প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

নাম ও ওয়েবসাইট ট্র্যাকিং, ভিডিও যাচাই এবং ক্লাস্টারিং সার্চ ইঞ্জিন

English

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় গবেষণার ট্র্যাক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনলাইন অনুসন্ধানের বেলায় অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। তখন গবেষণা করে পাওয়া তথ্য ফের যাচাই করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। চলতি মাসের জিআইজেএন টুলবক্সে আমরা নজর দিয়েছি অনলাইন গবেষণার রিয়েল-টাইম রেকর্ড সংরক্ষণের ওপর। এজন্য সার্চ ইঞ্জিন ও ভিডিও ভেরিফিকেশন টুলসসহ বেশকিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যা আপনাকে পুরনো সার্চ ফলাফল খুঁজে বের করার নানান উপায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।

ভুলতে মানা!

অনলাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে যারা গবেষণা করেছেন, সবাই কমবেশি জানেন বিষয়টি কতটা হতাশার হতে পারে। একের পর এক পেইজ ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ করে একটা নাম, ছবি বা মন্তব্য চোখে পড়ে, আর মনে হয় এটা যেন কোথায় দেখেছি! কিন্তু তখন আর মনে পড়ে না, কোথায় সেটি দেখেছেন। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টার পর, যেখানে তথ্যটি দেখেছিলেন সেই লিংকটির সন্ধান মেলে। কিন্তু দেখা যায়, ততদিনে পেইজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে অথবা লিংকটি অকেজো হয়ে গিয়েছে।

তাই ক্লান্তিকর হলেও আপনার অনলাইন রিসার্চকে নথিবদ্ধ করা জরুরী। শত শত ওয়েবসাইট ঘেঁটে কখন কোথায় কী পেয়েছেন, প্রতিদিন সেটি লিখে রাখতে হয়। নইলে দরকারের সময় কাঙ্খিত তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায় না। সহজ ও স্বয়ংক্রিয় উপায়ে আপনার এমন কাজকে এক জায়গায় নথিবদ্ধ করে রাখার জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে হাঞ্চলি

হাঞ্চলি মূলত ক্রোম এক্সটেনশন হিসেবে কাজ করে । অ্যাপ্লিকেশনটি যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমে চলে। একবার ইনস্টল করার পর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ব্রাউজ করা ওয়েবপেইজের কপি এবং তার সমস্ত মেটাডেটা সংরক্ষণ করতে থাকে। হাঞ্চলি এই কাজ করে নীরবে, ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে। একেকটি অনুসন্ধানের জন্য যত ইচ্ছা তত সংখ্যক পেইজ ধারণ ও সংরক্ষণ করতে পারে অ্যাপ্লিকেশনটি।

যখন পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হবে, তথন হাঞ্চলি অ্যাপ্লিকেশন খুলে আপনার গবেষণার পুরো ইতিহাস একবারে দেখে নিতে পারেন। চাইলে আপনার ভিজিট করা পেইজের কপি – পিডিএফ বা এইচটিএমএল আকারে এক্সপোর্টও করে নিতে পারেন।

প্রতিটি পেইজের জন্য আলাদা নোট রাখারও সুযোগ দেয় হাঞ্চলি এক্সটেনশন।

হাঞ্চলির সবচেয়ে সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো “সিলেক্টর।” এটি আপনার ভিজিট করা সব পেইজে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় সার্চের একটি পদ্ধতি। যেমন, সিলেক্টর হিসেবে যে কোনো ব্যক্তির নাম, ইমেইল ঠিকানা বা ওয়েবসাইট লিংক যুক্ত করুন। একবার সিলেক্টর সেট করার পর আপনি যে সাইটেই যাবেন, সেই নাম, ইমেইল বা লিংক পেলে সাথে সাথেই হাঞ্চলি আপনাকে জানিয়ে দেবে। একইভাবে আপনার গবেষণা ইতিহাস থেকে নির্দিষ্ট কিছু খুঁজে বের করার জন্যেও ফিল্টার হিসেবে সিলেক্টর ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনি যে পেইজ ভিজিট করছেন, যে বিষয় সার্চ করছেন অথবা যে ছবি সংগ্রহ করছেন-  তার সব কিছুরই ট্র্যাক রাখে হাঞ্চলি। এটি পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ দিন ব্যবহার করা যায় বিনা খরচে। এর পরে টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করতে হবে।

কী আছে (ইউজার) নামে?

ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (উন্মুক্ত উৎস ধরে অনুসন্ধান) এর জন্য অসাধারণ অনেক টুল আছে। নেইমচে_  ঠিক এই কাজের জন্য তৈরি না হলেও, ওপেন সোর্স গবেষণায় এর গুরুত্ব মোটেও কম নয়।

হাজারো ইউজারনেইম থেকে আপনার দেয়া ইনপুটের সাথে মিলিয়ে নাম খুঁজে বের করে নেইমচে_ক।

নেইমচে_ক তৈরি হয়েছে – এখনো ব্যবহার হয়নি এমন ইউজারনেইম খুঁজে বের করার জন্য।  এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হাজারো সাইট ঘেঁটে খুঁজে দেখতে পারে, কোন নাম বা ইউআরএল এখনো ফাঁকা রয়েছে, যা তারা নিজেদের প্রয়োজনে রেজিস্টার করতে পারবেন।

কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নেইমচে_ক ব্যবহার করেন অন্যভাবে। তারা এটি ব্যবহার করে খুঁজে দেখেন কোনো নির্দিষ্ট ইউজারনেইম দিয়ে কোথায় কোথায় নিবন্ধন করা হয়েছে। অনেক মানুষই একটি নির্দিষ্ট ইউজারনেইম দিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় রেজিস্ট্রেশন করেন। আপনি গবেষণা করে কোনো একটি নাম পেলে, তা দিয়ে অন্য সাইটে তার প্রোফাইল ও সংশ্লিষ্ট তথ্য জানতে পারবেন।

নেইমচে_ক দিয়ে সার্চ করলে সেই ইউজারনেইমে যেখানে যত প্রোফাইল আছে সব পাওয়া যাবে। অবশ্য ইউজারনেইম এক হলে যে ব্যক্তিও এক হবে, তা নয়। কিন্তু অনেক সময় আপনার অনুসন্ধানে এটি বাড়তি তথ্য পেতে সাহায্য করবে।

একই ধরণের আরেকটি সার্ভিসের নাম নোএম। এটি হাজারো অনলাইন সার্ভিস থেকে আপনার দেয়া ইউজারনেইমের সাথে মিলিয়ে তথ্য বের করে আনবে।

ভুয়া ভিডিও

ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা বেশ কঠিন। ভিডিও বিকৃত করার টুলগুলো যত উন্নত হচ্ছে, ভুয়া খবর ধরার কাজটিও ততই সূক্ষ ও জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন মানুষকে মিথ্যা তথ্য বিশ্বাস করানোর সহজ উপায় হচ্ছে, একটি ভিডিও নিয়ে তাকে আরেকটির সাথে জোড়া দিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যেন তার অর্থ ও প্রেক্ষাপট দুটোই বদলে যায়।

এই ধরণের প্রতারণা ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়, ভিডিও থেকে ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে তাকে অনলাইনের অন্য ছবির সাথে মিলিয়ে দেখা। এভাবে ভিডিওটি কোথা থেকে এসেছে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর ভালো একটি উদাহরণ হলো, বেলিংক্যাটের যাচাই করা ভিডিও। এর মাধ্যমে তারা লিথুয়ানিয়ার রাস্তায় সেনাবাহিনী নামার একটি খবর ভুয়া প্রমাণ করেছিল।

এখানে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তৈরি ইউটিউব ডেটা ভিউয়ার ব্যবহার করেছে বেলিংক্যাট। এই টুল ব্যবহার করা খুব সহজ: প্রথমে ইউটিউবের কোনো ভিডিও লিংক নিয়ে সেখানে পেস্ট করুন এবং গো বাটনে ক্লিক করুন। সাথে সাথেই এই ভিডিও প্রথম আপলোডের সময়সহ নানারকম তথ্য বের করে আনবে টুলটি।

এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সার্চ ফলাফলে ভিডিওর অসংখ্য থাম্বনেইল প্রাপ্তি। সেই ছবি দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, একই ভিডিও অন্য কোনো সময় বা অন্য কোনো প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তা জানা যাবে।

ভিডিওর সত্যতা যাচাইয়ের আরেকটি পদ্ধতি হলো, নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় তোলা ভিডিওর সাথে একই সময় ও জায়গায় তোলা আরেকটি ভিডিও মিলিয়ে দেখা। এটি অ্যামনেস্টির টুল দিয়ে করা যায় না। এজন্য ব্যবহার করতে হবে ইউটিউব লোকেশন ফাইন্ডার। একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক বিন্দুতে জিও-লোকেশনসহ ধারণ করা ভিডিও খুঁজে বের করতে পারে লোকেশন ফাইন্ডার। কী-ওয়ার্ড এবং সময় ব্যবহার করে আপনার অনুসন্ধানকেও আস্তে আস্তে ছোট করে আনা যায়।

ইউটিউব ডেটা ভিউয়ারের মতোই লোকেশন ফাইন্ডারও ভিডিওর অসংখ্য থাম্বনেইল দেখায়, যার মাধ্যমে রিভার্স সার্চ করে ছবির অন্যান্য তথ্য বের করা যায়।

অন্যরকম সার্চ

বেশিরভাগমানুষইইন্টারনেটেকোনোকিছুখোঁজারজন্যগুগলব্যবহারকরেন।গুগলেরক্ষমতাএবংতার  ডেটাবেইসেরবিশালআকারনিয়েকারোকোনোসন্দেহনেই।কিন্তুএরসত্যিকারেরশক্তিতখনইবুঝাযায়, যখনবিভিন্নঅপারেটরওলিমিটারদিয়েসেইসার্চকেআরোসংহতকরাযায়।

আপনার সার্চ ফলাফলকে বিভিন্ন ক্লাস্টার বা গুচ্ছে ভাগ করে দেখাবে ক্যারট ২।

 

অন্যদিকে ক্যারট আপনাকে তথ্য খুঁজতে সাহায্য করবে বিচিত্র ও দারুন সব উপায়ে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, একাধিক সার্চ ইঞ্জিন থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য যোগাড় করে তাদেরকে আলাদা গুচ্ছে ভাগ করা।  তথ্যের একেকটি গুচ্ছকে আলাদা ফোল্ডার হিসেবে দেখায় ক্যারট। যেমন, আপনি যদি “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা” লিখে সার্চ দেন, তাহলে ফলাফলে “সম্মেলন,” ”নন-প্রফিট” – এমন আলাদা ভাগে ভাগ করে তথ্য দেখাবে টুলটি।

আপনি চাইলে ফলাফলগুলোকে পাই-চার্ট হিসেবেও দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে একেকটি গুচ্ছ বা ক্লাস্টারকে সেই পাইয়ের একেকটি টুকরো হিসেবে দেখানো হবে। প্রতিটি টুকরোর আকার ঠিক হবে, ঐ বিষয়ে কতগুলো ফলাফল পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে।

ক্যারট ২ আপনাকে নানা ধরণের অ্যালগরিদম বা সূত্র ব্যবহার করে তথ্যকে গুচ্ছবদ্ধ করার সুযোগ দেবে। এই সূত্রগুলো অনেক সময়ই আপনার তথ্য অনুসন্ধানকে আরো ফলপ্রসূ করবে।

অ্যালাস্টেয়ার ওটার জিআইজেএন এর আইটি সমন্বয়কারী। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অসংখ্য ডেটা জার্নালিজম প্রকল্পে কাজ করেছেন এবং ইন্টারেক্টিভ ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশান প্রোগ্রামিংয়ে বিশেষজ্ঞ।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

প্রতিবেদন প্রকাশ বণ্টন ও প্রচার

সাংবাদিকতায় আস্থা ধরে রাখতে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ কীভাবে কাজ করছে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভ্রাম্যমান অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষ। উত্তর মেসিডোনিয়ায় এমন একটি বার্তাকক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের আস্থা অর্জন করেছে। তাঁরাই বার্তাকক্ষে ছুটে যাচ্ছেন সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে। সম্পৃক্ত হচ্ছেন নিজেরাও।

Toxic Waste Pollution Factory Bank

পরিবেশ ধ্বংসের পেছনে বিনিয়োগ করছে কারা-বিনিয়োগকারীদের খোঁজ করবেন যেভাবে : দ্বিতীয় পর্ব

ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি করছে বা দূষণে ভূমিকা রাখছে—সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের এমন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা বা প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। লক্ষ্য, নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও যেসব দেশে তাঁরা বিনিয়োগ করছে সেসব দেশের টেকসই উন্নয়ন। অনেক সময় খনিজ উত্তোলন ও বন উজাড় করার কাজেও বিনিয়োগ করে থাকে তারা। আর প্রচারণা চালায় উন্নয়ন বিনিয়োগ বলে। এই নিবন্ধটি পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।

জিআইজেসি২৫ ওয়েবসাইট এবং গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের তারিখ ঘোষণা করেছে জিআইজেএন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বৃহত্তম আসর বসছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। সম্মেলনের তারিখসহ, অংশগ্রহণের খুঁটিনাটি থাকল এই প্রতিবেদনে। এবারই প্রথম এই সম্মেলন এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর জিআইজেএন এ যাত্রায় সঙ্গে পেয়েছে মালয়েশিয়ার স্বাধীন সংবাদপত্র মালয়েশিয়াকিনিকে।

অনুসন্ধান পদ্ধতি

আবাসন খাত নিয়ে মেক্সিকোর পুরস্কারজয়ী প্রতিবেদন : যা শিখতে পারি

পানির মতো মৌলিক পরিষেবার সংকট থেকে মেক্সিকোর সিটির দক্ষিণে সান সেবাস্তিয়ান জোকোর মানুষ আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এককাট্টা হন। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে এই এলাকায় কী সঙ্কট সৃষ্টি করেছিল, তা অনুসন্ধানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যাবে এই নিবন্ধে।