প্রবেশগম্যতা সেটিংস

GIJC21, COP26 protest
GIJC21, COP26 protest

Image: Shutterstock, Mauro Ujetto

লেখাপত্র

বিষয়

কপ২৬ থেকে সরাসরি: জলবায়ু পরিবর্তন কাভারেজে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

GIJC21, COP26 protest

ছবি: মাউরু উয়েত্তো / শাটারস্টক

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের শেষ দিকে সম্মেলনস্থল থেকে পাঁচ খ্যাতিমান সাংবাদিক একটি সেশনে অংশ নেন এবং পরিবেশ রিপোর্টিংয়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এই লেখায় থাকছে সেই সেশনের সারসংক্ষেপ।

“জলবায়ু পরিবর্তন এই শতকের সবচেয়ে বড় স্টোরি হতে যাচ্ছে। একশ বছর পর মানুষ জিজ্ঞাসা করবে, ‘এই ইস্যু কাভারের জন্য আপনারা কী করেছেন?’” দ্বাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের (#জিআইজেসি২১) একটি প্যানেলে এমনটাই বলেছেন ইন্টারনিউজের আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (ইজেএন) প্রধান নির্বাহী জেমস ফান। ইজেএন, ৭ হাজারের বেশি সাংবাদিকের একটি বৈশ্বিক কমিউনিটি, যাঁরা পরিবেশগত নানা বিষয় কাভার করেন। ইজেএন ফেলোদের নিয়ে আয়োজিত এই সেশন সমন্বয় করেন জেমস ফান। পৃথিবীর জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে ওঠা এই সংকট কাভারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছেন ইজেএন ফেলোরা। 

২৬তম কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ২৬) বা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন পাঁচটি দেশের সাংবাদিকেরা। পরিবেশের অগোচরে রয়ে যাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে কী ধরনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে, তা নিয়েই তাঁরা আলাপ করেছেন । 

২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ২১-এর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে মিশ্র অনুভূতি দেখা যাচ্ছে। “এই আলোচনাগুলোতে (সমাধানের পথে) তিন ধাপ এগোয় তো আড়াই ধাপ পেছায়,” বলেছেন অভিজ্ঞ পরিবেশ সাংবাদিক এবং থার্ড পোল প্রজেক্টের দক্ষিণ এশিয়া ডিরেক্টর, জয়দীপ গুপ্ত। “আমাদের অবশ্যই আরও অনেক বেশি কিছু করার আছে… এসব আলোচনা বরাবরই স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। এবং এগুলোই শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারণী অ্যাজেন্ডায় প্রতিফলিত হয়।”

বিশ্বনেতারা গ্লাসগো ছেড়ে যাওয়ার পরে জিআইজেসি২১-এর এই সেশন অনুষ্ঠিত হয়। গ্লাসগোতে সে সময় শেষ মুহূর্তের নানা চুক্তি সম্পাদনের জন্য থেকে গিয়েছিলেন নিচের সারির কর্মকর্তা ও আমলারা। তাঁদের এসব চুক্তির ওপরই নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। “এটি আমার ষষ্ঠ জলবায়ু সম্মেলন (কপ) এবং আমি এখানে যা দেখেছি, তাতে নিশ্চিতভাবেই আশাবাদী হওয়ার জায়গা আছে,” বলেছেন আর্জেন্টাইন পরিবেশ সাংবাদিক এবং চায়না ডায়ালগ-এর লাতিন আমেরিকা সম্পাদক ফারমিন কুপ। “আমার মনে হয়, এই সপ্তাহে আমরা কয়লা, জীবাশ্ম জ্বালানি, বন ধ্বংস ইত্যাদি নানা বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তির ঘোষণা পেয়েছি। এখন আমাদের দেখতে হবে সরকারগুলো সত্যিই সেসব বাস্তবায়ন করে কি না। সম্মেলন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এটিই বড় চ্যালেঞ্জ। 

জিআইজেসি২১-এর প্যানেল আলোচনায় জাম্বিয়ার সাংবাদিক এবং প্যান প্যাসিফিক নিউজ এজেন্সির সিনিয়র প্রতিনিধি মিলড্রেড মুলেঙ্গা তুলেছেন বিভিন্ন দেশের মধ্যে থাকা অসমতার সংবেদনশীল ইস্যুটি। তিনি বলেছেন, “আফ্রিকার গ্রুপগুলো চায় আফ্রিকাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও অভিযোজনের লক্ষ্যে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। কারণ তারা বলছে, বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে আফ্রিকা মহাদেশের অবদান মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু জলবায়ু সংকটের কারণে তাদের সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে।” 

কপ২৬-এর সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যু ছিল চরম মাত্রায় দূষণ সৃষ্টিকারী জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন কয়লা) থেকে সরে আসা। “পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও চিলির মতো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়লা-ব্যবহারকারী দেশগুলো এ নিয়ে অঙ্গীকার করেছে,” বলেছেন ফিলিপিন্স নেটওয়ার্ক অব এনভায়রনমেন্ট জার্নালিস্টসের (পিএনইজে) প্রতিষ্ঠাতা ইমেলদা আবানো

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়লানির্ভর দেশগুলো এটিতে স্বাক্ষর করেনি,” বলেন আবানো। তবে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের শেষ নাগাদ “অনিয়ন্ত্রিত” কয়লা প্রকল্পগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত কয়লা প্রকল্পগুলোতে নির্গমিত কার্বন বাগে আনা বা অন্য কিছুতে রূপান্তর করে ফেলার কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় না। সেপ্টেম্বরে, চীনও ঘোষণা দিয়েছে যে তারা বিদেশে আর কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে না।  

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চিরহরিৎ বনাঞ্চলসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আদিবাসী মানুষেরা হচ্ছেন সেরা তত্ত্বাবধানকারী। পৃথিবীর ভূমি ও বনাঞ্চল রক্ষায় তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে আদিবাসী কমিউনিটিগুলোকে ১.৭ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। কুপ বলেন, “প্রতিবছর কপ-এ, আদিবাসীরা একটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের দায়িত্বটাও বেশ বড় এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাঁদের অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে।” 

তবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো অবৈধভাবে গাছ কাটা ও খনি পরিচালনার মতো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পরিবেশগত অপরাধীদের কাছ থেকে ক্রমাগতভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। গত বছর মেক্সিকোতে আদিবাসীদের ওপর যে ৩০টি প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে, তার অর্ধেকই ছিল জলবায়ু ইস্যুতে। কুপ বলেন, “পরিবেশবাদী ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দের ওপর সহিংসতার ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকাই সবচেয়ে ভয়ানক অঞ্চল।” 

সব মিলিয়ে, পরিবেশবাদী কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২০ সালে কলম্বিয়ায় ৬৫ জন “ভূমি ও পরিবেশ রক্ষক” খুন হয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে এমন হত্যাকাণ্ডের (২২৭ জন) প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এমন তথ্য জানা গেছে লন্ডনভিত্তিক অনুসন্ধানী এনজিও, গ্লোবাল উইটনেস সূত্রে। সংখ্যাটি ২০১৯ সালের (২১২ জন হত্যা) চেয়েও বেশি। গ্লোবাল উইটনেস বলছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে যেসব পরিবেশবাদী কর্মী খুন হয়েছেন, তাদের ৭০ শতাংশই বনভূমি ধ্বংস ও শিল্পকারখানা গড়ে তোলা প্রতিরোধ করতে চেয়েছিলেন।  

ইজেএন পরিবেশগত অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের জন্য ফেলোশিপ ও অনুদান দিয়ে থাকে, সেকথাই সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেন জেমস ফান। আর অন্য বক্তারা, জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিস্তৃত পরিসরের কিছু প্রতিবেদনের আইডিয়া তুলে ধরেন, যেগুলো এখনো অগোচরেই রয়ে গেছে: 

  • জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আর্থিক সহায়তা বা বিনিয়োগের বিষয়টি কতটা স্বচ্ছ এবং কারা এই অর্থ পাবে? সব অনুদান/বিনিয়োগে একই মাত্রার স্বচ্ছতা থাকে না। ফলে এটি একটি সম্ভাবনাময় জায়গা, যেখানে ডেটা সাংবাদিকেরা এগিয়ে আসতে পারেন। অর্থের উৎস অনুসন্ধান করে, তাঁদের ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং সেগুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। 
  • উপকূলবর্তী শহর ও কমিউনিটিগুলো কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে? যেমন, কীভাবে তারা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নেবে? সরকার কি বিশালাকারের কনক্রিট দেয়াল তৈরির পরিকল্পনা করছে, যেটি উপকূলীয় ভাঙন সৃষ্টি করবে? নাকি সুরক্ষামূলক ম্যানগ্রোভ বন তৈরির মতো আরও বেশি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের কথা চিন্তা করছে?
  • সামুদ্রিক পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ছে? উপকূলীয় এলাকার বাইরেও লবণাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ায় সেগুলো খাওয়া বা কৃষিতে সেচকাজে ব্যবহার করায় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। 
  • জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কোন ধরনের স্থানীয় স্টোরিগুলো তুলে ধরা যায়? জলবায়ু পরিবর্তন এই গ্রহের সবার ওপরই প্রভাব ফেলবে, এবং এটির প্রভাবসংক্রান্ত প্রান্তিক পর্যায়ের কোনো গল্পও খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যার কেন্দ্রে আছে মানুষের মুখ। 
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমন নীতিমালার কি কোনো নেতিবাচক পরিবেশগত বা সামাজিক প্রভাব আছে? যেমন, কোনো নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প নিয়েও যদি কোনো সমস্যাজনক কিছু দেখা যায়, তাহলে সাংবাদিকদের অবশ্যই সেটি নিয়েও অনুসন্ধান করতে হবে। 

কপ২৬ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ফান এই গুরুতর ইস্যুটি তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার গুরুত্বের প্রতি জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আপনার অনুসন্ধানের একটি সত্যিকারের প্রভাব আছে। এগুলো সত্যিই মানুষকে সাহায্য করে, বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।”

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

জিআইজেএনের দুই দশক

জিআইজেএনের বর্ষপূর্তি। কুড়ি বছর আগে কয়েকটি অলাভজনক সংগঠন বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকতার সমর্থনে একটি নেটওয়ার্ক গঠনের লক্ষ্যে একাট্টা হয়েছিল৷ সেটি ছিল ২০০৩ সালে, কোপেনহেগেনে আয়োজিত দ্বিতীয় গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স। তারপর থেকে, আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমাদের প্রসারে আমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছি।