প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উত্থান

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

বিজ্ঞান সাংবাদিকতা

আমাজন অববাহিকা থেকে আসা দূষণের প্রভাবে সারগাসুম জন্ম নিচ্ছে ব্যাপক হারে, আর ভেসে আসা সেই বৃহদাকার শৈবালে ভরে গেছে ক্যারিবীয় সমুদ্রতট। ছবি: শাটারস্টক

অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ে বিজ্ঞান সাংবাদিকতা এবং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান টুলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এমনকি সন্দেহজনক বৈজ্ঞানিক ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রেও সাংবাদিকরা এসব টুল কাজে লাগাচ্ছেন।

অনুসন্ধানী বিজ্ঞান সাংবাদিকতার এই সম্ভাবনাময় নতুন ক্ষেত্রে ডেটা মাইনিং ও স্যাটেলাইট ছবির ব্যবহার প্রায়ই চোখে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও কোভিড-১৯ মহামারির এই যুগে, স্বাস্থ্য ও পরিবেশভিত্তিক স্টোরি তৈরিতে এ ধারার  রিপোর্টিংয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) নাইট সায়েন্স জার্নালিজম প্রোগ্রামের পরিচালক ডেবোরা ব্লাম বলেন, এসব টুল এবং “প্রবণতা চিহ্নিত করার” সহজাত দক্ষতা ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকেরা অনেক বিষয়ে যুগান্তকারী উপসংহার টানতে পারেন। 

“অনেক সাংবাদিক আছেন, যাঁরা ডেটা মাইনিং করেন – অর্থ্যাৎ ডেটাবেসে গভীর অনুসন্ধান চালান এবং কার্যকরভাবে ডেটা সংগ্রহ করেন – যা এখন ভালো অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের মূল অংশ হয়ে যাচ্ছে,” বলেন ব্লাম। “প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট আমাদের সামনে এমন অনেক টুল এনে দিয়েছে, যা ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানকে যাচাই করা যায়। যেমন, কোনো  বিশেষ (রাসায়নিক) যৌগ নিয়ে অনুসন্ধানের বেলায় আমি পাবমেডগুগল স্কলার ব্যবহার করি, যাতে প্রতিটি প্রশ্নের পিছনে থাকা বিজ্ঞান এবং উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা যায়।”

আদতে অনেক অনলাইন ডেটাবেস ও রিসোর্স আছে, যা অনুসন্ধানী বিজ্ঞান সাংবাদিকতায় কাজে লাগে। পাবমেড এমন একটি ডেটাবেস, যেখানে প্রাসঙ্গিক বায়োমেডিকেল রচনার তিন কোটি ৩০ লাখের বেশি উদ্ধৃতি ও সারাংশ মিলবে। এমন আরও কয়েকটি হলো: ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) পরিচালিত টক্সিকস রিলিজ ইনভেন্টরি; কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও সিটি কলেজ অব নিউ ইয়র্ক পরিচালিত টক্সিক ডকস্; সান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার ইন্ডাস্ট্রি ডকুমেন্টস লাইব্রেরি, যেখানে কর্পোরেট নথি এবং অভ্যন্তরীণ বা অপ্রকাশিত রিপোর্টও পাওয়া যায়; এবং বিপজ্জনক খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য চিহ্নিতকরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, সেফটি গেট

নতুন টুল ও কৌশল

আঞ্চলিক পরিবেশ-সংবাদ সাইট ইনফো-আমাজনিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, ব্রাজিলের গুস্তাভো ফালেইরোস অবশ্য অনুসন্ধানী বিজ্ঞান সাংবাদিকতায় স্যাটেলাইট ছবি এবং অন্যান্য রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহারের বড় প্রবক্তা। এই ধারা জিও সাংবাদিকতা নামেও পরিচিত। তিনি বলেন, “পরিবেশ সম্পর্কে জানা এবং চারপাশের দ্রুত ঘটে চলা পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন-ই ধরিত্রী বিজ্ঞান, জিওস্পেশাল বিশ্লেষণ, সব রকমের স্যাটেলাইট ও রিমোট সেন্সিং ডেটা এবং ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও ইন্টার‌অ্যাকটিভ ম্যাপিং টুল ব্যবহারের দিকে নিয়ে গেছে সাংবাদিকদের।”  

সাংবাদিকতার এই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধানী কৌশল ব্যবহার করে প্রতিবেদন তৈরির অনেক উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে, গত বছরের একটি ধারাবাহিকের দিকে ইঙ্গিত করেন ফালেইরোস। ইন্টারনিউজের আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (ইজেএন), আমি যার নির্বাহী পরিচালক, এবং আমেরিকার অন্যান্য সাংবাদিকদের সহযোগিতায়, এটি তৈরি করে ইনফোআমাজনিয়া। এতে তুলে ধরা হয়, আমাজন অববাহিকা থেকে আসা দূষণের প্রভাবে সাগরে সারগাসুম জন্ম নিচ্ছে ব্যাপক হারে, আর ভেসে আসা সেই বৃহদাকার শৈবালে কীভাবে ভরে গেছে ক্যারিবীয় সমুদ্রতট। 

ফালেইরোস ব্যাখ্যা করে বলেন, এই সিরিজে “বিশ্বের দীর্ঘতম শৈবাল বিস্তার, এবং বিষাক্ত বর্জ্যের উৎস হিসেবে ব্রাজিলের তাপাজোস অঞ্চলে চলমান খনিজ আহরণ – উভয় বিষয়কে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে উচ্চ-রেজুলুশনের স্যাটেলাইট ছবি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” তিনি বলেন, “আর্থরাইজ মিডিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বের বদৌলতে আমরা এটি করতে পেরেছি।” উচ্চ প্রযুক্তির টুল দিয়ে পরিবেশ সাংবাদিকতায় সহায়তা করে এই ডিজিটাল এজেন্সি। 

চীনের কারাগার নিয়ে অনুসন্ধানে এমন একটি মানচিত্র ব্যবহার করে বাজফিড নিউজ। ছবি: স্ক্রিনশট

ফালেইরোস বলেন, এই কৌশলগুলো শুধুমাত্র বিজ্ঞানভিত্তিক স্টোরি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে না। চীনের জিনজিয়ান প্রদেশের উইঘুর ক্যাম্প নিয়ে বাজফিড নিউজের পুলিৎজার-জয়ী প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট ছবি ও থ্রিডি আর্কিটেকচারাল মডেল বিশ্লেষণ করে বন্দীশিবিরগুলোর প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয়। পাবলিক ম্যাপে এই অঞ্চলগুলোর ছবি অস্পষ্ট করে দিয়েছে গুগল ও বিং। তাই প্ল্যানেটের ছবি ব্যবহার করে বাজফিড দেখিয়েছে, চীন সরকার যা বলছে, বন্দীশিবিরগুলো তার চেয়ে অনেক বড়। তিনি আরও বলেন, “বিজ্ঞানীরা এধরনের গবেষণা করত না।”  লাভজনক প্রতিষ্ঠান প্লানেট, মূলত বিশদ স্যাটেলাইট ছবি যোগান দেয়। 

পুলিৎজার সেন্টারের রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্কের হয়ে এবং প্ল্যানেট ও নরওয়ের কে-স্যাটের সহযোগিতায়, ফালেইরোস এখন স্পেকট্রোস্কোপিক (যা দিয়ে বৃক্ষরাজির ঘনত্বের পরিবর্তন মাপা যায়) ফিল্টারের সাহায্যে উন্নততর ছবি বিশ্লেষণ ও পরিমাপক তথ্য সংগ্রহের কৌশল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরইমধ্যে, ডেটা সাংবাদিকতার কৌশল কাজে লাগিয়ে পরিবেশ রিপোর্টিং উন্নত করার উপায় নিয়ে কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সমন্বয়ে গঠিত মেকং অঞ্চলের সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইজেএন। সম্প্রতি পরিবেশ ও জলবায়ু সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানে সহায়ক ডেটাসেটের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। অন্য যেসব গ্রুপে দরকারি রিসোর্স পাবেন: সোসাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টস (এসইজে), অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ কেয়ার জার্নালিস্ট, হেল্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক, ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারস অ্যান্ড এডিটরস, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব সায়েন্স জার্নালিস্টস ও প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দেশীয় সংস্থাগুলো এবং অবশ্যই গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক

নতুন নতুন স্টোরি উদঘাটন ও গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার টানতে গিয়ে বিজ্ঞান সাংবাদিকতার কৌশল ব্যবহার করেছেন ব্লাম-ও। যেমন, শিশু খাদ্যে সয় ফর্মুলা ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে আনডার্ক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তাঁর প্রতিবেদন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “সয় ফর্মুলা এবং শিশুর হরমোনতন্ত্রের ওপর এর প্রভাব নিয়ে কয়েকটি লেখাসহ বেশ কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ঘাঁটছিলাম। এক সময় সয়া দুধে এস্ট্রোজেনের পরিমাণ নিয়ে গবেষণা শুরু করি এবং বুঝতে পারি, মানুষের বেড়ে ওঠা নিয়ে একটি বড় পরীক্ষা এটি। সয় ফর্মুলায় শিশুর জন্য ১১ হাজার উপাদান আছে, অথচ শিশুকে সয় ফর্মুলা দেওয়ার প্রভাব নিয়ে কেউ পরীক্ষা করেনি।” তিনি বলেন,  “আমি একজন ফেডারেল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলি এবং তাকে সরাসরি প্রশ্ন করি; তিনি স্বীকার করেন, আমরা মূলত শিশু স্বাস্থ্যের উপর একটি অপরিকল্পিত পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।”

 ইনসাইড ক্লাইমেট নিউজের রিপোর্টার লিজা গ্রস, এর আগে পিএলওএস বায়োলজির বিজ্ঞান সাংবাদিক ছিলেন এবং তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষি নিয়ে রিপোর্টিংয়ে পারদর্শী। নিজের রিপোর্টিং থেকে তিনি আরেকটি উদাহরণ তুলে ধরেন: “মানুষ ভাবত, সবচেয়ে ক্ষতিকর কীটনাশক বুঝি শুধু ফ্রেসনো অঞ্চলেই ব্যবহার করা হচ্ছিল, তবে জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের কাছ থেকে আমি কিছু ডেটা সংগ্রহ করতে সক্ষম হই, এবং তাতে দেখা যায়, কোথায় কোন কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে,” এবং বিপজ্জনক পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছিল ভেনচুরা কাউন্টিতে, যা ক্যালিফর্নিয়ার কৃষির কেন্দ্রস্থল এবং বেশ কিছু বিদ্যালয়ের কাছাকাছি। 

গ্রস দাবি করেন, “আমরা এমন তথ্য ও গবেষণা থেকে উপসংহার টানতে পারি, বিজ্ঞানীরা এখনো যার নাগাল পায়নি।”

আনডার্ক ম্যাগাজিনের দ্য গ্রেট সয় ফর্মুলা এক্সপেরিমেন্ট, শিশুদের সয়া দুধ দেওয়ার সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাব উন্মোচন করে। ছবি: শাটারস্টক

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব

ব্লাম, ফালেইরোস এবং গ্রস সবাই বিশ্বাস করেন যে কোভিড ১৯-এর আবির্ভাব, অনুসন্ধানী বিজ্ঞান সাংবাদিকতাকে ব্যাপকভাবে বিকশিত করেছে, কারণ সাংবাদিকরা যে মৃত্যু-হারের ডেটা জড়ো করার চেষ্টা করছেন, তা অনেক সরকার হয় সংগ্রহ করতে পারছে না অথবা সক্রিয়ভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। মহামারির সময় মাত্রাতিরিক্ত মৃত্যু নিয়ে ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিনের রিপোর্ট উল্লেখযোগ্য একটি দৃষ্টান্ত। ব্রাজিলে সরকারের দেয়া তথ্য বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় ফোলিয়া এবং ও-গ্লোবো পত্রিকা একসঙ্গে মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান সংগ্রহের যে চেষ্টা করছে সেই উদাহরণ যোগ করেন ফালেইরোস। 

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কীভাবে বিবর্তিত হচ্ছে তার একটি ভালো উদাহরণ তুলে ধরেছে এই মহামারি: বিশেষ করে, বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত অন্যায় এবং সেখান থেকে স্টোরি বের করে আনার ক্ষেত্রে। তা সে গবেষণাগারে হোক বা মানুষ ও পশুর অন্যান্য সংস্পর্শে, যেমন উহানের মাংসের বাজার – কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎপত্তিকে ঘিরে বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করে ব্লাম ও গ্রস বলেন, বিজ্ঞানীরা একটি  জবাবকে প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট বলে মত দেওয়ার পরও, সেখানে সাংবাদিকসুলভ সংশয় ধরে রাখার একটি উদাহরণ এটি। 

গ্রস বলেন, “গবেষণাগার থেকে ভাইরাস বেরুনোর তত্ত্ব যেসব বিজ্ঞানী বাতিল করে দিয়েছিলেন, সম্ভবত কোভিড কভার করা সাংবাদিকরাই তাদের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন, যতক্ষণ না স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডেভিড রেলমান বলেছেন যে আমাদের এটি খতিয়ে দেখা উচিত।”

ইকোনোমিস্টের অতিরিক্ত মৃত্যুর ডেটা ট্র্যাকার। ছবি: স্ক্রিনশট

বিজ্ঞানী ও স্বয়ং বিজ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা

ব্লাম বলেন, “লিওন লিডারম্যান [নোবেল পুরস্কার জয়ী পদার্থবিদ] বলেছেন, সবাই আগে বিজ্ঞানীদের কথা মেনে নিত, তবে এখন আমরা কিছু ফলাফল নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আরও বেশি প্রশ্ন করার ইচ্ছা দেখতে পাই এবং সাংবাদিকদের কভারেজ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকেও একধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। আমাদের নিছক বিজ্ঞানের আবিষ্কার উদযাপনের চিয়ারলিডার হওয়া উচিত নয়। আমরা স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করি এবং আমাদের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত পাঠকদের কাছেই।”

বিজ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কার ও খোদ বিজ্ঞানীদের নৈতিক আচরণ অনুসন্ধান করেছেন, এমন অনেক সাংবাদিকের উদাহরণ দেন ব্লাম। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: সম্প্রতি প্রকাশিত “দ্য আইসপিক সার্জন” বইয়ের লেখক স্যাম কীন; দফায় দফায় বিজ্ঞানীদের যৌন হয়রানির ঘটনা উন্মোচন করা সাংবাদিক আজিন ঘোরায়শি; এবং আরও পেছনে ফিরে তাকালে রবার্ট গ্যালোর এইচআইভি ভাইরাস আবিষ্কারের দাবি নিয়ে অনুসন্ধান করা জন ক্রুডসন। আরেকটি ভালো উদাহরণ হলো মেডিকেল গবেষণায় কোষ রেখার ব্যবহার নিয়ে রেবেকা স্ক্লুটের অনুসন্ধান, যা তাঁর “দ্য ইমমোরটাল লাইফ অব হেনরিয়েটা ল্যাকস্” বইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

আবার বলছি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও গবেষকদের নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিকেরা বেশ কিছু অনলাইন উৎস ব্যবহার করতে পারেন: ইভান ওরানস্কির রিট্র্যাকশন ওয়াচ, যেখানে বাতিল হওয়া একাডেমিক পেপার এবং কারা, কেন বারবার একই অপরাধ করছে- এ সম্পর্কে আপডেট পাবেন; এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির চার্লস সেইফির বিজ্ঞান অনুসন্ধান শিক্ষা। কিছু সরকারি বৈজ্ঞানিক সংস্থার কাজ আরও নিবিড়ভাবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন গ্রস; যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনস্ট্রেশন এবং এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি।

এই ধরনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা শুধুমাত্র প্রচলিত সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠান থেকে আসে না। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রোপাবলিকা, ইজেএন, চায়না ডায়লগ, মোঙ্গাবে, অক্সপেকার্স, ইনফোনাইল, দ্য এনভায়রনমেন্টাল রিপোর্টিং কালেক্টিভ, এবং এধরনের কাভারেজে অর্থ সহায়তা যোগানো সংস্থা থেকেও একই প্রয়াস দেখা যায়। কাউন্সিল ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স রাইটিং প্রদত্ত ২০ হাজার ডলারের শ্যারন বেগলে সায়েন্স রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ডের উদাহরণ টেনে  ব্লাম বলেন, “কোভিড এবং বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, আমরা আরও অনেক ফাউন্ডেশনকে, বিভিন্নভাবে, বিজ্ঞান সাংবাদিকতায় টাকা যোগান দিতে দেখছি।”

গ্রস আরও বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা নির্ভর স্টোরির জন্য আরও অনেক আর্থিক উৎস আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক (এফইআরএন), ফান্ড ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, টাইপ ইনভেস্টিগেশন্স, এসইজে ফান্ড ফর এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিজম, সায়েন্স ম্যাগাজিনের ফান্ড ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং, এবং অ্যালিসিয়া প্যাটারসন ফেলোশিপ। ইউরোপে, আর্কেডিয়া ফান্ড নতুন আর্থ ইনভেস্টিগেশন্স প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে, যা বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অনুদান দিচ্ছে। 

ব্লাম, এমন আরও উদ্যোগ দেখতে চান এবং বিশ্বাস করেন, পর্যবেক্ষক হিসেবে সাংবাদিকেরা ডেটা ও ঘটনার মধ্যে নির্দিষ্ট প্রবণতা দেখতে পান, যা অন্যদের চোখ এড়িয়ে যায়। বিজ্ঞানভিত্তিক ঘটনা ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুসন্ধানে সাংবাদিকদের অবদান রাখার এখনো অনেক ক্ষেত্র আছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সাংবাদিকদের ঘটনার পেছনের বিজ্ঞান বুঝতে হবে এবং তথ্যের ব্যাপারে অতি সতর্ক হতে হবে।”

গভীরভাবে তথ্যসমৃদ্ধ বিজ্ঞান সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা দেখেন ফালেইরোসও। তিনি বলেন, “বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে আমরা যা দেখছি – যেমন দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিপাতে আমাজনের প্রভাব বা আটলান্টিকে শৈবালের দ্রুত বর্ধন – তা ক্রমেই আরো জটিল ও বৈশ্বিক হয়ে উঠছে। তাই এ ধরনের অনুসন্ধানী বিজ্ঞান সাংবাদিকতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।”

আরও পড়ুন

জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া

নিউ ডেটা টুলস অ্যান্ড টিপস ফর ইনভেস্টিগেটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ

ভূ-সাংবাদিক গুস্তাভো ফালেইরোসের প্রিয় অনুসন্ধানী টুল


জেমস ফান জিআইজেএনের সদস্য সংগঠন, ইন্টারনিউজের আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক। এছাড়াও তিনি বার্কলিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। সেখানে তিনি আর্ন্তজাতিক পরিবেশ সাংবাদিকতা পড়ান। 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

data journalism missing piece mistake

ডেটা সাংবাদিকতা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ডেটা সাংবাদিকতার ১০ সাধারণ ভুল

যে কোনো বিষয়ে জোরালো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে ডেটা সাংবাদিকতা পুরো সংবাদের জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ডেটা সাংবাদিকতা কি সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে? জানতে পড়ুন রোয়ান ফিলিপের বিশ্লেষণ।

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।