

অনলাইনে অপতথ্য ঠেকাবে এই পাঁচ ওপেনসোর্স ডিজিটাল টুল
ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব জার্নালিজম—সংক্ষেপে প্রোজর। অপতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে চালু করেছে ইনোভেশন ফান্ড টু কমব্যাট ডিসইনফরমেশন (কোডেসইনফো)-এর দ্বিতীয় ধাপ। এ পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অনলাইনে ছড়ানো অপতথ্য মোকাবিলায় ওপেন সোর্স ডিজিটাল টুলের ওপর। উদ্দেশ্য, সবার সঙ্গে টুলগুলোকে পরিচয় করান। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ব্রাজিলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই টুলগুলো তৈরি করে। কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই দেশি-বিদেশি সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠান টুলগুলো ব্যবহার করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে টুলগুলো কীভাবে পৌঁছাবে? এ প্রসঙ্গে কোডেসইনফোর সমন্বয়ক ও প্রোজরের পরিচালন পরিচালক ফ্রান্সিসকো বেলদা বলেন, কোডেসইনফোর ওয়েবসাইট ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, যেসব সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে টুলগুলো তৈরি করা হয়েছে, তাদের নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যেন তারা এই টুলগুলো আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করে তুলতে পারে।
লাটাম জার্নালিজম রিভিউকে (এলজেআর) বেলদা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই পাঁচটি টুল সামগ্রিকভাবে নাগরিক সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করে তুলছে। এই টুলগুলো যেসব কাজে সহায়তা করে তার মধ্যে রয়েছে—লেখকের বক্তব্য ও উৎস যাচাইয়ে গুরুত্ব দেওয়া (কেম ডিজে? টুল), তথ্য যাচাই (চেক-আপ), পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে করা প্রতিবেদনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ব্যবহারে সহায়তা (কাপি চ্যাটবট), টেক্সটভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরি (মোসাইকো), এবং প্রাসঙ্গিক হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ (জার্টা)।”
কাপি: জলবায়ু বিষয়ক সহজ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য
কাপি—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি চ্যাটবট। তৈরি করেছে ব্রাজিলের অ্যামবিয়েন্টাল মিডিয়া। ২০২৪ সালের নভেম্বরে বেটা ভার্সনে চালু হয়। মূল উদ্দেশ্য—জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মানুষের প্রশ্নের সহজ, হালনাগাদ ও নির্ভরযোগ্য উত্তর তুলে ধরা।
তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটা বিষয়, যেখানে অনেক প্রশ্ন থাকে। বিজ্ঞানীরা সবসময় সহজভাবে তথ্য ব্যাখ্যা করতে পারেন না। তাই আমরা এমন একটি টুল বানাতে চেয়েছি, যা বিজ্ঞানকে সহজ, বোধগম্য ও আকর্ষণীয় সাংবাদিকতার বিষয়বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে।”
কাপি চ্যাটবটটি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবী যেমন প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিক্ষক ও ডিজাইনারদের সমন্বয়ে। অ্যামবিয়েন্টাল মিডিয়ার প্রতিবেদন আর খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক সংস্থার নথি—এ ধরনের নির্দিষ্ট তথ্যভান্ডারের তথ্য ব্যবহার করে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) রিপোর্টগুলোও আছে এখানে। বৈশ্বিক উষ্ণতা, এর প্রভাব ও প্রতিরোধ কৌশল নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণ করে আইপিসিসি।
থিয়াগো মেদালিয়া বলেন, “রিপোর্ট লেখা, রিপোর্টের পর্যালোচনা করা বা নতুন উৎস বা থিম খুঁজে পেতেও সহায়তা করতে পারে কাপি। ধরুন, আপনি কোনো প্রস্তাবনার জন্য কাজ করছেন, বা আইডিয়ার পেছনে সময় দিচ্ছেন, ব্রেইনস্টর্ম করতে চাচ্ছেন—এসব ক্ষেত্রে কাপি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এমনকি তথ্য যাচাইয়েও।”

কাপি চ্যাটবটে ব্যবহারকারীরা জলবায়ু নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেন। এটি জাতিসংঘের আইপিসিসির মতো বিশ্বস্ত বৈজ্ঞানিক সংস্থার তথ্য থেকে উত্তর খুঁজে দিবে। ছবি: স্ক্রিনশট, কাপি
কাপি নামের এই এআই চ্যাটবটের পেছনের প্রযুক্তি হলো জেমিনি—গুগলের তৈরি একটি বৃহৎ ভাষা মডেল। নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে এই চ্যাটবট রিট্রিভাল-অগমেন্টেড জেনারেশন (আরএজি) নামক একটি কৌশল ব্যবহার করে। ২০২০ সালে প্রস্তাবিত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এআই যেন ভুলভাল বা কাল্পনিক তথ্য না দেয় এবং নির্দিষ্ট বিষয়ের পটভূমি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে, তা নিশ্চিত করা হয়।
এটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে না। তবে ব্যবহারকারীর প্রশ্ন-উত্তরের ধরন থেকে শেখার জন্য প্রম্পট টিউনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই চ্যাটবটের ইঞ্জিন চলে গুগলের বিশেষ ক্লাউড সার্ভারে। যা পরিবেশ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কম বিদ্যুৎ খরচ এবং স্বল্প কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন নিশ্চিত করে।
“কাপি এখনো বিটা পর্যায়ের এআই। তাই সে মাঝে মাঝে ভুল তথ্য দিতে পারে বা ‘হ্যালুসিনেশন’ ঘটাতে পারে,” বলেন মেদালিয়া। তিনি আরো উল্লেখ করেন, “এই বিষয়টি ওয়েবসাইটে স্পষ্টভাবে বলা আছে। ব্যবহারকারীরা কোনো ভুল ধরিয়ে দিলে আমরা তা সংশোধন করি। তবে কাপি শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস থেকেই তথ্য নেয়। উৎসগুলো আমরা খুব সতর্কভাবে ও বিচক্ষণতার সঙ্গে বাছাই করেছি।”
এই টুলের গিটহাব পেজে গেলে প্রকল্পের ইতিহাস ও পদ্ধতিগত কাঠামো সম্পর্কেও জানা যাবে।
চেক–আপ: স্বাস্থ্যখাতের বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণ
কোডেসইনফো প্রকল্পের আওতায় তৈরি আরেকটি টুল হলো চেক-আপ। এটি তৈরি করেছে ব্রাজিলের ফ্যাক্ট চেকিং সাইট আওস ফাতোস। টুলটির কাজ হচ্ছে ব্রাজিলের বড় বড় সংবাদসাইটে প্রকাশিত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ। বিশেষ করে তাতে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা।
আওস ফাতোসের উদ্ভাবনী পরিচালক ব্রুনো ফাভেরো বলেন, “মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো যেসব নেটিভ অ্যাডভারটাইজিং প্ল্যাটফর্ম (সংবাদ বা কনটেন্টের মতো করে বিজ্ঞাপন উপস্থাপন) ব্যবহার করে, সেখানে কোনো তদারকি নেই। মূলত এই চিন্তা থেকেই বিষয়টির সূত্রপাত। এগুলো সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে আয় করে। কাজটি সংবাদমাধ্যমগুলোর সম্মতিতেই হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখছি বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ছড়ানো খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই সমস্যাগুলো বিশ্লেষণের কোনো নির্ভরযোগ্য ডেটা ছিল না। তাই আমরা ‘চেক-আপ’ তৈরি করেছি। আমাদের নিউজরুমের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষক ও সাংবাদিকরাও যেন এটি নিয়ে কাজ করতে পারেন।”
বিজ্ঞাপন সংগ্রহ এবং তা যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হাতে-কলমে বিশ্লেষণের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আওস ফাতোস দলের তৈরি করা স্ক্র্যাপার প্রতিদিন প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নিউজ পোর্টালগুলো ভিজিট করে এবং সেখান থেকে স্থানীয় বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে। প্রতিটি বিজ্ঞাপন কোন থিম বা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি—তা নির্ধারণে একটি ভাষাভিত্তিক মডেল ব্যবহার করা হয়। সবশেষে, সাংবাদিকরা আওস ফাতোসের ফ্যাক্ট-চেকিং পদ্ধতি অনুসরণ করে বিজ্ঞাপনগুলো বিশ্লেষণ করেন। বিশ্লেষণযোগ্য তথ্যগুলো তাঁরা যাচাই করেন মূল উৎস, সরকারি তথ্য, নির্ভরযোগ্য গবেষণা, বা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে। এরপর প্রতিটি বিজ্ঞাপনকে একটি রেটিং দেওয়া হয়।

ছবি: স্ক্রিনশট, কোডেসইনফো
এই টুলটির কোড উন্মুক্ত। আওস ফাতোসের গিটহাবে সবার জন্য কোডটি প্রকাশ করা আছে। আগ্রহী সাংবাদিক ও গবেষকরা ব্যবহার করতে পারেন। কীভাবে কোডটি পরিবর্তন করে অন্য ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা যায়—টুলটির নির্দেশিকায় সে সব বলে দেওয়া হয়েছে।
ব্রুনো ফাভেরো বলেন, “যে সংবাদমাধ্যমগুলো বিজ্ঞাপনের জন্য স্থানীয় পরিষেবা ব্যবহার করে, তারাও চেক-আপ ব্যবহার করে তাদের বিজ্ঞাপনের গুণগত মান বিশ্লেষণ করতে পারে। এবং প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও ভালো তদারকির জন্য চাপ দিতে পারে। আমরা জানি ব্রাজিলে সাংবাদিকতার অর্থায়ন কতটা কঠিন, কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কখনই এমন কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে হতে পারে না, যা টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্যকেই অস্বীকার করে।”
মোসাইক: টেক্সটকে ভিডিওতে রূপান্তর
মোসাইকো হলো একটি পাইথন লাইব্রেরি। তৈরি করেছে ব্রাজিলের অন্যতম বড় দৈনিক ফোইয়া দি সাও পাওলো। এটি দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে টেক্সটকে ছোট ভিডিওতে রূপান্তরিত করা যায়। এটি তৈরি হয়েছে মুভিপাই-এর ওপর ভিত্তি করে। যা পাইথনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও এডিটিং লাইব্রেরিগুলোর একটি। এই টুল দিয়ে মার্কেটিং ও যোগাযোগের সব ধরনের ডিজিটাল ফাইল, ভিডিওর মধ্যে বিভিন্ন উপাদানের অবস্থান নির্ধারণ, ইফেক্ট প্রয়োগ, এবং ভিডিও স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজ করা যায়।
ফোইয়া-র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পাদক দানিয়েলা ব্রাগা বলেন, “বর্তমান সময়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার যে প্রবণতা, আর সেই সঙ্গে ছোট ভিডিওর জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা এই সমাধান বেছে নিয়েছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংবাদভিত্তিক মূল টেক্সট কনটেন্টকে ছোট ভিডিওতে রূপান্তর করে আমরা এমন একটি গল্প বলার ধারা তৈরি করতে পারছি—যা সেই সব দর্শকদের কাছেও পৌঁছায়, যারা পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে। এর ফলে আমাদের সংবাদের পরিসর আরও বাড়ছে।”
(স্ক্রিনক্যাপচার ভিডিও উদাহরণ দেখুন।)

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফোইয়া দি সাও পাওলোর মোসাইকো টুলটি টেক্সটকে ছোট ভিডিওতে রূপান্তর করছে। ছবি: স্ক্রিনশট, মোসাইকো
দানিয়েলা ব্রাগা জানান, মোসাইকোর আরেকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো এটি ফোইয়ার সম্পূর্ণ নিজস্ব তৈরি করা একটি টুল। যা তাদের নিজস্ব কন্টেন্টের ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষিত এবং তাদের দৈনিকের সাংবাদিকতার গুণগত মানদণ্ড অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
“ভিডিও তৈরির কাজটি তত্ত্বাবধান করেন ফোইয়ার সাংবাদিকরা। তাঁরা ভিডিগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবহারের অনুমোদন দেন। এতে ব্যবহৃত লেখা ও ছবিগুলো কৃত্রিমভাবে তৈরি করা না, এগুলো সত্যি। এরইমধ্যে অনেকগুলো ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে এর ব্যবহার বাড়ছে,” বলেন ব্রাগা।
ব্রাগা আরো জানান, অন্যান্য যে সংবাদমাধ্যম এই টুলটি ব্যবহার করতে চায়, তারা গিটহাবে থাকা রিপোজিটরির মাধ্যমে তাদের প্রয়োজন অনুসারে টুলটি কাস্টমাইজ করতে পারে। যেহেতু এটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার, তাই ডেভেলপার ও সাংবাদিকরা এতে উন্নতিসাধন, সংশোধন এবং নতুন ফিচার যোগ করতে পারেন।
ব্রাগা মনে করেন, “এভাবেই বিভিন্ন কমিউনিটির মাধ্যমে টুলটির বিকাশ ঘটতে পারে। এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া ভিডিও তৈরির গতি বাড়ায়, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছোট ও গতিশীল কন্টেন্টের চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। আলাদা বিভাগীয় দলের প্রয়োজন কমায়।”
“হু সেইড?”: লেখকত্ব সম্পর্কে স্বচ্ছতা
“কেম ডিসে?” (ইংরেজিতে অর্থ: হু সেইড?) নামক এই প্লাগইনটি তৈরি করেছে ফোলহা দো মাতে। সংবাদমাধ্যমটি দক্ষিণ ব্রাজিলের রিও গ্রান্দে দো সুলে কমিউনিটি সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করে। এটি একটি ওয়ার্ডপ্রেস এক্সটেনশন। লিংকডইনের অনুপ্রেরণায় তৈরি। সাংবাদিকদের প্রোফাইল সহজে তৈরি এবং মানোন্নয়নে সাহায্য করে। এই প্লাগইনের উদ্দেশ্য লেখকের পেশাগত তথ্য পাঠকদের জানানো—লেখক কোন বিষয়ে কাজ করেন, কত দিনের অভিজ্ঞতা আছে ইত্যাদি। এই প্লাগইনে একটি ডেটাবেসও রয়েছে, যেখানে পুনঃব্যবহৃত সোর্স—যেমন কর্তৃপক্ষ বা বিশেষজ্ঞদের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। প্রতিটি সোর্সের জন্য একটি ছোট জীবনবৃত্তান্ত অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
পাউলা কারভালহো জানান, ‘কেম ডিসে?’ প্লাগইনটি তাদের আগের কিছু ধারাবাহিক উদ্যোগের ফলাফল। যেগুলোর লক্ষ্য ছিল বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রতিরোধ করা। উদ্যোগগুলোর মধ্যে ছিল স্কুলে সাংবাদিকতার কর্মশালা, ভুল তথ্যের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষামূলক কুইজ, এবং পাঠকদের পাঠানো খবর যাচাই।
তিনি আরও বলেন, “‘কেম ডিসে?’ প্লাগইনের আরো লক্ষ্য ছিল লেখকদের নাম ও ভূমিকা তুলে ধরা, উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সাংবাদিকদের পাঠকদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসা—যাতে সংবাদ তৈরির কাজে আরও বেশি দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতা আসে।”
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসা ফোলহা দো মাতের বর্তমানে প্রায় ৪,০০০ সক্রিয় সাবস্ক্রাইবার রয়েছে—এমনটাই জানিয়েছেন পাউলা কারভালহো।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, “যা পাঠকের সঙ্গে আমাদের সুদৃঢ় ও আস্থাভাজন সম্পর্কের প্রমাণ। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কর্মপ্রক্রিয়া, লেখকত্ব ও তথ্যসূত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে আমরা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করি। এবং আমরা যে অঞ্চলে কাজ করি, সেখানের উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করি।”
এই প্লাগইনটি শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস প্ল্যাটফর্মের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফোলহা দো মাতের ওয়েবসাইট ও গিটহাবে এই প্লাগইনটি ইনস্টল করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
জার্টা: এখানে সাম্প্রতিক তথ্য পাবেন
জার্টা একটি টুল। বানিয়েছে নুক্লিও জোরনালিজমো। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছোট ছোট কার্ডের মাধ্যমে সংবাদের মধ্যে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা বা প্রেক্ষাপট যোগ করে। কার্ডগুলো প্রতিবেদনের মধ্যে বসানো যায়। জার্টা ব্যবহারে বড় সুবিধা হচ্ছে—এর ফলে ভুলভাবে আগের প্রেক্ষাপট বিচ্ছিন্ন তথ্য বা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছেঁটে ফেলা তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ কমে যায়।
২০২৪ সালের আগস্টে ব্রাজিলে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এক্স ব্লক করার সময়ে টুলটি ব্যবহারের উদাহরণটি যেমন। তখন প্রতিটি প্রতিবেদনের জন্য আলাদাভাবে নতুন পটভূমি তৈরি ও আপডেট করার পরিবর্তে নুক্লিও’র দলটি ‘জার্টা’ ব্যবহার করে। নিশ্চিত করে প্রতিটি নতুন প্রতিবেদনেই সবচেয়ে সঠিক ও হালনাগাদ পটভূমি রয়েছে—এমনকি পুরোনো প্রতিবেদনগুলোর পটভূমিও সময়ের সঙ্গে হালনাগাদ থাকছে।

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, জার্টা
নুক্লিদও’র পরিচালনা পরিচালক জেড ড্রামন্ড বলেন, “যে ঘটনাগুলো আমরা নিয়মিত কভার করছি, আগে থেকেই সেগুলোর প্রেক্ষাপট তৈরি করা থাকলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়। দ্রুত প্রতিবেদন প্রকাশ করা যায়। প্রেক্ষাপটগুলোও হালনাগাদ থাকে। পাশাপাশি আমরা দেখি, অনেক সময় সবচেয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন নয়, বরং পুরোনো প্রতিবেদন বেশি পড়া হচ্ছে। কিন্তু সেই পুরোনো প্রতিবেদনে অনেক সময় আরো আগের প্রেক্ষাপট থাকে, যা ভুলভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, “এই দুইটি বিষয় মাথায় রেখেই আমরা জার্টা তৈরি করেছি। টুলটি আমাদের রিপোর্টগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে আপডেট রাখে, সঠিক প্রেক্ষাপট দেয়, আর সাংবাদিকদের কাজও সহজ করে।”
‘জার্টা’ ব্যবহার করলে একই বিষয়ের পটভূমি বারবার নতুন করে লেখার দরকার হয় না। আবার পুরোনো প্রতিবেদনে গিয়ে আলাদাভাবে প্রেক্ষাপট বসানোর ঝামেলাও থাকে না।
“প্রতিদিনের কাজে জার্টা ব্যবহার করতে সাংবাদিক বা সম্পাদকদের বিশেষ কোনো প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। তবে কেউ যদি নিজের সংবাদমাধ্যমের জন্য জার্টা অ্যাপ তৈরি করতে চায়, তাহলে আমাদের ডকুমেন্টেশন ও ওপেন সোর্স কোড ব্যবহারের জন্য কিছু প্রযুক্তিগত জ্ঞান লাগবে। অথবা তাঁরা চাইলে নুক্লিও-কে দিয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করিয়ে নিতে পারে।” বলে উল্লেখ করেন তিনি। নিউজরুমের জন্য তাদের পছন্দমতো কাস্টমাইজেশন ও নির্ধারিত ভিজ্যুয়াল আইডেনটিটি মডেলসহ জার্টা পেজ তৈরি হয়ে গেলে—তখন তা ব্যবহার করা খুবই সহজ।”
ড্রামন্ড ব্যাখা করেন, “সংবাদমাধ্যমগুলো চাইলে নিজেদের জন্য আলাদা জার্টা তৈরি করতে পারে। আবার অন্য সংবাদমাধ্যম, যেমন নুক্লিও যেসব কার্ড উন্মুক্ত রেখেছে, সেগুলোও ব্যবহার করতে পারে।”
“আমাদের কিছু কার্ড রয়েছে—যা সবার জন্য উন্মুক্ত। এবং কিছু কার্ড ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স ৪.০ এর আওতায় অনুমতি দেওয়া আছে। শুধু নির্দিষ্ট কার্ড বের করতে হবে, সেখান থেকে এম্বেড কোড কপি করে নিজের প্রতিবেদনে বসিয়ে দিলেই হবে,” বলেন ড্রামন্ড। তিনি আরো জানান, “যেসব সংবাদমাধ্যম নিজেরা জার্টা তৈরি করবে, তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তাদের তৈরি কার্ডগুলো অন্যরা ব্যবহার করতে পারবে কিনা।”
সম্পাদকের মন্তব্য: এই প্রতিবেদনটি লাটাম জার্নালিজম রিভিউতে প্রকাশিত হয়েছে। ক্রিয়েটিভ কমন্স সিসি-বিওয়াই-এনসি-এনডি লাইসেন্সের অধীনে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। লেখাটি অনুবাদ করেছেন টেরেসা মিওলি। লেখাটি স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায় এলজেআর-এর ওয়েবসাইটে পড়তে পারবেন।
মার্তা শপাসেনকফ একজন সাংবাদিক। তিনি ব্রাজিলের রিও দে জেনেরিওতে থাকেন। জর্নাল এক্সট্রা, ও গ্লোবো, দি ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন, ইয়াহু ব্রাজিল এবং লাটাম জার্নালিজম রিভিউ-তে তাঁর লেখা প্রকাশ হয়েছে।