

পাসপোর্ট থেকে অফশোর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা এখন আরও সহজ
পাসপোর্ট অনেক সময়ই অফশোর কোম্পানি ও ট্রাস্টের গোপন মালিকানা কোঁজার মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ফাঁস হওয়া লাখ লাখ নথির ভিড়ে এসব পাসপোর্ট খুঁজে বের করাটা বেশ কঠিন। কাজটিকে সহজ করতে ওসলোমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এআই জার্নালিজম রিসোর্স সেন্টার এবং নরওয়ের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনআরকের মেশিন লার্নিং (এমএল) বিষয়ক বিজ্ঞানীরা মিলে পাসপোর্ট শনাক্ত করতে সক্ষম এমন একটি টুল তৈরি করেছে।
ফাঁস হওয়া নথির মধ্যে পাসপোর্ট থাকলে টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে তা থেকে মূল তথ্য তুলে আনে। যেমন পাসপোর্টধারীর নাম, জাতীয়তা এবং জন্মতারিখ। এ তথ্যগুলো থাকে পাসপোর্টে ব্যক্তির ছবির নিচে দুই লাইনে লেখা, অক্ষর ও কোডের সমন্বয়ে গঠিত মেশিন রিডেবল জোনে (এমআরজেড)।
এই তথ্যগুলো খুঁজে বের করার পদ্ধতি জানা থাকলে ডেটা সাংবাদিকেরা দ্রুত তা অনুসন্ধান ও যাচাই করে আগের তুলনায় আরও কার্যকর ও মানসম্পন্ন সূত্র পেতে পারেন।
পাসপোর্ট শনাক্তকরণ টুলটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাজকে কীভাবে সহজ করে?
অফশোর কোম্পানি ও ট্রাস্টের মালিকানা অনুসন্ধানে কাজ করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য পাসপোর্ট অনেক সময়ই কাজ করে ধাঁধার টুকরো হিসেবে। গোপন সম্পদের মালিকানা অনুসন্ধানে এটি প্রায়ই হারানো সংযোগ বা ‘মিসিং লিংক’ হয়ে ওঠে। বড় ধরনের ডেটা ফাঁসের ঘটনা—যেমন আইসিআইজের প্যান্ডোরা পেপারস, পানামা পেপারস, বা প্যারাডাইস পেপারস—যেখানে গোপন আর্থিক লেনদেন উন্মোচন করা হয়েছিল। এ ধরনের যৌথ অনুসন্ধানগুলোতে দেখা গেছে অফশোরের গ্রাহক কারা, তা খুঁজে বের করতে সাংবাদিকরা পাসপোর্টের তথ্যের ওপর নির্ভর করেন।
প্যান্ডোরা পেপারস অনুসন্ধানের কথাই ধরা যাক। আইসিআইজে ও তাদের গণমাধ্যম অংশীদাররা ফাঁস হওয়া লাখ লাখ নথি ঘেঁটে অফশোর কোম্পানি, ট্রাস্ট এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যকার সংযোগ বের করেন। শুরুর কয়েক মাসে আইসিআইজের ডেটা টিম সাংবাদিকদের জন্য গ্রাহকের নামের তালিকা তৈরি করে, যাতে সাংবাদিকরা সহজে ও দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় সূত্রগুলোকে খুঁজে পান।
দলটি হাজার হাজার পৃষ্ঠার কর্পোরেট নথিপত্র পর্যালোচনা করে। শেষ পর্যন্ত ৩৬ জন বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০০ এর বেশি বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের অফশোর লেনদেন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এই বিশাল অনুসন্ধানের নেপথ্যে পাসপোর্ট ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।
আইসিআইজের জ্যেষ্ঠ ডেটা প্রতিবেদক আগুস্তিন আর্মেন্দারিস বলেন, “ফাঁস হওয়া বড় বড় নথির মধ্যে থাকা পাসপোর্টের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের অংশীদারদের মধ্যে যোগসূত্র বের করতেও বেশ কার্যকর। তিনি বলেন, “নতুন কোনো নথি ফাঁস হলে রিপোর্টারদের জন্য পাসপোর্টধারী ও প্রকৃত মালিকদের নাগরিকত্ব অনুযায়ী দেশের তালিকা থেকে গল্প খোঁজাটাই সবচেয়ে ভালো সূচনা।”
তবে গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি খুঁজে বের করা ও পর্যালোচনা অনেক সময় বেশ চ্যালেঞ্জের। শত শত খড়ের গাদার মধ্যে থেকে সুচ খোঁজার মতো।
পাসপোর্ট শনাক্ত কেন ঝামেলার হতে পারে?

এই নমুনা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নিচে লাল রঙে চিহ্নিত মেশিন রিডেবল জোনে (এমআরজেড) থাকে পাসপোর্টের মূল তথ্যগুলো—যেমন পাসপোর্টধারীর নাম, জাতীয়তা এবং জন্মতারিখ। ছবি: আইসিআইজে
যদিও আগের পদ্ধতিটিও বেশ কার্যকর ছিল। তবে বিপুল পরিমাণ ফাঁস হওয়া নথির মধ্য থেকে আমরা যেভাবে পাসপোর্ট খুঁজতাম, তা ছিল জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং কখনো কখনো অনির্ভরযোগ্য।
পাসপোর্ট খুঁজে বের করতে সাংবাদিকেরা ব্যবহার করছেন আইসিআইজের ওপেন সোর্স সার্চ ইঞ্জিন ডেটাশেয়ার। এটি নির্দিষ্ট নথি অনুসন্ধানের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যা দিয়ে দুইভাবে খোঁজ (সার্চ) করা যায়। একটি হলো পাসপোর্টের সাধারণ ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে অনুসন্ধান। যেমন দেশের নাম, “মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ,” “জন্মস্থান,” “পাসপোর্ট নম্বর,” “ভিসা…” ইত্যাদি। অন্যটি হলো সাধারণ পাসপোর্ট ফাইলের নাম দিয়ে অনুসন্ধান—যেমন “passport.pdf” অথবা “passport.jpg”।
স্ক্যান করা পাসপোর্টগুলো সাধারণত এসব ফরম্যাটেই সংরক্ষিত থাকে। তাই নির্ভুল অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিকরা শুধু ছবি ও পিডিএফ ফাইল দিয়ে অনুসন্ধান চালাতেন। তবে দুইটি পদ্ধতিই কার্যকারিতার দিক থেকে দুর্বল। তাছাড়া অকার্যকর আর সময়সাপেক্ষও।
তাছাড়া ফাইলের নামের জায়গায় সবসময় “পাসপোর্ট” কথাটি লেখা থাকে না বলে অনেক পাসপোর্ট প্রায়ই বাদ পড়ে যেত। স্ক্যানের মান ভিন্ন ভিন্ন হওয়াতেও বেশ সমস্যা হতো । কিংবা ডেটাশেয়ারে ব্যবহৃত ওসিআর (অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন) প্রযুক্তি অনেক সময় পাসপোর্টের লেখাগুলো ঠিকঠাক শনাক্ত করতে পারত না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো মেলানো সম্ভব হতো না। আরও একটি বড় সমস্যা ছিল। পাসপোর্ট খুঁজেতে যে কীওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করা হতো, সেগুলো অনেক সময় এমন সব নথিতেও থাকে যেগুলো আদতে পাসপোর্ট নয়, ফলে অনেক ভুল ফলাফল দেখাতো।
এভাবে পাসপোর্ট শনাক্ত করতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে সাংবাদিকদের হাজার হাজার নথির প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় চোখ বোলাতে হতো। এই আশায় যে কোথাও না কোথাও তাঁরা মূল পাসপোর্টের স্ক্যান কপিটি খুঁজে পাবেন।
গবেষকদের সঙ্গে আমাদের মেশিন লার্নিং উদ্যোগটি কীভাবে সহায়তা করেছে?
ওসলোমেট বিশ্ববিদ্যালয় ও এনআরকের সঙ্গে মিলে করা আমাদের এ কাজের লক্ষ্য ছিল কম্পিউটার ভিশনের আধুনিক অ্যালগরিদম ব্যবহার করে পাসপোর্ট শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকে দ্রুততর ও আংশিক স্বয়ংক্রিয় করে তোলা।
এটি কীভাবে কাজ করে? নথিকে প্রথমে ছবিতে বদলে নেয়। এরপর ওপেন সোর্স ইওলো অবজেক্ট ডিটেকশন মডেলের সাহায্যে ওই ছবির মধ্যে কোনোটিতে পাসপোর্ট আছে কিনা তা স্ক্যান করে। কোনো নথি পাসপোর্ট হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর বিশেষ ওসিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে টুলটি পাসপোর্টের মেশিন রিডেবল জোনে (এমআরজেড) থাকা তথ্যগুলো পড়ার মাধ্যমে পাসপোর্টধারীর নাম, জন্মতারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, দেশ এবং ইস্যুর তারিখসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংগ্রহ করে।
তবে তখনও বেশ চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে পাসপোর্টের তথ্য সঠিকভাবে বের করে আনা এবং কোনো পাসপোর্ট বাদ পড়ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া ঘিরে। আর ইওলো মডেল যেহেতু সাধারণ বস্তু শনাক্তকরণের জন্য তৈরি, তাই টুলটিকে পাসপোর্ট শনাক্ত করতে পুনরায় প্রশিক্ষিত (ফাইন-টিউনিং) করতে হয়েছে।
ওসলোমেট ও এনআরকের দলটি কয়েক মাস সময় নিয়ে আইসিআইজের দেওয়া নথিপত্র পর্যবেক্ষণ ও লেখার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা অংশগুলো চিহ্নিত করেন (যেন মেশিন লার্নিং মডেলটি বুঝতে পারে কোনটার কী মানে)। এরপর মডেল প্রশিক্ষণ দেন এবং মডেলটি যেন খুব বেশি ভুল না করে ও প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ঠিকঠাক শনাক্ত করে, সে জন্য সংবেদনশীলতার মাত্রা সেট করেন।
পাসপোর্ট ছবির বড় ও ভিন্ন ভিন্ন ডেটাসেট ব্যবহার করে আমরা দেখতে পাই, এই মডেলটি নথিপত্রে থাকা পাসপোর্ট পৃষ্ঠাগুলোকে শতভাগ শনাক্ত করতে সক্ষম। যেখানে নির্ভুলতার হার ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ যে ছবিগুলোকে পাসপোর্ট হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ভুলের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ।
কীভাবে এটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে?
গবেষকেরা যে মডেল বানিয়েছিলেন, সেটিকে আইসিআইজে এমনভাবে তৈরি করেছে যেন তা সার্ভারে চালানো এবং সহজে ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটারে যদি ১৬ জিবি মেমোরির গ্রাফিক্স প্রসেসর (জিপিইউ) থাকে, তাহলে টুলটি প্রতি মিনিটে ৫০০টি পৃষ্ঠা স্ক্যান ও বিশ্লেষণ করতে পারে। (এই টুলের কোড সবার জন্য উন্মুক্ত, তবে গোপনীয়তার কারণে মডেলটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।)

টুলটি যখন কোনো পাসপোর্টকে শনাক্ত করে এবং মেশিন রিডেবল জোন থেকে তথ্যগুলো পড়ে, তখন সেই ফলাফল প্রফেসিস নামের একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্মে পাঠানো হয়। এরপর দলের সদস্যরা তা যাচাই ও ঠিক করতে পারেন। দেখানোর জন্য এখানে নমুনা নথি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: আইসিআইজে
টুলটি যখন কোনো পাসপোর্ট শনাক্ত করে, তখন ফলাফলগুলো প্রফেসিস নামক আইসিআইজের ওপেন সোর্স ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্মে পাঠানো হয়। আইসিআইজের ডেটা টিম তা পর্যালোচনা করে এবং প্রয়োজন হলে ঠিক করে। যেহেতু মডেলটির নির্ভুলতার হার খুব বেশি, তাই শনাক্ত হওয়া বেশিরভাগ ছবিই মূলত থাকে সত্যিকারের পাসপোর্ট স্ক্যানের কপি। ফলে যাচাই-বাছাইয়ের কাজও সহজ হয়ে যায়। যাচাইয়ের পর ডেটা দল ডেটাশেয়ারে এসব নথিকে ‘পাসপোর্ট আছে’ বলে ট্যাগ করে দেয় যেন রিপোর্টাররা সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এখন পর্যন্ত আমরা এই টুল দিয়ে ডেটাশেয়ারে কয়েক লক্ষ নথির পৃষ্ঠা বিশ্লেষণ করেছি। এতে পাসপোর্ট খুঁজে বের করাটা যেমন সহজ ও দ্রুত হয়েছে, তেমনি পুরো প্রক্রিয়াটি আরও নিয়মিতভাবে করা যাচ্ছে। আমরা এখন এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভাবছি, যেখানে এই টুল দিয়ে পাওয়া পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নথিগুলোর সঙ্গে প্রকৃত ব্যক্তিদের পরিচয় মিলিয়ে দেখা যাবে।
উদাহরণ হিসেবে চলমান একটি অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করছি। আইসিআইজের ডেটা টিম ১,১০,০০০-এর বেশি নথির মধ্যে থেকে প্রায় ৫০০টি পাসপোর্ট স্ক্যান সঠিকভাবে শনাক্ত করে। প্রথমে ডেটাশেয়ার ব্যবহার করে ছবি আছে এমন নথিগুলো আলাদা করা হয়, যেগুলোর সংখ্যা ছিল ৭৫,০০০। এরপর সেই নথিগুলোতে পাসপোর্ট খোঁজার জন্য টুলটি ব্যবহার করা হয়। এটি প্রায় ১,০০০টি ছবিকে পাসপোর্ট হিসেবে শনাক্ত করে।
তিনজন ভিন্ন ভিন্ন সাংবাদিক প্রফেসিস ব্যবহার করে প্রতিটি শনাক্তকরণ ফলাফল কয়েক ধাপে যাচাই করেন, যাতে যথাযথ ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
একই ধরনের বা একাধিকবার এসেছে এমন পাসপোর্ট পৃষ্ঠাগুলোকে বাদ এবং শুধু যেসব পৃষ্ঠায় দেশের তথ্য ছিল সেগুলো রেখে, শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি পাসপোর্ট এবং তাদের ইস্যুকৃত দেশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ১১০,০০০ এর বেশি নথি বিশ্লেষণের কাজ কমিয়ে মাত্র ৩,০০০টি নির্দিষ্ট নথি পর্যালোচনার জন্য বাছাই করতে সমর্থ হয়েছে দলটি। পাসপোর্ট শনাক্তকরণের কাজ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে করার ফলে অনেক সময় বেঁচেছে। ফলে তথ্য যাচাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ডেটা সাংবাদিকরা অনেক বেশি সময় পেয়েছেন।
“বিশাল সংখ্যক নথি থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য পাসপোর্ট খুঁজে বের করার দ্রুত উপায় এই পাসপোর্ট শনাক্তকরণ টুলটি,” বলেন আর্মেন্ডারিজ।
তিনি আরো জানান, “অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকেরা এভাবে জনস্বার্থে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করতে পারেন। আর যেখানে যেখানে আরো খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন, সেই অংশগুলো আলাদা করতে পারেন।”
এখন পর্যন্ত, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার কারণে এই টুলের মডেলটি শুধুমাত্র আইসিআইজের কর্মী, সদস্য ও অংশীদারদের জন্য সীমাবদ্ধ। তবে আমরা বিশ্বাস করি এটি অন্যান্য সাংবাদিকদেরও কাজে আসতে পারে। আমরা বর্তমানে মডেল প্রশিক্ষণের পদ্ধতি ভাগ করে নেওয়া এবং বিস্তারিত প্রকাশের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছি, যাতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের নিজস্ব ডেটা ব্যবহার করে নিজস্ব মডেল তৈরি করতে পারে।
কীভাবে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়?
তথ্য অনুসন্ধানের জন্য পাসপোর্ট অত্যন্ত শক্তিশালী উৎস। একই সঙ্গে ভীষণ সংবেদনশীল এবং অবশ্যই গোপনীয়। আমাদের সোর্স এবং তাদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য আমরা গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তাকে সবসময় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি—যেমনটি আমরা সবসময় ফাঁস হওয়া তথ্যের ক্ষেত্রে করি।প্রকল্পের উন্নয়নকালে বা টুল ব্যবহারের সময় কোনো ডেটা আমাদের নেটওয়ার্ক বা সার্ভার সিস্টেমের বাইরে যায়নি। আমরা কোনো তৃতীয় পক্ষের ওপরও নির্ভর করি নি। আমাদের অবকাঠামোর নিরাপত্তা বিভিন্ন স্তম্ভের ওপর নির্ভর করে। যার মধ্যে আছে প্রযুক্তিগত সমাধান এবং ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণ। এই প্রকল্পে কাজ করা আইসিআইজের কর্মী সদস্য বা অংশীদাররা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য চুক্তিবদ্ধ।
কেননা, মেশিন লার্নিং মডেলগুলো আক্রমনের (মেম্বারশিপ ইনফারেন্স অ্যাটাক) শিকার হতে পারে। এজন্য আমরা মডেলের ওজন (weights) প্রকাশ থেকেও বিরত থেকেছি। কারণ এ তথ্যটি আক্রমণকারীদের সাহায্য করতে পারে। তারা বের করে ফেলতে পারেন যে, মডেলটিকে কোন ধরনের পাসপোর্ট দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে।
মানুষকে সম্পৃক্ত করেই মেশিন লার্নিং
পাসপোর্ট শনাক্তকরণ টুলটি তৈরি করার সময় দেখা গেছে, মেশিন লার্নিংয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা থাকলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। গবেষকদের সঙ্গে সহযোগিতা আধুনিক মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির বাস্তবায়নে অত্যন্ত ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।
আমরা আমাদের অংশীদারদের সহায়তার জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে — এবং অন্যান্য একাডেমিক অংশীদারদের সঙ্গেও — নতুন প্রকল্পে কাজ করছি, যেখানে ডেটা সাংবাদিকদের দক্ষতাকে এই ক্ষেত্রের সর্বশেষ অগ্রগতির সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করার পথ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
পাসপোর্ট শনাক্তকরণ টুল তৈরির অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে, মেশিন লার্নিংয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা থাকলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই আধুনিক মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির বাস্তবায়ন বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা তাদের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ। এরইমধ্যে তাদের (এবং অন্যান্য একাডেমিক অংশীদারদের) সঙ্গে নতুন প্রকল্পে কাজ শুরু করেছি। যেখানে ডেটা সাংবাদিকদের দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ের নতুন কিছু অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
ক্লেমেন্ট ডুমুরো আইসিআইজের মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার। আইসিআইজে’র সার্চ ইঞ্জিন ডেটাশেয়ারে মেশিন লার্নিং টুল ও অ্যালগরিদম যুক্ত করার কাজ করেন এবং অনুসন্ধানের সময় সাংবাদিকদের নথি বিশ্লেষণে সাহায্য করেন। তিনি একাডেমিক গবেষকদের সঙ্গেও কাজ করেন, যাতে আইসিআইজে মেশিন লার্নিংয়ের সর্বশেষ সংস্করণ থেকে লাভবান হতে পারে। আইসিআইজে যোগদানের আগে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স পড়েছেন। কলেকটিভ থিঙ্কিং ও সোনোসে মেশিন লার্নিং প্রকৌশলী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সেখানে তিনি মানুষের কথ্য ও লিখিত ভাষা বুঝতে সাহায্য করে এমন ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিংয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।