

কর্পোরেট দুর্নীতির যোগসূত্র খুঁজতে পারেন এই টুল দিয়ে
পরিবেশ, অর্থ বা শ্রম কারচুপির মতো দুর্নীতির বিপরীতে বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রায়ই সবার অলক্ষ্যে চুপচাপ জরিমানা দিয়ে যায়। যা অনেক সময় সাংবাদিকরাও ধরতে পারেন না। দুর্নীতির এমন কিছু ধারা বা প্রবণতা আছে, যেগুলো সংখ্যায় মাপা কঠিন কিংবা সহজে চোখে পড়ে না। আবার দেখা যায় নিয়ম ভাঙার কারণে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো জরিমানা দিচ্ছে। অথচ সাংবাদিকরা বুঝতে পারেন না যে, এই কোম্পানিগুলো হয়তো কোনো বড় করপোরেশন বা কোটিপতির মালিকানাধীন।
বেশ কয়েকটি ফ্রি টুল রয়েছে, যেখানে বিশ্বের ৫৯টি দেশে করপোরেট অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তথ্যগুলো একত্রিত করে রাখা আছে। টুলগুলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়। যা ব্যবহার করে সাংবাদিকরা খুব সহজেই দেখতে পারেন কে কোথায় কী ধরনের দুর্নীতি করছে। এমনকি এগুলোর মাধ্যমে কোম্পানির ‘পরিবেশবান্ধব ভাবমূর্তি” বা জন কল্যানকর দাবিগুলো নিয়েও প্রশ্ন তোলা সহজ হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনজিও গুড জবস ফার্স্ট-এর করপোরেট রিসার্চ প্রকল্পের অধীনে তৈরি এই ডেটাবেস ভায়োলেশনস ট্র্যাকারে বর্তমানে ৬ লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি জরিমানা ও সমঝোতার তথ্য রয়েছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫০টি ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য পাওয়া যায়। এখানে ২০০০ সাল থেকে তথ্য পাবেন। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম— যেমন মজুরি চুরি, প্রতিযোগিতা–বিরোধী আচরণ, ও অবৈধ দূষণ সম্পর্কিত তথ্য পাবেন। তথ্যগুলো শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক নয়, আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বহুজাতিক অনেক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও ডেটাবেস রয়েছে এখানে। ভায়োলেশনস ট্র্যাকার ইউকে (ভিটি ইউকে)-তে ২০১০ সাল থেকে ৮০টি সংস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়া ১ লাখ ১৭ হাজার মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নিকার ২০২৫ ডেটা সাংবাদিকতা সম্মেলনের এক কর্মশালায় জানানো হয় যে, এই প্রকল্পটি আরও বড় পরিসরে একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। নাম ভায়োলেশনস ট্র্যাকার গ্লোবাল (ভিটি গ্লোবাল)। এখানে যদিও তথ্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। তবে ৫৭টি অতিরিক্ত দেশ ও অঞ্চলের করপোরেট অনিয়মের তথ্য আছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য যেগুলো অনন্য ও মূল্যবান।
“২০১০ সাল থেকে শুরু করে এই দেশগুলোর ১ হাজার ৭০০টি মূল কোম্পানির তথ্য রয়েছে—বলেন এই প্রকল্পের গবেষণা বিষয়ক বিশ্লেষক শিওভন স্ট্যান্ডেয়ার্ট। “টুলটি ভায়োলেশনস ট্র্যাকারের মতো শক্তিশালী নয়; তালিকায় অনেকগুলো দেশ অন্তর্ভুক্ত করার ফলে তথ্যের মান কিছুটা দুর্বল। তাছাড়া কোম্পানিগুলোর অনিয়ম বা অপরাধের তথ্যগুলো তো সব একরকম নয়। কিন্তু তারা কেমন আচরণ করছে এবং ছোট দেশগুলোতে তাদের দুর্নীতির প্রকৃত রেকর্ড কী— এর মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন।
(তিনটি ডেটাসেটের মধ্যে পার্থক্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন তথ্য নিয়ে একটি আপডেট লগও রয়েছে।)

ভায়োলেশনস ট্র্যাকার গ্লোবাল-এর আধুনিক সার্চ ড্যাশবোর্ড। ছবি: স্ক্রিনশট
বারবার দুর্নীতি করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুঁজুন
ভায়োলেশনস ট্র্যাকার ব্যবহার করে ইউএসএ টুডে গত বছর টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের নতুন সরকারি দায়িত্বের সঙ্গে সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাতগুলো খুঁজে বের করে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়, টেসলার পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেওয়া হয়েছে। যেখানে এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতো ৭৩টি আলাদা আলাদা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে।
এদিকে দারুণ একটি কাজ করেছে গার্ডিয়ান । তারা ভায়োলেশন ট্র্যাকার ইউকের তথ্যগুলো বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে দেখিয়েছে, যুক্তরাজ্যের যেসব কোম্পানি সবচেয়ে বেশি নিয়ম ভেঙেছে বা খারাপ আচরণ করেছে, তারাই আবার সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সরকারি চুক্তি পেয়েছে।
নতুন ভিটি গ্লোবাল টুলে যেসব দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল থেকে শুরু করে রয়েছে কেনিয়া ও চীন। এই ডেটাবেসটি বড় অর্থনীতিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে তৈরি। এ বছর আরও কয়েকটি দেশকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে পেরু ও কলম্বিয়া।
কোম্পানিগুলো কোথায় নিবন্ধিত—টুলটি তা নিয়ে নয়, বরং যে দেশে বসে তারা দুর্নীতিগুলো করছে, সেই দেশেই জরিমানার রেকর্ড রাখে। এভাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্থানীয় অনিয়মগুলো তুলে ধরা যায়। যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকায় নিবন্ধিত টেলিকম জায়ান্ট এমটিএন-কে দেখা যাচ্ছে নাইজেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি জরিমানাপ্রাপ্ত কোম্পানি হিসেবে। একটি পরিবেশসংক্রান্ত এবং পাঁচটি ভোক্তা সুরক্ষা সংক্রান্ত নীতি লঙ্ঘনের কারণে যাদের বিরুদ্ধে মোট ৯১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা ও সমঝোতার তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে।
এই টুল ঘেঁটে দেখলেই অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আইডিয়া পাওয়া যায়। কেবল ’অফেন্সেস’ ফিল্টার ঘুরে দেখলেই আপনি পেয়ে যাবেন সম্ভাব্য দোষীদের—যেমন কুখ্যাত গাড়ি নির্মাতা বা বারবার নিয়ম ভাঙা ব্যাংকগুলো। এরসঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে এমন কিছু খারাপ কোম্পানির সন্ধানও পাবেন, যারা ঝুঁকিপূর্ণ দেশে অপকর্ম করছে।
“আমরা দেখতে পেয়েছি বিভিন্ন দেশে বারবার একই কোম্পানির নাম উঠে আসছে। যারা তাদের আচরণও খুব একটা বদলাচ্ছে না,”— ফলো-আপ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ভায়োলেশনস ট্র্যাকার প্রকল্প পরিচালক ফিলিপ ম্যাটেরা।
তিনি আরো যোগ করেন, “এই টুলগুলো মূলত পুনরাবৃত্ত অপরাধের একটি সূচক হিসেবে কাজ করে, যেখানে দেখা যায় বড় বড় কোম্পানিগুলো কীভাবে বারবার নিয়ম ভাঙছে এবং এর জন্য যে জরিমানা দিচ্ছে, তাও খুব একটা প্রতিরোধমূলক প্রভাব ফেলছে না।”
তবে সাংবাদিকরা আরো অন্যান্য উৎস, যেমন— বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার এবং করপোরেট প্রসিকিউশন রেজিস্ট্রি ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু দেশের করপোরেট অনিয়মের ডেটা খুঁজে বা যাচাই করে দেখতে পারেন। তবে গুড জবস ফার্স্ট-এর আর্লিন মার্টিনেজ বলেছেন: “আমরা মনে করি, করপোরেট অনিয়মের তথ্য পেতে ভায়োলেশনস ট্র্যাকার সত্যিই বিশ্বের সবার জন্য উন্মুক্ত সবচেয়ে বৃহৎ ডেটাবেস।”
মিনিয়াপোলিসের নিকার কর্মশালার কক্ষটিতে এতটাই ভিড় ছিল যে, সাংবাদিকরা প্যাসেজগুলোতে বসে সামনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সম্ভবত নীচে উল্লখিত এই চারটি মূল্যবান ফিচারের কারণে টুলগুলো ঘিরে সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেছে:
- ইউএস এবং ইউকের সংস্করণে ডেটা ডাউনলোড ও আদালতের দলিলগুলোর জন্য সামান্য সাবস্ক্রিপশন ফি রয়েছে, তবে ভিটি গ্লোবালসহ তিনটি ডেটাবেসে সব ধরনের অনুসন্ধানই বিনামূল্যের।
- অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর সময় সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটির মূল কোম্পানিটি কে বা কারা ছিল এবং বর্তমানে কোন কোম্পানির অধীনে এটি রয়েছে—টুলগুলো সবসময় এ তালিকাটি করে। যাতে সাংবাদিকরা দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেন। স্থানীয় মুদ্রায় করা জরিমানা পরিমাণও সবসময় ইউএস ডলারে দেখানো হয়।
- এভাবে ডেটা বের করাটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য কম চাপের এবং বিভিন্ন বিকল্প নথির মধ্যে থেকে তাঁরা সহজেই তা যাচাই করতে পারেন। এখানে অভিযোগ বা বিতর্কিত মামলাগুলোকে তালিকায় রাখা হয় না। তবে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হওয়া মামলা বা ক্ষতিগ্রস্থ গোষ্ঠীর সমষ্টিগত মামলা এবং সরাসরি সোর্স এজেন্সির নামে জরিমানাকৃত অর্থের পরিমাণ উল্লেখ থাকে।
- করপোরেট গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় মূল কোম্পানির সঙ্গে তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর সংযোগ স্থাপন করতে, যাতে জরিমানা ও অপরাধের ধরন একত্রিত করা যায় এবং করপোরেট জালগুলো ভেঙে ফেলা যায়।
“মুল কোম্পানি ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মধ্যকার সংযোগ বের করাটা এই টুলটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা টুলটিকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে,” বলেন স্ট্যান্ডেয়ার্ট। তিনি আরো যোগ করেন, “হয়তো কোনো কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ওহ, আমরা তো জানতামই না এমন কিছু ঘটেছে’—আপনি তখন ওই মূল কোম্পানির সবগুলো শাখার তথ্য খুঁজতে পারেন। পাশাপাশি দুর্নীতির ‘একক ঘটনা’ থেকে করপোরেট দাবির মধ্যেকার যোগসূত্র স্থাপন করতে পারেন।
এই প্রকল্পে আরও একটি নতুন ফিচার যোগ হয়েছে যেটির নাম “Mega-scandal summaries” ফিল্টার। এর মাধ্যমে আপনি ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি জরিমানা করা হয়েছে এমন মামলাগুলো আলাদাভাবে দেখতে পারবেন। যেমন, আপনি যদি এই ফিল্টারে গিয়ে “cryptocurrency” বা “ sanctions violations” এ ক্লিক করেন, তাহলে প্রায় এক ডজন কোম্পানির জরিমানা ও নিষ্পত্তির রেকর্ড দেখতে পাবেন। স্ট্যান্ডেয়ার্ট জানান, এই ডেটাবেসগুলো মূলত বড় ধরনের নিয়মভঙ্গকারী এবং বারবার একই অপরাধ করে এমন কোম্পানির ওপরই নজর দেয়। তাই এতে ৫ হাজারের ডলারের নীচে জরিমানা করা হয়েছে এমন মামলাগুলোকে রাখা হয়নি।
কর্মশালাতে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা ভিটি গ্লোবালের অ্যাডভান্সড সার্চ ফিচার সম্পর্কেও জানতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি দুর্নীতির ধরন ও দেশ অনুযায়ী কোন কোন কোম্পানি সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ করেছে তা অনুসন্ধান করতে পারবেন। যেমন, আপনি যদি ‘government contracting-related offenses’ ও ‘South Korea’ নির্বাচন করেন, তাহলে আপনার সামনে চুক্তি-সংক্রান্ত নয়টি বড় ধরনের অনিয়মের ঘটনা ভেসে উঠবে।
(পরামর্শ: ম্যাটেরা পরামর্শ দেন যে, আরো কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধান করতে সাংবাদিকরা যেমন ‘offense group’ লিখে তথ্য খুঁজতে পারেন আবার সুনির্দিষ্টভাবে ‘offense category’ তে গিয়ে ‘PFAS violations’ দুটোই নির্বাচন করতে পারেন।)

ভায়োলেশনস ট্র্যাকার গ্লোবাল টুল থেকে নেওয়া পেজের একটি নমুনা, যেখানে ভারত সরকার আরোপিত করপোরেট বায়ু দূষণ জরিমানার তথ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। ছবি: স্ক্রিনশট
কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ডেটাবেস তৈরি করা সহজ, কারণ সেসব দেশের সরকারি সংস্থাগুলোর তথ্য সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু ভিটি গ্লোবাল তৈরি করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে—বলেন ম্যাটেরা। কারণ, অনেক দেশে আইন ঠিকভাবে প্রয়োগ হয় না বা সরকার এসব বিষয়ে সবার জন্য তথ্য প্রকাশ করে না। আর ইউরোপের অনেক দেশে গোপনীয়তা রক্ষার কঠোর নিয়ম আছে। ফলে সেখানে যখন কোনো কোম্পানি কোনো ভুল করে, তখন সরকারি প্রতিবেদনে সেই কোম্পানির নামটাই লুকিয়ে ফেলা হয়—এটাও বড় একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
“উদাহরণ হিসেবে জার্মানির কথা বলা যায়,” বলেন ম্যাটেরা। “সেখানে শ্রমিক অধিকার সম্পর্কিত মামলার জন্য আলাদা শ্রম আদালত আছে। তাঁরা রায় প্রকাশ করে বটে, কিন্তু সেই রায়ে অভিযুক্ত কোম্পানির নামটিই মুছে ফেলা হয়। আমি বুঝি না, কেন এমন করে। আর অনেক দেশে এই ধরনের মামলা জাতীয় কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখে না; বরং স্থানীয় প্রসিকিউটররা সামলায়। কিন্তু এসব মামলার ফলাফল কেউ একাট্টা করে না। কখনও কখনও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওই রায় বা সিদ্ধান্তগুলোর খবর দেয়। আর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—যদি আমরা এর সঙ্গে আরও একটি নির্ভরযোগ্য উৎস খুঁজে পাই, তাহলে এসব মামলাকেও আমাদের ডেটাবেসে যুক্ত করব।”
ভিটি গ্লোবালের অনেক তথ্যই সংগ্রহ করা হয়েছে স্থানীয় সংস্থাগুলোর প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে। কাজটি করতে সহায়তা নেওয়া হয়েছে লেক্সিসনেক্সিস (LexisNexis) এবং গুগল ট্রান্সলেট (Google Translate)-এর মতো টুলের। দলের সদস্যরাই তথ্যগুলো যাচাই করে ডেটাবেসে যুক্ত করেছেন।
ম্যাটেরা যোগ করেন, “আমরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করছি না, কারণ আমরা এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে এখনও নিশ্চিত না। তাই আমাদের হাজার হাজার নথিপত্র ঘেঁটে দেখতে হয় কোনটা প্রাসঙ্গিক।”
এই টুলের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে—অনেক দেশেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আইন প্রয়োগ দুর্বল আর তথ্য প্রকাশও সীমিত। আবার কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে রাজনৈতিক কারণে আইন প্রয়োগের বিষয়গুলোও প্রভাবিত হয়।
ভায়োলেশন ট্র্যাকারের ডেটাবেসগুলো সব ওপেন সোর্স—তাই, রিপোর্টারদের নিজ থেকে তা যাচাই করে নেওয়া উচিত। ম্যাটেরা বলেন যে তিনি আত্মবিশ্বাসী, প্রতিটি জরিমানার পরিমাণ যথাসম্ভব সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অনেক দেশে করপোরেট অপরাধগুলো হয়তো বিচার হয়নি, কিংবা এখনো ভিটি গ্লোবালে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
“যদিও বাজার প্রতিযোগিতা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বেশ ভালো তথ্য পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা নিজেরাও কিছু সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ি, কারণ কিছু দেশ পরিবেশ ও শ্রমসংক্রান্ত মামলা নিয়ে তেমন তথ্য প্রকাশ করে না,” বলেন ম্যাটেরা। “তবুও আমরা যতটা সম্ভব পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেস তৈরির জন্য ব্যাপক চেষ্টা করছি, এবং সাংবাদিকদের জন্য তাদের সুবিধামতো ডেটাসেট তৈরিতে সহায়তা করতে পেরে আমরা ভীষণ আনন্দিত ।” (এই ওয়েবসাইটে সাংবাদিকরা ম্যাটেরার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য খুঁজে পাবেন।)
আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্টতার পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে টুলগুলো। মানে, কোন খাতে কড়া নজরদারি চলছে আর কোন খাতে গাফিলতি হচ্ছে—তা এই টুল ব্যবহার করে সহজেই বোঝা যায়। যেমন, ভিটি গ্লোবালের ডেটাবেসে থাকা ৫৯টি দেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কর্পোরেট প্রতিযোগিতা বা ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার কিংবা পরিবেশ ধ্বংসের মতো গুরুতর বিষয়গুলোতে অনেক কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বা জরিমানার পরিমাণ কম রাখা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলারের জরিমানা অনেক বেশি দেখা যায়, অথচ কলকারখানা চালানো বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে জরিমানা অনেক কম হয়।
“অনেক ব্যাংকের বিরুদ্ধে আপনি বিলিয়ন ডলারের জরিমানার একাধিক ঘটনা দেখবেন,” বলেন মার্টিনেজ। “এইসব তথ্য দেখে বোঝা যায়, সরকারগুলো কী ধরনের অপরাধকে বেশি গুরুত্ব দেয়।”
এদিকে, সাংবাদিকরা এই টুলগুলোকে বিপরীতভাবেও ব্যবহার করতে পারেন, যেমন— সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ভার্সনে ‘প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ফিল্টার রয়েছে, যার মাধ্যমে বোঝা যায়, বাইডেন প্রশাসনের সময় প্রতি দুই মাসে শত শত মজুরি আত্মসাতের ঘটনার বিপরীতে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই মাসে এই ধরনের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।এই তথ্যগুলো সরকারের অগ্রাধিকার ও নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।