প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Hong Kong protest for press freedom
Hong Kong protest for press freedom

Hongkongers protest for press freedom and against violence by riot police. Credit: Shutterstock.

লেখাপত্র

বিষয়

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকোচন করলে অর্থনীতির ক্ষতি হয়

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এবং পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে হংকংয়ের বিক্ষোভ। ছবি: শাটারস্টকগণতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই জানেন। কিন্তু কখনো ভেবেছেন, অর্থনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কেমন?

আমরা প্রমাণ পেয়েছি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত — যেমন সাংবাদিকদের কারাবন্দী করা, বাড়িতে হানা দেওয়া, ছাপাখানা বন্ধ করে দেওয়া, বা ভয় দেখানোর জন্য মানহানির মামলা করা — অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

আমাদের গবেষণা দলের সবাই অর্থনীতি, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম জগত থেকে আসা। আমরা ১৯৭২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৭টি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডেটা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রিডম হাউজের প্রেস ফ্রিডম র‌্যাঙ্কিং বিশ্লেষণ করেছি।

দেখতে পেয়েছি, যেসব দেশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করেছে, তাদের প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ কমে গেছে।

অর্থনীতির পুনরুদ্ধার না-ও হতে পারে 

অন্যান্য অর্থনৈতিক গবেষণার মত আমাদের ফলাফলেও দেখা গেছে, শক্তিশালী অর্থনৈতিক সূচকের সাথে “আইনের শাসন” বজায় রাখা প্রতিষ্ঠানের গভীর সম্পর্ক আছে । আমাদের গবেষণায় শিক্ষা, শ্রমশক্তি, ও ভৌত অবকাঠামোগত পুঁজিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সম্ভবত আমাদের সবচে গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রত্যাশিত আবিস্কার ছিল, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকোচনের সাথে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাবের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া।

ফ্রিডম হাউজের নিজস্ব গবেষণাতেই বলা হয়েছে, “সুযোগ দেওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদী দমনপীড়নের পরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা”:

সৎ ও তথ্য-নির্ভর সাংবাদিকতার মতো গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার মৌলিক আকাঙ্ক্ষাগুলো কখনোই পুরোপুরি দমিয়ে রাখা যায় না।

কিন্তু, এই ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারটি অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেখা যায় না। যেসব দেশে স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে এবং পরে আবার ফিরে এসেছে – সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আর আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যায়নি।

যখন অর্থনৈতিক হতাশার কারণে গণতন্ত্রের ওপর থেকে আস্থা উঠে যাচ্ছে, প্রথাগত সংবাদমাধ্যমের প্রতি অবিশ্বাস বাড়ছে, এবং সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে উন্মুখ জনতুষ্টিবাদী ও কর্তৃত্বপরায়ন সরকারের উত্থান ঘটছে – এমন এক সময়ের জন্য এই ফলাফল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এখন গোটা এশিয়াজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

হংকংয়ে, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য হুমকি হয়ে এসেছে নতুন নিরাপত্তা আইন। মিয়ানমারে বিভিন্ন প্রকাশনার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। মালয়েশিয়ায় সরকারের সমালোচনা করায় সাংবাদিকদের হয়রানি ও কারাবন্দী করা হয়েছে। ফিলিপাইনের শ্রদ্ধেয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক মারিয়া রেসাকে দুই বছরে ১০ বার বন্দী করা হয়েছে এবং বিতর্কিত আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে “সাইবার মানহানির” অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্বের সবচে বড় গণতন্ত্র ভারতে, মোদি সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করেছে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি হিসেব করেছে ফ্রিডম হাউজ। ছবি: ফ্রিডম হাউজ

এগুলো দূরের কোনও দেশের বিষয় নয়।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে, অস্ট্রেলিয়াকে তুলনামূলকভাবে অনেক মুক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু সেখানেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রণয়ন করা হয়েছে নিবর্তনমূলক জাতীয় নিরাপত্তা আইন এবং অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশকে দেখা গেছে সাংবাদিকদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিতে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড আর্ট অ্যালায়েন্স অভিহিত করেছে “সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ” বলে।

সীমাবদ্ধতা স্বীকারোক্তি

আমরা স্বীকার করছি যে, আমাদের গবেষণাটি একেবারে সামষ্টিক পর্যায় থেকে করা; এখানে শুধু বৃহত্তর পরিসংখ্যানের মধ্যে মিল খুঁজে দেখা হয়েছে এবং এমন অনেক সম্পর্কও পাওয়া গেছে যাদের মধ্যে ১ শতাংশ পর্যন্ত হেরফেরের সুযোগ আছে। এটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, সংস্কৃতি বা গণমাধ্যম মডেল ধরে করা চুলচেরা বিশ্লেষণগুলোর কোনও বিকল্প নয়।

আমরা এও স্বীকার করি যে, মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, ফ্রিডম হাউজ তাদের মধ্যে একটি মাত্র। এই সংগঠনটি ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বিচার করে ভোট প্রদানের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের সামনে সমতার মত যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এভাবেই তারা নির্ধারণ করে রাষ্ট্রীয় বা অ-রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড দিয়ে  ক্ষেত্রগুলো প্রভাবিত হচ্ছে কিনা।

কিন্তু, এটি সত্যিকার অর্থেই সাংবাদিকদের জন্য স্বাধীনভাবে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট রিপোর্টিং করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এবং এর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্পর্কও দেখানো যায়:

মুক্ত সংবাদমাধ্যম নাগরিকদের জানাতে পারে তাদের নেতারা কতটা সফল বা ব্যর্থ, মানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরতে পারে কর্তৃপক্ষের কাছে, এবং কাজ করতে পারে তথ্য ও ভাবনা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হলে, এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জায়গাটি ভেঙে পড়ে। ফলে নেয়া হতে থাকে দুর্বল সব সিদ্ধান্ত, যার পরিণতি ক্ষতি বয়ে আনে নেতৃত্ব ও নাগরিক – উভয়ের জন্য।

পরিসংখ্যান নিয়ে আরো অনেক কাজ করার আছে। কিন্তু আমাদের বিশ্লেষণ থেকে এই প্রমাণ শক্তভাবে পাওয়া গেছে যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং উন্নত শিক্ষা অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

হয়তো এই অনুপ্রেরণা থেকেই, অস্ট্রেলিয়াসহ আরো অনেক দেশের সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করবে। এবং জনস্বার্থমূলক সাংবাদিকতায় আরো বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে; ঠিক যেমনটি দিয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন ও স্পেশাল ব্রডকাস্টিং সার্ভিস।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় দ্য কনভারসেশনে। মূল লেখাটি পড়ুন এখানে

আরো পড়ুন

দ্য ২০ লিডিং ডিজিটাল প্রিডেটরস অব প্রেস ফ্রিডম অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড

ডকুমেন্ট অব দ্য ডে: ১০ ওয়েজ টু ট্র্যাক প্রেস ফ্রিডম ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক

জিআইজেএন রিসোর্স: ডেমোনস্ট্রেটিং ইনভেস্টিগেটিভ ইমপ্যাক্ট


অ্যালেক্সান্দ্রা ওয়েক মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার; আব্বাস ভালাদকানি, মেলবোর্নের সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনলজির অর্থনীতির অধ্যাপক; অ্যালান ন্যুয়েন আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির মিডিয়া অধ্যয়নের প্রভাষক; এবং জেরেমি ন্যুয়েন, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনলজির অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

আইনি সুরক্ষা ও জরুরি সহায়তা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বার্তাকক্ষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রিপোর্টার্স শিল্ড

অনেকটা শূন্য থেকেই গত বছর যাত্রা শুরু করা রিপোর্টার্স শিল্ড বিশ্বেজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর পাশে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অলাভজনক সংস্থাটি স্ট্র্যাটেজিক ল-স্যুটস অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পার্টিসিপেশন—সংক্ষেপে স্ল্যাপের (জনস্বার্থ বিরোধী কৌশলগত মামলা) বিপরীতে আর্থিক ও প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে থাকে। স্ল্যাপ মূলত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে নিরুৎসাহিত আর অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় ।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চীন-পন্থী প্রচারণা, গুপ্তচরবৃত্তির সরঞ্জাম, সবুজ বিভ্রম: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনলাইনে প্রচারণা, ভুয়া তথ্য, নারী অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর সাইবার হামলা, অবৈধভাবে খনন বা গাছ কাটা বিষয়ে পরিচালিত কয়েকটি অনুসন্ধান জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত ৮টি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে। যেখানে উঠে এসেছে ভুয়া লেখক-বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্য; টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল; বিদেশে রাজনীতিবিদের সম্পদের খোঁজ— এমন নানা বিষয়।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

ভারতের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: স্পাইওয়্যার বেচাকেনা, ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা দখলদারিত্ব ও বিষাক্ত কফ সিরাপ

নানাবিধ বাধাবিপত্তি ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ২০২৩ সালে ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, যেগুলো উন্মোচন করেছে ধোঁয়াশাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় চুক্তি, শ্রম পরিস্থিতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধ, সীমান্ত দ্বন্দ্বের মতো বিষয়।