বলেছেন, “আমার মনে হয় একুশ শতকে এই ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক পদ্ধতিগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সশরীরে গিয়ে রিপোর্টিং করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।”

ভিডিও ও ড্রোন ফুটেজ দিয়ে এই থ্রিডি মডেল বানানো হয়েছে। এখানে দেথা যাচ্ছে কিভাবে ইসরায়েলি স্নাইপারের বুলেট ফিলিস্তিনের এক স্বাস্থ্যকর্মীর গায়ে এসে লেগেছে এবং তিনি মারা গেছেন। ছবি কৃতজ্ঞতা: ফরেনসিক আর্কিটেকচার ও নিউ ইয়র্ক টাইমস

ফরেনসিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন যে কোনো রিপোর্টারই

অগ্রণী ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বেশ জোরের সাথে বলেছেন, সব রিপোর্টারই প্রতিবাদ বা বিক্ষোভে পুলিশের আচরণ  নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন। খুব বেশি কারিগরী দক্ষতা না থাকলেও এটি করা সম্ভব। এই কাজে যেসব উন্নত টুল ব্যবহার হচ্ছে, তা দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বেশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে সংগ্রহ করা কিছু ভিজ্যুয়াল প্রমাণ এক জায়গায় জড়ো করলেই, তারা অনেক কিছু বের করে আনতে পারবেন।

ভিডিও ও ছবিগুলোর যথার্থতা ও অবস্থান (জিওলোকেশন) যাচাইয়ের কাজ করুন এবং প্রমাণগুলোকে ধারানুক্রমে সাজান। সাধারণত, কোথায়, কখন ও কিভাবে; এই তিন প্রশ্ন থেকে আপনি চলে যেতে পারবেন “কে” প্রশ্নে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের যে দলটি ড্রোন ও থ্রিডি মডেলিং ব্যবহার করে আল নাজারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদঘাটন করেছিল, সেই একই দল ২০১৭ সালে উন্মোচন করেছে: কিভাবে ওয়াশিংটন ডিসিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ানের নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের পিটিয়েছে। এই কাজে সাংবাদিকরা শুধু টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়ার ফুটেজ ব্যবহার করেছিলেন। সব প্রমাণ এক জায়গায় জড়ো করতে তাদের মাত্র দুদিন সময় লেগেছিল। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ পাওয়া গিয়েছিল ঘটনাস্থলের সাধারণ রিপোর্টিং থেকে। এই অনুসন্ধানে, ব্রাউন এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, তার কাছে ঘটনাটির কোনো ভিডিও আছে কিনা। জবাবে তিনি পেয়েছিলেন একটি গুগল ড্রাইভে থাকা, একগাদা ভিডিওর লিংক। তাদের দল এই ভিডিও ক্লিপগুলো ফ্রেম ধরে ধরে, পাঁচটি ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বিশ্লেষণ করেছে; এবং এই মারধরের পেছনে থাকা ২৪ জনকে সনাক্ত করেছে।

ব্রাউন বলেছেন, “সাদামাটা কোনো রিপোর্টারও এধরনের প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করতে পারেন। সবচেয়ে মোক্ষম টুলটি হচ্ছে আপনার চোখ। এখানে আপনাকে ছবি-ভিডিওগুলো খুব সতর্কভাবে দেখতে হয়। আমাদের কাজের অনেকটা অংশ জুড়েই থাকে ওপেন সোর্স রিপোর্টিং ও ফরেনসিক অডিও-ভিজ্যুয়াল বিশ্লেষণ। কিন্তু অনেক প্রথাগত রিপোর্টিংও আমাদের করতে হয়। একের পর এক ফোন করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।”

নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে বিক্ষোভকারীদের ক্ষতির কারণ হয়, তা নিয়ে অনুসন্ধানের সময় কিছু টুল ও কৌশল খুব কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়েছে। অভিজ্ঞ রিপোর্টার ও এডিটরদের সাক্ষাৎকার নিয়ে, জিআইজেএন এখানে জানাচ্ছে এমন ১২টি টুল ও কৌশলের কথা।

গণ-জমায়েতে কী ঘটছে যেভাবে উন্মোচন করবেন

শুরুতে প্রয়োজনীয় রসদ খুঁজে বের করার দিকে মনোযোগ দিন। ডাউনলোড ও আর্কাইভ করুন যত বেশি সম্ভব ভিডিও ও ছবি। এরপর হাত দিন সেগুলোর যথার্থতা ও অবস্থান (জিওলোকেশন) যাচাইয়ের কাজে। তারপর প্রমাণগুলোকে ধারানুক্রমে সাজান। সময় ধরে ধরে একটার পর একটা ছবি-ভিডিও গুছিয়ে নিন। আপনার প্রাথমিক খোঁজাখুঁজির পরিসর যথাসম্ভব বিস্তৃত রাখুন। ফেসবুক, টিকটক থেকে শুরু করে সিসিটিভি ফুটেজ, অডিও রেকর্ডিং; সব কিছু খোঁজ করুন এবং আপনার সার্চ হিস্টরি পেজগুলো আর্কাইভ করে রাখুন। সাধারণত, কোথায়, কখন ও কিভাবে; এই তিন প্রশ্ন থেকে আপনি চলে যেতে পারবেন “কে” প্রশ্নে। ভিডিও ক্লিপে থাকা ব্যক্তিদের ট্র্যাক করুন মার্কার ব্যবহার করে। যেমন, বিশেষ কোনো পোশাক পরে থাকা ব্যক্তি। বিক্ষোভকারীদের মারধর নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের করা একটি অনুসন্ধানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এক ব্যক্তির টাক মাথা। মুহাম্মদ গুলজারের এই ছিঁড়ে যাওয়া জিন্স দেখে তাঁকে অন্য আরেকটি ভিডিওতে সনাক্ত করেছিলেন সাংবাদিকরা। সেখানে তার শরীরের অন্য কোনো অংশই দেখা যাচ্ছিল না। ছবি: বেলিংক্যাট প্রতিবাদ ও অন্যান্য ঘটনাস্থলে থাকা দোকান, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তাদের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইতে পারেন। শুরুতে প্রত্যাখ্যাত হলেও লেগে থাকুন। তাদেরকে আপনার আগের ফুটেজগুলো দেখান এবং আবার জিজ্ঞাসা করুন। আপনার করা আগের প্রতিবেদনগুলোও তাদের দেখান। রিপোর্টারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে, অনেকেই তাদের সিদ্ধান্ত বদলান। সিসিটিভি ও পুলিশের গায়ে লাগানো ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার আরেকটি ভালো উৎস আইনজীবীরা। ভিডিও ক্লিপগুলো একটার পাশে আরেকটা রেখে সাজিয়ে ফেলুন এবং সেগুলো ফ্রেম ধরে ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। অন্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজের বেলায় প্রমাণগুলো এমন প্ল্যাটফর্মে রাখুন, যা সবাই সহজে দেখতে পারে। যেমন গুগল শিটস। ছবি-ভিডিও ধারণের সময় নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলে, ভিডিওতে থাকা কোনো মার্কার দেখে তাদেরকে ক্রমানুসারে সাজান। যেমন, কোনো গাড়ির দরজা বন্ধ হচ্ছে বা কোনো বাতি জ্বলে উঠছে। গ্রীক সীমান্তে শরণার্থীদের ওপর গুলি চালানোর অনুসন্ধানে ভিডিও ক্লিপগুলো এভাবে সাজিয়েছিল বেলিংক্যাট। হলুদ লাইনগুলো দিয়ে তারা বিশেষ কিছু মুহূর্তগুলো চিহ্নিত করেছিল। যেমন গুলি বা গাড়ির শব্দ। ছবি: বেলিংক্যাট, ফরেনসিক আর্কিটেকচার, লাইটহাউজ রিপোর্ট সবার পরিচিত নিত্যদিনের ব্যবহৃত টুলগুলোর কথা মাথায় রাখুন। আপনার যদি দেখাতে হয় যে কোনো প্রতিবাদকারী বা পুলিশ অফিসার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ পয়েন্ট থেকে বি পয়েন্টে হেঁটে যেতে পারবেন না, তাহলে গুগল ম্যাপে সেই ঠিকানাগুলো বসান, এবং এটি আপনাকে দেখিয়ে দেবে সেই দুরত্বে হেঁটে বা কোনো যানবাহনে করে যেতে কত সময় লাগবে। পাঠক-দর্শকরাও এই টুলগুলোর ব্যাপারে জানে। ফলে এসব পদ্ধতি ব্যবহারের বাড়তি সুবিধাও আছে। ব্যক্তির ওপর নজর না দিয়ে, কোনো ক্ষতির জন্য কোন পক্ষ বা গোষ্ঠী দায়ী, তা সনাক্ত করুন এবং সেদিকে মনোযোগ দিন। কোনো অফিসারের নাম প্রকাশের জন্য আপনার যদি পর্যাপ্ত যুক্তি ও প্রমাণ থাকে, তাহলেই কেবল সেটি করতে পারেন। নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দিষ্ট কিছু সদস্যকে দায়ী করতে গেলে বাড়তি আরো অনেক প্রমাণ দরকার পড়ে। যেমন, ফেসিয়াল রিগকনিশন এবং ব্যালিস্টিক ম্যাচ, যদিও এমন পরিস্থিতি খুব বিরল। আঘাতের কারণ নিয়ে অনুসন্ধানের বেলায় এমন টুলের প্রয়োজনও পড়ে না। ইন্টারসেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করুন, বিশেষ করে এমন ক্ষেত্রে যেখানে চারপাশের এলাকার কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে বের করতে হয়, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর অবস্থান অথবা ক্যামেরাটি কোথায় ছিল। ধরা যাক, একটি ছবিতে একটি খুঁটি দেখা যাচ্ছে, আর একটি চার্চের মিনারও আছে। এই দুইয়ের মধ্যে একটি কল্পিত সরলরেখা টানুন। অন্য দিকে আরেকটি ভবন ও পথ আছে। এবার তাদেরকেও একটি রেখা টেনে সংযুক্ত করুন। দুই কল্পিত রেখা যেখানে মিলিত হবে সেটাই ইন্টারসেকশন। একটি দৃশ্য বা ছবিতে থাকা বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে এরকম রেখা টানার সুযোগ করে দেব গুগল আর্থ প্রো। ইয়েমেনের একটি বাজারে বিমানহামলার অনুসন্ধান করতে গিয়ে এভাবে ইন্টারসেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে বেলিংক্যাট। ওপরের ছবিতে একটি চার্চের মিনার ও ভবনের পিলার বরাবর (হলুদ), এবং আরেকটি দূরের ছাদ ও কাছের ভবন বরাবর তারা দুটি রেখা টেনেছে। এবার ওপর থেকে দেখেছে কোন জায়গায় এই দুটি রেখা এক জায়গায় হয়। এই কাজটি তারা করেছে গুগল আর্থ ব্যবহার করে। ছবি: বেলিংক্যাট আপনার ঘটনার টাইমলাইনের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না এমন কোনো ভিডিওকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাজিয়ে ফেলবেন না। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা দেখেছেন – মোবাইল ফোনের দিনক্ষণ প্রায়ই ভুল অবস্থায় থাকে। ফলে মেটাডেটাগুলো নির্ভুল একটি ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ঠিকঠাক করে নিন। সময় ও স্থান নিয়ে আপনার তথ্য সাজানোর সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের ওপর খুব বেশি নির্ভর করবেন না। কারণ ট্রমাটিক সেসব ঘটনার স্মৃতিতে প্রায়ই গুরুতর সব ভ্রান্তি থাকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস দেখেছিল: রুজান আল-নাজারকে যে জায়গায় হত্যা করা হয়েছে, সেখানকার বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এবং তাদের কেউ কেউ নিশ্চিত ছিলেন, এক পর্যায়ে দুটি গুলি চালানো হয়েছে। কিন্তু আসলে একটি গুলি চালানো হয়েছিল। ভিজ্যুয়াল প্রমাণ দেখে বা কোনো পেশাদার অনুবাদককে দিয়ে ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট আবার যাচাই করুন। এমন একটি প্রাথমিক রিপোর্ট বুঝতে ভুল করেছিল বেলিংক্যাট। তারা ভেবেছিল, মুহাম্মদ গুলজারের অবস্থান ছিল সীমান্তের একটি “গেটের কাছে।” কিন্তু ভিডিওতে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসলে গুলজার ছিলেন কাঁটাতারের বেড়ার পাশে একটি গর্তে। এই “গর্ত” ও “গেট” নিয়ে গোলমাল তৈরি হয়েছিল অনুবাদের সময়। দর্শকদের বোঝার জন্য একান্ত জরুরি না হলে ফুটেজে কারিকুরি করা থেকে বিরত থাকুন। যদি করতেও হয়, তাহলে সেটি বুঝিয়ে বলুন – কেন আপনি ছবিটিকে পরিমার্জন করেছেন। তবে আপনি যদি কৃত্রিমভাবে কোনো জিনিসকে (যেমন কোনো অস্ত্র) হাইলাইট করেন, তাহলে সেখানে কোনো সমস্যা নেই।

আগেই জাল পেতে রাখুন

বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের সম্পাদক মার্ক পার্কিনস বলেছেন, সুদানে গণহত্যার লাইভস্ট্রিম প্রতিবেদনটিতে ওপেন সোর্স রিপোর্টিংয়ের বেশ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু রিপোর্টটি আসলে দাঁড় করানো হয়েছিল তিনটি স্তম্ভের ওপর: উদ্ভাবনী কোডিং, সরেজমিন মাঠ রিপোর্টিং এবং সবার আগে লাইভ করতে থাকা বিক্ষোভকারীদের সাহস। এই প্রতিবেদনটি ২০২০ সালের মে মাসে জিতেছিল ওয়েবি অ্যাওয়ার্ড

বিক্ষোভটা যেদিন হয়, সেদিন তিনি এর সব ভিডিও সংগ্রহ করার জন্য তৈরি ছিলেন। লাইভ চলার সময়ই তিনি সবকিছু কপি করে নিতে পেরেছেন। এগুলো প্রায়ই আর পরবর্তীতে পাওয়া যায় না।

পার্কিনস বলেছেন, “ঘটনাস্থলে ধারণ করা অনেক ভিডিওই পরবর্তীতে আর পাওয়া যায় না। ফলে আমাদের ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক বেন স্ট্রিক নতুন একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন লাইভস্ট্রিমগুলো কপি করে নেওয়ার জন্য। তিনি নিজে এই কোড লিখেছিলেন। এখানে কোডিংয়ের মাধ্যমে কিছু আরবী ও ইংরেজি শব্দ তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন। ফলে বিক্ষোভটা যেদিন হয়, সেদিন তিনি এর সব ভিডিও সংগ্রহ করার জন্য তৈরি ছিলেন। লাইভ চলার সময়ই তিনি সবকিছু কপি করে নিতে পেরেছেন। তিনি মাসের পর মাস সময় দিয়েছেন ইউটিউব থেকে ভিডিও খুঁজে বের করার পেছনে। আমি আর আপনি হয়তো সাধারণভাবে সার্চ দিয়ে সেগুলো খুঁজে পাব না। এটি ছিল দারুণ একটি প্রযুক্তিগত কাজ।”

স্যাটেলাইট ছবি, গুগল ম্যাপ ইত্যাদি টুল ব্যবহার করে ৩০০টি ভিডিওর অবস্থান বের করার পেছনেই অধিকাংশ সময় দিতে হয়েছে এই দলকে। এরপর তাঁরা অডিও ও নানাবিধ মার্কার দেখে ভিডিওগুলোর ঘটনাক্রম নির্ধারণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী সাজিয়েছেন।

নিজস্ব ওপেন সোর্স দল ছাড়াও এই অনুসন্ধানের জন্য স্ট্রিক কাজ করেছেন একজন সুদানী প্রযোজক, দুই সাংবাদিক, আরবি অনুবাদক ও আরো কিছু সহযোগীর সঙ্গে।

.

পার্কিনস বলেছেন, “একভাবে দেখলে, রিপোর্টাররা সাধারণত কাজই করে উল্টো পদ্ধতিতে। আপনি হয়তো বলবেন, ‘ওকে, আমি একটা দারুন ভিডিও পেয়েছি’, এরপর কাউকে কিছু না জানিয়ে এটি নিয়ে ছুটবেন আপনার এডিটরের কাছে। কিন্তু ওপেন সোর্সের কর্মকাণ্ড সেভাবে চলে না। এখানে পুরো চিত্রটি তুলে আনতে গেলে অনেক মানুষের একসঙ্গে কাজ করতে হয়।”

পার্কিনসের সহকর্মী বাট্রাম হিল সম্প্রতি ২০০টিরও বেশি ওপেন সোর্স ও ফরেনসিক টুলের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। কিছু টুল বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে আফ্রিকান ডেটাবেজের জন্য।

“আফ্রিকার কথা নির্দিষ্টভাবে বলা হলেও, এটি আসলে পুরো বিশ্বের জন্যই প্রাসঙ্গিক”, বলেছেন পার্কিনস, “জিআইজেএন-এর সঙ্গে এটি শেয়ার করতে পেরে আমি খুবই খুশি। প্রতি নিউজরুমে যদি একজনও এই টুলগুলোর ব্যবহার শেখে, তাহলে এটি আফ্রিকা মহাদেশে সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে।”

“জিআইজেএন-এর সঙ্গে এটি শেয়ার করতে পেরে আমি খুবই খুশি। প্রতি নিউজরুমে যদি একজনও এই টুলগুলোর ব্যবহার শেখে, তাহলে এটি আফ্রিকা মহাদেশে সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে।”

দুই ডজন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা এই রিসোর্সটি পাবেন এই লিংকে

সুদানের এই প্রতিবেদনের সঙ্গে মিল আছে ভেনেজুয়েলার আল্টিমাস নোটিসিয়াসের করা আরেকটি অনুসন্ধানের। সেখানে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তারা দেখিয়েছিল ২০১৪ সালে কারাকাসের বিক্ষোভ মিছিলে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার চার সদস্যের করা গুলিতে

সময় ও স্থান ধরে ভিডিও ক্লিপ সাজানো

বেলিংক্যাটের ওয়াটার্স বলেছেন, গুলজারের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সহযোগিতাই ছিল প্রধান ব্যাপার। এখানে তারা জোট বেঁধেছিলেন ডাচ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান লাইটহাউজ রিপোর্টসের সঙ্গে। তারা এই প্রজেক্টটি সমন্বয় করেছিল। ভিডিও বিশ্লেষণ ও বিশেষায়িত অনুসন্ধানের কাজগুলো করেছিল ফরেনসিক আর্কিটেকচার। আর তুরস্ক ও গ্রীসে মাঠপর্যায়ের রিপোর্টিং করেছিল ডের স্পিগেল ও স্কাই নিউজ। আরো অনেক ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে এরকম জোট বেঁধে কাজ করতে দেখা যায়।

এই অনুসন্ধানের জন্য ওয়াটার্সের দলকে প্রতিটা ভিডিও ক্লিপের স্থান ও সময় খুঁজে বের করতে হয়েছে। ভিডিওগুলোতে দেখা গিয়েছিল গত মার্চে গ্রীক সীমান্তের কাছে আহত হওয়া ছয় শরণার্থীকে। ছবি: বেলিংক্যাট

ওয়াটার্স জানিয়েছেন, এই অনুসন্ধানের ভিডিও সংগ্রহের পর্যায়টিকে বেলিংক্যাট “আবিস্কার” বলে ডাকে। তাদের এসব প্রমাণ বিচারিক কর্মকাণ্ডেও ব্যবহার হচ্ছে। যেমনটা দেখা গেছে, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ১৭ ভূপাতিত করার ঘটনার বিচারে

“আপনি যখন কোনো জায়গার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইবেন, তখন আপনাকে একটি ছবিতে পাওয়া সব তথ্যের দিকে নজর দিতে হবে। এবং এমন একটা জায়গা নির্দেশ করতে হবে যেটির সঙ্গে অন্যান্য ডেটাও মিলে যায়,” বলেছেন ওয়াটার্স, “এই অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু তথ্য আমরা আগেই জানতাম। আমরা ভিডিওতে সীমান্তের কাঁটাতার দেখতে পাচ্ছিলাম। ফলে গুলজার কেমন জায়গায় ছিল, তার কিছু ধারণা আমাদের ছিল। ভিডিওতে যে চাষের জমি দেখা যাচ্ছিল, তা বিশ্লেষণ করে আমরা আরো কিছু তথ্য পেয়েছি এবং সম্ভাব্য জায়গার পরিধি আরো কমিয়ে এনেছি। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে আরো দুটি বিশেষ জিনিস দেখা যাচ্ছিল। একটি উঁচু ঢিবি ও একটি গাছের সারি। এগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা দুটি নির্দিষ্ট জায়গা খুঁজে পাই যেখানে চাষের জমির ধরণ মিলে যায়। এর মধ্যে একটি পুরোপুরি মিলে যায় ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা জায়গার সঙ্গে। আমরা জানতে পারি, এখানেই ছিল গুলজার। দক্ষিণের জমির দক্ষিণপশ্চিম কোনে।”

স্যাটেলাইট চিত্রের সাহায্য নিয়ে স্থানটি নির্ধারণ করে ফেলার পর, অনুসন্ধানী দলটিকে এবার সময় অনুযায়ী ঘটনাক্রম সাজাতে হবে। ওয়াটার্স বলেছেন, এই কাজটি করার ক্ষেত্রে বন্দুকের গুলির প্যাটার্ন (অটোমেটিক ব্রাস্টস, ডাবল-ট্যাপস, সিঙ্গল শট) খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছে।

তিনি বলেছেন, “সেখানকার গুলিগুলো এসেছিল এম১৬ ধাঁচের কোনো রাইফেল বা ৫.৫৬ মিলিমিটার অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে। কোনো পিস্তল বা রিভলভার থেকে নয়। সেদিন তুরস্কের ভূখণ্ডে থাকা মানুষগুলোর দিকে এই গুলি চালিয়েছিল গ্রীসের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেসময়ের কোনো ভিডিও বা ছবিতে তুরস্কের কোনো রক্ষীকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।”

বিক্ষোভের ঘটনা উন্মোচনের টুল

টাইমলাইন-ভিত্তিক ভিডিও এডিটিং টুল, যেমন অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রোএভিড মিডিয়া কম্পোজার। একটা স্ক্রিনে আপনার সব রসদ সাজিয়ে ফেলার জন্য এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। অডিওর জন্য বিভিন্ন সাউন্ড মার্কার ঠিকঠাক মিলিয়ে নিতে অ্যাডোবি অডিশন ব্যবহার করতে পারেন। ভিডিও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে ওয়াচফ্রেমবাইফ্রেমের মতো ওপেন সোর্স টুল। ভিডিও খুঁজে পেতে ব্যবহার করুন গুগল ও টুইটারের অ্যাডভান্সড সার্চ ফাংশন। অভিজ্ঞ ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কোনো নির্দিষ্ট টুলের চেয়ে এগুলোর ওপরই বেশি আস্থা রাখেন। অনেক রিপোর্টার ধারণাও করতে পারবেন না এগুলো কতটা শক্তিশালী। কোনো নির্দিষ্ট সাইটের মধ্যে সার্চ করার জন্য গুগলে এভাবে (“site:youtube.com”) লিখে সার্চ করুন। এতে অনেক নির্ভুল ফলাফল পাবেন। স্যাটেলাইট চিত্রটেরাসার্ভারে আপনি বিনামূল্যে দেখতে পারবেন তাদের আগে থেকে ধারণ করা সব ছবি। অন্যদিকে হাই রেজোল্যুশন ছবির জন্য অনেক সাংবাদিক পছন্দ করেন ম্যাক্সার ডিজিটালগ্লোবপ্ল্যানেট ল্যাবসও অনেক অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গ্রীস-তুরস্ক সীমান্তের কাছে গুলির মুখে পড়া শরণার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছিল এই স্যাটেলাইট চিত্র। ছবি: বেলিংক্যাট ও প্ল্যানেট ল্যাব গুগল আর্থ। ওয়াটার্স বলেছেন, “গুগল আর্থ খুবই দারুন একটি টুল। জিওলোকেশন টুল হিসেবে এখন পর্যন্ত সেরা। এখানে আপনি আগের কোনো সময়ের স্যাটেলাইট ছবি দেখতে পারেন। এবং তাদের লাইসেন্সের নীতিও উদার। এর মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ নামে আরেকটি অসাধারণ টুল আছে। আমরা এটি ব্যবহার করে দেখিয়েছি: সিরিয়ার সেনা কর্মকর্তারা কোথায় ছিলেন। আপনি তাদের সেই জায়গায় যেতে পারবেন এবং তাদের অবস্থান থেকে সব কিছু দেখতে পারবেন।” সানক্যালক। এই টুল দিয়ে আপনি দেখতে পারবেন একটা নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে সূর্যটা আকাশে কোন অবস্থানে ছিল। এই টুল ব্যবহার করে সাংবাদিকরা ভিডিওতে থাকা ছায়া ধরে কাজ করেছেন। বোঝার চেষ্টা করেছেন কোন সময়টাতে সেখানে এমন ছায়া পড়তে পারে। এখানে দাঁড়ানো সৈন্যদের ছায়া দেখে বেলিংক্যাট দিনের সেই সময় সম্পর্কে জেনেছিল। এবং বুঝতে পেরেছিল: একটি শহরে রাসায়নিক হামলা চালানোর আগে এক সিরিয়ান জেনারেল সেখানকার সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। ছবি: বেলিংক্যাট ইউটিউবে দিনক্ষণ ধরে আরো সুনির্দিষ্টভাবে সার্চ করার জন্য নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম তৈরি করে নেওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা বেলিংক্যাটের মতো এধরনের কোনো সংগঠনের সঙ্গে জোট বাঁধুন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা দেখেছেন, ইউটিউবের অভ্যন্তরীন সার্চ ফাংশন বেশ দুর্বল। এমনকি মন্তাজের মতো ভালো অ্যাডভান্সড সার্চ ফাংশনও পর্যাপ্ত হয় না। আর্কাইভিং টুল। যেমন হাঞ্চলি। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবপেজ সেভ ও ক্যাপচার করে রাখে। ফলে আপনার স্ক্রিনশট বা ইউআরএল সেভ করে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এটি একইসঙ্গে নিশ্চয়তাও দেয়: আপনি প্রতিবেদনে যেসব প্রমাণ ব্যবহার করেছেন, তাতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ওয়াটার্স বলেছেন, “এটি শতভাগ সন্তুষ্ট হওয়ার মতো সমাধান নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সবচে ভালো।” কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পরিচালিত ছবি স্পষ্টকরণের টুল। যেমন টোপাজ। এখানে কোনো ছবির ঝাপসা হয়ে যাওয়া অংশগুলো স্পষ্ট করে তোলা যায়। তবে রিপোর্টারদের বলে দেওয়া উচিত, ছবিতে এই টুল প্রয়োগ করা হয়েছে। স্পেকটোগ্রামস। এটি শব্দতরঙ্গকে ছবির মতো করে দেখায়। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে হামলাকারীর দূরত্ব বুঝতে অনেক সময় এই টুল ব্যবহার করা হয়। এই স্পেকট্রোগ্রামে দেখা যাচ্ছে সুপারসনিক বুলেটে আঘাত করার সময় (লাল) এবং সেটি রাইফেল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার (হলুদ) সময়ের ব্যবধান। ছবি: বেক অডিও ফরেনসিক ইনভিড কোনো ভিডিওর উপাদান যাচাইয়ের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি দিয়ে আপনি ফেসবুক-ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের ভিডিও থেকে প্রধান ফ্রেমগুলো বের করে আনতে পারবেন। তাদের কাভার ইমেজের ইতিহাস দেখতে পারবেন এবং আদি ভার্সনটি খুঁজে পাবেন। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ও কেন্দ্রীয় চরিত্রকে সনাক্ত করা ও তার তথ্য যাচাই করার জন্য আপনি সাহায্য নিতে পারেন পিপলস্পোকিও-র মতো মানুষ খোঁজার অ্যাপগুলোর। এখান থেকে আপনি প্রায় সব দেশের মানুষকে সনাক্ত করতে পারবেন। কারো ইমেইল অ্যাডড্রেস জানা থাকলে আপনি এই অ্যাপগুলো থেকে তাদের সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য জানতে পারবেন। টিনআই ও গুগল ইমেজ সার্চ, রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল। এগুলো দিয়ে আপনি ওয়েবে কোনো ছবির পূর্ববর্তী ভার্সন খুঁজে পেতে পারেন। কেটে ছোট করে ফেলা কোনো ছবি সার্চ করে হয়তো সেটির পূর্ণাঙ্গ ভার্সন পেয়ে যেতে পারেন। যেখানে চারপাশের দৃশ্যপট আরো বিস্তারিতভাবে ফুটে উঠেছে।

একদম নতুন কাউকে এই ছবি-ভিডিওগুলো দেখালে অনেক সময় নতুন কিছু চোখে পড়ে। দেখা যাবে, এমন কোনো তথ্য বের হয়ে এসেছে, যা আগে কারো চোখে পড়েনি। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর হংকংয়ের এক বিক্ষোভকারীকে খুব কাছ থেকে গুলি করা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস। সেসময় ওয়াটার্সকে ডাকা হয়েছিল ভিডিওগুলো দেখার জন্য। তিনি দেখেছিলেন, সেই রিপোর্টিং দল প্রতিবেদনটি প্রায় তৈরিই করে ফেলেছে। তবে তিনি একটি ছোট বিষয় দেখিয়ে দিয়েছিলেন: পুলিশের সঙ্গে মারামারির সময় এক বিক্ষোভকারী হাতুড়ি তুলেছিল।

গুছিয়ে কাজ করার গুরুত্ব

ভিজ্যুয়াল ফরেনসিক নিয়ে কাজের জন্য সাংবাদিকদের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হতে হবে, এমন নয়। তবে তাদেরকে ভিজ্যুয়াল প্রমাণগুলো সাজিয়ে রাখা শিখতে হবে।

গত ১ জুন, আমেরিকান রেস্টুরেন্ট মালিক ডেভিড ম্যাকটি পুলিশের গুলিতে মারা যান। লুইভিলে, পুলিশ যখন কারফিউ বলবৎ করার চেষ্টা করছিল, তখন কিছু ক্রেতা তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।

কী ঘটেছিল, তা অনুসন্ধানের জন্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের ম্যালাকি ব্রাউন তাঁর অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো সফটওয়্যার কাজে লাগিয়েছেন। চারটি ভিডিও পাশাপাশি রাখার জন্য তিনি কম্পিউটার স্ক্রিনটি চারটি ভাগে ভাগ করেন।

ম্যালাকি ব্রাউন সিসিটিভি ফুটেজের (বামে) সঙ্গে ফেসবুক লাইভস্ট্রিম ফুটেজ মিলিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছেন: পুলিশ পিপারবল ছোঁড়ার পর ডেভিড ম্যাকটির বাড়িতে থাকা মানুষগুলো কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

বাম পাশে তিনি রাখেন তিনটি ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ। স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া এই ফুটেজে কোনো শব্দ ছিল না। স্ক্রিনের ডানপাশে তিনি রাখেন আরেকটি ফেসবুক লাইভস্ট্রিম ভিডিও। এরপর ব্রাউনের দল ভিডিওগুলোকে একসঙ্গে মেলান, প্রতিটি ভিডিওতে থাকা তিনটি  মার্কার দেখে। যেমন, একটি গাড়ির লাইট জ্বলে উঠছে, লাইভস্ট্রিম করতে থাকা ব্যক্তি তার ট্রাকের দরজা বন্ধ করছে, এবং রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন মানুষ কখন তার ডান পা-টি ফেলছে। ভিডিওগুলোর সঙ্গে থাকা সময়ের রেকর্ড তারা ব্যবহার করেননি। কারণ বেশিরভাগ সময় এগুলো সঠিক হয় না।

“এভাবে চারটি ফ্রেম সময়ানুযায়ী মিলিয়ে ফেলার পর আমরা লাইভস্ট্রিমের অডিও মিলিয়ে দেখছিলাম সিসিটিভি ফুটেজগুলোর সঙ্গে। বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কে গুলিটা আগে করেছে এবং কিভাবে এই ট্রাজিক মৃত্যু ঘটলো,” বলেছেন ব্রাউন, “আমরা দেখার চেষ্টা করছিলাম: অহিংস জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশের যে নীতিমালা আছে, তা লঙ্ঘন করা হয়েছিল কিনা। শেষপর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত টেনেছি, এমনটাই ঘটেছে।”

পুলিশের ধারণা ছিল, তারা যে মরিচের গুঁড়ো ছুঁড়ে মারছে, তা লিথাল অর্থ্যাৎ সহিংস পদ্ধতি নয়। কিন্তু সেই রেস্তোরাঁর মালিক ম্যাকটি ভাবছিলেন অন্যরকম দৃশ্য। তাঁকে আরো অনেক কিছু দেখে ঝুঁকি সম্পর্কে আঁচ করতে হয়েছে। তিনি দেখছিলেন টেবিলে এটা বোতল বিস্ফোরিত হচ্ছে, সামনের দরজায় কিছু একটা বাড়ি খেয়েছে, তাঁর ভাতিজি খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে এবং কালো পোশাক পরা কিছু মানুষ ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসছে। এরকম একটা সংশয়ের মধ্যে, ম্যাকটি তাঁর বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে বসেন এবং পুলিশের পাল্টা গুলিতে মারা যান।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের এরকম নন-লিথাল সহিংসতা মিডিয়াতে খুব বেশি নজরও দেওয়া হয় না। কারণ তারা আহত-নিহতের সংখ্যা গোনাতেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

সিস্টেমেটিক রিপোর্টিং দিয়ে কিভাবে পুলিশের সিস্টেমেটিক দমনপীড়ণ উন্মোচন করা যায়, তা দেখিয়েছেন ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড ডুফ্রেন। তিনি অনুসন্ধান করেছেন ফ্রান্সে ইয়েলো ভেস্ট বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দমনপীড়ন নিয়ে। পুলিশী সহিংসতার ৮০০-র বেশি ঘটনা তিনি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা আছে ২৪টি। মাথায় আঘাত পাওয়ার ঘটনা ২৭৯টি। এই অনুসন্ধানটি ২০১৯ সালে জিতেছে ফ্রান্সের গ্রান্ড প্রাইজ ফর জার্নালিজম পুরস্কার।

গভীর বিশ্লেষণের বদলে বিস্তৃত পরিসর নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডুফ্রেন। অনলাইনে আন্দোলনে হতাহতদের যত ছবি, এক্স-রে বা ভিডিও তিনি পেয়েছেন, সবই যাচাই করেছেন। তিনি দেখেছেন: এই কাজে মেটাডেটা যাচাই করার জন্য মেটাপিকজ টুলটি বেশ কার্যকরী। ডুফ্রেন তাঁর অনুসন্ধান জারি রেখেছেন। এবছরের মধ্য জুন পর্যন্ত তিনি পুলিশি দমনপীড়নের ৯৫০টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে মাথায় আঘাত পাওয়ার ঘটনা আছে ৩৪০টি।

ওপেন সোর্স কাজ আপনার ঘাম ঝরাবে

নানারকম মৌলিক তথ্যপ্রমান পাঠক-দর্শকের কাছে হাজির করার একটা আলাদা অনুভূতি আছে। মানুষের কাছে বিষয়গুলো কিভাবে সহজে উপস্থাপন করবেন, তার একটি সৃজনশীল চ্যালেঞ্জ আছে। ওয়াটার্সের মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জন্য এগুলো বেশ আনন্দের এবং উত্তেজনার।

গ্রীস সীমান্তে শরনার্থীদের গুলি করার ঘটনায় প্রতিটি প্রমাণের ওজন বুঝে, বেলিংক্যাট একই স্টোরির জন্য সম্ভাব্য একাধিক দৃশ্যপট তৈরি করে নিয়েছিল।

“বিভিন্ন সম্ভাবনার মধ্যে ভারসাম্য রেখে আমরা বলতে পারি: গুলজার গ্রীক নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর গুলিতেই হয়তো মারা গেছেন,” বলেছেন ওয়াটার্স, “তবে, বেলা ১০:৫৭ মিনিটের আরেকটি ঘটনা দেখে আমরা নিশ্চিত হই, গ্রীক নিরাপত্তারক্ষীরা আরেকজন মানুষকে আহত করেছে। আমরা যাকে বলি ক্যাজুয়ালিটি ফোর।”

“কখনো কখনো হৃৎকম্পন বেড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আমরা হঠাৎ শুনতে পাই যে, রাশিয়ান একটি পাইলট সেই হাসপাতালের অবস্থান বলছে। এবং তারপর সেই নির্দিষ্ট জায়গাতেই বোমাবর্ষণ করছে। এটি পাওয়ার পরই আমরা রহস্যটি সমাধান করে ফেলেছিলাম।”

এই ধারার কাজগুলো অনেকটা ধাঁধার টুকরো মেলানোর মতো। তবে সাংবাদিকসুলভ ইউরেকা মুহূর্তও এখানে ঘটে।

“কখনো কখনো হৃৎকম্পন বেড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়”, সিরিয়ার হাসপাতালে বোমাবর্ষণের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধানের উদাহরণ দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ব্রাউন বলেছেন, “আমার মনে হয়, আমাদের দলের দুই সদস্য এমন একটি মুহূর্ত পেয়েছিল। আমরা শুনতে পাই যে, রাশিয়ান একটি পাইলট সেই হাসপাতালের অবস্থান বলছে। এবং তারপর সেই নির্দিষ্ট জায়গাতেই বোমাবর্ষণ করছে। এক সূত্রের কাছ থেকে আমরা রাশিয়ান পাইলটদের এই অডিওগুলো পেয়েছিলাম।”

“এটি পাওয়ার পরই আমরা রহস্যটি সমাধান করে ফেলেছিলাম।”

রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।

টিপশীট ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

টিপশিট: আপনার অনুসন্ধানে কীভাবে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহার করবেন

সমুদ্র সংক্রান্ত ডেটার ধরন হতে পারে বহুবিচিত্র। সমুদ্রে দূষণ, জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতি অথবা অর্থবাণিজ্য— এমন বিভিন্ন ধরনের ডেটা, সাংবাদিকেরা ব্যবহার করতে পারেন তাদের রিপোর্টিংয়ে। এই টিপশিটে পাবেন অনুসন্ধানে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহারের পরামর্শ ও রিসোর্সের খোঁজ।