প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Image: Shutterstock

লেখাপত্র

জিআইজেএন বুকশেল্ফ: ২০২২ সালে পড়ার মতো ৭টি অনুসন্ধানী বই

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

2022 New Books to Read

ছবি: শাটারস্টক

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিয়ে অথবা তাদের লেখা অসংখ্য বই বাজারে এসেছে। এদের মধ্যে সেরা ছিল, চলমান একটি কেলেঙ্কারি ঘিরে একজন রিপোর্টারের গভীর অনুসন্ধান, যেখানে সেই রিপোর্টারকে তার অনুসন্ধানের ফলাফল বই আকারে বিশদভাবে রিপোর্ট করার সময় ও সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোও বেশ শক্তিশালী, কারণ সেগুলো একজন নির্দিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিকের অভ্যন্তরীণ জগত বা ইতিহাসের একটি মুহূর্তকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

জিআইজেএন বুকশেল্ফের সাম্প্রতিকতম এই পর্বে জায়গা করে নেওয়া বইগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, মাল্টা, হংকং ও পেরুর কিছু অনন্য গল্প উঠে এসেছে, যার সন্ধান দিয়েছেন জিআইজেএনের আর্ন্তজাতিক ডেস্কের কর্মীরা।

বইয়ের এই  তালিকা তৈরি করতে গিয়ে আমরা বিশদ একটি মানদণ্ড ব্যবহার করেছি: এগুলো হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা লিখেছেন, অথবা তাঁদের নিয়ে লেখা হয়েছে। এদের মধ্যে ওয়াটারগেট তারকা কার্ল বার্নস্টেইন ও নাগরিক অধিকারের প্রতীক আইডা বি. ওয়েলসের মতো বড় নাম যেমন আছে, তেমনি মাল্টায় গাড়ি বোমা হামলায় নিহত অনুসন্ধানী রিপোর্টার ডাফনে কারুয়ানা গালিৎসিয়ার মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিককে নিয়ে লেখা বইও আছে।

এই তালিকায় রয়েছে, হংকংয়ের প্রত্যর্পণ আইন বিরোধী আন্দোলন কাভার করা সম্মুখসারির রিপোর্টারদের লেখা চাঞ্চল্যকর প্রবন্ধগুলোর সংকলন। আরও আছে, সংগঠিত অপরাধ ও করোনাভাইরাস নিয়ে একটি প্রকাশনা। এটি অবশ্য  কোনো নির্দিষ্ট সাংবাদিক লিখেননি বা সাংবাদিকদের জন্যেও রচিত হয়নি; তবে, এটি সেইসব অনুসন্ধানী লেখকদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেবে, যারা জানতে চান এই  মহামারি কীভাবে দুর্নীতিবাজদের জন্য লোভনীয় ব্যবসার সুযোগ হয়ে উঠেছে।

সবশেষে, আনন্দের সঙ্গে তুলে ধরছি দুই অনুসন্ধানী সাংবাদিকের লেখা দু’টি বইয়ের কথা। এদের একটি পেরুর, যেখানে সাংবাদিকেরা টিকাদান কর্মসূচিতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি উন্মোচন করেন, এবং যার ফলশ্রুতিতে একজন প্রেসিডেন্টের পতন ঘটে। অন্যটি লিখেছেন এক ফরাসি রিপোর্টার, যিনি ২০১৪ সালের এক মাঝরাতে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩৭০ হারিয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করেছেন। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত বইগুলো হল:


চেজিং হিস্ট্রি: আ কিড ইন দ্য নিউজরুম

লিখেছেন কার্ল বার্নস্টেইন (জানুয়ারি ২০২২)

কার্ল বানস্টেইন, বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান অনুসন্ধানী রিপোর্টারদের একজন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি অনুসন্ধানের জন্য যে দুই সাংবাদিক পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। যুগান্তকারী এই অনুসন্ধানের জের ধরে এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের পতন হয়েছিল। তবে এই স্মৃতিকথন শুরু হয় একেবারে গোড়া থেকে; যেখানে ছোটখাটো গড়ন, অল্প বয়স, পড়ালেখায় গোল্লা, আর মুখভরা দাগ নিয়ে কমবয়সী একটি ছেলে, চাকরি খুঁজতে খুঁজতে ঠেলেঠুলে একটি পত্রিকা অফিসে এসে পৌঁছেছিল। তার জন্য সেটি ছিল, প্রথম দেখাতেই প্রেমের মতো। অবশেষে তাকে যখন ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হল, সেই দরজা “আরেকটি জগত খুলে দিলো। মানুষের চিৎকার। টাইপরাইটারের খটখট শব্দ। আমি পায়ের নিচে ছাপখানার ঝনঝনানিও অনুভব করছিলাম” – এভাবেই লিখেছেন তিনি। “আজ সেই বার্তাকক্ষের দিকে তাকালে মনে হয়, আমার সারা জীবনে এতটা গৌরবময় শোরগোল কখনো শুনিনি অথবা এতটা অর্থবহ আলোড়ন কখনো দেখিনি। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে আসতে আসতেই বুঝে ফেলি, আমি খবরের লোক-ই হতে চেয়েছি।”

এরপর ধীরে ধীরে বার্নস্টেইনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মহীরুহ হয়ে ওঠা, আর তার সঙ্গে “কেনেডির যুগ, ক্রমেই তেতে ওঠা নাগরিক অধিকার আন্দোলন, ভয়ঙ্কর অপরাধের বিস্তার… আর আমেরিকান উন্মাদনা” – প্রকাশকের ভাষায় এর সবকিছুই উঠে এসেছে বইটিতে। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বুক রিভিউ অংশে জিল আব্রামসন এটিকে আখ্যা দিয়েছেন এভাবে: “ছাপা সংবাদপত্রের স্তুতি… আর কী হারিয়ে যাচ্ছে তা আবেগের সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া।”

ছবি: শাটারস্টক (প্রকাশনার সময় বইয়ের প্রচ্ছদ পাওয়া যায়নি)

ইন দ্য নেম অব দ্য মাদার: ডাফনেস সন অ্যান্ড এ কোয়েস্ট ফর জাস্টিস

লিখেছেন পল কারুয়ানা গালিৎসিয়া (ফেব্রুয়ারি ২০২২)

মাল্টার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডাফনে কারুয়ানা গালিৎসিয়ার কাছে হুমকি কোনো বিষয় ছিল না। দুর্নীতি ও সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধানের বছরগুলোতে তাঁর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, তাঁর কুকুরকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি মানহানি মামলার শিকার হয়েছেন এবং তাঁর সম্পদের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। এই বইয়ের লেখক, তাঁর ছেলে পল কারুয়ানা গালিৎসিয়া, যিনি নিজেও একজন সাংবাদিক। তিনি মা সম্পর্কে বলেন, তাঁকে দেখা গেছে “নব্য-নাৎসি, মাদক ও অস্ত্র পাচার, এবং প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও বিচারকদের” নিয়ে অনুসন্ধান করতে। এই গল্পের শুরু একটি ফোনকল দিয়ে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, তাঁর মাকে হত্যা করা হয়েছে: গাড়ির নিচে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিনি মারা গেছেন। খবরান্তরে জানা যায়, এই ঘটনা ঘটে যখন “ওয়ান ওম্যান উইকিলিকস” নামে পরিচিত এই নারী তাঁর শেষ ব্লগপোস্টে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন: “এখন যেদিকে তাকাবেন, সবখানেই জোচ্চোর। পরিস্থিতি মরিয়া।”

“ডাফনে হত্যার জন্য দায়ী কে, এবং সত্যের শক্তিতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুমকি হয়ে ওঠা এক দৃঢ়চেতা ও সাহসী সাংবাদিকের মৃত্যু থেকে লাভবান হয় কারা – তা জানতে,” দুই ভাই ও বাবার সঙ্গে এক “ব্যক্তিগত অনুসন্ধান” শুরু করেন কারুয়ানা গালিৎসিয়া। এই বইয়ে তার-ই গল্প উঠে এসেছে।

আইডা বি. দ্য কুইন: দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি লাইফ অ্যান্ড লেগ্যাসি অব আইডা বি. ওয়েলস

লিখেছেন মিশেল ডাস্টার (২০২১) 

ওয়েলসের জন্ম ১৮৬২ সালে, একটি দাস পরিবারে। তিনি ছিলেন একাধারে প্রতিবেদক, সম্পাদক, সংবাদপত্রের স্বত্ত্বাধিকারী এবং সর্বোপরি, বিশ্বজুড়ে খ্যাতিমান এক অনুসন্ধানী সাংবাদিক। দাসপ্রথা বিলোপের পরবর্তী বছরগুলোতে আফ্রিকান-আমেরিকান লিঞ্চিংয়ের (বিচার ছাড়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা) ঘটনাগুলোকে লিপিবদ্ধ করার প্রাণান্ত চেষ্টার জন্য তিনি সুপরিচিত।

এই বইয়ের লেখিকা, ওয়েলসের প্রপৌত্রী মিশেল ডাস্টার লিখেছেন, “বছরের পর বছর ধরে তিনি দেখে আসছিলেন, মিথ্যা-সনাক্তকরণের বলি বানিয়ে কীভাবে ভুক্তভোগীদেরই অন্য কারও অপরাধের শাস্তি দেয়া হচ্ছে, অথবা ব্রাত্য কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ও তাদের প্রতিবেশীদের ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে কীভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নামে ভুক্তভোগীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

ব্যক্তিগত এই ভাষ্যে ডাস্টার স্মরণ করেন, বেড়ে ওঠার বয়সে তাঁর বসার ঘরের দেয়ালে ঝোলানো ওয়েলসের ছবির কথা। আর বইটি তিনি উৎসর্গ করেন তাঁর প্রপিতামহীকে, যিনি মরণোত্তর পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তাঁর কাজের  জন্যে – “পথ দেখানো, মুখ বুজে থাকতে অস্বীকৃতি জানানো, শির সমুন্নত রাখা, এবং এই বিশ্বকে সবার জন্য উন্নততর করার লক্ষ্যে বিদ্যমান বিধিব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্যে।” ফোর্বস বইটিকে বলেছে “দৃশ্যগতভাবে অসাধারণ,” আর রিফাইনারিটুয়েন্টিনাইন বলেছে যে এতে উঠে এসেছে, “আইডা বি. ওয়েলস কেন সব সময়ের আইকন।”

আফটারশক: এসেস ফ্রম হংকং

লিখেছেন হোমস চ্যান, ক্যারেন চিউং, ইলেইন ইউ, সুম লোক-কিই, র‌্যাচেল চিউং, সিউয়েন লিউ, ইজরা চিউং, নিকোল লিউ, জেসি প্যাং, এবং দুজন বেনামি প্রদায়ক। সম্পাদনা করেছেন হোমস চ্যান। (মে ২০২০)

২০১৯ সালে বিতর্কিত প্রত্যার্পণ আইনকে কেন্দ্র করে হংকংজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সড়কে নাগরিকদের ঢল নামার এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র পরিণত হওয়ার পর গোটা বিশ্ব দেখতে চেয়েছিল যে, চীন এই আন্দোলন ও আন্দোলন-কেন্দ্রিক রিপোর্টিং কীভাবে সামাল দেয়। 

এই সংকলনে বেশ ক’জন তরুণ রিপোর্টারের প্রবন্ধ জায়গা পেয়েছে, যারা হংকং ফ্রি প্রেস, সিএনএন, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের হয়ে নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিশৃঙ্খলা এবং তার অনুষঙ্গ হয়ে আসা পুলিশী হামলার খবর তুলে ধরছিলেন। অস্থিরতা শেষে একটু পিছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, লেখনীর বিচারে তাঁদের প্রত্যেকের প্রবন্ধ ছিল স্বতন্ত্র; আর অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্ন সংকলনটি এইসব লেখার সমষ্টি। বইটি হংকংয়ের বাইরে পাওয়া যায় না। তবে সম্পাদকেরা বলেছেন, বইটি দেখিয়েছে যে এই সাংবাদিকেরা কীভাবে “বিশৃঙ্খলার মধ্যেও অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন, এবং মূল সেই মুহুর্তগুলোকে ফিরে দেখেছেন যা নগরীটিকে – এবং তাঁদের নিজেদেরকেও – গভীরভাবে বদলে দিয়েছে।” একজন নাগরিক পর্যালোচনাকারী বলেছেন, সংকলনটি “একটি আন্দোলনের মুহুর্তের অসাধারণ বিবরণ।” আর লস অ্যাঞ্জেলস রিভিউ অব বুকসে, এটিকে “আশ্চর্যরকমের মৌলিক কাজ” হিসেবে অভিহিত করেছেন জিনা অ্যান ট্যাম। বিক্ষোভ ২০১৯ সালে হলেও, এই সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা এবং তারপর থেকে নগরীটিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের প্রবণতাই বলে দেয় যে বইটি এখনো একটি শক্তিশালী পাঠ্য হিসেবে রয়ে গেছে, যা সবকিছু বদলে দেওয়ার মুহূর্তটির একটি চিত্ররূপ তুলে ধরে।

দ্য ডিসঅ্যাপিয়ারিং অ্যাক্ট: দ্য ইম্পসিবল কেস অব এমএইচ৩৭০

লিখেছেন ফ্লোরেন্স ডে চাঙ্গি (ফেব্রুয়ারি ২০২১)

২০১৪ সালের মার্চে, ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩৭০ যখন রাডারের স্ক্রিন থেকে উধাও হল, এবং দৃশ্যত বাতাসে মিলিয়ে গেল, তখন মধ্যরাত। ফ্লোরেন্স দে চাঙ্গি, ফরাসি পত্রিকা লা মঁদের হয়ে এই বিমানের নিখোঁজ হওয়া এবং তদপরবর্তী বিশৃঙ্খল আন্তর্জাতিক তদন্তের খবর সংগ্রহ করেছেন। সাক্ষাৎকার, সাক্ষ্য ও স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, তিনি ফ্লাইট ৩৭০ এর ভাগ্য নিয়ে “তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা” তুলে ধরেছেন বইটিতে। নিউ স্টেটসম্যান বইটিকে অভিহিত করেছে এভাবে: “বিস্ময়কর হলেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল নজির… [যা] আধুনিক বিমান পরিবহনের ইতিহাসে সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনার পেছনের খণ্ড খণ্ড সত্যগুলোকে একসুতোয় গাঁথে।” নিখোঁজ এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের যাত্রীদের পরিবারের মুখপাত্র ও লেখক গিসলেইন ওয়াট্রেলোস বলেছেন, এই বই “আর্ন্তজাতিক লুকোছাপার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে আমাদের প্রিয়জনেরা আনুষঙ্গিক ক্ষতি মাত্র… আমরা সত্যের যতটা কাছে ছিলাম, তার চেয়ে অনেক কাছাকাছি নিয়ে এসেছে বইটি।”

ক্রিমিনাল কন্টাজিয়ন: হাউ মাফিয়াস, গ্যাংস্টারস, অ্যান্ড স্ক্যামারস প্রফিট ফ্রম এ প্যানডেমিক

লিখেছেন টুইসডে রেইটানো এবং মার্ক শ’ (এপ্রিল ২০২১)

করোনাভাইরাস মহামারি, আমাদের চেনা-জানা বিশ্বটাকে বদলে দিয়েছে এবং আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য কাঠামো ও সমাজে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। তবে এই বইয়ের পেছনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে মোক্ষম এই বৈশ্বিক সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য তৈরি না থাকলে, সেটি আর সংগঠিত অপরাধ কিসে। 

এই মহামারি যে কীভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা কামানোর সুযোগে পরিণত হয়েছে, এখানে তার কয়েকটি উপায় তুলে ধরেছেন লেখকেরা: ভুয়া প্রতিষেধক ও নকল ওষুধ থেকে শুরু করে পাচার হওয়া বন্যপ্রাণী দিয়ে প্রথাগত টোটকা তৈরি; সাইবার অপরাধের বিস্ফোরণ থেকে শিশুদের জন্য সুরক্ষার ঘাটতি, যা তাদের আরও হয়রানির মুখে ফেলে দেয়। এখান থেকে শিক্ষা? বিশ্বের  অনেক কুখ্যাত অপরাধীর জন্য এই মহামারী আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। “মাদক থেকে মানুষ পর্যন্ত অবৈধ পণ্যের নতুন নতুন পথ” খুঁজে পেতে এখন তাদের কম সময় লাগে।

গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ এগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমের পরিচালক ও উপ-পরিচালকের লেখা এই বই তুলে ধরেছে, “ঘাটতি, লকডাউন এবং জনসাধারণের আচরণ কীভাবে অপরাধ জগত ও অভিজাত শ্রেণিকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে” এবং বিশ্বের বৃহত্তম অবৈধ অর্থনীতিতে এসব পরিবর্তনের কী কী দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে। বইটি কোনো সাংবাদিক লিখেননি বা এটি শুধু তাদের জন্য লেখা হয়নি। তবু, বোধ করি, এটি সেইসব অনুসন্ধানী লেখকদের আকৃষ্ট করবে, যারা সংগঠিত অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে অনুসন্ধান করেন।

অপরাধবিজ্ঞানী লুই শেলি এই বই সম্পর্কে বলেছেন, “কোভিড-১৯ এর বিচিত্র ও ব্যাপক পরিণতি সম্পর্কে যাঁরা বুঝতে চান তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ।”

#ভ্যাকুনাগেট: দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব ইরেগুলার ভ্যাক্সিনেশনস ফর কোভিড-১৯ ইন পেরু 

লিখেছেন ওহোপুবলিকোর নেলি লুনা আমানসিও, ডেভিড হিডালগো, গ্লোরিয়া জিগলার এবং এই অঞ্চলের আট অনুসন্ধানী সাংবাদিক। (সেপ্টেম্বর ২০২১)

কোভিড-১৯, লাতিন আমেরিকায় পৌঁছাতেই এই ভাইরাস ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে গোটা পেরুতে। জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত দেশগুলোর একটি ছিল। সংকট মোকাবিলায় সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছিল, মৃত্যুর সংখ্যাও তখন তরতরিয়ে বাড়ছিল। অনুসন্ধানী গণমাধ্যম ওহোপুবলিকো অনুসন্ধানে নেমে দেখতে পায়, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিসকারাসহ ব্যবসায়ী নেতা, চিকিৎসাকর্মীসহ ও সরকারি কর্মকর্তাসহ অন্তত ৪০০ জনের একটি গ্রুপ – পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচী পাশ কাটিয়ে এবং অপেক্ষার তোয়াক্কা না করেই – টিকা নিতে পারতেন। অনুসন্ধানী দলটি, পেরুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করেছে এবং গোটা মহাদেশে একই ধরনের টিকা-বৈষম্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। এর ফলাফল হল স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত এই বই, যা মহামারি থেকে জন্ম নেওয়া বড় একটি কেলেঙ্কারির বিবরণ তুলে ধরে। “ভ্যাকুনাগেট” অনুসন্ধান নিয়ে জিআইজেএন এর স্টোরি পড়ে দেখতে পারেন এখানে

বুকশেল্ফে আর কী কী থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন? আমাদের বৈশ্বিক দল, আরও বুক রিভিউ করতে আগ্রহী। আপনিই বলুন, তাদের আর কী কী বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আমাদের ইমেইল করুন এই ঠিকানায়: hello@gijn.org

আরও পড়ুন

সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী পালমে হত্যা রহস্যের সমাধান যেভাবে হলো

জিআইজেএন বুকশেলফ: ২০২১ সালে পড়ার মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক ডজন বই

বিকামিং বেলিংক্যাট: এন এক্সসের্পট ফ্রম ইলিয়ট হিগিন্স নিউ বুক


লরা ডিক্সন জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও যুক্তরাজ্যের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো থেকে রিপোর্ট করেছেন এবং তাঁর কাজ এ পর্যন্ত দ্য টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আটলান্টিকসহ অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন এবং পুলিৎজার সেন্টার অন ক্রাইসিস রিপোর্টিং থেকে রিপোর্টিং ফেলোশিপ পেয়েছেন।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

অনুসন্ধান পদ্ধতি জলবায়ু

নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তেল ও গ্যাস বিষয়ক রিপোর্টিং — পারমাণবিক বর্জ্য

সাংবাদিক জাস্টিন নোবেলের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শিল্পখাত তেল-গ্যাস, সরকারের ও একাধিক সহযোগী সংস্থার সমর্থনে কীভাবে পানি, বায়ু, ভূমি, মাটি ও কৃষিপণ্যসহ, নিজেদের কর্মী ও আশপাশের সাধারণ মানুষের ফুসফুস, রক্ত, আর হাড় পর্যন্ত দূষণ পৌঁছে দিচ্ছে।

অনুসন্ধান পদ্ধতি গবেষণা

প্লেনস্পটার এবং পরিবহন পর্যবেক্ষকদের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আপনার অনুসন্ধানে যেভাবে সহায়তা করতে পারে

বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে শখ আছে মানুষের। কেউ পাখি দেখেন, কেউ বা সাপ। আবার কারও নেশা উড়োজাহাজ, জাহাজসহ নানা যানবাহনের দিকে। তাঁরা শুধু এগুলোর খোঁজখবর নিয়েই বসে থাকেন না। রীতিমতো আলোচনা করেন সামাজিক মাধ্যমে। আপনার অনুসন্ধানে এদের কাজে লাগাতে পারেন আপনি। পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

অনুসন্ধান পদ্ধতি

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে টিবিআইজে যেভাবে ‘সাইলেন্সড স্টোরিজ’ উন্মোচন করেছে 

আমাদের চারপাশে দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারির খবর চাপা পড়ে যায়। আসলে এসব খবর ধামাচাপা দিতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে চাপ দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। টিবিআইজে কীভাবে সাংসদদের সঙ্গে জোটে বেঁধে চুপ করিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করেছিল পড়ুন এই প্রতিবেদনে।

ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

নিকার২০২৫ সম্মেলনে আলোচিত আধুনিক, সময় সাশ্রয়ী ও বিনামূল্যের চারটি অনুসন্ধানী ডেটা টুল

যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে থাকেন এই প্রতিবেদনে তাঁদের জন্য থাকছে চারটি ডেটা টুলের সন্ধান। ধরুন, বেশ বড়সড় একটা অডিও ফাইল হাতে এসেছে, গোটাটা শোনারসময় করে উঠতে পারছেন না। সারাংশটা চাই, তাই তো? দেখুন এই প্রতিবেদনে এমন কিছুর সন্ধান মেলে কিনা।