প্রবেশগম্যতা সেটিংস

ছবি: শাটারস্টক

লেখাপত্র

লেখাপত্র

বিষয়

যেভাবে অ্যালগরিদমের ক্ষতিকর প্রভাব অনুসন্ধান করবেন এবং এআই নিয়ে অতি-কথন এড়াবেন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

গত জানুয়ারিতে, ডেটা সায়েন্টিস্ট ও সাংবাদিক জিয়ানলুকা মাউরো নিজেকে একটি পরীক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেখতে চাইছিলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করা ছবিগুলোকে নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত অ্যালগরিদম আসলে কী করে।

তিনি নিজের শার্টবিহীন, ও লম্বা প্যান্ট পরিহিত একটি ছবি পোষ্ট করেন। মাউরোর এই সেলফি মাইক্রোসফটের ক্লাসিফায়ার এআই টুলে “অশ্লীলতা’’র জন্য মাত্র ২২% স্কোর পায়যার অর্থ ছবিটি সম্ভবত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে প্রচার করা যাবে।

তিনি পরবর্তীতে ওই একই পোশাকের ওপর শুধু একটি ব্রা যোগ করে পোস্ট করেন এবং দেখতে পান অ্যালগরিদম হঠাৎ করেই ছবিটিকে ৯৭% অশ্লীল’’ স্কোর দিয়েছে। এর অর্থ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছবিটিকে ছড়াতে দেবে না, দমিয়ে রাখবে। 

মাউরো, ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিলকে শেলম্যানকে সঙ্গে নিয়ে যে বিশদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখেছেন, তাতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদমে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে এমন অনেক বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে। যেমন: গর্ভবতী নারীর পেট, নারীদের অন্তর্বাস, এমনকি নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শগুলোকে অ্যালগরিদম “যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ”  হিসেবে দেখিয়েছে এবং অন্যায়ভাবে এর বিস্তার দমিয়ে রেখেছে৷ অথচ, পুরুষদের একই ধরনে বৈশিষ্ট্যযুক্ত ছবি সহজেই এআই-চালিত পরীক্ষায় যথাযথ বলে উত্তীর্ণ হয়েছে। 

অন্যান্য অ্যালগরিদমেও সাংবাদিকেরা একই রকম সুস্পষ্ট জাতিগত পক্ষপাতের হদিস পেয়েছেন, যা আরো ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশু কল্যাণ নিয়ে অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত, নেদারল্যান্ডসে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে পরিচালিত অভিযান, অপর্যাপ্ত আবাসন বরাদ্দ ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারির মতো বিষয়ও এর মধ্যে রয়েছে।

ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্সের বার্ষিক ওয়াচডগ সাংবাদিকতা সম্মেলন আইআরই২৩-এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা আয়োজন করে পুলিৎজার সেন্টার। এতে অংশ নেন শেলম্যান এবং আরও দুজন বিশেষজ্ঞ। তারা অ্যালগরিদমের ক্ষতিকর প্রভাব চিহ্নিত করা এবং এধরনের ব্যবস্থার পেছনে থাকা মানুষ-প্রভুদের জবাবদিহি করার উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ তুলে ধরেন।

প্যানেলিস্টদের আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল: এই অনুসন্ধানগুলো মূলত মানুষের নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং জনগোষ্ঠীর ওপর তার প্রভাব বোঝার চেষ্টা, নিছক কোডকে বিশ্লেষণ করা নয়।

খানিকটা ব্যাঙ্গ করে শেলম্যান বলেন, “কোনো সত্যিকারের অ্যালগরিদম দেখলে আমি হয়তো বুঝতেই পারতাম না যে এটা দিয়ে কী করতে হবে।”

তাই, এসব জটিল পদ্ধতিকে ভালো করে বোঝার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির চেয়েও ইমেইল থ্রেডের মত সাক্ষ্য-প্রমাণ, হিউম্যান ট্রেনিং ইনপুট, ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার এবং সাধারণ ডেটা সাংবাদিকতার চর্চা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্যানেলে অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ও এআই প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ গ্যারেন্স বার্ক, এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফরমেশন টেকনোলজি পলিসির কম্পিউটার সায়েন্সের পিএইচডি শিক্ষার্থী সায়াশ কাপুর।

“এই প্রযুক্তিগুলোতে পক্ষপাত ঢুকিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে,” বলেন বার্ক। ‘‘আপনি শিক্ষা বা পুলিশিং বা রাজনীতি যা-ই কভার করুন না কেন, জনস্বার্থের এআই সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট স্টোরি খুঁজে পেতে পারেন।’’

এআই নিয়ে অতি-কথনের কুপ্রভাব এড়ানো

কলম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউয়ের সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে, শেলম্যান, কাপুর এবং ডালাস মর্নিং নিউজের প্রতিবেদক আরি সেন ব্যাখ্যা করেন যে এআই “মেশিন লার্নিং” পদ্ধতি মোটেও সংবেদনশীল বা স্বাধীন নয়। এ ধরনের ব্যবস্থা আগের কম্পিউটার মডেলগুলোর চেয়ে আলাদা; কারণ, এগুলো কিছু ডিজিটাল নির্দেশনা অনুসরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং “ডেটার মধ্যকার প্যাটার্ন সনাক্ত’’ করতে পারে।

“খুঁটিনাটিতে পার্থক্য থাকলেও, সুপারভাইজড লার্নিং টুলগুলো মূলত লেবেল যুক্ত ডেটার কম্পিউটার লার্নিং প্যাটার্ন,’’ তারা লিখেছেন । এ সম্পর্কে তারা সতর্ক করেছেন এই বলে যে শুনতে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি মনে হলেও “সেলফ-সুপারভাইজড লার্নিং” এর মতো কৌশলগুলো যা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে স্বাধীন চিন্তায় সক্ষম নয়, বরং স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেবেল করা মাত্র।

সুতরাং, যেসব লেবেলযুক্ত ডেটাসেট ও অ্যানোটেশন থেকে অ্যালগরিদমগুলো শেখে (মোটাদাগে, এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া মানব-চালিত, যা কম্পিউটারকে সমরূপ জিনিস খোঁজার প্রশিক্ষণ দেয়) সেটিই এই বিটের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্নের সবচেয়ে বড় উৎস। যেমন, লেবেলযুক্ত ডেটাসেটগুলো কি অ্যালগরিদম-প্রভাবিত সমস্ত জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে? কারা এই লেবেলগুলো যুক্ত করেছে? এগুলোর কি নিরীক্ষা হয়েছে? সংযুক্ত লেবেলগুলো কি ঐতিহাসিক বৈষম্যকে অন্তর্ভুক্ত করে? যেমন, আপনি যদি পুরোনো কোনো প্রকৌশল কোম্পানিতে চাকরির আবেদনকারীদের মূল্যায়নের জন্য কোনো বেসিক হায়ারিং অ্যালগরিদমকে প্রশ্ন করেন, তবে সেটি নারী প্রার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক ফলাফল দিতে পারে, কারণ অতীতে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মীর ডেটা সম্ভবত “পুরুষ” বৈশিষ্ট্যের লেবেলযুক্ত হবে।

গোটা বিশ্বে, সরকারি সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অ্যালগরিদমিক টুলের পেছনে প্রচুর টাকা খরচ করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, স্বয়ংক্রিয় স্কোরিং সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধার জন্য অর্থবন্টন সহজ করা।

আইআরই২৩-এর আলোচনায় কাপুর বলেছেন, এ ধরনের ব্যবস্থায় পক্ষপাত ও অনিচ্ছাকৃত ক্ষতির বিষয় তো দেখতেই হবে, তবে এর পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে সেগুলো আদৌ তাদের বর্ণিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে যথাযথভাবে কাজ করছে কিনা।

আরি, তার একটি অনুসন্ধানে ঠিক এরকমই একটি অ্যাঙ্গেল সামনে এনেছিলেন। প্রতিবেদনটি ২০২২ সালে ডালাস মর্নিং নিউজে প্রকাশিত হয়েছিল। এর বিষয়বস্তু ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮টি কলেজ ও শত শত স্কুল অঞ্চলে ব্যবহৃত একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সার্ভিস। আরি সেন এখানে শিক্ষার্থীদের ওপর অবৈধ নজরদারির বিষয়টি আবিস্কার করেন এবং ব্যয়বহুল টুলটি যে উদ্দেশ্যের কথা বলে ব্যবহার করা হচ্ছিল সেই কাজে একটিবারের জন্যও ব্যবহারের কোনো প্রমাণ তিনি খুঁজে পাননি।

tips investigating algorithm AI bias Dallas Morning News surveillance

ডালাস মর্নিং নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কলেজগুলোতে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মহত্যা ও গোলাগুলি প্রতিরোধ বিষয়ক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ওপর অবৈধ গোপন নজরদারির বিরক্তিকর প্রমাণ উঠে এসেছে। ছবি: স্ক্রিনশট, ডালাস মর্নিং নিউজ

কাপুর ব্যাখা করে বলেন, “গণমাধ্যম যে একটি বিষয় মিস করেছে, তা হলো, ‘এই টুল কী আদৌ কাজ করে? যেমন, কিছু এআই হায়ারিং টুল র‌্যানডম নম্বর জেনারেটরের ওপর নির্ভর করে যা ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে আলাদাভাবে সনাক্ত করতে অক্ষম।’’

এ সম্পর্কে কাপুর সতর্ক করেছেন এই বলে যে, বহুলচর্চিত অবাস্তব সব দাবি, বিভ্রান্তিকর পপ সংস্কৃতির উপস্থাপনা, এবং গণমাধ্যমে ভুল বিবৃতির কারণে এআই নিয়ে এত কিছু ছড়িয়েছে যে অনুসন্ধান শুরুর আগে সাংবাদিকদের জন্য প্রথমে কনসেপচুয়াল এরর বা ধারণাগত ত্রুটিগুলো পরীক্ষা করা জরুরি হয়ে উঠেছে।

“প্রকাশনায় পক্ষপাতের মতো বিষয়গুলোর কারণে এআইয়ের পারফরম্যান্স পদ্ধতিগতভাবে অতিরঞ্জিত করা হয়,” কাপুর বলেন। “তারকা ব্যক্তিত্বরা এআই নিয়ে বাড়িয়ে বলেন তারা প্রায়ই আপনাকে বিশ্বাস করাতে চান যে এআই সিস্টেমগুলো মূলত ঈশ্বরের মতো, এবং এভাবে তারা প্রকৃত বিষয়গুলো থেকে সবার মনোযোগ সরিয়ে নেন। এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব, পক্ষপাত এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলো নজরে আনতে হবে। তাছাড়া আমাদের সন্নিকট ঝুঁকিগুলোর দিকেও দৃষ্টি দেয়া উচিত।”

এআই ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মাধ্যমের অ্যালগরিদম সম্পর্কিত ৫০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে কাপুর ও তার এক সহকর্মী ১৮টি “পুনরাবৃত্তিমূলক ত্রুটি” চিহ্নিত করেছেন, যা সাংবাদিকদের অজান্তেই পাঠকদের বিভ্রান্ত করে তোলে।

অ্যালগরিদম নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অনুসন্ধান করার জন্য এখানে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের একটি তালিকা দেয়া হলো:

  • যেহেতু এ অ্যালগরিদমগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন, তাই সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে এমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুঁজে বের করুন। “এটি জটিল, যেহেতু বেসরকারি সংস্থাগুলো ফোয়া (ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট)-এর আওতায় পড়ে না, তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে ‘বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কীভাবে কাজ করে?’ ” শেলম্যান বলেন।
  • ইমেইলের দিকে মনোযোগ দিন। বার্ক বলেন, “ইমেইল অনুসরণ করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ইমেইলগুলো আপনাকে সেই সব ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে যারা এই প্রযুক্তি নিয়ে উচ্ছসিত, এবং সেইসব সরকারি কর্মকর্তাদেরও যারা এই টুলকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান।” শেলম্যান আরও যোগ করেন, “ইমেইলগুলো দেখাতে পারে যে, মানুষ যেসব এআই টুল ব্যবহার করতে যাচ্ছে সেগুলো নিয়ে তারা কী ধারণা পোষণ করে।’’ 
  •  আপনি নিজে সরাসরি অ্যালগরিদমগুলো পরীক্ষা করুন। শেলম্যানের পরামর্শ হলো, সাংবাদিকদের অ্যালগরিদমকে বেঞ্চমার্ক করতে হবে, অর্থাৎ একনজরে পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফলকে অপরের পাওয়া ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে হবে। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন মেট্রিক্স জুড়ে সম্ভাব্য পক্ষপাতের জন্য ওপেনএআই ক্লাসিফায়ার টুলগুলো পরীক্ষার কথা বলেছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, রিপোর্টারেরা অ্যালগরিদম পরীক্ষার জন্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ট্রায়াল অ্যাকাউন্ট সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে পারেন। “সাংবাদিকেরা এআই টুলগুলো চালিয়ে দেখতে পারেন এবং তারপর এগুলোকে প্রচলিত পার্সোনালিটি টেস্টের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে পারেন,” শেলম্যান উল্লেখ করেন। 
  • এআই জবাবদিহিতার “যদি-তবে’’ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। শেলম্যানের পরামর্শ: “এআই টুল ব্যবহারকারি এজেন্সিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করুন: ‘আপনারা যদি বলেন যে এআই সিদ্ধান্ত নেয় না, বরং আপনারাই তা নেন, তাহলে কেন এমন একটি টুলের জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ করবেন যার কাজ হলো মানুষকে তালিকাভুক্ত করা এবং এরপর তা উপেক্ষা করা?’”
  • অ্যালগরিদমের কর্মক্ষমতার অডিট হয়েছে কিনা জানতে চান। তবে এ বিষয়ক পর্যালোচনায় কর্পোরেট “হোয়াইটওয়াশিং” এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। “সরকারি সংস্থাগুলোতে ব্যবহৃত টুলের কার্যকরিতা অডিট ও মূল্যায়ন হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে দারুণ কোনো বিষয় উঠে আসতে পারে,” বার্ক বলেন, “কলোরাডোতে খুঁজে পাওয়া একটি অডিটে আমরা দেখেছি যে মামুলি একটি টুল সামাজিক কর্মীদের কাছে ৩০ শতাংশের বেশি পরিবারকে [শিশুদের জন্য] উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ  হিসেবে তুলে ধরেছেএ ধরনের নিশ্চিত পক্ষপাত সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন।”
  • যদি ট্রেনিং লেবেল ডেটা না পান তবে অ্যালগরিদমের জন্য নির্বাচিত “ভেরিয়েবলস” এবং “ওয়েটস” বিষয়ক ইনপুট সম্পর্কে জানতে চান। “আমরা প্রচুর ফোয়া অনুরোধ পাঠিয়েছি এবং প্রায় ক্ষেত্রেই যেসব তথ্য পেয়েছি তার মধ্যে রয়েছে অ্যালগরিদম তৈরির জন্য নির্বাচিত কিছু ভেরিয়েবলস, অর্থাৎ টুলটি যা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা চালাচ্ছে সে বিষয়ক ডেটা পয়েন্ট, এবং ভেরিয়েবলগুলোর বিপরীতে নির্ধারিত ওয়েটস ইনপুট,” বার্ক বলেন। ‘‘সুতরাং, বলতে পারেন যে, ‘অ্যালগরিদমটি আপনার পরিবারে পাঁচ ভাইবোন থাকার বিষয়টিকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে?’ আপনি যদি এই দুটি জিনিস হাতে পান তাহলে সত্যিকারের হাতির আকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন, এমনকি ট্রেনিং লেবেল ডেটা না থাকলেও, যেটি পেতে আপনাকে একটি দীর্ঘ লড়াইয়ে নামতে হতে পারে।’’
  • পেটেন্ট ডেটাবেসগুলো খতিয়ে দেখুন, বিশেষ করে, যে কোম্পানিগুলো বর্তমানে নতুন টুলসের জন্য ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করছে। “ট্রেডমার্ক হচ্ছে যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই অ্যালগরিদমের সাথে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোকে একত্রিত করে,” বলেন শেলম্যান।
  • এ বিষয়ক আইনজীবী ও পরামর্শদাতাদের সাথে কথা বলুন। শেলম্যান আরো বলেন, “আমার মূল সোর্স হচ্ছে অ্যাটর্নিরা, কোম্পানিগুলো মাঝে মাঝে কিছু কাজের জন্য তাদের ডাকে এবং তাদের এ সিস্টেমগুলো সম্পর্কে খানিকটা জ্ঞান রয়েছে।”
  • হিউম্যানয়েড রোবটের ছবি এড়িয়ে চলুন। এআই ও অ্যালগরিদম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে হিউম্যানয়েড রোবটের ছবি ঢালাওভাবে ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করে কাপুর বলেন, এটি গণমাধ্যমের এমন একটি চর্চার উদাহরণ যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে, বিশেষ করে, এ ধরনের সিস্টেম যেখানে সাধারণত “একটি স্প্রেডশিটের মতো কাজ করে” এবং যেখানে উন্নত বা অত্যাধুনিক হার্ডওয়্যার প্রযুক্তির প্রয়োজনই হয় না।
  • ক্রাউডসোর্সড ডেটা দিয়ে অ্যালগরিদমের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করুন। তবে শেলম্যান এক্ষেত্রে সতর্ক করে দেন যে, ক্রাউডসোর্সিং “শেষ অবলম্বন” হওয়া উচিত, কারণ এই কৌশলটি শ্রম-নিবিড় এবং এতে গুরুতর লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ জড়িত থাকতে পারে, যেমনটা ডের স্পিগেল ২০১৯ সালে জার্মানির ক্রেডিট স্কোরিং সিস্টেম নিয়ে অনুসন্ধানে খুঁজে পেয়েছিল।
  • অ্যালগরিদমটি পরিবর্তন বা আপডেট করা হয়েছে কিনা এবং কেনতা জিজ্ঞেস করুন। যদি তাই হয়, শেলম্যান বলেন, সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে অন্যান্য গ্রাহকেরা এখনও সেই টুলের পুরোনো সংস্করণটি ব্যবহার করছেন কিনা এবং তাতে কী ধরনের ত্রুটি বিদ্যমান এবং তা কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • প্রযুক্তির প্রভাবের শিকার হয়েছেন এমন মানুষের দিকে মনোযোগ দিন। কীভাবে অ্যালগরিদম র‌্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা যায় তা বোঝার জন্য সাংবাদিকদের এপির ট্র্যাকড অনুসন্ধানী সিরিজটি খুটিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বার্ক।
  • লেবেলিং প্রক্রিয়াকে প্রশ্ন করুন। প্যানেলিস্টরা সাংবাদিকদের বলেছেন, এআই সরবরাহকারীদের অবশ্যই এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করা উচিত: “প্রশিক্ষণ পর্যায়ের ডেটাগুলো কী বৃহত্তর জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে?” “প্রশিক্ষণ ডেটাসেটটি কী ১০০ সারির মতো একটি ছোট নমুনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে?” “কে এই লেবেলিং করছে?” “সংস্থাটি কি কখনও তাদের প্রশিক্ষণের ডেটাগুলোকে ব্লাইন্ড (পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে এমন সংবেদনশীল তথ্য বা লেবেলিং অপসারণ) কিংবা অডিট (ডেটাসেটের মধ্যে পক্ষপাত, ভুল বা অন্যায্য তথ্য চিহ্নিত করতে প্রশিক্ষণ পর্যায়ের ডেটার পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষা) করেছে?”

বার্ক বলেন: “আপনি যদি ধৈর্যশীল হন এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক রিপোর্টিং করেন তবে আপনি এই টুলগুলোর প্রকৃত প্রভাব খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন।”

শেলম্যানও সাংবাদিকদের অ্যালগারিদম ঘিরে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ক যে কোনো ধরনের অতীত ভীতি কাটিয়ে  উঠতে উৎসাহিত করেন। “আমি একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, এমনকি আমি কোডও করি না, তাই যে কেউ এই কাজটি করতে পারে,” তিনি উল্লেখ করেন। “বেশিরভাগ সাংবাদিকই উন্মোচন করেছেন যে এই টুলগুলো কারাবন্দী, চাকরির আবেদনকারী, সামাজিক সেবা প্রত্যাশীসহ অনেকের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে এখন একমাত্র পথ হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত টুলগুলোর পরিবর্তন।”

আরও পড়ুন

১০ থিংস ইউ শুড নো অ্যাবাউট এআই ইন জার্নালিজম

টেস্টিং দ্য পোটেনশিয়াল অব ইউজিং চ্যাটজিপিটি টু এক্সট্র্যাক্ট ডেটা ফ্রম পিডিএফস

জার্নালিস্টস গাইড টু ইউজিং এআই অ্যান্ড স্যাটেলাইট ইমেজারি ফর স্টোরিটেলিং


Rowan Philp, senior reporter GIJNরোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

পদ্ধতি

স্বল্প সময়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তি সম্পর্কে ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য অনুসন্ধানের টিপস

অনুসন্ধানী কাজকে প্রায়ই ম্যারাথনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদেরও কখনো কখনো দৌড়াতে হয় গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। কখনো কখনো তাদেরও খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার প্রয়োজন হতে পারে। ওপেন সোর্স অনুসন্ধান এবং অন্যান্য প্রথাগত রিপোর্টিং কৌশল ব্যবহার করে কীভাবে কাজটি করা যায়— তা নিয়ে কার্যকরী কিছু পরামর্শ পড়ুন এখানে।

পদ্ধতি

যে ৮টি উপায়ে বিনা খরচে একাডেমিক গবেষণা পেতে পারেন সাংবাদিকেরা 

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের সময় সাংবাদিকদের প্রায়ই খোঁজ করতে হয় সে সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণাপত্র। কিন্তু অনেক জার্নালে পেওয়ালের বাধ্যবাধকতা থাকে, যেগুলোর সাবস্ক্রিপশন কেনা ব্যয়বহুল হতে পারে বার্তাকক্ষ ও ব্যক্তি-সাংবাদিকদের জন্য। কীভাবে বিনামূল্যে বিভিন্ন গবেষণাপত্রে প্রবেশাধিকার পেতে পারেন— তা নিয়ে আটটি উপকারী পরামর্শ পাবেন এখানে।

পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

আপনার পরবর্তী অনুসন্ধানকে গেমিফাই করবেন যেভাবে

একজন উবার ড্রাইভার বা শরণার্থীর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন পড়লে আপনি হয়তো সে সম্পর্কে শুধু জানতেই পারবেন। কিন্তু প্রতিবেদনটি যদি কোনো গেমের মতো করে সাজানো হয়, যেখানে আপনাকে খেলতে হবে সেই ড্রাইভার বা শরণার্থীর ভূমিকায়? তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই তাদের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। পাঠক-দর্শককে এভাবে স্টোরির সঙ্গে একাত্ম করে তোলার জন্য অনেক নিউজরুম তাদের অনুসন্ধানকে দিয়েছে গেমের আদল। পড়ুন, এ সংক্রান্ত কিছু কেস স্টাডি ও পরামর্শ।

Aerial image of luxury villas in France

পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

ফ্রান্সসহ নানা দেশে জমি ও বাড়ি বেচাকেনা যেভাবে অনুসন্ধান করবেন

নিজ দেশে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে অনেকেই জমি বা স্থাবর সম্পত্তি কেনেন ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব অর্থের উৎস ব্যাখ্যা করা যায় না। এবং সেগুলো হতে পারে বড় ধরনের দুর্নীতির ইঙ্গিত। এই লেখায় ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে বিদেশে এমন জমি ও বাড়ি কেনাবেচা নিয়ে অনুসন্ধানের কৌশল।