

পডকাস্টে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, শুরু করার আগে নিন ৬ পরামর্শ
পডকাস্টে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সংখ্যাটা তুলনামূলক কম। তবে গভীরতাধর্মী রিপোর্টিং আর শ্রুতিমধুর গল্প বলার কৌশলের মিশেলে তৈরি অনুসন্ধানী পডকাস্ট ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
প্রতি বছর বিশ্বের সেরা অনুসন্ধানী পডকাস্টের একটা তালিকা করে জিআইজেএন। যেখানে পডকাস্টের নতুন নতুন উদ্ভাবনী বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যেমন পডকাস্টে ভিডিও যুক্ত করা কিংবা রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে তুলে আনা। অনেক অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম শ্রুতিনির্ভর গল্প বলার মাধ্যমে নতুন শ্রোতাদের টানতে পারছে। তবে শুরুটা একটু কঠিন হতে পারে—বিশেষ করে জটিল রিপোর্টিং আর ডেটাকে আকর্ষণীয় অডিওরূপে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে।
এ বছর বেলজিয়ামের মেখেলেনে অনুষ্ঠিত ডেটাহারভেস্ট সম্মেলনে দুইজন সাংবাদিক পডকাস্ট বিষয়ক নিজেদের অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন। এদের একজন পিওতর নেস্টেরোভিচ—তিনি পোল্যান্ডের অনুসন্ধানী ম্যাগাজিন পিসমোর পডকাস্ট অনুষ্ঠান পিসমো ইনভেস্টিগেশনের প্রযোজক। অন্যজন রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো। তিনি পর্তুগালের পডকাস্ট স্টুডিও ফুমাসার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই সেশনে তারা তাদের আকর্ষণীয় ও গভীর অনুসন্ধানী অডিও কনটেন্ট তৈরির অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। ‘বাইওয়ার্ডঅবমাউথ: প্রোডিউসিংইনভেস্টিগেটিভপডকাস্টস’ নামের এ সেশনে আলোচনা করেন কীভাবে তারা অনুসন্ধানী পডকাস্টের বিষয়বস্তু বেছে নেন, শ্রোতাদের আগ্রহ ধরে রাখেন, আর কী ধরনের ব্যবসায়িক মডেল তাদের সফল হতে সাহায্য করেছে।
যারা পডকাস্ট শুরু করতে আগ্রহী তাদের জন্য আলোচনা থেকে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরেছে জিআইজেএন।
১. ‘ধারাবাহিকতা’ নিয়ে ভাবুন—সিরিজ না একক পর্ব, আগে ঠিক করুন
পডকাস্ট এমন একটি মাধ্যম, যেখানে বিস্তারিতভাবে গল্প বলা যায়। যেখানে সময় বা দৈর্ঘ্য নিয়ে তেমন কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ২০১৯ সালে পিসমো যখন তাদের প্রথম অনুসন্ধানী পডকাস্টটি তৈরি করে, পোল্যান্ডের সাংবাদিকতার পরিমন্ডলে তখন তা ছিল একেবারেই নতুন কিছু। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে একটি বড় গল্প এক পর্বে না বলে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে বলবে। সেই সিদ্ধান্তই তাদের জন্য সাফল্য বয়ে এনেছে। এরপর আর তাদের পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পিসমো ইনভেস্টিগেশনের পঞ্চম সিজন প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের এপ্রিলে। এই সিজনে ৫০ থেকে ৬০ মিনিট ব্যাপ্তির ছয়টি পর্বে একজন তরুণীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার নানান দিক তুলে ধরা হয়। একজন অনুসরণকারীর (স্টকার) দ্বারা তরুণীটি বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। এই পর্বগুলোতে দেখানো হয়: স্টকাররা কীভাবে নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে মানসিক চাপ তৈরি করে, ভুক্তভোগীরা কতটা অসহায় ও হতাশ বোধ করেন এবং পোল্যান্ডের আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এমন ঘটনার বিচার পাওয়াটাই বা কতটা কঠিন।

২০১৯ সালে যাত্রার পর থেকে নানা কঠিন ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করেছে পোলিশ অনুসন্ধানী পডকাস্ট পিসমো । ছবি: পিসমোর সৌজন্যে
পিসমো ইনভেস্টিগেশন-এর প্রযোজক পিওতর নেস্টেরোভিচ বলেন, “ বিশ্বের হাজার হাজার পডকাস্টের ভিড়ে এই অনুসন্ধানী সিরিজগুলো আমাদের আলাদা করে তুলেছে। এর পেছনে অনেক সময় আর শ্রম দিতে হয়। তাই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের পক্ষে এটা করা কঠিন। আর বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তো এ কাজে তেমন আগ্রহই থাকে না।”
পিসমো মূলত একটি ছাপা ম্যাগাজিন হিসেবে শুরু করে। উচ্চমানের ও গভীরতাধর্মী সাংবাদিকতার জন্য পরিচিতি পায়। এখন তারা প্রতিবছর সর্বোচ্চ তিনটি পডকাস্ট সিজন তৈরি করে। যেখানে জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়—যেমন অভিভাবকদের দ্বারা শিশু অপহরণ বা চিকিৎসক পেশাজীবীদের ক্ষমতার অপব্যবহার। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, সবগুলো সিজনের মোট পর্ব প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার শ্রোতার কাছে পৌঁছেছে।
অপ্রত্যাশিত একটি শ্রোতাগোষ্ঠীর কাছেও তাদের পডকাস্ট পৌঁছেছে বলে জানান নেস্টেরোভিচ। তিনি বলেন, “দ্য প্রেস অ্যান্ড নিউজ অ্যাভয়ডারস—অর্থাৎ সংবাদ এড়িয়ে চলা মানুষদের মধ্যে আমরা জনপ্রিয়তা পেয়েছি। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ, নারী এবং নিম্ন-আয়ের মানুষ। যারা মনে করেন প্রচলিত সংবাদমাধ্যম ‘তাদের মতো মানুষের জন্য নয়’।”
লিসবন-ভিত্তিক ফুমাসা শুরু থেকেই অডিওকে কেন্দ্র করে কাজ করেছে। তাদের শুরুটা ২০১৬ সালে। সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো মজার ছলে বলেন, “আমাদের টিমে দুজন সদস্য সংগীতশিল্পী ছিলেন, তাই অডিও প্রোডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগে থেকেই আমাদের কাছে ছিল।” ফুমাসা মূলত অন্যায় ও বৈষম্য নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চালায়। তারা জটিল বিষয় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করে। যেমন পুলিশের সহিংসতা নিয়ে সাক্ষ্য আহ্বান করে অনলাইনে প্রচার চালানো এবং শত শত মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া। যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি দিনের পর দিন চলেছে। এই ধরনের কাজের জন্য তারা বরাবরই সিরিজ পডকাস্টকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।
২. বিনোদন বা কল্পকাহিনির গল্প বলার কৌশলগুলো কাজে লাগান
কল্পকাহিনি বা নাটক এবং বিনোদনের মাধ্যমগুলোতে গল্প বলার যেসব কৌশল ব্যবহার করা হয়, অনুসন্ধানী পডকাস্টে তা ব্যবহার করতে মোটেও পিছপা হবেন না।
পিওতর নেস্টেরোভিচ বলেন, “গবেষণা আর অনুসন্ধানের অংশগুলো গুরুত্বপূর্ণ—কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে আপনি তো জানেনই কাজগুলো কীভাবে করতে হয়। আসল পার্থক্যটা হচ্ছে গল্প বলার ধরনে।”
বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করেন। বলেন, আপনার অনুসন্ধান ও তথ্য ঠিক থাকলেই আপনি বিনোদন ধারার কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই। “ক্লিফহ্যাঙ্গার ঘটনার মোড় পরিবর্তন— এ ধরনের কথা আমরা সবসময় ব্যবহার করি। গল্প বলার পেছনে অনেক সময় দিই। প্রতিবেদনগুলো তথ্যভিত্তিক, তবে আপনি শ্রোতাকে আকৃষ্ট করতে নানা কৌশল ব্যবহার করতেই পারেন,” যোগ করেন তিনি।
অবশ্যই, সবকিছুর শুরু হতে হবে একটি সঠিক গল্প দিয়ে। পিওতর নেস্টেরোভিচ বলেন, “অনেক কিছু আছে যা আপনি অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে পারবেন, কিন্তু সেগুলো সবসময় অনুসন্ধানী পডকাস্ট ফরম্যাটে বলা সম্ভব হয় না।” পিসমো শুরু থেকেই তাদের ছাপা ও অডিও সংস্করণ আলাদা রেখেছে। তারা কোন গল্পকে পডকাস্টে রূপ দিবে তা বাছাইয়ের মূল মানদণ্ড হচ্ছে—ওই গল্পে কোনো নায়ক আছে কিনা? অনেক সময় গল্প যিনি বলছেন, ওই সাংবাদিকই নায়ক হয়ে ওঠেন।
রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরোও মনে করেন গল্পের ভিত গড়তে ন্যারেটিভ থ্রেড বা ধারাবাহিক গল্প বলার ধরন গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “ধরুন, আপনি কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঘটনাটা ধাপে ধাপে বলুন—যেমন ‘আমরা এখানে গিয়েছিলাম, কিছু পাইনি… তারপর ওখানে গিয়েও পেলাম না।’… যদি আপনি পুরো প্রক্রিয়াটা খোলাখুলিভাবে বলেন, তাহলে শ্রোতারা আপনার প্রতি বেশি আস্থা রাখবে এবং গল্পের শেষ পর্যন্ত আপনার সঙ্গে থাকবে।”
“ফ্রন্টেইরা দো মেডো” (বর্ডার অব ফিয়ার)—ফুমাসার আসন্ন পডকাস্ট সিরিজ। এতে বিচ্ছিন্ন ও দরিদ্র এলাকাগুলোতে পুলিশি নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের ওপর অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। যা অনেকটা বাস্তবের অপরাধমূলক (ট্রু ক্রাইম) ঘটনার ওপর তৈরি পডকাস্টের মতো। শুরুটা একটি হত্যার গল্প দিয়ে। রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো বলেন, “ট্রু ক্রাইম পডকাস্ট আর এমন পডকাস্টের পার্থক্য হলো—অনুসন্ধানের গভীরতা।”
শ্রোতাদের প্রথম পর্বেই বলা হয়, “এটি একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্প, যেখানে সেই রাতের ঘটনার গল্প বলা হলেও তা স্রেফ একটা রাতের গল্পের চেয়ে অনেক বড় হয়ে ওঠে।”
১৪টি পর্ব রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য এক ঘণ্টারও বেশি। ফুমাসার লক্ষ্য ছিল পর্তুগালের শহুরে সংবেদনশীল এলাকায় জাতিগত পুলিশি কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধান চালানো। এস্তেভেস রিবেইরো যোগ করেন, “আমরা এতটাই নিষ্ঠাবান ছিলাম যে, এই কাজ করতে আমাদের ছয় বছরের মতো সময় লেগেছে।”
প্রতিটি পর্বে গল্প বলার ধরন একই রকম নয়—প্রথম পর্বে একটি ঘটনার দুইটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ দেখানো হয়: একদিকে সাধারণ মানুষের কথা, আর অন্যদিকে পুলিশের বক্তব্য। আরেকটি পর্বে রয়েছে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা। আবার অন্য কোনো পর্ব শুধুমাত্র একটি অডিও আর্কাইভের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

ফুমাসার নতুন পডকাস্ট ফ্রন্টেইরা দে মেডো অনুসন্ধান চালিয়েছে বিচ্ছিন্ন ও দরিদ্র এলাকায় পুলিশি নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে। ছবি: ফুমাসার স্ক্রিনশট
৩. রেকর্ডার চালু রাখুন
রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো পরামর্শ দেন যতটা সম্ভব রেকর্ডার চালু রাখার। তিনি বলেন, “আপনি দরজায় কড়া নাড়ার সময়ও রেকর্ড করুন। হয়তো সেটা ব্যবহার করবেন না, কিন্তু ভবিষ্যতে লাগতে পারে।” কোনো সাক্ষাৎকারের জন্য শুরু থেকেই রেকর্ডিং করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পিওতর নেস্টেরোভিচও এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে বলেন, “শুরু থেকে রেকর্ড করলে এমন আবেগ ধরা পড়ে যা পরে আর ধরা সম্ভব হয় না।”
অডিও উপকরণ সংগ্রহের জন্য রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো একটি দরকারি কৌশলের কথা বলেন। আর তা হচ্ছে ভয়েস মেসেজ ব্যবহার। তিনি বলেন, “প্রতিদিনই সোর্সদের কাছে গিয়ে তাদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়। তবে তাদের কিন্তু প্রতিদিন একটি করে ভয়েস মেসেজ পাঠাতে বলা যায়।”
তিনি জানান, একটি গল্পের জন্য তিনি লিবিয়া থেকে গ্রিসে মেডিটেরেনিয়ান সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা এক দম্পতির কাছ থেকে শত শত ভয়েস মেসেজ সংগ্রহ করেছেন।
তাঁর পরামর্শ, আপনার সহকর্মীদের সঙ্গেও একই কৌশল ব্যবহার করুন: “যেমন, আপনি আদালতে কোনো কাগজপত্র যাচাই করতে গেছেন। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে, যা দেখেছেন এবং যে তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা আপনার সহকর্মীকে একটি ভয়েস মেসেজ করে পাঠিয়ে রাখুন… হয়তো আপনি সেটি ব্যবহার করবেন, হয়তো করবেন না, কিন্তু সেটা আপনার কাছে থাকবে।”
৪. গল্পকে নতুন ও আকর্ষণীয় করুন
অনুসন্ধানী পডকাস্টের একাধিক পর্ব তৈরি করলে গল্পটি বিস্তারিত ও গভীরভাবে বলা সম্ভব হয়। তবে পিওতর নেস্টেরোভিচ সতর্ক করে বলেন, গভীর রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে গল্পকে শ্রোতাদের জন্য সহজ ও বোধ্য রাখাটাও জরুরি। তিনি বলেন, “মনে রাখবেন, অনেক সময় মানুষ এক পর্ব শোনার পর পরের পর্ব শোনেন। এক বসায় সব পর্ব শোনার সুযোগ নাও পেতে পারেন। তাই গল্পে যদি অনেক নাম এবং তথ্য থাকে, তাহলে শ্রোতারা বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাই গল্পকে অতিরিক্ত জটিল করে তুলবেন না।” তিনি নিজে সব সময় এমন একজনের মতামত নেন, যিনি ওই গল্প সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানেন না। তিনি এ কাজটি করেন যেন নতুন চোখ দিয়ে গল্পটি দেখা ও সহজবোধ্য রাখা যায়।
৫. ব্যবসায়িক মডেল
পডকাস্ট অনুসন্ধান চালানোর আর্থিক বিভিন্ন মডেল থাকতে পারে। ডেটাহারভেস্ট প্যানেলিস্টরা তাদের অর্থায়নের পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেন।
পিসমোর জন্য একটি অনুসন্ধানী পডকাস্ট সিজন (৬ থেকে ৮ পর্ব) তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার ইউরো (২৩ হাজার মার্কিন ডলার)—এখানে কর্মীদের বেতন ধরা হয়নি। পিসমোর একটি পে ওয়াল আছে এবং একজন দাতার অর্থায়নে চলে। তারা পডকাস্টের প্রথম পর্বটি শ্রোতাদের ফ্রি শুনতে দেন। এরপর পিসমো অথবা তাদের প্রোডাকশন পার্টনার অডিওটেকা ক্লাবের সাবস্ক্রিপশন নিয়ে শুনতে হয়। পিসমোর সব কনটেন্টের মাসিক সাবস্ক্রিপশন খরচ ৯ দশমিক ৯৯ পোলিশ জিলোতি, যা প্রায় ২ দশমিক ৭১ মার্কিন ডলার।
১১ জনের একটি দলের জন্য ফুমাসা প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার ইউরো (২৯ হাজার মার্কিন ডলার) খরচ করে। তাদের বাজেটের অর্ধেক আসে সাবস্ক্রিপশন থেকে, বাকি অর্ধেক আসে তিনটি ফাউন্ডেশন থেকে। তাদের সব কনটেন্ট সবাই বিনামূল্যে দেখতে পায়।
৬. এগিয়ে যান!
পডকাস্টের মাধ্যমে গল্প বলার সময় শ্রোতাদের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়। রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো ও পিওতর নেস্টেরোভিচ দুইজনেই একমত প্রকাশ করে বলেন, গল্প বলার পাশাপাশি অডিও প্রোডাকশনের মান নিশ্চিতের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিসমো যদিও বাইরের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে, তবে ফুমাসার রয়েছে নিজস্ব স্টুডিও।
রিকার্দো এস্তেভেস রিবেইরো বলেন, “ভালো অডিও আর ভালো রেকর্ডিং থাকাটা সাধারণত ভালো।” কিন্তু তিনি ২০১৭ সালে ফুমাসার প্রথম পডকাস্ট, ছয় পর্বের ডকুমেন্টারি “প্যালেস্টিনা, হিস্তোরিয়াস দে উম পায়িস ওকুপাদো” অর্থাৎ “প্যালেস্টাইন, একটি দখলকৃত দেশের গল্প”—এর কথা বলেন। “আমরা সব কিছু ফোন দিয়েই রেকর্ড করেছিলাম… এবং দেশের সবচেয়ে বড় সাংবাদিকতা পুরস্কারও জিতে নিয়েছিলাম,” তিনি স্মরণ করেন।
এ প্রসঙ্গ তিনি আরও বলেন, “এখন কিন্তু আমি আর তেমনটা করব না… তাই আপনারা কেবল শুরুটা করে দেখুন। আপনি চাইলে স্টুডিও তৈরি করতে পারেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।”
আলসিওনে ওয়েমেয়ার একজন ফরাসি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি ২০১৯ সাল থেকে লিওন শহরে বসবাস করছেন। তিনি প্যারিসে ইউরোপ১ এবং ফ্রান্স২৪-এর সাবেক স্টাফ রিপোর্টার। জিআইজেএনের ফরাসি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি সায়েন্স পো লিওনে সহযোগী অধ্যাপক, যেখানে তিনি সিএফজের সঙ্গে যৌথভাবে ডেটা এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর মাস্টার্স ডিগ্রির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সেলসা থেকে স্নাতক করেছেন এবং ফ্রাঁসোয়া চালেই প্রাইজ বিজয়ী। তার কাজ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে—যেমন: লে মন্ডে, স্লেট , ইনফোমাইগ্রান্টস, লা ক্রনিক (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল), এল’অবস এবং লে তঁপ ।