সম্পাদকের বাছাই: ২০২১ সালে চীন ও তাইওয়ানের সেরা অনুসন্ধান
চীনা সাংবাদিকদের জন্য বছরটি বেশ কঠিন ছিল। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর ২০২১ সালের বৈশ্বিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে দেশটির অবস্থান ছিল শেষ থেকে চতুর্থ। টানা তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কারাবন্দী সাংবাদিকের দেশ হিসেবেও জায়গা করে নেয় চীন, যেখানে এখনো ৫০ জন রিপোর্টার কারান্তরীণ অবস্থায় আছেন। মহামারি প্রতিরোধের নামে দেশটির সরকার তার নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার করেছে। আর যারা নজরদারিতে ছিলেন তাদের মধ্যে সাংবাদিকেরা অন্যতম। বিবিসি’র খবর অনুযায়ী, চীনের হেনান রাজ্য, ফেস স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলছে, যা সাংবাদিক ও অন্যান্য “উদ্বেগজনক ব্যক্তিদের” সনাক্ত করতে পারে। এই ব্যবস্থায় “ট্রাফিক লাইট” পদ্ধতি অর্থাৎ সবুজ, হলদেটে এবং লাল রং দিয়ে সাংবাদিকদের আলাদা করা হবে। আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, “লাল” শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত সাংবাদিকদের “যথাযথভাবে সামলানোর” কথাও বলা হয়েছে।
এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চীনা সাংবাদিকেরা দুর্দান্ত অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চীনের অন্যতম বৃহৎ আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এভারগ্রান্ডের আর্থিক সংকট নিয়ে গভীর অনুসন্ধান; অতিদীর্ঘ ম্যারাথনে ২১ জন প্রতিযোগীর মৃত্যু; একটি ভূগর্ভস্থ নালার ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে ১৪ জনের মৃত্যু; চীনা ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোতে অতিরিক্ত কর্মঘন্টার (ওভারটাইম) অপব্যবহার; এবং একটি অসাধু নেটওয়ার্কে সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা।
২০২১ সালের এই তালিকায় আমরা এই অঞ্চল থেকে আটটি অসাধারণ অনুসন্ধান বাছাই করেছি। চীনে জবাবদিহিতার গল্প তুলে ধরতে যে ধরনের সহনশীলতা প্রয়োজন, তার-ই পরিচয় মিলবে এদের প্রতিটিতে। ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কখনো কখনো দেশটির সাংবাদিকদের সতর্কতার সঙ্গে বিষয় এবং সাক্ষাৎকার নির্বাচন করতে হয়। যেমন, ঝেংঝৌ প্রদেশের বিপজ্জনক ভূগর্ভস্থ পানির নালা অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিপোর্টারকে বেড়া টপকে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের গোপনে পাশ কাটিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে। একপর্যায়ে তাকে ধাওয়া করা হয় এবং তিনি অনেকটা দৌড়াতে দৌড়াতেই সম্পাদকের কাছে ছবি ও ভিডিও পৌঁছে দেন, পাছে প্রমাণ না হাতছাড়া হয়।
সত্য প্রকাশের এই সদিচ্ছা চীনের ওয়াচডগ সাংবাদিকদের সাহস ও আত্মনিবেদনের চিত্র তুলে ধরে।
চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আমরা তাইওয়ানের দুটি অনুসন্ধানও বাছাই করেছি: ডিপফেক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অনুসন্ধান এবং সুরক্ষিত হিনোকি গাছের অবৈধ নিধন উন্মোচন। তাইওয়ানে গণমাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে, এবং ফলস্বরূপ, দুটি প্রতিবেদনই তাইওয়ানের আইনি ব্যবস্থার ফাঁকফোকর এবং অন্যান্য পদ্ধতিগত অবিচারের সমালোচনায় স্পষ্টভাষী। প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরে- অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা একটি গণতান্ত্রিক এবং মুক্ত সমাজের সামাজিক অগ্রগতিতে কীভাবে অবদান রাখতে পারে।
এভারগ্রান্ডে যেভাবে “চীনের লেম্যান ব্রাদার্স” হয়ে উঠতে পারত
চীনের অন্যতম বৃহৎ আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না এভারগ্রান্ডে গ্রুপ প্রচণ্ডভাবে ঋণগ্রস্ত। প্রতিষ্ঠানটি তারল্য সংকটে ভুগছে এবং এর প্রভাব দেখা যায় চীনের অর্থনীতি ও বিশ্ব বাজারে। প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ চীনের জিডিপির ২ শতাংশের সমান, কর্মচারীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি, এবং নির্মাণাধীন প্রকল্পের সংখ্যা আটশ’র বেশি – যেগুলোর অধিকাংশই নগদ সংকটের কারণে স্থগিত হয়ে আছে। এছাড়া ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ের জন্য এভারগ্রান্ডের উপর নির্ভরশীল, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষের জীবিকা।
এই সংকট কীভাবে হলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে, এভারগ্রান্ডের একটি আর্থিক পণ্যের পুঞ্জীভূত বকেয়া থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির দ্রুত বেড়ে ওঠার পেছনে ব্যাপক ঋণ-দায়ের অবদান তলিয়ে দেখে কাইশিনের এই অনুসন্ধান। বেইজিংভিত্তিক এই আর্থিক ও ব্যবসায় বিষয়ক সংবাদমাধ্যম, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্যও পরিচিত। এভারগ্রান্ডের পুঞ্জীভূত সমস্যার চিত্র তুলে ধরার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী ও নির্বাহীদের পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট এবং আর্থিক খাতের ভেতরকার ব্যক্তিদেরও সাক্ষাৎকার নেয়।
“বাঁচা-মরার দৌড়”: প্রাণঘাতী আল্ট্রাম্যারাথনে ২১ প্রতিযোগীর মৃত্যু
২০২১ সালের মে মাসে নিম্ন তাপমাত্রা, তুষারপাত ও তীব্র বায়ুপ্রবাহের কারণে উত্তরপূর্ব চীনে আয়োজিত ৬০ মাইল দীর্ঘ একটি ম্যারথন প্রচণ্ড শীতের কবলে পড়ে। প্রতিযোগিতার অনভিজ্ঞ আয়োজকেরা সময়মত প্রতিযোগীদের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হন। ফলে ২১ জন মারা যান। বিষয়টি এখন বিচারের অপেক্ষায় আছে।
মৃতের সংখ্যা দেখে দৌড় প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িত সবাই হতবাক হন। এক মাস পর একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায়, তাতে আয়োজকদের দায়ী করা হয় এবং এই “নিয়মবর্হিভূত ব্যবস্থাপনা ও অপেশাদার কার্যক্রমের” সঙ্গে জড়িতদের তলব করা হয়। সরকারি তদন্ত, স্যাটেলাইট ডেটা, এবং বেঁচে ফেরা ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একজন চীনা সাংবাদিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এই রিপোর্ট লেখেন। আয়োজনের দুর্বলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা তুলে ধরতে এই স্টোরি ঘটনাটিকে পুনঃনির্মাণ করে। উঠে আসে, বিরূপ আবহাওয়াতে প্রতিযোগিতার আয়োজক কর্মকর্তাদের প্রস্তুতির অভাব এবং সাড়া প্রদানে ব্যর্থতার বিষয়টিও।
ঝেংঝৌ মেট্রো লাইন ৫ সংলগ্ন দেয়াল ধ্বস
২০২১ সালের জুলাইয়ে মধ্য চীনের হেনান প্রদেশে একটানা প্রবল বর্ষণ হয়। এতে প্রদেশটির রাজধানী ঝেংঝৌ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুষলধারায় বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয় এবং এর ফলে একটি পাতাল পার্কিং লটের দেয়াল ধ্বসে পড়ে। এতে ১৪ জন মারা যান। দেয়ালটি জলের একটি নালাকে ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
গবেষণা, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্থানীয় অভিবাসী ও শ্রমিকদের সম্মুখ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পার্কিং লট বিপর্যয়ের কারণ উন্মোচন করে সিচুয়ানের চেংদু শহরভিত্তিক অনলাইন সংবাদ প্রতিষ্ঠান, রেড স্টার নিউজ (একটি পর্বে তারা ভেতরে অনুপ্রবেশ করে এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা দৌড় প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়)। তারা দেখতে পান, দেয়ালে আরও ফাটল রয়েছে এবং সংস্কার করতে গিয়ে যে সাময়িক বেড়ি দেওয়া হয়েছে তা ভারীবর্ষণ ঠেকানোর উপযুক্ত নয়।
রেড স্টার নিউজ সরকারি নথিপত্রও হাতে পায়। তাতে দেখা যায়, পার্কিং লটটি তৈরির ১০ বছর আগেই পানি নিষ্কাশন সমস্যার কারণে এলাকাটিকে “কালো তালিকাভুক্ত” করা হয়।
সাংহাইয়ের “ছোট্ট লাল বাড়ির” পতন
চীনের অপরাধ জগতের রাজা ঝাও ফুকিয়াং তার সাংহাইয়ের “লিটল রেড হাউস”-কে কয়েক ডজন নারীর জন্য নরকে পরিণত করেছিলেন। তাদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করা হয়েছিল — এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রায় ২০ বছর ধরে এই অপরাধ নেটওয়ার্ককে রক্ষা করে আসছিলেন।
কাইশিনের বিস্ফোরক প্রতিবেদন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে অপরাধ নেটওয়ার্কের এই সখ্যতা তুলে ধরে। এর বিষয়বস্তু ক্ষমতাসীনদের জন্য এতটাই বিব্রতকর ছিল যে, প্রতিবেদনটি সরকারি নিয়ন্ত্রণের কবলে পড়ে। কাইশিনের রিপোর্ট অনুসারে, “চাকরির সাক্ষাৎকারের” কথা বলে, ঝাও তার পতিতালয়ে যেতে প্রলুব্ধ করতেন নারীদের। কখনো ধর্ষণ করতেন, খদ্দেরদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন, এবং চলে যেতে চাইলে তাদের যৌনকর্মের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিতেন। তাদের ডিম্বানু দান করতে বাধ্য করা হতো, তা কালো বাজারে বিক্রি করা হতো এবং এই কাজ করতে গিয়ে অন্তত একজন নারী বন্ধ্যা হয়ে পড়েন। এছাড়াও, তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের “ছোট্ট লাল বাড়িতে” নিমন্ত্রণ করতেন এবং নিরাপত্তা ক্যামেরায় তা গোপনে রেকর্ড করতেন। এই ভিডিও ব্যবহার করে তাদের জিম্মি করা হতো। ২০২০ সালের শেষ দিকে ধর্ষণ, ঘুষ ও প্রতারণাসহ ১০টি অভিযোগে তাকে দুই বছরের স্থগিতাদেশসহ মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
পিন্দুয়োদুয়োর কর্মচারীরা কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন?
২০২১ সালের জানুয়ারিতে চীনের বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পিন্দুয়োদুয়োর (পিডিডি) সম্ভাবনাময় তরুণ কর্মী জিয়াও তান ২৭ তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর মাত্র ১০ দিন আগে পিডিডির ২২ বছর বয়সী নারী কর্মী ঝাং, রাত ১টায় কাজ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে হঠাৎ মারা যান। পরপর এই ঘটনাগুলোর কারণে চীনের এই ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত কর্মঘন্টার সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগ জন্ম দেয়।
এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বেতন দেয়ার জন্য প্রসিদ্ধ বলে অনেক তরুণই প্রলুব্ধ হন। কিন্তু কর্মঘন্টা অনেক দীর্ঘ, যার নির্মম উদাহরণ হিসেবে “৯৯৬ কর্মঘন্টা পদ্ধতির” কথা বলা যায়। কর্মীরা সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কাজ করবেন, এমন প্রত্যাশা থেকে এই পদ্ধতি এসেছে। তানের বন্ধু ও সহকর্মীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে স্কয়ার চীনের এই স্টোরি পিডিডিতে যোগদানের আগে ও পরে তানের জীবনের পরিবর্তন তুলে ধরেছে। তানের জীবনের গতিপথ থেকে আমরা উচ্চ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিষ্ঠুর দৈনিক রুটিন সম্পর্কেও জানতে পারি, যেখানে আইনী ও সামাজিক সুরক্ষার বালাই নেই। এই সংস্কৃতিতে ভোরবেলার অতিরিক্ত কর্মঘন্টা এবং মাসে মাত্র দুদিন ছুটিই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানির নজরদারি সর্বত্র বিরাজমান এবং কর্মীদের লম্বা বিরতির জন্য বাথরুমে লুকিয়ে থাকতে হয়।
শেইন উন্মোচন
২০২০ ও ২০২১ সালে চীনের ব্যবসায় বিষয়ক পত্রিকায় ব্যাপক কাভারেজ পেতে শুরু করে আর্ন্তজাতিক “ফাস্ট-ফ্যাশন” ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান শেইন, যেটিকে ভক্তরা বলতেন স্প্যানিশ পোশাক জায়ান্ট জারার স্থানীয় সংস্করণ। কেউ কেউ একে বলে থাকেন, “চীনের সবচেয়ে রহস্যময় হাজার কোটি ডলারের প্রতিষ্ঠান।”
কিন্তু দুর্দান্ত সাফল্যের দাবি ও ব্যাপক প্রচারের আড়ালে আদতে কী চলছিল? বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে চীনের বড় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান নেটইজের সংবাদ পোর্টাল কিঙলিউ স্টুডিও। তারা দেখতে পায়, শেইনের প্রকৃত বার্ষিক আয়, কাগজে-কলমে দেখানো অংকের চেয়ে অনেক কম। প্রতিবেদনটি ওপেন সোর্স সাংবাদিকতার একটি ভালো উদাহরণ। এতে একাধিক সরকারি বাণিজ্যিক ডেটাবেস ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে। স্টোরিটি শেইনের প্রতিষ্ঠাতা জু ইয়াংতিয়ানের ইতিহাস উন্মোচন করেছে এবং জনসংযোগের লোকেরা কোম্পানিটির প্রোফাইল উঁচুতে দেখানোর জন্য যেসব গালগল্প প্রচার করছিলেন, সেগুলোকে সঠিক উপাত্ত ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়েছে। চীনা বাণিজ্যিক মিডিয়ার বিশৃঙ্খল চটকদারিত্ব এবং কর্পোরেট অসততার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততার ওপরও আলোকপাত করেছে অনুসন্ধানটি।
ডিপফেক ইন্ডাস্ট্রি অনুসন্ধান (তাইওয়ান)
তাইওয়ানে একদিকে ডিপফেক পর্নোগ্রাফি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, আর অন্যদিকে শত শত ভুক্তভোগীর ছবি ডিজিটালি বিকৃত করে মিথ্যাভাবে চিত্রিত করা হয়েছে৷ কিন্তু এই ভুক্তভোগীদের অনেকেই অপমান ও প্রতিশোধের ভয়ে নীরবতার পথ বেছে নিয়েছেন। একটি নকল ভিডিও কীভাবে ভুক্তভোগীর সত্যিকারের জীবনকে বিষিয়ে তোলে? তাইওয়ানের আইন এমন নিপীড়নমূলক আচরণের সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? এবং সুনাম ফেরাতে ভুক্তভোগীদের কী করার আছে?
তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যম মিরর মিডিয়া ছয় মাস ধরে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছে এবং অবৈধ এই শিল্পের আড়ালে থাকা ডিপফেক ভিডিও বিক্রেতাদের অনুসরণ করেছে। প্রকল্পটি ছয়জন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং উন্মোচন করেছে- তাইওয়ানের বিচার ব্যবস্থার ফাঁক গলে কীভাবে ডিপফেক তৈরি কার্যক্রম চলছে।
সুরক্ষিত হিনোকি বনে অপরাধমূলক বাণিজ্য (তাইওয়ান)
তাইওয়ান-ই উপক্রান্তীয় অঞ্চলের একমাত্র দেশ যেখানে হিনোকি বনের দেখা মেলে। শক্ত কাঠ আর অনন্য সুগন্ধির জন্য বছরের পর বছর ধরে বৃক্ষনিধন অভিযানের লক্ষ্যবস্তু ছিল এই গাছ। ১৯৯৩ সালে এসে এই গাছ কাটার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
যাই হোক, অবশিষ্ট গাছগুলো এখনও অবৈধ নিধনের শিকার হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আইন প্রয়োগের অব্যাহত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কাঠ চোরাকারবারিদের থামানো যায়নি। সাম্প্রতিককালে, বছরে দুইশ’র বেশি অবৈধ গাছ কাটার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে, যা পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ।
মূল্যবান হিনোকি কাঠের এই রহস্যজনক অবৈধ বাজার কীভাবে চলে? কারা এই গাছের চোরাকারবার করেন? সম্মুখ-সারির বনরক্ষীরা কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন? এসব প্রশ্নই খতিয়ে দেখেছে জিআইজেএনের সদস্য অলাভজনক নিউজ সাইট, দ্য রিপোর্টার। তারা এই গোপন বাণিজ্যের গভীরে গিয়েছে এবং বনের অভ্যন্তরে চলমান পরিবেশগত সংকট ও এই সংকটের পেছনের কাঠামোগত বিষয়গুলো পাঠকদের বুঝতে সাহায্য করেছে।
আরও পড়ুন
৬ টিপস হোয়েন ইনভেস্টিগেশন লিড টু চায়না
চীনা “গুগল ম্যাপ” ঘেঁটে জিনজিয়াংয়ের বন্দীশিবির অনুসন্ধান
সম্পাদকের বাছাই: চীন ও তাইওয়ান থেকে ২০২০ সালের সেরা অনুসন্ধান
জোয়ি চি জিআইজেএন-এর চীনা ভাষা সম্পাদক। সাংবাদিকতায় তাঁর আছে নয় বছরের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে তিন বছর তিনি কাজ করেছেন গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায়। তিনি ইনিশিয়াম মিডিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সেখানকার দলটিও তাঁর গড়া এবং তিনি সেখানে প্রতিদিনের সংবাদ পরিকল্পনা তৈরি করতেন।