প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Illustration: Marcelle Louw for GIJN

রিসোর্স

» গাইড

অধ্যায় ২ : কোভিড-১৯ এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসী শ্রমিক

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রধান প্রধান খাতের বড় অংশই আবার খুলে দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিবাসী শ্রমিকেরা এখনো তাঁদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও শোষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। উপসাগরীয় অঞ্চলে আগে থেকেই অভিবাসীরা যেসব সমস্যায় ভুগছিলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সেগুলো আরও প্রকট করেছে। যেগুলোর মধ্যে আছে: মজুরি না পাওয়া, সামাজিক সুরক্ষার বাইরে থাকা এবং স্বাস্থ্যসেবায় সীমিত প্রবেশাধিকার। এই অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিক ব্যবস্থাপনা ও চর্চা শুধু শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত দিক থেকেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, একই সঙ্গে তাঁদের একটি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও রাখে।

এই অধ্যায়ে পাওয়া যাবে কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট ইস্যুর সার্বিক প্রেক্ষাপট, ভালো কাভারেজের উদাহরণ, এই সংকটের মধ্যে রিপোর্টিংয়ের পরামর্শ এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে টিকা বিতরণ নীতির বিশ্লেষণ।

রিপোর্টিংয়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে কয়েকটি পরামর্শ

স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্য

সাধারণভাবে, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের মুখে পড়তে হয় অভিবাসী শ্রমিকদের (এ বিষয়ে আরও পড়ুন এখানে)। কোভিড-১৯ চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি রোগীদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। এই বিভাজন আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায় নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে। অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র ও বসবাসের পরিবেশ এমন যে, তাঁরা এমনিতেই কোভিড সংক্রমণ কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। এখন যখন এই অভিবাসীরা আবার তাঁদের কাজে ফিরতে শুরু করেছেন, তখন তাঁদের তাপমাত্রা পরিমাপের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য। কারণ, তাঁরা চিকিৎসাসেবা পাবেন কি না, তা পুরোপুরি নির্ভর করে চাকরিদাতাদের মর্জির ওপর। এখানে থাকছে দুটি প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:

কোভিডের সময়ে বাংলাদেশি নিম্নআয়ের অভিবাসী শ্রমিকদের অনিশ্চয়তা

জন্ম যখন অনিশ্চয়তায়: মহামারি যেভাবে অভিবাসী মা ও নবজাতকদের যন্ত্রণা বাড়িয়েছে

বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক দুর্দশা

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে শ্রমশক্তির একটি বড় অংশই অভিবাসী শ্রমিক। মহামারির বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাবে সব ধরনের শ্রমিকই বেশি বিপর্যস্ত হয়েছেন। কাতার সরকার শুরুতে তার নিজ দেশের নাগরিকদের বেতন-ভাতা ও চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সেসবের কিছু করা হয়নি। পাশাপাশি তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে রাখায়, মহামারির সময় অভিবাসী শ্রমিকদের খাবার, বাড়িভাড়া বা নিজ দেশে ফেরার টিকিটের অর্থ জোগাড় করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই বিষয়গুলো শ্রমিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। বিশেষভাবে তাঁদের ওপর, যাঁরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন না বা চান না। উৎস দেশগুলোতে এসব অভিবাসী শ্রমিকের পরিবারের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কারণ, তাঁদের অনেকেই জীবনধারণের জন্য একান্তভাবে নির্ভর করেন বিদেশ থেকে পাঠানো এসব বৈদেশিক মুদ্রার ওপর।

এখানে থাকছে এই দিকটি নিয়ে কিছু লেখালেখির উদাহরণ:

কোভিড-১৯ এবং অভিবাসী শ্রমিকদের আবাসন সংকট

উপসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসন এবং কোভিড-১৯ মহামারি

বিলাস জীবন: দুবাইয়ের বিশাল সেবা খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়

আরব আমিরাতে জিফোরএস কর্মীরা দিন কাটাচ্ছেন ত্রাণের খাবারে

আটক এবং জোর করে দেশে ফেরত

অনিয়মিত অভিবাসী শ্রমিকেরা তাঁদের অভিবাসন শর্তের কারণে সব সময়ই প্রশাসনের হাতে আটক হওয়ার এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকেন। তাঁদের আটক করে রাখা হয় অপরিচ্ছন্ন ও জনাকীর্ণ স্থানে। ফলে তাঁরা কোভিড-১৯সহ সব ধরনের ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন। কিছু দেশ প্রাথমিকভাবে তাদের হাজতে বন্দির সংখ্যা কমিয়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব আছে। এবং প্রশাসনিকভাবে আটক করে রাখার চর্চা এখনো জারি আছে। সৌদি আরবে যেভাবে ইথিওপিয়ার শ্রমিকদের গণহারে আটক করা হয়েছে, তা এই ঘটনার একটি বিশেষ উদাহরণ।

কয়েকটি প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনের উদাহরণ:

সৌদি আরবে কোভিড-১৯ কালে অভিবাসী আটককেন্দ্র

সৌদি আরবে আটক ইথিওপিয়ান অভিবাসীরা একে বলছেন ‘নারকীয়’

‘আমরা টয়লেটের পানি খেয়েছি’: অভিবাসীদের ভাষায় সৌদি আরবের নারকীয় হাজত

মজুরি চুরি এবং নিয়োগের শর্ত পরিবর্তন
Gulf Guide - Wage Theft

ইলাস্ট্রেশন: জিআইজেএন-এর জন্য মার্সেল লো

কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে থেকেই অনেক জায়গায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে বেতন-ভাতা নিয়ে বিবাদ চলছিল। কিন্তু আদালতের কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হওয়ায় এবং সরকারি কার্যক্রম সীমিত থাকায় এখন সেগুলো মীমাংসা করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। অবশ্য মহামারি না থাকলেও মালিকপক্ষকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করার লড়াইটা অনেক দীর্ঘ ও কঠিন। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আরও কিছু বাড়তি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমর্থন ও চাকরি বদল করার সুযোগ কমে যাওয়ার মতো কারণে বাইরের একটি দেশে থাকা এবং মামলায় লড়া অনেক কঠিন হয়ে গেছে শ্রমিকদের জন্য। অভিবাসীরা যখন তাঁদের নিজ দেশে ফিরে যান, তখন এ ধরনের মামলা পরিচালনা করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেটি যথার্থভাবে পরিচালনা করতে হলে কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে আসতে হয়। এটি খুবই ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া; এবং বেশির ভাগ শ্রমিকেরই সেই পরিমাণ অর্থ জোগানোর সামর্থ্য থাকে না। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে মজুরি চুরির এমন অনেক মামলা দেখা যাবে, এমনটি অনুমান করে শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রক্ষার দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের একটি জোট।

আরও কিছু প্রাসঙ্গিক উদাহরণ:

করোনাভাইরাস শাটডাউন কাতারের অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যেভাবে 

উপসাগরীয় অঞ্চল-ফেরত শ্রমিকদের দুঃখের নাম “মজুরি চুরি”

এমিরেটস গ্রুপের কোম্পানি ট্রান্সগার্ড শ্রমিকদের পরিত্যাগ করেছে, তাদের ঠেলে দিচ্ছে ঋণ দাসত্বের দিকে

ঝুঁকিপূর্ণ আবাস ও কর্মপরিবেশ

এই সংকটের শুরু থেকে, পর্যবেক্ষক এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সরকারেরা শুধু এটিই দেখেছে যে, শ্রমিকদের বাসস্থান এবং তাঁদের কাজের পরিবেশ এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়াতে পারে। সরকারি কর্মকর্তারা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর তার প্রভাব নিয়ে ততটা মাথা ঘামাননি। কখনো কখনো জনবসতির ঘনত্ব কমানোর জন্য তাড়াহুড়ো করে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ফল হয়েছে হিতে বিপরীত। কিছু ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, শ্রমিকদের জোর করে যে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানকার পরিবেশ খুবই খারাপ। কর্মকর্তারাও তাঁদের ভালোভাবে কোনো কিছু বুঝিয়ে বলতে পারেননি। এ ছাড়া সবচেয়ে কঠোর লকডাউনের সময়ও অভিবাসী শ্রমিকেরা নির্মাণকাজ চালিয়ে গেছেন, দোকানে ও অন্যান্য সেবাপ্রতিষ্ঠানে গেছেন। অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টিকে বড়জোর লোক দেখানো বলা যেতে পারে, কিন্তু এটিকে কখনোই কার্যকরভাবে প্রয়োগের কথা ভাবা হয়নি।

আরও উদাহরণ

চাকরিচ্যুত ও শৃঙ্খলিত: আরব দেশগুলোতে ভাইরাসের ফাঁদে বন্দী গৃহকর্মীরা

অভিবাসী শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা হয়ে উঠছে কোভিড সংক্রমণের কারণ

গৃহকর্মী: বয়ে বেড়াচ্ছেন অদৃশ্যতা, বিচ্ছিন্নতা ও বৈষম্যের ঘাম

করোনাভাইরাসে আটকা পড়ছেন উপসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসী শ্রমিকরা

বর্ণবাদ ও জেনোফোবিয়া 

অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতিনিয়তই বর্ণবাদ ও জেনোফোবিয়ার (বিদেশিদের প্রতি বিরূপ মনোভাব) শিকার হওয়ার মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়, কোভিড-১৯ শুরুর পর থেকে যা আরও বেড়েছে। করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হচ্ছে অভিবাসীদের গাদাগাদি করে থাকার মতো পরিস্থিতিকে। যদিও এর ওপরে তাঁদের কোনোই নিয়ন্ত্রণ নেই। এই ধরনের কথাবার্তার কারণে কোথাও কোথাও অভিবাসীদের এমন পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতা ও আলাপ-আলোচনার পরিসর তৈরি হয়েছে। আবার অন্য জায়গায়, অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে তাদের সংখ্যা কমিয়ে আনার দাবি তোলা হয়েছে। তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শ্রমিকেরা কীভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন এবং সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের বাইরে থেকে যাচ্ছেন, তা-ও প্রভাবিত হচ্ছে বর্ণবাদ ও জেনোফোবিয়া দিয়ে।

কিছু উদাহরণ

পারস্য ‍উপসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য, কাঠামোগত বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে মহামারি

উপসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি বর্ণবাদী আচরণ বাড়াচ্ছে কোভিড-১৯ সংকট 

উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে অহরহ বর্ণবাদ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন অভিবাসী শ্রমিকেরা 

রিপোর্টিংয়ের জন্য পরামর্শ
  • অনেক অভিবাসী শ্রমিককেই দেখা যায় নিয়োগদাতাদের সম্পর্কে বা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে (যেমন টিকটক ও টুইটার) নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাঁদের মনোভাব জানার জন্য নজর রাখুন টুইটার ও ফেসবুকে।
  • কমিউনিটি নেটওয়ার্ক ও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। অভিবাসীদের উৎস দেশের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়তো বেশি সহজ হবে। তারা আপনাকে এমন মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে, যাঁরা নিজেদের গল্প জানাতে আগ্রহী হবেন। শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য চাওয়ার বদলে বরং তাঁদেরকেই আপনার নম্বর দিয়ে রাখুন। এতে তাঁরাই তাঁদের সুবিধা ও ইচ্ছেমতো যোগাযোগ করতে পারবেন।
  •  কয়েক বছর ধরে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক (বিশেষভাবে নারী) আসছেন আফ্রিকা থেকে। তাঁরা অন্যদের মতো প্রবাসী-সহায়তা পান না। তবে আফ্রিকান এই অভিবাসীরা সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষভাবে ফেসবুকে খুব সক্রিয়। এসব গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলাই এই অঞ্চলের অন্যতম দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র রাস্তা।
  • শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখুন। আপনার সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে তাঁরা যে ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে তাঁরা সচেতন আছেন কি না, নিশ্চিত করুন। কথাবার্তাগুলো সিগন্যালের মতো সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বলার চেষ্টা করুন।
  • আপনি যদি কোনো শ্রমশিবির বা এ ধরনের ব্যবস্থাপনার মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে যান, তাহলে শুরুতেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন: যেন শ্রমিকদের মধ্যে থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তা না হলে পরিস্থিতি দ্রুত নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। এবং অভিবাসী শ্রমিকদের বড় সমাবেশ অনেক অযাচিত দৃষ্টিও আকর্ষণ করবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মাথায় রেখে আপনি যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, তা-ও জানিয়ে দিন।
  • শ্রমিক ও অন্যান্য স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সরকারের দাবি করা তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই করুন। সরকারি ভাষ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে যা বলা হয়, সাধারণত তার বাইরেও অনেক কিছু থাকে।
  • জেন্ডার প্রশ্নটি সব সময় মাথায় রাখুন। কারণ, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়: অভিবাসী নারীদের ওপর প্রভাবটা অনেক বেশি হয়। তাঁরা গৃহস্থালির কাজ করছেন, নাকি অন্য কোনো খাতে, তা কোনো বড় বিষয় নয়। এ ছাড়া ট্রান্স ও নন-বাইনারি অভিবাসীরাও অনেক বেশি সন্দেহ ও বৈষম্যের মুখে পড়েন। নিশ্চিত করুন যেন এই বিষয়গুলোও উঠে আসে।
  • মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিংয়ে যাওয়ার আগেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করুন এবং বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে আপনি যে সময় নিয়েছেন, সে ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
নিরাপত্তা পরামর্শ

উপসাগরীয় দেশগুলোর হাতে আছে অত্যাধুনিক ডিজিটাল নজরদারির সব টুল। ফলে ধরেই নিন যে, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল বার্তা ও ইমেইল—সবকিছুই তারা পর্যবেক্ষণ করতে ও দেখতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে ফিচার (ফ্লিপ) ফোন। কারণ, স্মার্টফোন ডিজিটাল পদচিহ্ন রেখে যায়। অন্যদিকে স্মার্টফোনের সুবিধা হলো: এখান দিয়ে আপনি সিগন্যালের মতো মেসেঞ্জিং অ্যাপ ব্যবহার করে সুরক্ষিত যোগাযোগ করতে পারবেন। এবং স্মার্টফোনের নিরাপত্তাব্যবস্থাও ভালো। একবার আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সেটি আর কেউ খুলতে পারবে না।

মাথায় রাখুন যে: উপসাগরীয় দেশগুলোতে অ্যাকটিভিস্ট ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রায়ই তাঁদের ফোনগুলো জব্দ করা হয়। ফলে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ও ডিজঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ অপশন চালু করা খুবই জরুরি। এটাও মাথায় রাখা দরকার যে, এনক্রিপ্টেড মেসেঞ্জিং অ্যাপকেও এসব দেশের নিরাপত্তারক্ষীরা সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ছাড়া অনেক উপসাগরীয় দেশেই ভার্চুয়াল প্রোভাইডার নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন হয় অবৈধ (যেমন ওমানে), নয়তো সেগুলোর ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ থাকে (যেমন সৌদি আরব ও আরব আমিরাত)। একইভাবে, উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশেই মহামারির শুরুর দিকে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) কলও ব্লক করা হয়েছিল। এবং অনেক অভিবাসীই তাদের নিজ দেশে বিনামূল্যে ভিওআইপি কল করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন।

ফোন কন্ট্যাক্টসে কখনোই সোর্সের নাম বা অন্যান্য পরিচয়মূলক তথ্য সেভ করবেন না; বরং তাদের শনাক্ত করার জন্য কোনো একটা কোড ব্যবহার করুন।

কখনো কখনো, সচেতনতার অভাবে, অভিবাসী শ্রমিকেরা নিজেদের অজান্তেই নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো ভঙ্গ করেন। কিন্তু সংবেদনশীল কোনো বিষয় নিয়ে রিপোর্টিংয়ের সময় তাঁদের নাম-পরিচয় কখনো প্রকাশ করবেন না। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এজাতীয় সংবেদনশীল কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি সেটা যদি ব্যক্তিগত বা ডিরেক্ট ম্যসেজের মাধ্যমেও হয়। সোর্সের সুরক্ষা নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, আলাপচারিতাগুলো অফলাইনে নিয়ে আসা।

উপসাগরীয় অঞ্চলে কোভিড টিকাদান পরিস্থিতি  

জিসিসিভুক্ত সব কটি দেশই তাদের টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনায় অভিবাসীদের (সব বিদেশি নাগরিক) অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে আসলে কারা টিকা পাবেন, সেটি দেশভেদে যেমন আলাদা, তেমনি দেশের ভেতরকার নানান বিষয়ের ওপরও নির্ভরশীল। যেমন: অর্থনৈতিক শ্রেণি, বাসস্থান, অভিবাসন মর্যাদা ইত্যাদি। কুয়েত ছাড়া বাকি সব কটি উপসাগরীয় দেশই টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অন্তত কাগজে-কলমে একটি বৈষম্যহীন প্রটোকল তৈরি করেছে। জাতীয়তার ঊর্ধ্বে গিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে নিজ দেশের নাগরিকদেরই বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটি হয় কোনো ব্যবস্থাপনাগত ডিজাইনের মাধ্যমে করা হচ্ছে বা টিকাদান কেন্দ্রগুলো এমনভাবে সাজানো হচ্ছে, যেন সেগুলো নিজ দেশের মানুষের কাছে বেশি সহজলভ্য ও ঝামেলামুক্ত হয়।

দুর্বলতা যেখানে

অভিবাসী শ্রমিকদের কাজ করতে হয় ঝুঁকির মধ্যে, তাদের মধ্যে একটি অস্থায়ী ব্যাপার আছে এবং অনেক জায়গাতেই শ্রমিকদের বড় আকারে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ফলে দেখা যায়, প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার পরও উপসাগরীয় দেশগুলোতে পর্যাপ্ত সময় না থাকতে পারার কারণে অনেকের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হচ্ছে না।

জিসিসিভুক্ত কোনো দেশই পরিষ্কার করে বলেনি, অনিয়মিত বা অবৈধ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কী হবে। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই তাঁরা টিকা পাবেন কি না। মাইগ্রেন্ট-রাইটস ডট অর্গ-এর করা গবেষণা ও সাক্ষাৎকার থেকে দেখা যায়: এই অঞ্চলে সম্মুখসারির বা আবশ্যিক কর্মীরও কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী, ডেলিভারিম্যান এবং হাসপাতালের অন্য কর্মীদের এই তালিকায় খুব কমই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গৃহকর্মীদেরও এই তালিকায় রাখা হয়নি, যদিও তাদের সংখ্যা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের তুলনায় দ্বিগুণ। আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনের সময় বেতন-ভাতার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকেরা বলেছেন, টিকা নেওয়ার পর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কয়েক দিন অসুস্থ থাকলেও তাঁদের বেতন দেওয়া হয়নি।

নতুন নিয়োগ

এখন আমরা অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের নতুন একটি স্রোত দেখতে পাচ্ছি। এর অর্থ: “ভ্যাকসিন পাসপোর্ট” এখন একটি নতুন প্রবণতা হয়ে দাঁড়াবে। জিসিসিভুক্ত কয়েকটি দেশে, নির্দিষ্ট কিছু খাতে কাজের জন্য এখন টিকাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এবং চাকরিদাতারাও নিয়োগের ক্ষেত্রে টিকা গ্রহণকে বিবেচনা করছেন অন্যতম শর্ত হিসেবে।

আরেকটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়: অভিবাসী শ্রমিকদের নিজ দেশে কারা তাঁদের টিকার অর্থ পরিশোধ করছে? বিশেষভাবে এটি যদি শুধু চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ার জন্যই প্রয়োজন হয়, এবং বিদেশযাত্রার প্রধান উদ্দেশ্যই হয় নতুন চাকরি নেওয়া। অনেক অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষভাবে যাঁরা প্রথমবার বিদেশ যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সুস্থ-সবল তরুণ, যাঁদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে; এবং তাঁরা হয়তো আরও লম্বা সময়ের জন্য টিকা পাওয়ার জন্য বিবেচ্য হবেন না। যেমন, ভারতে, আপনি সরকারি টিকাদান কেন্দ্রে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ৬০+ বয়সী এবং কো-মরবিডিটিযুক্ত ৪৫+ বয়সী মানুষদের। বেসরকারি কিছু হাসপাতালকেও টিকাদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। কিন্তু নিয়োগপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছয় বা আট সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করা হয় না। অথচ এটিই প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার আদর্শ সময়।

নিয়োগসংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর টিকাদানের নীতিমালা কী, তা বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। গৃহকর্মী বা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের তাঁদের চাকরিস্থলে পাঠানোর আগে কি তাঁদের টিকাদান নিশ্চিত করা হবে? টিকাদান প্রক্রিয়ার এমন নানা জটিলতার বিষয়ে হয়তো এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তবে আমরা ভালোমতোই জানি যে: প্রক্রিয়াটি বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে। এবং রিপোর্টিংয়ের সময় এটি অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।

বিভিন্ন দেশ ক্রমাগত তাদের টিকাদান নীতিমালা ও পদ্ধতি পরিবর্তন করছে। যেমন, কাতারে, গত এপ্রিলের শুরুতে একটি টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়েছে শুধুই নিম্ন আয়ের অভিবাসীদের জন্য

উপসাগরীয় দেশগুলোতে টিকা বিতরণের তথ্য ও ডেটা পাবেন এখানে:

সৌদি আরব

কাতার

বাহরাইন

কুয়েত

সংযুক্ত আরব আমিরাত

ওমান

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের ২০২৪ সালের সেরা গাইড ও টিপশিট

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সাংবাদিকদের। তথ্য সংগ্রহ, অংশীদারত্বমূলক কাজ, প্রকল্পের অর্থ যোগান , পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা জ্বালানী বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার রসদ পেতে বেশ কিছু গাইড প্রকাশ করেছে জিআইজেএন। দেখুন এই প্রতিবেদন।

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএনের ২০২৪ সালের সেরা অনুসন্ধানী টুল

কৌতূহল, সাহস ও অংশিদারত্ব বছরজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছে। এই সাংবাদিকতাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে দারুন কিছু টুল। একনজরে দেখে নিন চলতি বছরের সাড়া জাগানো অনুসন্ধানে ব্যবহৃত টুল ছিল কোনগুলো।

সম্পাদকের বাছাই

প্রাণঘাতী আন্দোলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি অনুসন্ধান: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

আরও স্থান পেয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুসন্ধান, জনসংখ্যার ডেটা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গরমিল ও ক্ষমতাধর পুলিশ প্রধানের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসঙ্গ।

অনুসন্ধান পদ্ধতি শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ‘হাব’ যেভাবে একটি প্রজন্মের রিপোর্টারদের তৈরি করেছে

মেক্সিকো সীমান্তে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য তাঁদের পেশাটা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কেন্দ্রে যাঁরা সাংবাদিকতা করেন, তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তো ছিলই, ছিল সার্বক্ষণিকি নিরাপত্তাহীনতাও। সাংবাদিকেরা একজোট হয়ে এই দূরত্ব ঘুঁচিয়ে আনতে গড়ে তোলেন একটি সংগঠন। প্রয়োজনীয়ল প্রশিক্ষণ শেষে হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা অনুসন্ধান করে তুলে আনেন বেশ কিছু প্রতিবেদন।