

This image – showing a Russian military buildup near Ukraine in November 2021 – was one of more than 400 high resolution images of the Ukraine conflict that Maxar’s News Bureau has distributed to journalists. Image: Screenshot, Maxar
রিপোর্টারের টিপশিট: বিনামূল্যে স্যাটেলাইট ছবি কীভাবে পাবেন
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য নতুন সম্ভাবনা হয়ে এসেছে স্যাটেলাইট ছবির সহজলভ্যতা। গাজার বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, অধিকৃত ইউক্রেনের গণকবর থেকে শুরু করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বিচার বন উজাড় কিংবা আমাজন জঙ্গলে ভয়াবহ আগুন লাগার মতো ঘটনায় স্যাটেলাইট ছবি বড়ধরনের যোগসূত্র।
যদিও আমরা দেখছি যে, বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো রিমোট সেন্সিং ডেটা (কোনও বস্তু সম্পর্কে তথ্য পেতে উড়োজাহাজ বা স্যাটেলাইট সেন্সর ব্যবহার করে চিত্র ধারণ) ব্যবহারের প্রবণতার দিকে ঝুঁকেছে। কেননা বিশ্লেষণযোগ্য স্যাটেলাইট ছবি এবং সরবরাহকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রটিতে যাঁরা নতুন নতুন কাজে নেমেছেন, বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশ (এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার স্বল্প আয়ের দেশ), তাদের কাছে বিষয়টি খানিকটা কঠিন বলে মনে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনবলের স্বল্পতা আছে এমন বার্তাকক্ষের ধারণা এ ধরনের ফরেনসিক প্রমাণ হাতে পেতে সাটেলাইট ছবি সরবরাহকারীদের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করতে হয়, কিংবা ডেটা ও সার্চ করার বিশেষ দক্ষতা লাগে। তাঁরা আরও ধারণা করেন, বেসরকারি ওই স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহকারীরা অপরিচিত নিউজ আউটলেটগুলোর কাছ থেকে বিনা পয়সায় ছবির অনুরোধের বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেন না।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ছবি ব্যবহার বিষয়ক কিছু সীমাবদ্ধতা আর ক্ষেত্রবিশেষে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও ছবির এক বিশাল ভান্ডার আছে। অনুসন্ধানী অনেক সাংবাদিকই যেগুলো কাজে লাগাচ্ছেন না
বেসরকারী স্যাটেলাইট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন দুই নেতৃস্থানীয় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে জিআইজেএন। তাঁরা হলেন, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রশিক্ষক ও ডেকার্তেজ ল্যাবসের প্রাক্তন অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার লরা কার্টজবার্গ এবং ওয়াশিংটন পোস্টের গ্রাফিক্স রিপোর্টার ও প্ল্যানেট ল্যাবসের প্রাক্তন ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইঞ্জিনিয়ার ড্যানিয়েল উল্ফ।
তাঁরা জানান যে, সুসংবাদটি হচ্ছে:
- অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজন এমন মোটামুটি রেজল্যুশনের রিমোট সেন্সিং ছবির জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার হয়তো কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা বা অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন পড়বে না।
- ধরুন আপনি কোনো একটি অঞ্চলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছেন। ভবিষ্যতে ওখানে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা বোঝানো যায় এমন কিছু ছবির প্রয়োজন আপনার। স্যাটেলাইট কোম্পানির কাছে প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট অঞ্চলের ছবি তোলার জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন। আমি মনে করি এক্ষেত্রে গ্লোবাল সাউথের সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা বেশি। কেননা দক্ষিণ গোলার্ধে সাটেলাইটের বাণিজ্যিক টাস্কিং ডিমান্ড (স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আপনি যখন আপনার নির্ধারিত অঞ্চলের ছবি তোলার জন্য অনুরোধ করেন) কম (যা নিচের দিকের অঞ্চলে বেশি।)
- আপনি যদি অতিরিক্ত ভূ-স্থানিক বিশ্লেষণে না যান, তাহলে স্যাটেলাইট ছবি খুঁজতে বা ডাউনলোড করতে আপনার বিশেষ ডেটা বা কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতার প্রয়োজন নেই — এমনকি ক্লাউড কভার স্ক্রিন আউট বা কাস্টম টাইম ল্যাপস তৈরির ক্ষেত্রেও নয়।
- বেসরকারি স্যাটেলাইট কোম্পানির মার্কেটিং দলটি প্রায়ই বড় বড় প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিকদের ইমেইলে ভালো রেজল্যুশনের ছবি পাঠিয়ে দেয় — যেমন ভূমিকম্প বা বন্যা। কখনও কখনও সেখানে বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনাও জুড়ে দেয়। আপনি যদি প্রতিষ্ঠানটির প্রেস লিস্টে সাইনআপ করেন তাহলে কোনো ধরনের অনুরোধ জানানো ছাড়াই তাঁরা ছবিগুলো আপনাকে পাঠিয়ে দিবে।
- যদিও কিছু বেসরকারী কোম্পানি নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে মিডিয়া অংশীদারদের নিষেধাজ্ঞা কিংবা প্রথম ছবি ব্যবহার করা বিষয়ক বিধিনিষেধ জুড়ে দিয়ে থাকে। তবে তাঁরা অপরিচিত বার্তাকক্ষের পক্ষ থেকে তাদের কাছে ছবি চেয়ে করা অনুরোধকেও স্বাগত জানায়। আর যেসব দেশে তাদের ছবি কখনও প্রকাশিত হয়নি, সেসব দেশের সাংবাদিকদের সহযোগীতা করতে পেরে খুশি হয়।
- নাসা ওয়ার্ল্ড ভিউর মতো পাবলিক পোর্টাল এবং প্ল্যানেট এক্সপ্লোরারের মতো ব্যক্তিগত লাইব্রেরিসহ ছবি খোঁজার জন্য রয়েছে বেশকিছু দুর্দান্ত ডেটাবেস। এছাড়াও একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনি ছবি সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে তা বিশ্লেষণ এবং আরো ভালো ফলাফল পেতে অনলাইন গাইডগুলো দেখতে পারেন। এমন কয়েক ডজন অনলাইন গাইড রয়েছে। যেমন জিআইজেএনের “রির্সোসেস ফর ফাইন্ডিং অ্যান্ড ইউজিং স্যাটেলাইট ইমেজ।” তবে, নতুনদের জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন সহজ ব্যবহারযোগ্য দুটি ওপেন সোর্স টুল— গুগল আর্থ প্রো, আর সেন্টিনেল হাব ইও ব্রাউজার অ্যাপ ব্যবহারের। স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহারের সময় এগুলো আপনার প্রয়োজন হবে।
কার্টজবার্গ বলেন, “আমি মনে করি, গুগল আর্থ এবং ইও ব্রাউজার হচ্ছে একমাত্র টুল, বিনামূল্যে স্যাটেলাইট ছবি পেতে আপনার এগুলো প্রয়োজন।”
“সুতরাং এ দুটি টুল কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা অনুশীলন ও শেখার জন্য সময় দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। যা আপনার বেশিরভাগ প্রাথমিক প্রয়োজন পূরণ করবে। তাছাড়া সমসাময়িক প্রতিটি ছবির জন্য আপনার এ ডেটাবেস দেখা উচিত, কারণ সেখানে হয়তো এমন একটি ছবি থাকতে পারে যা পরিচ্ছন্ন ও মেঘমুক্ত। কয়েকদিন ধরে আপনি হয়তো নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলের ওপর এমন একটি ছবি মরিয়া হয়ে খুঁজছিলেন।”
তিনি আরো যোগ করেন: “কিন্তু আপনি যদি এই দুটি টুলের মধ্যে আপনার প্রয়োজনীয় ছবিটি খুঁজে না পান, তখন বেসরকারি সাটেলাইট কোম্পানির কারও সঙ্গে যদি আপনার পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত সুসম্পর্ক থাকে, তা বেশ কাজে লাগে।”
ব্যবহারকারী-বান্ধব, বিনামূল্যের স্যাটেলাইট ইমেজ টুল নির্বাচন
বতসোয়ানার অলাভজনক সংস্থা আইএনকে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নিয়ে করা ২০১৯ সালে জিআইজেএনের প্রতিবেদনে বিনামূল্যে ছবি কীভাবে পাওয়া যায় তা বেশ ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জোয়েল কোনোপো জানিয়েছিলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত কান্ট্রি লজ নিয়ে করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেসরকারি স্যাটেলাইট কোম্পানির একটি মাত্র ছবি ব্যবহারের জন্য সম্পাদকদের বেতনের একটা অংশ কাটছাঁট করতে হয়েছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার সুইফ্ট জিওস্পেশাল সলিউশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডিজিটালগ্লোবের এ ছবিটি বতসোয়ানার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত বাড়িতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজের চিত্র তুলে ধরে। বতসোয়ানার অনুসন্ধানী অলাভজনক সংস্থা আইএনকের ২০১৯ সালে করা অনুসন্ধানে নতুন উন্নয়ন কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসে।
কার্টজবার্গ বলেন যে, বাড়ির ছবিটি ছিল যুৎসই এক উদাহরণ। তবে বর্তমানে এ ধরনের ছবির জন্য কোনো বার্তাকক্ষেরই আর টাকা খরচ বা অনুরোধের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ ছবিতে তারিখ-নির্ভর তথ্য, কিংবা সহজে শনাক্ত করা যায় এমন কোনো চিহ্ন ছিল না। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সেন্টিনেল-টু-এর মতো মাঝারি- রেজল্যুশন স্যাটেলাইট এ ধরনের ছবি খুব ভালোভাবে তুলতে সক্ষম। আর তা পেতে আপনার অর্থ খরচেরও কোনো প্রয়োজন নেই।
উল্ফ জানান যে, প্রথমবারের মতো যাঁরা স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করতে যাচ্ছেন, তাদের উচিৎ তাঁদের কী প্রয়োজন সেটির মূল্যায়ন দিয়ে শুরু করা: এক্ষেত্রে তারিখ বা ছবির রেজল্যুশনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি বলেন, “আপনার সম্পাদক সাধারণত ভালোমানের একটি ছবির জন্য বলবে: নিখুঁত ছবি বা সাম্প্রতিক কোনো চিত্র, বা দুটোই।”
তিনি আরও বলেন, “ চীনের সরকার আফ্রিকার কিছু অংশে অর্থায়ন করছে। আপনি হয়তো স্টেডিয়ামগুলো দেখছেন এবং সেখানে কী ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে তা বুঝতে চাচ্ছেন। আপনি যদি জানেন যে ছবিটি কখন দরকার এবং তা কতটা সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন, তাহলে আপনি অনেক দূর আগাতে পারবেন। বন্যার ছবিতে ভালোমানের রেজল্যুশনের খুব একটা দরকার নেই। আপনার যদি ওই এলাকার আগে-পরের পরিস্থিতি যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে পরিষ্কার ছবির জন্য অর্থ খরচ করতে পারেন। কারণ ছবিটি আগের যে কোনো সময়ের হতে পারে।”
”তবে আপনার যদি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা সংক্রান্ত ছবির প্রয়োজন হয়, বিষয়টি তখন খানিকটা জটিল হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও নিখরচায় কাছাকাছি সময়ের ছবি পাওয়া সম্ভব,” – বলেন তিনি।
একই ধরনের বেসরকারি স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে প্রথমে নাসার নিম্ন-মাঝারি রেজল্যুশন ল্যান্ডস্যাট — “শহরের রেজল্যুশন বাছাই” এবং মাঝারি-রেজোলিশন সেন্টিনেল-টু, যেটি প্রতি পিক্সেলে প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম— এগুলো যাচাইয়ের কথা বলেন উল্ফ।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, কোন ধরনের স্যাটেলাইট উৎস বেছে নিতে হবে তা নিয়ে নতুনদের আলাদা করে চিন্তা করার দরকার নেই, কারণ ওপেন সোর্স টুল দিয়েই আপনি আপনার কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। গুগল আর্থ সবার আগে বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে নেয়া সেরা ছবিটি বাছাই করে। আর ইও ব্রাউজারে সেন্টিনেল-টু পরিষেবার পাশাপাশি ল্যান্ডস্যাট এবং অন্যান্য ছবির উৎসও রয়েছে। এক ক্লিকেই আপনি তা বাছাই করতে পারেন।
তিনি বলেন, “আপনি যদি নাসা ওয়ার্ল্ডভিউতে বিনামূল্যের অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন তাহলে এখান থেকে অনেক কিছু পাবেন, কারণ এটি দিয়ে আপনি নাসার সব ডেটা ফিডে প্রবেশ করতে পারবেন এবং গুগল ম্যাপের মতো করে ব্যবহার করতে পারবেন।”
উল্ফ জানান, “আপনি কোনো দুর্যোগের ওপর কাজ করতে চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে ‘অ্যাড লেয়ার’ বোতামটি ব্যবহার করতে পারেন, এভাবে আপনি প্রাথমিক ডেটাও খুঁজতে পারেন। এছাড়া আগুন বা বিস্ফোরণ সম্পর্কিত রিপোর্টিংয়ের জন্য ফায়ার এবং থার্মাল অ্যানোমালিস ফিচারগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।”

“মূল কথা হলো. প্রথমে গুগল আর্থ এবং ইও ব্রাউজারের পয়েন্ট-অ্যান্ড-ক্লিক ইন্টারফেসগুলো সম্পর্কে শিখুন— এগুলো দুর্দান্ত, কিন্তু ইও ব্রাউজারের মতো একটি টুল প্রথমবার লাইভ এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা অনুসারে চালানো এখনও কঠিন,” এভাবে ব্যাখ্যা করেন কার্টজবার্গ।
(কম্পিউটারে দক্ষ এমন প্রতিবেদকেরা জাভাস্ক্রিপ্ট কোড কাস্টম স্ক্রিপ্টের এ সংগ্রহের মাধ্যমে সেন্টিনেল হাব ডেটার গভীরে অনুসন্ধান চালাতে পারেন।)
কার্ল চার্চিল, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন গ্রাফিক্স রিপোর্টার। জিআইজেএনকে তিনি বলেন, ইও ব্রাউজারে নেই কিন্তু গোজস (GOES) স্যাটেলাইট হচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় উন্মুক্ত সোর্স। যেটি আমেরিকার ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। “এটি একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। যেটি প্রতি ১০ মিনিটে সমগ্র পশ্চিম গোলার্ধের বড় একটি স্ন্যাপশট নেয়,” বলে তিনি জানান। নাসা ওয়ার্ল্ডভিউর মাধ্যমে এই স্যাটেলাইটের সহজ ও বিনামূল্যে ছবি ডাউনলোড করার বিকল্প বাতলে দেয়ার পাশাপাশি চার্চিলের পরামর্শ হল গোজস থেকে ছবি বাছাইয়ের জন্য ব্রাজিলের দারুণ কিছু প্ল্যাটফর্ম ভিউয়ারও পরীক্ষা করতে পারেন আপনি।
ওপেন সোর্স স্যাটেলাইট টুল ব্যবহারের বিভিন্ন পরামর্শ:
- আপনার অনুসন্ধানের জন্য ভালোমানের ছবি খুঁজতে ও ডাউনলোড করতে গুগল আর্থ প্রোর পয়েন্ট-অ্যান্ড-ক্লিক, জুম, এবং টাইম-স্লাইডার ফিচারগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করে দেখুন ৷ গত বছর, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস দেখিয়েছে যে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চীন জুড়ে ২ হাজার ৩২৩টির মধ্যে থেকে ৭৪ শতাংশ মসজিদের আরবের স্থাপত্যশৈলীর পরিবর্তন করা হয়েছে বা সরিয়ে ফেলেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
“যদি আপনি কিছু প্রমাণ করতে চান, তাহলে গুগল আর্থ একটি দুর্দান্ত উৎস— যেখানে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখের প্রয়োজন নেই,” বলেন কুর্টজবার্গ। ”তবে আপনি চাইলে সময় উল্লেখ করতে পারেন, কিন্তু সাংবাদিকেরা গুগলম্যাপে শুধু জুম ইন করেই তা করতে পারেন। গুগলম্যাপের উপরের দিকে দারুন একটি টাইম-স্লাইডার বার রয়েছে। আপনি চাইলে তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ে স্ক্রোল করতে পারেন। তবে ব্রাউজারে গিয়ে নয়, ডেস্কটপ সংস্করণ ডাউনলোড করে তা ব্যবহার করতে ভুলবেন না।”
-
ইও ব্রাউজারের ক্লাউড ফাংশন ফিচারের সাহায্যে ব্যবহারযোগ্য ছবি খোঁজার সময় বাঁচান।
আপনি যদি টুলের প্রধান মেন্যুতে সেন্টিনেল-টু বক্সের নিচে “অ্যাডভান্সড সার্চ” এ ক্লিক করেন, তখন একটি “ম্যাক্স ক্লাউড কাভারেজ” স্লাইডার বার পাবেন। আপনি যদি বারের তিন-চতুর্থাংশে ক্লিক করেন, তাহলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার তারিখের সময়সীমা অনুসারে একইরকম ২৫ শতাংশ ছবি বাদ দিয়ে দেবে। এরপর আপনি যে ছবিটি চাচ্ছেন তা নির্বাচন করুন বা ছবির একটি সেট বক্স বাছাই ও ডাউনলোড করুন এবং ছবির উৎস উল্লেখ করুন।
- ওপেন সোর্স টুলের অনুশীলনে আপনার নিজের বাড়ি খুঁজুন।
আপনার এলাকার পরিবর্তন ঘটেছে, এমন আগে-পরের ছবি অনুসন্ধান করুন৷ উল্ফ বলেন, নিয়মিত অনুশীলন সত্যিই কাজে লাগে। আপনার নিজের আশেপাশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলো দেখুন। উদাহরণস্বরূপ, আমি লক্ষ্য করব কীভাবে আমাদের স্থানীয় ইউটিলিটি আমার আশেপাশের জলের প্রধান সংযোগগুলো নিয়ে কাজ করে। - ইও ব্রাউজারের ডিজিটাল ক্যালেন্ডারের বিপরীতে আপনার যে তারিখ বা তারিখের সময়সীমার মধ্যের ছবির দরকার, ওই সময় উল্লেখ করুন। প্রায়ই প্রতি সপ্তাহে এক বা দু ‘বার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ক্যালেন্ডারটি সুনির্দিষ্ট তারিখের ছবি তুলে ধরে। আপনি যে অঞ্চলের ছবি খুঁজছেন সুনির্দিষ্ট তারিখ অনুসারে তা এখানে পেতে পারেন।
- টুল-ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ আগামী সপ্তাহে সম্ভাব্য ছবির পরিকল্পনা করুন। সেন্টিনেল হাবে “ক্লিয়ার স্কাই কনফিডেন্স” নামে একটি ফিচার রয়েছে। স্যাটেলাইটগুলো যখন আপনার নির্বাচিত অবস্থানের ছবি তুলবে তখন তা আপনাকে সম্ভাব্য আবহাওয়ার পরিস্থিতির পূর্বাভাসও জানিয়ে দিবে।
যখন কোনও অঞ্চলের ছবি ধারণ ও তা বাছাই করা হয় সেন্টিনেল হাবের স্মার্ট ক্যালেন্ডার তারিখ অনুসারে তা প্রকাশ করে। ছবি: স্ক্রিনশট, ইও ব্রাউজার
-
-
-
- ছবি থেকে আপনার যা প্রয়োজন — এবং যা প্রয়োজন নেই— সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রযুক্তিগত দিকগুলো ঠিক করুন ৷ যদি খুব পরিচ্ছন্ন ছবির প্রয়োজন না হয়, তাহলেও তা জানান। “এই কর্মকর্তারা সঠিক অবস্থান, প্রয়োজনীয় তারিখ এবং ছবির পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে যত্নশীল,” বলেন তিনি। “সুতরাং আপনার প্রতিবেদনে কী ধরনের ছবির প্রয়োজন, এর রেজল্যুশন কেমন হবে সে সম্পর্কে ধারণা দিন।
- তিনি আরো বলেন: “আপনি যদি এলাকা সম্পর্কে জানেন, তবে তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগঠিত কোনো ঘটনার ছবি আপনাকে খুঁজে দিতে পারে। আপনি যদি বলেন যে: ‘আমরা এই এলাকায় গত সপ্তাহে সহিংসতার খবর শুনেছি, কিন্তু আমরা জানি না ঠিক কোথায় তা ঘটেছে — তবে সম্ভবত সেখানে পোড়া দাগ আছে,’ স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানগুলো এ তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারে, কারণ তাঁরা কিছু মৌলিক বিশ্লেষণ চালাতে সক্ষম।”
- র ছবি ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশিকা দেয়া থাকলেও, ভাষা যাচাই করতে ভুলবেন না। তাই যেকোনো প্রাথমিক অনুরোধের ইমেইলে একটি লাইন অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন: “ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠানের ছবি ব্যবহারের বিপরীতে আপনি কীভাবে আপনার কোম্পানির নাম ব্যবহার করতে চান?” কার্টজবার্গ ব্যাখ্যা করেছেন যে এ ধরনের প্রশ্ন কোম্পানির নাম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনার সচেতনতা তুলে ধরে।
-
- ছোট বার্তাকক্ষের জন্য কিছু পরামর্শ: শুরুতে আপনি আপনার আউটলেট সম্পর্কে ধারণা দিয়ে খুব জরুরি নয় এমন একটি ছবির জন্য অনুরোধ করুন, সেখানে শুধুমাত্র স্থানাঙ্ক সম্পর্কে উল্লেখ করুন। আর এমন একটি প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করুন, যেখানে সুনির্দিষ্ট তারিখের ছবির প্রয়োজন নেই। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলে, ধন্যবাদ দিয়ে অনুলিপিটি প্রেস কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে দিন।
-
- শুধু শুধু মামুলি বিষয়ের অনুরোধ জানিয়ে “জলঘোলা” করবেন না। প্রেস কর্মকর্তাদের আগ্রহী করে তুলুন। “আপনি যদি ইমেইলে লেখেন যে, ‘আমি সত্যিই অমুক অঞ্চলে অবৈধ খনি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, আপনার কাছে কী ধরনের তথ্য আছে?’, তাহলে তাঁরা আপনার ইমেইলের উত্তর দেবে না।” বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে উলফ বলেন যে, “কিন্তু আপনি যদি বলেন ‘আমাদের প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে আমরা মনে করি যে মাইন টেলিং (খনির কাজ থেকে বর্জ্য) অমুক নদীতে ফেলা হচ্ছে। আপনি কী বিষয়টি যাচাই করে আমাদের দেখাতে পারেন?’ সেক্ষেত্রে, তাঁরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারে।”
- প্রয়োজন হলে তথ্য বিশ্লেষণে সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানান। “তথ্যগুলো বিশ্লেষণে সক্ষম এমন লোকেদের কাছে পৌঁছানো খানিকটা কঠিন হতে পারে, কারণ তথ্যগুলো আসলে কে বিশ্লেষণ করছেন তা জানাটা কঠিন,” বলে মন্তব্য করেন উল্ফ। “গাজা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, তা নিয়ে বিশ্লেষণের জন্য নিবেদিত এক বা দুজন গবেষক থাকবেন। ছবিগুলো আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে পাঠানোর কথা তাঁরা বলতে পারেন, কারণ এটি প্রথমে তা প্রকাশ করতে পারে। এরপর চাইলে অন্য কোনো আউটলেট তা ব্যবহার করতে পারে।তিনি আরো বলেন: “আপনি যদি এলাকা সম্পর্কে জানেন, তবে তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগঠিত কোনো ঘটনার ছবি আপনাকে খুঁজে দিতে পারে। আপনি যদি বলেন যে: ‘আমরা এই এলাকায় গত সপ্তাহে সহিংসতার খবর শুনেছি, কিন্তু আমরা জানি না ঠিক কোথায় তা ঘটেছে — তবে সম্ভবত সেখানে পোড়া দাগ আছে,’ স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানগুলো এ তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারে, কারণ তাঁরা কিছু মৌলিক বিশ্লেষণ চালাতে সক্ষম।”
-
-
- আপনি যদি গোষ্ঠীকেন্দ্রিক উন্নয়নে জড়িত কোনো অলাভজনক সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন, সেক্ষেত্রে বিনাব্যয়ে ভালো- রেজল্যুশনের ছবি পাওয়ার বিষয়ে আলাপ চালাতে পারেন। কার্টজবার্গ বলেন যে, তিনি অন্তত এমন একটি জার্নালিজম সেন্টারের কথা জানেন, যেটি তার সাংবাদিক সদস্যদের জন্য একটি বেসরকাারি স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিনামূল্যে ছবি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
- সম্ভব হলে আপনার ইমেইলের অনুরোধে স্থানের নাম বা চিহ্নের পরিবর্তে জিপিএস স্থানাঙ্ক ব্যবহার করুন। উল্ফের মতে,”তবে স্থানাঙ্কই সেরা। আপনার কাছে যদি অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কিত তথ্য থাকে, তাহলে তাও দিন।” পরামর্শ: গুগলম্যাপে আপনার নির্ধারিত স্থানের ওপরে রাইট-ক্লিক করে স্থানাঙ্ক খুঁজুন।
জিপিএস স্থানাঙ্ক যা গুগল ম্যাপের ওপর রাইট-ক্লিক করে ক্লিপবোর্ডে অনুলিপি করা যায়। স্যাটেলাইট ছবি থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত এ কাজটি সাংবাদিকদের অনেক সময় বাঁচিয়ে দেয়। ছবি: স্ক্রিনশট, গুগল ম্যাপ
-
- অনুরোধ করুন যে, সুনির্দিষ্ট তারিখের না হলেও কোনো একটি স্যাটেলাইটকে গুরুত্বপূর্ণ ছবির তোলার দায়িত্ব দেওয়া হোক।
-
- “টাস্কিং হচ্ছে যখন কোনো কোম্পানির পক্ষ থেকে ভালো-রেজল্যুশনের ছবি তুলতে সক্ষম কোনো স্যাটেলাইটকে সুনির্দিষ্ট এলাকার ছবি তোলার জন্য অবস্থান পরিবর্তনের অনুরোধ করা,” বলে ব্যাখা করেন উল্ফ। “গ্লোবাল সাউথের নিউজরুমগুলোর এক্ষেত্রে একটি সুবিধা রয়েছে। কারণ, উত্তর গোলার্ধে, বাণিজ্য আর প্রতিযোগিতা বেশি থাকার কারণে আগে থেকেই টাস্ক ইমেজের জন্য প্রচুর কোম্পানির অনুরোধ রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে টাস্কিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম, তাই জমা পড়া অনুরোধের সংখ্যাও কম।”তিনি আরও যোগ করেন, “যদি আপনার কাছে এমন কোনো তথ্য থাকে যে কারও বাড়ির পিছনের দিকের উঠোনে একটি ব্যক্তিগত রানওয়ে রয়েছে, আর ওই জায়গার ছবি পাওয়াটা কঠিন। সেক্ষেত্রে আপনি দীর্ঘ সময় নিয়ে অনুরোধ জানাতে পারেন।প্ল্যানেটের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে: “আমি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদনের জন্য রানওয়ের সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাচ্ছি ও ছবি খুঁজছি। আপনাদের কাছে এ জায়গার ভালো- রেজল্যুশন ডেটা আছে বলে মনে হচ্ছে না। আপনারা কী ওই জায়গার একটি ছবি তোলার জন্য কোনো স্যাটেলাইটকে কাজে লাগাতে পারেন?— আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের ছবির দরকার নেই; আমরা শুধু রানওয়ের বিষয়টি যাচাই করতে চাই।’ তাদের পক্ষ দেখে উত্তর আসতে পারে, ‘অবশ্যই, আমাদের এক বা দুই সপ্তাহ সময় দিন।”
-
-
-
-
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফ্রিকার নিউজরুমের জন্য।