প্রবেশগম্যতা সেটিংস

ইমেজ: শাটারস্টক

লেখাপত্র

বিষয়

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করতে গড়ে তুলুন পেশাদারদের নিয়ে নিজের কমিউনিটি

সাংবাদিকতা পেশাটি প্রতিযোগিতামূলক ও চ্যালেঞ্জিং। পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি, পেশাগত সহযোগিতা আর সংহতি জোরদার করাটা কেবল সহায়তা যোগায় না— আপনার কাজের মান বৃদ্ধি করে এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তোলে।

যদিও নতুন অনুসন্ধানী কৌশল শেখা বা নতুন প্রযুক্তি বা ডেটা উৎস ব্যবহার করার তুলনায় এটিকে হয়তো অনেক সময় উপেক্ষিত একটি দক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে নেটওয়ার্কিংয়ের চর্চা ঐক্যের ভিত্তি। ডিজিটাল মিডিয়ার পরিবেশ, সাংবাদিকদের একাকী থেকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ডেটা পয়েন্ট ও নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত করেছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মধ্যে সহকর্মীদের নিয়ে তৈরি এমন একটি দল বা গোষ্ঠী থাকে যারা ডেটা শেয়ারিং, তথ্য সুরক্ষা এবং সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে। এই নেটওয়ার্কগুলো শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়। এগুলো একটি জীবন্ত ও গতিশীল ইকোসিস্টেম তৈরি করে—যা নৈতিকতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং পারস্পরিক জ্ঞান ভাগাভাগির মাধ্যমে গঠিত। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা একে অপরের সঙ্গে কেবল তথ্য ভাগাভাগিই  করেন না; তারা সাহস, সহযোগিতা এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোকে তুলে ধরেন, যা তাদের কাজের পরিধি বাড়াতে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

জিআইজেএনের তুর্কি সম্পাদক হিসেবে আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, তা হচ্ছে নেটওয়ার্ক শুধু প্রযুক্তিগত বা পদ্ধতিগত জ্ঞানকে বিকশিত করে না, বরং দলগত বোঝাপড়া, পেশাগত সহনশীলতা এবং একতা বৃদ্ধি করে। যেমন, জিআইজেএন তুর্কি নেটওয়ার্ক তুরস্কের সাংবাদিকদের এবং বিশ্বের তুর্কি ভাষাভাষী সাংবাদিকদের সংযোগের একটি সেতু হিসেবে কাজ করে। যা তাদের নির্ভরযোগ্য তথ্য, পেশাগত সমর্থন এবং আন্তসীমান্ত সহযোগিতার সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করে।

নেটওয়ার্কিং বিশেষজ্ঞ এরদাল উজুনোগলু। তিনি ব্যাখ্যা করেন নেটওয়ার্কিং সাধারণ কোনো সাক্ষাৎ নয়; এটি অর্থপূর্ণ সম্পর্ক ও দীর্ঘস্থায়ী সংযোগ তৈরি করে এবং সম্পর্কের পরিমাণের চেয়ে মানের উপর জোর দেয়। তিনি বলেন, সত্যিকারের নেটওয়ার্কিং পারস্পরিক আস্থা, আন্তরিকতা এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগতভাবে সাংবাদিকতার সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।

কীভাবে একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কমিউনিটি গড়ে তোলা যায় এবং সহযোগিতা করা যায়-সে সম্পর্কে নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো—যার শুরু হবে এক সাংবাদিক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক থেকে।

ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিং পদ্ধতি

নিজেকে পরিচয় করান। একজন সাংবাদিক হিসেবে নেটওয়ার্ক তৈরির প্রথম ধাপ হলো, আপনি কে এবং কী ধরনের কাজ করছেন— তা খুব স্পষ্টভাবে বোঝা। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক সাংবাদিক নিয়মিত তাদের কাজগুলোকে অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি বা শেয়ার করেন না এবং তাদের আগ্রহ ও দক্ষতাকে শানিত করেন না। ডিজিটাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রথম ধাপ হলো একটি সঙ্গতিপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করা যা আপনার পেশাগত পরিচয়কে দারুণভাবে তুলে ধরে। এই অনলাইন প্রোফাইল শুধু আপনার আগের কাজের প্রদর্শনী নয়; এটি এমন একটি পেশাগত পরিচয় যা আপনার মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং কাজের ধরনকে প্রতিফলিত করে। দৃশ্যমানতা এবং ধারাবাহিকতার মাধ্যমে আস্থা জন্মায়। ভিডিও ব্যবহার করে আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তুলুন, অথবা আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন যাতে পাঠককে ক্লিপের তালিকা স্ক্রল করতে না হয়।

আপনার কাজকে দৃশ্যমান করুন। সাংবাদিকতায় দৃশ্যমানতা কেবল ব্যক্তিগত প্রচারের বিষয় নয়; এটি তথ্য বিনিময় এবং পেশাগত যোগাযোগের আমন্ত্রণ। কোনো একটি সম্মেলনে আপনার সর্বশেষ অনুসন্ধান সম্পর্কে কথা বলা, আপনি যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন তা ব্যাখ্যা করা, বা কাজকে সহজ করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তা তুলে ধরা—এসব কেবল আপনার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির সুযোগ দেয় না, বরং একই ক্ষেত্রের সহকর্মীদের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগও তৈরি করে।

খোলামেলা ও পরস্পরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মনোভাব আপনাকে এমন একজন নেটওয়ার্ক সদস্যে রূপান্তরিত করে, যিনি শিখেন এবং অবদান রাখেন। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক শুধুমাত্র সাফল্যের গল্পের ওপরই টিকে থাকে না; বরং পরস্পরের সঙ্গে সমস্যা, ভুল এবং সমাধান ভাগাভাগির মাধ্যমে বিকশিত হয়।

নৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করে আস্থা গড়ে তুলুন। একটি নেটওয়ার্ক কতটা টেকসই তা মূলত পারস্পরিক আস্থার ওপর নির্ভর করে। যারা পেশাগত নীতিমালা মেনে চলেন এবং তাদের পেশাজীবন এই মূল্যবোধের ওপর গড়ে তোলেন, তারা সহকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে  নির্ভরযোগ্য ও আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা, তথ্য যাচাই করা এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখা—এসবই আপনার পেশাগত খ্যাতি ও আস্থা তৈরি করে। নৈতিকভাবে স্থিতিশীল সাংবাদিক কেবল সহযোগীই হন না; তিনি সহকর্মীদের নির্ভরতার জায়গা ও পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।

বিশ্বের শত শত সাংবাদিককে চ্যালেঞ্জিং আন্তসীমান্ত নির্ভর প্রকল্পে কাজ করার জন্য একত্রিত করে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। যেমন প্যানামা পেপারস বা প্যান্ডোরা পেপারস—যেখানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযুক্ত বিপুল পরিমাণ ফাঁস হওয়া তথ্য ও নথি রয়েছে। আইসিআইজে কেবল জটিল ডেটাসেটের সঙ্গে কাজের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোকে তুলে ধরে না, বরং তার সদস্যদের বিভিন্ন সমর্থন দিয়ে সহায়তা করে এবং তাদের আইনী, প্রযুক্তিগত ও নৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় পথ দেখিয়ে দেয়।

পারস্পারিক ভাগাভাগির সংস্কৃতি গড়ে তুলুন। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সেই সব দল বা গোষ্ঠির (কমিউনিটি) মধ্যে গড়ে ওঠে যেখানে অবাধে তথ্য প্রবাহিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করা হয়। একটি কার্যকর নেটওয়ার্কের অংশ হওয়া কেবল তথ্য পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মাধ্যমে নেটওয়ার্ককে প্রাণবন্ত ও গতিশীল রাখা। আপনি যে গবেষণা টুল ব্যবহার করেন, যে যাচাই পদ্ধতি অনুসরণ করেন, অথবা যে নৈতিক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হন—এসবের ওপর আপনার অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা সহকর্মীদের জন্য শেখার সুযোগ তৈরি করে। এই ধরনের অবদান কেবল আপনার ব্যক্তিগত দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করে না, বরং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মধ্যে আপনার অবস্থানকেও শক্তিশালী ও দৃঢ় করে।

শেখা প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে নিজেকে উন্মুক্ত রাখুন। নেটওয়ার্কিংয়ের  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো শেখার প্রক্রিয়া বজায় রাখা। এটি কখনো কখনো ক্লান্তিকর মনে হতে পারে, তবে আপনার পেশার অগ্রগতি এবং উন্নয়ন নির্ভর করে কৌতূহল, অনুসন্ধান এবং শেখার অনুপ্রেরণার ওপর। প্রতিটি সংযোগ আপনার পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রসারিত করে, নতুন পদ্ধতি বা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। প্রতিক্রিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে পেশাগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই দৃষ্টিভঙ্গি সাংবাদিকদের নমনীয়, অভিযোজনশীল এবং সহযোগিতার জন্য আগ্রহী হিসেবে তুলে ধরে।

যেমন, ডেটা স্কিল কমিউনিটি ডেটাজার্নালিজমডটকম (DataJournalism.com) এবং ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স (OSINT) ও অনুসন্ধানী আউটলেট বেলিংক্যাট সাংবাদিকদের ওপেন সোর্স অনুসন্ধান পরিচালনার ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি এবং ডেটা যাচাই প্রক্রিয়া উন্নত করার সুযোগ দেয়।

সামষ্টিক নেটওয়ার্কিং পদ্ধতি

সরকারি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, বেসরকারি সংস্থা, আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং কমিউনিটিতে তাদের পেশাগত সহনশীলতা ও প্রভাব শক্তিশালী করে।

আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ। এটি সাংবাদিকদের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও তথ্য ভাগাভাগির সুযোগ দেয়। এই নেটওয়ার্কগুলো আন্তসীমান্ত সহযোগিতা এবং যৌথ গবেষণার প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। এছাড়াও, সাংবাদিকরা বিভিন্ন দেশের সহকর্মীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি এবং জটিল অনুসন্ধানে সহযোগিতা করতে পারেন। এই অংশগ্রহণ কেবল সাংবাদিকদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে না, বরং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতার মান অনুসরণের ক্ষেত্রে সহায়তাও করে।

উগুর মুমচু ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ফাউন্ডেশনের (“um:ag”) সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওজগে মুমচু নিজের কাজ ও অভিজ্ঞতার আলোকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে উগুর মুমচু ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ফাউন্ডেশন তুরস্কে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে সহায়তা করে আসছে। প্রশিক্ষণ ও সাংবাদিকদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা নৈতিক সাংবাদিকতার সংস্কৃতি গঠনে অবদান রাখছে। গত তিন দশকে তাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কোর্স থেকে তিনশ’র বেশি তরুণ সাংবাদিক স্নাতক সম্পন্ন করেছেন; এদের বেশিরভাগই এখন পেশায় যুক্ত এবং বিভিন্নভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করছেন।

ইউএম:এজি কমিউনিটির জন্য নেটওয়ার্কিং মানে হলো সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংহতির ভিত্তি তৈরি করা এবং একই সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আরও শক্তিশালী করবে। তারা জিআইজেএন তুর্কি নেটওয়ার্কের সদস্য, যা তুরস্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিকদের মধ্যে যোগাযোগ ও দৃশ্যমানতা বাড়াতে সহায়তা করে—যাদের অনেকেই স্বাধীন বা বিশেষায়িত রিপোর্টিং করেন। ইউএম:এজির কাছে এই নেটওয়ার্ক একটি ইকোসিস্টেম, যা সংহতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করে এবং নতুন অংশীদারত্ব ও প্রকল্পের সূচনা বিন্দু হিসেবে কাজ করে।

প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্ব গড়ে তোলা। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা সংস্থার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্ব সাংবাদিকদের প্রতিবেদনের স্থায়িত্ব ও পদ্ধতিগত গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এ ধরনের সহযোগিতা শুধু সহযোগিতার সুযোগই তৈরি করে না, বরং সাংবাদিকদের তাদের প্রকল্প আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতেও সহায়তা করে। শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া গড়ে তোলা এবং পেশাদার সহায়তা পাওয়া—এই দুই দিক থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক সাংবাদিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা তাদের তরুণ সহকর্মীদের পরামর্শ দিয়ে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পদ্ধতিগত দক্ষতা ভাগাভাগির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ধরনের কর্মসূচি তরুণ সাংবাদিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং নেটওয়ার্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ফর ইউরোপ (IJ4EU)— যারা প্রশিক্ষণ ও মেন্টরিং সহায়তা প্রদান করে এবং জিআইজেএন-এর নিজস্ব রিসোর্স সেন্টারপ্রশিক্ষণ সিরিজ, যা বিভিন্ন শাখায় অনলাইন এবং সরাসরি জ্ঞান প্রদান করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নেটওয়ার্কের গুণমান এবং কার্যকারিতা উভয়কেই উন্নত করে।

নাগরিক সমাজের সঙ্গে সহযোগিতা: এনজিওগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা সাংবাদিকদের জন্য ডেটা, বিশেষজ্ঞ মতামত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার দরজা খুলে দেয়। এগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সামাজিক প্রভাব বাড়ায় এবং অধিকারভিত্তিক রিপোর্টিং ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে কৌশলগত সহায়তা প্রদান করে। এই ধরনের সহযোগিতা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নৈতিক মানদণ্ডের মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

স্থানীয় আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের শক্তিশালী স্থানীয় ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। স্থানীয় নেটওয়ার্ক তথ্য ভাগাভাগি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং মাঠ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সরবরাহ করে এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।

আন্তশৃঙ্খলা বিষয়ক সহযোগিতা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা আইনজ্ঞ, ডেটা বিশ্লেষক এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের অনুসন্ধানের গভীরতা ও প্রভাব বাড়াতে পারেন। এই পদ্ধতি সাংবাদিকদের নিজস্ব দক্ষতাও উন্নত করার সুযোগ দেয়। যেমন, অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও ডেটা বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে অপরাধ ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য একটি সফল সামষ্টিক মডেল সামনে আনে।

যৌথ প্রকল্প এবং সমষ্টিগত প্রকাশনা। এই নেটওয়ার্কগুলো তাদের দৃশ্যমানতা ও প্রভাবকে স্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য ফলাফলে রূপান্তরিত করে; আইসিআইজের নেতৃত্বে প্রকাশিত প্যানামা পেপারস এবং প্যান্ডোরা পেপারস এই পদ্ধতির উদাহরণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। সহযোগিতা কেবল তথ্য ভাগাভাগি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি সাংবাদিকতায় সংহতি এবং সমষ্টিগত দায়িত্ববোধের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করে।

ডিজিটাল সহযোগিতা এবং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার। ডিজিটাল টুলগুলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিরাপদে ডেটা শেয়ার করা, প্রক্রিয়া যাচাই করা এবং অনলাইনে সহযোগিতা করার সুযোগ দেয়। স্ল্যাক (Slack), সিগনাল (Signal) এবং টেলিগ্রাম (Telegram)-এর মতো প্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকদের দ্রুত এবং নিরাপদভাবে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় করার সুযোগ করে দেয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে পারস্পরিক সংযোগ এবং সামষ্টিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয় ডিজিটাল সহযোগিতা।

উপসংহারে বলতে চাই, সাংবাদিকতায়, বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায়, নেটওয়ার্কিং কেবলমাত্র আপাত যোগাযোগ স্থাপন করার বিষয় নয়, বরং এটি একটি বিশ্বাসভিত্তিক, নৈতিক ও দৃঢ় পেশাদার কমিউনিটি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। নেটওয়ার্কিং সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে, তাদের কাজের প্রভাব বাড়াতে এবং এমন একটি টেকসই, সহযোগিতামূলক ইকোসিস্টেমে অবদান রাখতে সহায়তা করে, যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা এবং পেশাদার সততা সবার জন্য শক্তিশালী হয়।


পিনার দাগ জিআইজেএন তুর্কি সম্পাদক ও কাদির হাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক। তিনি ডেটা লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশন, ডেটা জার্নালিজম প্ল্যাটফর্ম তুরস্ক এবং দাগমিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ডেটা সাক্ষরতা, ওপেন ডেটা, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডেটা সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া তিনি সিগমা ডেটা জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ডের জুরি বোর্ডের সদস্য।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

এশিয়া ফোকাস

চীনা ভাষাভাষী বিশ্বে  অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক অগ্রদূতের পরামর্শ

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাংবাদিকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তিকর পরিস্থিতি। অধিকাংশ মিডিয়া এখন ক্লিক বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় আটকে গেছে এবং ট্রেন্ডিং বিষয় অনুসরণ করতে থাকে। যখন তারা বিজ্ঞাপনদাতা বা স্পনসর কন্টেন্টের চাপের মুখোমুখি হয়, তখন তারা প্রথাগত ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধানী ভূমিকায় কাজ করতে পারে না। এর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গভীর অনুসন্ধান করার উদ্যম ও সক্ষমতা নষ্ট হয়।

পরামর্শ ও টুল

জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতা বিষয়ক পরামর্শ

ভারত, নাইজেরিয়া, ইরাক এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের সংঘাত বা উত্তেজনা নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে সাংবাদিক ও সম্পাদকরা  এই উদাহরণ সামনে রেখে  নির্দিষ্ট নীতি অনুসরন ও চর্চা করতে পারেন। এর মধ্যে কিছু নীতি দীর্ঘদিনের চর্চা কিংবা সাধারণ জ্ঞানের অংশ।

এশিয়া ফোকাস

একটি বৈশ্বিক ট্রানজিট পয়েন্ট: দক্ষিণ এশিয়ায় মানব পাচার ও মানুষ চোরাচালান অনুসন্ধান

জিআইজেএন পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা এই বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। পাচার হওয়ার পর বেঁচে ফেরা ব্যক্তি, তাদের নিয়োগদাতা ও দালালের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। চোরাচালানের পথ ও পদ্ধতি চিহ্নিত করেছেন। এমনকি আফগান অভিবাসীর ছদ্মবেশ ধারন করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

এশিয়া ফোকাস

এশিয়ায় ডেটা সাংবাদিকতা: বার্তাকক্ষ, তথ্য-উপাত্ত আর গোষ্ঠী সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা

এশিয়ায় ডেটা সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জগুলো খুব পরিস্কার: দুর্বল ডেটা ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতার প্রতি রাজনৈতিক বিরোধিতা, অনুদান নির্ভরতা আর বার্তাকক্ষের দুর্বল অবস্থা। কিন্তু গল্প বলার সৃজনশীল পদ্ধতিগুলো—ভিজ্যুয়াল আর্ট থেকে শুরু করে এআই চ্যাটবট এবং প্রশিক্ষণ—শক্তিশালী বার্তা দেয়।