

Screenshot
স্বাধীন নিউজরুমের আয়ের মডেল কী হতে পারে?
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
রোমানিয়ার অলাভজনক অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম রেকর্ডার। অনুসন্ধানমূলক তথ্যচিত্র ও ভিডিও নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করে স্বাধীন এই বার্তাকক্ষটি। অনেকটা আকস্মিকভাবেই মিডিয়ার জন্য আয়ের যুৎসই এক ব্যবসায়িক মডেল খুঁজে বের করেছেন রেকর্ডারের প্রতিষ্ঠাতারা।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ আয়ের পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু রেকর্ডারের। এখন তাদের আয়ের ৯০ শতাংশই অর্থই আসে দর্শক ভিউ থেকে।
২০২৪ সালে পেরুজিয়ায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা উৎসবের (আইজেএফ) অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে প্যানেল উপস্থাপক ও রোমানিয়ার সাংবাদিক ক্রিস্টিয়ান লুপসা বলেন, “ক্রিস্টোফার কলম্বাস যেমন ইন্ডিজ (ইন্ডিজ বলতে ভারতকে বোঝানো হচ্ছে) খুঁজতে নেমে আমেরিকা আবিষ্কার করেন, রেকর্ডারও তেমন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্থ আয়ের পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করলেও খুঁজে পায় অন্য এক মডেল।” এ সময় তিনি রেকর্ডারের নেতৃত্বদের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন।
সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান ডেলসিয়া আর মিহাই ভয়েনা কাজ করতেন রোমানিয়ার সংবাদপত্র অ্যাডেভারুলে। প্রতিষ্ঠিত কর্মজীবন ছেড়ে তাঁরা যোগ দিয়েছিলেন রেকর্ডারের অন্য দুই খণ্ডকালীন প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে। চারজনের এ দলটি নিয়ে শুরু হয় রেকর্ডারের নিউজরুম।
শুরুতে তাঁরা মনোনিবেশ করেন ঘটনা নির্ভর ভিডিও প্রতিবেদন তৈরিতে। তাঁদের প্রথম প্রতিবেদনটি ছিল তৎকালীন বুখারেস্টের মেয়র গ্যাব্রিয়েলা ফায়ারা আয়োজিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর। এটি ছিল ১৫ মিনিটের একটি ভিডিও। ওয়েবসাইট প্রস্তুত হওয়ার আগেই এই ভিডিওটি প্রকাশিত হয়।
দলটি সরাসরি ফেসবুকে এ ভিডিওটি তুলে দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে এই ফেসবুক পেজে হিট বাড়তে থাকে। মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৫ লাখের বেশি ভিউসহ পেজের অনুসারির সংখ্যা পৌঁছায় ২০ হাজারে।
মিহাই ভয়েনা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, অনেকে আমাদের পেজে মন্তব্য করে সমর্থনের পাশাপাশি আর্থিক সহযোগীতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।” এরপর দলটি অনুদান গ্রহণের জন্য একটি পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট খোলে।
“ভিডিও কনটেন্টই তাদের ব্যবসা এনে দেয়”— বলেন তিনি।
ভিডিও ঘিরেই রেকর্ডারের সমস্ত মনোযোগ। তবে তারা ছোট প্রতিবেদনের পাশাপাশি দীর্ঘ, তথ্যচিত্র নির্ভর ফিল্মও তৈরি করে। চারজনের দলটিতে বর্তমানে ২০ জন পূর্ণকালীন কর্মী এবং চারজন কন্ট্রিবিউটার কাজ করছে।
সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব আর ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা কীভাবে গণতন্ত্রকে অপব্যবহার ও নষ্ট করছে— এগুলো রেকর্ডারের কাজের প্রধান বিষয়। তাদের করা সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মধ্যে রয়েছে রোমানিয়ার ‘গার্বেজ মাফিয়া’ নিয়ে একটি অনুসন্ধান, রোমানিয়ানরা কেন সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করছে তার কারণ উন্মোচন, এবং রাষ্ট্রপতি ক্লাউস ইওহানিসের অতিরঞ্জিত ভ্রমণ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন।

রেকর্ডারের নির্বাহী ব্যবস্থাপক আলিনা পাদুরারু। আইজেএফ২৪ সম্মেলনে তিনি জানান যে তাদের সাইটের দুই-তৃতীয়াংশ দর্শক তিরিশের কম বয়সী। ছবি: ইলারিয়া সোফিয়া আর্কাঞ্জেলি, আইজেএফ২৪
তিনি আরো বলেন, “আমরা উপলব্ধি করেছি যে রোমানিয়ার মিডিয়া দৃশ্যপটে এ ধরনের অনুসন্ধানী ভিডিও কনটেন্ট জরুরী। আমরা তা করে দেখিয়েছি। তরুণ প্রজন্মের কাছেও তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তাদের আকৃষ্ট করেছে।”
রেকর্ডার কাজ করে জটিল সব বিষয়বস্তু নিয়ে। প্রতিষ্ঠাতারাও গভীরভাবে সচেতন যে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারিয়েছেন বা খবর এড়িয়ে চলেন এমন দর্শকদের কাছেও যেন তাদের প্রতিবেদনগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায় ও আর্কষণীয় হয়ে ওঠে। রোমানিয়াতে অনলাইন ব্যবহারকারী তিনজনের মধ্যে মাত্র একজন দেশের মিডিয়ার ওপর আস্থাশীল।
পাদুরারু জানান, রেকর্ডারের ৬৪ শতাংশ দর্শকের বয়স এখনও তিরিশের নিচে।
জিআইজিএনকে তিনি বলেন, “আমরা একটি তরুণ প্রজন্মকে সাংবাদিকতায় আগ্রহী করে তুলতে পেরেছি, এমনটি আগে ঘটেনি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অল্প বয়সী দর্শকদের কাছে যেন গ্রহণযোগ্য হয়— রেকর্ডারের তরুণ কর্মীরা ঠিক তেমনভাবে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে।”
রেকর্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সহ-সম্পাদক ক্রিশ্চিয়ান ডেলসিয়া আইজেএফ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, “আমি এ বছর রোমানিয়ায় প্রথমবারের মতো ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের নিয়ে ভাবতে শুরু করি। কী চায়, ওদের চাহিদাগুলো কী, কোন বিষয়গুলো ওদের জানা দরকার। কারণ অনেক তরুণ হয়তো রাজনীতি বা রাষ্ট্র কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে খুব একটা জানে না।”
“আমাদের এ ধরনের দর্শকদের কাছে পৌঁছতে হবে। এমনভাবে প্যাকেজগুলো বানাতে হবে যাতে তারা
আপনি কী পদ্ধতিতে গল্পগুলো বলবেন, সে দিকে মনোযোগী হন
প্রতিবেদনগুলোকে কীভাবে উপস্থাপন করা হবে— তা নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা ও সময় ব্যয় করেছে দলটি। জটিল প্রতিবেদনগুলো যেন দর্শকদের বুঝতে কোনো অসুবিধা না হয়, এবং শেষ পর্যন্ত তাদের অগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব হয়। চার ধাপে রেকর্ডার কীভাবে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করেছে— ডেলসিয়া তা তুলে ধরেন:
১. আপনার ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুতে লোকেরা কী দেখবে তা ভাবুন। উদাহরণ হিসাবে ডেলসিয়া দেখিয়েছেন অর্থোডক্স চার্চের পাবলিক ফান্ডের অপব্যবহারের ওপর রেকর্ডারের অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে কীভাবে গ্রাফিক, কার্টুন-ডিজাইন থাম্বনেইল ব্যবহার করা হয়েছে। “প্রতিবেদনটিকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করেছি যে কীভাবে এর মাধ্যমে চমৎকার একটি গল্প বলা যায়।” তিনি আরো বলেন, “প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটি রোমানিয়াতে এখন রীতিমতো আইকনিক।”
২. রেকর্ডারের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভূমিকা এবং ট্রেলার নেটফ্লিক্স বা এইচবিও-এর মতো । ঠিক জনপ্রিয় স্ট্রিমিং পরিষেবাতে যেভাবে তৈরি হয়, তার সঙ্গে তুলনীয়। অন্য কোথাও আপনি এ ধরনের মানসম্মত কনটেন্ট খুব একটা খুঁজে পাবেন না। তিনি বলেন, “আমরা আরও চমকপ্রদ কনটেন্ট তৈরি করতে চাই যা নতুন তথ্য নিয়ে হাজির হয় ও লোকেদের মনোযোগ ধরে রাখে। যেন তারা বুঝতে পারে এটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ।”
৩. জটিল অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন বুঝতে সহায়তা করে শক্তিশালী ইনফোগ্রাফিক্স। ইউটিউব ডেটা ঘেঁটে রেকর্ডার কর্মীরা দেখেছেন, তাদের ভিডিওর সর্বাধিক দেখা অংশগুলো হচ্ছে ইনফোগ্রাফিক্স। লোকেরা রিওয়াইন্ড করে এগুলো আবার দেখার চেষ্টা করে।
৪. রেকর্ডার তাদের ভিডিওতে কখনও কখনও সঙ্গীতও জুড়ে দেয়। তবে কাজটি যে খানিকটা কঠিন তাও স্বীকার করে। “না বুঝে সঙ্গীতের ব্যবহার অনেক সময় ভিডিও কনটেন্টকে নষ্ট করতে পারে, তবে বুঝেশুনে ব্যবহার করলে অনেক বেশি আবেদন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যখন আবেগকে উসকে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে,” বলেন ডেলসিয়া। কভিড-১৯ মহামারী ওপর তথ্যচিত্র তৈরির সময় হাসপাতালের নার্সরা তাকে জানিয়েছিল, নিবিড় পরিচর্যা যন্ত্রের বিপিং শব্দ তাদের ভুতের মতো তাড়া করে। পয়সা খরচ করে ওইরকম শব্দ তৈরি করে তথ্যচিত্রে জুড়ে দেওয়া হয়। যা শুনে দর্শকরাও ভীষণভাবে তাড়িত হন।

রোমানিয়ান অর্থোডক্স চার্চের ওপর তৈরি রেকর্ডারের অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রের প্রথম অংশ। এর গ্রাফিক্সগুলো গল্পের পটভূমি তুলে ধরে। ছবি: স্ক্রিনশট, ইউটিউব, রেকর্ডার
রেকর্ডারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ভিডিওগুলো গড়ে ৯ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। গত বছর ইউটিউবের বিনোদন অনুষ্ঠানের চেয়ে যা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়।
ডেলসিয়া বলেন, “অনেক লোকের কাছে পৌঁছানো— সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য এটাই হওয়া উচিৎ। নীতি-নির্ধারক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা যেন কোনোভাবেই বিষয়টি উপেক্ষা করতে না পারে বরং এক ধরনের সামাজিক চাপ অনুভব করে।”
পাঠকের পয়সা দিয়েই আয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন
শুরুতে রেকর্ডার প্রতিষ্ঠাতারা মনে করেছিলেন যে একজন “সৎ” দাতার কাছ থেকে আসা বিজ্ঞাপন বা বিনিয়োগই হবে তাদের আয়ের উৎস। প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরে, নিউজরুমের আয়ের ৭০ শতাংশ বিজ্ঞাপন এবং ৩০ শতাংশ অনুদানের মাধ্যমে আসে। তবে যখনই কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো, তখনই অনুদানের জোয়ার দেখা যেত।
“রেকর্ডারের প্রতিষ্ঠাতাদের সামনে অনুকরণীয় কোনো মডেল ছিল না; এর মাধ্যমে আমরা রোমানিয়ার অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটগুলোর জন্যও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি,” জিআইজেএনকে এ কথা বলেন পাদুরারু।
প্রতিষ্ঠার প্রথম সাত বছর এবং গত অর্থ বছরে রেকর্ডারের বার্ষিক আয় ছিল ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউরো। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের (১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার) বেশি অর্থ এসেছে দর্শক ভিউ থেকে, বাকিটা অনুদান বা বিজ্ঞাপনের।
আইজেএফ২৪ সম্মেলনে মিহাই ভয়েনা বলেন, “আমাদের একটা বিকল্প বেছে নিতে হয়েছে। তা হলো, আমরা লাভজনক নাকি অলাভজনক মডেল হিসেবে কাজ করবো। আমরা সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নই। তাই আমরা অলাভজনক মডেলকে বেছে নিই।”
আগ্রহীরা তাদের ফোন থেকে বা রেকর্ডারের ওয়েবসাইটে গিয়ে পেপ্যাল, মনিটাইজিং প্ল্যাটফর্ম প্যাট্রিয়ন এবং রেকর্ডারের ইউটিউব চ্যানেলের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে অনলাইনে টাকা দিতে পারেন। দেখা গেছে যে সাড়া জাগানো কোনো অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে অনুদানের পরিমাণ বাড়ছে।
নেটফ্লিক্সের মতো বিনোদনমূলক স্ট্রিমিং পরিষেবার বিনিময়ে অটাকা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে রেকর্ডার সাংবাদিকতার সমর্থনে অনুদানের আহ্বান জানায়। এ লক্ষ্যে ওয়েবসাইটে নিবন্ধের মধ্যে, সাপ্তাহিক নিউজলেটারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের পাশাপাশি ইউটিউব ভিডিওতে বিভিন্ন বার্তা প্রদান করে তারা।

আইজেএফ২৪ সম্মেলনে অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন রেকর্ডার প্রধান সহ-সম্পাদক ক্রিস্টিয়ান ডেল্টা। ছবি: ইলারিয়া সোফিয়া আর্কাঞ্জেলি, আইজেএফ২৪
নিউজরুমের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস পাঠকের অর্থ। এ উৎস থেকে গত অর্থ বছরে রেকর্ডারের আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৫৭ হাজার ইউরো (৪ লাখ ৯৪ হাজার ডলার)। রোমানিয়ার নিয়ম অনুসারে পাঠকেরা যদি সরাসরি তাদের আয়করের সাড়ে ৩ শতাংশ কোনো অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে অনুদান হিসেবে দেয় তাহলে তারা কর সুবিধা ভোগ করে।
কোন উৎস থেকে কত অর্থ আসে, তা কীভাবে খরচ করা হয় সে সম্পর্কে তারা স্বচ্ছতা বজায় রাখে। যে লোকগুলো আর্থিক সমর্থন যোগায়, তারা যখন জানেন রেকর্ডার নতুন কোনো সাংবাদিককে নিয়োগ দিয়েছে বা অনুসন্ধানে সহায়ক কোনো সরঞ্জাম কিনেছে, তখন তারা ভীষণ খুশি হন। প্রায় ১০ হাজার লোক বারবার অনুদান দিয়ে আজও নিউজরুমটিকে সমর্থন যুগিয়ে চলেছে — এটি রেকর্ডারের বিশ্বস্ত দর্শক তৈরির ইঙ্গিত। তাদের গড় অনুদানের পরিমাণ ৭ ইউরো বা ৮ ডলার।
পাদুরারু বলেন, “তরুণ প্রজন্ম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে ধারণ করে বেড়ে উঠছে— এটি আমাদের আশান্বিত করে।”
তিনি মনে করেন, আস্থা দিয়েই মিডিয়ার প্রতি জনগণের সমর্থন বাড়ানো যায়।
শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া
২০২৩ সালে ৫ হাজার পাঠকের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমটি একটি জরিপ চালায়। দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। পাঠক কেন রেকর্ডারকে সমর্থন করে— জরিপের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় দলটি।
“আমরা তাদের খবরের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত থাকতে সাহায্য করি। এতে করে পাঠকেরাও অনুভব করে যে তারাও রোমানিয়ার সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে ” বলেন পাদুরারু।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা রেকর্ডারকে জানিয়েছে যে, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখার পর তারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিল। তবে ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, তারা নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছে।
রেকর্ডার এখন নিয়মিতই পাঠকের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। পাঠকদের কাছে তারা অনুসন্ধানের বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়। যেমন রোমানিয়ার রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত বিলাসবহুল উড়োজাহাজের ব্যয় নিয়ে পাঠকেরাই তাদের অনুসন্ধানে নামার পরামর্শ দিয়েছেন।
নিউজরুমটি তাদের পাঠকদের প্রশাসনের কাছে এই ব্যয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে চিঠি দিতে বলে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪১ হাজার মানুষ ইমেইল পাঠায়।
কিন্তু রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে আজ অব্দি কোনো উত্তর আসেনি। এ সম্পর্কে পাদুরারু বলেন, “আমরা হতবাক, একজন রাষ্ট্রপতি কতজন নাগরিককে উপেক্ষা করতে পারেন।”
অনুদান পাঠানোর পাশাপাশি রেকর্ডারের শ্রোতা-পাঠকেরা দৈনিক সংবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শও দিয়ে থাকেন। কোথাও কোনো দুর্নীতি কিংবা হয়রানির ঘটনা চোখে পড়লে তারা তথ্য-প্রমাণও পাঠিয়ে দেন। যা নিউজরুমের অনুসন্ধানে অবদান রাখে।
“এ বিষয়গুলো প্রমাণ করে যে আমাদের পাঠকেরা আমাদের বিশ্বাস করে। আমরা তাদের প্রতি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ” বলেন পাদুরারু।
নিচে ইউটিউব লিংকে আইজেএফ২৪ সম্মেলনে রেকর্ডারের সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখুন।
লরা অলিভার যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি গার্ডিয়ান, বিবিসি, ইউরোনিউজসহ বিভিন্ন পত্রিকার হয়ে লিখেছেন। থমসন ফাউন্ডেশন এবং থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের হয়ে নিয়মিত সাংবাদিকতার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া নিউজরুমের শ্রোতা-কৌশল বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর কাজগুলো এখানে দেখুন।