প্রাণঘাতী আন্দোলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি অনুসন্ধান: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের ফলে পালাতে বাধ্য হন। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা প্রাণঘাতী ওই আন্দোলনে অন্তত পাঁচজন সাংবাদিক নিহত এবং শতাধিক আহত হন।
বিক্ষোভের শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি বাতিলের শান্তিপূর্ণ দাবির মাধ্যমে। যা ক্রমশ সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ নেয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিকরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্বশীল প্রতিবেদন করেছেন। সরকারপক্ষ ও আন্দোলনকারীদের চলমান সহিংস সংঘর্ষে তাঁরাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আন্দোলন চলাকালে নয়টি টেলিভিশন চ্যানেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বছরের শেষ দিকে ডেইলি স্টারের প্রধান কার্যালয় এবং প্রথম আলোর একটি অফিসেও হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনা ঘটার আগেই আরএসএফের মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। প্রতিবেদনে দেশের সংবাদমাধ্যমের পরিবেশকে “বৈরী” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বাংলাদেশি সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন ধরে চলা সরকারি সেন্সরশিপ মোকাবিলার কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি কম বেতন আর গণহারে ছাঁটাইয়ের মতো সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছেন। তাই সংবাদকর্মী হিসেবে আমরা সবাই বেশ ভালোভাবেই জানি যে সংবাদ জগতে উদ্বেগজনক বাস্তবতা বিদ্যমান।
দেশের সংবাদমাধ্যমের মালিকানা মূলত সরকারপন্থী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। যাঁরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করার বদলে দমন করতেই বেশি আগ্রহী। ফলে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। আস্থা হারানোর কারণে মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন। তবে এহেন পরিস্থিতি বদলানোর প্রচেষ্টা খুব সীমিত হলেও একেবারে ছিল না এমনটা বলা যায়না।
এ বছরের প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, সাংবাদিকেরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। নানামুখী ইস্যু কাভার করার পাশাপাশি, চরম কর্তৃত্ববাদী পরিবেশেও ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁরা দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন, কৃষি, পরিবেশ, ও জ্বালানি খাতের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। পাশাপাশি কাজ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও। বাংলাদেশের জন্য যা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
রাজধানী ঢাকার রাস্তায় যখন বিক্ষোভকারীদের ঢল নেমেছিল, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনী। কিন্তু ডেইলি স্টার–এর একটি প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, তাঁরা ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে ব্যবহার করেছে প্রাণঘাতি অস্ত্র। যে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। ডেইলি স্টার-এর অনুসন্ধানী দলটি শত শত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সংগ্রহ করে নিশ্চিত করেছে যে, নিহতদের বেশিরভাগের মাথা, বুকে, পেটে এবং তলপেটে ছিল গুলির ক্ষত।
ডেইলি স্টারের সাংবাদিকরা মৃতদের রেজিস্ট্রার যাচাই করেছে, মর্গ ও কবরস্থান পরিদর্শন করেছে, ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত অস্ত্রের ছবি পর্যালোচনা করেছে এবং আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞদের তাদের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যগুলো দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত কিছু অস্ত্র — এর মধ্যে ছিল লাইভ ও রাবার বুলেটও — ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার লক্ষ্যে নয়, বরং হত্যার উদ্দেশ্যেই ছোঁড়া হয়েছিল।
“আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যখন পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাব [অভিজাত আধাসামরিক বাহিনী], আনসার, দাঙ্গা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং সোয়াট (বিশেষ অস্ত্র ও কৌশল) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়, তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়” দবলে উল্লেখ করেন সাংবাদিকরা।
আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর কোনো সরাসরি নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কিনা, সেই প্রশ্নের বিপরীতে মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশ ও বিজিবি প্রধানরা। অন্যদিকে র্যাবের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, “গুলি চালানোর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।”
প্রতিবাদ চলাকালে ডেইলি স্টার যখন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখন প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা তৈরি হয়, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
সরকারি কর্মকর্তাদের রান্নাঘরে দানের মাংস
প্রতিবছর কুরবানি ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দুস্থ ও গরীব মানুষের জন্য মাংস পাঠায় সৌদি আরব সরকার। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সহায়তা করা। তবে একটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দৈনিক সমকাল বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তাতে উঠে আসে কীভাবে আগের সরকারের শাসনকালে সরকারি কর্মকর্তারা দরিদ্রদের জন্য পাঠানো সহায়তা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সৌদি সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে ৩৭২ টন দুম্বার মাংস পাঠায়। কথা ছিল এগুলো দেশের এতিমখানা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করা হবে। সমকাল ১০টি জেলায় অনুসন্ধায় চালিয়ে সরকারি নথিপত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। তারা বলে, সরকারী কর্মকর্তারা এই মাংস নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বিতরণ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁরা এই অভিযোগের বিরুদ্ধে আরও তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করেছিলেন। প্রতিবেদনটি তুলে ধরে, কীভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি চক্র মিলে গোটা বিতরণ প্রক্রিয়াটি নিজেদের দখলে নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছেন। মাংস বিতরণ ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। তাদের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে বিতরণ ব্যবস্থায় এ ধরনের কোনো ফাঁকফোকর থাকবে না। পাশাপাশি বিষয়টি তারা আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখার অঙ্গীকারও করেছে।
জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি বর্তমানে হুমকির মুখে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড–এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কাসাভা চাষের জন্যে একের পর এক উজাড় করা হচ্ছে বনাঞ্চলটি। এরই মধ্যে শত শত একর পাহাড়ি বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। যা বন সংরক্ষণ কার্যক্রমকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর আবাসস্থলকে পরিণত করছে বৈরী পরিবেশে। একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে কাসাভা চাষের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার পর প্রতিবেদক সরেজমিনে সেখানে গিয়ে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে ছিলেন লিজগ্রহীতা, কৃষক, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং কাসাভা চাষে বিনিয়োগকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, এক ফসলী চাষাবাদ (মনোকালচার) পরিবেশের ওপর গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি মাটির ক্ষতি করে, পাবর্ত্য অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে বন ধ্বংসের অন্যান্য কারণকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়া, বহুজাতিক কৃষি কোম্পানিগুলো ওই এলাকায় কাসাভা চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের একটি উদ্বেগজনক চিত্রও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের অভিজাত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বরাবরই নির্মমতার জন্য পরিচিত। র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে নেত্র নিউজ, ডয়েচে ভেলে এবং জ্যুডডয়চে সাইটুং এর যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও র্যাবের একশত এর বেশি সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুরস্কৃত করেছে আগের সরকার। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের পর নেত্র-এর সাংবাদিকেরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের জন্য সদস্য বাছাই প্রক্রিয়াকে “গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ” বলে আখ্যায়িত করেছে। এতে দেখা গেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকা কর্মকর্তারাও এমন মিশনে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। অথচ এ ধরনের মিশনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর সাধারণ জনগণকে সুরক্ষিত রাখা।
প্রতিবেদনটিতে হুইসলব্লোয়ারদের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মিশনে গিয়েছেন এমন র্যাব কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা ছবি যাচাই এবং প্রমাণ হিসেবে এক কর্মকর্তার অ্যাপে আপলোড করা তাঁর দৈনন্দিন দৌড়ের রুটের তথ্য ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরিতে গোপন সামরিক নথি এবং জাতিসংঘের মিশনের তালিকাও পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর এক মুখপাত্র নেত্রকে জানান যে, “জাতিসংঘ নিয়োজিত সদস্যদের পেশাগত ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায় না।” আরেক মুখপাত্র বলেন, যেসব দেশ সৈন্য সরবরাহ করে, তাদের ওপরই দায়িত্ব থাকে মনোনীত সদস্যদের মানবাধিকার যাচাই করার।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা কত? সাম্প্রতিক জনসংখ্যা জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের এই বৃহৎ বন্দর নগরীতে ৩৪ লাখ (৩.৪ মিলিয়ন) বাসিন্দা রয়েছেন। তবে বিভিন্ন সরকারি নথিতে এই সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ লাখ ছুঁয়েছে।
এই গরমিলের কারণ খুঁজতে উৎসুক হয়ে সি–ভয়েস এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশের জন্য অনুসন্ধানে নামেন সাংবাদিক শরমিন রিমা। “ভূতুড়ে” এই জনসংখ্যা কোথা থেকে এসেছে তা খুঁজতে কাজ শুরু করেন। শতাধিক নথি বিশ্লেষণ, তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে অনুরোধ পাঠানোসহ এক ডজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পর তিনি আবিষ্কার করেন, জনসংখ্যা বাড়িয়ে দেখালে কিছু কিছু প্রকল্পে পাওয়া যায় অতিরিক্ত তহবিল। জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় সিটি করপোরেশনের আর্থিক বরাদ্দ: জনসংখ্যা বেশি হলে বরাদ্দও বেশি হয়। তাঁর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি নথিতেই জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য হেরফের করা হয়েছে। যেমন, একটি নথিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৬০ লাখ ৮০ হাজার (৬.৮ মিলিয়ন) জনসংখ্যার কথা বলে। আট মাস পর আরেকটি প্রকল্পে সে সংখ্যা বাড়িয়ে ১ কোটি দেখানো হয়। অর্থাৎ, মাত্র আট মাসেই ৩০ লাখ মানুষ বেড়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। অভিযোগ অস্বীকার করে অন্যান্য অংশীজনদের ওপর দায় চাপান। এদিকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে ডেটার যথাযথ ব্যবহারে আরও সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
ডেইলি স্টারের এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাবের শিকার হচ্ছে। দ্বীপটিতে ১২ হাজার মানুষের বসবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপটির কিছু অংশ পানির নিচে চলে গেছে বা “নিরবচ্ছিন্ন জোয়ারের” কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বেশকিছু কৃষক নিজ ভূমি হারিয়ে জলবায়ু শরণার্থী হয়ে পড়েছেন। সবুজ চারণভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় দ্বীপটিতে মহিষের সংখ্যা ও দুধ উৎপাদন উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যা দ্বীপটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, উরির চর নামের এ দ্বীপে গত এক দশকে মহিষের সংখ্যা ৩৫,০০০ থেকে কমে ৫,৭০০-তে নেমে এসেছে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে দ্য ডেইলি স্টার স্যাটেলাইট ছবি, প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য এবং মহিষ পালনকারী কৃষকদের ভাষ্য ব্যবহার করেছে। এতে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়ার সাথে সাথে দুধ ও দই উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে। ফলে অনেক বিক্রেতাকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হতে হয়েছে।
সরকারি ভর্তুকি ‘চুরি’, শোষণের শিকার কৃষক
বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া পরিকল্পনাটি শুরুতে অনেক কৃষককে আশাবাদী করে তুলেছিল। কথা ছিল, কৃষি যন্ত্রে দেয়া সরকারি ভর্তুকির আওতায় দেশের হাজারো কৃষককে ধান কাটার জন্য আধুনিক যন্ত্র সরবরাহ করা হবে। প্রতিশ্রুতি ছিল কৃষকেরা খরচের ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাবেন। তবে চ্যানেল ২৪-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রান্তিক কৃষকদের সহযোগিতা নয়, শোষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা প্রতিশ্রুতি রাখেননি। কৃষকদের হাতে আর কোনো কৃষি যন্ত্রও পৌঁছায়নি। বরাদ্দের টাকা পুরোপুরি আত্মসাৎ করা হয়েছে। কোথাও আবার কৃষি যন্ত্র দেয়া হলেও তা ঠিকমতো কাজ করেনি। উল্টো কৃষকদের অর্থ পরিশোধে বাধ্য করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে অসংখ্য নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেয়া হয় বিভিন্ন ব্যক্তির। প্রকল্পটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করার জন্য যাঁরা দায়ী—প্রকাশ করা হয় তাদের পরিচয়ও। প্রতিবেদনটি সম্প্রচারের পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরকারি মূল্যায়ন দল অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে একটি কমিটি গঠন করে।
ভর্তির অযোগ্য, তবুও পুলিশ প্রধানের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে প্রার্থীদের পূর্ববর্তী পরীক্ষাগুলোতে ৫০% নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে দৈনিক প্রথম আলোর একটি অনুসন্ধানে উন্মোচিত হয়, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার পরও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে একাডেমিক ডিগ্রি অর্জনে সক্ষম হন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই পুলিশ প্রধানের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অনার্স ডিগ্রি এবং প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ৫০% নম্বর ছিল না। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে পিএইচডি করছিলেন, তখন তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর মহাপরিচালক। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রথম আলোর রিপোর্ট বলছে, পুলিশ প্রধানের সবগুলো শিক্ষা সনদ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। দেখা গেছে যে,অনুষদের একজন প্রধান শর্ত শিথিল করে তাঁকে ভর্তি করান। প্রতিবেদন অনুসারে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, শর্ত শিথিল করা উচিত হয়নি। পাশাপাশি তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ সাবিহা আলম বার্তা সংস্থা এএফপির ঢাকা ব্যুরো চিফ, এবং জিআইজেএন-এর সাবেক বাংলা সম্পাদক। প্রথম আলোতে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি হার্ভার্ডের নিম্যান ফেলো।