

রিপোর্টারের এআই নিয়ে গল্প থাকে: তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি সম্পর্কে বলেছেন এই সাংবাদিক
সম্পাদকের নোট: মালয়েশিয়াতে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স শুরুর আগে, জিআইজেএন বৈশ্বিক বক্তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। এই বক্তাদের পাশাপাশি এবারের আসরে যোগ দেবেন তিনশ’র বেশি শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক ও সম্পাদক—অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধান পদ্ধতি সম্পর্কে বলবেন।
ক্যারেন হাও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক, যিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রভাব ও সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে কাজ করেন। তার লেখা “এম্পায়ার অব এআই: ইনসাইড দ্য রেকলেস রেস ফর টোটাল ডমিনেশন” বইটি বহুল বিক্রিত। হংকং ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সাংবাদিক প্রথম ওপেনএআই সম্পর্কে প্রতিবেদন করেছেন। বর্তমানে তিনি পুলিৎজার সেন্টারের এআই স্পটলাইট সিরিজ পরিচালনা করছেন- যেখানে সাংবাদিকদের এআই রিপোর্টিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ক্যারেন হাও আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদক এবং এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ-এর এআই বিষয়ক জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও অপব্যবহার নিয়ে তার লেখা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো দ্য আটলান্টিকসহ শীর্ষস্থানীয় অনেক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
চলতি বছর মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের (জিআইজেসি২৫) বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ক্যারেন হাও তার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধানী কৌশলগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।
জিআইজেএন: আপনি বা আপনার দল যেসব অনুসন্ধান করেছেন, তার মধ্যে কোনটি আপনার সব থেকে প্রিয় এবং কেন?
ক্যারেন হাও: আমার বই “এম্পায়ার অব এআই”-এর জন্য করা অনুসন্ধানটি আমার সব থেকে প্রিয়। বইটি ওপেনএআইয়ের ভেতরের কথা বলে। পাশাপাশি সামাজিক, পারিপার্শ্বিক ও শ্রমের ওপর এটির ব্যাপক মাত্রার প্রভাবের গল্প তুলে ধরে। এখানে আমি চিলির বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী ও পরিবেশ কর্মীদের নিয়ে রিপোর্ট করেছি। সিলিকন ভ্যালির এআই ডেটা সেন্টার বানানোর সীমাহীন ক্ষুধার বিপরীতে এই মানুষগুলো তাদের জমি, খনিজ সম্পদ ও পানি রক্ষার জন্য লড়াই করেছে। আন্দোলনকারীদের অবিশ্বাস্য সাহস আর মনোবল যেমন আমাকে মুগ্ধ করেছে, তেমনি এখানে অনুপ্রাণিত হওয়ার আরো অসংখ্য কারণ আছে। যেমন, আমার অসাধারণ রিপোর্টিং সঙ্গী মুরিয়েল আলারকন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার জন্যও এ প্রতিবেদনটি আমার বিশেষ প্রিয়। তিনি চিলির ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ান। আমরা একসঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছি, সূত্র খুঁজেছি, আর চলার পথে দারুণ সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছি।
জিআইজেএন: আপনার দেশ বা অঞ্চলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী?
কেএইচ: অন্যান্য অনেক অঞ্চলের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও গণমাধ্যম এখন অস্বাভাবিক আর্থিক চাপের মুখোমুখি। ফলে বার্তাকক্ষগুলো গভীর অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে, যাদের দায়বদ্ধ করা দরকার তারা ক্রমশ ধনী আর ক্ষমতাবান হচ্ছে। আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি প্রযুক্তি খাত নিয়ে অনুসন্ধান করার সময় দেখেছি—অনেক সহকর্মী সাংবাদিকতা ছেড়ে প্রযুক্তি কোম্পানির যোগাযোগ দলে যোগ দিয়েছেন। এর মানে হলো, আমাদের মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আরও বেশি সৃজনশীল হতে হবে—যাতে সীমিত সম্পদ দিয়েও বেশি কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানে কী ধরনের রিপোর্টিং টুলস, ডেটাবেস বা কৌশল আপনাকে অপ্রত্যাশিতভাবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে?
কেএইচ: আমি লিঙ্কডইন, সিগনাল আর স্প্রেডশিট খুব বেশি ব্যবহার করি। প্রতিটি অনুসন্ধানের জন্য আমি গুগল শিটে একটি ট্র্যাকার তৈরি করি। সেখানে সব সূত্র, তাদের অবস্থা—যেমন, আমি কি যোগাযোগ করেছি? তারা কি সাড়া দিয়েছে? সাক্ষাৎকার শেষ হয়েছে? — এসব লিখি। সাক্ষাৎকারের নোট রাখি, আর কখনো কখনো চুক্তির বিষয়ও (যেমন, তারা অফ দ্য রেকর্ড কথা বলছে নাকি অন ব্যাকগ্রাউন্ডে)।

ছবি: স্ক্রিনশর্ট
জিআইজেএন: আপনার সহকর্মী বা সাংবাদিক সম্মেলন থেকে পাওয়া সেরা পরামর্শ কী? আর নতুন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
কেএইচ: কখনোই ধরে নেবেন না যে কেউ-ই কথা বলবে না। আপনি যদি যোগাযোগই না করেন, তবে নিশ্চিতভাবেই কেউ কথা বলবে না। কিন্তু যোগাযোগ করলে সবসময় একটা না একটা সম্ভাবনা থাকে। কেউ না কেউ সাড়া দেয়।
জিআইজেএন: আপনার অঞ্চলে কোন বিষয়গুলো আড়ালে থেকে যাচ্ছে বা প্রতিবেদনে কম উঠে আসছে? এর মধ্যে কোনগুলো নতুন অনুসন্ধানের জন্য উপযুক্ত?
কেএইচ: প্রত্যেক রিপোর্টারের কাছেই তার অঞ্চল বা তার বিটে এআই নিয়ে বলার মতো একটি গল্প আছে। এআই শিল্প বৈশ্বিক ও বহুমাত্রিক; এটি পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। অনেকটা নেতিবাচক ও ক্ষতিকরভাবে। জরুরিভিত্তিতে এর ওপর আলো ফেলা উচিৎ। আপনি যদি জানতে চান কোথা থেকে শুরু করবেন, তার উত্তরে বলবো, আমি পুলিৎজার সেন্টারের সঙ্গে মিলে এআই স্পটলাইট সিরিজ নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছি। যেখানে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের জন্য এআই রিপোর্টিং নিয়ে প্রাথমিক কোর্স রয়েছে। জিআইজেসি২৫-এ আমি একটি সেশনও নেবো এর ওপর। এছাড়া চলতি বছরের শেষ দিকে আমাদের পুরো কারিকুলামটি (পাঠক্রম) বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানে নেমে মারাত্মক কোনো ভুল করে বসেছেন কিংবা বড় কোনো আক্ষেপের ঘটনা আছে? সেখান থেকে কী শিখেছেন?
কেএইচ: ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি ঠিকমতো “নো সারপ্রাইজেস” ইমেইল (যেখানে সাংবাদিক আগে থেকে তার প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে) কীভাবে করতে হয়, বুঝতাম না। এটি নির্ভর করে আপনার মিডিয়ার পরিবেশের ওপর। এই ইমেইলগুলো কখনও প্রয়োজন হতে পারে আবার নাও হতে পারে। কিন্তু যেখানে প্রয়োজন, সেখানে এটি পাঠানো সবসময়ই ভালো এবং যতটা সম্ভব বিস্তারিত হওয়া উচিত। এটি আপনার রিপোর্টিংকে শক্তিশালী করে এবং জটিল সোর্স ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের গ্লোবাল রিপোর্টার এবং ইমপ্যাক্ট এডিটর। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিশ্বজুড়ে দুই ডজনেরও বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাত নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার বিভিন্ন বার্তাকক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।