ইলাস্ট্রেশন: জিআইজেএনের জন্য ছবিটি এঁকেছেন স্মারান্দা তোলোসানো
আমি যা শিখেছি: দ্য ক্যারাভানের বিনোদ কে. যোশির শিক্ষা ও পরামর্শ
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
জিআইজেএনের এই নতুন ধারাবাহিকে আমরা বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কঠিন পরিবেশ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ১০টি প্রশ্ন করি। এর উদ্দেশ্য হলো, অন্যান্য সাংবাদিকদের সামনে গভীর অন্তদৃষ্টি তুলে ধরা ও উৎসাহ দেয়া, ব্যবহারিক পরামর্শ দেয়া এবং এই সংকটময় বৈশ্বিক বাস্তবতায় ওয়াচডগ রিপোর্টার ও সম্পাদকেরা যে প্রভাব রাখছেন, সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এই উদ্বোধনী পর্বে আমরা ভারতের প্রথম সারির লং-ফর্ম সাংবাদিকতা সাময়িকী দ্য ক্যারাভানের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক বিনোদ কে. যোশির সাক্ষাৎকার নিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের সাবেক শিক্ষার্থী যোশি একটি নির্ভীক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রিক দেশে স্বৈরাচার ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে দলটি জবাবদিহিতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
১. আপনার করা অনুসন্ধানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কোনটি এবং কেন?
বিনোদ কে. যোশি: ক্যারাভানে আমাদের করা সেরা লং-ফর্ম স্টোরিগুলোতে অনুসন্ধানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল কোনো রাজনীতিবিদের প্রোফাইল, কোনো কর্পোরেশনের উন্নতিতে নজর দেয়া বা ফিরে দেখা কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা। তবে আমাদের দৃষ্টিতে, সার্বিকভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলা যায়, এমন অন্তত দুই ডজনের বেশি স্টোরি জাতীয় পর্যায়ে সাড়া ফেলেছে। সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যে বিষয়গুলো আবশ্যক, তা হলো: পূর্বানুমান দাঁড় করানো, রিপোর্টিংয়ের উন্নতি সাধন, ধাপে ধাপে প্রতিটি পূর্বানুমানের সঙ্গে ফলাফল মিলিয়ে দেখা, রিপোর্টিংয়ের সবগুলো দিক দিয়ে কঠোর পদ্ধতিগত অনুসন্ধান করা, আর স্টোরিটি লেখা হয়ে গেলে — সম্ভাব্য ভুল হিসেবে প্রতিটি তথ্যকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা এবং অসম্ভব কঠোর একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তথ্যগুলো যাচাই করা।
তবে রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে বিচারক লয়ার মৃত্যু নিয়ে করা ধারাবাহিকের উদাহরণ সামনে আসে। রহস্যজনক কারণে এই বিচারকের মৃত্যু হয়েছিল। ভারতের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চার দশকের রাজনৈতিক সহচর অমিত শাহকে খালাস দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তিনি। অমিত শাহকে খালাস দিতে ১৫০ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ সাধা হয়েছিল তাঁকে। সেই প্রস্তাব নাকচ করার ক’দিন পর তিনি মারা যান।
আপাতদৃষ্টিতে একটি একক গল্প থেকে ২৮টি ফলো-আপ স্টোরি হয়েছে; সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের চারজন বিচার বিভাগের ওপর চাপের কথা জানিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, আর এই স্টোরির কিছু অংশ প্রথমবারের মতো ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কোনো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বিরোধী দলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য না থাকায় এই অভিসংশন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছিল। এই গল্পের প্রভাব এখনো আছে।
বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে আমাদের তৈরি করা সোর্সদের মাধ্যমেই আমরা এই স্টোরি করেছি। যে চিকিৎসকেরা এই বিচারকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জালিয়াতি করেছে, এই সোর্সদের কাছ থেকে তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা ১৭ জন সাবেক কর্মচারীকেও খুঁজে পেয়েছি… আর সরকারের উপস্থাপন করা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণগুলোকে আমরা ভুল প্রমাণ করেছি। প্রতিটি ফলো-আপ স্টোরি করতে গিয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
২. আপনার কাজের প্রভাব কেমন ছিল, আর ভারতে ওয়াচডগ রিপোর্টারদেরকে কোন কোন বিষয় নিয়ে আরও গভীরভাবে কাজ করতে দেখতে চান?
ভিকেজে: অনেক সময় ভালো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সরকারি লোকদের গোপন বিষয় প্রকাশ্যে চলে এলে তা বিরোধী দল, সামাজিক মাধ্যম ও স্বাধীন গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আপসকামী গণমাধ্যম সংস্থাগুলো এধরনের স্টোরি যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে চায়, কারণ তারা ক্ষমতাসীন সরকারকে অসন্তুষ্ট করতে চায় না। আমাদের অনুসন্ধানী স্টোরিগুলো ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে — সেটি রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি নিয়ে হোক, ক্ষমতাসীন বিজেপির জাতীয় নেতাদের দেওয়া লাখ লাখ ডলারের আর্থিক বিনিময়, অথবা ট্যাক্স হ্যাভেন কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ছেলের পরিচালনা করা কোম্পানি নিয়ে। [সম্পাদকের নোট: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ছেলে এই দাবি অস্বীকার করেছে, আর ক্যারাভানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছে। সাময়িকীটি একটি চলমান মামলায় নিজেদের স্টোরির পক্ষে দাঁড়িয়েছে।]
৩. ভারতে ওয়াচডগ রিপোর্টিংয়ের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী, আর ব্যক্তিগতভাবে আপনার সামলানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি?
ভিকেজে: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গণমাধ্যমের বিনিয়োগকারী, প্রকাশক ও সম্পাদকদের কাছ থেকে আসা সামগ্রিক প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনের ঘাটতি। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ভারতের বড় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্টোরি প্রকাশ করা খুব কঠিন বলে মনে করেন। দ্বাররক্ষকের ভূমিকায় থাকা এই প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াচডগ সাংবাদিকদের কাছে প্রায়ই এই বার্তা পৌঁছে দেয়: “অনুসন্ধানী স্টোরি আনতে যাবেন না। এই স্টোরি না করলেও আপনি বেতন পাবেন।” [প্রধানমন্ত্রী] মোদির উত্থান এবং ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মতাদর্শের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই গণমাধ্যমগুলো বেশি আগ্রহী। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক বা সাংবাদিক যে শ্রেণীই হোক না কেন, সরকারি প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে খুব একটা চ্যালেঞ্জ করা হয় না। ভারতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হলো একটি ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী পরিবেশে কাজ চালিয়ে যাওয়া, যেখানে সোর্স এবং হুইসেলব্লোয়ারেরাও নিজেদের জীবন নিয়ে সংশয়ে থাকেন। এর অসংখ্য প্রভাবের মধ্যে আছে সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা এবং আইনকে সরকার বা সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, অথবা সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী বা নথি ফাঁসকারী সোর্সদের হয়রানি করা। সাংবাদিক ও তাদের সোর্সেরা এমন এক সময়ের মধ্যে কাজ করছেন, যখন তাঁদের সত্যের সঙ্গে থাকার কারণে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।
৪. জবাবদিহিমূলক সাক্ষাৎকার পাওয়া এবং তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য আপনার পরামর্শ বা কৌশল কী হবে?
ভিকেজে: গররাজি বা সহযোগিতায় অনাগ্রহী সোর্সকে রাজি করাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের হুটহাট, যার-তার সঙ্গে লেনদেনে যাওয়া উচিত নয়। সোর্সেরাও মানুষ, আর তাই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা নথি দেয়ার কারণ সম্পর্কে তাঁর পরিষ্কার ধারণা না-ও থাকতে পারে, বা প্রক্রিয়ার মাঝপথে থমকে যেতে পারে। একজন সাংবাদিকের উচিত তাঁর নৈতিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি না দিয়ে মানবিক দিক দিয়ে সোর্সদের আগ্রহী করে তোলা এবং সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকের আচরণের মাধ্যমে কোনো অসহযোগী সোর্সের কাছ থেকে সহযোগিতা আদায় করার বিষয়টি চলচ্চিত্রে খুব কমই দেখা যায়।
ঠিক উল্টো কাজটা করুন। কী করলে কেউ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে? সাংবাদিক ও সোর্সের মধ্যকার সামাজিক দূরত্ব কমাতে কোন বিষয়টি কাজে আসতে পারে? এমন কিছু করুন যেন আপনার সোর্স আপনাকে বুঝতে পারে, আর আপনিও তা-ই। সাংবাদিকের ভেতরের শ্রেণী, বর্ণ, জাতিগত, লিঙ্গ, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার ভেঙে ফেলুন, যেন সেই প্রতিবেদক আরও ভালো মানুষ হিসেবে সোর্সের কাছে যেতে পারে; আর সোর্সও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
৫. অনুসন্ধানে আপনার প্রিয় রিপোর্টিং টুল, ডেটাবেস বা অ্যাপ কী কী?
ভিকেজে: ভারতীয় প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অতীত আছে, এমন কর্পোরেশন ও ব্যক্তিদের সম্পর্কে হাতের কাছে কোনো ডেটাবেস থাকলে সেটি দিয়ে শুরু করুন। উন্মুক্ত ডেটাবেসের আইনি ঘোষণাগুলো শুরু করার জন্য বেশ ভালো। তারপর জাহাজের গতিবিধি ট্র্যাক করছে, এমন আন্তর্জাতিক ডেটাবেসে আমাদের আস্থা আছে, যেমন; ফিফটিটুডব্লিউএমবি বেশ কাজের জায়গা। যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলোর ডেটাবেসের তুলনায় ভারতীয় আদমশুমারি ডেটাবেস অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য অতটা সহজবোধ্য নয়, আর সরকারি সংস্থাগুলোর প্রক্রিয়াজাত করা অপরাধের ডেটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য তেমন কাজে আসে না। ভারতীয় কারাগারের তথ্যও খুব একটা কার্যকর নয়। সাধারণভাবে, ভারতে তথ্যের অধিকার একজন নাগরিকের জানার অধিকার হলেও অন্য বিষয়গুলোর মতো অনেকটা সোর্স বা নথির পিছনে ছোটার মতো বিষয়। অনেক সময় তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রী লিখিত আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তবে যে কংগ্রেস সরকার এই আইনটি কার্যকর করেছিল, তারা এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকার আইনটিকে ইতিমধ্যেই দূর্বল করে ফেলেছে। এই কাজের পিছনে নাগরিকদের জানার অধিকার সংরক্ষণে কোনো সরকারের সদিচ্ছা কাজ করেনি, আর কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠীর নয়-ই।
৬. এ পর্যন্ত আপনার পেশাজীবনে পাওয়া সেরা পরামর্শ কী ছিল আর একজন সম্ভাবনাময় অনুসন্ধানী প্রতিবেদককে আপনি কী পরামর্শ দিবেন?
ভিকেজে: কঠোর পরিশ্রম করুন। বড় বড় আগ্রহের জায়গাগুলো শনাক্ত করুন আর মাঝারি গোছের গল্পেই খুশি থাকবেন না, সর্বোচ্চ মানের স্টোরির জন্য ছুটুন। সব সময় কৌতূহল ধরে রাখুন, গল্প নিয়ে যেন উদ্দীপনায় ভাটা না পড়ে আর সবাইকে ৬০% থেকে ৯০% স্টোরির জন্য চাপ দিন। কোনো অনুসন্ধানী স্টোরিতে মতামতে আটকে যাবেন না। নিজে না দেখে বিশ্বাস করবেন না। নিজেকে সংবাদকক্ষে নয়, বরং একটি যুদ্ধক্ষেত্রে কল্পনা করুন, যেখানে ছোট্ট একটি ভুল মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। লক্ষ্য যখন ঘুষি মারা, তখন খোঁচা মারতে যাবেন না, বরং মোহাম্মাদ আলীর মতো ঘুষি মারুন — বড় বড় সব ধাক্কা দিন, রিপোর্টিং, অনুসন্ধান ও গভীরে খতিয়ে দেখার কাজে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গল্পের গুরুত্ব বাড়ান। এই ছিল আমার উপদেষ্টার কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শের কিছু অংশ, আর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষী অনুসন্ধানী সাংবাদিক পেলে আমি সানন্দে এই পরামর্শগুলো দেই।
৭. আপনাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে, এমন একজন সাংবাদিকের নাম বলুন আর এই মুগ্ধতার কারণই বা কী?
ভিকেজে: কেবল একজনকে বেছে নিতে হলে আমি সিমুর হার্শের কথা বলব। ভিয়েতনাম থেকে ইরাক যুদ্ধ পর্যন্ত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাঁর স্টোরির প্রভাব বিদ্যমান ছিল। মানবিক দিক নিয়ে তিনি সাড়া জাগানো কাজ করেছেন, আর নথি নির্ভর কাজেও তিনি দুর্দান্ত। কলেজের শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে আমি যখন ওয়াশিংটন, ডিসি-তে তাঁর অফিসে দেখা করি, আমি তাঁর কাছে পরামর্শ চেয়েছিলাম; উত্তরে তিনি বলেছিলেন: “আপনার মা যদি বলেন, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন, তবে অবশ্যই তা যাচাই করে দেখবেন।” যতটা সম্ভব আমি সেই পরামর্শের সারকথা অনুসরণের চেষ্টা করেছি।
৮. অনুসন্ধানী সম্পাদক হিসেবে আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় একটি ভুলের কথা বলুন আর সেখান থেকে আপনি কী শিখেছেন?
ভিকেজে: আমরা এমন একটি স্টোরি প্রকাশের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম যা খুব সম্ভবত সরকারি কোনো সংস্থা, বা তাদের মদদপুষ্ট কোনো গোষ্ঠীর প্রকল্প ছিল। এটি ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণার সময়কার ঘটনা, আর এমন এক সময়ের ঘটনা যখন আমরা একের পর এক সাড়া জাগানো স্টোরি তৈরি করছিলাম। এই বিশেষ গল্পের পিছনে ছিল আমাদের কঠোর পরিশ্রম আর স্টোরিটি প্রকাশের একেবারে দ্বারপ্রান্তে ছিল। তবুও তখনো আমার মনে কিছুটা সন্দেহ ছিল আর তাই চেষ্টার ধার আরও বাড়াতে আমরা কিছুটা ধীরে চলতে লাগলাম। এই পর্যায়ের যাচাই-বাছাইয়ে আমরা একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি আর কিছু অপ্রচলিত সোর্সের নাগাল পেয়েছি এবং জানতে পেরেছি যে নথির ভিত্তিতে গল্পটি গড়ে উঠেছে, তা ছিল জাল। সৌভাগ্যক্রমে, আমরা একটি বড় ভুল থেকে বেঁচে গিয়েছি। প্রায়ই কোনো একজন সোর্স বা আপনার নিজ দলের কোনো সাংবাদিক জেনে বুঝে বা না জেনে এমন গল্পের খোঁজ দিতে পারেন, যা হয়তো অনুসন্ধানের উপযোগী নয়, তাই সবসময় সতর্ক থাকা জরুরি। এমনকি মায়ের ভালোবাসা যাচাই করা নিয়ে সিমুর হার্শের পরামর্শও সত্যবচন।
৯. এ ধরনের কাজের চাপ আপনি কীভাবে এড়ান?
ভিকেজে: মাঝে মাঝে বিরতি নেয়াটা কাজে দেয়। এছাড়া কেউ সবসময় “ফিফথ গিয়ারে” চলতে পারে না, তাই কয়েক সপ্তাহের জন্য তৃতীয় বা চতুর্থতে রাশ টেনে ধরা, এরপর আবার পঞ্চম গিয়ারে ফিরে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে, সবসময় ব্যাপারটা যতটা সহজ মনে হয় ততটা সহজ নাও হতে পারে।
১০. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে আপনি কি হতাশ, বা আপনি কি ভবিষ্যতে এই অবস্থার পরিবর্তন আশা করেন? পাঁচ বছরে আপনি কী দেখতে চান?
ভিকেজে: বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী প্রবণতা যত বাড়ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য স্থানীয় সম্পদ ততই সীমিত হয়ে আসছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সমর্থনে আরও বিকেন্দ্রিকৃত উপায় গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই, অতি-স্থানীয় পর্যায়ের পাশাপাশি বৈশ্বিক অনুসন্ধান বাড়ুক। এখন যেখানে সাংবাদিকের আগে সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে, মতামতও যেখানে স্বাধীন ও সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে উঠেছে, সেখানে নিশ্চিত করে সামনে এগিয়ে যেতে যে সংবাদকক্ষের জন্য মুখ রক্ষার একমাত্র উপায় হলো সাহসের সঙ্গে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়া। তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঠিক তা-ই, যা কন্টেন্ট নির্মাতা ও সক্ষমতা সম্পন্ন সংবাদকক্ষের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেবে।
আমি আশা করি, আগামী পাঁচ বছরে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জনসংস্কৃতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। গ্রামের কোনো এক কর্মকর্তার অতীত ইতিহাস অথবা জাতীয় ও স্থানীয় দুই পর্যায়েই শাসক দলের সভাপতির দৈনন্দিন লেনদেন নিয়ে অনুসন্ধান, জনসাধারণের সামনে তথ্যবহুল আলোচনা হাজির করবে।
আরও পড়ুন
ওয়ান ম্যাগাজিন’স ফাইট ফর দ্য ইন্ডিয়ান মাইন্ড
হোয়াই জার্নালিস্টস ইন অটোক্রেসিস শুড রিপোর্ট অ্যাজ ইফ দে’আর ইন এ ডেমোক্রেসি
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।