প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Una mujer sobrepasada por las emociones mientras intenta transmitir un funeral para sus parientes que no pudieron atender debido a la pandemia. Foto: Omar Lucas

লেখাপত্র

বিষয়

ছবিতে যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারিকে ধারণ করছেন বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফাররা

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচে কঠোর “পঞ্চম পর্যায়ের” লকডাউনের সময় জোহানেসবার্গের ঘনবসতিপূর্ণ হিলব্রো অঞ্চলে ত্রানের জন্য এভাবে ব্যালকনি ও ছাদে ভিড় করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ছবি: ম্যাডেলিন ক্রোনিয়ে

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছয় ফটো সাংবাদিক জিআইজেএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন – কিভাবে মহামারির এই সময়টাকে তারা ক্যামেরাবন্দী করেছেন, এই কাজ করতে গিয়ে কিভাবে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন এবং কারিগরী চ্যালেঞ্জগুলো সামাল দিয়েছেন।

গত মে মাসে, অবিশ্বাস ভরা চোখ নিয়ে একটি খবর দেখছিলেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড গোল্ডম্যান। খবরে দেখাচ্ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাবেক সেনাসদস্যদের জন্য তৈরি একটি সরকারি হাসপাতালে কিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়েছে।

এই ঘটনা পরে একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি ও কেলেঙ্কারিতে রূপ নেয়। দেখা যায়, ম্যাসাচুসেটসের হোলিয়োক সোলজার্স হোমে, মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি সাবেক সেনাসদস্য মারা গেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। শুধু নার্সদের কাছে জানতে পেরেছেন শেষ মুহূর্তটি কেমন ছিল।

পরবর্তীতে আরেকটি স্বাধীন অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল: করোনা আক্রান্ত ও আক্রান্ত নয়, এমন সবাইকে একই ওয়ার্ডে রাখার সিদ্ধান্ত।

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো তথ্য বা সহযোগিতা পাননি গোল্ডম্যান। ফলে অ্যাসোসিয়েট প্রেস ফটোগ্রাফি দলের এই সদস্যকে তল্লাশি চালাতে হয় পত্রিকার পাতায় ছাপা হওয়া অবিচুয়ারিতে। তিনি সেখান থেকে সংগ্রহ করেন নিহতদের নাম-ঠিকানা এবং তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করেন ফেসবুক থেকে।

শেষপর্যন্ত শোকাবিহ্বল পরিবারের সদস্যদের তিনি খুঁজে পান ঠিকই, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তাদের কাছাকাছি আর যাওয়া হয়নি।

ফলে গোল্ডম্যানকে এমনভাবে ফটোগ্রাফির পরিকল্পনা সাজাতে হয়েছে, যা তিনি আগে কখনো করেননি। এটি কাজ করবে কিনা, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত ছিলেন না তিনি। তাঁর পরিকল্পনাটি ছিল: প্রজেক্টরের মাধ্যমে মৃত সেনাসদস্যের ছবি বাড়ির দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হবে, পরিবারের সদস্যরা সেই বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়ে থাকবেন, এবং সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করা হবে।

কিন্তু এই পরিকল্পনায় অনেক সমস্যা দেখা দেয়। জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যদের মুখ কিভাবে আলো ফেলা করা হবে? রাস্তা থেকে কিভাবে প্রজেক্টরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে? পরিস্থিতির কারণে, সেই বাড়ি থেকে বিদ্যুুৎ সংযোগ নেওয়াও সম্ভব ছিল না।

গোল্ডম্যানের কোনো ধারণাই ছিল না কিভাবে এসব সমস্যা সমাধান হবে। বরং তাঁর শঙ্কা ছিল, এই কর্মকাণ্ডে মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা আরো বেশি বিমর্ষ হয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত, সাবেক সেনা সদস্যদের পরিবার নিয়ে তাঁর এই কাজই হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান মহামারির অন্যতম স্মরণীয় ও মর্যাদাপূর্ণ চিত্রায়ন।

প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনাসদস্য জেমস জুলিভানকে। তিনি মারা গেছেন কোভিড আক্রান্ত হয়ে। জানালায় দেখা যাচ্ছে তাঁর ছেলে টম সুলিভান (বামে) ও ভাই জোসেফ সুলিভানকে। ছবি: এপি ফটো / ডেভিড গোল্ডম্যান

প্রজেক্টরে দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সাবেক নার্স কন্সট্যান্স “ক্যান্ডি” পিনার্ডের ছবি। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৩ বছর বয়সে। জানালায় দেখা যাচ্ছে তাঁর বোন ট্যামি পেট্রোউচজ (বামে), ও ভাই পল ও ব্রায়ান ড্রিসকোলকে। ছবি: এপি ফটো / ডেভিড গোল্ডম্যান

ছবির সাবজেক্ট বা চরিত্রদের করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে রাখা, তাদের অনুমতি পাওয়া এবং সার্বিকভাবে এমন একটি মহামারিকে ছবিতে তুলে আনা – এত কিছু মাথায় রেখে কাজ করতে গিয়ে  বিশ্বজুড়ে ফটো সাংবাদিকরা এমন নানা রকমের উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজে বের করেছেন।

তাঁদের তোলা ছবি প্রভাবও ফেলেছে ব্যাপক। গোড়ার দিকে ইন্দোনেশিয়া সরকার করোনা মহামারিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিল না। সামনে যে কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে, সেটি বোঝাতে গিয়ে তখন স্থানীয় ফটো সাংবাদিক জশুয়া ইরওয়ান্দি, কোভিডে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির প্লাস্টিকে মোড়ানো মৃতদেহের  একটি ছবি তোলেন, যা জনপরিসরে তীব্র বিতর্ক জন্ম দেয়। ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আগস্ট সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে জায়গা করে নেয়। ইন্সটাগ্রামে এই ছবিটি দিয়ে হাসপাতালের নার্সদের সাহসিকতার কথা তুলে ধরেছিলেন ইরাওয়ান্দি। এবং লিখেছিলেন, “আমার শুধু মনে হয়, এই মানুষটির ভাগ্যে যা ঘটেছে, তা আমার কোনো প্রিয়জনের সঙ্গেও ঘটতে পারে, আমাদের সবার প্রিয়জনের সঙ্গে ঘটতে পারে।” ইন্সটাগ্রামের এই পোস্টটি পেয়েছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার লাইক। কোভিড-১৯ মহামারির এই অনিবার্য একাকিত্ব ফুটিয়ে তোলা ছবিটি পোস্ট করা হয় ন্যাট জিও-র ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলেও। সেখানে এক দিনের মধ্যে ছবিটি পেয়েছিল ১০ লাখেরও বেশি লাইক।

https://www.instagram.com/p/CC6x9CHB4KU/

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সাথে কাজ

পেরুতে, স্বাধীন ফটোগ্রাফার ওমর লুকাস কাজ করেছেন জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন আইডিএল-রিপোর্তেরোসের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সাথে। তাঁরা ‍প্রমাণ করতে চাইছিলেন, সরকার থেকে করোনাভাইরাসে যত মৃত্যুর কথা জানানো হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।

লুকাসের ছবিগুলো এটি প্রমাণে সহায়তা করেছে। দাফন ও সৎকারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই ছবিগুলো তুলেছেন লুকাস। এবং ছবি তোলার সময় তিনি পিপিই পরেছেন এবং ছয় ফুট দুরত্ব বজায় রেখেছেন।

জিআইজেএন-এর সাথে সাক্ষাৎকারে লুকাস বলেছেন, “কাজটিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে প্রধান চ্যালেঞ্জটি ছিল নিজের ভয় কাটিয়ে মৃতদেহ রাখার ঘরটিতে যাওয়া। এটি মোটেই সহজ ছিল না। কিছু ক্ষেত্রে ছবি তোলার জন্য আমাদের সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে সব ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ও ভালো মাস্ক পরতে হয়েছে। বারবার জীবানুমুক্ত করার জন্য অ্যালকোহল ব্যবহার করতে হয়েছে। আমি এই কাজে হালকা সরঞ্জাম ব্যবহার করেছি যেন সবসময় প্রস্তুত থাকা যায়।”

“অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজের ধরনটা হয় অনেক বিস্তারিত। খুঁটিনাটি কোনো কিছুই বাদ দেওয়া যায় না। অন্যদের সঙ্গে তাদের পার্থক্য হলো: এখানে আপনাকে অনেক বেশি জায়গা দেওয়া হয়, যা হয়তো অন্য সংবাদমাধ্যমে সব সময় পাওয়া যায় না।”

পেরুর লিমায়, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃতদেহ সৎকারের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ছবি: ওমর লুকাস / আইডিএল-রিপোর্তেরোস

পেরুর রাজধানী লিমার সবচে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর করোনাভাইরাস প্রভাব ক্যামেরাবন্দী করতে অনেক সময় ব্যয় করেছেন লুকাস।

“মাস্ক ব্যবহার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপের বাইরে একটা কাজ আমি এখানেও করেছি, এবং সবসময়ই করি। তা হলো: মানুষদের সঙ্গে একটি সংবেদনশীল সম্পর্ক গড়ে তোলা, যেন আমি তাদের আস্থা অর্জন করতে পারি ও তাদের জীবনের নানা দিক তুলে আনতে পারি,” বলেছেন লুকাস, “এসব কাজে আমি ভারি কিছু বহন করি না। আমার সঙ্গে থাকে ক্যামেরা ও একটি ৩৫ এমএম লেন্স।”

লিমার উত্তরে কোমাস জেলার একটি কবরস্থানে কয়েক দিন কাটিয়েছেন লুকাস। তিনি সেখানে যান ভেনেজুয়েলান একটি পরিবারের দাওয়াতে; তাদের কোভিডে হারানো স্বজনের শেষকৃত্যে অংশ নিতে।

সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে লুকাস বলেছেন, “তারা কফিন খুলে দেখতে চাইছিলেন, ভেতরে থাকা মৃতদেহটি তাদের পরিবারের সদস্যের কিনা। কিন্তু খুলে দেখা যায়, দেহটি একটি প্লাস্টিক ব্যাগে পুরোপুরি মুড়িয়ে রাখা। মৃত ব্যক্তির প্রেমিকা লাশের কাছে যান, কাঁদতে শুরু করেন; তিনি তখন পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়া, আকাশের দিকে তার চোখ তোলা। এটি সত্যিই খুব বেদনাদায়ক একটি মুহূর্ত ছিল।”

লুকাস আরো একটি ছবি তুলেছেন, যেখানে দেখা যায়: মৃত ব্যক্তির পিতামাতা অনুপস্থিত থাকায়, তাঁর বোন শেষকৃত্যের প্রথাগুলো লাইভস্ট্রিম করছিলেন। কিন্তু আবেগে ভেঙে পড়ায় তিনি সেটি আর করতে পারছিলেন না। “আমি কিছুক্ষণের জন্য ক্যামেরা নামিয়ে রেখেছিলাম,” বলেছেন লুকাস।

লিমার একটি কবরস্থানে, মৃতদেহটি পুরোপুরি প্লাস্টিকে জড়ানো দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। ছবি: ওমর লুকাস

মৃত ব্যক্তির পিতামাতা অনুপস্থিত থাকায়, তাঁর বোন শেষকৃত্যের প্রথাগুলো লাইভস্ট্রিম করছিলেন। কিন্তু আবেগে ভেঙে পড়ায় তিনি সেটি আর করতে পারছিলেন না। ছবি: ওমর লুকাস

পেরুতে থাকা একটি ভেনেজুয়েলান কমিউনিটির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব কেমন, তা নিয়ে একটি ফটোগ্রাফিক সিরিজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লুকাস।

তিনি বলেছেন, “এই কমিউনিটির মানুষরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কোভিড-১৯-এর আগে এই কমিউনিটির ৮০ শতাংশ মানুষই অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু কোয়ারেন্টিন বিধিমালা জারির পর তাদের অনেকেরই উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেই তাদের বাড়িভাড়া দিতে পারেননি এবং উচ্ছেদ হয়েছেন। অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন নিজ দেশের দিকে।”

এই কাজে লুকাস তুলে ধরেছেন লিমার একটি আশ্রয়কেন্দ্রের চিত্র, যেখানে ভেনেজুয়েলান এই কমিউনিটির ৩৪জন বাস করতেন। রাস্তার কিছু হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যও ক্যামেরাবন্দী করেছেন লুকাস। যেমন, একটি ছবিতে দেখা যায় লিমার সান্তা রোজা চার্চের এক যাজিকা জানালা দিয়ে রুটি ফেলছেন এবং নিচে দাঁড়িয়ে এক নারী সেটি তোয়ালে দিয়ে লুফে নিচ্ছেন। এই নারীর নাম মারেইলা ডেল ভালে। তিনি যে শপিং সেন্টারে কাজ করতেন, সেটি করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তাই তিনি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যান। এমন পরিস্থিতি দেখে তাঁকে সেই নানের কাছে নিয়ে যান অন্য দুই পেরুভিয়ান নারী।

লিমায়, দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে রুটি ফেলছেন এক যাজিকা। নিচে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে সেটি লুফে নিচ্ছেন ভেনেজুয়েলার মারেইলা ডেল ভালে। ছবি: ওমর লুকাস

একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে কাজ করতেন ৪৭ বছর বয়সী ম্যারিলিন মুরো। কোভিড-১৯-এর কারণে চাকরি হারিয়ে আরো ৩৩জন ভেনেজুয়েলানের সঙ্গে তিনি এসেছেন সিন ফ্রোন্টেরাস আশ্রয়কেন্দ্রে। ছবি: ওমর লুকাস

ঘর থেকে ফটোগ্রাফি

প্যারিসে, মহামারি শুরুর প্রথম দিকে কিছুদিন সাইকেলে চেপে এই সংকটের সময়কে ক্যামেরাবন্দী করতে চেয়েছিলেন সাবেক “ওয়ার ফটোগ্রাফার” ও ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার বিজয়ী টমাস ডোরজাক। কিন্তু সে প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রথাগত ফটোগ্রাফির চিন্তা পুরোপুরি বাদ দেন।

নিজে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বা সেটি ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি বিবেচনা করে, ঘরে বসে বিভিন্ন ইভেন্ট ও মিটিংয়ের স্ক্রিনশট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ডোরজাক। ভিডিও প্ল্যাটফর্ম, ‍জুমের বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তিনি এসব স্ক্রিনশট নিয়েছেন। কখনো কখনো তিনি হয়তো কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স বা কর্মীকে বলেছেন তাদের ল্যাপটপ ও ভিডিও চ্যাটটি চালু রাখতে। এভাবে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা সেখানকার জীবনযাত্রা দেখেছেন ও সেখান থেকে স্ক্রিনশট নিয়েছেন।

ডোরজাক ভেবেছিলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা যদি টেলিফোনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে একজন ফটোগ্রাফার কেন কম্পিউটারের মাধ্যমে নানা আকর্ষণীয় ছবি-ভিডিও সংগ্রহ করতে পারবে না?

তিনি বলেছেন, “এই সংকট শুরুর প্রথম দিকেই আমি ভেতরের দিকে নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মনে হয়েছিল, সবাই যেহেতু লকডাউনে আছে, সুতরাং পুরো অন্য একটি দুনিয়া এখন খুলে যাচ্ছে। এবং সেটি খুলছে জুমের মাধ্যমে। পুলিশি বাধা বা নিষেধাজ্ঞা না থাকার পরও ঘটনাস্থলে যাচ্ছি না –  এমনটা আমার জীবনে এবারই প্রথম ঘটলো। কারণ ভয় ছিল, আমি হয়তো অন্যদের ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি। অবশ্য, জুম থেকে নেওয়া স্ক্রিনশটগুলোর ভিজ্যুয়াল মান ততটা ভালো হয় না। একটু সাদামাটা। কিন্তু এগুলোও খুব আকর্ষণীয় হতে পারে।”

ম্যাগনাম ফটোজের বিদায়ী সভাপতি, ডোরজাক এই মহামারির সময় অংশ নিয়েছেন প্রায় এক হাজার জুম মিটিংয়ে। তাঁর কাজটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হেফাজতে মারা যাওয়া আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজন করা একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে মজার অভিজ্ঞতা হয় ডোরজাকের। অনুষ্ঠানটি চলার সময় তিনি হঠাৎ তাঁর স্ক্রিনের এক জায়গায় একটি প্রোফাইলে কিছু একটা পোড়ার ভিডিও খেয়াল করেন। সেটি বড় করার পর দেখা যায়: কেউ একজন (“জুম বোম্বার”) সেখানে বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশে ক্লু ক্লাক্স ক্লান সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও চালাচ্ছিল। সেসময় ডোরজাক, অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্যদের প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেছেন, স্ক্রিনশট নিয়েছেন।

জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজন করা একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে কেউ একজন (“জুম বোম্বার”) সেখানে বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশে ক্লু ক্লাক্স ক্লান সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও চালাচ্ছিল। ছবি: টমাস ডোরজাক / ম্যাগনাম ফটোজ

টুইটারে সার্চ করে অনেক উন্মুক্ত মিটিংয়ের খোঁজ পেতেন তিনি। অথবা অন্যদের আমন্ত্রণে যোগ দিতেন প্রাইভেট মিটিংয়ে। কখনো কখনো তিনি ইজরায়েল, নিউজিল্যান্ড, গ্যাবন ও ফ্রান্সের কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সহায়তাও পেয়েছেন, যারা ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের ল্যাপটপ ক্যামেরা চালু রেখেছেন সেখানকার পরিস্থিতি দেখানোর জন্য।

“আমি গতকাল রাতেই গ্যাবনের একটি দারুন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছবি পেয়েছি। এটি বেশ সুন্দর ছিল,” বলেছেন ডোরজাক, “আরেকটি দারুন অভিজ্ঞতা ছিল ফ্রান্সের একটি প্রবীনকেন্দ্র নিয়ে। সেখানে আমি একটি জুম মিটিং চালু করে একজনকে বলেছিলাম তার ল্যাপটপটি কমিউনিটি রুমের মাঝখানে একটি টেবিলের ওপর রেখে দিতে। এবং এটি এভাবে কয়েক ঘন্টা ধরে চলত। মাঝেমাঝে ক্যামেরাটি এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দেওয়া হতো। এগুলো খুব গভীর-চিন্তাশীল ফটো সাংবাদিকতা নয়, কিন্তু চারপাশের জীবন যেভাবে সিনেমার মতো আবর্তিত হচ্ছে, তা দেখতে ভালো লাগে।”

অ্যাপল কিবোর্ডের কমান্ড-শিফট-৩ প্রেস করে খুব সহজেই স্ক্রিনশট নিয়ে ফেলতে পারেন ডোরজাক। রেকর্ড করে রাখতে পারেন এই মহামারির সময়ের আকর্ষণীয় বা যে কোনো সাধারণ মুহূর্ত।

ফ্রান্সের একটি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের কর্মী ও বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনের স্ক্রিনশট। ছবি: টমাস ডোরজাক / ম্যাগনাম ফটোজ

হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের ভাবধারা রেকর্ড করার জন্য ডোরজাক এমনকি ভিডিও গেমের দিকেও ঝুঁকেছেন। তিনি সেখানে খেলেছেন নিনটেনডোর “এনিমেল ক্রসিং” নামের একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিডিও গেম।

ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে এবং একটি ভার্চুয়াল পশুর রূপ নিয়ে, ডোরজাক অংশ নিয়েছিলেন এই গেমে। শুরুতে সেখানে তিনি ক্রমাগত গাছ ও দালানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মুশকিলে পড়লেও, সেখানকার অন্য ভার্চুয়াল পশুরূপী আন্দোলনকারীরা তাকে সাহায্য করে এবং তাদের একজন হিসেবে গ্রহণ করে। ডোরজাক তাদের এই আন্দোলনের প্রতীকী ভাষা লিপিবদ্ধ করার জন্য সেই গেমের অনেক স্ক্রিনশট নিয়েছেন।

“আমি আসলে সেখানে হংকং বিক্ষোভের এক নেতার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। গেমের ভেতরে আমরা দুজনেই ছিলাম টেডি বিয়ার। এরকম অদ্ভুত কাণ্ড আমি আর কখনো করিনি। তবে তারা আমাকে তাদের গেমের ভেতরে চলা বিক্ষোভ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। আমার কাছে এমন কিছু ছবি আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে: গেমের টেডি বিয়াররা চীনের রাজনীতিবিদদের কচুকাটা করছে। এটি আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম। এবং চীনা সরকার এটি নিষিদ্ধ করেছে,” বলেছেন ডোরজাক।

জোহানেসবার্গের দক্ষিণে একটি উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে সেখানকার বিক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়ছে জোহানেসবার্গ মেট্রো পুলিশ। কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় উচ্ছেদের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অনেককে উচ্ছেদ করেছে। ছবি: জেমস ওটওয়ে

মহামারির সময়ে সহিংসতার ছবি তোলা

দক্ষিণ আফ্রিকায়, ফটোগ্রাফার জেমস ওটওয়ে এই মহামারির সময় ঘটে চলা সহিংসতা কাভার করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধ ফটোগ্রাফির কৌশল অনুসরণ করেছেন। প্রায়ই তাঁকে বডি আর্মার পরতে হয়েছে, বড় বড় করে প্রেস লিখে রাখতে হয়েছে এবং প্রতিদিন নানান কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

লকডাউনের সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মমতার চিত্র ক্যামেরাবন্দী করেছেন ওটওয়ে, যা প্রকাশিত হয় নিউ ফ্রেম-এ। এখান থেকে প্রমাণ হয়, কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় উচ্ছেদের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অনেককে উচ্ছেদ করেছে।

“আমার কাজের ধরন অনেক সহনশীল। এটি অনেকের সঙ্গে মিশে গিয়ে সংবাদ ও তথ্যচিত্র নির্মানের একটি পদ্ধতি। কখনো কখনো আমি কোনো খবরের সূত্র ধরে কাজ শুরু করি, কখনো এনজিও-র সঙ্গে ভিড়ে যাই, কখনো নিজেই চারপাশে ঘুরে দেখি এবং এমন ঘটনার মধ্যে পড়ে যাই, যেখানে পুলিশ মানুষের দিকে রাবার বুলেট ছুড়ছে। এই কাজের সময় আমি একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরি। এর ওপরে বড় বড় করে প্রেস লেখা থাকে। কারণে আমি চাই, আমাকে যেন খুব সহজে সনাক্ত করা যায়। এবং আমাদের জানা থাকে না যে, পুলিশ কতটা বলপ্রয়োগ করবে। ফলে প্রেস লেখার কারণে আমার নিজের হেনস্তা হওয়ার সুযোগ কম থাকে। সোর্সের সঙ্গে আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ও কিছুটা ভাগ্য এসব কাজে অনেক সাহায্য করে।”

“নিরাপত্তা, স্থানান্তর ও উচ্ছেদ সংক্রান্ত সেবা প্রতিষ্ঠান” রেড অ্যান্টের নিরাপত্তাকর্মীরা জোহানেসবার্গের কাছে একটি অনানুষ্ঠানিক বসতি উচ্ছেদের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। ছবি: জেমস ওটওয়ে

কমিউনিটির সাথে মিশে যাওয়া

দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক ফটোগ্রাফার ম্যাডেলিন ক্রোনিয়ে লকডাউনের কারণে তার ছবি তোলার পদ্ধতি নিয়ে পুরোপুরি ভিন্নভাবে চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি দুস্থ-দুর্গতদের মানবিক সহায়তা দিতে গিয়ে সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়েও চিন্তা করেছেন নতুন করে।

দেশটির আরো অনেক ফটোগ্রাফারের মতো, নিউ ফ্রেমের অভিজ্ঞ কর্মী ক্রোনিয়েও মহামারির শুরুতে অনেক সংশয়ের মধ্যে পড়েছিলেন এর কাভারেজ নিয়ে। পুলিশ, এমনকি সাংবাদিকরাও নিশ্চিত ছিলেন না, রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারদের জরুরি-সেবা কর্মী হিসেবে গণ্য করা হবে কিনা, এবং তাদের কারফিউ ও চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হবে কিনা।

ক্রোনিয়ে বলেছেন, “আমাদের এখানে পঞ্চম পর্যায়ের [দক্ষিণ আফ্রিকার সবচে কঠোর কোয়ারেন্টিন নীতি] লকডাউনে, উচ্ছেদ ও কারফিউ বলবৎ করার সময় বাজে রকমের পুলিশী বর্বরতা দেখা গেছে। শুরুতে নতুন নিয়মগুলো মেনে চলা অনেকের জন্যই কঠিন ছিল। কিন্তু পুলিশ বেছে বেছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অভিযান চালিয়েছে এবং তারা সত্যিই মানুষের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছে। অনেক মারধর ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।”

নিজের হোম কোয়ারেন্টিন অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করতে গিয়ে ক্রোনিয়ে একটি কৌশল তৈরি করেন অন্য নাগরিকদের অভিজ্ঞতাগুলো ক্যামেরাবন্দী করার।

তিনি বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে আপনি ভিন্নভাবে ছবির কথা ভাবতে বাধ্য হবেন। আপনি বাধ্য হবেন জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে এবং এই একাকিত্বের কথা চিন্তা করতে। আমরা নিজেদেরই জিজ্ঞাসা করছিলাম: আমাদের কী আসলেই ছবি তোলা উচিৎ? হ্যাঁ, চারপাশে যা ঘটছে, তা তুলে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন্যদিকে, বাইরে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি অন্যকে ঝুঁকির মুখেও ফেলতে চাইবেন না। নিজের সঙ্গেই এক ধরনের লড়াই চলছিল। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করছিলাম: আমি কী যথেষ্ট চেষ্টা করছি? যদি না করে থাকি, তাহলে আমি কী দায়িত্বশীল আচরণ করছি নাকি অলসতা করছি?”

জোহানেসবার্গের একটি আবাসিক ভবনে বসবাস করেন ক্রোনিয়ে। এবং সেখানে থাকতে থাকতে তিনি উপলব্ধি করেন, ভবনটির গৃহকর্মীদের শিশুরা এই লকডাউনের মধ্যে কার্যত বন্দী হয়ে পড়েছে কনক্রিট-ঘেরা ছোট্ট একটি উঠোনে। মাসের পর মাস ধরে তাদের সেই জায়গাতেই খেলতে হচ্ছে, পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তারা স্কুলে যেতে পারছে না, তাদের পরিবারিক বাড়িতেও ফিরতে পারছে না। লকডাউনের মধ্যে এই শিশুদের জীবন ক্যামেরাবন্দী করেছেন ক্রোনিয়ে।

ভবনটির গৃহকর্মীদের শিশুরা এই লকডাউনের মধ্যে কার্যত বন্দী হয়ে পড়েছে কনক্রিট-ঘেরা ছোট্ট একটি উঠোনে। মাসের পর মাস ধরে তাদের সেই জায়গাতেই খেলতে হচ্ছে, পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ছবি: ম্যাডেলিন ক্রোনিয়ে

পরবর্তীতে, কোভিড-১৯-এর কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া ব্যক্তিদের পূণর্বাসনে নেয়া প্রকল্প কাভার করতে গিয়ে, ক্রোনিয়ে খুঁজে পান অবহেলা, চরম দারিদ্র ও দুর্দশার চিত্র।

“গৃহহীনদের একটি আবাসন ক্যাম্পে জরুরিভাবে পূণর্বাসন করা হচ্ছিল। সেই ছবি তুলতে ওয়েম্বলি নামের সুন্দর একটি জায়গায় গিয়েছিলাম। সেখানে নতুন আর্মি টেন্ট দিয়ে ভালো একটি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু একই মাঠের অন্যদিকে আরেকটি অস্থায়ী আবাসন গড়ে তোলা হয়েছিল তিন বছর আগে। [ওয়েমার শেল্টার নামের] এটি তৈরি হয়েছিল, বিভিন্ন ভবন থেকে বিতাড়িত মানুষদের আশ্রয় দিতে। এই জায়গাটি খুবই বাজে ও পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এখানে কোনো ধরনের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বা রক্ষণাবেক্ষণ ছিল না। বাইরে কিছু মানুষ ঘুমিয়ে আছে। অনেক অপরাধী কর্মকাণ্ড চলছে। এবং এই অবহেলিত মানুষদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল অভিবাসী। কেউ তাদেরকে কোনো স্যানিটাইজার বা মাস্ক বিতরণ করেনি। কোনো ধরনের সাহায্য দেয়নি।”

ইউসুফ মোম্বা জোহানেসবার্গের যে ভবনটিতে থাকতেন, সেটি আগুনে পুড়ে যায় তিন বছর আগে। এরপর তাঁর অস্থায়ী একটি তাঁবুও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন তিনি থাকেন ওয়েমার শেল্টারে। চরম অবহেলিত এই আশ্রয়কেন্দ্রের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে নতুন আরেকটি জরুরি পূণর্বাসন কেন্দ্র। ছবি: ম্যাডেলিন ক্রোনিয়ে

ক্রোনিয়ে তাদের সহায়তার জন্য একটি দাতব্য সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এবং তাদের সহযোগিতায় ওয়েমার ক্যাম্পের মানুষদের মধ্যে ৪০০টি কম্বল ও প্রায় ৩০০০ ডলার সমমূল্যের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

এই পর্যায়ে ক্রোনিয়ে তার ক্যামেরা নামিয়ে রেখে, ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জন্য স্যুপ তৈরি করার কাজে হাত লাগান। প্রতি সপ্তাহে দুবার করে এই কাজটি তিনি করেছেন চার সপ্তাহ ধরে।

ক্রোনিয়ে বলেছেন, “সাংবাদিক হিসেবে আপনি নিরপেক্ষ থাকবেন, এমনটিই আশা করা হয়। কিন্তু এই মানুষগুলো একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় আছে। শীত চলে আসছে, আর এখানে অনেক শিশুও আছে। ফলে আমরা কিছু সময়ের জন্য এখানে স্যুপ তৈরি ও বিতরণ করেছি। কিন্তু তারপর আমি দেখলাম যে, আমরা এখানে খুব বেশি সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছি।”

টুরফোন্টেইন কোভিড ক্যাম্পে শরীরচর্চা করছেন গৃহহীন মানুষরা। মহামারির বিস্তার রুখতে জোহানেসবার্গে গড়ে তোলা হয়েছে এমন বেশ কিছু ক্যাম্প। ছবি: ম্যাডেলিন ক্রোনিয়ে

ছাঁচেঢালা মনোভাব পাল্টে দেয় যে ছবি

ওয়াশিংটন ডিসিতে, কোভিড-১৯ কিভাবে শহুরে অশ্বেতাঙ্গ কমিউনিটিগুলোতে দারিদ্র ও দুর্দশা তৈরি করছে, সেদিকে নজর দিয়েছিলেন অ্যাসোসিয়েট প্রেসের ফটোগ্রাফার জ্যাকুলিন মার্টিন

নিউজরুমের নির্দেশনা মেনে, কারো ঘরের ভেতরে ঢুকে ছবি তোলা বাদ দিয়েছিলেন তিনি। কাজের ধরনও বদলে নিয়েছিলেন। যেমন, তিনি এমন একটি ছবি তুলেছেন, যেখানে এক ইহুদি পুরোহিত ভার্চুয়াল প্রার্থনা পরিচালনা করছেন।

কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কা থাকায়, তিনি বাইরে অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার জন্য একটি “ইউনিফর্ম” তৈরি করেন। এবং বাসায় ফেরার পর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালান।

“বাইরে যে কোনো অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার সময় আমি মাস্ক ও গ্লোভস পরি,” বলেছেন মার্টিন, “প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট শেষে আমি পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি, অ্যালকোহল দিয়ে ক্যামেরা ও কম্পিউটার পরিস্কার করি, বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে গোসল সেরে ফেলি ও কাপড় ধুয়ে ফেলি। বড়সড় একটা পরিবর্তন হয়েছে যে, আমি বাড়িতে ফেরার পর গোসল ও জামাকাপড় পরিবর্তন না করে আমার ছোট ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে পারি না। যদি জনসমাগমপূর্ণ কোনো অ্যাসাইনমেন্টে যেতে হয়, তাহলে আমি সার্জিক্যাল মাস্কের বদলে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করি। এবং আলাদা করে চোখের সুরক্ষার জন্য গগলস পরি। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, নিউজরুম থেকে অনেক সহায়তা পাচ্ছি।”

মহামারির মধ্যে চালু হওয়া কিছু বর্ণবাদী স্টেরিওটাইপকে চ্যালেঞ্জ জানানোই ছিল মার্টিনের ফটো সাংবাদিকতার শক্তিশালী দিক। যেমন, প্রচলিত ধারণা হলো, অশ্বেতাঙ্গ মানুষরা বেশি ঝুঁকিতে আছে, কারণ তারা কোভিড সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। “কিন্তু আমি এমনটি একদম দেখিনি,” বলেছেন মার্টিন।

মে মাসে, তিনি এমন একটি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছিলেন, যেটি কোভিড-১৯ সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল। এই ফটো প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে এখানে

এবং, মহামারির শুরুর দিকে, কর্তৃপক্ষ তখনও মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করেনি, এমন সময়ে ওয়াশিংটনের দক্ষিণপূর্বে একটি খাদ্য বিতরণ সেন্টারের সামনে ১২ বছর বয়সী এক আফ্রিকান আমেরিকান শিশুর ছবি তুলেছিলেন  মার্টিন। ছেলেটিকে হিজাবের মতো স্যুট দিয়ে পুরোপুরি ঢেকে বাইরে পাঠিয়েছিল তার মা।

গত মার্চে, ওয়াশিংটন ডিসির একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনে এভাবেই সুরক্ষা পোশাক পরে অপেক্ষা করছিল ১২ বছর বয়সী, সিরে উইলসন। ছবি: এপি ফটো / জ্যাকুলিন মার্টিন

মার্টিন বলেছেন, “কৃষ্ণাঙ্গ কমিউনিটিতে কোভিড-১৯ মৃত্যুহার বেশি হওয়ার পরিসংখ্যান এখনো সামনে আসেনি। কিন্তু মানুষ যে সত্যিই উদ্বিগ্ন, তা আপনি সহজেই দেখতে পাবেন। ১২ বছরের এই ছেলের ছবিটি খুব শক্তিশালী। কারণ তার বয়স এতো কম এবং আশেপাশে সে ছাড়া আর কেউ এতো ভারী সুরক্ষা পোশাক পরেনি। পুরোপুরি সুরক্ষা নিশ্চিত না করে তার মা তাকে বাসার বাইরে বেরোতে দেয়নি। এই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ কমিউনিটি যে কষ্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল, এই ছবি তারই প্রতিনিধিত্ব করে। কোভিড-১৯ এখানে অনেক রকমের বৈষম্যের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে। এবং এটি কাভার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ছবি যখন সেতুবন্ধন

হোলিয়োক শহরের সোলজার্স হোম প্রকল্পে, কোভিডে মারা যাওয়া সাবেক সেনাসদস্যদের ছবি প্রজেক্টরের মাধ্যমে তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং সেটির ছবি তুলেছেন এপির গোল্ডম্যান। তিনি বলছিলেন, “এই মহামারিতে ফটোগ্রাফারদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত হয়ে যাওয়া। এইচআইপিএএ [ইউএস হেলথ প্রাইভেসি রেগুলেশন]-র কারণে আগে থেকেই হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলোর ছবি তোলা কঠিন ছিল। এখন ব্যাপারটি একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমি সত্যিই কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম।”

সাবেক সেনাসদস্যদের মৃত্যু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গোল্ডম্যান ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এবং তিনি ১২টি পরিবারকে খুঁজে পেয়েছিলেন যারা এই কাজে অংশ নিতে সম্মত হয়েছিল।

গোল্ডম্যান বলেছেন, “আমি এই সাবেক সেনাদের একটি পোট্রেইট সিরিজ করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখানে যে একটি হারানোর বেদনা মিশে আছে, তাও আমি তুলে আনতে চেয়েছি। ফলে আমি এই দুইটিকে এক জায়গায় আনতে চেয়েছি।”

কাজটি ভিজ্যুয়ালি দৃষ্টিনন্দন করার জন্য, ১২টি ছবি কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দিয়ে সাজানোর দরকার ছিল। ফলে মারা যাওয়া সব সেনাসদস্যের সামরিক পোশাক পরা ছবি ব্যবহার করেছেন গোল্ডম্যান। ছবিগুলো বিভিন্ন বাড়িতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিয়েছেন। সেটি ছিল সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে। এবং সব ছবিতেই দেখা গেছে: বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়ে আছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা এবং তাদের মুখ আলোকিত করা আছে।

এই ১২জন মৃত সেনাসদস্যদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছেন গোল্ডম্যান। এবং পুরোনো সব ছবি ঘাঁটতে গিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন অবাক করে দেওয়ার মতো সব গল্প।

যেমন, তিনি জেনেছেন: ৯৩ বছর বয়সী এমিলো ডিপালমা এক সময় নিজের মতো করে শাস্তি দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক কুখ্যাত নাৎসি অফিসারকে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারাধীন থাকা বন্দীদের পাহারা দেওয়ার জন্য ন্যুরেমবার্গে পাঠানো হয়েছিল ডিপালমাকে। সেখানে খাবার পানি নিয়ে অভিযোগ করায় হেরম্যান গোয়েরিংয়ের কাপে বাথরুমের নোংরা পানি মিশিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে ডিপালমা স্মরণ করেন, গোয়েরিং বাথরুমের পানিই বেশি পছন্দ করেছিলেন, “আর আমি ভেবেছিলাম: হা হা, এবার তোমাকে ধরে ফেলেছি।” গোল্ডম্যান আরো জেনেছেন ৮৪ বছর বয়সী ফ্রান্সিস ফোলির কথা, যিনি হাসতে হাসতে নার্সদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন এবং গানও গাইতে পারতেন।

সব কিছুর বাইরে গোল্ডম্যান জেনেছেন, এই ১২জন সাবেক সেনা সদস্য তাদের পরিবারের কাছে অনেক বড় একজন মানুষ ছিলেন, যারা সবসময়ই সবাইকে রাস্তা দেখিয়েছেন।

এই কাজ করতে গিয়ে প্রজেক্টরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জেনারেটর নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, গোল্ডমানকে ১০০ ফুট লম্বা বৈদ্যুতিক তার কিনে আনতে হয়েছে। সবার বাড়ির বাইরে একটি করে বৈদ্যুতিক সংযোগের ব্যবস্থা দেখে তিনি যারপরনাই স্বস্তিও পেয়েছিলেন। বাড়ির জানালায় দাঁড়ানো আত্মীয়দের মুখ আলোকিত করার জন্য গোল্ডম্যান একটি বাতি কিনেছিলেন। এবং সেই পরিবারকে বলে দিয়েছিলেন কিভাবে সেটি জানালার সঙ্গে আটকে দিতে হবে।

গোল্ডম্যান বলেছেন, “সাবেক সেনাসদস্যের পরিবারগুলো আমার ছবি তোলার ক্ষেত্রে, দূর থেকে সহযোগীর কাজ করেছে। তারা এমনকি জানালার কাছে থাকা আসবাবপত্রগুলোও সরিয়ে দিয়েছে। আমি আগে কখনো প্রজেক্টর পরিচালনা করিনি। ফলে অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। কিন্তু আমি জানতাম যে, আমি শুধু প্রিয়জনের ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়ানো কোনো পোট্রেট তুলতে চাই না।”

প্রতিটি ছবির জন্য, গোল্ডম্যানকে প্রথমে সেই সাবেক সেনাসদস্যদের বাড়ির দেয়ালে একটি ছবি প্রক্ষেপণ করতে হয়েছে। তারপর পরিবারের সদস্যদের আহ্বান জানাতে হয়েছে জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে সামনে তাকানোর জন্য।

“কিছু সময় বিষয়টি এতো আবেগঘন হয়ে পড়েছিল যে, তারা সামনে এসে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। তারা তাদের বাবা বা মাকে কখনো এভাবে চিন্তা করেননি। আবার এই ফটোগ্রাফি প্রজেক্টটির কারণে তারা নিজেদের প্রিয়জনকে এভাবে শ্রদ্ধা জানানোরও সুযোগ পেয়েছেন।

অন্যদিকে, পেরুতে থাকা লুকাস হিমশিম খাচ্ছিলেন ক্রমাগত বাড়তে থাকা কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা ও প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে গিয়ে।

তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র নিচের এই ছবিটি দিয়েই তিনি দুটো বিষয়কে একসঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।

কোভিড-১৯ রিপোর্টিং নিয়ে আরো পড়ুন:

কোভিড-১৯ রিসোর্স

ওয়েবিনার সিরিজ: ইনভেস্টিগেটিং দ্য প্যানডেমিক

হিসেবের বাইরে থেকে যাওয়া কোভিড মৃত্যুকে তুলে আনবেন কী করে

কারা কোভিড গুজব ছড়ায় খুঁজে বের করার ৬টি টুল ও ৬টি কৌশল


রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

জিআইজেএনের দুই দশক

জিআইজেএনের বর্ষপূর্তি। কুড়ি বছর আগে কয়েকটি অলাভজনক সংগঠন বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকতার সমর্থনে একটি নেটওয়ার্ক গঠনের লক্ষ্যে একাট্টা হয়েছিল৷ সেটি ছিল ২০০৩ সালে, কোপেনহেগেনে আয়োজিত দ্বিতীয় গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স। তারপর থেকে, আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমাদের প্রসারে আমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছি।