প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

কী দেখবেন: ফিল্মস ফর ট্রান্সপারেন্সির ৫টি দুর্নীতি বিরোধী তথ্যচিত্র

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

মহামারির মধ্যে, গোটা বিশ্বেই চলচ্চিত্র উৎসবগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে ভার্চুয়ালি। ফিল্মস ফর ট্রান্সপারেন্সি (এফ৪টি)-র বেলায়ও তাই। এই চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আধেয় দুর্নীতি-বিরোধী ভিডিও। ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কনফারেন্স সিরিজ ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, দক্ষিণ কোরিয়ায়। কিন্তু এরপরই আসে মহামারি। ফলে বিশ্বের অন্যান্য সম্মেলনের মতো, এটিও অনুষ্ঠিত হয়েছে অনলাইনে

তাদের প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয় পানামায়, ২০১৬ সালে। পরের বছর হামবুর্গে, ২০১৮ সালে কোপেনহেগেনে এবং ২০১৯ সালে বার্লিনে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্যচিত্র সংগ্রহ করে, সবচে বড় এই দুর্নীতি-বিরোধী ফোরামে আনার জন্য তারা জোট বেঁধেছে ডক সোসাইটি ও ‍গুড পিচের সাথে। 

এফ৪টি-র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রবার্তো পেরেজ-রোচা জিআইজেএনকে বলেছেন, “সম্মেলনটি অনলাইনে আয়োজন করার কাজটি ছিল চ্যালেঞ্জিং। কারণ আমাদের কাজের প্রধান জায়গাই হলো, মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। অবশ্য, অনলাইনে আয়োজনের কিছু ভালো দিকও আছে। যেমন, এবারের সম্মেলনে অনেক বেশি মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। অনেকেই হয়তো দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে সেখানে অংশ নিতে পারতেন না। এভাবে আমরা উৎসবটির গণতন্ত্রায়ণও ঘটিয়েছি।”

শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি সেশনের সময় নয়, উৎসবজুড়েই চলচ্চিত্রগুলো অনলাইনে দেখার সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছিলাম চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে। এর ফলে আমরা অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি,” যোগ করেছেন পেরেজ-রোচা, যিনি আন্তর্জাতিক দুর্নীতি-বিরোধী কনফারেন্সও পরিচালনা করেন।

সম্মেলনের সময় দেখানো সেরা কিছু অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রের কথা থাকছে এখানে: 

রেডিও সাইলেন্স (মেক্সিকো)

রেডিও সাইলেন্সের ট্রেলার থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

চলচ্চিত্র নির্মাতা জুলিয়ানা ফানগালের পরিচালনায় নির্মিত তথ্যচিত্র, “রেডিও সাইলেন্স”-এ বলা হয়েছে মেক্সিকোর সবচে বিশ্বস্ত সাংবাদিকদের একজন, কারমেন আরিস্তেগির জীবন কাহিনী। তিনি যে ব্যক্তিমালিকানার রেডিও স্টেশনে কাজ করতেন, সেখানকার দুই অনুসন্ধানী সাংবাদিককে বরখাস্ত করা হয়েছিল। প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন আরিস্তেগি। জবাবে, সেই রেডিও স্টেশনটি তাকেই চাকরিচ্যুত করে। কিন্তু এতে তিনি মোটেই দমে যাননি। নিজেই একটি নতুন, স্বাধীন রেডিও তৈরি করে লড়ে যাচ্ছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। নতুন এই রেডিওটি শুনছেন হাজারো শ্রোতা।

মেক্সিকোতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আরিস্তেগি কিভাবে প্রতিদিন লড়াই করছেন, তা উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে। দেশটির আরো অনেক সাংবাদিকের জন্যই সংগ্রামের চিত্রটি একই রকম। সাংবাদিকদের জন্য মেক্সিকো ক্রমেই হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক স্থান। পেশাগত কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায়ই তারা বিরাগভাজন হন সংগঠিত অপরাধী চক্র বা ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের; বিশেষ করে, সেসব রাজ্যে যেখানে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা কিছু নির্দিষ্ট অপরাধী চক্রকে সুযোগসুবিধা দেয়।

তথ্যচিত্রটি দেখুন এখানে

কালেক্টিভ (রোমানিয়া)

ছবি: স্ক্রিনশট

রোমানিয়ার রাজধানী, বুখারেস্টের একটি নাইট ক্লাবে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের পর দুর্নীতি ও জনস্বাস্থ্য খাতে নানা জালিয়াতির চিত্র উন্মোচন করেন কিছু অনুসন্ধানী সাংবাদিক। আলেক্সান্ডার নানৌ পরিচালিত এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে সেই সাংবাদিকদের গল্প। এই মর্মান্তিক ঘটনাটির ফলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী, ভিক্টর পোন্টা। সেই সময় রিপোর্টারদের উন্মোচন করা নানা বিষয়, রোমানিয়াজুড়ে আলোড়ন তোলে।

২০২০ সালে ইউরোপিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা ইউরোপিয়ান তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছিল এটি। প্রদশির্ত হয়, ২০২০ সালের সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও। সম্প্রতি এটিকে বাছাই করা হয়েছে রোমানিয়ার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য। কোভিড-১৯ সংকট যেভাবে পুরো বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার পরীক্ষা নিচ্ছে, তাতে এই তথ্যচিত্রটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

তথ্যচিত্রটি দেখুন এখানে

দ্য অ্যামাজন, এ নিউ মিনামাটা? (ব্রাজিল)

জাপানের মিনামাটায় গুরুতর পারদ দূষণের ঘটনা ঘটছে গত কয়েক দশক ধরে। এখন ঠিক একই ঘটনা ঘটছে ব্রাজিলিয় অ্যামাজনের কিছু জায়গায়। এই দুই জায়গার তুলনা করে এই তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন ব্রাজিলের পরিচালক হোর্হে বোদানস্কি। অ্যামাজনের ব্রাজিল অংশে, অনেক ভারি ধাতু, বিশেষ করে পারদ ব্যবহার করা হয় সোনার খনিতে কাজ করার সময়, যার প্রভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে, স্থানীয় আদিবাসীদের রক্ত।

ব্রাজিলিয়ান অ্যামাজনে, আদিবাসীদের ভূমিতে সোনার খনি পরিচালনা করা নিষিদ্ধ। কিন্তু অবৈধভাবে ঠিকই চলছে। সেখানে এসব খনি পরিচালনার একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণাম আছে। তৈরি হচ্ছে বৈষম্য ও শোষণ; এবং বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা পড়ছেন, নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

তথ্যচিত্রটি অনলাইন চলচ্চিত্র উৎসবের সময়টিতে দেখার সুযোগ ছিল।

সেক্সি কিলারস (ইন্দোনেশিয়া)

“সেক্সি কিলারস” তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন দান্দি দুই লাকসোনো ও উকক সুপার্তা। কয়লা খনির প্রভাবে ইন্দোনেশিয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়, এবং খনি মালিক ও রাজনৈতিক অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগের চিত্র উঠে এসেছে এখানে। কয়লা উত্তোলনের জন্য বন ধ্বংস করা ও বিশাল আকারে খনন কাজ চালানোর জন্য বোর্নিও দ্বীপে বন্যা ও ভূমিধ্বসের ঝুঁকি বেড়েছে নাটকীয়ভাবে। কিন্তু গোটা দেশজুড়ে খনিশিল্প ও রাজনৈতিক প্রভাব হাঁটছে হাতে হাত ধরে। তথ্যচিত্রটি প্রাথমিকভাবে দেখানো হয়েছিল বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের। পরে এটি আপলোড করা হয় ইউটিউবে। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এর ভিউ ছিল ৩৫ মিলিয়নের বেশি।

তথ্যচিত্রটি দেখুন এখানে

উড (যুক্তরাষ্ট্র, রোমানিয়া, পেরু)

“উড” তথ্যটিত্রটি থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

মনিকা লজুরিয়ান-গর্গান, মিখায়লা কার্স্ট এবং এবা সিনজিংগার পরিচালিত এই তথ্যচিত্রে অনুসরণ করা হয়েছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি পরিবেশগত অনুসন্ধানী এজেন্সির নির্বাহী পরিচালক আলেক্সান্ডার ফন বিসমার্ককে। সরকারি ও কর্পোরেট দুর্নীতির চিত্র উন্মোচন করার জন্য সাত বছর ধরে তিনি চেষ্টা করেছেন অনিয়ন্ত্রিত কাঠ শিল্পের ভেতরে অনুপ্রবেশ করতে। গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে এসব তৎপরতার চিত্র ধারণ করেছেন এই তথ্যচিত্রের নির্মাতারা। এভাবে তৈরি হওয়া এই পরিবেশগত থ্রিলার হয়ে উঠেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও আন্তর্জাতিক গুপ্তচরবৃত্তির এক দারুন সমন্বয়। এখানে উঠে এসেছে রাশিয়া, রোমানিয়া ও পেরুর অবৈধ গাছ-কাটা শিল্পের চিত্র। এবং দর্শকদের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে একটি মোক্ষম প্রশ্ন: সস্তা কাঠের আসল দাম কত?

তথ্যচিত্রটি দেখুন এখানে

ফিল্মস ফর ট্রান্সপারেন্সি ২০২০ চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো সব তথ্যচিত্রের তালিকা দেখুন এখানে।

আরো পড়ুন

কী দেখবেন: ডিগ পুরস্কারের জন্য মনোনীত অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র

এ গ্লোবাল ট্যুর অব টপ ইনভেস্টিগেটিভ পডকাস্টস: দ্য ২০২০ এডিশন

৪ স্যানড্যান্স ডকুমেন্টারিজ দ্যাট শেড লাইট অন দ্য পেরিলস অব জার্নালিজম


আন্দ্রেয়া আরজাবা একজন সাংবাদিক ও জিআইজেএন স্প্যানিশ ভাষার সম্পাদক। রিপোর্টার ও গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে, আন্দ্রেয়া নিবেদিতভাবে কাজ করছেন লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লাতিন কমিউনিটির জীবনযাত্রা নিয়ে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ওমেনস মিডিয়া ফাউন্ডেশনের ফেলো। কাজ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ইয়ং জার্নালিস্টস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবেও।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত ৮টি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে। যেখানে উঠে এসেছে ভুয়া লেখক-বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্য; টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল; বিদেশে রাজনীতিবিদের সম্পদের খোঁজ— এমন নানা বিষয়।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।