Math concept - Mathematical formulas on blue background. 3d rendering
রিপোর্টিংয়ে গাণিতিক ভুল এড়াতে ৪ পরামর্শ
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
এই পোস্ট মূলত হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের গণমাধ্যম, রাজনীতি ও পাবলিক পলিসি বিষয়ক শোরেনস্টাইন সেন্টারের প্রকাশনা শাখা দ্য জার্নালিস্টস রিসোর্সে প্রকাশিত হয়েছিল এবং অনুমতি নিয়ে এখানে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।
রাষ্ট্রীয় তহবিল, অপরাধের হার ও মতামত জরিপের ফলাফলের মতো সংখ্যার পরিবর্তন নিয়ে রিপোর্টের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সেই সংখ্যা কতটা বেড়েছে বা কমেছে– পাঠককে তা জানানো জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। তবে তার আগে আপনাকে জানতে হবে “শতাংশ পরিবর্তন” এবং “শতাংশ পয়েন্ট পরিবর্তন”-এর মধ্যে পার্থক্য কী।
সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টিগ্রিটির জ্যেষ্ঠ সম্পাদক জেনিফার লাফ্লো, তাঁর ক্লাস ও কর্মশালায় এক দশকের বেশি সময় ধরে সংবাদ স্টোরিতে পরিসংখ্যানের ব্যবহার শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, “শতাংশ পরিবর্তন ও শতাংশ পয়েন্ট পরিবর্তন – বিষয় দুটোকে সব সময় গুলিয়ে ফেলা হয়।” তিনি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেটা সাংবাদিকতাও পড়ান। গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধারণাগুলো আয়ত্ত করতে তাঁর দেওয়া এই চারটি পরামর্শ সহায়ক হবে।
১. মনে রাখবেন “শতাংশ পরিবর্তন” (পার্সেন্টেজ চেঞ্জ) দিয়ে পরিবর্তনের হার বোঝানো হয়। আর পরিবর্তনের পরিমাণ নির্দেশ করতে “শতাংশ পয়েন্ট পরিবর্তন” (পার্সেন্টেজ পয়েন্ট চেঞ্জ) ব্যবহার করুন।
আগের তুলনায় একটি সংখ্যায় কতটা পরিবর্তন হয়েছে– তা তুলে ধরতে আমরা “শতাংশ” ব্যবহার করি।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, রাজ্যের আইনপ্রণেতারা ২০২১ সালে একটি নতুন ট্রাফিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অর্থায়নের জন্য ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছেন৷ এবছর, তারা ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট ধরেছেন ৷
সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ট্রাফিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তহবিল বেড়েছে প্রায় ২৭% ([৮ মিলিয়ন ডলারকে ৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ভাগ] x ১০০)।
ধাপ ধরে ব্যাখ্যা করা এই নির্দেশাবলী অনুসরণ করে অঙ্কটি আপনি নিজেই করতে পারবেন। আরও সহজে করতে চাইলে অনলাইনে শতাংশ পরিবর্তন হিসেবের ক্যালকুলেটর খুঁজে নিতে পারেন।
দুটি শতাংশ সূচক সংখ্যার মধ্যে তুলনার ক্ষেত্রে “শতাংশ পয়েন্ট” ব্যবহার করুন। যেমন, ১৭% ও ৪৪% এর মধ্যে ২৭ শতাংশ-পয়েন্ট পার্থক্য আছে।
উল্লেখ্য, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রীতিতে সংবাদ স্টোরিতে “শতাংশ” বোঝাতে প্রতীক (%) ব্যবহার করতে বলা হয়, আর “শতাংশ পয়েন্ট” কথাটি পুরোপুরি লিখতে বলা হয়।
২. শতাংশসূচক সংখ্যার মধ্যে তুলনা করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারণ এই কাজে অনেকেই ভুল করেন।
শতকরা হারের মধ্যে যোগ বা বিয়োগের ক্ষেত্রে শতাংশ পয়েন্ট ব্যবহার করে ফলাফল তুলে ধরুন — যেমন, ২০২১ সালে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের শতকরা হার থেকে ১৯৮১ সালের শতকরা হার বিয়োগ।
“দুইটি শতাংশের মধ্যে তুলনা করলে এটি হবে শতাংশ পয়েন্ট,” লাফ্লো বলেন।
একটি কাউন্টির স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ যদি রিপোর্টে বলে যে সেখানে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের হার ১৯৮১ সালে ছিল ১% এবং ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ৫% – তাহলে সঠিক হবে যদি বলেন, এ সময়ের মধ্যে রোগ নির্ণয়ের হার ৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
খেয়াল করুন, রোগ নির্ণয় ৪% হারে বাড়েনি। এখানে রোগ নির্ণয়ের পরিমাণ শতকরা হিসেবে ৪০০% বা পাঁচগুণ বেড়েছে।
এ ধরনের ভুল হরহামেশা হয়। তাই লাফ্লো সাংবাদিকদের শতাংশ-পরিবর্তনের পরিসংখ্যান একাধিকবার যাচাই করতে বলেছেন – তা সে সহকর্মী সাংবাদিকদের সংবাদ স্টোরিতে হোক অথবা সরকারি প্রতিবেদন ও অন্যান্য নথিতে।
“এ ধরনের সমস্যার একটি হলো: অনেক সময় সংবাদমাধ্যমে [এ ধরনের ভুলগুলো] দেখার মত কেউ থাকে না,” তিনি ব্যাখ্যা করেন। “একজন প্রতিবেদক হয়ত বছরের পর বছর ধরে এই ভুল করেছেন অথচ বুঝতেই পারেননি যে, তারা যা বলছেন তা ভুল।”
৩. সংখ্যাবহুল স্টোরি করার সময় অর্থ বা প্রেক্ষাপটে আপোষ না করে কিছু সংখ্যা বাদ দেওয়ার উপায় খুঁজুন। যেমন, স্থানীয় কলেজের ব্যয় ১০০% বেড়েছে না বলে রিপোর্টে বলুন এটি দ্বিগুণ হয়েছে।
কারণ সংখ্যা-বহুল স্টোরি পাঠকশ্রোতাদের বিভ্রান্ত ও বিহবল করে তুলতে পারে। অনেক পাঠক সেগুলো এড়িয়ে যান। ভেবেচিন্তে ঠিক করুন, কোন সংখ্যাগুলোতে আপনি পাঠকের মনোযোগ টানতে চান৷ পয়েন্টার ইনস্টিটিউট ও ডোনাল্ড ডব্লিউ. রেনল্ডস সেন্টার ফর বিজনেস জার্নালিজম- দুইটি প্রতিষ্ঠানই কোনো অনুচ্ছেদে তিনটির বেশি সংখ্যা ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
পাঠক যেন দ্রুত তথ্য বুঝতে পারেন, সেজন্য লাফ্লো কিছু সংখ্যার জায়গায় শব্দ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আপনি যখন বলবেন একটি সংখ্যা দ্বিগুণ, তিনগুণ বা চারগুণ বেড়েছে, তখন অনেকেই তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারবেন, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন। একটি সংখ্যা ১০০%, ২০০% বা তারও বেশি বেড়েছে শুনতে মানুষ ততটা অভ্যস্ত নয়, তাই কিছু পাঠককে থামতে হবে আর অর্থ উদ্ধারে কিছু অঙ্ক কষতে হবে।
লাফ্লো বলেন, “আমি সবসময় সাংবাদিকদের যতটা সম্ভব সহজ শব্দ ব্যবহারের পরামর্শ দিই।”
৪. আপনার গণিতের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ নিন। গুরুত্বপূর্ণ গণিতের ধারণা সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া সাংবাদিকদের ভুল তথ্য ও গাণিতিক ভুল সনাক্তে সহায়তা করে।
সাংবাদিকতা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্টার ও সম্পাদকদের গণিতের দক্ষতা বাড়াতে এবং নতুন দক্ষতা তৈরিতে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ব্যক্তি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য রিসোর্সের সুবিধা দেয়। এখানে কয়েকটি দেওয়া হলো:
- দ্যা পয়েন্টার ইনস্টিটিউটের “সাংবাদিকদের জন্য গণিত সার্টিফিকেট” শীর্ষক একটি চার ঘন্টার অনলাইন কোর্স আছে। কোর্সটির মূল্য ২৯.৯৫ মার্কিন ডলার। অংশগ্রহণকারীরা কোর্স সমাপ্তির পর একটি সার্টিফিকেট পেয়ে থাকেন।
- সাংবাদিকেরা অনলাইনভিত্তিক শিক্ষামূলক সাইট কোর্সেরা ও এডএক্স-এ ডেটা ও সংখ্যা-সাক্ষরতার ওপর বিনামূল্যে কোর্স করতে পারেন।
- ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্স (আইআরই) সাধারণত তাদের বার্ষিক সম্মেলনে কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে পরিসংখ্যানগত সাক্ষরতা নিয়ে বিশেষ আয়োজন থাকে। ২০২১ সালে আইআরই-এর বার্ষিক ডেটা সাংবাদিকতা সম্মেলনে, লাফ্লো এবং রয়টার্সে তাঁর সহকর্মী জাইমি ডাউডেল “আপনার স্টোরিতে কীভাবে পরিসংখ্যান ব্যবহার করবেন” শীর্ষক সেশনে নেতৃত্ব দেন।
টেম্পল ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ জন অ্যালেন পাওলোস ২০০৪ সালে এবিসি নিউজে তাঁর লেখা একটি প্রবন্ধে গাণিতিক সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আংশিক বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশিত খবরে একটি গাণিতিক ত্রুটি থাকার কারণে কীভাবে সেই পরিকল্পনাটির প্রভাব কমে গিয়েছিল– সেটিও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, “সাধারণত পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রায় সব সময় বলা হয় যেন সামাজিক নিরাপত্তা করের ২% বেসরকারি খাতে সরিয়ে নেওয়া হয়। আরেকটু সামনে তাকালে কয়েকটি স্টোরি চোখে পড়ে যাতে উঠে আসে, আমেরিকানদের গড় করযোগ্য আয়ের ৬.২% সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলে যায়, যা কমিয়ে ৪.২% করা হবে। এখানে ২ শতাংশ পয়েন্ট কমানো হচ্ছে — ২% নয়; পরিমাণে আসলে বরং ৩২% কমেছে! এই পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা রাজস্ব অনেকটা পিছিয়ে পড়বে।”
পরবর্তীতে পাওলোস “এ ম্যাথমেটিশিয়ান রিডস দ্য নিউজপেপার” শীর্ষক একটি বই লিখেছিলেন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে৷ বইটিতে তিনি যৌক্তিক ভুল ও সংখ্যাকে ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে– এমন বিষয়গুলো তুলে ধরে সংবাদ কভারেজ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন৷
অন্য যে বইগুলো দেখা যেতে পারে
- নাম্বার্স ইন দ্য নিউজরুম: ইউজিং ম্যাথ অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স ইন নিউজ। বইটির লেখক বর্তমানে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ওয়াল্টার ক্রংকাইট স্কুল অব জার্নালিজম অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশনের অধ্যাপক ও নাইট চেয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনুসন্ধানী সাংবাদিক সারা কোহেন।
- হাউ নট টু বি রং: দ্য পাওয়ার অব ম্যাথমেটিকাল থিঙ্কিং। বইটির লেখক ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের গণিতের জন ডি. ম্যাকআর্থার অধ্যাপক জর্ডান এলেনবার্গ।
- ড্যাম্ড লাইস অ্যান্ড স্ট্যাটিক্স: আনট্যাংলিং নাম্বার্স ফ্রম দ্য মিডিয়া, পলিটিশিয়ান, অ্যান্ড অ্যাক্টিভিস্টস। বইটির লেখক ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়্যারের সমাজবিজ্ঞান ও ফৌজদারি বিচার বিষয়ের অধ্যাপক জোয়েল বেস্ট।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উত্থান
এইট সিম্পল ওয়েজ টু লেট দ্য স্প্রেডশিট ডু দ্য ম্যাথ সো ইউ ক্যান ফোকাস অন দ্য স্টোরি
ইন্টারপ্রেটিং ডেটা: টিপস টু মেক শিওর ইউ নো হাও টু রিড দ্য নাম্বারস
ডেনিস-মেরি অর্ডওয়ে ২০১৫ সালে দ্য জার্নালিস্টস রিসোর্সে যোগদান করেছেন। এর আগে তিনি অর্লান্ডো সেন্টিনেল ও ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়ারার সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্য আমেরিকার কয়েকটি সংবাদপত্র ও রেডিও স্টেশনে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ইউএসএ টুডে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মত পত্রিকাতেও তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে।