প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

লেখাপত্র

বিষয়

আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক: পরিবেশ সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ ও অর্থ জোগাচ্ছে যারা

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

মিশরে একটি রিপোর্টিংয়ে গিয়ে সাংবাদিক ফ্রেডরিখক মুগিরা

উগান্ডার পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক ফ্রেডরিক মুগিরা। কোনো সপ্তাহে তিনি হয়তো পানি সরবরাহের ঠিকাদারি ব্যবস্থার দুর্নীতি উন্মোচন করছেন; কোনো সপ্তাহে জিও-লোকেশন ডেটা দিয়ে শনাক্ত করছেন ভূমির অবৈধ মালিকানা; পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আফ্রিকাজুড়ে শত শত সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা তো আছেই।

এসব কাজের জন্য মুগিরা প্রস্তুতি নিয়েছেন অনেক দিন ধরে। ২০১৫ সালে তিনি প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন, যেখানে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশ ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি সই করে। সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (ইজেএন) থেকে একটি ফেলোশিপ পেয়েছিলেন তিনি। 

ফ্রান্সে গিয়ে এই সম্মেলন কাভার করার যাবতীয় খরচ বহন ছাড়াও মুগিরা ও কয়েকজন সাংবাদিককে জিও-জার্নালিজম বা ভূসাংবাদিকতা-সংক্রান্ত রিপোর্টিংয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ইজেএন।

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধানে উৎসাহ দিতে বিশ্বজুড়ে মুগিরার মতো এমন হাজারো সাংবাদিককে সহায়তা দিয়ে থাকে ইজেএন। এই বিষয় নিয়ে সাংবাদিকতার সম্পাদকীয় এবং আর্থিক মডেলও তারা তৈরি করেছে। 

মুগিরা এখন ইনফোনাইল ডট অর্গ নামে একটি জিও-জার্নালিজম প্রকল্প পরিচালনা করেন, যেখানে নীল নদ অববাহিকার ১১টি দেশের দেড় শর বেশি সাংবাদিক যুক্ত আছেন। তিনি একই সঙ্গে ওয়াটার জার্নালিস্টস আফ্রিকাও চালান। এই নেটওয়ার্ক আরও বড়। এখানে আফ্রিকার ৫০টি দেশের ৭৫০ জনের বেশি সাংবাদিক যুক্ত আছেন। তাঁরা অনুসন্ধান ও রিপোর্ট করেন পানিসংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে।

মুগিরার মতে, “পরিবেশগত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হলো পরিবেশ-বিরোধী অপরাধ উন্মোচন করা এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য কার্যকর সমাধান তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়।” তিনি বলেন, “এভাবে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিবেশ রক্ষা করতে পারব এবং সাংবাদিক হিসেবে কমিউনিটির সুরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারব।”

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সুসজ্জিত করা

ইজেএন মূলত  জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন ইন্টারনিউজের একটি প্রকল্প। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থার বাজেট ছিল ৬ দশমিক ৬ কোটি ডলার। আফ্রিকার শরণার্থী শিবিরে রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠা, সংঘাত ও সুশাসন নিয়ে কর্মশালা পরিচালনা এবং আফগানিস্তানে স্বাধীন রেডিও নেটওয়ার্ক ও জাতীয় সংবাদ সংস্থা তৈরি—চার দশকের বেশি সময় ধরে এমন অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে ইন্টারনিউজ। 

২০০৪ সালে ইজেএন প্রতিষ্ঠা করেন ইন্টারনিউজের পরিবেশ-বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক জেমস ফান। উদ্দেশ্য ছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাংবাদিকদের সহায়তা করা, যেন তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সম্পর্কে যথাযথ রিপোর্ট করতে পারেন।  

ফানের কাছ থেকে জানা যায়, ইজেএন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের প্রধানত চারভাবে সহায়তা দেয়: তহবিল, প্রশিক্ষণ, রিসোর্স ও মেন্টরশিপ। 

ইজেএন, তহবিল জোগান দেয় রিপোর্টিং অনুদানের মাধ্যমে। এই টাকা দিয়ে সাংবাদিকতা বা যাতায়াত-সংশ্লিষ্ট খরচ মেটানো যায়। কাজের ধরন বুঝে অনুদানের আকার ৫০০ থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ব্যক্তি সাংবাদিক বা সাংবাদিকদের দল—যে কেউই এই অনুদান পেতে পারে। সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য আরও বড় তহবিলের ব্যবস্থা থাকে, যার পরিমাণ সাধারণত ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়। এটি দিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে। 

ফানের হিসাব অনুযায়ী, ইজেএন প্রতিবছর এমন এক শর বেশি অনুদান দেয়।  চলতি বছর, তাদের বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ ডলার, যার বেশির ভাগই জোগান দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তিপর্যায়ের দাতা, ফাউন্ডেশন (দ্য উইলিয়াম অ্যান্ড ফ্লোরা হেলেট ফাউন্ডেশন, দ্য আর্কেডিয়া ফান্ড ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) ও দ্বিপক্ষীয় দাতা সংস্থাগুলো। দ্য ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, ইউএসএআইডি—এদের সবাই ইজেএনের প্রকল্পে সমর্থন জুগিয়েছে। আরও অনেকের মধ্যে হাওয়ার্ড জি. বাফেট ফাউন্ডেশন, ফোর্ড ফাউন্ডেশন, ওক ফাউন্ডেশনও আছে।

ইজেএন-এর কর্মকাণ্ডে প্রশিক্ষণই প্রধান ভূমিকা রাখে। জিও-জার্নালিজমের মতো অনুসন্ধানী কৌশল শেখার জন্য প্রয়োজন ম্যাপিং, জিও-ট্যাগিং ও ডেটা ইনফোগ্রাফিকসের দক্ষতা, যা মুগিরা বা তাঁর মতো আরও অনেক সাংবাদিক হয়তো অন্য কোনোভাবে শিখতে পারতেন না। 

মুগিরা বলেছেন, “লং-ফর্ম প্রতিবেদন তৈরির জন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন, যেটি উন্নয়নশীল কোনো দেশের খুব বেশি সাংবাদিকের হাতে থাকে না। কিন্তু, আর্থিক ও প্রশিক্ষণগত সহায়তা পেলে আমরা এগুলো করতে পারি এবং এসব দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অন্যদেরও প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারি।” 

এ ছাড়া, রিপোর্টারদের জন্য আরও বেশ কিছু পন্থায় দরকারি রিসোর্স সরবরাহ করে ইজেএন, যার মধ্যে বিষয়ভিত্তিক (যেমন প্রাণীবাহিত রোগ কাভার করবেন কীভাবে) ওয়েবিনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন টুল বা ডেটাসেট ব্যবহারের কলাকৌশল নিয়ে আলোচনাও রয়েছে। এমনই এক টুল হলো: #ওয়াইল্ডআই। বন্যপ্রাণী পাচারসংক্রান্ত অপরাধের দিকে নজর রাখতে এই টুল বানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশগত অনুসন্ধানী সংগঠন, অক্সপেকার্স। 

দিকনির্দেশনা ও প্রতিক্রিয়া

পরবর্তী ধাপে আসে মেন্টরশিপ। ইজেএন-এর অনুদান পাওয়া সাংবাদিকেরা জোট বাঁধেন অভিজ্ঞ কোনো সাংবাদিক বা সম্পাদকের সঙ্গে, যিনি অনুসন্ধানের পুরো সময়টায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ তৈরি ও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় সেই সাংবাদিককে সহায়তা করেন। 

কনটেন্ট সমন্বয়কারীদের এই দল ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। সলোমন আইল্যান্ড থেকে পশ্চিম আফ্রিকা পর্যন্ত, তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন উঁচুমানের অনুসন্ধান নিশ্চিত করা এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য । পরিবেশগত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সাফল্যের ক্ষেত্রে এই পর্যায়ের সম্পাদকীয় দিকনির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সারা শোনহার্ট। খুব সম্প্রতি তিনি পালন করেছেন ইজেএন-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব। 

শোনহার্ট বলেছেন, বেশির ভাগ অনুসন্ধানী সাংবাদিকের অনেক প্রশ্ন থাকে, রিপোর্টিং করতে গিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়েন, বা এগুলো কিছু না হলেও তাঁরা হয়তো অন্য কোনো সম্পাদককে দিয়ে তাঁদের খসড়াটি একবার দেখিয়ে নিতে চান। এ ক্ষেত্রে আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি অনুসন্ধানটি আরও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এমন কিছুও বলার থাকতে পারে যে, এখানে আরেকজন সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য দেওয়া উচিত, বা প্রতিবেদনটিতে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর আরও প্রতিনিধিত্ব থাকতে পারে কি না। 

বন্যপ্রাণী পাচার নিয়ে ইজেএন-এর একটি ওয়েবিনার। ছবি কৃতজ্ঞতা: ইজেএন

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা নানা ধরনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কেউই যেন পেছনে পড়ে না থাকেন, তা নিশ্চিত করতে চায় ইজেএন। “আমাদের কাজের একটি বড় জায়গা হলো মেন্টরশিপ। কারণ, এখন অনেক সাংবাদিক ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করছেন, এবং তাঁরা সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে খুব বেশি সহায়তা পান না,” বলেন শোনহার্ট; যিনি এখন ইঅ্যান্ডই নিউজের আন্তর্জাতিক জলবায়ু রিপোর্টার হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। ইঅ্যান্ডই নিউজ হলো পলিটিকো নিউজরুমভিত্তিক একটি জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক রিপোর্টিং এজেন্সি। 

ইজেএন তাদের নিজেদের সাইটেও প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করে এবং প্রায়ই বৈশ্বিক কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে জোট বেঁধে। সাম্প্রতিক এমন কয়েকটি অনুসন্ধানের মধ্যে ছিল: সলোমন আইল্যান্ডে বৃক্ষনিধনের ক্ষতি, ভারতের খরাপীড়িত এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ-চালিত পানির পাম্প, এবং মালয়েশিয়ার বন্যপ্রাণী পাচারকারী। 

কার্য ও কারণের সংযোগ ঘটানো

অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার নিয়ে ভিয়েনাভিত্তিক পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক ডেনিস রুবি যে অনুসন্ধান করেছেন, তাতে ইজেএন-এর সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।  

অনুদান পাওয়ার পর, লন্ডনে ইজেএন আয়োজিত এক কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন রুবি। সেখানে অভিজ্ঞ অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন এবং তাঁকে তৈরি করেছিলেন আরও বড় একটি বন্যপ্রাণী বেচাকেনা–সংক্রান্ত সম্মেলনের জন্য। “এটি আমাকে আমার রিপোর্টিংয়ের জন্য দারুণভাবে তৈরি করেছিল,” বলেন রুবি। 

তাঁর ভাষায়, “বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য মোকাবিলার ক্ষেত্রে কী ধরনের নতুন ইস্যু ও প্রযুক্তি আছে, তা আমি জেনেছি এই সম্মেলন থেকে। এখানে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে পুরো বিশ্ব থেকে আসা সংরক্ষণবাদী, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, বন্যপ্রাণী পাচারবিরোধী আইন প্রয়োগের সঙ্গে কাজ করছেন এমন আইনজীবী ও স্থানীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে।” 

জার্মানির এক শুল্ক কর্মকর্তা একটি তারের বাদ্যযন্ত্র ধরে আছেন, যেটি বানানো হয়েছে আর্মাডিলোর চামড়া দিয়ে। ছবি কৃতজ্ঞতা: ডেনিস রুবি

রুবির এই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ফলাফল হলো একটি অনুসন্ধানী সিরিজ। এটি আলোকপাত করেছে বন্যপ্রাণী পাচারে ইউরোপীয়দের ভূূমিকার ওপর; যার স্পষ্ট পরিবেশগত প্রভাব দেখা গেছে আফ্রিকা এবং এশিয়াতেও। রুবি বলেন, “এই অনুদানের কারণে ইউরোপের এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক দেখাতে পেরেছেন, বন্যপ্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে এই মহাদেশের ভূমিকা কী। কে জানত যে, পোল্যান্ডে একটি বিশাল ও আকর্ষণীয় বাঘের খামার আছে?”

ফানের মতে, সেরা পরিবেশগত অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ে প্রায়ই এ ধরনের কার্যকারণের সংযোগ দেখানো হয়, যেগুলো অন্যরা সহজে দেখতে পায় না, বা এড়িয়ে যায়। পরিবেশগত দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির সংযোগ দেখানো সাংবাদিকদের জন্য প্রায়ই বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়; কারণ, প্রভাবগুলো হয় খুবই দূরবর্তী ও লম্বা সময় ধরে। 

এসব সংযোগ দেখানোর জন্য ইজেএন অনেক জায়গা থেকে মানুষদের এক জায়গায় নিয়ে আসে। যেমন এটি ব্রাজিল, মেক্সিকো, গুয়াতেমালা ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন রিপোর্টার ও সম্পাদককে সহায়তা দেয় অ্যামাজনের বন ধ্বংসের সঙ্গে সমুদ্রে শৈবাল বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক কী, এবং কীভাবে তা ক্যারিবীয় উপকূল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা অনুসন্ধান করে দেখার জন্য। 

বহু দেশ ও ভাষার মানুষদের সমন্বয়ে দল গড়া, সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে গবেষণা, দূষণের উৎস নিয়ে অনুসন্ধান, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা ইত্যাদির মাধ্যমে ইজেএন বেশ কিছু সাড়া জাগানো প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ফান উল্লেখ করেছেন, “স্থানীয় অনেক সংবাদমাধ্যম সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এ ধরনের অনুসন্ধান পরিচালনার মতো রিসোর্স বা অভিজ্ঞ মানুষ তাঁদের নেই। এমনকি অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমও পরিবেশগত এসব কাভারেজকে তাদের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে না। ফলে এই জায়গায় আমরা এগিয়ে আসতে পারি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।”

মেক্সিকোর ক্যারিবিয়ান উপকূলের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, কুয়িনটানা রু-তে সামুদ্রিক শৈবালের উপদ্রব। ছবি কৃতজ্ঞতা: পাওলা চিওমান্তে

স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব অনুসন্ধান

ইজেএন অবশ্য কাজটি এককভাবে করছে না। মোঙ্গাবে, অক্সপেকার্সপুলিৎজার সেন্টার ফর ক্রাইসিস রিপোর্টিংয়ের মতো অন্যান্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও আন্তর্জাতিক পরিবেশগত রিপোর্টিংয়ের জন্য অনেক রিসোর্স জোগান দিচ্ছে । কিন্তু ফান ও শোনহার্ট— দুজনেই বলেছেন, নিজ নিজ অঞ্চলে অর্থপূর্ণ অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য যে ধরনের সম্পদের প্রয়োজন হয়, তার ঘাটতি আছে বিশ্বের বেশির ভাগ সংবাদ প্রতিষ্ঠানেরই। 

পরিবেশগত অনেক কেলেঙ্কারিই দুর্নীতির ফসল। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে জবাবদিহি করার জন্যও অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করছে ইজেএন। ফান বলেছেন, “আমাদের মিশন হলো: তাদের প্রতিবেদনগুলোকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে, এবং স্থানীয় ভাষায় পৌঁছে দেওয়া। আমরা মনে করি, এখানেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারব।”

ইজেএন-এর কাজ যেসব প্রভাব তৈরি করেছে, সেগুলোর সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণের মধ্যে আছে: অ্যামাজনের ভেতর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প আটকে দেওয়া, তানজানিয়ায় খনি খননসংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন, এবং ফিলিপাইনে একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর অন্যায্য আচরণের খবর তুলে ধরা। 

ইজেএন মনে করে, সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে চাইলে, আরও অনেক অনুসন্ধানী সাংবাদিককে আধুনিক সব টুল ও কৌশল দিয়ে সুসজ্জিত করে তুলতে হবে, যেন তাঁরা তাঁদের কমিউনিটিতে পরিবেশগত বিষয়গুলো নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন। এবং তাঁদেরকে এমনভাবে সম্পাদকীয় ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে হবে, যেন তাঁরা নিজেদের কাজের জায়গায় প্রভাব ফেলতে পারেন। 

শোনহার্ট বলেন, “তীব্র বৈরী আবহাওয়া ও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় কীভাবে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রভাব ফেলছে, সে সম্পর্কে আপনি সত্যিই কিছু লিখতে পারবেন না, যদি আপনি হাজার মাইল দূরের রাজধানীতে বসে থাকেন আর সেই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা না বলেন। আরও বেশি বেশি সাংবাদিককে বুঝতে হবে, কীভাবে নিজ কমিউনিটির সঙ্গে সংগতি রেখে পরিবেশগত বিষয়গুলো কাভার করা যায়। এই স্টোরি তো এমন নয় যে চলে যাচ্ছে।”

আরো পড়ুন

আফ্রিকা থেকে: পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধানে যেভাবে শক্তি যোগাচ্ছে জিও-জার্নালিজম

জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি

জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া


উইল ফিশার একজন সাংবাদিক। তাঁর কাজের জায়গা প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের আন্তসম্পর্ক। তিনি কাজ করেছেন বিজনেস ইনসাইডার, নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন ও সেন্টার ফর কোঅপারেটিভ মিডিয়ার হয়ে। সিটি ব্যুরোর হয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছেন স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদ নিয়ে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

জিআইজেএনের দুই দশক

জিআইজেএনের বর্ষপূর্তি। কুড়ি বছর আগে কয়েকটি অলাভজনক সংগঠন বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকতার সমর্থনে একটি নেটওয়ার্ক গঠনের লক্ষ্যে একাট্টা হয়েছিল৷ সেটি ছিল ২০০৩ সালে, কোপেনহেগেনে আয়োজিত দ্বিতীয় গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স। তারপর থেকে, আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমাদের প্রসারে আমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছি।