Investigative journalists in Brazil have uncovered government mismanagement and corruption in dealing with the COVID-19 pandemic. Image: Jorge Hely Veiga, Shutterstock
মহামারি-পরবর্তী সময়ের জন্য ৫ ধরনের ডেটাভিত্তিক স্টোরির আইডিয়া
বিশ্বের অনেক জায়গায় টিকাদান কর্মসূচি চলছে জোরেশোরে। অনেক জায়গায় বুস্টার ডোজও দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, কোভিড-১৯ মহামারির বুঝি শেষ দেখা যেতে শুরু করেছে। কিছু দেশ অবশ্য এখনো সংক্রমণের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে অন্যরা অর্থনীতি সচল করার এবং শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক খাতের প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে।
২০২০ সালে, মহামারি শুরুর পর থেকে, কোভিড-১৯ নিয়ে ডেটাভিত্তিক রিপোর্টিং কয়েকটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে। শুরুতে, বেশির ভাগ মনোযোগই ছিল খোদ মহামারিটিরই ওপর: এর গতিবিধি পরিবর্তনের ধরন, সংক্রমণের প্রবণতা ইত্যাদি। পরবর্তীকালে এটি ছিল টিকাদানের হার ও সক্ষমতাকেন্দ্রিক।
কিন্তু ডেটা দিয়ে আপনি এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু করতে পারেন। মহামারি, তার পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করার পর ডেটা দিয়ে ভাইরাসের পরিবর্তন ও প্রভাব তুলনা করা যায়, আমাদের বর্তমান ব্যবস্থাপনার ত্রুটির দিকে আলোকপাত করা যায়, এবং পরবর্তী বড় বিপর্যয় রুখে দেওয়া বা তার প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান তুলে ধরা যায়।
বিষয়টির দিকেই মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল কোভিড-১৯ এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ডেটা স্টোরিটেলিং শীর্ষক কর্মশালায়। ২০২১ সালের জুনে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালা আয়োজন করেছিল ওয়ান-ইফরা এপ্যাক (ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজ পাবলিশার্স, এশিয়া প্যাসিফিক কমিটি)। সহযোগিতা দিয়েছিল গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ।
এই কর্মশালার তিনটি সেশনে, আমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৪৬টি সংবাদমাধ্যমের ২৮৩ জন সাংবাদিকের সঙ্গে শেয়ার করেছি: মহামারি ও জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে তাঁরা ডেটা ব্যবহার করে কীভাবে রিপোর্টিংকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারেন।
ডেটা সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ
কর্মশালা থেকে আমার একটি বড় শিক্ষা হলো, মহামারি-পরবর্তী অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিকদের এখন থেকেই ডেটা সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ শুরু করা উচিত।
এশিয়ার অনেক দেশের সরকারই ডেটা শেয়ার করে বছরওয়ারি। ২০২০ সালের ডেটা এখন ছাড়া হচ্ছে, যা দিয়ে সাংবাদিকেরা মহামারির প্রভাব পর্যালোচনা করতে পারবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। যেমন, কারা মহামারির সুযোগ নিয়ে নিজেদের আরও সমৃদ্ধিশালী করেছে?
যেমন, মহামারি-সংক্রান্ত কেনাকাটা ও নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক দেশের সরকারেরই ছিল অবাধ স্বাধীনতা। তারপরও ব্রাজিলের সাংবাদিকেরা ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখেছেন যে সরকারিভাবে রেসপিরেটর কেনার ক্ষেত্রে কীভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে। নাইজেরিয়ায় একই রকমের একটি অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে এসেছে: কীভাবে অনেক বাড়িয়ে দেওয়া দামে কেনা হয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলার প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
দুর্বল গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব পরিমাপ
মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটিগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া এবং সরকারি ত্রাণ ও বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে সাংবাদিকদের সহায়তা করতে পারে, ডেটা। ভালো একটি প্রতিবেদন তৈরি হতে পারে এই ধরনের প্রশ্ন ঘিরে:
- মহামারির ৬ থেকে ১২ মাস পর, সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছে?
- মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সন্তানদের কী হয়েছে?
- সরকারি সহায়তা কি সত্যিই যাদের কাছে পৌঁছানো দরকার, তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে?
- কেউ কি মহামারি-সংক্রান্ত নীতি বা প্রকল্পগুলোর ফায়দা নিয়েছে?
বৈষম্য ট্র্যাকিং
মহামারি যদি আপনার দেশে শ্রেণি বিভাজন ও বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দেয়, তাহলে খুব সম্ভব টিকাদান কর্মসূচিতেও একই অবস্থা হবে।
সাংবাদিকদের জন্য ডেটা ব্যবহার করে অনিয়ম উন্মোচন এবং পরিবর্তনের দাবি জানানোর এটি আরেকটি সুযোগ। ভালো একটি উদাহরণ হতে পারে টরন্টোভিত্তিক স্বাধীন সংবাদ ম্যাগাজিন দ্য লোকাল-এর প্রতিবেদন। তাতে ম্যাপ ব্যবহার করে দেখানো হয়, অন্টারিওর টিকাদান কর্মসূচির পরিকল্পনা থেকে টরন্টোর সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত এলাকাগুলো কীভাবে বাদ পড়ে গেছে।
পরবর্তী রোগের অপেক্ষা
কর্মশালায় আলোচিত আরেকটি প্রশ্ন ছিল: কীভাবে পরবর্তী সংক্রমণ ঠেকানো বা তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। এ ধরনের অনুমানভিত্তিক বিষয়গুলো সাংবাদিকদের কাজের জায়গায় না পড়লেও, তারা এমন সংক্রমণের সঙ্গে জড়িত অন্য নির্দেশকগুলো (যেমন, বন্য প্রাণীর ব্যবসা ও বনাঞ্চল ধ্বংস) পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং মানুষকে জানাতে পারেন।
ডেটায় নতুন দক্ষতা কাজে লাগান তাৎক্ষণিকভাবে
প্রতিবেদনের ধারণা ও রিপোর্টিং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা ছাড়াও কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেওয়া হয়েছে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের আদর্শ চর্চা ও অনলাইন টুল বিষয়ে।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ নতুন শেখা দক্ষতাগুলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কাজে লাগাতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন মালয়েশিয়ার চীনা ভাষার সংবাদপত্র সিনচেউ ডেইলির কয়েকজন সাংবাদিক। তাঁরা মালয়েশিয়ার সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরও কার্যকরভাবে তুলে ধরার জন্য অনলাইন ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল ফ্লোরিশ দিয়ে তৈরি ইন্টারঅ্যাকটিভ চার্ট ব্যবহার করেছেন।
লেখাটি আদিতে প্রকাশিত হয়েছিল ওয়ান-ইফরা ওয়েবসাইটে। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। লেখক কুয়েক সের কুয়াং কেং বক্তা হিসেবে অংশ নেবেন আগামী ২ নভেম্বর, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের এই সেশনে: ডেটা সাংবাদিকতা: কোথায় ছিলাম, কোথায় যাচ্ছি।
আরও পড়ুন
হাও দ্য কোভিড-১৯ প্যানডেমিক হ্যাজ শেপড ডেটা জার্নালিজম
টিপস অন মেকিং এফওআইএ রিকুয়েস্টস অ্যাবাউট কোভিড-১৯
কোভিডে মৃত্যুর সত্যিকারের হিসেব যেভাবে বের করেছেন ব্রাজিলের ডেটা সাংবাদিকরা
করোনাভাইরাস ডেটা কোথায় পাবেন এবং কোন টুল দিয়ে বিশ্লেষণ করবেন
কুয়েক সের কুয়াং কেং কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া-ভিত্তিক একজন পুরস্কারজয়ী ডিজিটাল সাংবাদিক। জিআইজেএন-এ তাঁকে নিয়ে প্রোফাইল করা হয়েছে। এবং তিনি ডেটা-এন-এর প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে সাংবাদিকদের শেখানো হয় প্রাত্যহিক রিপোর্টিংয়ে কিভাবে ডেটা সাংবাদিকতা অন্তর্ভূক্ত করা যায়। ডেটা, ভিজ্যুয়াল ও ইন্টারঅ্যাকটিভ উপাদানের মাধ্যমে স্টোরিটেলিং আরও আাকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে ফরেন পলিসি, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, মিডিয়াকর্প ও মালয়েশিয়াকিনির মতো সংবাদমাধ্যমকে সহায়তা করেছে ডেটা-এন।