

কলকারখানার দূষণ উন্মোচন এবং বিট হিসেবে ‘ফরএভার কেমিকেলস’ এর জন্ম হলো যেভাবে
সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই পরিবেশ বিষয়ক অনুসন্ধানে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফরাসি অনুসন্ধানী সাংবাদিক স্তেফান হোরেল কাজ করেন লা মন্দে পত্রিকার হয়ে। দূষণ, কীটনাশক আর বিষাক্ত পণ্য নিয়ে তিনি যখন কাজ করতে শুরু করেন, তখন কিন্তু এ ধরনের অনুসন্ধানকে “মহান” কোনো বিষয় হিসেবে মনেই করা হতো না।
হোরেল ২০২৪ সাল থেকে আইসিআইজে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এর সদস্য। তিনি বৈজ্ঞানিক মিথ্যাচার বা ভুল তথ্য দেওয়া, লবি করে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করেন। ২০ বছরেরও বেশি সময়ের পেশাজীবনে অনুসন্ধানকে তিনি স্বভাবজাত বলে ধরে নিয়েছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। ইউরোপীয় সাংবাদিকতার সম্মানজনক পুরস্কার লুইস ওয়েইস এবং ফরএভার পলিউশন প্রকল্প সমন্বয়ের জন্য ২০২৪ সালের ইউরোপিয়ান সায়েন্স জার্নালিস্ট পুরস্কার জয় করেন। মনসান্তো পেপারস অনুসন্ধানের জন্য ২০১৮ সালে তাঁর ঝুলিতে যায় ইউরোপীয় প্রেস পুরস্কার, প্রতিবেদনটি তিনি স্তেফান ফুকারের সাথে যৌথভাবে লিখেছিলেন।
পড়েছেন রুশ সাহিত্য নিয়ে। অবসরে কোলাজ (এক ধরনের শিল্পকর্ম) তৈরি করতে ভীষণ পছন্দ করেন (তাঁর কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে দেখা যায়)। অনুসন্ধানে ব্যবহার করেন সৃজনশীল পদ্ধতি। তবে সতর্ক লেখনির সাথে যদি কিছু সূক্ষ্মরসবোধ যোগ হয়—নিশ্চয়ই তা মন্দ নয়?

স্তেফান হোরেল তাঁর “ফরএভার পলিউশন” প্রকল্পের জন্য ২০২৪ সালে বর্ষসেরা ইউরোপিয়ান সায়েন্স জার্নালিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন। ছবি: স্ক্রিনশট, ইএফএসজে
জিআইজেএন: আপনি যে অনুসন্ধানগুলো করেছেন, এর মধ্যে কোনটি আপনার প্রিয় এবং কেন?
স্তেফান হোরেল: সবসময় সর্বশেষ অনুসন্ধানটিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। কেননা আমার মনে-প্রাণে তার রেশ রয়েছে। ফরএভার পলিউশন আর ফরএভার লবিং প্রকল্পে আমি তিন বছর ধরে পিএফএএস (এক ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিক যৌগ। পানি, তেল ও তাপ প্রতিরোধী হওয়ার কারণে বিভিন্ন শিল্প ও ভোক্তা পণ্যে ব্যবহৃত হয়। পিএফএএস সহজে ভাঙে না, তাই এটি বছরের পর বছর পানি, মাটি ও মানবদেহে থেকে যেতে পারে। এজন্যই একে “ফরএভার কেমিকেলস” বলা হয়) অর্থাৎ “ফরএভার কেমিকেলস” এর ফলে সৃষ্ট দূষণ নিয়ে কাজ করছি। ভীষণ উপভোগ করেছি কাজের সময়গুলো। শিল্প দূষণ নিয়ে এটা আমার প্রথম কাজ। আর দূষণের মতো অদৃশ্য বিষয়কে সবার সামনে দৃশ্যমান করে তোলার প্রক্রিয়াটি সত্যিই রোমাঞ্চকর। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা একটি মানচিত্র প্রকাশ করি। এতে ইউরোপে পিএফএএস দূষণের মাত্রা কী পরিমাণ ছড়িয়েছে তা দেখানো হয়। শিল্পদূষণের ভয়াবহ প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে এগুলো কীভাবে টিকে আছে আমরা তা সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হই। পুরো দলের জন্য বড় সন্তুষ্টির কারণ হচ্ছে, আমরা জনস্বার্থে কাজ করতে পেরেছি এবং পরিবেশ বিভাগ থেকে বিষয়টিকে বের করে এনে রাজনৈতিক ও ইউরোপীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।
আমরা যেভাবে কাজগুলো শেষ করেছি, তাও ছিল দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। আন্তঃসীমান্ত অনুসন্ধান সমন্বয় করাটা আমার জন্য ছিল নতুন কিছু। অনেকটা সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজের জন্য একটি সম্পাদকীয় দল তৈরির মতো: আপনাকে সাংবাদিকদের এমন একটি দলের মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টি করতে হবে, যাদের বেশিরভাগই একে অপরকে চেনেন না এবং যারা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসেছেন, এবং তাদের সঙ্গে আপনার কোনো সাংগঠনিক সম্পর্কও নেই। এই পর্যায়টা পেশাগত দিক থেকে তো বটেই, মানুষ হিসেবেও চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি আমি সত্যিই ভীষণ উপভোগ করেছি।
এছাড়াও এই অনুসন্ধানটির জন্য অনেক কিছু নতুনভাবে ভাবতে হয়েছিল। যেমন, সবচেয়ে কঠিন ও সত্য তথ্যকে সামনে আনতে বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের এক টেবিলে বসানো পাশাপাশি স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতিবজায় রাখা যায়। এ কাজটিকে আমরা “এক্সপার্ট-রিভিউড জার্নালিজম” বলে অভিহিত করি।
জিআইজেএন: আপনার দেশ/অঞ্চলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
“ইউরোপের মধ্যে আমরাই একমাত্র দেশ, যেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন নেই, এবং এই ধরনের সামষ্টিক ও পেশাদারী চিন্তাভাবনার অভাব একটি বড় ধরনের ঘাটতি।” — স্তেফান হোরেল
স্তেফান হোরেল: লাতিন আমেরিকা বা এশিয়ার দেশগুলোতে পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে যেসব সাংবাদিকেরা কাজ করছেন আমি যখন তাদের সঙ্গে তুলনা করি, তখন সত্যিই আমি কর্মপরিবেশ নিয়ে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করি। কেননা ওখানে যাঁরা কাজ করেন তাদের কোম্পানির চাপ সামলানো নয়, বরং মাথায় গুলি খাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ পর্যন্ত যতবার আমাকে চাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি হাসতে হাসতে বলেছি: ‘কখনো নয়, আমি আমার বাড়িতে বসে গোলাপি স্লিপার পায়ে দিয়ে শান্তিতে কাজ করি।’ কিন্তু এই অনুসন্ধানটির ক্ষেত্রে—যেখানে কয়েকশো বিলিয়ন ইউরোর লেনদেন—প্রথমবারের মতো আমি নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আমার বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করা হয়, ক্যাফে থেকে আমার একটি ব্যাগ চুরি হয়… এসব হয়তো নেহাতই কোনো সাধারণ ঘটনা, তবে আমি অভিযোগ করেছি। আমার সংবাদপত্রের পক্ষ থেকেও পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে রিপোর্ট করা হয়। এর মানে এই নয় যে আমি থমকে যাবো, তবে এ ঘটনাগুলো খুব একটা স্বস্তিদায়কও ছিল না।
ফ্রান্সে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে গুরুত্ব না দেওয়া। আমরা ইউরোপের এমন একটি দেশ, যেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন নেই। সংগঠনের অভাব আমাদের জন্য একটি বড় ঘাটতি। আমরা এমন একটি সাংস্কৃতিক আবহে রয়েছি যেখানে সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে রিপোর্টেজ সাংবাদিকতা করা হয়, তা বেশি গুরুত্ব পায়। ফ্রান্সের সবচেয়ে সম্মানজনক সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রিক্স আলবের লন্ড্রেস, এই ধরনের সাংবাদিকতাকে সম্মান জানায়। তাছাড়া ফ্রান্সে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা রাজনৈতিক ও আর্থিক গল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে, অন্যান্য অনুসন্ধানী বিষয়গুলো তুলে আনা সহজ নয়… যেমন, শিল্প দূষণের ঘটনা উন্মোচনের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন।
জিআইজেএন: আপনার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জীবনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
স্তেফান হোরেল: এ পর্যন্ত, আমি যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করেছি (কীটনাশক, রাসায়নিকের ব্যবহার), এগুলো অনুসন্ধানের বিষয় হিসেবে ধরাই হতো না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে—এমন বিষাক্ত কিছু পণ্য নিয়ে অনুসন্ধানের পর ২০০৮ সালে আমি আমার প্রথম বই “লা গ্রান্দে ইনভ্যাজিওন” (“দ্য গ্রেট ইনভেশন”) লিখি। বৈজ্ঞানিক বৃত্তের বাইরে এ বিষয়গুলোর অস্তিত্ব ছিল না। তাই আমার বইয়ের বিষয়বস্তুকে একটি “ভোগ্য” বিষয় হিসেবে ধরা হয়েছিল। আমি যেহেতু একজন নারী, আমার প্রকাশক প্রাথমিকভাবে বইয়ের জন্য খুবই মেয়েলি একটি প্রচ্ছদ পরিকল্পনা করেন। অথচ আমি কিন্তু এটি নিয়ে গভীর অনুসন্ধান করেছি—যা ছিল রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রভাব নিয়ে রীতিমত বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক কাজ। অথচ এটি “নারীর” বিষয় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
আমি দীর্ঘ সময় স্বাধীনভাবে কাজ করেছি। আমার জন্য সহজ ছিল না এমন একটি পথ তৈরি করা। পাশাপাশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষত যখন একে ভুল বশত অনুসন্ধানমূলক বিষয় হিসেবে গণ্য করা হতো না।
জিআইজেএন: সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য আপনার সেরা পরামর্শ বা কৌশল কী?
স্তেফান হোরেল: একটি সাক্ষাৎকার হলো কারো মুখোমুখি দাঁড়ানো। আপনি যদি একজন ব্যক্তির প্রতি আগ্রহী না হন, তবে তাঁর কাছ থেকে দারুণ কিছু পাওয়ার আশা করতে পারেন না। আমার কৌতূহল হলো আমার সামনে বসা মানুষটি কে, এমনকি তিনি যদি কীটনাশককে সুরক্ষিত করার পক্ষের লবিস্টও হন। আমি তাঁর পেশার পেছনে থাকা মানবিক দিকটি ধরার চেষ্টা করি।
শীর্ষ বৈজ্ঞানিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাদের সম্পর্কে কিছু না জেনে বা প্রস্তুতি না নিয়ে স্রেফ কিছু মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে তাদের কাছে যাওয়া উচিত নয়। এটি তাদের কাজকে অপমান এবং তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করা। কোনো বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে, ‘পুরোপুরি প্রস্তুতি নিন’। প্রস্তুতি গ্রহণের সাথে আপনার সম্মানের বিষয়টিও জড়িত। এর মাধ্যমে আপনি তাদের সঙ্গে সত্যিকার অর্থে গভীর আলোচনার সুযোগ পাবেন।
জিআইজেএন: আপনার অনুসন্ধানে ব্যবহৃত প্রিয় রিপোর্টিং টুল, ডাটাবেস বা অ্যাপ কী?
স্তেফান হোরেল: : সুক্ষ্ম রস্যবোধ; এটি মনে হয় কোনো সম্পাদকীয় টুলের থেকেও বেশিকিছু। কিছু বিষয় হালকা রস্যবোধ দিয়ে উপস্থাপন করলে এমন কিছু বের হয়ে আসে, অন্যথায় যা কোনোভাবেই আপনার চোখে পড়বে না।
উদাহরণস্বরূপ, পিএফএএস নিয়ে অনুসন্ধানের সময় আমরা একটি দলিল তৈরি করেছিলাম। ওতে ওই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লবিস্টদের হুমকিগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা সেরা অংশগুলো একত্রিত করা হয়। আমরা এটির নাম দিয়েছিলাম “আপনার দরজায় কেয়ামত”। সেখানে ছিল আর্থিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করার দারুণ সব কায়দা-কানুন। যেমন কোথাও বলা হয়েছে (“আমাদের এতজনকে ছাঁটাই করতে হবে”)। আর এ চালাকিগুলো করতে গিয়ে শিল্পপতিরা কখনও কখনও বিষয়গুলোকে ভীষণ হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করে। যেমন ইউরোপীয় ওষুধ শিল্পের এক লবিস্ট সংগঠন দাবি করেছিল যে পিএফএএস নিষিদ্ধ করা হলে ইউরোপে সব ওষুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে!
সূক্ষ্ম রসবোধ কেবল সম্পাদকীয় দৃষ্টিকোণ থেকে লেখাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আমাদের কঠিন ও সহিংস পরিস্থিতির ভার লাঘব বা মানসিক চাপ সামলাতেও সাহায্য করে। এমন পরিস্থিতি হতাশার গভীরতা খানিকটা কাটাতে খানিকটা সাহায্য করে। যদিও সত্যিটা হচ্ছে, শেষপর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হবে ও মারা যাবে।
জিআইজেএন: আপনার পাওয়া সেরা পরামর্শ কী? তরুণ অনুসন্ধানী সাংবাদিককে কী পরামর্শ দেবেন?
স্তেফান হোরেল: আমার জন্য, বিশ্বাস। বিশ্বাস হচ্ছে মূল ভিত্তি। যাঁরা আমার পেশাগত জীবনে আমাকে বিশ্বাস করেছেন, তাঁদের আমি কখনো ভুলব না । কারণ বিশ্বাস হলো ক্ষমতায়ন। এই বিশ্বাসের কারণে আমি অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আমার পথ খুঁজে পেয়েছি।
এখন, আমার কাছে যখন সব বয়স ও সংস্কৃতির সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে অনুসন্ধান সমন্বয় করার সুযোগ আসে, আমি সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এবং কখনও কখনও তা যাদুর মতো কাজ করে। কোনো সাংবাদিককে হয়তো দলে নেওয়া হয়েছে কিন্তু তাঁর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু দলে জায়গা পাওয়ার কারণে অনেক সময় তাঁরা প্রকল্পের স্তম্ভ হয়ে ওঠে, নতুনভাবে বিষয়গুলো দেখার উদ্ভাবনী সব উপায় নিয়ে আসে।
জিআইজেএন: সাংবাদিকদের মধ্যে আপনি কাকে শ্রদ্ধা করেন, এবং কেন?র্
স্তেফান হোরেল: আমার সহকর্মী স্তেফান ফোকার্টের প্রতি আমি পরম শ্রদ্ধাশীল। তিনি লা মন্দে পত্রিকার সাংবাদিক। তাঁর সঙ্গে আমি মনসান্তো পেপারস এবং বৈজ্ঞানিক মিথ্যাচার নিয়ে ২০২০ সালে অনুসন্ধানী বই লে গার্দিয়াঁ দ্য লা রেজোঁ (“দ্য গার্ডিয়ানস অব রিজন”) লিখেছি। এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ মিলন। আমি তাঁর প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞও। তাঁর জন্যই আমি লা মন্দেতে আছি। আমি তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষিপ্রতা এবং একাগ্রতার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক দক্ষতা আত্মস্থ করার ক্ষমতায় মুগ্ধ।
জিআইজেএন: আপনি যে সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন তা কী, এবং তা থেকে কী শিক্ষা নিয়েছেন?
স্তেফান হোরেল: কাজ করতে করতে আমি শিখেছি যে আন্তসীমান্ত প্রকল্প সমন্বয় করতে এসে আপনি সবসময় গণতন্ত্রমনা থাকতে পারবেন না। কখনও কখনও আপনাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে যা দলের এক অংশ পছন্দ করে না। যা অনেক সময় উত্তেজনা সৃষ্টি করে—তা আপনাকে সামলানো শিখতে হবে। তবে সবার কল্যাণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্বৈরাচারী হওয়ার প্রয়োজন নেই।
সর্বশেষ প্রকল্পে, আমি ৪৫ জনের একটি দলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লবিং এর সময় কি যুক্তি খাড়া করে সেই খোঁজ নিতে।। ফলাফল প্রত্যাশিত মানের হয়নি, কারণ কিছু সহকর্মী এই পদ্ধতিটি ঠিকভাবে বুঝতে পারেননি। যা খুব স্বাভাবিক—সবাই একভাবে চিন্তা বা কাজ করে না। আবারও, মূল বিষয় হলো বিশ্বাস: মানুষকে তাদের নিজস্ব দক্ষতা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দেওয়া।
জিআইজেএন: কাজের ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে বার্নআউট এড়িয়ে চলেন?
স্তেফান হোরেল: হাঁপিয়ে ওঠা আমাদের পেশায় এবং সামগ্রিকভাবে গোটা সমাজেই একটা বড় সমস্যা। আমি একটা সময় এতটাই চাপের মধ্যে ছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হতে হয়েছিল—মূলত পেশাগত ও ব্যক্তিগত চাপের কারণে। আমি ভেঙে পড়েছিলাম। সবকিছু মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি এবং এখনও অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করি। তবে এখন আমি সতর্ক। আমার ফ্রিজে একটি বার্তা রাখা আছে:”তুমি তোমার কাজের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।”
আমার অন্যতম সুরক্ষাব্যবস্থা হলো, প্রকল্প শেষ না হওয়ার আগে পর্যন্ত আমি সপ্তাহে একদিন পুরোপুরি নিজেকে কাজ থেকে বিরত রাখি। একটি জরিপ পরিচালনা করা মানসিকভাবে অনেক চাপের, তাই ওই দিন আমি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাই বা সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বই পড়ি—কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেই না।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কী এমন কিছু আছে যা আপনাকে হতাশ করে, বা ভবিষ্যতে আপনি যেটার পরিবর্তন দেখতে চান?
স্তেফান হোরেল: আন্তঃসীমান্ত সাংবাদিকতা ও দলবেঁধে মাথা খাটিয়ে কাজ করার ব্যাপারটা দারুন। তবে আমার মনে হয়, অতিরিক্ত প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে এখানে। এতে করে গভীরতাধর্মী অনুসন্ধানের মান কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে তেমন ফল পাওয়া যায় না। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের কথা ভাবলে দেখা যায়, অনেক সময় তাঁরা একসঙ্গে তিন-চারটি অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করেন, যা তাদের জন্য ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। একই সমস্যা বার্তাকক্ষগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যায়—যেখানে একটি মাত্র অনুসন্ধান নিয়ে কয়েক মাস ধরে মনোনিবেশ করার সুযোগ পাওয়া এখনও বেশ কঠিন।
আলসিওনে ওয়েমেয়ার একজন ফরাসি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি লিওনে বসবাস করেন। তিনি প্যারিসে ইউরোপ১ এবং ফ্রান্স২৪-এর সাবেক স্টাফ রিপোর্টার। জিআইজেএনের ফরাসি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি সায়েন্স পো লিওনে সহযোগী অধ্যাপক, যেখানে তিনি যৌথভাবে ডেটা এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর মাস্টার্স ডিগ্রির দায়িত্বে রয়েছেন।