প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Image: Creative Commons

লেখাপত্র

বিষয়

৯ ওয়াচডগ রিপোর্টার ও ভুল থেকে তাঁদের শিক্ষা

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

Montparnasse derailment Creative Commons

ছবি: ক্রিয়েটিভ কমন্স

সাংবাদিকেরা এক ধরনের শিক্ষা কখনো ভোলেন না, বিশেষ করে যখন কোনো কৌশলগত ভুলের কারণে একটি সম্ভাবনাময় অনুসন্ধান ভেস্তে যায়।

নয় জনের একদল বৈচিত্রপূর্ণ অনুসন্ধানী রিপোর্টারের কাছে জিআইজেএন জানতে চেয়েছিল- অনুসন্ধানে নেমে তারা এমন কোনো ভুল করেছিলেন কিনা যা এখনো মনে পড়ে, আর সেখান থেকে তারা কী শিখেছিলেন। 

তাঁদের উত্তরে নাড়া দেওয়ার মতো যে বিষয়টি ছিল, সেটি হল: বেশিরভাগ ভুলের ক্ষেত্রে অসহযোগিতা-প্রবণ সোর্সের সংশ্লিষ্টতা। একারণে, এমন সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগের আগে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন কোনো ভুল করেছেন যেখান থেকে অন্যরাও শিখতে পারেন?

ভুইসিয়েল লাতশোয়ায়ো  – ইনলেস সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ইন সাউদার্ন আফ্রিকা (এসওয়াতিনি) -এর অনুসন্ধানী রিপোর্টার 
Vuyisile Hlatshwayo

এসওয়াতিনির ইনলেস সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের পরিচালক ভুইসিয়েল লাতশোয়ায়ো। ছবি: লাতশোয়ায়োর সৌজন্যে

“যদি একটি অনুসন্ধানী ভুলের কথা বলি, কর্মজীবনে যার পুনরাবৃত্তি চাই না, তা হল সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক জনসংযোগ কর্মকর্তাকে খুব বেশি তথ্য দেয়া। একদল ব্যবসায়ী জোট বেঁধে স্কুল-পোশাকের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে –এমন একটি স্টোরির জন্য স্থানীয় এক নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে আমি এই শিক্ষা পেয়েছি। প্রতিযোগিতা কমিশন নামের সেই সংস্থা আমাকে প্রশ্ন পাঠাতে বলেছিল যেন তারা লিখিত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। কিন্তু দু’দিন পর নতুন দৃশ্যের অবতারণা হয়। জাতীয় পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, কমিশন জনসাধারণকে অবহিত করে যে তারা স্কুল পোশাকের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে তদন্ত করছে! তারা সচেতন নাগরিক সমাজকে অভিযোগ জমা দেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। পুরো তদন্তে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছিল; এমনকি তথাকথিত সেই তদন্ত শেষে প্রতিবেদনটিও পাইনি। এভাবেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমি শিখেছি –  জবাবদিহি করবেন যে সোর্সকে, তাদের খুব বেশি তথ্য দিতে যাবেন না; কারণ আপনার স্টোরিতে জল ঢেলে দিতে তারা সিদ্ধহস্ত।”

 অ্যাক্সেল গর্ড হামলেখো – সুইডেনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এসভিটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদক
Axel Gordh Humlesjö Twitter picture

এসভিটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদক অ্যাক্সেল গর্ড হামলেখো। ছবি: স্ক্রিনশট

“সাম্প্রতিক একটি স্টোরিতে আমরা অনেক গোপন বিষয় নিয়ে কাজ করেছি , যা ছিল একই সঙ্গে সাফল্য ও ব্যর্থতার। অনুসন্ধানটি ছিল প্রায় চার লাখ কর্মী নিয়ে গড়ে ওঠা বিশ্বের বৃহত্তম নিরাপত্তা কোম্পানির ঘুষ লেনদেন নিয়ে। লন্ডনে আমরা একটি সূত্র পেয়েছিলাম – এক সরকারি কর্মকর্তার ভ্রমণের পুরো খরচ সেই কোম্পানিটি দিয়েছে। তাই আমরা হোটেলের বিল চেয়েছিলাম, আর হোটেল সেটি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তাই আমি সেই সরকারি কর্মকর্তার নামের পরে কয়েকটি নম্বর দিয়ে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলি, এবং হোটেলে ফোন দিয়ে বলি: “আমার হোটেলে থাকার বিল মেটাতে চাচ্ছি; আপনি কি আমার সর্বশেষ বিল পাঠাতে পারেন?” ইমেইল ঠিকানা দিলে তারা জানায় যে তারা এখনই পাঠাবে। কিন্তু আমি ইমেইলটি পাইনি – এটি সেই কর্মকর্তার ইমেইলে গিয়েছিল! আমি আবার কল করি, এবং তারা জানায় যে ডেটাবেসে থাকা নিবন্ধিত ইমেইলেই তারা বার্তাটি পাঠিয়েছে। আমি বললাম, ‘আরে না, ওটা তো পুরানো ইমেইল,’ আর তারপর আমি নতুন ইমেইলে বিল পেয়েছিলাম। আপাতত সফল হলেও দুর্ভাগ্যবশত সেই কর্মকর্তা এখন সতর্ক হয়ে গেছে যে আমরা তার পিছু নিয়েছি।

“এই ঘটনা থেকে আমার শিক্ষা হয় যে সৃজনশীলতা ভালো, তবে ফলাফল কী হতে পারে তা বোঝার জন্য আপনাকে সহকর্মীদের সঙ্গে আগে রোল-প্লে করে নিতে হবে। প্রথম কলেই আমি তাদের বলতে পারতাম যে ডেটাবেসে দেয়া ইমেলটি পুরনো ছিল। আপনি যখন দুই ধাপ এগিয়ে ভাববেন তখন আপনাকে আসলে যা ঘটতে পারে তার তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ নিয়েও ভাবতে হবে।”

মার্থা মেনডোজাঅ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) পুলিৎজারজয়ী অনুসন্ধানী প্রতিবেদক 
martha mendoza profile

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের অনুসন্ধানী রিপোর্টার মার্থা মেনডোজা। ছবি: মেনডোজার সৌজন্যে

“আমি কী নিয়ে অনুসন্ধান করছি, তা সবসময় মানুষকে বলে ফেলি – লুকোচুরি করতে পারি না। সিফুড ফ্রম স্লেভস শীর্ষক অনুসন্ধানে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক খাবারের অনেক চালান ট্র্যাক করেছি। আমি একটি চমৎকার সিফুড প্রদর্শনীতে গিয়েছিলাম, আর প্রথম দিন সকালেই সবার আগে প্রদর্শনীর পরিচালকের সাক্ষাৎকার নিয়ে নিই। ভেবেছিলাম: তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামুদ্রিক খাবার আমদানির দায়িত্বে ছিলেন, তাই ক্যামেরার সামনে তাকে পেতে হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল, তিনি সেখানকার সব কোম্পানিকে উদ্দেশ্য করে আমার ছবিসহ একটি ব্লগ পোস্ট লিখেছেন, এবং বলেছেন ‘এপির মার্থা মেনডোজা এখানে শ্রম নিপীড়ন নিয়ে খবরাখবর নিচ্ছেন; তাঁর সঙ্গে আপনাদের কথা বলার দরকার নেই।’ এরপর, আমি যতবারই কোনো সিফুড কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের আচরণ ছিল অনেকটা এমন, ‘না, আমরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’ আমি যে দরজা খুলে বলব, ‘আমার কাছে আপনার কোম্পানির রপ্তানি রেকর্ডসহ বেশ কিছু কাগজ আছে, আমরা সামুদ্রিক খাবার ট্র্যাক করেছি; আমাদের কাছে অমুক ছবি আছে’ – তাও সম্ভব হয়নি। আলোচনাই শুরু করতে পারিনি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য সেই সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল।”

মিয়া মালানভেকিসিসা সেন্টার ফর হেলথ জার্নালিজমের (দক্ষিণ আফ্রিকা) প্রধান সম্পাদক  
Mia Malan

ভেকিসিসা সেন্টার ফর হেলথ জার্নালিজমের প্রধান সম্পাদক মিয়া মালান। ছবি: মালানের সৌজন্যে

“আমি একটি বিষয় শিখেছি যে পরিসংখ্যানের জন্য সেকেন্ড-হ্যান্ড সোর্সকে কখনো বিশ্বাস করতে নেই। বিষয়টি সহজ শোনালেও অনেক সাংবাদিক তা আমলে নেন না; যেমন, কোনো এক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৈশ্বিক পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করছেন, সেটি তার নিজের সংস্থার বা দেশের নয়; অথবা ধরুন, কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সংগঠন বিষণ্ণতায় ভোগা জনগোষ্ঠীর ওপর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, যেখানে অন্য উৎস থেকে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এধরনের উৎসে যে কত ভুল থাকে, সেটি দেখে আমি অবাক হয়েছি। যেখান থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেই মূল উৎসটি যাচাই না করা পর্যন্ত পরিসংখ্যানটি বিশ্বাস করবেন না, উদ্ধৃতও করবেন না। গবেষণা জার্নালের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, তা সে যতই মর্যাদাপূর্ণই হোক। মূল গবেষণাটি খুঁজে বের করুন, যাচাই করুন, আর দেখুন এটি ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিনা। আপনি দেখে অবাক হবেন যে গবেষকেরা তাঁদের যুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কত হরহামেশা ফলাফলকে ‘ঘুরিয়ে’ তুলে ধরেন।”

ডেভিড ম্যাকসোয়েইন প্রোপাবলিকার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অনুসন্ধানী প্রতিবেদক  
David McSwane profile picture

প্রোপাবলিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ডেভিড ম্যাকসওয়ান। ছবি: স্ক্রিনশট

“আমি এক লোকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই ভুল করেছি; [এমন লোকেরা] কথা চলতে চলতে বলে বসবেন, “এটি কি অফ দ্য রেকর্ড?’ উত্তরে হয়ত আমি বলব, “আচ্ছা, অফ দ্য রেকর্ড কি না, এ ব্যাপারে আমাদের একমত হতে হত’ – আর আমি ভেবেছি বিষয়টি নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। কিন্তু এরপর তারা বলবে: ‘আমি তো মনে করেছি আমরা অফ দ্য রেকর্ডে ছিলাম।’ এখান থেকে আমি শিখেছি: এমনটা ধরে নেওয়া ঠিক নয় যে সোর্সেরা সাংবাদিকতার নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিত। তাই বিষয়টি আগেই একদম পরিস্কার করে নেওয়া ভালো: ‘এই আলোচনা রেকর্ড করা হচ্ছে। অফ রেকর্ডে বলতে চাইলে আমরা অন্য কোনো সময় তা করতে পারি, অথবা এখনই অফ রেকর্ডের কথা সেরে নিতে পারি, আর পরে অন রেকর্ডে থাকব।” আপনি নিশ্চয়ই চাননা, কেউ প্রতারিত বোধ করুক।

ম্যাকসোয়েইন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যোগ করেন: “আপনার সত্যিকারের আগ্রহ আছে, এমন বিষয় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী স্টোরি বেছে নিতে হবে, কারণ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আপনার খাটাখাটনি বাড়বে — যে বিষয়ে আপনার তেমন আগ্রহ নেই, সে বিষয়ে বেশি দূর যেতে পারবেন না।”

রোজা ফার্নোক্সদ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের (যুক্তরাজ্য) স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদক

Rosa Furneaux profile picture

টিবিআইজে অনুসন্ধানী স্বাস্থ্য প্রতিবেদক রোজা ফার্নোক্স। ছবি: স্ক্রিনশট

“আমার ভুল ছিল, সাক্ষাৎকারে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জবাবদিহি করতে গিয়ে আমি যতটা উচিত তার চেয়ে বেশি আন্তরিকতা দেখিয়ে ফেলেছি, এবং খুব তাড়াহুড়ো করে সাক্ষাৎকারটি সারতে হয়েছে। আমাকে এমন অবস্থাতেও পড়তে হয়েছে, যেখানে আমি জানি আমার সোর্স খুব চালু এবং তারা আমার সঙ্গে বসতে রাজি হবে, আর আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হত তাদেরকে সরাসরি কঠিন প্রশ্ন করে ভড়কে দেব নাকি নরম সুরে কথা বলে আরেক দফা সাক্ষাৎকারের জন্য রাজি করাব।  আমি ঠিক ধরতে পারিনি, তাই কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই সোর্সের  কাছে গিয়েছিলাম — আমার হাতে তেমন শক্ত প্রমাণও ছিল না, তাই ভড়কে দেওয়ার মতো কঠিন প্রশ্ন করার সাহস হয়নি, ততক্ষণে বুঝে গেছি তাদের আর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারের জন্য পাওয়া যাবে না। তারা বলেন: ‘তো, আমি এরইমধ্যে আপনার সঙ্গে কথা বলে ফেলেছি।’ অথচ আর সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করলেই জানতে পারতাম তাদের ঠিক কোন কোন কঠিন প্রশ্নগুলো করতে হবে, আর সেই সুযোগ আসা মাত্র, আমার প্রয়োজনীয় প্রশ্নেরও উত্তর  পেতাম এবং দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।”

জুলিয়ানা ডাল পিভা ইউওএল নোটিসিয়াসের কলামলেখক এবং গ্লোবোর (ব্রাজিল) সাবেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদক 
Juliana Dal Piva profile picture

ইউওএল নোটিসিয়াস কলামলেখক জুলিয়ানা ডাল পিভা। ছবি: স্ক্রিনশট

“ব্রাজিলের সামরিক স্বৈরশাসনের সময় রাজনৈতিক গুমের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে আমি একটি ভুল করেছিলাম, যেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বছরখানেক আগের কথা, তখন তথ্যগুলোও ছিল বেশ অগোছালো। একদিন, পত্রিকা অফিস থেকে আমাকে একটি রিপোর্ট করতে বলা হল, হাতে সময় ছিল মাত্র ২৪ ঘন্টা; বিষয় হল, এক স্বৈরশাসকের সময়ে রিও ডি জেনেইরোতে হওয়া রাজনৈতিক গুমের ঘটনা। এর অর্থ হল, নিখোঁজ ও মৃত্যুদণ্ডের শিকার মোট ৫০০ ভুক্তভোগীর প্রায় ৩০টি ঘটনা সংকলন করা যেখানে পরিবারগুলো মৃতদেহ কবর দিতে পেরেছে। দুর্ভাগ্যবশত, বিভিন্ন সমীক্ষা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ডেটায় চোখ বুলাতে গিয়ে আমি একটি নাম ভুলে গিয়েছিলাম। 

“কয়েক মাস পর, মতামতের জন্য প্রথমবারের মতো অবমুক্ত করা স্বৈরশাসনের নথিগুলো আমি যখন খতিয়ে দেখছিলাম, এমন একটি নথির সন্ধান পেলাম যেখানে ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো স্বৈরশাসন এক গেরিলার মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করছে। আমি নিশ্চিত ছিলাম, কেবল আমিই সেই বিশাল তালিকায় তার [সেই গেরিলার] নামটি লক্ষ্য করেছি, কারণ আমিই সেই ভুলটি করেছিলাম, এবং এরপর মারিও আলভেসের নাম ও ইতিহাস আর কখনোই ভুলিনি। ভুল আপনাকে শেখায়।”

আলেকজান্ডার ব্রুটেল – ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেটিভ ফোরামের (ফ্রান্স) পরিচালক 
Alexandre Brutelle

এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টিগেটিভ ফোরামের পরিচালক আলেকজান্ডার ব্রুটেল। ছবি: স্ক্রিনশট

দক্ষিণ তিউনিসিয়ায় একটি ফরাসি-তিউনিসীয় কোম্পানির বেআইনি ফ্র্যাকিং (ভূমিতে পাথরের স্তর খনন করে জ্বালানি তেল বা গ্যাস আহরণ) কার্যক্রম অনুসন্ধান চলাকালে আমাদের কাজ ছিল সাহারা মরুভূমির তিউনিসিয়া অংশে পুকুরের ‘সন্ধান’ করা – যদিও আগ্রহের বিচারে এটি অনেক বড় এলাকা। সার্চের পরিধি ছোট করে আনতে গিয়ে আমরা শুধু অনলাইনে কোম্পানিটি কোথায় কোথায় তেল-গ্যাস উত্তোলনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছে সেটাই খুঁজছিলাম, কিন্তু কাজ হচ্ছিল না, আমরা কিছুই পাইনি। তাই, কয়েক সপ্তাহ ধরে, নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে আমরা ৪০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি এলাকা পর্যালোচনা করে গেছি, সম্ভাব্য সবকিছুই ম্যাপিং করেছি, অথচ তার অবস্থান দেশটির দক্ষিণে যে কোনও স্থানে হতে পারত। কাজ শেষে, আমরা বুঝতে পেরেছি ইটিএপির (তিউনিসিয়ার জাতীয় তেল সংস্থা) ওয়েবসাইটে এরইমধ্যে একটি মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে উত্তোলনের অনুমতি পাওয়া জায়গাগুলোও দেখানো রয়েছে৷ এখান থেকে আমরা শিখেছি, গুগলে ‘কোম্পানি এক্স তেল উত্তোলনের অনুমতি’ লিখে না খুঁজে বরং শুরুতে প্রাথমিক ডেটা সোর্সে খোঁজা জরুরি। তাই জ্বালানি তেল নিয়ে  অনুসন্ধানের শুরুতে সরাসরি – ‘তেল উত্তোলনের অনুমতির রেজিস্ট্রি’ বা একই ধরনের সার্চ-প্রশ্ন দিয়ে গুগল করার চেষ্টা করুন!

ড্যান ম্যাকক্রাম – ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের (যুক্তরাজ্য) অনুসন্ধানী প্রতিবেদক 

জিআইজেএনের একটি সাম্প্রতিক ওয়েবিনারে, ম্যাকক্রাম জার্মানির ইলেকট্রনিক লেনদেনের বড় কোম্পানি অয়্যারকার্ডে ব্যাপক জালিয়াতি অনুসন্ধানে তার নিজের করা দুটি পরস্পর-সম্পর্কিত ভুলের ওপর জোর দিয়েছেন। 

Dan McCrum

ফাইনান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ড্যান ম্যাকক্রাম। ছবি: ম্যাকক্রামের সৌজন্যে

“২০১৬ সালের শুরুর দিকে, শেয়ারের দাম কমানোর আশায় শর্ট সেলারদের একটি নতুন দল বেনামে তাদের অভিযোগ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয় — যা শর্ট সেলার হামলা হিসাবে পরিচিত। তারা আগেভাগেই একটি ফাইল [যাতে একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন ছিল] আমার হাতে ধরিয়ে দেয়, আর আমি ভেবেছি এটি জার্মান নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে তদন্তে নামতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমি আসলে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আমি এই স্টোরির ‘মালিকানা’ নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম আমিই হব এটি নিয়ে লেখা প্রথম ব্যক্তি  – আর মনে হয়েছিল যে ফাইলটি সবার জন্য উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। আর এখানেই ভুল করে বসি। আমি ঠিক করি যে [প্রতিবেদনটি] প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত আমি কারো মতামত জানতে চাইব না, কারণ তারা চায় না কোম্পানিটি এ বিষয়ে কিছু জানুক। তাই ফাইলে যে রিপোর্ট ছিল আমি তা ঠিকভাবে যাচাই করতে পারিনি। তো, আমি শুধু খুব ছোট একটা ব্লগ লিখেছি, যেখানে শুধুমাত্র মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছিল যে এরকম একটি রিপোর্ট বেরিয়েছে – এবং তাতে রিপোর্টটির একটি লিঙ্ক দেয়া ছিল।

“তো, এফটি-তে একটা কথা প্রচলিত আছে; আপনি যদি জানতে চান: ‘ আমাদের কি এটি একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে নেওয়া উচিত?’ তাহলে উত্তরটিও আপনার জানা আছে। ব্লগ পোস্টে মাত্র কয়েকটি বাক্য ছিল, তাই মনে হয়েছিল এটি নিরাপদ হবে; আর সেটাই ছিল মস্ত ভুল — কারণ অয়্যারকার্ডের আইনজীবীরা হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছিল যে, এই [গোপনীয়] রিপোর্টটি প্রকাশের জন্য ফাইনান্সিয়াল টাইমস দায়ী, আর সবকিছু মিলে আমরা একটি শোচনীয় পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছিলাম। তার মানে, অয়্যারকার্ড পরের বছরের যেকোনো সময়ে একটি মানহানির মামলা দায়ের করতে পারে। এর অর্থ হল, এই ১০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে যা আছে আমি তার কিছুই লিখতে পারব না; অয়্যারকার্ডের জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা দুঃসাহসী কাজ হত। আমি মনে করি, এই ঘটনা অন্যদের এই বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানে ভীত করেছে। আমি কিছুটা হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে সম্পাদকের সমর্থন সবসময়ই আমার সঙ্গে ছিল। ভাগ্যক্রমে, স্টোরি আরও স্টোরি আনে, এবং অবশেষে হুইসেলব্লোয়াররা এগিয়ে আসে।”

আরও পড়ুন

সাক্ষাৎকার গ্রহণের কৌশল

ইনভেস্টিগেটিভ ট্যাকটিকস দ্যাট রিপোর্টার্স লাভ

মেঘা রাজগোপালান: হোয়াট আই হ্যাভ লার্নড অ্যাবাউট ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম 


Rowan-Philp-140x140রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

পরামর্শ ও টুল

ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া একাডেমিক গবেষণা নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন

একাডেমিক গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে নেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। ফলে ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া গবেষণা অনেক সময় তৈরি করতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। পড়ুন, কীভাবে এমন ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন।

গাইড পরামর্শ ও টুল

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অনুসন্ধানের রিপোর্টিং গাইড: সংক্ষিপ্ত সংস্করণ

জাতিসংঘের মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হচ্ছেন বৃহত্তম বিভক্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। কার্যত প্রতিটি রিপোর্টিং বীটেই প্রতিবন্ধী বিষয়ক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা বা কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

Using Social Network Analysis for Investigations YouTube Image GIJC23

পরামর্শ ও টুল

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শক্তিশালী টুল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস

ডেটা-চালিত সাংবাদিকতার যুগে, বিভিন্ন বিষয়কে একসঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে যুগান্তকারী সব তথ্য উন্মোচন করা সম্ভব। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস (এসএনএ) ঠিক এমন একটি কৌশল, যা ব্যবহার করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা ঠিক এ কাজটিই করতে পারেন।

পরামর্শ ও টুল

বৈশ্বিক সহযোগিতা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ গতিপথ 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এ সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তি এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিন অভিজ্ঞ সাংবাদিক।