প্রবেশগম্যতা সেটিংস

রিসোর্স

» গাইড » গাইড

বিষয়

ভিডিও ইউনিট গঠন করবেন যেভাবে: ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য জিআইজেএন গাইড

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

ভিডিও কিট ব্যাগ। ছবি: নিকোলিয়া আপোস্টোলু

এক দশক আগে, আমি যখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করছিলাম, তখন ভিডিও-ই ছিল ভবিষ্যতের বড় প্রযুক্তি। বিশ্বজুড়ে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো ভিডিও প্রতিবেদন তৈরির জন্য ফ্রিল্যান্স ও পূর্ণকালীন কর্মী নিয়োগ দিচ্ছিল। সে সময়ই প্রযোজক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল আমার। তাই স্বাভাবিকভাবে, আমি নিজের প্রথম ক্যামেরাটি কিনে ফেলি এবং ফ্রিল্যান্স ভিডিও সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করি। তারপর থেকে বেশ কয়েকজন সদস্যের বড় দলের সঙ্গেও তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করেছি। আবার একা একাও প্রযোজনা, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা করেছি। 

বেশ কয়েক বছর ধরে, সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, ভিডিওতে যাওয়া শব্দটি ছিল সবার মুখে মুখে। কিছু কিছু আউটলেট তাদের প্রিন্টের সব কর্মী সরিয়ে ভিডিও কর্মী নিয়োগ দিয়েছে, যাঁরা শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কন্টেন্ট তৈরি করছেন। 

অনেক টাকা খরচ করে এমন দল গড়লেও, অনেক প্রতিষ্ঠানই এই খাতের আয় ও টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তেমন ভাবেনি। ফলে, কয়েক বছরের মধ্যে লাখ লাখ ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার আছেএমন বড় বড় ভিডিও ইউনিটও বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন এনবিসিরি লেফট ফিল্ড এবং সিএনএন-এর গ্রেট বিগ স্টোরি

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

আজকের দিনে, ভিডিও নিয়ে উন্মাদনা অনেকটা ঝিমিয়ে গেছে, কিন্তু দুর্দান্ত স্টোরিটেলিং ফরম্যাট হিসেবে ভিডিও ঠিকই টিকে আছে, এবং একে বাজেটের সঙ্গে মানানসই করে নেওয়ারও সুযোগ আছে। ইউটিউবের মতো বড় স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে স্বল্পপরিচিত পেইড-পার-ভিউ ওয়েবসাইট পর্যন্ত নানা উপায়ে এখন ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকেরা ভিন্ন ধরনের বা কখনো আরও বড় ও বৈশ্বিক পরিসরের দর্শকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়ে থাকেন। এভাবে তাঁরা প্রতিবেদনের প্রভাবও ছড়িয়ে দিতে পারেন, যা সংবাদমাধ্যমের জন্য আয়েরও পথ হতে পারে। 

ভিডিও ইউনিট থাকলে অলাভজনক অনুসন্ধানী সংগঠনের মতো ছোট সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্কের সঙ্গেও কাজ করার পথ খুলে যায়, যেখানে প্রায়ই প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে বেশি বাজেট থাকে। এক দিনের ভিত্তিতে বা বিশেষ প্রকল্পে কাজ থেকে শুরু করে আর্কাইভাল ফুটেজ বিক্রিসহ নানা দিক থেকে এটি হতে পারে রোজগারের মূল্যবান উৎস। 

সীমিত বাজেট এবং অল্প কর্মীর ছোট অনুসন্ধানী সংগঠনগুলোকে তাদের প্রথম ভিডিও স্টোরি তৈরির ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য এই গাইড তৈরি হয়েছে। আমরা এটিকে তিনটি অংশে ভাগ করেছি। 

ভিডিও নিয়ে কাজ শুরুর ২১ ধাপ

আরও দৃষ্টিনন্দন শট যেভাবে নেবেন

কেস স্টাডি

ভিডিও নিয়ে কাজ শুরুর ২১ ধাপ

শুরুতেই অস্কার মনোনয়ন পাওয়া বা নেটফ্লিক্সের সঙ্গে চুক্তির মতো বড় লক্ষ্য স্থির করবেন না। আপনার দল ছোট ও অনভিজ্ঞ হলেও তা ঠিক আছে। ভুল যে হবে, তা মেনে নিন এবং মাথায় রাখুন যে এটি ক্রমাগত শিখে যাওয়ার ব্যাপার, ঠিক যেমনটি লেখার ক্ষেত্রে ঘটে। 

১. ছোট থেকে শুরু

আপনার কর্মীদের যদি অভিজ্ঞতার অভাব থাকে, তাহলে শুরু থেকেই দৃশ্য নিয়ে চিন্তা করুন। ভাবুন, টেক্সট প্রতিবেদনের কোথায় কোথায় ছবি বা ভিডিও যোগ করবেন। একই সঙ্গে, একদম পিচিং পর্যায়, অর্থাৎ শুরু থেকে মাল্টিমিডিয়া উপাদানের দিকে গুরুত্ব দিন। প্রিন্ট মাধ্যমের অনেক সাংবাদিক অনুসন্ধান শেষ করার পর মনে করেন যে, তাঁদের ছবি ও ভিডিও দরকার। সেই পর্যায়ে এসে সেগুলো সংগ্রহ করা কখনো কখনো অসম্ভব হয়ে পড়ে। টেক্সটের মাঝে কিছু ছবি বা ছোট ভিডিও ক্লিপ যোগ করা বা ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে জুড়ে দেওয়াটা ভালো শুরু হতে পারে। আরেকটি আইডিয়া: প্রিন্ট প্রতিবেদনের প্রধান চরিত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি ভিডিওতেও ধারণ করুন। 

বাজেট থাকলে, আপনার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিন। আমাদের ফোনেই এখন উচ্চমানের ক্যামেরা আছে, এবং এক দশকের বেশি সময় ধরে। তাই আপনার দলেই এমন কেউ না কেউ আছেন, যিনি ভালো ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে পারেন। এরপর দরকার কিছু নির্দেশনা ও চর্চা। 

এ ছাড়া আছে ভিডিও প্রজেক্টের জন্য ক্রাউডসোর্সিংয়ের অপশন। প্রজেক্টের মূল বিষয় নির্ধারণের পরপরই একটি কৌশলগত অবস্থান ঠিক করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অস্কার-মনোনীত এবং পুরস্কারজয়ী সুইস সম্পাদক-পরিচালক সাবিন ক্রায়েনবুল।  

কিছু তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য ক্রাউডসোর্সিং ব্যবহার করেছিলেন ক্রায়েনবুল। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব যেভাবে বাড়ছে, তাতে আপনি সহজেই সেখানে একটি অনুসারী গোষ্ঠী তৈরি করতে পারেন, যারা টাকা সংগ্রহের জন্য প্রচারণা চালাতে কাজে আসবে। মানুষ এসব প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পেরে উচ্ছ্বাস বোধ করে। একটি ফেসবুক পেজ বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট দিয়েই আপনি এটি করতে পারেন। ওয়েবসাইটও জরুরি নয়।”

অবশ্য, ক্রাউডসোর্সিংয়ের কাজটি ভালোমতো করতেও সময় লাগে। ক্রায়েনবুলের পরামর্শ হলো: প্রচারণা কেমন হবে, তা-ও শুরুতেই পরিকল্পনা করে নিন। সব হালনাগাদ তথ্য ও সুযোগ-সুবিধা সেখানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ছাড়া কোনো কাজের জন্য উপহার দেওয়ার মতো বাড়তি খরচও হিসাব করা এবং মোট খরচের সঙ্গে যোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

ক্রায়েনবুল ব্যাখ্যা করে বলেন, “গোটা চলচ্চিত্রের জন্য সহায়তা চাওয়ার বদলে সেটির নির্দিষ্ট কিছু অংশের (যেমন সংগীত বা সংগীতের মেধাস্বত্ব) জন্য সহায়তা চাওয়া ভালো। এই উপায়ে মানুষ এমন একটি অনুভূতি পায় যে, তারা জেনেবুঝে একটি জিনিসে অবদান রাখছে এবং তারা জানে যে চলচ্চিত্রটির কোন জায়গাটির জন্য তারা দায়বদ্ধ। এটি তাদেরকে চলচ্চিত্রটির একটি অংশের ভাগীদার করে।”

২. ভিডিও কৌশল তৈরি করুন

কেমন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সম্ভব, তা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা করুন। শুরু করার আগে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারেন:

আপনার অঞ্চলে কি এমন আরও ভিডিও দল আছে, যারা পরিমিত বাজেটে ভিডিও তৈরি করছে? তারা কীভাবে আয় করছে? আপনার অডিয়েন্স কারা? অনলাইন নাকি অফলাইন? তারা কত বড়? মাথায় রাখুন যে, আপনি যদি আপনার মাতৃভাষা থেকে ভিডিওগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেন, তাহলে আরও বেশি আন্তর্জাতিক মনোযোগ পাবেন, এবং সম্ভবত বেশি আয়ও করতে পারবেন।

কীভাবে ভিডিও তৈরির অর্থ জোগাবেন? শুরুর দিকে, আপনি রিপোর্টিং অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন, যেখানে কোনো ফ্রিল্যান্সারকে নিয়োগ দেওয়ার খরচও যুক্ত থাকবে। তথ্যচিত্র নির্মাণের অনুদানের জন্যও আবেদন করতে পারেন। 

এমন কোনো বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যম আছে, যারা আপনার কাজটি কিনতে আগ্রহী হবে? যেমন স্থানীয় বা আঞ্চলিক টেলিভিশন নিউজ শো, বা কোনো আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টারি ও নিউজ প্রোগ্রাম? বড় সংবাদমাধ্যমে আপনার কাজ প্রচার ও প্রকাশের মতো যোগাযোগ থাকলে তহবিল সংগ্রহের কাজে সহায়তা হবে। 

আপনি যদি নিজেই নিজের কন্টেন্ট প্রচার ও সরবরাহ করেন, তাহলে কীভাবে এটি দিতে চান? আপনার দেশে কি ইউটিউব ও আমাজন প্রাইমের মতো ফ্রি শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর এত বড় অডিয়েন্স আছে, যে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের মতো লাখ লাখ ভিউ পাবেন? ইউটিউবেই যেমন, উপার্জন শুরুর জন্য আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘণ্টা ভিডিও দেখার পরিসংখ্যান থাকতে হবে। তারপর যখন উপার্জন শুরু করবেন, সেটিও হবে প্রতি ভিউয়ে মাত্র ১-৩ ডলার। আপনার অঞ্চলে কি কোনো ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক আছে? আপনার অঞ্চলে কি মানুষ এটি সশরীরে থিয়েটারে গিয়ে টাকা দিয়ে দেখতে আগ্রহী হবে? এমন ধরনের অডিয়েন্স আছে, যারা টাকা দিয়ে এটি দেখার সুযোগ চাইবে?

এই প্রশ্নগুলো আপনাকে সাহায্য করবে একটি কৌশল ঠিক করতে যে, ভিডিওতে আপনার কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা উচিত এবং আপনার বড় দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র বানানো উচিত, নাকি ছোট ছোট ভিডিওতে থাকা উচিত। মাথায় রাখুন: সব প্রশ্নের উত্তর আপনার একসঙ্গে না পেলেও চলবে।  

আপনি যদি নিজের তথ্যচিত্রের ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশনের লক্ষ্য স্থির করেন, তাহলে দ্য ফিল্ম কোলাবোরেটিভ-এর প্রতিষ্ঠাতা ওরলি রাভিদের এই পরামর্শগুলো অবশ্যই পড়ুন। ফিল্ম কোলাবোরেটিভ, যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক সংগঠন, যারা ডিস্ট্রিবিউশন ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। 

৩. নিজস্ব কর্মী নাকি ফ্রিল্যান্সার?

ভিডিও ইউনিট গঠনের জন্য কর্মী সংগ্রহের বেশ কিছু পথ আছে। আপনি একজন পেশাদার ভিডিও সাংবাদিককে নিয়োগ দিতে পারেন। সেই ব্যক্তি একাই প্রযোজনা, রিপোর্টিং, চিত্র ধারণ, অডিও রেকর্ডিং এবং ভিডিও এডিটিং করবেন। অথবা আপনি এমন কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দিতে পারেন, যাঁদের সম্মিলিতভাবে এই দক্ষতাগুলো থাকবে। অথবা আপনি প্রিন্ট মাধ্যমের সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। 

আপনার যদি বড় বাজেট থাকে, তাহলে আপনি বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দিতে পারেন নিজস্ব কর্মী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। একেকজন একেক ধরনের দায়িত্বের জন্য প্রশিক্ষিত হবেন: প্রযোজক, ক্যামেরাম্যান এবং ভিডিও এডিটর। ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে কাজ করার একটি সুবিধা হলো: তাঁরা সাধারণত তাঁদের নিজস্ব সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে সেগুলো কিনতে হবে না। কেউ কেউ অবশ্য এ জন্য আলাদাভাবেও টাকা নেন। 

৪. সরঞ্জাম

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

যদি আপনি নিজের সরঞ্জাম নিজে কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হবে: যাঁরা এখন সেগুলো ব্যবহার করছেন, তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া। ফলে আপনি যদি কাউকে ভিডিও ইউনিটের জন্য নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাঁকে আগে কাজ শুরু করতে দিন এবং কেনাকাটার আগে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করুন। 

প্রাথমিক সেটআপের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ক্যামেরা, শটগান ও ল্যাভালিয়ের মাইক্রোফোন, একটি ট্রাইপড এবং একটি মনোপড। বসে থেকে নেওয়া সাক্ষাৎকারের জন্য ট্রাইপড খুবই জরুরি। বৈচিত্র্যময়তা দরকার এবং  ট্রাইপড সেটআপ করার সময় নেইএমন পরিস্থিতিতে (যেমন, রাস্তায় কোনো প্রতিবাদের দৃশ্য ধারণের সময়) মনোপড খুবই ভালো কাজ করে। ঘরের ভেতরে কাজের সময় আলো বাড়ানোর জন্য ছোট এলইডি লাইটও আপনার দরকার হবে। 

এরপর আপনাকে এই তিন ধরনের ক্যামেরার মধ্য থেকে একটি বেছে নিতে হবে:

  • পেশাদার ক্যামকর্ডারেই দারুণ বিল্ট-ইন ফোকাস লেন্স এবং এনইডি ফিল্টার ও দুটি অডিও ইনপুট থাকে।
  • ডিএসএলআর ফটো ক্যামেরাগুলোও ভালো অডিও ও ভিডিও রেকর্ড করতে পারে। অনেক পেশাদার ব্যক্তিই এগুলো পছন্দ করেন তাঁদের উন্নত মানের সেন্সর ও আঁটসাঁট গড়নের জন্য। এগুলো সহজেই কোটের পকেটে এঁটে যায়। আপনার বেশ কয়েকটি লেন্স এবং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ভিডিও করার জন্য এনডি ফিল্টার প্রয়োজন হবে। আপনি যদি একই সঙ্গে দুটি মাইক্রোফোন থেকে রেকর্ড করতে চান, তাহলে একটি ছোট অডিও মিক্সারও প্রয়োজন হবে। 
  • ডিজিটাল সিনে ক্যামেরাগুলো ব্যবহৃত হয় প্রধানত তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য। এখানে ক্যামকর্ডার ও ফটো ক্যামেরার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সম্মিলন আছে। এটিতে আপনি লেন্স বদল করতে পারবেন এবং এখানে দুটি অডিও ইনপুট আছে। 

ভালো মানের ভিডিও পেতে আপনাকে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হবে না। আপনার যদি কোনো বাজেটই না থাকে, তাহলে মোবাইল ফোন দিয়ে কাজ শুরু করে দিন। এ ব্যাপারে আরও তথ্যের জন্য দেখুন আমাদের মোজো গাইড

৫. একটি স্টাইল গাইড তৈরি করুন

ঠিক যেভাবে আপনি লেখার জন্য স্টাইল গাইড তৈরি করেন, সেভাবেই এটি আপনার পূর্ণকালীন বা ফ্রিল্যান্স ভিডিও স্টাফদের জন্য ব্লুপ্রিন্ট হিসেবে কাজ করবে। এই গাইডে থাকবে: ভিডিওর জন্য আপনি কী ধরনের স্টাইল অনুসরণ করবেন, কীভাবে চিত্র ধারণ করবেন এবং কী ধরনের গ্রাফিকস ও ফন্ট ব্যবহার করা হবে। এটি তৈরি থাকলে কাজে গতি বাড়বে। অনেক জিনিস নিয়েই বারবার ভিডিও এডিটরের সঙ্গে কথা বলতে হবে না। 

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

৬. এমন গল্প বেছে নিন, যেখান থেকে ভালো ভিডিও হবে

সামনাসামনি বসে নেওয়া সাক্ষাৎকারগুলো খুব কালেভদ্রে আকর্ষণীয় হয়। আপনার অনুসন্ধানের বিষয়টিতে যে চমকপ্রদ জিনিসগুলো আছে, সেগুলো ভিডিও করুন। 

৭. স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করুন। নাট গ্রাফের কথা ভুলবেন না

লেখার মতো, আপনার ভিডিও প্রতিবেদনের জন্যও প্রয়োজন হবে একটি স্পষ্ট “নাট গ্রাফ” – একটি আঁটসাঁট সারসংক্ষেপ, যেখানে ব্যাখ্যা করা হবে: আপনার অনুসন্ধানটি কী বিষয়ে এবং কেন এ নিয়ে মানুষের মাথা ঘামানো উচিত। চিত্রধারণ শুরুর আগে আপনার প্রয়োজন হবে একটি স্ক্রিপ্ট ও শট লিস্ট (শুটিংয়ের সময় যে জিনিসগুলোর শট নিতে হবে, তার তালিকা)। এটি তৈরি থাকলে আপনি মাঠপর্যায়ে কাজ করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। চিত্রধারণ শেষ হওয়ার পর, আপনাকে সাক্ষাৎকার এবং শুটিং করা অন্যান্য কাগজপত্রের অনুলিপি তৈরি করতে হবে। এরপরই কেবল আপনি চূড়ান্ত স্ক্রিপ্টটি তৈরি করতে পারবেন, যেটি ধরে আপনি বা ভিডিও এডিটর কাজ শুরু করবেন। 

৮. সরঞ্জাম পরীক্ষা ও চর্চা করুন

ভিডিও ও অডিও যন্ত্রপাতির সেটিংসের (যেমন, মাইক্রোফোনের সেনসিটিভিটি) সঙ্গে নিজেকে ভালোমতো পরিচিত করে নিন। মাঠপর্যায়ে কাজে যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার দল এসব যন্ত্রপাতি নিয়ে ভালোমতো কাজ করতে পারে। ফিল্মিংয়ের সময় অ্যাড্রিনালিন বেড়ে যেতে পারে। এবং সরঞ্জামটি যদি নতুন বা অপরিচিত হয়, তাহলে আপনি হয়তো ভুলে যেতে পারেন যে, কীভাবে এক্স, ওয়াই, জেড-এর সেটিংস ঠিকঠাক করে নিতে হয়। 

৯. প্রিন্ট ও ভিডিও সাংবাদিকদের মধ্যে কাজের বিষয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন 

ভিডিও সাংবাদিকদের তুলনায় প্রিন্ট মাধ্যমের সাংবাদিকেরা প্রায়ই বেশি বয়স্ক এবং কম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন হন। ফলে দুই পক্ষের সম্পর্কে প্রায়ই নানা রকম টানাপোড়েন থাকে। তবে যখন তাঁরা একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, তখন প্রতিবেদনগুলো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আদর্শিকভাবে, অনুসন্ধানের একেবারে শুরুর পর্যায়েই ভিডিও দলের অংশগ্রহণ করা উচিত। প্রকল্পটিতে দেরি করে যোগ দিলে তাঁরা হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার ও আকর্ষণীয় বিষয়ের চিত্রধারণের সুযোগ হারাবেন। 

১০. সব সময় রেকর্ড করুন

সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আপনি হয়তো সেরা প্রতিক্রিয়াগুলো পাবেন আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার শুরুর আগে এবং শেষ হওয়ার পর। কারণ, এ সময়ে তাঁরা কিছুটা হালকা মেজাজে থাকেন। ফলে সাক্ষাৎকারদাতা ঘরে ঢোকামাত্র তাঁর অনুমতি নিয়ে রেকর্ড শুরু করুন এবং তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার পর রেকর্ড বন্ধ করুন। 

১১. গোপন ক্যামেরা

গোপন ক্যামেরার ব্যবহার বেশ বিতর্কিত বিষয়। কখনো বিপজ্জনকও বটে। ফলে এটির ব্যবহার খুব যত্নের সঙ্গে করতে হবে। পেশাগত মানদণ্ড অনুযায়ী, যদি কোনো তথ্য পাওয়ার অন্য কোনো উপায় না থাকে, এবং বিষয়টির সঙ্গে ব্যাপক জনস্বার্থ জড়িত থাকে, তখনই কেবল গোপনে শুটিং করা চলতে পারে। এ ছাড়া কিছু দেশে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে গোপন ক্যামেরার ব্যবহার নিষিদ্ধ। ফলে কৌশলটি ব্যবহারের আগে গোপন ক্যামেরা নিয়ে স্থানীয় আইনে কী বলা আছে, তা দেখে নিন। 

১২. ডেটা ও নথিপত্রের ব্যবহার

স্টোরিটি যদি চমকপ্রদ হয়, তাহলে সেখান থেকে পাওয়া ছবি ও অডিও উপাদান দিয়ে আকর্ষণীয় একটি মাল্টিমিডিয়া বানিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু সতর্ক থাকুন: সাংবাদিকেরা প্রায়ই একটি সাধারণ ভুল করেন ভিডিওতে দেখানো নথিপত্র বা স্থিরচিত্রে কোনো মুভমেন্ট যোগ না করে। ফলে, ভিডিওর অন্য সব কিছুতে মুভমেন্ট থাকলেও নথিপত্র বা স্থিরচিত্রের সময় মুভমেন্ট না থাকায় ভিডিওটির গতিময়তা নষ্ট হয়। এই ইফেক্ট তৈরি করার সবচেয়ে পরিচিত পদ্ধতি হলো: নথি বা স্থিরচিত্রে স্লো প্যান বা জুম ব্যবহার করা। এটি “কেন বার্নস ইফেক্ট” নামেও পরিচিত, যার নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় তথ্যচিত্র নির্মাতার নাম অনুসারে।  

১৩. আর্কাইভ ফুটেজের ব্যবহার

ফিল্মিং শুরু করার মতো বাজেটের ঘাটতি আছে? নাকি আপনি চিন্তিত যে আপনার অভিজ্ঞতার অভাব আছে? তাহলে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট শুরু করতে পারেন এমন জিনিসপত্র দিয়ে, যেগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া আছে। যেমন আর্কাইভাল ফুটেজ, স্যাটেলাইট ছবি, স্ক্রিনশট, নথিপত্র এবং অডিও সাক্ষাৎকার। প্রায় সবকিছুই আপনি অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন বিনা মূল্যে। 

১৪. সাক্ষাৎকারদাতাকে পুরো বাক্যে উত্তর দিতে দিন

ক্যামেরায় যেন কোনো প্রশ্নের উত্তর শুধু হ্যাঁ বা না দিয়ে না আসে। এ জন্য “কেন” বা “কীভাবে”-যুক্ত করে উন্মুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। আপনার নিজের প্রশ্নগুলো হয়তো শেষ পর্যায়ে ভিডিওতে থাকবে না। ফলে সাক্ষাৎকারদাতাকে প্রশ্নটির উত্তর পুরো বাক্যে দিতে অনুরোধ করুন। তারপরও যদি আপনি হ্যাঁ বা না দিয়ে কোনো উত্তর পান, তাহলে আবার প্রশ্ন করুন, “আপনি কি একটু ব্যাখ্যা করতে পারবেন?”

১৫. বড় আকারের প্রকল্প নিয়ে ভয় পাবেন না

বড় প্রকল্পগুলো শুরুতে বেশ দুঃসাধ্য মনে হতে পারে। কিন্তু এক সম্পাদক আমাকে বলেছিলেন: কল্পনা করুন, আপনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও তৈরি করছেন, যেগুলো পরে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে। যেমন, ধরুন আপনাকে ৪৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করতে হবে। এবং আপনি আগে কখনো এটি করেননি। তাহলে কল্পনা করে নিন: আপনি তিনটি ১৫ মিনিটের ভিডিও তৈরির জন্য কাজ করছেন। 

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

১৬. অডিও

আপনি ভিডিও করছেন, কিন্তু অডিওর মানও সমান ‍গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ ফোন ও ক্যামেরার ভেতরে থাকা মাইক্রোফোনের অডিও মান ভালো হয় না। যা থেকে আপনার ভিডিওতে একটি অপেশাদার ভাব চলে আসতে পারে। ফলে মানসম্পন্ন অডিও রেকর্ডার বা মাইক্রোফোন কেনার পেছনে বিনিয়োগ করুন। শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর মাইক্রোফোনগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে। 

ফিল্মিং শুরুর আগে, আপনাকে এমন কিছু অডিওর তালিকা তৈরি করতে হবে, যেগুলো মাঠপর্যায়ে গিয়ে রেকর্ড করতে হবে। এটিকে সাধারণত ডাকা হয় “ন্যাট সাউন্ড” বা ন্যাচারাল সাউন্ড বলে। যেমন, আপনার স্টোরিটি যদি ট্রেন নিয়ে হয়, তাহলে আপনাকে ট্রেন চলে যাওয়ার ভালো অডিও রেকর্ড করতে হবে।

১৭. দৈর্ঘ্য

ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রকাশের জন্য তৈরি করলে নির্দিষ্ট সময় বা দৈর্ঘ্য দিয়ে ছকবদ্ধ হয়ে পড়বেন না। এক প্রফেসর আমাকে যেমনটি বলেছিলেন: এটি ততটাই বড় করুন, যতক্ষণ এটি আকর্ষণীয় থাকে। তবে আপনি যদি কোনো সম্প্রচারমাধ্যমে প্রচারের লক্ষ্য স্থির করেন, তাহলে টিভির স্লটগুলো হয় সাধারণত ২৫, ৪৫, ৬০ ও ৭৫ মিনিটের। 

১৪. চিত্রধারণের অনুমতি ও সম্মতি

কিছু দেশে, চিত্রধারণের জন্য আপনাকে অনুমতি নিতে হবে। কোনো ব্যক্তির ভিডিও করতে চাইলে, সব সময় আগে সম্মতি নিয়ে নিন। নয়তো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব দেশসহ আরও কিছু দেশে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে প্রাইভেসি লঙ্ঘনের জন্য। আপনি সম্মতিটি ক্যামেরার সামনে নিয়ে নিতে পারেন। তবে আইনজীবীরা বেশি পছন্দ করেন: আইনি কোনো নথিতে স্বাক্ষর করে নেওয়া। 

১৯. আবহসংগীত

আবহসংগীত চুরি করবেন না। আপনি একজন ক্রিয়েটর। ফলে অন্যদের কাজকে সম্মান করুন। ইউটিউব ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে এমন অনেক ট্র্যাক আছে, যেগুলো আপনি বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনাকে শুধু ক্রিয়েটরের নাম উল্লেখ করতে হবে। পন্ড৫-এর মতো ওয়েবসাইট থেকে আপনি সংগীত ব্যবহারের স্বত্বও কিনে নিতে পারেন। ইউটিউবেও অনেক ট্র্যাক আছে ক্রিয়েটিভ কমনস রাইটস-এর অধীনে। এগুলো আপনি বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন, যদি ভিডিওর শেষে বা ডেসক্রিপশনে শিল্পীর নাম উল্লেখ করেন। 

২০. ভিডিও সম্পাদনা

ছবি: আনস্প্ল্যাশ

আপনি যদি সদ্য শুরু করে থাকেন, তাহলে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার কিনতে বেশি ব্যয় করবেন না। জিআইজেএন-এর বিজনেস টুলস গাইডে, আমরা দ্য ভিঞ্চি রিজলভ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছি। এটিতে পেশাদার ভিডিও এডিটিং, কালার কারেকশন এবং ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট সফটওয়্যারের একটি ফ্রি ভার্সন পাওয়া যায়। যদি আপনি বা আপনার কর্মী একেবারেই শুরুর পর্যায়ে থাকেন, তাহলে আরও সহজ-সাধারণ কিছু দিয়ে শুরু করুন। যেমন ফ্রি ও ওপেনসোর্স ভিডিও এডিটর শটকাট। ভিডিও ও অডিও এডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে আরও পরামর্শ পেতে দেখুন: জিআইজেএন বিজনেস টুলস গাইডের ৬ নম্বর অধ্যায়

২১. আর্কাইভ করুন

স্টোরি তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, মূল ফুটেজগুলো (র ফুটেজ) ডিলিট করে দেবেন না। সবকিছুই রাখুন এবং সেগুলো অন্তত দুটি ভিন্ন স্থানে, ভিন্ন হার্ড ড্রাইভে সঠিকভাবে আর্কাইভ করুন। ফোল্ডারগুলো এমনভাবে নামকরণ করুন যেন ৫ বা ১০ বছর পরও কেউ সেগুলো দেখতে গেলে যেন সহজে বুঝতে পারেন। এ নিয়ে আরও জানতে পড়ুন আমাদের এই লেখা: সাংবাদিকদের কেন আর্কাইভ ব্যবস্থা দরকার। এ ছাড়া কিছু র ফুটেজ বিভিন্ন স্টক এজেন্সিতেও আপলোড করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এভাবে হয়তো আপনার সংগঠনের জন্য নতুন একটি আয়ের সোর্সও তৈরি করতে পারবেন। 

দৃষ্টিনন্দন শট পেতে আপনাকে যা করতে হবে

১৫ বছর ধরে টিভি ও ওয়েবের জন্য ভিডিও ও তথ্যচিত্র নিয়ে কাজ করতে করতে আমি যেসব শিখেছি, সেগুলোর ভিত্তিতে অল্প কিছু পরামর্শ থাকল এখানে। এ ছাড়া কিছু জিনিস আমি শিখেছি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অধ্যাপক ডুন লিন তুট্রেভিস ফক্সের ক্লাস থেকে। 

  • প্রতিটি শট নিন ১০ সেকেন্ড করে, এবং কোনো জিনিসের গতিবিধি শেষ না হওয়া পর্যন্ত শটটি কাটবেন না। যেমন, যদি একটি গাড়ি সামনে দিয়ে চলে যেতে থাকে, তাহলে সেটি ফ্রেম অতিক্রম করার পর শটটি শেষ করুন। 
  • আপনার মোট শটের মাত্র ২০-৩০% নিতে হবে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে। ওয়াইড শটের (স্টাবলিশিং শটও বলা হয়) লক্ষ্য হচ্ছে: অডিয়েন্সকে দেখানো যে আপনারা কোথায় আছেন। এটি কি নিউ ইয়র্ক নাকি আফ্রিকার কোনো গ্রাম? এটি কি কোনো মধ্যবিত্তের বাড়ি নাকি কোনো গৃহহীনদের আশ্রয়কেন্দ্র? ৪০-৫০ শতাংশ হতে হবে মিডিয়াম শট। বাকিগুলো ক্লোজআপ। কফি বানানোর মতো একঘেয়ে মনে হবেএমন জায়গাতেও ক্যামেরা জুম ইন করলে সেটি অনেক আকর্ষণীয় ও জমাট হয়ে ওঠে। মজার কিছু বিষয় দেখানোরও ভালো উপায় ক্লোজআপ শট। যেমন, কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করলে তার ট্যাটু, রুক্ষ হাত, চেহারার ভাঁজ ইত্যাদি। টেক্সট প্রতিবেদনে আপনি যেভাবে বর্ণনা যোগ করেন, ঠিক সেভাবেই চিন্তা করুন ক্লোজআপ শটগুলোর কথা। 
  • বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে শট নিন। যেমন, আপনি যদি কফি বানানোর চিত্র ধারণ করতে চান, তাহলে কফি তৈরির একটি ক্লোজআপ শট নিন। সাবজেক্টের মাথার ওপর থেকে কাপে কফি ঢালার দৃশ্যও হতে পারে আরেকটি চমৎকার শট। 
  • সাক্ষাৎকারদাতাকে কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চান, সেগুলো আগে লিখে রাখুন। তবে সাক্ষাৎকারের সময় আলাপচারিতার ধারাবাহিকতাও বজায় রাখুন। সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার আগে নোটগুলো ভালোমতো দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, কিছু বাদ গেছে কি না। 
  • সব সময় সঙ্গে বাড়তি কিছু ব্যাটারি ও চার্জার নিয়ে যান। 
  • ট্রাইপড, মনোপড বা গিম্বলের সাহায্য নিলে আপনার শটগুলো দেখতে আরও পেশাদার মনে হবে।
  • যে ব্যক্তি চিত্র ধারণ করবেন, তাঁকে সব সময় হেডফোন কানে রাখতে হবে। যেন অডিও রেকর্ডিংও নিশ্চিত করা যায়। 
  • সাক্ষাৎকারের সব সরঞ্জাম সাজিয়ে নেওয়ার সময় সাক্ষাৎকারদাতার সঙ্গে হালকা চালে কিছু আলাপ করুন। এতে তাঁরা আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় প্রায়ই চোখে চোখ রাখুন। 
  • চর্চা করুন, চর্চা করুন, চর্চা করুন।
  • কোনো জানালার সামনে সাক্ষাৎকারদাতাকে রেখে সেটি রেকর্ড করতে যাবেন না। কারণ, পেছন থেকে আলো এসে ভিডিওটি ওভার-এক্সপোজড করে তুলতে পারে। 
  • চারপাশের পরিবেশ যতটা পারা যায় নিয়ন্ত্রণ করুন। যেমন গান, এয়ারকন্ডিশনের মতো কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ ইত্যাদি বন্ধ করে দিন। 
  • ক্যামেরা সেট করুন সাক্ষাৎকারদাতার মুখ বরাবর রেখে। এবং আপনিও বসুন একই উচ্চতার একটি চেয়ারে। কারণ, যদি আপনি বেশি উচ্চতায় বসেন, তাহলে সাক্ষাৎকারদাতা ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। আর যদি নিচে বসেন, তাহলে তিনি নিচে তাকাবেন। তবে সাক্ষাৎকারদাতা কোথায় তাকাবেন, তা নিয়ে বৈচিত্র্য থাকতেই পারে। কিছু নির্মাতা সাক্ষাৎকারের সময় এক পাশে বসে প্রশ্ন করেন, যেন সাক্ষাৎকারদাতা তাঁর দিকে তাকিয়ে কথা বলেন এবং সেটি প্রোফাইল আকারে চিত্র ধারণ করা হয়। অন্যান্য অবস্থান হতে পারে: আপনি ঠিক ক্যামেরার পেছনেই থাকবেন এবং সাক্ষাৎকারদাতা লেন্সের দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলবেন। সাক্ষাৎকারদাতাকে ফ্রেমের এক পাশে রাখতে পারেন, যেন দেখে মনে হয় তিনি অপর পাশে থাকা প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে কথা কলছেন। 

কেস স্টাডি

এখানে থাকছে ছোট ও মাঝারি আকারের সাংবাদিকতা গ্রুপের তৈরি ভিডিও ও ইউটিউব চ্যানেলের কিছু উদাহরণ।

আরব রিপোর্টার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর ইজিপ্ট হেলথ সেক্টর ফেইলস এইডস পেশেন্টস। হৃদয়বিদারক এই গল্পে বলা হয়েছে: কীভাবে মিসরীয় সরকারি হাসপাতালগুলো ২২ হাজার এইডস রোগীকে সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। অনুসন্ধানটি তৈরি করা হয়েছে বসে নেওয়া পাঁচটি সাক্ষাৎকার (তিনটিতেই সাক্ষাৎকারদাতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি), সরকারি নথিপত্র এবং শহরের রাস্তা থেকে নেওয়া বি-রোল ব্যবহার করে। 

আফ্রিকা আনসেন্সরডনাইপানোই লেপাপা-র তৈরি হার্ড লেবার: দ্য আনরেগুলেটেড কেনিয়ান সারোগেসি ইন্ডাস্ট্রি। এই দলটি ১৮ মাস ধরে তলিয়ে দেখেছে কেনিয়ার অনিয়ন্ত্রিত সারোগেট প্রেগনেন্সি ইন্ডাস্ট্রির অবিচার-অনিয়ম। ২৫ মিনিটের, চিত্তাকর্ষক এই মাল্টিমিডিয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের অডিও সাক্ষাৎকার, নথিপত্র, পাচারের সঙ্গে জড়িত মানুষদের ছবি এবং কেনিয়ার অন্যান্য সাধারণ ফুটেজ। 

ছবি: আফ্রিকা আনসেন্সসরড-এর হার্ড লেবার তথ্যচিত্রের স্ক্রিনশট

বিহুস ডট ইনফোর বিভিন্ন কাজ। ইউক্রেনের অলাভজনক এই নিউজরুম ইউটিউবে বেশ সক্রিয়। বিহুস ক্যামেরা নিয়ে মেধাদীপ্ত সব কাজ করে, যেগুলো একটি জটিল বিষয়কেও সহজে ব্যাখ্যা করতে পারে এবং আপনি সেগুলো দেখার জন্য স্ক্রিনে আটকে থাকবেন। যেমন, এই প্রতিবেদনটি: কীভাবে করদাতারা ইউক্রেনের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের বাড়ি নির্মাণে অর্থ জোগাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিওটি হলো ইউক্রেনের অন্যতম এক অলিগার্কের সিট-ডাউন সাক্ষাৎকার (১.৬ মিলিয়ন ভিউ)। কিন্তু এখানে ক্যামেরার কোনো কারিকুরি নেই। আছে শুধুই দুটো ক্যামেরা এবং একটি মাইক্রোফোন।  

এল ফারোসোলাস এন লা আভেনিদা। এল ফারো, এল সালভাদরের শীর্ষ স্বাধীন অনলাইন নিউজ সাইট। তাদের এই ভিডিওটি ছিল যৌনকর্মীদের নিয়ে, যাদের ক্রমাগত পুলিশের হেনস্তার শিকার হতে হয় এবং গ্যাং-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করতে হয়। এটি এখন পর্যন্ত এল ফারোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও। তিন বছরে এটি পেয়েছে ২ মিলিয়ন ভিউ। 

ব্ল্যাক ট্রেইল নামের এই আন্তসীমান্ত অনুসন্ধানটি করা হয়েছে জাহাজশিল্পে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকা নিয়ে। স্থানীয় একটি গ্রুপ কীভাবে বিদেশের ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে, তার একটি উদাহরণ এই তথ্যচিত্র। এটির জন্য একযোগে কাজ করেছে এক্সপ্রেসো ও এসআইসি টিভি (পর্তুগাল), দ্য ব্ল্যাক সি (পূর্ব ইউরোপ), ভিজি (নরওয়ে) এবং সুইস পাবলিক টিভি আরটিএস। সঙ্গে আরও ছিল জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন ফাইন্যান্স আনকভার্ড (ইউকে) এবং রিপোর্টার্স ইউনাইটেড (গ্রিস)।

ফিলিপাইনের নিউজ সাইট র‌্যাপলার তৈরি করেছে এই অ্যানিমেশন: সিফেরারারস এক্সাইলড বাই প্যানডেমিক ফেস পেরিল। ফিলিপাইনের নাবিকেরা কীভাবে সাগরে গিয়ে মৃত্যুমুখে পড়ছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য এখানে ব্যবহার করা হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীদের ফোন সাক্ষাৎকার এবং অ্যানিমেশন। প্রতিবেদনটি ২০২১ সালের সোপা অ্যাওয়ার্ডে স্বীকৃতি পেয়েছে। 

ছবি: র‌্যাপলারের সিফেরারারস এক্সাইলড বাই প্যানডেমিক ফেস পেরিল শীর্ষক প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট

জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন মালয়েশিয়াকিনি, মালয়েশিয়ার শীর্ষ স্বাধীন অনলাইন নিউজ সাইট। ছোট একটি গ্রুপ কীভাবে বড় সংবাদ সংগঠনে পরিণত হতে পারে, তার একটি চমৎকার উদাহরণ এটি। ৯০-এর দশকে খুব ছোট আকারে শুরু করলেও এখন এটি তৈরি করেছে কিনিটিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল, যেটি প্রথাগত টিভি স্টেশনের মতোই কাজ করে। চ্যানেলটিতে আছে ১ দশমিক ৬ মিলিয়নের বেশি সাবস্ক্রাইবার। এবং গত ১৪ বছরে এটি পেয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ভিউ। 

আরও রিসোর্স

ডু লিন তু-এর লেখা “ফিচার অ্যান্ড ন্যারেটিভ স্টোরিটেলিং ফর মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্টস”-এ মাল্টিমিডিয়া ও তথ্যচিত্র তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল ও দক্ষতা নিয়ে আলাপ করা হয়েছে, যেগুলো পেশাদার সাংবাদিকদের প্রয়োজন হবে। এখানে ভিডিও ও অডিও প্রোডাকশনের নানা পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে বিস্তারিতভাবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো: এখানে বিভিন্ন ধরনের স্টোরিটেলিং কৌশল নিয়ে গভীর আলোচনা আছে। 

স্যানড্যান্স ইনস্টিটিউট মাল্টিমিডিয়া নির্মাণপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ দেয়। এদের কিছু কিছু বিনা মূল্যের। আর কিছু করতে খরচ হবে কয়েক শ ডলার। 

ফিল্ম ট্রুপার নামের পডকাস্ট সিরিজের তিনটি পর্ব তৈরি করা হয়েছে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে অর্থ আয়ের কৌশল নিয়ে। 

ভিডিও দল তৈরিতে আরও পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য, জানাতে পারেন জিআইজেএন-এর হেল্পডেস্ক দলকে। 

আরও পড়ুন


Nikolia Apostolouনিকোলিয়া আপোস্টোলু জিআইজেএন-এর রিসোর্স সেন্টার ডিরেক্টর। গত ১৫ বছর ধরে, তিনি বিবিসি, অ্যাসোসিয়েট প্রেস, এজে+, নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ান, পিবিএস, ডয়েচে ভেলে এবং আল জাজিরাসহ ১০০টিরও বেশি সংবাদমাধ্যমের জন্য তথ্যচিত্র লিখেছেন ও প্রযোজনা করেছেন গ্রীস, সাইপ্রাস ও তুরস্ক থেকে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

পরামর্শ ও টুল

ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া একাডেমিক গবেষণা নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন

একাডেমিক গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে নেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। ফলে ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া গবেষণা অনেক সময় তৈরি করতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। পড়ুন, কীভাবে এমন ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন।

গাইড পরামর্শ ও টুল

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অনুসন্ধানের রিপোর্টিং গাইড: সংক্ষিপ্ত সংস্করণ

জাতিসংঘের মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হচ্ছেন বৃহত্তম বিভক্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। কার্যত প্রতিটি রিপোর্টিং বীটেই প্রতিবন্ধী বিষয়ক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা বা কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

Using Social Network Analysis for Investigations YouTube Image GIJC23

পরামর্শ ও টুল

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শক্তিশালী টুল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস

ডেটা-চালিত সাংবাদিকতার যুগে, বিভিন্ন বিষয়কে একসঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে যুগান্তকারী সব তথ্য উন্মোচন করা সম্ভব। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস (এসএনএ) ঠিক এমন একটি কৌশল, যা ব্যবহার করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা ঠিক এ কাজটিই করতে পারেন।

পরামর্শ ও টুল

এক্সক্লুসিভ: গ্রানাডার নেতার ৪০ বছর পুরোনো অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধান যেভাবে হলো

১৯৮৩ সালে গ্রানাডার জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মরিস বিশপের মরদেহ গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে ছয় পর্বের একটি পডকাস্ট প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট।
এখানে পড়ুন, কাজটির নেপথ্যের গল্প।