

তথ্য দিতে কর্মকর্তা ফি চান ২৮২২ ডলার, সাংবাদিক যেভাবে কমিয়ে মাত্র ২৯ ডলার দিয়েছিল
তথ্য অধিকার আইনের (ফোয়া) অধীনে তথ্য চেয়ে অনুরোধের পর অনেক দেশের রিপোর্টারদের হাতে বেশ বড় অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি সংস্থাগুলো সাংবাদিকদের অনুরোধকৃত সরকারি নথি সংগ্রহ, কপি, সম্পাদনা বা সরবরাহ করার জন্য বিপুল অঙ্কের ফি দাবি করে।
কিন্তু দেখা গেছে, সামান্য গবেষণা আর আলোচনা-সমঝোতার মাধ্যমে সাংবাদিকরা অনেক সময় নথিপত্র সংগ্রহের খরচ কমাতে পারেন এবং সেই সঙ্গে সরকারি সংস্থার জবাব পাওয়ার প্রক্রিয়াও দ্রুত করতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, ফোয়া কর্মকর্তাদের তরফ থেকে আসা বড় অঙ্কের অর্থের দাবিটি সাংবাদিকদের বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া উচিত নয়। এছাড়া মনে রাখা উচিৎ যে, এই কর্মকর্তারা সাধারণত খরচের হিসাব নিয়ে নয়, আপনার দাবির বিপরীতে তাদের কাজের চাপ নিয়ে চিন্তিত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আপনার অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাদের কাজের সময় যত কম লাগবে, খরচও তত কমে আসবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি প্রাপ্তির সময়ও কমে আসবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নিকার ডেটা সাংবাদিকতা সম্মেলনে এক সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনায়, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ডেটা সাংবাদিক শ্যারন লুরি ব্যাখ্যা করেন ফোয়া খরচ কমানোর জন্য কীভাবে কিছু নিয়মকে কাজে লাগানো যায়। তার উপস্থাপনাটি শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। শ্রোতারা জোরালো করতালি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করেন। শ্যারন দুটি সাম্প্রতিক ঘটনার উদাহরণ দেন। যেখানে তিনি তার বার্তাকক্ষের হাজার হাজার ডলার সাশ্রয় করতে সমর্থ হয়েছেন, আবার প্রয়োজনীয় নথিও সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
শ্যারন লুরি ২ হাজার ৮২২ ডলারের প্রস্তাবিত ফোয়া ফি নামিয়ে আনেন ১৩০ ডলারে—এবং তাতেও সন্তুষ্ট না থেকে শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে আনেন মাত্র ২৯ ডলারে। অন্য এক ক্ষেত্রে তিনি ৯০০ ডলারের প্রস্তাবিত ফি শূণ্যে নামিয়ে আনেন।
১. তথ্য কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করুন, “সবচেয়ে ব্যয়বহুল বা সময়সাপেক্ষ অংশ কোনটি?”
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি জেলা স্কুলের লাইব্রেরি থেকে গত ছয় বছরে সরানো হয়েছে এমন বইয়ের তালিকা চেয়েছিলেন শ্যারন লুরি। জেলা সংস্থা তাকে অনুমানিক হিসাব দিয়েছিল যে, ৮০ হাজার পৃষ্ঠার নথি পাঠাতে খরচ হবে ২ হাজার ৮২২ ডলার। তথ্য কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেছিলেন, এতে ম্যানুয়ালি লুকানো লাইব্রেরিয়ান এবং ছাত্রদের নাম উদ্ধার করতে এবং সব পৃষ্ঠা পিডিএফ ফরম্যাটে পাঠাতে ১১৩ শ্রমঘন্টা লাগবে।
শ্যারন লুরি বলেছেন, “ খুব জোরালোভাবে বলুন যে, আপনি তাদের ওপর কোনো ধরনের অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে চান না। তারা যদি অল্প সময়ের মধ্যে আপনাকে তথ্য দিতে পারে, এর মানে আপনার খরচও কম হবে। আপনার অনুরোধের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বলুন এবং কোন ফরম্যাটে তথ্যগুলো আপনার প্রয়োজন সে জন্য আগে গবেষণা করুন।”
২. কম খরচের সুযোগ আছে কি না তা যাচাই করুন — এবং কর্মকর্তাদের টুলস ব্যবহারে সহায়তার প্রস্তাব দিন।
যদিও তাকে বলা হয়েছিল লাইব্রেরির ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নথি অনেক কম খরচের এক্সেল ফরম্যাটে এক্সপোর্ট করতে পারবে না, লুরি সরাসরি একজন লাইব্রেরিয়ানকে কল করে জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে কোন কোন ফরম্যাট তৈরি করা আছে তা যাচাই করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, তারা কী আসলে এক্সেল স্প্রেডশিটে এক্সপোর্ট করতে পারবে।
এ পর্যায়ে তিনি হাসিমুখে ওই ঘটনা নিয়ে বলেন, “তারা বলল, ‘হ্যাঁ’ — আমি তখন এক্সেল এক্সপোর্ট করার জন্য তাদের কাছে একটি ইউটিউবের ভিডিও টিউটোরিয়াল পাঠালাম! এছাড়া আমি লিখিত নির্দেশনা আকারে তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম যে, কীভাবে তারা এমন একটি কলাম মুছে দিতে পারে যা যেকোনো পরিস্থিতিতেই লুকানো হবে। এতে ফি কমে ১৩০ ডলার হয়ে যায়।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “কখনও কখনও সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে এমন উত্তর দেওয়া হয় যে: ‘এ ধরনের তথ্যের জন্য তাদের অনেক শ্রম দিতে হবে, কারণ প্রোগ্রামিংয়ের প্রয়োজন হবে’ — তখন আপনি বলতে পারেন, ‘দারুণ — আমাদের কাছে ডেটা সাংবাদিক আছেন; প্রোগ্রামিংয়ের কাজটা আমরা করে দিচ্ছি!
৩. প্রথমেই নথির একটি নমুনা পৃষ্ঠা চান — এবং এমন উপাদানগুলো চিহ্নিত করুন
শ্যারন লুরি ব্যাখ্যা করেছেন, “তারা বলল এখনও কিছু নাম লুকানোর কাজ বাকি আছে — কিন্তু আমি বললাম, আমি এখন আর তাদের ১৩০ ডলার দিতে চাই না। যেহেতু তারা আমাকে একটি নমুনা দিয়েছে, আমি দেখতে পারলাম সব ছাত্রের নাম একটি সহজ প্যাটার্ন অনুসরণ করছে। তাই আমি তাদের লিখে জানালাম যে কীভাবে সব নাম বাদ দেওয়া যায়, এবং এরপর নথিগুলো কেমন দেখাবে তা স্ক্রিনশটসহ পাঠালাম। ততক্ষণে ৪৫ মিনিটের কাজের জন্য আমি তাদের চূড়ান্ত খরচ হিসেবে মাত্র ২৯ ডলারের কথা বললাম।”

শ্যারন লুরি জেলা তথ্য কর্মকর্তাকে একটি স্ক্রিনশট পাঠিয়েছিলেন, যাতে ফোয়া নথিতে ছাত্রদের নাম লুকানোর সহজ পদ্ধতি দেখানো হয় — এতে তার নিউজরুম আরও ১০১ ডলার সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়। ছবি: স্ক্রিনশট, লুরির সৌজন্যে
৪. অপ্রয়োজনীয় নথি বাদ দিন এবং চাহিদাগুলো এক জায়গায় আনুন
আরেকটি অনুসন্ধানের জন্য লুরি ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসের একটি জেলা স্কুলের ছাত্র মনিটরিং সফটওয়্যারের সম্পর্কিত নথি চেয়েছিলেন। তথ্য কর্মকর্তা জানান, এটি করতে প্রায় ৬০ শ্রমঘন্টা লাগবে, এবং আনুমানিক খরচ হবে ৯০০ ডলার।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমি জিজ্ঞাসা করলাম কর্মীদের শ্রম ঘণ্টা বাবদ কোন অংশটি সবচেয়ে বেশি সময় নেবে। সাধারণত এই ফি হিসাব করা হয় ঘণ্টার সংখ্যা ও স্টাফের মজুরি অনুসারে। তারা বলল, নভেম্বর ২০২৩-এর আগে নথি সংগ্রহ করা কঠিন, কারণ তখন তারা ভিন্ন সিস্টেম ব্যবহার করছিল। তাই আমি বললাম, আমি আসলে নতুন সিস্টেম চালু হওয়ার পরের নথিগুলোই চাই। তাই তারা নভেম্বর ২০২৩ থেকে নথি পাঠালো—আমি পুরোটা বিনামূল্যে পেয়েছিলাম!”
৫. নথি সংগ্রহে স্টাফদের শ্রম খরচের “সর্বনিম্ন হার” জানতে চান
সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের সাংবাদিক জেনিফার গোলান ও সুজি নিলসন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গাড়ি ধাওয়া থেকে হওয়া মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করেন। এ সময় তারা তথ্য অধিকার আইন (ফোয়া) অনুযায়ী নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিয়ে আলোচনা করে সরকারি নথি সংগ্রহের খরচ অনেকটা কমাতে সক্ষম হন।
তারা শুধু খরচের বিস্তারিত তালিকাই চাননি, বরং যারা কাজটি করবেন তাদের পদবি এবং ঘণ্টাপ্রতি পারিশ্রমিকও জানতে চেয়েছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে নিলসন হার্ভার্ডের জার্নালিস্টস রিসোর্স-কে বলেন:“জেনিফার আমাকে যে জিনিসটা শিখিয়েছিলেন এবং আমার কাছে যেটি খুব বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয়েছে, তা হলো—যখন এসব খরচের বিরুদ্ধে আপত্তি জানাবেন, তখন নিশ্চিত করতে হবে যে শ্রমের ঘণ্টাপ্রতি হিসাবটা সর্বনিম্ন গ্রহণযোগ্য হার অনুযায়ী হচ্ছে—অর্থাৎ যিনি সবচেয়ে কম বেতন পান, তার কাজের হারের ভিত্তিতে রেকর্ডগুলো প্রস্তুত করা হবে।”
অভ্যাসবশত অনেক সংস্থা এখনো ভুল করে ইলেকট্রনিক রেকর্ডের জন্য খরচ হিসাব করে আগের কাগজের রেকর্ডের উচ্চ ব্যয়ের সূত্র অনুযায়ী। তাই জেনিফার গোলান পরামর্শ দেন, সাংবাদিকদের সবসময় তথ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করা উচিত যে ইলেকট্রনিক রেকর্ডের ফি হালনাগাদ করা হয়েছে এবং তা যেন তুলনামূলক সস্তা ডিজিটাল ফরম্যাটকে প্রতিফলিত করে।
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের গ্লোবাল রিপোর্টার এবং ইমপ্যাক্ট এডিটর। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিশ্বজুড়ে দুই ডজনেরও বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাত নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার বিভিন্ন বার্তাকক্ষে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।