প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

‘কুইক সার্চ টুল’ হিসেবে চ্যাটজিপিটিকে কীভাবে কাজে লাগাবেন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

জেনারেটিভ এআইয়ের নিত্যনতুন টুল দ্রুত সহজলভ্য হচ্ছে। আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন নৈতিক দূর্বলতা, ভুলের আশঙ্কা অথবা আরও আধুনিক সব বিকল্পের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে  রীতিমতো যুদ্ধ করছেন, আবার কখনও বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।

প্রথম প্রথম সাংবাদিকেরা এআইকে ডেটা কোড তৈরি থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ধারণা পাওয়া বা চার্ট তৈরির কাজে লাগাতেন। আগেই বলেছি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এআই টুলে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা। বিনা পয়সায় কিংবা টাকার বিনিময়ে যেগুলো ব্যবহার করা যায়— এমন পেইড-টুলগুলোতে সপ্তাহান্তে সংযোজিত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। টুলগুলো ক্রমশ হয়ে উঠছে অনেক বেশি আধুনিক।

যাই হোক, জেনারেটিভ এআই টুল কিন্তু এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ আপনাকে দেবে না, যা যাচাই-বাছাই ছাড়াই আপনি সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। এটি শতভাগ নির্ভুল তথ্যের নিশ্চিয়তাও দেয় না। তাছাড়া পক্ষপাতজনিত ভুলের প্রবণতাও থাকে। এমন অসংখ্য উদাহরণও আছে। (তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের এআই টুল ব্যবহারের সময় আপনাকে নৈতিক কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং কোন অ্যাপ্লিকেশনগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহল থাকবেন, তা জানতে জিআইজেএনের (নিউ এআই অ্যান্ড লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল টুলস ফর জার্নালিস্ট) নামের লেখাটি পড়ুন।

২০২৪ অনুসন্ধানী রিপোর্টার ও সম্পাদকদের সম্মেলনে  একটি কর্মশালায় বলা হয় যে, সাংবাদিকরা কিন্তু এআই ব্যবহারের বিপদ ও বিভ্রান্তিকে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারেন। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার সময় মূল এআই চ্যাটবট, চ্যাটজিপিটির মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক সার্চ টুল ব্যবহার করবেন

জেরেমি জোজোলা কাজ করেন কলোরাডোর ডেনভারের কুসা-টিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য ২০২০ সালে অর্জন করেন আইআরইর ডন বোলেস পদক। তিনি বলেন, আপনি যখন কোনো অনুসন্ধানে নামবেন তখন এ ধরনের বৃহৎ ভাষা মডেল ব্যবহার করে যোগাযোগের ঠিকানা খুঁজে বের করা কিংবা দ্রুত কোনো তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনি সময় বাঁচাতে পারেন। এই মডেল অনেক নতুন সূত্রও সরবরাহ করবে। ভবিষ্যতে সোর্স হিসেবে কাজে লাগবে, এমন অনেকের সঙ্গেও সংযোগ ঘটিয়ে দিবে। যাদের হয়তো আপনি অন্যভাবে খুঁজে পেতেন না।

তিনি বলেন, কাজের শুরুতে চ্যাটজিপিটির মতো এলএলএম (লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল—একধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করতে পারেন। কেবলই আপনার রিপোর্টিং কাজে সাহায্যের জন্য। মনে রাখবেন, আপনি কখনই আপনার প্রতিবেদনের তথ্য হিসেবে এগুলো ব্যবহার করবেন না।

সতর্ক করে দিয়ে জোজোলা জানান, “এটিকে তথ্যসূত্র বা উৎস হিসেবে নয়, বরং অনুসন্ধানের সূচনা বিন্দু মনে করুন – সাংবাদিকতায় আমাদের নীতিনৈতিকতা ও আইনগত অবস্থানের জন্য এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে এখানকার বিন্দু পরিমাণ তথ্যও আমরা সরাসরি প্রতিবেদনে ব্যবহার করব না।”

তিনি আরো উল্লেখ করেন, “আমার প্রতিবেদনে চ্যাটজিপিটি থেকে পাওয়া কোনো তথ্যই আমি কখনও ব্যবহার করি না। কোনো খসড়া তৈরি কিংবা স্ক্রিপ্ট লেখার জন্যও নয়। এগুলো থেকে আপনি বড় জোর কিছু আভাস-ইঙ্গিত কিংবা কোনো রহস্যের গন্ধ পেতে পারেন। তবে ভাল রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে আপনাকেই গুপ্ত রহস্যগুলো বের করে আনতে হব। গুগল সার্চের উন্নত সংস্করণটিও কিন্তু চমৎকার একটি টুল।”

চ্যাটজিপিটি + গুগল সার্চ= আগের তুলনায় উন্নত ও দ্রুত তথ্য সংগ্রহ

একটি বৃহৎ ভাষার মডেল হিসেবে আপনার প্রশ্নের বিপরীতে সাড়া দিতে ওয়েব পেজ ইন্ডেক্সিংয়ের পরিবর্তে চ্যাটজিপিটি মূলত ট্রেনিং ডেটার (অ্যালগরিদম বা মেশিন লার্নিং মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার করা হয়) তথ্য তুলে ধরে। এদিকে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে নির্ভুল, হালনাগাদ ও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়— বিশেষ করে বুলিয়ান অনুসন্ধান কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে।

কিন্তু জোজোলার মত অন্য সাংবাদিকরাও যুক্তি তুলে ধরেছেন যে, গুগল কিংবা র‌্যাঙ্কিয়ে আগানো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজ সাইটের তথ্যগুলো আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুগ্ধ করতে পারে। তাই আপনি হয়তো অন্য কোনো উৎস ব্যবহার করে আলাদা কোনো প্রবণতা চিহ্নিত করা কিংবা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য যাচাইয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। তথ্যের বিশ্লেষণ বৈশিষ্ট্যের অভাবগুলোও আপনার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে।

তাই, তিনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। বিশেষ করে পয়সা খরচ করে কেনা চ্যাটজিপিটি-৪ সংস্করণটি। এটি ইন্টারনেট ব্যবহার করে নাম, যোগাযোগ নম্বরসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দ্রুত খুঁজতে পারে। অনেক সময় যা খুবই কাজে লাগে। তবে চ্যাটজিপিটির বিনামূল্যের সংস্করণ জিপিটি ৩.৫ কিন্তু সরাসরি ইন্টারনেট থেকে তথ্য খুঁজতে পারে না। “আগে থেকে সংগৃহীত প্রশিক্ষণ ডেটা— ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন মানুষের লেখা, নথি কিংবা কথোপকথন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আপনার প্রশ্নের বিপরীতে উত্তর তৈরি করে দেয়।” তাই মানুষের মত সংলাপ লিখতে পারলেও এর ভুলগুলো সহজে চোখে পড়ে। কারণ এর প্রশিক্ষণ ডেটাগুলো হালনাগাদ নয়। এদিকে চ্যাটজিপিটি-৪ সংস্করণে (প্রতি মাসে ২০ ডলার খরচ হয়) কয়েক গিগাবাইটেরও বেশি ডেটা থাকে। ইনপুট প্রম্পট হিসাবে আপনি এতে ছবি কিংবা স্ক্রিনশটও ব্যবহার করতে পারবেন। লাইভ ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে সক্ষম হওয়ার ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটি হালনাগাদ তথ্য দিতে পারে।

বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার পরও জোজোলা বলেন, ওপেনএআইয়ের বিভিন্ন চ্যাটবট ডেটা সংগ্রহের জন্য উপকারী, তাছাড়া নানা উৎস ব্যবহার করে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ এবং সংক্ষিপ্ত আকার তা তুলে ধরার মাধ্যমে এটি রিপোর্টারদের অনেক বেশি মানব সোর্সের সন্ধান দিতে পারে।

কর্মশালা পরিচালনার সময় হাতেকলমে বিষয়টি দেখাতে তিনি জিপিটি-৪ সংস্করণের চ্যাট বক্সে লিখেন: “আমি একজন রিপোর্টার। আমাকে একজন বিশেষজ্ঞকে খুঁজে বের করতে হবে যিনি কলোরাডোতে নেকড়েদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়গুলো নিয়ে বলতে পারেন। আমাকে কয়েকজনের নাম, তাঁরা যে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত তার পাশাপাশি যোগাযোগ নম্বরের একটি তালিকা সরবরাহ করো।” বিভিন্ন সংস্থা আর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহসহ টুলটি ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ডেটাবেস খুঁজে মার্কিন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত একজন জীববিজ্ঞানীর সন্ধান দেয়। যিনি রকি মাউনটেইনে নেকড়েদের পুনর্বাসন প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনি “কার্নিভোর কোএক্সিটেন্স ল্যাব”-এর প্রতিষ্ঠাতা।

Jeremy Jojola, KNEWS investigative reporter

২০২০ ডন বোলেস পদক জয়ী অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ও আইআরই২৪-এর উপস্থাপক জেরেমি জোজোলা। ছবি: স্ক্রিনশট

এ পর্যায়ে হাসতে হাসতে জোজোলা বলেনয যে, “আপনি যখন এ ধরনের লোকেদের খুঁজে পাবেন, তখন তাদের ফোন না করে আর উপায় কী?”

“কলোরাডোতে নেকড়ের পুনর্বাসনের বিষয়টি একটি বড় ঘটনা। যা নিয়ে শহর আর গ্রামের লোকেদের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্যও রয়েছে। ধরেন, মাত্র একদিনের মধ্যেই এমন একটি প্রতিবেদন লেখার দায়িত্ব আপনার কাঁধে পড়েছে। গুগলে চল্লিশ মিনিট ধরে খুঁজে খুঁজে আপনি বিশেষজ্ঞদের নাম ও যোগাযোগ নম্বরের যে তালিকা দাঁড় করাবেন, চ্যাটজিপিটি মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে আপনাকে তা সরবরাহ করবে,” যোগ করেন তিনি।

তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, চ্যাটজিপিটি-৪ সংস্করণটিতে আপনি অনেক বেশি নথি আপলোড করতে পারবেন, অনেক বেশি হালনাগাদ তথ্য আর প্রাসঙ্গিক “আলোচনা” পাবেন। এর চ্যাট ইন্টারফেস আগের প্রশ্নের জের ধরে উত্তর দিতে সক্ষম। চ্যাটজিপিটির বিনামূল্যের সংস্করণটি আবার দ্রুত তথ্য খুঁজতেও পারদর্শী।

জোজোলার লক্ষ্য সময় বাঁচানো ও দ্রুত তথ্য বাছাই। তাই প্রম্পট (চ্যাটজিপিটিকে বিষয়বস্তৃ নিয়ে নির্দেশনা দেয়া) লেখার সময় নির্ভুল বাক্য গঠন নিয়ে ভাবেন না। বরং মনোযোগ দিন যে, সঠিক তথ্য পেতে আপনার করণীয় কী। পাশে দাঁড়ানো সহকর্মীর সঙ্গে আমরা যেভাবে কথা বলি চ্যাপজিপিটির প্রম্পটে তিনি তাই ওভাবেই লেখেন, “বিষয়টি নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে বের করো তো।”

  • ‘উন্মুক্ত’ সরকারি নথি থেকে দ্রুত তথ্য বাছাই। এ ধরনের নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মানব সোর্সের সম্পৃক্ততা থাকে বলে প্রতিবেদন তৈরিতে কাজে লাগানো যায়। রিপোর্টাররা বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন তৈরির রশদও পান। বিভিন্ন অডিট রিপোর্ট আর বিশেষজ্ঞদের নাম, পরিচয় থাকে। যা দিয়ে সহজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়। এটি যেমন সত্য, তেমন আবার অনেক সময় এ ধরনের নথিতে অব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন পদ্ধতিগত ভুল, দুর্নীতি কিংবা অপকর্মের তথ্য সুক্ষ্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। জোজোলা তাই পরামর্শ দিয়েছেন আপনার হাতে থাকা এ ধরনের নথি চ্যাটজিপিটিতে সরাসরি আপলোড করবেন। সঙ্গে জুড়ে দিবেন সহজ একটি নির্দেশনা (প্রম্পট)। যেমন, “সরকারি এই চুক্তি আর এ কাজের জন্য সংস্থাকে কত টাকা দেয়া হবে তার সংক্ষিপ্ত তথ্য দাও। চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকেদের নাম, যোগাযোগ নম্বর এবং কোন পৃষ্ঠায় তাদের কথা লেখা আছে তা বলো।” (উদাহরণ হিসেবে তিনি লাইসেন্স প্লেট রিডার ক্রয় সংক্রান্ত একটি সরকারি চুক্তির নথি আপলোড করেন— কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা চুক্তিতে থাকা শর্ত, খরচের পরিমান, পৃষ্ঠা নম্বরসহ সংশ্লিষ্টদের নাম হাজির করে।) তবে সাংবাদিকদের তিনি ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে এমন নথি আপলোড করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এ ধরনের আরও কার্যকরী টুল রয়েছে যেমন গুগল পিনপয়েন্ট। তবে জোজোলা বলেন, দ্রুত তথ্য যাচাইয়ের জন্য চ্যাটজিপিটি অনেক বেশি কার্যকর।
  • নথিতে থাকা জন-উদ্বেগ সম্পর্কিত তথ্যের সারসংক্ষেপ। বার্ষিক প্রতিবেদন আর সরকারী নীতি সংক্রান্ত নথিতে প্রায়ই জন-উদ্বেগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকে। এমন কয়েক ডজন পৃষ্ঠা থাকে। সাংবাদিকেরা প্রায়ই এগুলো পড়ার সময় পান না। কর্মশালায় জোজোলা চ্যাটবক্সে ৪০ পৃষ্ঠার একটি বার্ষিক প্রতিবেদন আপলোড করেন এবং এর বিপরীতে কী ধরনের জন-উদ্বেগ তৈরি হয়েছে চ্যাটজিপিটিকে তা সংক্ষিপ্তভাবে হাজির করতে বলেন। তিনি বলেন, “মুহুর্তের মধ্যে তথ্য তুলে ধরার বিষয়টি সত্যিই চমৎকার।” যদিও টুলটি কিন্তু সূক্ষ্ম অনেক কিছু ধরতে সক্ষম নয়, আবার ভুলও করতে পারে। তবে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য এবং আলোচনাতে কী ধরনের সমস্যা উঠে এসেছে সে সম্পর্কে কার্যকর তথ্য দিতে পারে, যা থেকে সাংবাদিকেরা আরও গভীর অনুসন্ধানের পাশাপাশি নতুন সূত্র পেতে পারেন।
Find sources online investigation chatgpt

অনলাইন থেকে চটজলদি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য চ্যাটজিপিটি ভীষণ উপকারী একটি টুল। ছবি: শাটারস্টক

  • এক নিমিষে “বড় সূত্রের” হদিস: ধরুন, আপনি নতুন একটি বিষয়ের ওপর ”সম্ভাব্য” প্রতিবেদন তৈরি করছেন। জোজোলা বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের চ্যাটজিপিটি আপনার সামনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নাম ও যোগাযোগ তালিকা হাজির করবে। যা থেকে রিপোর্টাররা “বড় প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদন” তৈরির ধারণা পেতে পারেন। প্রাপ্ত তালিকার মধ্যে কেউ হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন। হাজারটা ওয়েবসাইটে অসংখ্যবার প্রয়োজনীয় নাম খোঁজার পরিবর্তে খুব দ্রুত আপনি তা পেয়ে যাবেন। যেমন: আপনি দক্ষিণ আফ্রিকার পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি সংস্থার কথা জানতে চান। গুগলে এ ধরনের তথ্য পেতে আপনাকে লিখতে হতো ”পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে ‘দক্ষিণ আফ্রিকার’ এমন সংস্থার ওয়েব সাইটের ঠিকানা: যোগাযোগ নম্বর”। যা আপনাকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বিশদ তালিকা ধরিয়ে দিবে। বিপরীতে চ্যাটজিপিটিকে এমন একটি সাদামাটা নির্দেশনা দেয়াই যথেষ্ট: “দক্ষিণ আফ্রিকায় পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার ফোন নম্বরসহ যোগাযোগের তালিকা দাও”। এলএলএম ব্যবহার করে পাওয়া তালিকা থেকে নাম ও নম্বরগুলোকেই আপনি প্রাথমিক সোর্স হিসেবে কাজে লাগাতে পারবেন। (এআই টুলটি “লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা” নিয়ে কাজ করেন এমন অনেকের নাম-ঠিকানাও সরবরাহ করে। যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় এ সমস্যাটিকে অন্যভাবে দেখেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা হয়তো আপনার অনুসন্ধানের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।)
  • সরকারি কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয় জোগাড়: জোজোলা দেখিয়েছেন চ্যাটজিপিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূহুর্তের মধ্যে  বর্ণমালা অনুসারে নাম ও যোগাযোগের নম্বর সরবরাহ করে। এ জন্য চ্যাটজিপিটিকে আপনি নির্দেশনা দিন যে, “আমাকে কলোরাডো রাজ্যের আইনসভার সদস্যদের, বিশেষ করে হাউজ ডেমোক্র্যাটদের অফিসের ফোন নম্বর এবং সরকারি ইমেলের তালিকা দাও।” “কয়েকদফা বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুঁজে তথ্য সংগ্রহের বদলে এটি আপনাকে আলাদা করে প্রতিজন আইন প্রণেতার নাম সরবরাহ করবে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন।
  • জটিল মেডিকেল রিপোর্টের সহজ ভাষান্তর — যেমন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। ছোট বার্তাকক্ষের বাস্তবতা হচ্ছে যতক্ষণ না কোনও মানব সোর্স বা বার্তা কক্ষের এ বিটের বিশেষজ্ঞ কোনো জ্যেষ্ঠ সহকর্মী নথিপত্রের তথ্য ঘিরে সন্দেহ পোষণ না করছেন,  ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিবেদনের ত্রুটিগুলো আপনার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ অনেক সময় তা বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নাও থাকতে পারে। জোজোলা তাই বলেন যে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন একটি ভাল উদাহরণ। নির্ভরযোগ্য এআই টুল ব্যবহার করে আপনি তা যাচাই করতে পারেন। এ ধরনের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো এআই টুলে আপলোড করে সহজ ভাষায় তা অনুবাদ করে দিতে বলবেন। এ থেকে আপনি প্রতিবেদন তৈরির নতুন ধারণা পেয়েও যেতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন যে, চ্যাটজিপিটি দিয়ে অনুবাদ করিয়েছেন এমন মেডিকেল রিপোর্টের ব্যাখ্যা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অবশ্যই দুইবার যাচাই করতে হবে। “আমরা যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত আমাদের মধ্যে অনেকেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বোঝার ক্ষেত্রে খুব একটা পারদর্শী নই। এ ধরনের রিপোর্টে অনেক ধরনের মেডিকেল টার্ম ও ভাষা ব্যবহার করা হয়,যা বোঝাটা কঠিন। অনেক সময় এই মেডিকেল টার্মগুলো এক একটা শব্দ বারো সংখ্যারও বেশি হয়, “ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ পর্যায়ে জোজোলা দারুণ একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি দেখান, পুলিশের গুলিতে নিহত একব্যক্তির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে অপ্রকাশিত তথ্য বেরিয়ে আসে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি আপলোড করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল যে  “প্রতিবেদনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরো এবং সাধারণ ভাষায় তা ব্যাখা করো, মৃত ব্যক্তির শরীরে কী ধরনের পদার্থের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।”
  • তথ্যগত তুলনা। প্রেস রিলিজ বা বার্ষিক প্রতিবেদনের ডেটা সংখ্যার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য বা তারতম্য অল্প সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের পক্ষে বের করাটা কখনও কখনও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের গবেষণাপত্র থেকে এআই টুলগুলো খুব সহজে আপনাকে ডেটা বিষয়ক দ্রুত তথ্য খুঁজে দিতে পারে। যেমন অঞ্চল অনুসারে জনসংখ্যার উপস্থিতির হার খুঁজে দেয়া। প্রম্পটে শুধু আপনাকে লিখতে হবে, ” কিগালি বা রুয়ান্ডার মতো জনসংখ্যা আছে, আফ্রিকার এমন শহরের তালিকা সরবরাহ করো।” (চ্যাটজিপিটি অবিলম্বে উল্লেখ করেছে যে ব্লান্টার, মালাউই; ফ্রিটাউন, সিয়েরা লিওন; এবং মোম্বাসা, কেনিয়ার জনসংখ্যাও ১ দশমিক ২ মিলিয়ন (১২ লাখ।) “নগর প্রতিবেদকেরা সাধারণত অপরাধের হার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবহন সমস্যার মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় একটি শহরের সঙ্গে অন্য শহরের তুলনা করতে পছন্দ করেন” বলেন জোজোলা। তিনি আরো উল্লেখ করেন “এআই যে কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে দ্রুত তথ্য সরবরাহ করে, তবে প্রতিবেদনে তা অবশ্যই আমি বিভিন্ন সূত্র থেকে তিন দফায় যাচাই না করে উল্লেখ করি না।”

জোজোলা স্বীকার করেছেন যে, চ্যাটজিপিটি অনেক সময় ভুল-ভাল তথ্যও সরবরাহ করে, তাই চোখ বুঁজে তা একদমই বিশ্বাস করা ঠিক নয়। যেমন তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমি চ্যাটজিপিটিকে বলি যে, রাস্তায় বাজে আচরণ করেন এমন রাগী গাড়ি চালকদের নিয়ে করা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর তথ্য দিতে। আমার সামনে এটি দারুণ কিছু গবেষণাপত্র তুলে ধরে। কিন্তু আমি যখন জানতে চাই, গবেষণাটি কে বা কারা করেছে তখন সঠিক উৎস সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। বরং সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দেয় এমন একটি আইনি সংস্থার ঠিকানা হাজির করে— যা কোনো কাজের কিছু ছিল না,” বলেন তিনি।

এটি যেহেতু গুগলের মতো বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন থেকে তথ্য নিয়ে আপনার সামনে হাজির করে, তাই এ ধরনের ভুল তথ্যও আসতে পারে। যা আসলে কোন ব্যাপার না। ” এছাড়া এটি আমাকে সড়ক দূর্ঘটনার ওপর জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গবেষণাও সরবরাহ করে, যেটি বিশ্বাসযোগ্য। তাই আমি আগের তথ্যটির পরিবর্তে এটি দিয়ে শুরু করি,” তিনি উল্লেখ করেন।

“প্রযুক্তিকে ঠেকানো যাবে না— আর তা নিয়ে ভয় পাওয়াটাই বোকামি… আপনাকে কেবল সাংবাদিকতার চর্চা আর নীতির বিষয়ে অনড় থাকতে হবে। আপনাকে সবসময় সোর্স সম্পর্কে শতভাগ নির্ভুল থাকতে হবে। সোর্স হিসেবে আপনি যেমন কখনও গুগল সার্চকে উল্লেখ করবেন না, তেমন চ্যাটজিপিটিকেও নয়।”


Rowan Philp, senior reporter, GIJN

রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফ্রিকায়।

 

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

পরামর্শ ও টুল

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে বিস্ফোরক শনাক্ত করবেন কীভাবে?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ছবি পোস্ট করার হার বেড়েছে। উন্মুক্ত সূত্র থেকে বিস্ফোরক অস্ত্র শনাক্ত করায় এই ছবিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করে। কিন্তু এই ছবিগুলো থেকে অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কখনও কখনও অপতথ্যও ছড়ায়।

টিপশীট পরামর্শ ও টুল সুরক্ষা ও নিরাপত্তা

নিজেকে সুরক্ষিত রেখে অনুসরণ করুন উগ্র ডানপন্থীদের গতিবিধি, রইলো কিছু পরামর্শ

উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির কারণ। আবার এর উল্টো দিক আছে। তাদের নিয়ে দারুণ সব প্রতিবেদন তৈরির সুযোগও আছে। নিজেদের সুরক্ষিত রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের গতিবিধি অনুসরণ করা, খোঁজখবর রাখা,পডকাস্ট শোনা বা রাস্তা-ঘাটে তাদের সভা সমাবেশের দিকে চোখ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

Ranchland South Dakota stolen Indigenous land

গবেষণা পরামর্শ ও টুল

‘বিনামূল্যের জমির প্রকৃত মূল্য’: আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়ার ব্যক্তিগত ও জাতীয় ইতিহাস

ক্লারেন দুটো মূল প্রশ্নকে সামনে রেখে এগিয়েছেন: “পরিবারের মধ্যে, বা জাতির কাছে আমরা যে গল্পগুলো বলি সেগুলো আসলে কোনগুলো? কোন গল্পগুলো চেপে চাই আমরা? আর কেন আমরা কিছু গল্প কিছুতেই বলতে চাইনা?”

Recorder panel at IJF24

তহবিল সংগ্রহ পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

স্বাধীন নিউজরুমের আয়ের মডেল কী হতে পারে? 

অল্প বয়সী দর্শকদের কাছে যেন গ্রহণযোগ্য হয়— রেকর্ডারের তরুণ কর্মীরা ঠিক তেমনভাবে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। পাঠকের পয়সা দিয়েই আয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা।