Image: Shutterstock
ডিজিটাল আর্কাইভ সংরক্ষণে এখনই যে ৬টি পদক্ষেপ নিতে পারে প্রতিটি বার্তাকক্ষ
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
সম্পাদকের নোট: হার্ভার্ড ল স্কুলের গবেষকেরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন, ১৯৯৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে ২৩ লাখ আর্টিকেলের হাইপারলিংক। কিন্তু এগুলোর সিকিভাগেই এখন আর প্রবেশ করা যায় না। আর ৫৩ শতাংশ আর্টিকেলের ক্ষেত্রে দেখা গেছে: এগুলোর মধ্যে থাকা লিংকগুলোর অন্তত একটিকে পাওয়া গেছে তথাকথিত “লিংক রট” অবস্থায়। এজাতীয় বিষয়গুলোর কথা মাথায় রেখেই ডোনাল্ড ডব্লিউ. রেনল্ডস জার্নালিজম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদন: “দ্য স্টেট অব ডিজিটাল নিউজ প্রিজারভেশন”। নিচে আমরা তারই একটি সারাংশ তুলে এনেছি।
সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকার সংগ্রাম এখন আর কোনো নতুন খবর নয়। প্রতিনিয়ত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানা রকমের অর্থনৈতিক কারণে। সেই সঙ্গে আছে ডিজিটাল প্রযুক্তি-প্রতিযোগিতার উন্মত্ত যাত্রা এবং রাজনৈতিক আক্রমণের ঝড়। ২০২০ সালে, মহামারির কারণে হঠাৎ করে যোগ হয়েছে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া।
এসব সমস্যার কথা সবাই জানে। কিন্তু টিকে থাকার এই সংগ্রামে আরও একটি দিক দিয়ে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বার্তাকক্ষগুলো; এবং এ নিয়ে খুব একটা আলোচনাও হয় না। অথচ এর প্রভাব পড়ে এমন কিছু অপূরণীয় রিসোর্সের ওপর, যা বিশ্বজুড়ে নাগরিকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যেগুলোর ওপর তারা নির্ভর করেন। তা হলো: নিজ নিজ কমিউনিটির উন্মুক্ত নথিপত্র ও ইতিহাস, যা লিপিবদ্ধ করেছে তাদের স্থানীয় সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি স্টেশন, অনলাইন নিউজরুম ও অন্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো।
কী হবে, যদি এসব রেকর্ড একদিন নাই হয়ে যায় অথবা এই ডিজিটাল কনটেন্টের বড় একটি অংশ হারিয়ে যায়? কারিগরি নানা কারণে মুছে যায়? অর্থনৈতিক সামর্থ্য না থাকায় সেগুলোর দিকে ভালোমতো নজর দেওয়া না যায়? এবং এসব কারণে ক্রমশই এসব কনটেন্ট ডিজিটাল দুনিয়া থেকে ক্ষয়ে যেতে থাকে? এর নানা অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়? কী হবে, যদি আধুনিক ডিজিটাল প্রকাশনা ব্যবস্থার অপরিসীম জটিলতার কারণে আমাদের ইতিহাসের প্রথম খসড়াটি লুপ্ত হতে থাকে?
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সব জায়গার বার্তাকক্ষেই এখন ঠিক এই ব্যাপারটি ঘটে চলেছে। সংবাদশিল্পের আর্থিক টানাটানির আড়ালে, প্রতিদিনের সংবাদ ঠিকমতো সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টায় অবনতি ঘটে চলেছে, অনেকটা নীরবে।
ডোনাল্ড ডব্লিউ. রেনল্ডস জার্নালিজম ইনস্টিটিউটের নতুন গবেষণা প্রতিবেদন “দ্য স্টেট অব ডিজিটাল নিউজ প্রিজারভেশন”-এ খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো ধরনের বাড়তি বিনিয়োগ ছাড়াই ডিজিটাল সংবাদ সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিতে পারে নিউজরুমগুলো। তারা ডিজিটাল সংবাদ সংরক্ষণের সমস্যাগুলো সামনে আনতে পারে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য কাজ করতে পারে। কিছু কাজ হয়তো সঙ্গে সঙ্গেই করে ফেলা যাবে না। কিন্তু সেই লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করাটা হবে এই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায়।
ডিজিটাল সংবাদ সংরক্ষণের জন্য আপনার নিউজরুম এখনই কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, তা নিয়ে থাকছে এই গবেষকদের কিছু পরামর্শ।
১. সংরক্ষণের নীতিমালা তৈরি করুন, ভবিতব্য ভুলে যান
আমাদের পরামর্শ হলো: সংবাদ আর্কাইভের জন্য প্রতিটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের একটি লিখিত নীতিমালা থাকতে হবে। এটি যে খুব লম্বা হতে হবে, তা নয়। এক বা দুই পাতার একটি লিখিত কাগজও কাজ শুরুর জন্য যথেষ্ট। সেই নীতিতে আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ করুন। তাতে উল্লেখ থাকবে: আপনি কী ধরনের কনটেন্ট সংরক্ষণ করতে চান, এটি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে বলে আশা করেন (যেমন, অভ্যন্তরীণ গবেষণার কাজে) ইত্যাদি। এসব বিষয় ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর, আপনি হয়তো অন্য কোনো বিষয়ও নির্ধারণ করে ফেলতে চাইবেন। যেমন, এই আর্কাইভে কার কার প্রবেশাধিকার থাকবে, কনটেন্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সেখানে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যাবে; এসব পরিবর্তন কারা করতে পারবে এবং এ জন্য তাদের কী ধরনের অনুমতির প্রয়োজন হবে, কোনো প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়া হলে সেটির ক্ষেত্রে আপনার পলিসি কী হবে? এই সবকিছু নির্দিষ্ট করে বলা প্রয়োজন। কারণ, এটি আপনার সংরক্ষিত কনটেন্টের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলবে।
আপনি এর সঙ্গে হয়তো নিউজরুমের বাইরের অন্যান্য অংশকেও সম্পৃক্ত করতে চাইবেন। বিশেষভাবে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা মানুষদের, যাঁরা কনটেন্ট সংরক্ষণের এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তুলতে পারেন এবং এ ক্ষেত্রে কী ধরনের নতুন ব্যবসার সুযোগ আছে, তা খতিয়ে দেখতে পারেন। আমাদের গবেষণা থেকে দেখা যায়: এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার একটি বড় পদক্ষেপ হলো লিখিত নীতিমালা। আপনার নিউজরুমও হয়তো আমাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া অধিকাংশ নিউজরুমের মতোই, যাদের বেশির ভাগেরই কোনো লিখিত নীতিমালা নেই। যাহোক, এই প্রক্রিয়া একবার সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর, নীতিমালাটি নিয়ে সংগঠনের সবাইকে ভালোভাবে জানানোটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেখানে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন সবাই নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি আরও উন্নত করে তুলতে পারে।
২. সংরক্ষণসংক্রান্ত কাজের জন্য কাউকে দায়িত্ব দিন
নিউজরুম থেকে এমন কাউকে দায়িত্ব দিন, যিনি সংরক্ষণসংক্রান্ত কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। এমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি যে, আপনার নিউজরুমে এখন আর কোনো নিউজ লাইব্রেরিয়ান নেই বা কখনো ছিলেন না। সেই প্রক্রিয়াটিই শুরু করুন নিউজরুমের কাউকে এই বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে। তাঁর কাজ হবে ডিজিটাল কনটেন্টগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া। এমনকি, যদি তাঁদের মূল ভূমিকার ছোট একটি অংশ দিয়েও শুরু করাতে পারেন, তাহলে সেই চেষ্টাই করুন। দেরি করবেন না। এই কাজে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। এখানে কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছরও সময় লাগতে পারে। তাই শুরুর পদক্ষেপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত সম্ভব শুরু করুন। সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ না থাকলে কোনো কাজই এগোবে না।
এই কাজের দায়িত্ব মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট ধাঁচের কাউকে দিলেই সবচেয়ে ভালো হবে; যিনি ডিজিটাল সংবাদ কনটেন্ট সংরক্ষণের একটি পরিকল্পনা তৈরি করবেন এবং মেটাডেটা, ওয়ার্কফ্লো ও সংশ্লিষ্ট সবকিছু ব্যবস্থাপনা করবেন। আমাদের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে খবর সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত কর্মী আছেন (এমনকি পার্টটাইম হলেও), তাঁরা এ ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো করছেন।
৩. যা দরকার তা যে আপনার আছে, তা নিশ্চিত হতে মেটাডেটা পর্যালোচনা করুন
নিউজরুমের অনন্য ও মৌলিক কনটেন্টগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য মেটাডেটার গুরুত্ব জানা ও বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কনটেন্টের যেকোনো উপাদানের উৎপত্তি ও স্বত্বসংক্রান্ত স্পষ্ট মেটাডেটা সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করতে হবে। এ থেকে বুঝতে পারবেন, ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য আপনাকে নিউজরুমের বিদ্যমান প্রযুক্তিতে পরিবর্তনও আনতে হতে পারে। বিশেষভাবে প্রতিটি কনটেন্টে প্রয়োজনীয় মেটাডেটা যোগ করার জন্য কিছু বাড়তি ফিল্ড যোগ করতে হতে পারে।
যেমন, আমরা খেয়াল করেছি: কনটেন্ট তৈরি ও সম্পাদনার কাজগুলো সাধারণত কোনো কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিএমএস) মধ্যে করা হয় না। এটি করা হয় গুগল ডক বা গুগল শিটসের মতো টুলগুলোর মধ্য দিয়ে। সেখানেই সবকিছু লেখা হয় বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়। কনটেন্ট তৈরি ও সম্পাদনাসংক্রান্ত এই তথ্যগুলো সংরক্ষণগত কাজের জন্য সোনার খনি। কারণ, এখানে সেই কনটেন্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা থাকে। সেখানে এটির পরিকল্পনা দেখা যায়। সেখান থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিনক্ষণ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব লেখা, ছবি ও ভিডিও কারা তৈরি করেছে, তা উঠে আসে।
সম্ভব হলে, আপনার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন যে, কীভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার কনটেন্টে মেটাডেটা আকারে যোগ করা যায়; যেন এসব তথ্য সব সময় আপনার হাতের কাছেই থাকে। এখান থেকে আপনি পরবর্তীকালে বুঝতে পারবেন: একটি ছবি বা ভিডিও কোথা থেকে এসেছে, কখন এটি তোলা হয়েছে, কে তুলেছে, এবং কোন প্রতিবেদনের জন্য এই ছবি-ভিডিও তোলার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সুবিধা নেওয়ার কথা অবশ্য বেশির ভাগ নিউজরুমই ভাবে না। যদি সম্ভব হয়, তাহলে কোনো প্রকাশনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, এমন জিনিসগুলোর মেটাডেটাও সংরক্ষণ করে রাখুন। যেমন কোনো স্থিরচিত্র, মূল ভিডিও ফুটেজ ও অডিও ফাইল। এই ধাপের কাজগুলো করা হলে এটি নিশ্চিত করা যাবে যে, অনেক দিন পরও আপনি সব কটি সংরক্ষিত কনটেন্টের পুরো ইতিহাস ও কাহিনি জেনে নিতে পারবেন।
এই কাজের অংশ হিসেবে নিশ্চিত করুন যে, আপনার নিউজরুমের সিএমএস এই ক্ষেত্রের সবচেয়ে সাধারণ মেটাডেটা স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করছে। তা হলো: আইপিটিসি ফটো ও ভিডিও মেটাডেটা। যেটি ক্যামেরার মধ্যেই তৈরি হয় ছবি তোলার সময়। এখানে ছবির দিনক্ষণের সঙ্গে জিও-লোকেশন ডেটাও থাকে। সাধারণত এই আইপিটিসি ফিল্ডগুলো ছবির ক্যাপশন ও অন্যান্য ডেটার সঙ্গেই যুক্ত হয়ে যায় নিউজরুমের সম্পাদনা ও প্রকাশনাসংক্রান্ত কাজের মধ্যে।
কিন্তু, আমরা এ-ও জানি যে, কিছু ওয়েব সিএমএস সিস্টেমে ছবি-ভিডিও ইমপোর্ট করার পর এসব আইপিটিসি ফিল্ডকে আমলে আনা হয় না, বা সীমিত কিছু বিষয় উঠে আসে। আপনার সিএমএস ও কাজের পদ্ধতিও যদি এমন হয়, তাহলে আপনার ছবিগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ সব মেটাডেটা থাকবে না। সবার জন্য উন্মুক্ত এমন ওয়েব পেজের জন্য এসব ডেটা বাদ দেওয়া খুবই ঠিক আছে। কিন্তু নিউজরুমের কাজের ক্ষেত্রে এসব মেটাডেটার গুরুত্ব কী, তা সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন এবং এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলুন, যেখানে মূল ছবিগুলোর পূর্ণাঙ্গ মেটাডেটাও সংরক্ষিত থাকবে।
৪. প্রকাশিত প্রতিবেদন অপসারণের নীতিমালাও তৈরি করুন
কোনো কনটেন্ট প্রকাশের পর সেটি মুছে দেওয়া বা সরিয়ে ফেলা, ডি-ইনডেক্স করা কিংবা সেখানে পরিবর্তন আনার এসব প্রক্রিয়াকে কখনো কখনো ডাকা হয় আনপাবলিশিং নিউজ বলে। এ ধরনের অনুরোধ এলে নিউজরুমের করণীয় কী হবে, তা নিয়েও আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে। ইন্টারনেট প্রাইভেসি, রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রসার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা প্রাইভেসি আইনের মতো আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে বিষয়টি প্রতিটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি ও উদ্বেগের হয়ে উঠছে।
প্রশ্ন এটি নয় যে, এগুলো কখন ঘটে। খুব সম্ভবত, এগুলো এরই মধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। বার্তাকক্ষের লোকজন বা প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ কর্তাদের অনুমতি ছাড়াই প্রকাশিত জিনিস “আনপাবলিশ” করে দিতে বা মুছে দিতে পারেন। এটি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো: এ-সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা তৈরি এবং বিষয়টি নিয়ে স্পষ্টভাবে আলোচনা করা। নীতিমালাগুলো যদি সবার জন্য উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে তা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সাহায্য করবে।
৫. সিএমএস ও অন্যান্য সিস্টেমে স্পষ্ট করুন, কনটেন্টের মালিক কে
যে কনটেন্টগুলো আপনি প্রকাশ করছেন, সেগুলোর মালিকানা ও লাইসেন্সিং সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন। অতীতের কনটেন্টগুলোর মালিকানা নির্ধারণ করা বা সংশোধন করা কঠিন হতে পারে। তবে এখন আপনার নিউজরুমের কর্মী ও ফ্রিল্যান্সাররা যেসব কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশ করছেন, সেগুলোর মালিকানা নিশ্চিত করতে দেরি করার কোনো কারণ নেই।
আমাদের পরামর্শ হবে: এখন যেসব কনটেন্ট প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোম্পানির বর্তমান পলিসি কী, এগুলো নিয়ে কী ধরনের চুক্তি আছে—ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখুন। যেমন, নিউজরুমের ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবি বা ভিডিওর মালিক কে? এ সম্পর্কে কি স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আছে? বিভিন্ন সাক্ষাৎকার বা সাংবাদিকতার প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিবেদন, গ্রাফিকস, অডিও, ভিডিও ইত্যাদির স্বত্ব কার? এসব প্রশ্নের কোনো নির্দিষ্ট জবাব নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: এসব কাজে জড়িত সবার যেন এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকে, তা নিশ্চিত করা।
যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা কনটেন্ট তৈরি করছেন, সেখানে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ । ২০০১ সালে তাসিনি বনাম নিউ ইয়র্ক টাইমস মামলার পরিণতি সম্পর্কে সবার সতর্ক থাকা দরকার। সেই মামলা থেকে যে দিকনির্দেশনাগুলো পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলো যে নিউজরুমে মেনে চলা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আপনার যদি এ রকম স্পষ্ট নীতিমালা ও নির্দেশনা থাকেও, তারপরও সেটি ডিজিটাল যুগের সঙ্গে মিলিয়ে হালনাগাদ করুন। এর মধ্যে থাকবে সব ধরনের কনটেন্ট (যেমন, একটি ভিডিও কে ধারণ করেছে), সেটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এসেছে, নাকি অন্য জায়গা থেকে—এমন নানা বিষয়।
৬. মেটাডেটা, মালিকানা ও ওয়ার্কফ্লো নিয়ে নিয়মিত সেল্ফ-অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট করুন
ওপরে বর্ণিত বিষয়গুলো নিয়ে আপনার কাজ করতে হবে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য আমাদের পরামর্শ হলো: কনটেন্ট সংরক্ষণ, শনাক্তকরণ ও স্বত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপনার নিউজরুম কেমন করছে, তা বুঝতে নিজে নিজেই একটি পর্যালোচনা করুন।
এ ধরনের সহজ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন:
- নিউজরুমের কর্মপদ্ধতি ও ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করছে, তা বোঝার জন্য যেকোনো দিন আপনি এই পরীক্ষা চালাতে পারেন। দেখুন যে, আজ প্রকাশিত হওয়া কোনো ছবি বা ভিডিওর মূল সংস্করণটি আপনি শনাক্ত ও উদ্ধার করতে পারেন কি না। সিএমএসে সার্চ দিলে আপনি হয়তো সেই ছবির অনেকগুলো সংস্করণ পাবেন। কিন্তু সেগুলো নয়, একদম মূল, হাই-রেজল্যুশনের ছবি বা ভিডিওটি কি আপনি খুঁজে পাচ্ছেন? যদি খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে দেখুন যে, সেখানে মালিকানাসংক্রান্ত পর্যাপ্ত মেটাডেটার উল্লেখ স্পষ্টভাবে আছে কি না।
- এ বিষয়ে আরও খেয়াল করুন: সিএমএসে এমন ফিল্ড আছে কি না, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে: কনটেন্টটি নিউজরুমের কোনো কর্মী বানিয়েছে, নাকি ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার বা ফটোগ্রাফার? নাকি এটি এসেছে কোনো তৃতীয় উৎস থেকে? এই ফিল্ডগুলো যদি না থাকে, তাহলে সেগুলো আপনার কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিএমএস) যোগ করার কথা বিবেচনা করুন। এবং এগুলো যেন সব সময় পূরণ করা হয়, তা নিয়ে নিউজরুমে আলোচনা করুন।
- খুঁজে দেখুন যে, কোন ধরনের কনটেন্ট সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে, এবং কত সময়ের জন্য। এবং কোন ধরনের কনটেন্ট সংরক্ষণ করা হচ্ছে না কিংবা কিছু সময় পরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এখনকার নিউজরুমগুলোতে এসব কাজ প্রায়ই করে থাকেন প্রযুুক্তি বিভাগের কর্মীরা, যাঁদের কাছে অনুসরণ করার মতো কোনো দিকনির্দেশনা থাকে না। ফলে প্রযুক্তিগত জিনিসগুলো যেন ঠিকঠাক কাজ করে, তা নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা যেকোনো কনটেন্ট মুছে দেন। এই ব্যাপারগুলো সব সময়ই সংরক্ষণগত আদর্শ-চর্চার বিপরীতে কাজ করে।
গুরুত্বপূর্ণ ও অপূরণীয় এসব কনটেন্ট দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণ করার অন্যতম ভালো উপায় হলো: কনটেন্টগুলোর আদি সংস্করণ ও মেটাডেটাগুলো সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা তৈরি। ছবি ও ভিডিওর আসল ও পূর্ণ রেজল্যুশনের ফাইল আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি আপনি এসব মূল ফাইল সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা, ইনডেক্সসহ ডেটাবেস তৈরি করতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো। না পারলে, সাধারণ কিছু ড্রাইভ তৈরির মাধ্যমেও প্রক্রিয়াটি শুরু করে দেওয়া যায়।
নোট: র ফাইল হিসেবে না রেখে জেপিইজি ফরম্যাটেই ছবিগুলো রাখতে পারেন। কারণ, ক্যামেরার ফাইলগুলো অনেক বড় হয় এবং জেপিইজি সব জায়গায় স্বীকৃত একটি ফরম্যাট।
ডিজিটাল সংবাদ মানেই ঐতিহাসিক রেকর্ড
ইতিহাসের শিক্ষা মনুষ্যজাতির জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। তবে তা তখনই সম্ভব, যখন স্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে এসব ইতিহাস এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করা যায়। ১০০ বছর পর যদি আরেকটি ভয়াবহ মহামারি দেখা দেয়, তাহলে কি ২১২১ সালের সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও গবেষকেরা আমাদের আজকের এসব অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হবেন? প্রশ্নের উত্তরটি সরল নয়। আমাদের সামনে এখনো কোনো রূপরেখা নেই, যা থেকে এখনকার ডিজিটাল নিউজ কনটেন্টগুলো এমন অবস্থায় যেতে পারে, যেখানে ভবিষ্যতে এগুলো আর্কাইভ আকারে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আমাদের গবেষণা থেকে এটি বোঝা গেছে, অনেক ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সমসাময়িক নিউজ কনটেন্টগুলোকে এখনো অনেক মূল্য দেওয়া হয়, এবং সেগুলো মুছে দেওয়া হয় না। দীর্ঘ মেয়াদে এগুলো সংরক্ষণের অনেক সুযোগও এখন আমাদের সামনে আছে। তবে এই সুযোগ নিশ্চিতভাবেই চিরদিনের জন্য থাকবে না।
লেখাটি ইউনিভার্সিটি অব মিজৌরির ডোনাল্ড ডব্লিউ. রেনল্ডস জার্নালিজম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত “দ্য স্টেট অব ডিজিটাল নিউজ প্রিজারভেশন” শীর্ষক নতুন একটি প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ। ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন লাইসেন্স-এর অধীনে লেখাটি এখানে প্রকাশিত হলো।
আরো পড়ুন
হাও দ্য কনভারসেশন রিইউজেস আর্কাইভাল কাভারেজ
আপনার পরবর্তী অনুসন্ধানে ওয়েব্যাক মেশিন ব্যবহার করবেন যেভাবে
টো সেন্টার রিপোর্ট: দ্য ডায়ার স্টেট অব নিউজ আর্কাইভিং ইন দ্য ডিজিটাল এজ
এডওয়ার্ড ম্যাককেইন ইউনিভার্সিটি অব মিজৌরির রেনল্ডস জার্নালিজম ইনস্টিটিউটের ডিজিটাল কিউরেটর। এই প্রতিবেদনটিতে তাঁর সহ-লেখক হিসেবে ছিলেন নেইল মারা, কারা ভন মালসেন, ডরোথি কার্নার, বার্নার্ড রাইলি, কেরি উইলেট, স্যান্ডি স্কিফার, জো আকিন্স ও সারাহ বুচানন।