প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

সম্পাদকের বাছাই: ২০২০ সালে ফরাসি ভাষার সেরা অনুসন্ধান

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

স্ক্রিনশট: ডিসক্লোজ

আইভরি কোস্ট থেকে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স থেকে তিউনিসিয়া; এমন নানা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র উঠে এসেছে, ফরাসি ভাষায় ২০২০ সালের বাছাই করা সেরা অনুসন্ধানে। এসেছে, এসব উন্মোচনে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই প্রতিবেদনগুলোর অর্ধেকই করেছেন তরুন ও স্বাধীন সাংবাদিকরা। তাই এখানে সাংবাদিকতার বিবর্তনের একটি চিত্রও পাওয়া যাবে। এদের মধ্যে কয়েকটি অনুসন্ধান পরিচালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক কোলাবরেশন, বা সহযোগিতার মাধ্যমে। কিছু হয়েছে রিসার্চ নেটওয়ার্ক বা অনুদানের টাকায়। এসব কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ‍ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের কৌশল, ডেটা সাংবাদিকতা ও তথ্য অধিকার আইন।

শেষপর্যন্ত, এসব প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছে: আফ্রিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যকার পুরনো যোগসূত্র; যা সেই উপনিবেশের সময় থেকে টিকে আছে। পড়ুন: জিআইজেএনের ফরাসি ভাষা সম্পাদক মার্থে হুবিও এবং ফরাসিভাষী আফ্রিকা সম্পাদক ম্যাক্সিম ডোমেগনি-র বাছাই করা বছর-সেরা প্রতিবেদনের খবর।

পশ্চিম আফ্রিকায় কোকেইন চোরাচালান (ভাইস)

আইভরি কোস্টের রাজধানী আবিজান। ছবি কৃতজ্ঞতা: পিডিএ, উইকিমিডিয়া কমনস

গত জুনে, ভাইসের একটি প্রতিবেদন গোটা আইভরি কোস্টে তোলপাড় ফেলে দেয়। তাতে বলা হয়: দেশটির তৎকালিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামেদ বাকায়োকো (পরবর্তীতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন) একটি বিশাল কোকেন চোরাচালান নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। মানি ট্রেইল প্রজেক্টের সহযোগিতায় পরিচালিত এই অনুসন্ধানে, আইভরি কোস্টের এই রাজনীতিবিদকে বর্ণনা করা হয়েছে “কোকেন চোরাচালানের কেন্দ্রীয় চরিত্র” হিসেবে। প্রতিবেদনটিতে, পাঠকদের উদ্দেশে লেখা হয়েছিল, “যে কোকেন আপনার এতো পছন্দ, সেটি শুধু আপনার নাকেই না, পশ্চিম আফ্রিকাতেও বিপর্যয় ডেকে আনছে।” নির্বাচনের বছরে, এই অভিযোগটি পুরো অঞ্চলজুড়ে তোলপাড় ফেলে দেয়। বাকায়োকো সব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, এই অভিযোগ “আমার নীতি-নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায় এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এমনটি করা হয়েছে।” তিনি প্রতিবেদনের প্রকাশক ও রিপোর্টারের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিয়েছেন

আরটিএস, দারিয়াস রোচেবিন এবং নীরবতার নীতি (লে টেম্পস)

ইলাস্ট্রেশন: সেসিলা বোজ্জোলি। কৃতজ্ঞতা: লে টেম্পস

সুইস পাবলিক ব্রডকাস্টারে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করার জন্য তিন সাংবাদিক, সেলিয়া হেরন, সিলভিয়া রিভেলো, ও বরিস বাসলিংয়ার-কে দায়িত্ব দিয়েছিল দৈনিক লে টেম্পস। বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করে তাঁরা সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় ৩০টি জবানবন্দি। গভীর এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে রেডিও টেলিভিশন সুইস (আরটিএস)-এর ভেতরে বেশ কয়েকটি যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা উন্মোচিত হয়। নিপীড়নের শিকার হওয়া একজন বলেছেন, “আমি আমার উর্ধ্বতনদের বিষয়টির ব্যাপারে সজাগ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কেউই আমার কথা শুনতে চাননি। নিপীড়নকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের “উচ্চপদে থাকার কারণে রক্ষা পেয়েছেন” বলেও জানান তিনি। নিপীড়নকারী হিসেবে যাদের নাম এসেছে, একজন ছাড়া তাদের সবার পরিচয়ই গোপন রাখা হয় প্রতিবেদনে। যার নাম প্রকাশ করা হয়, তিনি দারিয়াস রোচেবিন। এই ব্যক্তি আরটিএসের সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন ২০ বছর ধরে। গত আগস্টে যোগ দিয়েছেন ফরাসি চ্যানেল এলসিআই-এ। রোচেবিন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। তবে লে টেম্পস-এর এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর, আরটিএস-এর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনা করেছে সুইস ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (এসবিসি) এবং দুজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।

আফ্রিকার দেশে দেশে বেলজিয়ান কোম্পানির ঘুষ (মালিনা)

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢোকার পথ, যেখানে নাগরিকদের আবেদন করতে হয় পাসপোর্টের জন্য। ছবি: এডওয়ার্ড মেইন্টাঙ্কলি ও ওসিসিআরপি

মাদাগাস্কার ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক, মালিনা (স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ: সজাগ থাকা) গত সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়: দেশটির নাগরিকদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরির কাজ পেতে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বেলজিয়ামের কোম্পানি, সেমলেক্স। অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) সহযোগিতায় পরিচালিত এই অনুসন্ধানে আরো দাবি করা হয়: জাম্বিয়া এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতেও একই ধরনের ঘুষ লেনদেনের ঘটনা দেখা গেছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরে আরেকটি পৃথক যৌথ অনুসন্ধান প্রকাশ করে ওসিসিআরপিজেন্যু আফ্রিক। সেখানে অভিযোগ করা হয়: কোম্পানিটি আরেকটি চুক্তি সাক্ষর করেছে এমন এক প্রতিষ্ঠানের সাথে, “যার মালিক দুই কুখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ী,” এবং তারা আইভরি কোস্টের গৃহযুদ্ধের সময় সাবেক প্রেসিডেন্টের বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। সেমলেক্স কোনো প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এর আগে তারা অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছিল। তাদের ভাষায়: “তারা মিথ্যা, মানহানিকর প্রচারণার শিকার।”

ফরাসি পুলিশের মিথ্যাচার, আগ্রাসী ভূমিকা ও বর্ণবাদী আচরণ (লুপসিডার)

স্ক্রিনশট: লুপসিডার

ফ্রান্সে পুলিশি সহিংসতা, বর্ণবাদ ও বিচারহীনতা নিয়ে বেশ কিছু অনুসন্ধান হয়েছে ২০২০ সালে। এগুলো প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি বিচারবিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। তবে ফরাসি সংবাদমাধ্যম, লুপসিডারে প্রকাশিত হওয়া ডেভিড পেরোটিনের অনুসন্ধানটি ছিল সবচে আকর্ষণীয়। এটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছে ফরাসি সমাজে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রতিবেশীদের করা ভিডিও কাজে লাগিয়ে সেখানে দেখানো হয়: কিভাবে একজন কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত প্রযোজককে তার নিজের স্টুডিওতে হেনস্তা ও অপমান করেছেন তিন শেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা। প্রতিবেদনটিতে আরো দেখানো হয়েছে: কিভাবে সেই পুলিশ কর্মকর্তারা মিথ্যা একটি রিপোর্ট বানান এবং আত্মরক্ষার স্বার্থে সহিংস আচরণ করেছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু পেরোটিনের উন্মোচন করা চিত্রের সাথে তা সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। প্রতিবেদনটি এমন এক সময় প্রকাশিত হয়, যখন  ফ্রান্সে নতুন একটি নিরাপত্তা আইনের (যেখানে পুলিশের আচরণ ক্যামেরাবন্দী করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আনা হয়েছে) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এটি প্রকাশের পর ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলোতে তোলপাড় শুরু হয়। ২৪ ঘন্টায় এটি দুই কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে।

ফরাসি ভাষা-ভাষী আফ্রিকার ফিনসেন ফাইলস (সেনোজো)

পশ্চিম আফ্রিকায় ফিনসেন ফাইলস সংক্রান্ত কাভারেজের জন্য আইসিআইজে-র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে সেনোজো। ছবি কৃতজ্ঞতা: সেনোজো/আইসিআইজে

গত সেপ্টেম্বরে, গোটা বিশ্বের গণমাধ্যম যে বড় আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের খবর প্রচার করেছে, তা হলো ফিনসেন ফাইলস। বাদ যায়নি আফ্রিকান দেশগুলোও। দ্য নরবার্ট জোঙ্গো সেল ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ইন ওয়েস্ট আফ্রিকা বা সেনোজো, যুক্ত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ও প্রায় ৯০টি দেশের সাংবাদিকের সাথে। এই জোটে ২০টি দেশই ছিল আফ্রিকার। সাংবাদিকদের সংখ্যার বিচারে, এতো বড় আকারের জোটবদ্ধতার চিত্র আগে দেখা যায়নি আফ্রিকা মহাদেশে। এই অনুসন্ধান থেকে উন্মোচিত হয়: কিভাবে অপরাধী, রাজনীতিবিদ ও অন্যরা গোপনে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি অনুসন্ধান ছিল ফরাসিভাষী আফ্রিকান দেশগুলো নিয়ে। ক্যামেরুন, নাইজার, বেনিন, টোগো, বুরকিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট ও সেনেগালের প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে স্বর্ণ চোরাচালান, অস্ত্র চুক্তিসহ নানান সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের চিত্র। সব কিছু দেখতে পাওয়া যাবে সেনোজো-র ওয়েবসাইটে

খেলার জগতে পেডোফিলিয়া (ডিসক্লোজ)

স্ক্রিনশট: ডিসক্লোজ

অলাভজনক অনুসন্ধানী নিউজরুম, ডিসক্লোজের জন্য এই অনুসন্ধান করেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ম্যাথিউ মার্টিনিয়ে (Mathieu Martinière) ও ডাফনি গ্যাস্টালডি। এখানে তাঁরা তলিয়ে দেখেছেন ফরাসি ক্রীড়াজগতে যৌন সহিংসতার অভিযোগ। ১৯৭০-এর দশক থেকে, স্থানীয় সংবাদপত্রের খবর তল্লাশির মাধ্যমে, তারা এমন ৭৭টি ঘটনা পেয়েছিলেন, যেগুলো নিয়ে তদন্ত হয়েছে। ২৮টি ভিন্ন ভিন্ন খেলায়, এমন যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৭৬ জন। ঘটনার সময় যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ছিল ১৫ বছরের কম। এখানে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে, সাংবাদিকরা নজর দিয়েছিলেন এটি মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার দিকে। তারা দেখিয়েছেন: অপেশাদার ক্লাবগুলোতে, শিশু নির্যাতনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষক কাজ চালিয়ে যান। তাদের কোনো রকমের যাচাই-বাছাইয়ের মুখে পড়তে হয় না। একইভাবে কোচরাও অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার অভিযোগ থাকলেও। ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রকাশিত হওয়া এই প্রতিবেদন পুরো বিশ্বের ক্রীড়াজগতে আলোড়ন তুলেছে। এটি প্রকাশের কয়েকদিন পরেই এমন যৌন সহিংসতার শিকার হওয়াদের স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করেছে ফরাসি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত, ৮০টি ভিন্ন ভিন্ন খেলার সঙ্গে জড়িত ৩১৩ জনের বিরুদ্ধে উঠেছে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ।

লে সোয়া’র নেথিস অনুসন্ধানের নেপথ্যে (লে ভিফ)

স্ক্রিনশট: লে সোয়া’র

বেলজিয়ামের ওলোনিয়া অঞ্চল ২০১৬ সাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে আছে নেথিস-কাণ্ড নিয়ে। সেসময় অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড লেলুপ উন্মোচন করেছিলেন: কিভাবে লিজ শহরের ইন্টারমিউনিসিপাল কোম্পানি, পাবলিফিন-এর প্রতিনিধিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে সন্দেহজনক সব চাকরি। সাপ্তাহিক লে ভিফ-এ এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নাট্যমঞ্চ। সম্প্রতি, ২০১৯ সালে লে সোয়া’র সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে আরো কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য: তিনটি সহপ্রতিষ্ঠানকে গোপনে বিক্রি করে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্যবস্থাপকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করাসহ আরো অনেক কিছু। এগুলো জিতেছিল বেলফিয়াস পুরস্কার। এই ঘটনাপর্বের যে বিষয়টি আমাদের ২০২০ সালের সেরায় জায়গা করে নিয়েছে, তা হলো লে সোয়া প্রযোজিত একটি পডকাস্ট। যেখানে সাংবাদিক জেভিয়ের কুনাস, বিয়েট্রিস ডেলভো, অ্যালান জেনোট, ও জোয়েল ম্যাট্রিশ কথা বলেছেন তাদের অনুসন্ধানের পেছনের গল্পগুলো নিয়ে। শ্রোতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে এই বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে নানা নাটকীয় মোড় নিয়েছে।

রুয়ান্ডা গণহত্যার সন্দেহভাজনকে যেভাবে খুঁজে বের করা হলো ফ্রান্সে (মিডিয়াপার্ট)

ছবি কৃতজ্ঞতা: থিও এঙ্গেলবার্ট

প্যারিস থেকে ঘন্টাখানেক দুরত্বের শহরতলী, অরলিঁও-তে এক মানুষের সন্ধান পাওয়ার জন্য আট মাস ধরে অনুসন্ধান করেছেন ফরাসি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক থিও এঙ্গেলবার্ট। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তিনি জানতে পারেন: ২০১৫ সালে কেসটি বন্ধ হওয়ার আগে, অ্যালোয়েস নিউইরাগাবো নামের সেই ব্যক্তি ছিলেন রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধী ট্রাইব্যুনালের (আইসিটিআর) অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার সময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন নিউইরাগাবো। তিনি ছিলেন সশস্ত্র গ্রুপ, ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অব রুয়ান্ডা (এফডিএলআর)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ৯৪ সালের গণহত্যার পেছনেও তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ আছে, যেখানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। লুকিয়ে থাকা এই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য, থিও এঙ্গেলবার্ট ব্যবহার করেছেন ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের পদ্ধতি, প্রথাগত উপায়ের নজরদারির কৌশল ও তথ্য অধিকার আইন। জুলাইয়ে, তার প্রতিবেদনটি মিডিয়াপার্টে প্রকাশিত হওয়ার পর, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্সের কাউন্টার টেরোরিজম প্রসিকিউটর। রুয়ান্ডার কর্তৃপক্ষও আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নিউইরাগাবোর জন্য।

তিউনিসিয়ায় বেন আলির পরে এলো বিচারহীনতা (ইনকিফাদা)

সাবেক স্বৈরশাসক জিন এল আবদিন বেন আলির ক্ষমতাচূত হওয়ার প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও, এখনো উন্মোচিত হচ্ছে: তার শাসনামলে কী পরিমাণ অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। ছবি: রে_লাক, ফ্লিকার

২০১১ সালে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিউনিসিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক জিন এল আবদিন বেন আলি। তবে, তার শাসনামলে কী কী দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে; সেসব তথ্য এখনো নতুন করে সামনে আসছে। গত জানুয়ারিতে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, ইনকিফাদা দেখিয়েছে: কিভাবে ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে জাতীয় বিমানসংস্থাকে ঘিরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেন হয়েছিল, যার সুবিধাভোগী হয়েছেন প্রেসিডেন্টের পরিবারের সদস্যরা। এই অনুসন্ধান অনুযায়ী, পুরো কোম্পানিটিই চালানো হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের মর্জি অনুযায়ী; তা সে বেন আলির কোনো আত্মীয়র কাছে শেয়ার বিক্রিই হোক, বা প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন বিমান কেনার সিদ্ধান্তই হোক। এই সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনগুলোর সময় থেকে, কোম্পানিটি বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতি ও আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছে। তবে এজন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও মনে হয় না। কারণ স্বৈরশাসনের অবসানের পর একটি তথাকথিত রিকনসিলিয়েশন আইন পাশ করা হয়েছিল তিউনিসিয়ায় – যে কারণে এসব মামলা ধামাচাপা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

আরো পড়ুন:

রুয়ান্ডায় গণহত্যা, ফ্রান্সে আত্মগোপন ও পিছে লেগে থাকা এক সাংবাদিক

যৌন সহিংসতা যাদের হাত ধরে হয়ে উঠেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নতুন ধারা

মুক্ত সাংবাদিকতার তিউনিসিয় মডেল ইনকিফাদা

হাও দে ডিড ইট: এক্সপোজিং পুলিশ ভায়োলেন্স এগেইন্সট দ্য ইয়েলো ভেস্টস


মার্থে হুবিও জিআইজেএনের ফরাসি ভাষা সম্পাদক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। ডেটা সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেনআর্জেন্টিনার লা নাসিওন পত্রিকায়। স্লেট, এল মুন্দো, লিবারেশন, লা ফিগারো এবং মিডিয়াপার্টে লিখেছেন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। তিনি ডেটা সাংবাদিকতার প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করে থাকেন।

ম্যাক্সিম ডোমেগনি জিআইজেএন আফ্রিক-এর সম্পাদক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। কাজ করেছেন সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন হিরোন্ডেলে, ডাচ সংগঠন আরএনডব্লিউ মিডিয়া ও বিবিসিতে। ম্যাক্সিম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সংগঠন সেনোজো, এআইপিসি ও আইসিআইজে-র সদস্য। তিনি থাকেন সেনেগালে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

কেস স্টাডি পদ্ধতি সংবাদ ও বিশ্লেষণ

প্রশ্নোত্তর: ওসিসিআরপির চেক প্রতিবেদক পাভলা হলকোভা 

সংঘবদ্ধ অপরাধ, সরকারী দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করার কারণে প্রায়ই হুমকির মুখে পড়েন চেক রিপাবলিকের অনুসন্ধানী সাংবাদিক পাভলা হলকোভা। তা সত্ত্বেও তিনি চালিয়ে গেছেন এসব অনুসন্ধান। এবং জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তাঁর অনুপ্রেরণা, চ্যালেঞ্জ, ও শিক্ষার কথা। পাশাপাশি নতুন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্যও দিয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা

স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রধান অস্ত্র ডিজিটাল হামলা

ডিজিটালাইজেশনের ফলে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো এখন আরও বেশি পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে এটি অনেক চ্যালেঞ্জ ও দূর্বলতাও তৈরি করেছে এসব স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য। কারণ প্রায়ই তাদের কণ্ঠরোধের জন্য প্রয়োগ করা হয় নানাবিধ ডিজিটাল হামলার কৌশল। অনেক ক্ষেত্রেই যেসব হামলার নেতৃত্বে থাকে বিভিন্ন দেশের সরকার। সংবাদমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল পরিবেশ নিয়ে এমন কিছু উদ্বেগজনক প্রবণতার কথা উঠে এসেছে এই লেখায়।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে সাংবাদিকতার টিপস

দাসপ্রথা নিছক অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো বিষয় নয়। দাসত্ব, জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচার এখন শুধু চর্চাই হচ্ছে না, এটি খুব লাভজনক অপরাধও বটে। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের জন্যও এটি হয়ে উঠেছে একটি গুরুতর বিষয়। জিআইজেসি২১-এর একটি সেশনে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করেছেন পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞরা। যেখানে উঠে এসেছে এ সংক্রান্ত কাজের কেস স্টাডি ও পরামর্শ।

Pegasus Project image

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

পেগাসাস প্রজেক্ট থেকে শিক্ষা: শিকারি স্পাইওয়্যার নিয়ে রিপোর্ট করবেন যেভাবে

বিশ্বজুড়ে সাইবার নজরদারি ক্রমেই বাড়ছে। নিজের অজান্তেই হাতে থাকা ফোনটি হয়ে যাচ্ছে নজরদারির যন্ত্র। এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে পেগাসাস প্রজেক্টের মাধ্যমে। ১৬টি সংবাদমাধ্যমের ৮০ জন সাংবাদিক ৬ মাস ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বের করেছেন: কিভাবে পেগাসাস স্পাইওয়্যার হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা। এই লেখায় পাবেন এই অনুসন্ধানের পেছনের গল্প এবং এ ধরনের নজরদারি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের পরামর্শ।