প্রবেশগম্যতা সেটিংস

ছবি: জিআইজেএন

লেখাপত্র

বিষয়

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

বছরের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো নির্বাচনের কাজটি বেশ কঠিন, তবে পরিতৃপ্তিরও বটে। বাংলাদেশের ৪৫টিরও বেশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ১ হাজার ২০০টি দৈনিক সংবাদপত্র আর শতাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালের ওপর নজর রাখা একজন ব্যক্তির পক্ষে কার্যত অসম্ভব; তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর আর সম্পাদকদের কাছ থেকে আসা সুপারিশ তো আছেই।

কেন পরিতৃপ্তির? কারণ, ২০২৩-এর শীর্ষ অনুসন্ধানগুলো বাছাই ও নির্বাচনের সময় আমরা উপলব্ধি করতে পারি, গণমাধ্যমের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে (যার স্বরূপ বোঝা যায় রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচকে ক্রমাগত পতনে) বার্তাকক্ষ ও সাংবাদিকেরা কীভাবে নিয়মিত অসামান্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বছরের নির্বাচিত প্রতিবেদনগুলো অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ করে দোরগোড়ায় জাতীয় নির্বাচন, অপতথ্য ও ডিজিটাল হুমকির বিস্তার, বেড়ে চলা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নাগরিক মত প্রকাশের সংকুচিত পরিবেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চলতি বছরের শীর্ষ বাছাইয়ে জায়গা করে নেওয়া প্রতিবেদনগুলোতে চলমান এই পরিস্থিতির প্রতিফলন মিলবে। যেগুলোতে উঠে এসেছে নির্বাচনকে সামনে রেখে অপতথ্যের প্রচার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতির সঙ্গে সংযোগ, অনলাইনে নারী নিপীড়ন, স্বাস্থ্য খাতে পদ্ধতিগত অনিয়ম, এবং কৃষি শ্রমিক শোষণের মতো বিষয়।

এবারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো এসেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন মিডিয়া উৎস থেকে, যেমন জাতীয় দৈনিক, টিভি নেটওয়ার্ক, অনলাইন পোর্টাল, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, আঞ্চলিক অলাভজনক সংস্থা, নির্বাসিত নিউজরুম, এবং বিশেষ করে স্থানীয় গণমাধ্যম, যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী প্রকাশকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এতে জায়গা করে নিয়েছে। এখানে আমাদের ২০২৩- এর সেরা বাছাইগুলো তুলে ধরা হলো।

নির্বাচনের আগে ভুয়া বিশেষজ্ঞদের রাজনৈতিক লেখা

Dhaka,,Bangladesh,-,November,20,,2016:,People,Are,Reading,Daily

ছবি: শাটারস্টক

বাংলাদেশ যখন ২০২৪ সালের জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করছে। ক্রমবর্ধমান এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে এএফপির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাধীন সরকারকে সমর্থন করে প্রায় তিন ডজন ভুয়া বা পরিচয়হীন লেখকের লেখা নিবন্ধ মূলধারার নিউজ ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে ওইসব লেখকদের প্রোফাইল বা উপস্থিতি কিংবা উল্লিখিত সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদের সাক্ষাৎকার প্রদানবিষয়ক তথ্যের সত্যতা কিংবা যাচাইযোগ্য কোনো রেকর্ড সাংবাদিকেরা খুঁজে পাননি।

এদের মধ্যে একজন লেখক — সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যার প্রোফাইল ছবি  ভারতীয় এক অভিনেত্রীর — ভুয়া পরিচয় দিয়ে সরকারের প্রশংসা করে অন্তত ৬০টি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এএফপির অনুসন্ধানে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সন্দেহজনক এ ধরনের নিবন্ধ প্রকাশের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে, যা কিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের বিপক্ষে সমালোচনামূলক “প্রচার” মোকাবিলার আহ্বান জানানোর সমসাময়িক।

চিকিৎসকদের ব্যয়বহুল উপহার, বাড়াচ্ছে চিকিৎসা ব্যয়

ছবি: স্ক্রিনশট, সেনিভপেট্রো, ফ্রিপিক

ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছ থেকে চিকিৎসকদের উপহার নেওয়া ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন গ্রহণ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও সুপরিচিত প্রথা। তবে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চট্রগ্রামভিত্তিক গণমাধ্যম একুশে পত্রিকা বিষয়টি ঘিরে যেভাবে অনুসন্ধান চালিয়েছে তেমনটা ঘটে খুবই কালেভদ্রে। এর অন্যতম কারণ, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর শিল্পটির বড় রকমের প্রভাব। বড় অনেক নিউজ আউটলেটই একই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মালিকানাধীন, যাদের আবার ওষুধের ব্যবসা রয়েছে, ফলে ওষুধ শিল্পসম্পর্কিত অনুসন্ধানগুলো প্রায়ই এখানে সেন্সরশিপের মুখে পড়ে

এ সিরিজ প্রতিবেদনটি কোম্পানীগুলোর পদ্ধতিগত ঘুষ ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় তার উল্লেখযোগ্য প্রভাবের ওপর আলোকপাত করেছে। এটি তুলে ধরেছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচারের জন্য কীভাবে ডাক্তারদের অর্থ, গাড়ি এবং এমনকি বাড়িসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যা ফার্মাসিউটিক্যালস মার্কেটিং অনুশীলনের নীতি বহির্ভূত এবং শেষ পর্যন্ত রোগীদের ওপর ওষুধের বাড়তি খরচ চাপিয়ে দেয়

সিরিজের আরেকটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়,  নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট করার প্রেসক্রিপশন প্রদানের বিপরীতে চিকিৎসকেরা যথেষ্ট পরিমাণ কমিশন নেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, কমিশনের প্রাপ্তির এ হারকে প্রায়ই অকপটে “রেফারেল ফি” নাম দেওয়া হয়। পরীক্ষার ধরন আর খ্যাতির ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকেরা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন, যা শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা খরচ বাড়িয়ে দেয়। মাসব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করা ৬৫টি ব্যাংক চেকের অনুলিপি, কয়েক ডজন প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে থেকে হুইসেলব্লোয়ারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেন এই প্রতিবেদক। অনুসন্ধানটি জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয়।

কারাভোগকালীন ট্রমার সম্মুখীন হচ্ছে কিশোরেরা

ছবি: স্ক্রিনশট, সিভয়েস২৪ এর সৌজন্যে

চট্টগ্রাম-ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিভয়েজ২৪.কম-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পুলিশ কর্তৃক নির্বিচারে বয়স নির্ধারণের কারণে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৮ বছরের কম বয়সী ২২০ জন বন্দীকে ভুলভাবে “প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী” হিসাবে তালিকাভুক্ত করার ঘটনা। এহেন ব্যর্থতা দশ ​​বছরের পুরানো আইনের পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছে পুলিশকে একজন সম্ভাব্য অপ্রাপ্তবয়স্ক বন্দীর সঠিক বয়স নথিভুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং কোনো কারণে যদি তারা তা করতে না পারেন তবে অভিযুক্তকে শিশু হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।

প্রতিবেদক এমন দশটি ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে মামলার রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছেন এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে, কিশোর বয়স সত্ত্বেও অভিযুক্তদের নিয়মিত প্রাপ্তবয়স্ক কয়েদিদের সঙ্গে কারাগারের একই সেলে রাখা হয়। জামিন লাভের পরও এই নাবালক কিশোরদের সামাজিক অপবাদ ও মানসিক গ্লানির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

টেলিগ্রামের ব্ল্যাকমেইলার

ছবি: স্ক্রিনশট, চ্যানেল ২৪

এই অনুসন্ধানটি করেছে চ্যানেল ২৪-এর অনুসন্ধানমূলক টেলিভিশন প্রোগ্রাম সার্চলাইট। একদল দুষ্কৃতকারী কীভাবে অল্পবয়সী নারীদের সম্মতিহীন অন্তরঙ্গ ভিডিও সংগ্রহ করে, সেগুলো টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে বিক্রি করে এবং ভুক্তভোগীদের ব্ল্যাকমেইল করে – সেই চিত্র উন্মোচন করেছে প্রতিবেদনটি। এতে তুলে ধরা হয়, অপরাধীদের দাবী পূরণে অসম্মত হলে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত ভিডিও কীভাবে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। হুমকি জোরদারের জন্য তারা ভুক্তভোগীর সোশ্যাল মিডিয়ার সুস্পষ্ট তথ্য দিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব, এবং ইনস্টাগ্রামে প্রচারমূলক ভিডিও বিজ্ঞাপন দেয়।

এমন এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের সূত্র ধরে, একজন প্রতিবেদক টেলিগ্রাম গ্রুপে অনুপ্রবেশ করার পর ২০০ জনেরও বেশি গ্রাহকের কাছে প্রিমিয়াম কনটেন্ট নামে তরুণীদের অসংখ্য ভিডিও বিক্রির বিষয়টি নথিভুক্ত করেন। প্রতিবেদনটিতে মানসিকভাবে ট্রমার শিকার তরুনীদের ভিডিও সাক্ষাৎকার রয়েছে, যাদের মধ্যে একজন আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছেন, এছাড়া ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারিক ও সামাজিক জীবনের গভীর প্রভাবের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

এ প্রকল্পের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের দলটি এক পর্যায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেয় এবং তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল শেয়ার করে। তারা অর্থসংগ্রহের সময় ব্যবহৃত ফোন নাম্বারের সূত্র ধরে ব্ল্যাকমেইলকারী দলের নেতাসহ বেশ কয়েকজন সদস্যকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়৷ পুলিশ শেষ পর্যন্ত সাইবার ক্রাইমের অভিযোগে একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। সার্চলাইটের এই পর্বটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র ইউটিউবে দেখা হয়েছে ১৩ লাখ বার।

পুলিশেরডেথ স্কোয়াড’-এর অন্দরে

ছবি: স্ক্রিনশট, ডয়চে ভেলে

ডয়চে ভেলে ও নেত্র নিউজের যৌথ এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সামনে এনেছে। হুইসেলব্লোয়ার প্রদত্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত প্রতিবেদনটিতে অপহরণ, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও সাজানো প্রমাণ উপস্থাপনসহ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত বিভিন্ন অভিযান ও র‌্যাবের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী ও বিভিন্ন সোর্সের সঙ্গে হুইসেলব্লোয়ারদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদনটিকে “কাল্পনিক, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে অভিহিত করে। মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে অতীতে র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তার কথা স্বীকার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে ২০১৮ সালের পর থেকে বাহিনীটিকে তহবিল  প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে র‌্যাব ও সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

প্রতিবেদনটিতে মানবাধিকার কর্মীদের বরাতে দাবি করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে র‌্যাব ৭০০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, ভুক্তভোগীরা যেখানে ক্রমবর্ধমানভাবে রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়েছেন। অনুসন্ধানটি অতীতে সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নাকচ করে দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং এই পুলিশ ইউনিটের কর্মকাণ্ড ঘিরে চূড়ান্ত দায়মুক্তির ওপর আলোকপাত করে।

হত্যা মামলার আসামীর ডাকে তারকা খেলোয়াড়ের দুবাই ভ্রমণ

ছবি: স্ক্রিনশট, প্রতিদিনের বাংলাদেশ

বছরের অন্যতম আলোচিত এই প্রতিবেদনে দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ তুলে ধরে যে, বাংলাদেশের একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বর্তমানে আইন এড়িয়ে পলাতক রয়েছেন এমন এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে গহনার দোকান উদ্বোধনের জন্য দুবাই ভ্রমণ করেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় তারকা খোলোয়াড় সাকিব আল হাসান।

প্রতিবেদনটিতে, পলাতক আসামী থেকে রীতিমতো গহনা ব্যবসার মালিকে পরিণত হওয়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে ব্যক্তির মিথ্যা পরিচয়ের জটিল জালকে উন্মোচিত করা হয়েছে। অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন, সেখানে মিথ্যা পরিচয় দেন, বিয়ে করেন এবং পরবর্তীতে দুবাই গিয়ে স্থায়ী হন। প্রতিবেদনে তার ব্যবসার বৈধতা, সম্পদের উৎস এবং জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসানের মতো বেশ কয়েকজন তারকার যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

প্রতিবেদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্ট থেকে শুরু করেন এবং এরপর পদ্ধতিগতভাবে একে একে মামলার নথি, পাসপোর্টের বিবরণ এবং কোম্পানির রেকর্ড যাচাই করে ব্যক্তির অতীত অপরাধের তথ্য উন্মোচন করেন। পলাতক আসামী থেকে একজন ব্যক্তির জুয়েলারি দোকানের মালিক বনে যাওয়ার ধাপগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য তিনি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সাক্ষীদের সাক্ষাৎকার নেন।

এক রাজনীতিবিদের নিউ ইয়র্ক শহরে সম্পত্তি ক্রয়ের হিড়িক

নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। ছবি: ওসিসিআরপির সৌজন্যে

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কারাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর অনুসন্ধানে উঠে আসে ২০১৪  থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট ৪০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ খরচ করে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য কীভাবে নিউইয়র্ক সিটিতে নয়টি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কখনো ক্যাব চালক বা কখনো পিজ্জা কুক হিসেবে কম বেতনের চাকরি করতেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী নিযুক্ত হওয়ার পাঁচ বছর পরে ২০১৪ সাল থেকে তার অপ্রত্যাশিত সম্পত্তি ক্রয় কার্যক্রমের সূচনা, যা ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

প্রতিবেদনে সম্ভাব্য আইনি ও আর্থিক অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে সম্পত্তির রেকর্ড, আর্থিক বিবরণ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাগুলো যাচাই করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের সম্পত্তির বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শনে ব্যর্থতা, বাংলাদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ সংক্রান্ত অনুমোদনপত্রের অনুপস্থিতি এবং একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে তিনি কী পরিমাণ সম্পদ সঞ্চয় করেছিলেন সেই বিষয়ক তথ্য প্রমাণের ঘাটতি।

খরাকবলিত কৃষক যখন পাম্প মালিকদের শিকার

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জামালপুরে একটি নলকূপ থেকে ধানের চারায় পানি দেওয়া হচ্ছে। ছবি: স্ক্রিনশট, মামুনুর রশীদ, অ্যালামি

হিমালয় উদ্ভূত নদী অববাহিকা নিয়েই সাংবাদিকতা করে অলাভজনক নিউজরুম থার্ড পোল। তাদের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের খরাপ্রবণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বিশেষ করে বরেন্দ্রভূমি অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষকের সেচ সংকট ও শোষণের চিত্র। খরার কারণে নদ-নদীর অবস্থান পরিবর্তন এবং ভূ-পৃষ্ঠের পানির স্তর কমে যাওয়ার পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী “ওয়াটার লর্ড” বা “সেচপাম্প মালিকেরা” কীভাবে প্রান্তিক কৃষকদের শোষণ করছে, সেটিই এর মূল উপজীব্য।

প্রতিবেদন অনুসারে, অগভীর নলকূপ নিয়ন্ত্রণকারী সেচপাম্প মালিকেরা কৃষকদের কাছ থেকে পানির বিনিময়ে চড়া মূল্য আদায় করেন এবং খরার সময় দাম বাড়িয়ে এবং অগ্রিম অর্থ নিয়ে শোষণের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, ওয়াটার লর্ড বা সেচ পাম্প মালিকদের এ ধরনের লুটেরা প্রবণতা শুধু শস্য উৎপাদন ও কৃষকদের জীবিকার ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাবই ফেলছে না এমনকি দুইজন আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে। থার্ড পোলের প্রতিবেদনে সরকারী তদারকির অভাব দুর্নীতিকে কীভাবে সহজতর করেছে তার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, কেননা, প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার-নিযুক্ত মোটর অপারেটররা বেসরকারী পাম্প মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে পানির মূল্য নির্ধারণ করে।

জুতোর সুকতলি ক্ষয় করা এই প্রতিবেদনের জন্য প্রতিবেদক কয়েক মাস ধরে এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন এবং ফসল বোনা থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত বিভিন্ন ঋতুতে কৃষকদের জীবন জীবিকার বিষয়কগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কয়েক ডজন সদস্যের সাথে কথা বলে পানির উচ্চমূল্যের প্রভাবগুলো বের করে আনেন। প্রতিবেদক নলকূপের মালিক থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় আইন প্রণেতাদের সাক্ষাতকার নেন, এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর মতো বিষয় তুলে আনতে সক্ষম হন।


মিরাজ চৌধুরী জিআইজেএন বাংলার সম্পাদক। গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা এমআরডিআই-এর কর্মসূচি ও যোগাযোগ প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতায় এক দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে, যার বড় অংশই সম্প্রচার মাধ্যমে এবং ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ে। 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

আইনি সুরক্ষা ও জরুরি সহায়তা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বার্তাকক্ষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রিপোর্টার্স শিল্ড

অনেকটা শূন্য থেকেই গত বছর যাত্রা শুরু করা রিপোর্টার্স শিল্ড বিশ্বেজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর পাশে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অলাভজনক সংস্থাটি স্ট্র্যাটেজিক ল-স্যুটস অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পার্টিসিপেশন—সংক্ষেপে স্ল্যাপের (জনস্বার্থ বিরোধী কৌশলগত মামলা) বিপরীতে আর্থিক ও প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে থাকে। স্ল্যাপ মূলত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে নিরুৎসাহিত আর অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় ।

AI fact checking 2024 elections

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ঠেকাচ্ছে জেনারেটিভ এআই, বৈশ্বিক দক্ষিণে প্রভাব কম

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এআই ব্যবহার করে ভুয়া তথ্যের প্রচার যেমন চলছে, তেমনি সত্যতা যাচাইয়ের কাজও করছে এআই। কিন্তু পশ্চিমের বাইরের দেশগুলোয় তথ্য যাচাইয়ে এআই খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। আছে নানা সীমাবদ্ধতা।

data journalism missing piece mistake

ডেটা সাংবাদিকতা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ডেটা সাংবাদিকতার ১০ সাধারণ ভুল

যে কোনো বিষয়ে জোরালো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে ডেটা সাংবাদিকতা পুরো সংবাদের জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ডেটা সাংবাদিকতা কি সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে? জানতে পড়ুন রোয়ান ফিলিপের বিশ্লেষণ।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চীন-পন্থী প্রচারণা, গুপ্তচরবৃত্তির সরঞ্জাম, সবুজ বিভ্রম: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনলাইনে প্রচারণা, ভুয়া তথ্য, নারী অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর সাইবার হামলা, অবৈধভাবে খনন বা গাছ কাটা বিষয়ে পরিচালিত কয়েকটি অনুসন্ধান জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।