নিজেকে সুরক্ষিত রেখে অনুসরণ করুন উগ্র ডানপন্থীদের গতিবিধি, রইলো কিছু পরামর্শ
উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বজুড়েই অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জন্য হুমকি তৈরি করছে, বিপরীতে দারুণ সব প্রতিবেদন তৈরির সুযোগও করে দিচ্ছে।
অন্য বিটের মতো এখানেও আপনি সাধারণ চিন্তা দিয়েই শুরু করতে পারেন। যেমন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অনুদান আসে কোথা থেকে? বা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ আছে কিনা? পুলিশ বা বিচারক কিংবা আইন প্রণেতা থেকে শুরু করে নব্য-নাৎসি সংগঠনগুলোর মধ্যে কী কোনো যোগসূত্র আছে?
এ বিটে কাজ করেন এমন কয়েকজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক বলেন যে, এ ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা সংগঠনের বিদ্বেষপূর্ণ মতাদর্শকে যথেষ্ট মজবুত মনে করেন না। ফলে গোপনে তারা কৌশলগত ভুল করে বসতে পারে। যেমন, অপরাধের প্রমাণ দ্রুত মুছতে গিয়ে গিয়ে বা ব্যক্তিগত অপমানের শিকার হয়ে হঠাৎ সহিংস কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। প্রতিবেদনে তাদের ভুলগুলো নিয়ে ঠাট্টা করার কারণেও আপনি তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারেন।
উগ্র চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর দিকে কীভাবে নজর রাখবেন এবং নিজেকে কীভাবে নিরাপদ রাখবেন তা নিয়ে ২০২৪ অনুসন্ধানী রিপোর্টার ও সম্পাদক সম্মেলনের একটি প্যানেলে অভিজ্ঞ সাংবাদিকেরা কথা বলেছেন। আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ডেমোক্রেসির অনুসন্ধানী গবেষক ডেভিড আরমিয়াক, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক জেসিকা গ্যারিসন, নর্থ কান্ট্রি পাবলিক রেডিওর রিপোর্টার এমিলি রাসেল এবং এসি থম্পসন। প্রোপাবলিকা ও পিবিএস ফ্রন্টলাইনে প্রকাশিত এসি থম্পসনের প্রতিবেদন রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করে। পাশাপাশি সহিংস শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের বিচার শুরু করতে বাধ্য করে।
অনলাইনে চরমপন্থীদের গতিবিধি অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ
উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হুমকির বিপরীতে, গ্যারিসন সাংবাদিকদের জন্য জরুরী কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন: তিনি বলেন, “এদের নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে, মাঝে মাঝে আমি সত্যিই ভয় পেয়েছি। আপনাকে কিন্তু ভয় মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে না। তাই ভয় পাচ্ছেন, এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।”
যদিও উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার আলোচনা শোনা, তাদের সম্পর্কে জানা এবং তাদের নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোঁজখবর রাখা,পডকাস্ট শোনা বা রাস্তা-ঘাটে তাদের সভা সমাবেশের দিকে চোখ রাখা ছাড়া তেমন বিকল্প নেই। এ কাজগুলো খুব একটা সুখকর নয়, তাছাড়া আপনার সময়ও নষ্ট করবে।
তবে একাধিক নিউজরুম মিলে পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ চালাতে পারে। ২০২৩ সালে ইউরোপের ডেথ ওয়েপনস প্রকল্পে যেমনটা দেখানো হয় যে, অনলাইন র্যাডিক্যালাইজেশন (অনলাইনের মাধ্য গোষ্ঠীগত বিদ্বেষ ছড়ানো) থেকে উগ্র ডানপন্থী সন্ত্রাস কীভাবে ছড়ানো হয়। এক্ষেত্রে জার্মানির পত্রিকা ভেয়ত আম জনটাগ, যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিকো এবং ইনসাইডার প্রায় বিভিন্ন মৌলবাদী গ্রুপের ৯৮ হাজার টেলিগ্রাম চ্যাট বিশ্লেষণ করে।
“গ্যাব ও টেলিগ্রামের মতো বিকল্প সামাজিক যোগাযোগ চ্যানেলে চরমপন্থী গোষ্ঠীদের আলোচনা বা পোস্ট অনুসরণ করতে পারেন— যদিও গোটা ব্যাপারটাই বাজে। তবে যতবারই আমি এখানে তাদের অনুসরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি, ততবারই কিন্তু অনুতপ্ত হয়েছি,” জানান থম্পসন।
অন্যান্য আলোচকেরাও নিজেদের একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন। ডানপন্থীদের ফেসবুক লাইভ স্ট্রীমগুলো শুনতে গিয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে রাসেলকে। এরপর স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে একটি তথ্য দেয়, এরপর তিনি গোটা বিষয়টা ধরতে পারেন। আরমিয়াক বলেন “আমার মনে আছে, রাতের বেলা চিপস চিবাতে চিবাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেলিগ্রাম চ্যানেল ঘেঁটে দেখার কথা।”
থম্পসন মনে করেন অল্প সময়ে ঘাম না ঝরিয়ে কার্যকরভাবে ওপেন মেজারস টুল ব্যবহার করে আপনি এ কাজটি সহজেই করতে পারেন। টুলটি যদিও খুব একটা পরিচিত নয়। এইটকুন (8kun), ব্লুস্কাই (Bluesky), বিটশূট (BitChute), অডিসি (Odyssey)-এর মতো ওপেন সোর্স টুলগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ বা কম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মসহ বিভিন্ন সাইট থেকে ডেটা টেনে আনার জন্য তৈরি। ( আলোচনার এক পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে কারা এ টুলগুলো ব্যবহার করেন তাদের হাত উঁচু করার অনুরোধ করেন থম্পসন। দেখা যায় প্রায় কেউই এ টুলগুলো ব্যবহার করেননি বা নাম পর্যন্ত জানেনা। বেশ অবাক হন তিনি।) তথ্য যাচাইয়ের জন্য থম্পসন অর্থ খরচ করে কেনা পাইরা (Pyrra) টুল ব্যবহার করেন বলে জানান। টুলটি ঘৃণাত্মক বক্তব্য ও সম্ভাব্য সহিংসতা ছড়ায় ”এমন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো” সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও অন্যান্য মূলধারার মিডিয়া বা গণমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ (ডেটা স্ক্র্যাপিং) করতে পারে ওপেন মেজারস টুল। একবার করে সবগুলো প্ল্যাটফর্মে চোখ বুলানোর জন্য এ টুলটি বেশ কার্যকর,” বলে তিনি ব্যাখ্যা করেন। “এটি ফোরচ্যান (4chan), টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অনেক কিছু সংগ্রহ করে। এছাড়া ওপেন মেজার টুলগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি পৃথক অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করতে পারেন, অথবা বারবার করে সার্চ করতে পারেন।”
এ টুলটি তৈরিতে সমর্থন দিয়েছে মজিলা ফাউন্ডেশন। ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সিক্রেটস (DDoSecrets)-এর মতো সাংবাদিকতার জোটগুলো এটি ব্যবহার করে। টুলটির হোমপেজে বলা হয়েছে: “ওপেন মেজারস সাংবাদিকদের সাহায্য করার জন্য তৈরি হয়েছে… চরমপন্থা এবং বিভ্রান্তির মতো ক্ষতিকারক অনলাইন কার্মকাণ্ডকে অনুসন্ধান করে। দুষ্টু রাষ্ট্র নেতা থেকে শুরু করে বিপজ্জনক অনলাইন ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে আসা হুমকি ও ষড়যন্ত্রের বিরোধিতা করছি আমরা, যা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে আসে।”
আরমিয়াক যোগ করেন: “যখন কেউ অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, তখন তারা হঠাৎ করেই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। এভাবে আপনি তাদের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্যগুলো হারিয়ে ফেলতে পেতে পারেন। তবে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে তারা কী বলেছে বা তাদের ভাষ্য কী ছিল তা যদি স্ক্র্যাপ করে রাখেন, ব্যবহারযোগ্য প্রমাণ হিসেবে তা কাজে লাগাতে পারবেন। বিভিন্ন ভিডিওসহ মিটিংয়ে কারা উপস্থিত ছিল সে তালিকা, অনুষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক কারা ছিল এ পোষ্টগুলো আপনার প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনের পরে তাদের সামাজিক মাধ্যম থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাই এই জিনিসগুলো আগেই সংরক্ষণ করুন।”
এ পর্যায়ে প্যানেলিস্টরা আরো কিছু কৌশলের কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে রয়েছে ফাঁস হওয়া নথি এবং কিউরেটেড ডেটাবেস যাচাই ও অনুসন্ধান। যেমন ২০২২ সালে, ডিডুসিক্রেটস হ্যাক করা একটি ডেটাবেস প্রকাশ করে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী সংগঠন ওথ কিপার্সের সদস্যদের মধ্যে এমন লোকেরাও ছিলেন যারা কিনা দেশটির সামরিক বাহিনীতে কাজ করতেন, সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যায়ের লোকও ছিলেন। আরমিয়াক সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চরমপন্থা নিয়ে কাজ করার মানে আপনার সাইবার আক্রমণের স্বীকার হওয়ার অতিরিক্ত ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া ‘ফাঁস’ হওয়া ডিজিটাল নথি ব্যবহারের সময়ও সাংবাদিকদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এগুলো সত্যিই সাংবাদিকদের কম্পিউটারে ভাইরাস সংক্রামিত করার জন্য নকশা করা হয়।
“ফাঁস হওয়া অনেক ফাইল আপনি পাবেন, তবে এর মধ্যে কোনো ভাইরাস আছে কিনা তা নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরী,” বলে সতর্ক করেন তিনি। (জিআইজিএন প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিনামূল্যের টুল ডেঞ্জারজোন পিডিএফ থেকে লুকানো ম্যালওয়্যার পরিষ্কার করে এবং আপলোড করা মূল নথিকে নিরাপদ ডিজিটাল পরিসরে সংরক্ষণ করে।)
জাঙ্কিপিডিয়া— অডিও হ্যাকের জন্য চমৎকার একটি ওপেন সোর্স টুল। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অডিও থেকে লিখিত প্রতিলিপি তৈরির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার পডকাস্টের মধ্যে থাকা উগ্রবাদী শব্দ খুঁজে দেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তথ্য খোঁজার জন্য ধর্মান্ধদের জগাখিচুড়ি মার্কা বক্তব্য শোনা থেকেও এ টুলটি আপনাকে রেহাই দিতে পারে। সাংবাদিকরাই সাংবাদিকদের জন্য টুলটি বানিয়েছেন। সীমিত হলেও যা বহুমুখী কাজ করতে পারে। এটি তৈরি করেছে অ্যালগরিদমিক ট্রান্সপারেন্সি ইনস্টিটিউট। এছাড়াও গেটার বা গ্যাবের মতো ডানপন্থী গোষ্ঠীর সদস্যদের পছন্দের সোস্যাল নেটওয়ার্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট খুঁজে বের করতে পারে। আপনি শুধু কয়েকটা অ্যাকাউন্ট নির্বাচন করে দিবেন।
আরমিয়াক উল্লেখ করেন যে, আশ্চর্যজনক হলেও অপরিচিতদের জন্য গোষ্ঠীগুলো তাদের মিটিং আর আমন্ত্রণপত্রগুলো উন্মুক্ত রাখে— এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হলে তথ্যগুলো মুছে ফেলে।
তিনি বলেন “তাই আমি সবকিছুতে সাইন আপ করে রাখি: ইমেইল তালিকা; ওয়েবিনার। আপনি অবাক হয়ে দেখবেন কিছু ইভেন্টে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। অনেকে বলে যে: ‘আপনি এই তালিকার থাকার জন্য মিডিয়ার পরিচয় দিতে পারেন না,’ কিন্তু আমি যদি আমন্ত্রিত কোনো ইমেল তালিকায় থাকি, আমি তাতে অংশ নিতে যাই।”
এরপর তিনি টুইটডিক (এখন “এক্স প্রো” নামে পরিচিত)-এর কথা উল্লেখ করেন। চরম ডানপন্থীদের মাধ্যমে সৃষ্ট সহিংসতার পর দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এটি। এছাড়া আর্কাইভ করা পৃষ্ঠাগুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য আরো একটি অপরিহার্য টুল ওয়েব্যাক মেশিন। (এপির মাইকেল বিসেকার আর্কাইভ টুডে টুল নিয়ে বলেন, এটি সব ওয়েবপৃষ্ঠাকে সংরক্ষণ করতে পারে। বেলিংক্যাট অটো আর্কাইভার টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিও ডাউনলোডের জন্য সেরা উপায় খুঁজে বের করে। সাংবাদিকদের কোনো একটি পোস্টের ইউআরএল স্প্রেডশীটে পেস্ট করে ইভেন্ট সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে পারেন ৷ )
শারীরিক ও ডিজিটাল হুমকি হ্রাস
আরমিয়াক সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “অনেক রিপোর্টার তাদের কাজের ফোন নম্বর, এমনকি তাদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর থেকে এমন লোকেদের ফোন করে যারা মূলত সন্ত্রাসী। ওই লোকেরা তাদের বন্ধুদের আপনার নম্বর দিয়ে দেয়। যারা আপনাকে ফোন করে শাসায় বা বাজে ব্যবহার করে, আপনার কাজকে বাধাগ্রস্ত করে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তার মৌলিক ধাপ অনুসরণ— যেমন টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, এনক্রিপ্টেড কমিউনিকেশনস এবং পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করার পাশাপাশি প্যানেল আলোচকেরা একমত হয়েছেন যে উগ্র ডানপন্থীদের নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা নিচের কৌশলগুলোও অনুসরণ করতে পারেন।
- আপনার গোপনীয়তা সুরক্ষা বিষয়ক পরিষেবার জন্য ডিলিটমি-তে সাইন আপ করুন, যা ইন্টারনেট থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলে। “আমি গত বছর উগ্র চরমপন্থা বিষয়ক একটি পডকাস্টে কাজ করেছিলাম, এবং বুঝতে পেরেছিলাম: ‘এখন সময় এসেছে নিজেকে কিছু সামাজিক মিডিয়া থেকে সরিয়ে নেয়ার,'” বলেন রাসেল। “আমি ডিলিটমি-তেও সাবস্ক্রাইব করেছি।” আরমিয়াক জোর দিয়ে বলেন যে: ” আপনাদের মধ্যে যে ডিলিটমি তে নেই, এখনই এ সাইটে যুক্ত হন ।”
- হয়রানি, স্প্যাম এবং ট্রান্সক্রাইবড ভয়েসমেল ( ভয়েসমেলকে টেক্সে পরিণত করা) অনুসন্ধানের ঝুঁকি কমাতে কলার আইডি মাস্কিং পরিষেবা ব্যবহার করুন, যেমন গুগল ভয়েস, কিংবা একদম অন্য একটি ফোন ব্যবহার করুন। আরমিয়াক বলেন “হয় কোনো গুগল ভয়েস নম্বর ব্যবহার করবেন কিংবা সম্পূর্ণ আলাদা ফোন ব্যবহার করতে পারেন।” তিনি আরো বলেন “কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও তাই: আপনি যদি চরমপন্থী ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া অনুসন্ধান করেন তবে একটি পৃথক কম্পিউটার থাকা বা একটি ভার্চুয়াল কম্পিউটার ব্যবহার করা ভাল ৷ অন্তত, সবসময় একটি ভিপিএন ব্যবহার করুন।”
- আপনি যদি কোনো মিলিশিয়া গোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে, বা আপনার বিট এটা হয় তাহলে আপনার পারিবারিক তথ্য ঘিরে চরম গোপনীয়তা নীতি বিবেচনা করুন। “একটি জিনিস যা আমি করি না তা হল আমার পরিবারের ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা। আমি এ ব্যাপারে খুব যত্নশীল,” ব্যাখ্যা করেন আরমিয়াক।
রাস্তার মধ্যে চরমপন্থীদের কারও সঙ্গে কথা বলা বা সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। প্যানেল আলোচকেরা সম্মত হন যে, সতর্ক পরিকল্পনা এবং ঝুঁকি যাচাই নিরাপত্তার জন্য কার্যকর এটা প্রমাণিত। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তাঁরা বলেন, ডানপন্থী ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশ কাভার করার সময় রিপোর্টারদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা এ ধরনের সমাবেশে বিপক্ষ দলের বিক্ষোভকারীরাও উপস্থিত থাকেন। ছোট ইভেন্টগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকে এবং বিপক্ষ দলের কর্মীরা আপনাকে সাংবাদিক নয়, অন্যপক্ষের লোক হিসেবে ভুল করতে পারে।
ঘৃণা ছড়ান এমন একজন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীর পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার নিতে থম্পসন ও তার দল খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি অতোটা সহজ ছিল না। ওই সময়ের কথা মনে করে থম্পসন বলেন যে কীভাবে তিনি হোটেলে বসে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার আমন্ত্রণকে পাশ কাটিয়েছিলেন।
প্রথম বৈঠকের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন “আমরা আকস্মিক যে কোনো ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম; আমরা তার বাড়িতে যাই আর দ্রুত বের হয়ে আসি।” কিন্তু আমরা যদি তাকে কোনো ঠিকানা আর প্রস্তুত হওয়ার জন্য তিরিশ মিনিট সময় দিতাম তাহলে তার দলের লোকেরা আমাদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাত। আমাদের আর ফিরতে হতো না।”
নব্য-নাৎসি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি প্রবণতা বিদ্যমান। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা তাদের বিতর্কিত নীতি-কৌশলগুলো প্রকাশ করে, সংখ্যালঘুদের এরা যে পদ্ধতিতে ভয় দেখায়, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও তারা ওই একই অস্ত্র ব্যবহার করে। যেমনটা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা দেখতে পাই। যখন ডানপন্থী নেটওয়ার্কের পাঁচজন সদস্য র স্টোরির রিপোর্টারের বাড়িতে গিয়ে নাৎসি স্যালুট (ডান হাত সামনে বাড়িয়ে দাঁড়ানো) করার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বার্তা প্রদর্শণ করে যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর বাস্তবতা কিন্তু এক নয়।”
শেষে, থম্পসন একটি মজার কিন্তু ভয়ংকর ঘটনা তুলে ধরেন, যা উগ্র ডানপন্থীদের বিকৃত মস্তিষ্কের অপ্রত্যাশিত আচারণের উদাহরণ । তিনি বলেন, “স্টপ দ্য স্টিল [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে] আন্দোলনকারীদের একটি সমাবেশে ভিডিওগ্রাফারদের একটি দলের সঙ্গে ছিলাম আমি। লোকেরা আমাদের ঘিরে ধরলো। কেননা তারা মনে করেছিল যে আমরা সবাই এফবিআই বা সিআইএর হয়ে কাজ করছি। এক পর্যায়ে তারা আমাদের ভিডিওগ্রাফারদের মারধর করার পরিকল্পনা করে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাদের ক্যামেরা দেখতে থাকে। আর হঠাৎ করে বলে ওঠে, “আরে, তোমাদের ক্যামেরাগুলো তো সত্যিই ভালো মানের—তাহলে তোমরা কোনোভাবেই সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নও।”
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফ্রিকায়।