প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

সম্পাদকের বাছাই: ২০২০ সালে লাতিন আমেরিকার সেরা অনুসন্ধান 

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

স্ক্রিনশট: চ্যাভিজমো ইনকর্পোরেটেড

লাতিন আমেরিকার সাংবাদিকদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। খবর প্রকাশের কারণে প্রায়ই সরকার, অপরাধী সংগঠন ও বহুজাতিক কোম্পানির হুমকি সইতে হতে হয় তাদের। তবু  রিপোর্টার ও সম্পাদকরা, এই অঞ্চলে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতার চর্চা জারি রেখেছেন এবং তাদের অনুসন্ধান দিয়ে ক্ষমতাকে জবাবদিহি করে যাচ্ছেন।

২০২০ সালে লাতিন আমেরিকান সংবাদমাধ্যমে স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত কয়েকটি সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কথা থাকছে, এই লেখায়। তালিকাটি তৈরি করতে গিয়ে আমি এমন অনুসন্ধানে মনোযোগ দিয়েছি, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও নজরের আড়ালে রয়ে গেছে। যেমন: মেক্সিকোর নারীদের প্রতি সহিংসতা, অ্যামাজনে কোভিড-১৯-এর প্রভাব, এবং লাতিন আমেরিকার না-বলা অভিবাসীদের কাহিনী। 

প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ফরম্যাটে। পডকাস্ট থেকে শুরু করে কমিকস পর্যন্ত। এ থেকে বোঝা যায়: এই অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানে যেসব অনুসন্ধান তুলে ধরা হয়েছে, তা লাতিন আমেরিকাজুড়ে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রায়ই এসব প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী সব পদ্ধতি।

টক্সিক ফাইলস (পেরু)

ছবি কৃতজ্ঞতা: কনভোকা

এবছর, আমার দেখা অন্যতম সেরা অনুসন্ধানী কাজটি ছিল: পেরুর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংগঠন, কনভোকার ইন্টারঅ্যাকটিভ কমিক, এ চাইল্ড উইথ লেড ইন দেয়ার ব্লাড ক্যাননট এনডিউর কোয়ারেন্টিন। তাদের এই কাজের কেন্দ্রে ছিল চার বছর বয়সী ইয়োরান, যার রক্তে অনেক বেশি মাত্রার সীসা পাওয়া গেছে। ইয়োরানের মতো আরো অনেক শিশু ভারি শিল্পকারখানার দূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি তাদের দুর্দশা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তাদের গল্প নিয়েই টক্সিক ফাইলস সিরিজের প্রথম কমিকস। এটি তৈরিতে কাজ করেছেন কার্টুনিস্ট, ডেভেলপার, প্রতিবেদক ও সম্পাদকদের একটি দল। 

কাজটি ছিল ভারি ধাতুর বিষক্রিয়া নিয়ে একটি বড় অনুসন্ধানের অংশ। এজন্য  সাংবাদিকরা, চিকিৎসক ও ইয়োরানের মা-র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, রক্তপরীক্ষার কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন, এবং পেরুর রাজধানী লিমার ক্যালাও শিল্পাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার পেছনে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার ডেটাবেজও তৈরি করেছেন।

মারিসেলা এস্কোবেদোর তিন মৃত্যু (মেক্সিকো)

স্ক্রিনশট: নেটফ্লিক্স

এই অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে মেক্সিকান অধিকার-কর্মী মারিসেলা এস্কোবেদোর গল্প। নিজ কন্যা রুবির হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গিয়ে তিনি সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাকেও হত্যা করা হয়। এস্কোবেদোর ১৬ বছর বয়সী মেয়ে, রুবির লাশ পাওয়া গিয়েছিল সীমান্তবর্তী শহর কুইদাদ হুয়ারেজের একটি ময়লার ভাগাড়ে। রুবির সাবেক প্রেমিক, সার্জিও বারাজাকে প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল এই হত্যার দায়ে। কিন্তু “পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে” তিনি ছাড়া পেয়ে যান। এস্কোবেদোর জন্য, এই বিচার কার্যক্রম ছিল দুঃস্বপ্নের শুরু মাত্র। এরপর গোটা তথ্যচিত্রজুড়ে দেখা গেছে মেক্সিকোর বিচার ব্যবস্থায় জেঁকে বসা দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। 

তথ্যচিত্রের শিরোনামে বলা হয়েছে এস্কোবেদোর “তিন মৃত্যু”র কথা। প্রথমটি, তার মেয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয়টি হলো, যখন রুবির হত্যাকারীকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর তৃতীয় মৃত্যুটি ছিল তাঁর নিজের। মেয়ে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে তিনি নিজেও খুন হন। মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। কেউ এই ঘটনার জন্য শাস্তির মুখোমুখি হয়নি।

মা ও মেয়ে; দুই নারীর এই গল্প আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় দেশটিতেতে লৈঙ্গিক সহিংসতার শিকার হয়ে এভাবে প্রাণ হারিয়েছেন আরো অনেক নারী। এই তথ্যচিত্রে কাজ করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা যেভাবে পুরো বিষয়টি এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন, তাতেই এটি জায়গা করে নিয়েছে সেরার তালিকায়। এই অনুসন্ধান সাফল্যের সাথে বিভিন্ন ধরনের সূত্র ব্যবহার করেছে। আদালতের রেকর্ডিং থেকে শুরু করে এস্কোবেদোর ডায়রি এবং তাঁর নিজের করা কিছু ভিডিও; সবই ব্যবহার করা হয়েছে এই তথ্যচিত্র নির্মানে। কাছের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় এসব ভিডিও করেছিলেন এস্কোবেদো। 

নির্বাচনে সমর্থনের জন্য অপরাধী চক্রের সঙ্গে সমঝোতা (এল সালভাদর)

স্ক্রিনশট: এল ফারো টুইটার অ্যাকাউন্ট

গত সেপ্টেম্বরে, একটি অনুসন্ধানী প্রকাশ করে এল ফারো। তাতে কারাগারের ফাঁস হওয়া নথি দেখিয়ে বলা হয়: এল সালভাদরের কুখ্যাত অপরাধী চক্র, মারা সালভাট্রুচা বা এমএস-১৩-এর কারাবন্দী নেতাদের সঙ্গে গোপন সমঝোতা হয়েছে দেশটির সরকারের। 

এই অনুসন্ধানের তথ্যমতে, সমঝোতায় অপরাধী চক্রটি হত্যাকাণ্ড কমাতে রাজি হয়, আর নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে কারাগারে তাদের সুযোগসুবিধা বাড়ানোর আশ্বাস দেয়া হয়। এই অনুসন্ধানটি পরবর্তীতে উঠে আসে নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি ও ইনসাইট ক্রাইমের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

অবশ্য এধরনের কোনো সমঝোতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে। কিন্তু এর মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শক্তি দেখিয়েছে এল ফারো, যা প্রেসিডেন্ট প্যালেসেও সোরগোল তুলেছে। এল ফারো লাতিন আমেরিকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম। 

আমরা মিলিয়নিয়ার (ডোমিনিকান রিপাবলিক)

স্ক্রিনশট: রেডিও অ্যাম্বুলান্তে

ডোমিনিকান রিপাবলিকে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া একটি প্রতারণার গল্প শুনিয়েছে এনপিআর-এর রেডিও অ্যাম্বুলান্তে। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল হাজারো মানুষ। গল্পটি শুরু হয়, বিলিয়ন ডলারের উত্তরাধিকার খোঁজ করার মাধ্যমে। বলা হয়: এই অর্থের দাবিদার নাকি ৩০ হাজার ডোমিনিকান, যাদের নামের শেষ অংশ: রোজারিও। এই টাকা “স্পেনের ব্যাংকে” রাখা আছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবও ছড়ানো হয়; এবং প্রচুর মানুষ তা বিশ্বাস করেন। এই টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক “রোজারিও”র কাছ থেকে অর্থও নিয়েছেন আইনজীবীরা। বছরের পর বছর ধরে, এই আইনজীবীরা তাদের বলে গেছেন: দ্রুতই তারা টাকা পাবেন। শেষপর্যন্ত সাংবাদিক, আনিবেলকা রোজারিও একে মিথ্যা প্রমাণ করেন। 

লাতিন আমেরিকার এমন অনেক গল্প স্প্যানিশ ভাষায় তুলে ধরে রেডিও অ্যাম্বুলান্তে। সংবাদপত্রের দীর্ঘ প্রতিবেদনের ফরম্যাটকে তারা তুলে এনেছে পডকাস্টে। যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রেডিও প্রযোজক, সাংবাদিক, ইলাস্ট্রেটরদের সঙ্গে কাজ করে সংবাদমাধ্যমটি। 

মহামারিতে জাতিগত বৈষম্য (কলম্বিয়া)

স্ক্রিনশট: এল ক্লিপ

বিজ্ঞানী ও সাংবাদিকরা একজোট হয়ে কাজ করলে কী হতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই প্রতিবেদন। বিভিন্ন ডেটা ও ম্যাপ ব্যবহার করে তাঁরা দেখিয়েছেন কোভিড-১৯ চিকিৎসায় বৈষম্য। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, লাতিন আমেরিকান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (স্প্যানিশ ভাষায়, সংক্ষেপে ক্লিপ)। লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে, সাংবাদিকতায় উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা সুনাম কুড়িয়েছে।

গবেষকদের একটি দলের জোটবদ্ধ কাজের মধ্য দিয়ে, কলম্বিয়ার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ফাঁক-ফোকর তুলে এনেছে এই অনুসন্ধান। তাঁরা দেখিয়েছেন: কোভিড-১৯ মহামারি গোটা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হলেও, এটি আরো গুরুতর হয়ে উঠেছে অ্যামাজন ও প্যাসিফিকে। সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। ম্যাপ ব্যবহার করে আরো দেখানো হয়েছে: কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এই কমিউনিটির মানুষ আইসিইউ সহায়তা পেতে কত রকম সমস্যায় পড়েন।  

ফিনসেন ফাইলস (আর্জেন্টিনা)

স্ক্রিনশট: ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস

দ্য ফিনসেন ফাইলস — ফাঁস হওয়া বিপুল পরিমাণ নথির এই ভাণ্ডার থেকে উন্মোচিত হয়েছে, কিভাবে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো অপরাধী ও অন্যান্যদের সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনে সাহায্য করেছে। ফাঁস হওয়া নথিগুলো তৈরি করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য। কিন্তু শেষপর্যন্ত এটি হয়ে ওঠে সাংবাদিকদের একটি বৈশ্বিক অনুসন্ধান। ৮৮টি দেশ থেকে ৪০০-রও বেশি সাংবাদিক যুক্ত হন এই প্রকল্পে। এ নিয়ে আর্জেন্টিনায় যে অনুসন্ধান হয়েছে, তা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। কয়েকটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে দেশটিতে চলমান দুর্নীতির চিত্র। একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ এক ফুটবল তারকার কথা। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত একটি কোম্পানির মাধ্যমে তিনি লেনদেন করেছেন ১০ লাখেরও বেশি ডলার। এই প্রক্রিয়ায় তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সন্দেহ। আর্জেন্টাইন জার্নালিজম ফোরামে (এফওপিইএ), এবছর সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পুরস্কার জিতেছে ফিনসেন ফাইলস আর্জেন্টিনা।  

ফাঁস হয়ে যাওয়া এই নথি প্রথম পেয়েছিল বাজফিড নিউজ। পরবর্তীতে তারা একজোট হয়ে কাজ করেছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস-এর সাথে। আর্জেন্টিনা কেন্দ্রিক অনুসন্ধানগুলোও হয়েছে একটি যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে, যেখানে একজোট হন ইনফোবি, লা ন্যাসিওন ও পেরফিলের সাংবাদিকরা।    

চ্যাভিজমো ইনকর্পোরেটেড (ভেনেজুয়েলা)

স্ক্রিনশট: চ্যাভিজমো ইনকর্পোরেটেড

ভেনেজুয়েলার দুর্নীতি নিয়ে যৌথ অনুসন্ধানের ফসল এই প্রতিবেদনগুলো। এখান থেকে উন্মোচিত হয়েছে: ক্ষমতাসীন দলের সাথে সুসম্পর্কের জোরে, কিভাবে অন্যায় সুবিধা ভোগ করছে ব্যবসায়ীদের একটি নেটওয়ার্ক। এই প্রকল্পে কাজ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ভেনেজুয়েলা, আলিয়াঞ্জা রেবেল্ডে ইনভেস্টিগা (এআরআই), ও লাতিন আমেরিকার অলাভজনক সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম, কানেকটাস। 

চাভিজমো ইনকর্পোরেটেড নামের এই অনুসন্ধানটির কেন্দ্রে আছে একটি ডেটাবেজ, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে উঠে এসেছে ডোমিনিকান রিপাবলিক, ভেনেজুয়েলা, পানামা, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে থাকা ভেনেজুয়েলানদের নাম। নিকোলাস মাদুরো সরকারের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে তারা বিশেষ সুযোগসুবিধা ভোগ করতেন। সোশ্যালিস্ট হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর দেশটির শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন মাদুরো। 

পানি দিয়ে শোষণ (মেক্সিকো) 

স্ক্রিনশট: মেক্সিকানস এগেইন্সট করাপশন অ্যান্ড ইমপিউনিটি

মেক্সিকোতে পানি একটি মূল্যবান সম্পদ, যার নিয়ন্ত্রণ প্রভাবশালী ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। মেক্সিকানস এগেইন্সট করাপশন অ্যান্ড ইমপিউনিটি-র একটি দল এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে তুলে এনেছে, খনিজ উত্তোলন কোম্পানিগুলোর কারণে দেশটির সাধারণ মানুষ কিভাবে পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; কোনো জায়গায় খরার মধ্যেও রাজনীতিবিদরা পানি নিয়ে যাচ্ছেন তাদের খামারে; আবার কোথাও, প্রভাব খাটিয়ে মূল্যবান পানির যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন অভিজাতরা। 

এই কাজটি ২০২০ সালে লাতিন আমেরিকান প্রাইজ ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, কোলপিন অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। বিচারকরা কাজটির প্রশংসা করেছেন, উন্মুক্ত নথি থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে গল্প বলায় পারদর্শিতার জন্য। 

লাতিন আমেরিকার না বলা অভিবাসীদের গল্প (আঞ্চলিক)

স্ক্রিনশট: এল ক্লিপ

লাতিন আমেরিকায় এশীয় ও আফ্রিকান অভিবাসী ও শরণার্থীদের এই গল্প তুলে আনতে একজোট হয়েছিলেন ২৪টি সংবাদমাধ্যমের প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক। এসব অভিবাসী ও শরণার্থীদের অনেকেই উত্তর আমেরিকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেন বাসে, নৌকায়, বিমানে বা পায়ে হেঁটে। 

তাদের এই যাত্রাপথে বিভিন্ন দেশের সরকার ও অপরাধী চক্রগুলো কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তার বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে এই অনুসন্ধানে। যাত্রাপথের যে জায়গাগুলোতে শরণার্থীরা বেশি মারা যান, সেগুলোও সনাক্ত করেছেন সাংবাদিকরা। দেখিয়েছেন: ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতি কিভাবে মানবপাচার চক্রগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে। 

সংকটে স্বর্গ: লাতিন আমেরিকায় অবৈধ মাছ ধরা (আঞ্চলিক)

স্ক্রিনশট: মোঙ্গাবে

কলম্বিয়ার কুয়েশ্চন পুবলিকা, ইকুয়েডরের এল ইউনিভার্সো এবং চিলির সিপারের সাথে জোট বেঁধে লাতিন আমেরিকায় অবৈধভাবে মাছ ধরার বিষয়টি অনুসন্ধান করেছে জনপ্রিয় পরিবেশবিষয়ক সাইট, মোঙ্গাবে। এই অনুসন্ধানে সাংবাদিকরা দেখিয়েছেন: অবৈধভাবে মাছ ধরার পেছনে আছে দুর্নীতি, সরকারের দুর্বলতা ও তহবিলের অভাব। 

যেখানে অবৈধ মাছ ধরাসহ সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখা গেছে, সেই জায়গাগুলো পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করেছেন সাংবাদিকরা। সেই তথ্য, তাঁরা মিলিয়ে দেখেছেন অন্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে। সনাক্ত করেছেন: কোন জাহাজ বা নৌকাগুলোর অবৈধভাবে মাছ ধরার ইতিহাস আছে এবং কোন কোম্পানিগুলো তাদের পেছনে আছে। সাংবাদিকরা দেখেছেন: কাগজে-কলমে অনেক জায়গাই সংরক্ষিত এবং ভালো অবস্থায় আছে বলা হলেও, বাস্তবে সরকারের দিক থেকে আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি প্রয়োজন।  

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন কোলপিন, ফোপিয়া, ও মারিয়া মুরস ক্যাবট প্রাইজ বিজয়ী ও মনোনিতদের কাজ। 

লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ৩০ নভেম্বর। সেখানে আমরা ফিনসেন নথিপত্র ফাঁসের ক্রেডিট দিয়েছিলাম আইসিআইজে-কে। কিন্তু সেগুলো আসলে পেয়েছিল বাজফিড। ৩ ডিসেম্বর, এই বিষয়টি পরিবর্তন করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন

পেরুতে সীসার বিষক্রিয়া যেভাবে উন্মোচিত হলো কমিক সিরিজে

অভিবাসীদের না-বলা গল্প যেভাবে উঠে এলো মহাদেশজোড়া অনুসন্ধানে

এ গ্লোবাল ট্যুর অব টপ ইনভেস্টিগেটিভ পডকাস্টস: দ্য ২০২০ এডিশন


আন্দ্রেয়া আরজাবা একজন সাংবাদিক ও জিআইজেএন স্প্যানিশ ভাষার সম্পাদক। রিপোর্টার ও গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে, আন্দ্রেয়া নিবেদিতভাবে কাজ করছেন লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লাতিন কমিউনিটির জীবনযাত্রা নিয়ে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ওমেনস মিডিয়া ফাউন্ডেশনের ফেলো। কাজ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ইয়ং জার্নালিস্টস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবেও।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত ৮টি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে। যেখানে উঠে এসেছে ভুয়া লেখক-বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্য; টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল; বিদেশে রাজনীতিবিদের সম্পদের খোঁজ— এমন নানা বিষয়।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

যে বার্তাকক্ষ ‘চাঁদ ছুঁতে’ চেয়েছিল: বাজফিড নিউজের অনুসন্ধানী দলের উত্থান-পতন নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান

বাজফিড নিউজের অনুসন্ধানী দল পৌঁছাতে চেয়েছিল সাফল্যের চূড়ায়। অল্প সময়ের মধ্যে বড় বড় সব অনুসন্ধান পরিচালনা করে তারা সেই সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল। কিন্তু ডিজিটাল জগতের গতিবিধি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বাজফিড নিউজের কার্যক্রম। এই লেখায় অনুসন্ধানী দলটির কর্মকাণ্ড এবং উত্থান-পতনের গল্প বলেছেন টম ওয়ারেন।

পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

আপনার পরবর্তী অনুসন্ধানকে গেমিফাই করবেন যেভাবে

একজন উবার ড্রাইভার বা শরণার্থীর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন পড়লে আপনি হয়তো সে সম্পর্কে শুধু জানতেই পারবেন। কিন্তু প্রতিবেদনটি যদি কোনো গেমের মতো করে সাজানো হয়, যেখানে আপনাকে খেলতে হবে সেই ড্রাইভার বা শরণার্থীর ভূমিকায়? তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই তাদের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। পাঠক-দর্শককে এভাবে স্টোরির সঙ্গে একাত্ম করে তোলার জন্য অনেক নিউজরুম তাদের অনুসন্ধানকে দিয়েছে গেমের আদল। পড়ুন, এ সংক্রান্ত কিছু কেস স্টাডি ও পরামর্শ।

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ফেসবুক, টুইটার ও টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি অনুসন্ধান নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বললেন

গত এক দশকে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্রুতগতির বিবর্তন সমাজের ওপর সুদূরপ্রসারী ও গুরুতর প্রভাব বিস্তার করেছে। এসব প্রভাব নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অবশ্যই কোম্পানিগুলোর জটিল ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বুঝতে হবে এবং প্রতিবেদনের অভিনব অ্যাঙ্গেল নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। ২০২৩ ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিজম ফেস্টিভ্যালের একটি আলোচনায় এমনটাই বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পড়ুন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে অনুসন্ধানের এমন কিছু ভাবনা।