প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

মোজো ওয়ার্কিং: মোবাইল ফোনে সম্পাদনা

English

গ্যাজেটের প্রতি মানুষের আকর্ষণ যে হারে বাড়ছে, স্মার্টফোনে ভিডিও এডিটিংও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ততটাই। বাজারে নতুন এডিটিং অ্যাপ আসার সাথে সাথেই তাদের সুবিধা-অসুবিধা ও নতুন ফিচার নিয়ে ফেইসবুক ভেসে যায় পোস্টে। কিন্তু ভিডিও সম্পাদনা আসলে যতটা না প্রযুক্তি, তার চেয়ে অনেক বেশী স্টোরিটেলিং – এখানে সবার আগে জানতে হয় কেন এবং কখন ছবিটি কাটতে হবে।

আরব রিপোর্টার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের প্রধান নির্বাহী রানা সাবাগ বলেন, প্রত্যেক সাংবাদিকেরই মোবাইলে স্টোরি এডিট করা শেখা উচিৎ।

“স্মার্টফোন ব্যবহার করে ভিডিও ধারণ, সম্পাদনা এবং প্রকাশ করতে জানলে প্রান্তিক অঞ্চল থেকেও দুর্দান্ত আন্তঃসীমান্ত এবং আন্তঃ মিডিয়া সাংবাদিকতা করা যায়।” বলেন সাবাগ। তিনি আরো বলেন, “সম্পাদনার কাজ হল স্টোরিটেলিংয়ে বৈচিত্র্য আনা এবং স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। আর মধ্যপ্রাচ্যে বড় ক্যামেরা ও ল্যাপটপ বহন করার চেয়ে মোবাইলে কাজ করা নিরাপদ।”

ইদানিং প্রযুক্তি এবং তার সহজলভ্যতার কারণে ঘটনাস্থলে বসেই স্পর্শকাতর কন্টেন্ট সম্পাদনা এবং অনুসন্ধানী রিপোর্ট এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাঠানো যাচ্ছে।

নিউজডে’র সাবেক প্রতিবেদক টিসি ম্যাকার্থি বলেন, সঠিক মোবাইল টুল খুঁজে পেতে তিনি “ট্রায়াল অ্যান্ড এরর” পদ্ধতি ব্যবহার করেন। স্মার্টফোন সম্পাদনার ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টা আলাদা। একজন সাংবাদিক এখন বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বসে, স্মার্টফোনে পেশাদার স্টোরি তৈরি করে, সেটি প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য বি-রোল তৈরি, ট্রানজিশন ঠিক করা, অডিও জুড়ে দেওয়া, মিউজিক মিক্স করা, বিভিন্ন রকম শিরোনাম তৈরি এবং রেন্ডার করে প্রজেক্টটি বিভিন্ন সাইটে পাঠানোর সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এই সব কাজ যে কোনো অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস ডিভাইসে করা যায়। কিন্তু স্মার্টফোনকে সত্যিকারের টুল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইলে আমাদেরকে প্রযুক্তি ব্যবহারের “ডিজিটাল ভাষা” জানতে হবে।

সম্পাদনা হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে তাৎক্ষনিক সব সম্ভাবনাকে এক সুতায় জুড়ে দেয়ার চিন্তা বা প্রক্রিয়া। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, এটি হলো ছবির ভাষা (ভিজুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ), যা প্রতীকি মুহূর্ত, সমান্তরালে ঘটতে থাকা ঘটনা বা দীর্ঘ দৃশ্যকে পাশাপাশি বসিয়ে, ছবি আর শব্দের দ্যোতনা তৈরি করে। সম্পাদনা হচ্ছে এক রকম ডিজিটাল লেখালেখি, যা সাংবাদিকদের ভালো ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলার হতে শেখায়।

আপনি পুরনো স্টিনবেকে (ফিল্ম কেটে কেটে ভিডিও সম্পাদনার পুরোনো প্রযুক্তি)  সম্পাদনা করুন বা স্মার্টফোনে, মনোযোগ দিতে হবে স্টোরিতেই। পার্থক্য হলো, হয়তো স্মার্টফোনে যেসব ছবি সম্পাদনা করবেন, তা হয়ত আপনার নিজেরই ধারণ করা। সেই খবর ‘ব্রেকিং’ ধাঁচের হলে সম্পাদনার পর ঘটনাস্থল থেকেই তা প্রকাশ করতে হবে। আর কীভাবে স্মার্টফোনে সম্পাদনার কাজটি করবেন, সে সম্পর্কে মৌলিক কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে।

ঘটনাস্থলে যা করবেন

স্টোরির জন্য কাজ শুরু করার আগেই, সম্পাদনার পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন। এজন্য আমি স্ক্র্যাপ (SCRAP) স্টোরি নির্মাণ টুল ব্যবহার করি:

স্টোরি (Story) – গল্পটা কী, কেন বলা দরকার এবং দর্শক কারা। চরিত্র (Character) – সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন কারা এবং সম্পাদনায় তা কীভাবে ব্যবহার হবে। বিশ্লেষণ (Resolution) – কাঠামো কেমন এবং তা গল্পকে কোথায় নিয়ে যাবে। বাস্তবতা (Actuality) – কোন কোন বাস্তব চিত্র ভিডিও করতে হবে এবং সম্পাদনার সময় আর কী কী লাগবে। নির্মাণ (Production) – ভিডিও ধারণ এবং সম্পাদনার জন্য কোন কোন উপকরণ দরকার।

স্ক্র্যাপ (SCRAP) টুলের মাধ্যমে ‘ক’ অক্ষর দিয়ে শুুরু হওয়া সাংবাদিকতার মৌলিক ৫টি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় এবং এই ৫ ধাপের কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি প্রাথমিক সম্পাদনা কৌশল তৈরি করি।

এরপর আমি পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপকে নাম্বার দিয়ে সাজাই। সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন, বাস্তব চিত্র ও বি-রোলসহ যা যা রেকর্ড করেছি তা গল্পের নির্দিষ্ট পয়েন্ট অনুযায়ী নোটে লিখে রাখি। এখান থেকে বোঝা যায়, কোন কোন দৃশ্য তোলা হয়েছে, কী বাকি আছে এবং সম্পাদনার সময় কীভাবে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাবে।

সম্পাদনা শুরু করা

শুরু কীভাবে করবেন এটা ঠিক করতেই অনেক সময় সমস্যা হয়।  কিন্তু শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রথম ভিডিও সম্পাদনা করি ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে। আমার সৌভাগ্য, কাজটা শিখিয়েছেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ইংমার বার্গম্যানের ভিডিও এডিটর উল্লা রাইঘ। তিনি সম্পাদনার কঠিনতম শিক্ষাটি আমাকে দিয়েছিলেন এভাবে, “ইভো, তোমাকে তোমার সন্তানদেরকে মেরে ফেলা শিখতে হবে।” সম্পাদনা শুরু করার পর ধীরে ধীরে বিকল্প কমতে থাকে। স্টোরিটা যতই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করে, ততই পছন্দের অনেক দৃশ্য এবং সিকোয়েন্স ছেঁটে ফেলতে হয়।

সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান দিয়েই শুরু করুন – হোক তা ঘটনার বাস্তব ছবি, সাক্ষাৎকার, ওভার-লে, মিউজিক বা ধারাবর্ণনা। আপনি নিজে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যা বলছেন (পিটিসি), তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী হতে পারে, গল্পের আবেগঘন কোন বাস্তব ঘটনা। অবশ্য সাংবাদিক যদি দাঙ্গার মধ্যে থাকেন, তখন পিটিসিই অনেক কার্যকরী হতে পারে। যতক্ষণ না গল্পের নির্দিষ্ট কাঠামো বা সূত্র খুঁজে পাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পাদনার নিখুঁত হওয়া বা না হওয়া নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।

ইভো’র পরামর্শ: আকর্ষণীয় স্টোরি তৈরির জন্য গল্পের কাঠামো এমনভাবে সাজাতে হবে, যেন তা ধারাবাহিকভাবে দর্শকদের মনে আসা সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর দেয়।

স্টোরি কাটবেন কীভাবে

দু’টি ভিডিও ট্র্যাক (V1 এবং V2) নিয়ে কাজ করুন। V1-এ সম্পাদনা মূল স্টোরি এবং V2-তে রাখুন বি-রোল। এর ফলে, বি-রোল এর চেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া যায় সাউন্ড বাইট ও ঘটনার বাস্তব ছবিতে, তথা মূল স্টোরিতে। তাছাড়া দুইটি ভিডিও ট্র্যাক থাকলে বি-রোল আগেই এডিট করে ফেলা যায়, ফলে চূড়ান্ত সম্পাদনার সময় তাকে আরো নিখুঁত করে নেয়া যায়।

নিচের চিত্র ১ পরিচিত চেকারবোর্ড এডিটিং নামে, যেখানে ধারাবর্ণনা ও ভিডিও সাজানো হয়। এর উদ্দেশ্য হল, যাতে আপনি বি-রোল দৃশ্যগুলো যুক্ত করার পর সহজে বদল, ছোট বা বড় করতে পারেন। ট্র্যাক একটি হলে সব দৃশ্যের মধ্যে বি-রোল শট বড়-ছোট করা করা বেশ কঠিন।

চিত্র ১: চেকারবোর্ড সম্পাদনা

উপরের উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, আপনি সাক্ষাৎকারের ছবির ওপর ওয়াইড শটগুলো বড় করে কীভাবে ওভারল্যাপ করবেন। একই জিনিস CU1 (Close up) অথবা CU2 এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটি সম্পাদনায় গতিশীল আবহ এনে দেয়। কিন্তু ওয়াইড শটগুলো যদি V1-এ পিটিসি এবং সাক্ষাৎকারের মধ্যে আটকে থাকতো, তাহলে পিটিসি এবং সাক্ষাৎকারের অডিও আলাদা না করে ওয়াইড শটটি বড় করা খুবই কঠিন হয়ে যেতো। A2 এখানে ফাঁকা রয়েছে। আপনি চাইলে এখানে মিউজিকও যুক্ত করতে পারেন।

ইভো’র পরামর্শ: বাট এডিট (Butt edit – যেখানে দুটি দৃশ্য যংযুক্ত হয়) এর বদলে বিভক্ত-এডিট, অথবা “J” এবং “L” কাট (যেখানে একটা ক্লিপের প্রথমে বা শেষে শট ওভারল্যাপ করে) পদ্ধতি ব্যবহার করলে আরো দ্রুত সম্পাদনা করা যায়।

বি-রোল সম্পাদনা

সাক্ষাৎকারের সাথে যেসব আনুষঙ্গিক দৃশ্য সম্পাদনার সময় ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় বি-রোল, ওভারলে বা কাটঅ্যাওয়ে। এটি অপ্রয়োজনীয় জুম, জাম্প কাট, দ্রুতগতির প্যান এবং অন্যান্য ভুল সংশোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এভাবে সিকোয়েন্স লম্বা বা ছোট করার জন্য বি-রোল কাজে আসে।

সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার সময় যা যা বলা হয়েছে, তা লিখে নিন। যেমন ধরুন, কেউ তার সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ একটি ডাকটিকিটের কথা বলেছেন। এই দৃশ্য সম্পাদনার সময় সেখানে সেই ডাকটিকিট অথবা সম্ভব হলে তিনি অ্যালবামে স্ট্যাম্পের দিকে তাকিয়ে আছেন, এমন বি-রোল অন্তর্ভুক্ত করুন। এবং বি-রোলটি ওই বিষয় সম্পর্কে নিয়ে কথা শুরুর দুই ফ্রেম আগে টাইমলাইনে যুক্ত করুন।

ধারাবর্ণনা লেখা ও সম্পাদনা

সম্পাদনার সময়েই সাধারণত ভয়েসওভার বা ধারাবর্ণনা লেখা এবং রেকর্ড করা হয়। এই ‘পকেট এডিট সুইট’ (স্মার্টফোন) যুগের আগে আমরা গাড়িতে বা ট্রেইনে বা ফেরার পথে স্ক্রিপ্ট লিখতাম। এখন হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল দিয়ে ঘটনাস্থলে বসেই সেটা করা সম্ভব। তাই আপনাকে লোকেশন এবং ধারাবর্ণনার নোটসহ পাঁচ ধাপের পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হতে হবে।

আপনার স্মার্টফোনে যুক্ত করা মাইক্রোফোন মুখ থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি দূরে রেখে স্ক্রিপ্টটি পড়ুন। ভিডিওসহ অডিও রেকর্ড করলে সম্পাদনার সময় সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। (“স্মার্টফোনে অডিও রেকর্ড” আর্টিকেলে এ ব্যাপারে আর জানতে পারেন।) টাইমলাইনে যুক্ত করার আগে ভিডিও থেকে অডিও আলাদা করে নিন। কোনো বিশেষ পরিস্থিতি, অর্থ্যাৎ উচ্চ বিটরেটের বা নির্দিষ্ট ফরম্যাটের অডিও প্রয়োজন না হলে, আলাদা অডিও অ্যাপে রেকর্ড করার প্রয়োজন নেই।

সাক্ষাৎকারের ভেতর অসংলগ্ন কথা ঢাকতে, সিকোয়েন্স বড় করতে এবং স্টোরির উপাদান ও কাঠামোর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে ধারাবর্ণনা ব্যবহার করা হয়। ন্যারেশনের কাজ দৃশ্যগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা এবং স্টোরিটিকে সামনে এগিয়ে নেয়া। একে বলে “ছবির সাথে লেখা।” এই দক্ষতা সম্পাদনার জন্য বেশ গুরুত্বপুর্ণ।

স্ক্রিপ্ট লেখার সময় মাথায় রাখবেন, এক সেকেন্ডে তিনটি শব্দ বলা যায়। টেলিভিশনে পড়ার সময় এই গতিই মেনে চলা হয়। আপনার ভিডিও সাত সেকেন্ড লম্বা হলে, ধারাবর্ণনার জন্য দরকার হবে ১৯-২১টি শব্দ।

ইভো’র পরামর্শ: কন্ঠ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন পরবর্তী অডিওর প্রথম শব্দের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। ধারাবর্ণনার কাজ হল ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তার সাথে সম্পর্ক তৈরি করা। এতে একটি সামগ্রিক ধারণা তৈরি হয়, যা গল্পটিকে এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সম্পাদনার সময় ধারাবর্ণনা লেখা ও রেকর্ড করার জন্য মৌলিক কিছু পরামর্শ:

বক্তব্য হবে আটপৌরে, যে ভাষায় কথা বলেন, সেভাবেই লিখুন। লেখার সময় বর্তমান কাল এবং কর্তৃবাচ্য ব্যবহার করুন, যাতে দর্শক স্টোরির তাৎক্ষনিকতা টের পায়। সহজ বাক্য ব্যবহার করুন। একটি বাক্যে এক বিষয়েই কথা বলুন। বাক্য হওয়া উচিত ৫-২৫ শব্দের মধ্যে। সহজ ও স্পষ্টভাবে লিখুন, যাতে যে কেউ বুঝতে পারে। সম্ভব হলে হাত নেড়ে স্টোরির ওঠা-নামার জায়গায় জোর দিন। সংবাদ পাঠকের মতো প্রতি দ্বিতীয় বা তৃতীয় শব্দেই জোর দেওয়ার দরকার নেই। কিছু একটা পড়ে শোনানোর চেয়ে বরং একটা গল্প বলার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, প্রথম কিছু শব্দ সাধারণত কেউ শোনেনা। দর্শকদের গল্পে মনোযোগ দিতে খানিকটা সময় লাগে।

ইভো’র পরামর্শ: সময় এবং কাঠামো নির্ধারণ করতে দ্রুত ধারাবর্ণনার খসড়া তৈরি করুন।

চূড়ান্ত সম্পাদনা

বি-রোলসহ সম্পাদনার খসড়াটা যখন দাঁড়িয়ে যাবে, তখন আপনি চূড়ান্ত সম্পাদনার জন্য প্রস্তুত। এইখানে আমি যে ধাপগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো হলো:

পেছনে ফিরে যান এবং সম্পাদনাটি দেখুন। কিন্তু এ ধাপে কিছু পরিবর্তন করবেন না। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি কী ভাবছেন তা নোট করুন, বিশেষ করে স্টোরি বাউন্স নিয়ে। একদম শুরুতে ফিরে গিয়ে সূক্ষ্মভাবে সম্পাদনা করা শুরু করুন। নিচের বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিন: টেইক নেওয়া শেষ হওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যগুলো বাদ দিন। কোনো শব্দ বাদ যেন না পড়ে, তা নিশ্চিত করুন। বি-রোল দৃশ্যগুলো ডানে-বামে সরিয়ে টাইমলাইনে তাদের সঠিক স্থান ঠিক করুন দরকার হলে সাক্ষাৎকার বা বি-রোল যুক্ত বা পরিবর্তন করুন। দরকার হলে ধারাবর্ণনা আবার রেকর্ড করুন।

বাস্তবতা একেক জনের জন্য একেকরকম, কিন্তু নিচের বিষয়গুলো সম্পাদককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে:

আবেগ – সম্পাদনায় আবেগপ্রবণ মুহূর্ত থাকবে। স্টোরি – সম্পাদনা স্টোরিটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ছন্দ – এমন জায়গায় ছবি কাটুন যেন স্টোরির গতি ঠিক থাকে। স্ক্রিন এবং স্টোরির আপেক্ষিকতা – যেন স্টোরির ধারাবাহিকতা (কন্টিনিউয়িটি) বুঝা যায়।

“তথ্য প্রবাহ” যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেজন্য আমি সবসময় ভাবি:

আমি কেন নতুন তথ্য সম্পাদনা করছি? নতুন তথ্যটি কি সঠিক? এটি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?

যখন আপনার মনে হবে, গল্পটি টাইমলাইনে ঠিক জমছে না, ধরে নেবেন সম্ভবত এটা অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য এবং তথ্যের কারণে। এমন মনে হলে একদম শুরুতে গিয়ে আবার দেখুন। যেখানে স্টোরিটি আর আগাচ্ছেনা বলে মনে হয়, সেখানেই আপনার আবার সম্পাদনা করা দরকার। সাধারণ সমাধান হচ্ছে, কোনো দৃশ্য বাদ দিয়ে দেওয়া।

কিছু মৌলিক সম্পাদনা কৌশলঃ

ইতিবাচক কোনো কারণ ছাড়া সম্পাদনা করা উচিৎ না।

কোনো দৃশ্য কাটার পর বুঝা না গেলে তুলনামূলক বড় শট কাটুন। সম্ভব হলে দৃশ্যে গতিশীল কিছু থাকা অবস্থায় কাট করুন। “স্থির” অবস্থা থেকে গতি ভালো। ঘটনার সারাংশ নিয়ে আগে ভাবতে হবে, তারপর গঠন। যদি কোনো দৃশ্য স্টোরিটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বা নতুন কোন তথ্য দিতে বা আবেগ জোরালো করতে কাজে না লাগে, তাহলে সেটি ব্যবহার করার দরকার নেই। স্টোরির প্রয়োজনে সম্পাদনা করুন, দরকার হলে মন্তাজ সিকোয়েন্স ব্যবহার করুন।

সম্পাদনার অ্যাপস

প্রয়োজনীয় মোবাইল সাংবাদিকতা টুলস” এ আমি বেশ কিছু সম্পাদনার অ্যাপের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। এমন অ্যাপ ব্যবহার করুন, যেখানে দুইটা ভিডিও ট্র্যাক বা তার বেশি আছে:

আইমুভি পুরনো হলেও বেশ শক্তিশালী। সমস্যা হলো, এই অ্যাপে টাইটেল বা শিরোনাম তৈরির প্যাকেজ এবং ডেডিকেটেড অডিও ডাকিং(অডিও বাড়ানো-কমানো) সুবিধা নেই। লুমা ফিউশন অনেক সুবিধা সম্বলিত একটি আইওএস অ্যাপ। কিন্তু এটার ইন্টারফেইস বেশ জটিল। অবশ্য তারা এটা ঠিক করে ফেলবে বলেছে। কাইনমাস্টার একটা আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। এতে দুর্দান্ত ইউএক্স এবং প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাবেন। শক্তিশালী অনবোর্ড গ্রাফিক্স, অডিও ডাকিং এমনকি গ্রিন স্ক্রিনও ব্যবহার করা যায়। এই অ্যাপের পরবর্তী সংস্করণে ফোন থেকে অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো তে এক্সপোর্ট করার সুবিধা থাকবে।

এই অ্যাপগুলোর কিছু সুবিধা সম্পর্কে জানার জন্য এই লিঙ্কে ঢুকে দেখতে পারেন।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভিডিও নির্মাণ করার পরেও সম্পাদনা আমার কাছে জাদুবিদ্যার মতো মনে হয়। ২০ বছর আগেও এই কাজটি ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু এখন সৃজনশীলতার কারখানাটি আমাদের পকেটেই থাকে।  আমাদের শুধু শিখতে হবে, কীভাবে ডিজিটাল ভাষায় লিখতে হয়, আর লেখার এই পদ্ধতিটিই হলো সম্পাদনা।

তাহলে, শুরু করে দিন মোজো…

ইভো বুরাম একজন অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক, লেখক এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত টেলিভিশন প্রোডিউসার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২৫০০ ঘণ্টার বিভিন্ন ধরণের প্রাইম টাইম অনুষ্ঠান প্রযোজনার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ইভো মোবাইল সাংবাদিকতার একজন অগ্রদূত। বুরাম মিডিয়া নামে একটি মোজো এবং ওয়েব টিভি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর, যা বিশ্বসেরা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাংবাদিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।

টিপশীট ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

টিপশিট: আপনার অনুসন্ধানে কীভাবে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহার করবেন

সমুদ্র সংক্রান্ত ডেটার ধরন হতে পারে বহুবিচিত্র। সমুদ্রে দূষণ, জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতি অথবা অর্থবাণিজ্য— এমন বিভিন্ন ধরনের ডেটা, সাংবাদিকেরা ব্যবহার করতে পারেন তাদের রিপোর্টিংয়ে। এই টিপশিটে পাবেন অনুসন্ধানে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহারের পরামর্শ ও রিসোর্সের খোঁজ।