নাগরিক অনুসন্ধান গাইড: ভূমিকা
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান গাইড
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান গাইড: ভূমিকা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: অনুসন্ধান পরিকল্পনা ও পরিচালনা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: নৈতিকতা ও সুরক্ষা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: ইন্টারনেটে খোঁজ
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: ব্যক্তি নিয়ে গবেষণা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: কর্পোরেশনের মালিক কারা
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: সরকারি নথিপত্র নিয়ে অনুসন্ধান
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: রাজনীতিবিদদের নিয়ে অনুসন্ধান
অধ্যায় গাইড রিসোর্স
নাগরিক অনুসন্ধান: সম্পত্তির মালিকানার খোঁজ-খবর
পরিচয় কোনো ব্যাপার না, অনুসন্ধান করুন!
অনুসন্ধানের জন্ম হয় কৌতুহল থেকে। আর কৌতুহলী যে কেউই হতে পারে। এর উপরে কারো একচেটিয়া নেই।
নাগরিকেরাও অনুসন্ধান করতে পারেন। যেমনটি তারা করেনও। জিআইজেএন এখানে তেমনই কিছু দারুন উদাহরণের কথা তুলে এনেছে।
জিআইজেএনের এই গাইডটির লক্ষ্য: সাংবাদিক নন– এমন নাগরিকদের আরও বেশি করে অনুসন্ধান করতে সাহায্য করা। এখানে এমন সব কৌশলের কথা বলা হয়েছে যেগুলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা ব্যবহার করেন।
এই গাইড আপনাকে যেসব বিষয়ে সহায়তা করবে:
- অনুসন্ধান পরিকল্পনা ও পরিচালনা
- নৈতিকতা ও সুরক্ষা
- ইন্টারনেটে খোঁজ
- ব্যক্তি নিয়ে গবেষণা
- কোম্পানির মালিক কে
- সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে দেখা
- রাজনীতিবিদদের নিয়ে অনুসন্ধান
- সম্পত্তির মালিকানার খোঁজ-খবর
রিসোর্সটি আরও বিস্তৃত করার যেকোনো পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের কাছে লিখুন এখানে।
বিশ্বজুড়ে যত নাগরিক অনুসন্ধান
বিশ্বজুড়ে, নাগরিকেরা যেসব প্রশংসনীয় অনুসন্ধানী কাজগুলো করেছেন, সেগুলোর দিকে আগে নজর দেওয়া যাক।
নাগরিক অনুসন্ধানকারীদের মধ্যে থাকতে পারেন সাধারণ নাগরিক, বেসরকারি সংগঠনগুলোর সদস্য, সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত নন– এমন অন্য কোনো পেশাজীবী। এমন আগ্রহী-কৌতুহলী মানুষেরাই নানা অনুসন্ধানী কৌশল ব্যবহার করে তুলে ধরছেন অন্যায় এবং উন্মোচন করছেন নানা লুকিয়ে থাকা জিনিস।
এসময়ের অন্যতম উদ্ভাবনী ও সফল অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, বেলিংক্যাট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইলিয়ট হিগিন্স। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে ব্লগ লিখতে শুরু করার সময় তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বাড়িতে নিজের সন্তানের দেখাশোনা করতেন। ২০১২ সালে ইন্টারনেটে কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখার সময় তিনি আবিস্কার করেন: সিরিয় সরকার, ক্লাস্টার বোমা ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। তিনি নিজে এবং বেলিংক্যাট তারপর থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান পরিচালনা করেছে।
এমন আরও কিছু সাম্প্রতিক উদাহরণের কথা এই গাইডে উল্লেখ করেছে জিআইজেএন। সেগুলো পাবেন এই গাইডের বিভিন্ন অধ্যায়ে।
কোনো একক নাগরিকের পক্ষে একটি অনুসন্ধান/গবেষণার ফলাফল জনগণের নজরে নিয়ে আসার কাজটি যতো কঠিনই হোক, সত্য সবসময়ই সামনে আসার পথ খুঁজে নেয়। কখনো কখনো এসব গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, বা পত্রিকার কাছে লেখা চিঠিতে। কোনো নাগরিক সাংবাদিক এই কাজে যুক্ত করেন অন্যান্য সামাজিক তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি-সংগঠনকে। এবং এসব অনুসন্ধানের ফলাফল তুলে ধরেন কমিউনিটি মিটিং বা সরকারি সংস্থার সামনে। এমনকি কখনো কখনো যাওয়া হয় আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের কাছেও।
নামে কি আছে?
ডিজিটাল জগতের প্রযুক্তিগত নানা উদ্ভাবনের ফলে নাগরিকদের এখন অনেক ক্ষমতায়ন হয়েছে। তারা একই সঙ্গে বেছে নিতে পারছেন: কোন জিনিসগুলো তারা দেখতে বা পড়তে চান। এবং মিডিয়া ব্যবহার করে সরাসরি সমাজেও প্রভাব তৈরি করছেন। সরকারি বিভিন্ন তথ্য ক্রমেই অনলাইনে প্রকাশ হওয়া (যদিও সব জায়গায় নয়) এবং নতুন সব কৌশলের সুবিধা কাজে লাগাচ্ছেন অনুসন্ধানকারীরা। ইন্টারনেটের কল্যানে বিভিন্ন অনুসন্ধান চালানোর কাজও সহজ হয়ে গেছে নাগরিকদের জন্য। বিভিন্ন উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজখবর এবং ড্রোন ও স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে পরিচালিত হচ্ছে অনেক অনুসন্ধান।
সম্পাদকীয় কাঠামোহীন সংগঠনের বাইরে কাজ করেন, এবং আনুষ্ঠানিক পেশাগত যোগ্যতা নেই, এমন মানুষও নানাবিধ গবেষণা, অনুসন্ধান করছেন। লিখছেন এবং জনমত গঠন করছেন।
সাংবাদিকতা পেশার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ পাওয়া সাংবাদিক এবং বিকল্প অনুসন্ধানকারীদের (তা সে সাধারণ নাগরিকই হোক বা বেসরকারি সংগঠন) মধ্যে পার্থক্য-রেখাটি ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আমাদের এখানে ব্যবহার করা “নাগরিক অনুসন্ধানকারী” দিয়ে অনেক বিস্তৃত পরিসরের মানুষকে বোঝানো হয়েছে। তবে এটিকে “নাগরিক সাংবাদিক” ভূমিকায় বিবেচনা করা যুক্তিযুক্ত হবে।
“নাগরিক সাংবাদিক” প্রত্যয়টির বেশ কিছু অর্থ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাধারণত এটি দিয়ে এমন নাগরিকদের বোঝানো হয়, যাদের একটি কাজের সম্পর্ক আছে প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলোর সাথে। অনেক সংবাদমাধ্যমই তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চেয়েছে নাগরিকদের কাছ থেকে পরামর্শ, ছবি, ভিডিও ও মতামত চাওয়ার মাধ্যমে। এধরনের কন্ট্রিবিউশন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি তারা নিরাপদ করেছে। ক্রাউডসোর্সিংয়ের ফলে সাংবাদিকেরা এখন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন অনেক দ্রুত, এবং অনেক মানুষের কাছ থেকে।
স্মার্টফোন কার্যত এমন এক বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যেখানে বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাব্য প্রত্যক্ষদর্শীরা ছবি ও বিবরণ শেয়ার করতে পারেন। এটিকে কখনো কখনো বলা হয় “নাগরিক প্রত্যক্ষদর্শীতা”। এধরনের নানা কন্ট্রিবিউশন/অবদান প্রায়ই ভূমিকা রাখে প্রাত্যহিক সংবাদ তৈরিতে। এবং কখনো কখনো এগুলো হয়ে উঠতে পারে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কাঁচামাল/প্রাথমিক উপাদান।
“অপেশাদার” সাংবাদিকতাকে বিদ্যমান সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা অবশ্য সবসময়ই সফল হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ক চিন্তাধারা নিয়ে ক্রমাগত কাজ ও বিকাশ হয়েছে।
এবং এখন ইন্টারনেট সংযোগ থাকার ফলে, অনেক গবেষক ও অনুসন্ধানকারী প্রথাগত সংবাদমাধ্যমকে পাশে সরিয়ে রাখছেন। লাতিন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার অধ্যাপক ক্লেমেনসিয়া রদ্রিগেজ যেমনটি বলেছেন, “নাগরিক সাংবাদিকতা উদ্ভুত হয়েছে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে, যার মধ্য দিয়ে এক ধরনের প্রতিরোধের চর্চা করা হয়। অ্যাক্টিভিস্ট ও অন্যান্য সামাজিক ন্যায়বিচারপ্রার্থীরা এই ধারণাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান যে, শুধু পেশাদার সংবাদমাধ্যমগুলোই সাংবাদিকতার চর্চা করতে পারবে। এবং তারা জনপরিসরে এমন সব তথ্য তুলে ধরেন যেগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।” (সিটিজেন জার্নালিজম: গ্লোবাল পারস্পেকটিভস – ভলিউম ২)
একই সময়ে, বেসরকারি অনেক সংগঠনও গবেষক ও প্রশিক্ষিত সাংবাদিকদের নিয়োগ দেয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন (ম্যাথু পাওয়ারস ২০১৫) প্রকাশের জন্য, যেগুলো তাদের প্রচার-প্রচারণা ও অ্যাডভোকেসির কাজে লাগে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এনজিও গ্লোবাল উইটনেসের কথা। তারা সাংবাদিকদের দিয়ে এমন কিছু অনুসন্ধান করিয়েছে, যেগুলো ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, গার্ডিয়ান, এবিসি নিউজের মতো বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সাংবাদিকতা কী এবং কারা এটি করার যোগ্যতা রাখেন, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে।
দ্য এলিমেন্ট অব জার্নালিজম (২০১৪) বইয়ে বিল কোভাক ও টম রোসেনস্টেইল লিখেছেন, “কে সাংবাদিক আর কে না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বেশ বেড়ে গেছে।” তাঁরা যোগ করেছেন:
আমাদের মনে হয় এটি ভুল প্রশ্ন। যে প্রশ্নটি মানুষের জিজ্ঞাসা করা দরকার, তা হলো: সেই ব্যক্তিটি যা করছে তা সাংবাদিকতা কিনা। তার কাজগুলো সত্যের ভিত্তিতে, নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এবং নিজ স্বার্থ সিদ্ধির বদলে তথ্য জানানোর মিশন নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে কিনা। এই বিষয়গুলিই অন্যান্য যোগাযোগের থেকে সাংবাদিকতাকে আলাদা করে তোলে।
অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার, নাগরিক সাংবাদিক, ওয়াচডগ ও সাংবাদিকদের ভূমিকা অস্পষ্ট হয়ে ওঠার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড্রিউ সুলিভানও। গ্লোবাল টিমওয়ার্ক: দ্য রাইজ অব কোলাবোরেশন ইন ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এ তিনি বলেছেন, “আপনি যদি তাদের আলাদা করতে না পারেন, তাহলে তারা সবাই হয়তো একই কাজ করছে। তারা সবাই অনুসন্ধানকারী। সাংবাদিকদের অ্যাক্টিভিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের শুধু খুঁজে পাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে একমত হতে হবে।” তিনি মনে করেন, আমাদের এসব নতুন ভূমিকার সংজ্ঞায়ন করা উচিৎ এবং সমমনা অনুসন্ধানকারীদের নিয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা উচিৎ।
সাংবাদিকতার জগত থেকে পাওয়া অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জিআইজেএনের এই গাইডটি তৈরি করা হয়েছে নাগরিক সাংবাদিকদের জন্য। যেন সাধারণ নাগরিক, বেসরকারি সংগঠনের সদস্য, সাংবাদিকতার বাইরের অন্য পেশাজীবীরাও বিভিন্ন অনুসন্ধানী কৌশল ব্যবহার করে অন্যায়-অনিয়মের চিত্র উন্মোচন করতে পারেন এবং আড়ালে থেকে যাওয়া জিনিসগুলো সামনে আনতে পারেন।
গাইডটি তৈরিতে সহায়তা করার জন্য জিআইজেএন কৃতজ্ঞ ডিগল্যাব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, জিম মিনটজের কাছে। আমরা আরও ধন্যবাদ দিতে চাই ডিগল্যাবের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, মার্ক ফেডারকে এবং অ্যান কিয়েরনানকে। তিনি এখানে ব্যবহৃত চিত্রকর্মগুলো তৈরি করেছেন।