Image: Rocky Kistner for GIJN
নব্য সংগঠিত অপরাধ: অপরাধীদের নাগাল পেতে যা করবেন
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
সুইডেনে ১৩তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (#GIJC23) প্যানেল পরিচালনার সময় অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা পল রাদু বলেছেন, সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধান আসলে মানব চরিত্রের গভীরে গিয়ে অন্বেষণ করার মতোই।
ইউরেশিয়া অঞ্চলে অপরাধ ও আন্তঃসীমান্ত আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ রাদু ব্যাখ্যা করে বলেন, সাধারণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তুলনায় সংগঠিত অপরাধের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুতর, কারণ এটি একরকমের জীবনধারা। “ব্যাপক সম্পদের মালিক হলেও, এসব অপরাধীর চোরাই পণ্য কেনা থামে না।”
আলোচক প্যানেলটি গঠন করা হয় প্রবীণ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে। গত এক দশকে সংগঠিত অপরাধ কীভাবে বিকশিত হয়েছে এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কী করণীয় সে সম্পর্কে প্রবীণ এ সাংবাদিকেরা তাদের অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টি তুলে ধরেন। অ্যানাবেল হfর্নান্দেজ মেক্সিকোতে ড্রাগ কার্টেল এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগসূত্র উন্মোচন করেছেন; বার্টিল লিন্টনার এশিয়ার ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’-এ সংগঠিত অপরাধবিষয়ক একজন লেখক ও বিশেষজ্ঞ; আইআরপিআই মিডিয়ার পরিচালক জিউলিও রুবিনো এবং আইআরপিআই সিনিয়র রিপোর্টার সিসিলিয়া আনেসি ব্যাপকার্থে ইতালির মাফিয়া গোষ্ঠী কভার করেছেন।
রুবিনো ইতালির সংগঠিত অপরাধ জগতে ও প্রজন্মগত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন। প্রথাগত মাফিয়া কর্তারা, তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেন, যারা একসময় বুদ্ধিমান আর প্রভাবশালী ছিল, তারা এখন বার্ধক্যগ্রস্ত। এই শূন্যতা তরুণ প্রজন্মকে উত্থানের জায়গা করে দিয়েছে – যদিও তিনি উল্লেখ করেন যে, তাদের মধ্যে অনেকেই “ড্রয়ারের সবচেয়ে ধারালো ছুরি নয়।” উত্তর ইউরোপের কিছু বন্দরের ওপর ইতালীয় মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ আলবেনিয়া ও মরক্কো থেকে আসা দলগুলোর কাছে চলে গেছে, যা গতিপ্রকৃতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
রুবিনো আরও উল্লেখ করেন, অপরাধী সংগঠনগুলো ব্যবসায়িক বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করছে। মাদক পাচার থেকে আসা তাদের অবৈধ লাভ রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করছে, যার ফলে গরীব এলাকা রাতারাতি ধনী এলাকায় পরিণত হয়েছে এবং ভাড়াও বাড়ছে। বিষয়টিকে সামনে তুলে ধরতে মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজে নামে আইআরপিআই। তারা নগদনির্ভর ব্যবসা— যেমন রেস্তোঁরাতে আকস্মিক পুঁজির বৃদ্ধি শনাক্ত করার জন্য একটি অ্যালগরিদম তৈরি করে। মাফিয়াদের সঙ্গে জড়িত ব্যবসাগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখাতে সক্ষম হন যে, সংগঠিত অপরাধের কারণে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ফলস্বরূপ, বাসিন্দারা তাদের সহযোগিতা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
খ্যাতনামা মেক্সিকান সাংবাদিক হার্নান্দেজ, যিনি কয়েক দশক ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধী চক্রের সঙ্গে লড়ছেন, তার আলোচনায় সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধানে অপরাধী গোষ্ঠীর বাইরেও চোখ রাখার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগ, ব্যবসায়ী, ব্যাংক থেকে শুরু করে বড় আন্তর্জাতিক কর্পোরেশনও বিভিন্ন অবৈধ কাজের সহযোগী। মাদক পাচারের পাশাপাশি, অপরাধী সংগঠনগুলো মানব পাচার, পরিবেশ বিপর্যয় এবং অন্যান্য অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
“সিনালোয়া কার্টেল নিয়ে অনুসন্ধানের সময় আমি শুধুমাত্র বিচার বিভাগ ও পুলিশ রিপোর্টের মতো সরকারি ভাষ্যের ওপর নির্ভর না করতে শিখেছি, কারণ প্রায়ই তাদের বিভিন্ন স্বার্থ থাকে। আসল গল্পটি উন্মোচন করার জন্য, আমাদের আরও দুটি মূল সোর্সের দিকে যেতে হবে,” হার্নান্দেজ বলেন। তিনি ভুক্তভোগীসহ সংগঠিত অপরাধী দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার ওপর জোর দিয়েছেন: “ধাঁধার বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন অংশগুলো হাতে পাওয়ার পরই আমাদের প্রকৃত তদন্তের কাজ শুরু হয়।”
রাদুও বলেছেন, পেশাদারিত্ব বজায় রাখলে এবং অপরাধীদের কথা বলার সুযোগ দিলে, তা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে। তবে তাঁর মতে, “সাংবাদিকদের এ সময় সতর্ক থাকতে হবে, কারণ অপরাধীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করতে আপনার চ্যানেল ব্যবহার করতে চাইতে পারে।”
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের অপরাধী চক্র এবং গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন লিন্টনার, যার মধ্যে রয়েছে চীনা কারাগারে “ব্রোকেন টুথ কোই” এর মুখোমুখি হওয়া। ওয়ান কুওক কোই, একজন প্রাক্তন ট্রায়াড নেতা— তার সঙ্গে স্মরণীয় সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনি জেনে অবাক হবেন যে তারা কখনও কখনও ভীষণ খোলামেলাও হতে পারে।” লিন্টনার আরো বলেন, সাংবাদিকদের সবসময় এই ধরনের যাত্রা শুরু করার আগে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ও সোর্সের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
সংগঠিত অপরাধ ট্র্যাক করার জন্য প্রিয় টুলগুলো নিয়ে আলোচনার সময়, লিন্টনার বলেন যে এই ধরনের অপরাধ অনুসন্ধানের জন্য খুব বেশি বিশেষায়িত সফ্টওয়্যার নেই। “কিন্তু এই হার্ডওয়্যারটি অপরিহার্য,” তিনি তার হাঁটুতে টোকা দিয়ে বলেন। “রাস্তায় নামুন, মানুষের সঙ্গে কথা বলুন এবং মাঠে উপস্থিত থাকুন,” তিনি পরামর্শ দেন। এনজিও, স্থানীয় এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- অপরাধের বিরুদ্ধে যাদের সক্রিয় হওয়ার ক্ষমতা নেই, কিন্তু পরিস্থিতি সম্পর্কিত মূল্যবান তথ্য রয়েছে এবং তারা তা জানাতে ইচ্ছুক।
আইআরপিআইয়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আনেসি বলেন, যদিও ইতালিতে অপরাধী সংগঠনগুলো ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, তবুও তাদের মূল আয়ের উৎস এখনও কোকেন পাচার। তিনি ক্যালাব্রিয়াতে সক্রিয় ‘এনদ্রাংঘেতা’র মতো গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এবং সেখানে অনুপ্রবেশের চ্যালেঞ্জগুলো ব্যাখ্যা করেন: “কাউকে এটা বোঝানো সত্যিই কঠিন যে আপনি তার সপ্তম সন্তান।”
আনেসি, বনেদি দালালদের উত্থানের কথাও উল্লেখ করেছেন যারা একাধিক ভাষায় কথা বলে এবং প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন। এরা সংগঠিত অপরাধের জগতটাকেই বদলে দিচ্ছে। আনেসির দলটি একটি সুনির্দিষ্ট ধরণ আবিষ্কার করেছে: অপরাধী সংস্থাগুলোর ভুয়া ব্যাংক ব্যবহার করে। সেখানে দেখা যায়, ভুয়া ব্যাংকিং লাইসেন্স ব্যবহার করে অফশোর ট্যাক্স হ্যাভেনে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করেছে। এভাবে সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলো বন্ডের মতো আর্থিক ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়।
আনেসি প্রথাগত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর জোর দিয়েছেন। তবে তিনি অপরাধী সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করার একটি উদ্ভাবনী উপায় হিসাবে প্যারাডাইস এবং প্যান্ডোরা পেপারসের মতো কেলেঙ্কারির উদাহরণ টানেন। “এসব তথ্যফাঁসের ঘটনা সুইজারল্যান্ড ও অন্যান্য অঞ্চলের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিনিময় এবং তা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের চিত্র সামনে এনেছে। যেহেতু সংগঠিত অপরাধ আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে, সাংবাদিকদেরও তাই নিজ দেশের সীমান্তের গণ্ডি পেরিয়ে কাজ করতে হবে,’’ উল্লেখ করেন তিনি।