

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে টিবিআইজে যেভাবে ‘সাইলেন্সড স্টোরিজ’ উন্মোচন করেছে
সম্পাদকীয় নোট: প্রতিবেদনটি দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (টিবিআইজে)-এ প্রকাশিত হয়। তাদের অনুমতির নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হলো। শৈলীগত কারণে সামান্য সম্পাদনা করা হয়েছে।
এলেনর রোজ — এনাবলার্স এডিটর

এলেনর রোজ, টিবিআইজের এনাবলার্স এডিটর
২০২৩ সালের এপ্রিলের কর্মব্যস্ত একটি দিনে ক্যাফেতে বসে আমি চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার লক্ষ্য টিবিআইজের ‘এনাবলার্স’ দলের নেতৃত্ব দেওয়া, যারা ‘কালো টাকা’ ঘিরে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে কাজ করে।
একটা সমস্যা ছিল। তা হচ্ছে, নির্দিষ্ট বিটের সঙ্গে মানানসই কিছু প্রতিবেদন আমাকে পিচ করতে হবে। বিষয়: যুক্তরাজ্যের আইনজীবী, পরামর্শক এবং অন্যান্য পেশাজীবীরা কীভাবে বিশ্বের কোটিপতি ধনী ব্যক্তিদের অনিয়ম করতে সহায়তা করে। দুর্নীতি নিয়ে আমি আগেও কাজ করেছি, তবে খানিকটা অপ্রস্তুত বোধ করছি। বসে বসে এক ডজন আইডিয়া নিয়ে ভাবলাম। এর মধ্যে দু-একটি আইডিয়া নিয়ে বেশ নাড়াচাড়াও করলাম। চিন্তাগুলো নিরেট ছিল, তবে পুরোপুরি নতুন কিছু নয়।
আর কিছু? সাক্ষাৎকার বোর্ডের সদস্যরা আমার কাছে জানতে চাইলেন। আমি কয়েকটি বিষয় নিয়ে তাৎক্ষণিক কথা বললাম। অবশেষে, আমার চোখ পড়ল নোটে লেখা কয়েকটি শব্দের ওপর। আমি বলতে শুরু করলাম, “ওহ হ্যাঁ! আপনারা তো জানেন, সাংবাদিকেরা প্রায়ই আইনি হুমকির মুখে পড়েন?” আমি সম্প্রতি আমার কাছে আসা কয়েকটি চিঠির কথা ভাবছিলাম। চিঠিগুলো আমার হাতে আসে “রাইট টু রিপ্লাই” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অর্থাৎ সাংবাদিক হিসেবে আপনি যখন আপনার অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জড়িত ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে যাঁরা বড় বড় দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করেন, তাঁরা আপনাকে ধারণা দিতে পারবেন যে জবাব বা প্রতিক্রিয়া পেতে ঠিক কতটা সময় লাগতে পারে। সাধারণত সাংবাদিকদের শেষ মুহূর্তে আটকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এগুলো পাঠানো হয় এবং অনেক সময় অত্যন্ত জোরালো, আক্রমণাত্মক সুরে লেখা হয়। কখনো কখনো প্রতিক্রিয়া পাঠানো হয় নামডাক আছে এমন কোনো আইনজীবীদের মাধ্যমে। সম্প্রতি আমি এমন চিঠির প্রতিক্রিয়া লিখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেছি, চেষ্টা করেছি প্রতিটি শব্দের মধ্যেকার বিভ্রান্তিগুলো কাটাতে।
আর, অবশ্যই, এই ভয়টা তো থাকেই—যতটা দায়বদ্ধতার সাথে আপনি প্রতিবেদন তৈরি করুন না কেন, আপনার নামে মামলা হতে পারে। আপনি ভয়াবহ খরচের চাপে পড়তে পারেন। এটা হলো স্ট্র্যাটেজিক ল’স্যুটস অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পারটিসিপেশন (স্ল্যাপ) এর সারমর্ম। আমি জানতাম টিবিআইজে এ ধরনের বিভিন্ন হুমকি পেয়েছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনের কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো মামলাটিকে স্ল্যাপ হিসেবেই উল্লেখ করেছে।
আমি বলেছিলাম, “আমার মনে হয়, কখনো কখনো এ ধরনের হুমকিতে কাজ হয়। প্রতিবেদনটি ঠিকঠাক হওয়ার পরও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পিছু হটে। তাই আমরা এখনও জানি না ঠিক কতগুলো প্রতিবেদন এ ধরনের হুমকির কারণে আটকে আছে? কেন আমরা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলব না? তাদের কাছ থেকে শুনব না যে, এই ধরনের হুমকির কারণে ঠিক কতগুলো গল্প হারিয়ে গেছে এবং তা নিয়ে পার্লামেন্টে মন্ত্রীদের আলোচনার জন্য অনুরোধ করবো না?”
আমি জানতাম যে, সংসদ সদস্যরা পার্লামেন্ট হাউসে যা বলেন, পদমর্যাদা বলে বিশেষ আইনগত সুবিধা থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না।
টিবিআইজের সম্পাদক ফ্রাঞ্জ ওয়াইল্ড বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। রীতিমত ভাবতে বসলেন। এরপর এমন এক চেহারা করে বললেন, “আপনি জানেন, আমার মনে হয় এটা আসলেই একটা কাজের কাজ হতে পারে।” আমি পরে বুঝেছি যে, তাঁর ওই চেহারার মানে তিনি সত্যিই গুরুত্ব সহকারে কিছু একটা ভাবছেন।

এক বছর ধরে, দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (টিবিআইজে) এমন কিছু জনস্বার্থমূলক প্রতিবেদন উন্মোচন করেছে, প্রকাশের আগেই যেগুলোকে চাপা দেওয়া হয়েছিল। এ গল্পগুলোকে ভিত্তি করে ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের ব্যাকবেঞ্চ সদস্যদের (কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রী নন) মধ্য সংসদীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: স্ক্রিনশট, টিবিআইজে
ঘটনাগুলো খুঁজে বের করা
আমি চাকরিটি পেয়ে যাই। তবে এখনও মনে পড়ে, সে মুহুর্তে বেশ কঠিন একটি কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার কথাই মনে হচ্ছিল আমার—ভেতরে ভেতরে দারুণ উত্তেজিত বোধ করছিলাম। পরিকল্পনাটিকে আমি নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করলাম। টিবিআইজের জ্যেষ্ঠ সম্পাদকেরা তাতে সম্মতি দিলেন।
অনেক ঝুঁকি ছিল। যাঁরা আইনি হুমকির মুখে পড়েছেন, তাঁরা কিন্তু এককথায় নিজেদের গল্পগুলো আপনাকে বলবে না। তাছাড়া, পার্লামেন্টের ব্যাকবেঞ্চ সদস্যদের নিয়ে বিতর্ক আয়োজনের দরকার ছিল। তবে আমাদের আগে কেউ এভাবে এ ধরনের বিতর্ক আয়োজনের চেষ্টা চালিয়েছে কিনা, তা নিয়ে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। তাই আমাদের সামনে কোনো উদাহরণও ছিল না।
সৌভাগ্যক্রমে আমার পাশে ছিল টিবিআইজের এনাবলার্স টিম। বিশেষ করে করিতকর্মা ইমপ্যাক্ট এডিটর লুসি ন্যাশ এবং প্রতিভাবান রিপোর্টার এড সিডনস। অপ্রকাশিত গল্পগুলোর খোঁজ আমরা কোথায় করতে পারি, তা নিয়ে কাজে লেগে পড়লাম। আমরা এর নাম দিয়েছিলাম ‘সাইলেন্সড স্টোরিজ।’
লুসি প্রথমে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের একটি তালিকা তৈরি করেন। আমাদের ধারণা ছিল, ছোট বার্তাকক্ষের অর্থ-সম্পদ কম থাকে বলে ধনী ব্যক্তিদের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা তাদের জন্য কঠিন। এছাড়া জাতীয় ও বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন এবং পেশাগতভাবে বিভিন্ন অনিয়মের পর্দা উন্মোচন করেন এমন কিছু রিপোর্টারদেরও আমরা তালিকায় যুক্ত করি।
কিন্তু লুসি কয়েক বছর ধরে ইউকে অ্যান্টি-স্ল্যাপ কোয়ালিশন এর মাধ্যমে অ্যান্টি-স্ল্যাপ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। টিবিআইজেও এর সদস্য। তাই তিনি ওই লোকেদের চিনতেন, যাঁরা এই সমস্যার শিকার হয়েছেন। অনেক সময়, শুধু একটি সমালোচনামূলক গুগল রিভিউ বা কড়া ভাষায় লেখা ফেসবুক পোস্টই যথেষ্ট, আর তাতেই সাংবাদিকতা না করেও কেউ কেউ আইনি হুমকির মুখে পড়ে যান।

যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যরা তাদের হাউস অব কমন্সে যা কিছু বলেন না কেন, ”পার্লামেন্টারি প্রিভিলেজ” তাদেরকে আইনি দায় থেকে সুরক্ষা দেয়। তাদের আলোচনা বা তর্কগুলো সরকারি প্রতিবেদনে রেকর্ড করা হয় এবং সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে, যা একটি স্থায়ী রেকর্ড তৈরি করে। ছবি: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট / মারিয়া আংগার
সবমিলিয়ে, লুসি, এড এবং আমি শত শত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিস্তারিতভাবে কথা বলেছি ৩০ জনের বেশি লোকের সঙ্গে। আমাদের মনে হয়েছে, হুমকিগুলো নিয়ে মুখ খোলার কারণে কেউ যেন কোনো ধরনের আইনী ঝুঁকির মধ্যে না পড়েন। আমরা এমন ব্যক্তি ও কোম্পানি নিয়েও কাজ করেছি, যাদের মামলা করার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকেই জানেন না যে, কেবল নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্যই নয়, আপনি যদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো তথ্যও পাঠান, তাহলেও তা মানহানির অভিযোগের আওতায় আসতে পারে। (তবে একই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বা কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে।)
আমরা যে আইনি পরামর্শগুলো পেয়েছি তা প্রকাশ করা যাবে না। তাই জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে অংশগ্রহণকারীদের সাথে আমাদের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময় প্রক্রিয়াকে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিই, কারণ শক্তিশালী জনস্বার্থই আইনি প্রতিরক্ষার ভিত্তি। এরপরও সবধরনের ঝুঁকি দূর করা সম্ভব হয়নি, আর কিছু মানুষ শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে রাজি হননি—যা উভয় পক্ষের জন্যই ছিল হতাশাজনক।
একটি সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কারণ সম্প্রতি তারা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। আরেকটি প্রতিবেদনে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল, কিন্তু তা প্রকাশ করলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি হতো। কিছু সাংবাদিক এ বিষয়ক আলোচনাকে সমর্থন করলেও, তাদের অংশ নিতে বলাটা ছিল নতুন করে তাদের বিপদে ফেলা।
তবুও কিছু সাহসী ব্যক্তি অংশ নেন। এদিকে আমরা জানতাম যে, এমপিদের সাথে কথা বলার সময়ও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অল্প সংখ্যক সংসদ সদস্যকে এসব বিষয়ে অবহিত করাটাও আইনগতভাবে “প্রকাশ করা” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা তাত্ত্বিকভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কিছু আইনি সুরক্ষাও আছে। এক্ষেত্রে এমপিরাই ছিলেন সেই কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও, আমাদের যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে।
আমরা প্রতিটি গল্প পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করেছি। কেননা আমরা নিশ্চিত হতে চেয়েছি যে, সাংবাদিকতার মান নিয়ে সন্দেহ করা বা অন্য কোনো কারণে নয়, গল্পগুলো কেবল আইনি হুমকির কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে, বিলম্বিত হয়েছে বা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আমরা প্রতিটি গল্পের জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলো মূল্যায়ন করেছি এবং একাধিক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে আমাদের সিদ্ধান্ত নথিভুক্ত করেছি। এরপর আমরা একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করি, এমপিদের জন্য একটি ব্রিফিং লিখি এবং সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করার পর চূড়ান্ত অনুমোদন দিই।
আমাদের এখন যা দরকার তা হচ্ছে একটি সংসদীয় বিতর্ক হওয়া।
লুসি ন্যাশ—এনেবলার্স ইমপ্যাক্ট এডিটর

লুসি ন্যাশ, টিবিআইজের এনেবলার্স ইমপ্যাক্ট এডিটর
সংসদীয় বির্তক আয়োজন
যুক্তরাজ্যের সংসদ উত্তপ্ত বিতর্কের জন্য সুপরিচিত। পুরো কাঠামোটাই মুখোমুখি বিতর্ককে উৎসাহিত করার জন্য তৈরি করা। এমনকি সংসদ কক্ষের নকশাতেও আপনি এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন। এখানে দুই পক্ষ মুখোমুখি বসে তর্ক-বির্তক চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্লিটজ হামলার পর সংসদ ভবনের পুনর্গঠনের তদারকিতে ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। শোনা যায়, তিনি নাকি এ ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিন্যাস বজায় রাখার ওপর জোর দেন। (একটি গুজব রয়েছে যে, চার্চিল প্রতিপক্ষের এতটাই কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিলেন, যাতে তাদের থুতু তাঁর চোখে-মুখে এসে পড়ে, তবে টিবিআেইজের কঠোর ফ্যাক্ট-চেকিং প্রক্রিয়ার কারণে এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।)
অনেকেই জানেন না যে ভিন্ন দলের রাজনীতিকরা পর্দার আড়ালে প্রায়ই একসঙ্গে কাজ করেন। স্ল্যাপ মামলা বন্ধ করার প্রচেষ্টা ঠিক এই ধরনের একটি বিষয়, যা রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সংসদ সদস্যদের একত্রিত করে।
আমি সংসদ সদস্য ও পার্লামেন্টের অন্যান্য লোকেদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরিতে বেশ সময় দিয়েছি। পাশাপাশি দুর্নীতি বিরোধী ও দায়িত্বশীল কর ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) সাথে ফলপ্রসূ অংশীদারিত্বও তৈরি করি। যা সাইলেন্সড স্টোরিজ নিয়ে সংসদীয় বিতর্ক আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অপ্রকাশিত কোন গল্পগুলোকে আমরা প্রকাশ করতে যাচ্ছি—এপিপিজির সহায়তায় আমরা তা সংক্ষেপে তুলে ধরি। অপ্রকাশিত গল্পগুলোর বিষয়বস্তু—যা অল্প কিছু লোক জানতো—তাৎক্ষণিকভাবে সবার আগ্রহ সৃষ্টি করে।
এপিপিজির সিনিয়র পার্লামেন্টারি গবেষকদের সাথে যোগাযোগ করে প্রস্তাবিত আলোচনার অনুমোদন পেতে আমরা স্বাক্ষর সংগ্রহ করি। সংসদ সদস্যদের রাজি করাতে একে একে সবাইকে ফোন করি। বিশেষ করে যাঁরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও দুর্নীতিবিরোধী কাজগুলো নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। আমাদের পরিশ্রম কাজে লেগেছে। আলোচনা করার অনুমোদন মিলেছে। তাছাড়া আলোচনা জন্য আমাদের প্রস্তাবিত বিষয়বস্তুকে সবার আগে অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রস্তুতিপর্বে আমরা অনেক কাজ এগিয়ে রেখেছিলাম। তবে ভেবেছিলাম যে, চূড়ান্ত পর্যায়ে আমাদের হাতে অন্তত এক মাস সময় থাকবে। সাংবাদিকতা-সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করার জন্য যা যথেষ্ট। অন্যতম ওই কাজগুলোর মধ্যে ছিল যেসব আইনজীবী, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা হুমকির সাথে জড়িত, তাদের জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।
তবে মন্ত্রীরা এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, সংসদীয় বিতর্কের দিনক্ষণ প্রায় সাথে সাথেই নির্ধারণ করা হলো। আমাদের হাতে ছিল মাত্র এক সপ্তাহ।
টিবিআইজের দলটি দ্রুত কাজে নেমে পড়ে। সময় কম, তাই দ্রুত চিঠি লেখা, জবাব পাওয়া, এবং কী প্রকাশ করা হবে তা চূড়ান্ত করার কাজ এগিয়ে নিতে হলো।
আলোচনার দিনটি ছিল শ্বাসরুদ্ধকর উত্তজনায় পূর্ণ। কিছুটা চাপও ছিল। আমি আর এলেনর পার্লামেন্টে গিয়ে দর্শক গ্যালারিতে বসে সরাসরি পুরো ঘটনাটা দেখছিলাম। আমরা এক একজন মন্ত্রীকে আলোচনার জন্য এক একটি বিষয় ভাগ করে দিয়েছিলাম। গল্পের নেপথ্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলাম যেন তাঁরা গল্পের পেছনের প্রেক্ষাপটকে ভালোভাবে বোঝেন এবং বর্তমান নীতিমালা ও আইনগত কাঠামো সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত থাকেন।
এদিকে টিবিআইজের অফিসকে আমরা রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করি, নাম দিয়েছিলাম “ওয়ার রুম”। যেখানে সাংবাদিকদের একটি দল পার্লামেন্টের আলোচনাগুলো সরাসরি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করছিল। এছাড়া “কোয়ালিফাইড প্রিভিলেজ” নামক আইনগত সুরক্ষার আওতায় সংসদীয় আলোচনার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছি। প্রতিবেদনটি যদি নিরপেক্ষ, সঠিক এবং বিদ্বেষমুক্ত হয়, তাহলে এ আইনটি সাংবাদিকদের মানহানির মামলা থেকে রক্ষা করবে। আর এই সুরক্ষার কারণেই আমরা সংসদ কক্ষে যা ঘটেছিল, তা নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পেরেছি এবং সাইলেন্সড স্টোরিজকে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনতে সক্ষম হয়েছি— যেমনটা হওয়ার কথা ছিল।
এড সিডনস—এনেবলার্স রিপোর্টার

এড সিডনস, টিবিআইজের এনেবলার্স রিপোর্টার
প্রথম বক্তা যখন উঠে দাঁড়ালেন, পুরো ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এক বছরের অনুসন্ধানের ফলাফল নির্ধারণের জন্য পরবর্তী দুই ঘণ্টা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প সফল হবে নাকি হারিয়ে যাবে, তা এখন পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
আইনী হুমকির ভয় দেখিয়ে যে গল্পগুলোকে প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি—মন্ত্রীরা একজন একজন করে দাঁড়িয়ে সে গল্পগুলো পড়ে শোনাচ্ছিলেন। যেমন, মোহামেদ আল-ফায়েদের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের কথা—জীবদ্দশায় যাঁরা ওই লোকের নাম নেওয়ার সাহস পাননি। উঠে এসেছিল সেই সব সংবাদমাধ্যমের কথা, যারা বহু বছর আগে পোস্ট অফিস কেলেঙ্কারি কথা ফাঁস করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদেরও মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় ভয় দেখিয়ে। উঠে আসে যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো সাংবাদিকদের কথা, প্রতিবেদন লেখার আগেই যাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল।
তবে গলায় পশমী স্কার্ফ জড়িয়ে র্যাচেল গিলমোর যখন বিশেষ একটি গল্প পড়ার জন্য উঠে দাঁড়ান, টিবিআইজের অফিসে তখন এক ধরনের শীতল আবহ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি শুরু করেন ক্যারি জোনসের গল্প দিয়ে—একজন সাধারণ নারী। মানহানির মামলাবাজ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিজ্ঞতা জানার জন্য টিবিআইজের পক্ষে থেকে অনেক মাস আগে যাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।
ক্যারি জোনস হয়তো কখনও মানহানির মামলার জগতে পা রাখতেন না। তিনি সাংবাদিক নন, ধনী নন, বা প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তিও নন। কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁর ভাই ড্যানি বুচার আত্মহত্যা করেন—যে কিনা সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন।
তথাকথিত ‘সম্পদ সৃষ্টিকারী’ হিসেবে পরিচিত স্যামুয়েল লিডস। সম্পত্তি বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স করানোর মাধ্যমে লোকেদের তিনি আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের নিশ্চিয়তা দেন, বলেন গিলমোর। মৃত্যুর আগে বুচার ওই কোর্স বাবদ দেওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করেছিলেন। জোনস খোলামেলা ভাবেই স্বীকার করেছিলেন যে তাঁর ভাইয়ের কিছু সমস্যা ছিল—তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছিল এবং ওই কোর্সে যোগদানের আগে তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু বুচারের মৃত্যুর আগের কয়েক মাসের ঘটনাগুলো ঘিরে তৈরি হওয়া কিছু প্রশ্ন তাকে তাড়া করে ফিরছে।
জোনস চিন্তিত ছিলেন: লিডসের কোর্সগুলো এখনও চলছে, কিন্তু তিনি এমন কোনো নিয়ন্ত্রক বা সরকারী সংস্থাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না যেখানে তিনি অভিযোগ জানাতে পারেন। অন্য যাঁরা লিডসের কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন, তাদেরও অনেক গুরুতর অভিযোগ ছিল। কিন্তু জোনস চুপ থাকতে রাজি ছিলেন না। তাই সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়ে এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি সেসব প্রশ্ন তুলে ধরলেন। লিডস ব্যক্তিগতভাবে তাকে কখনো যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়নি।
জোনস একজন আইনজীবীর কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিলেন। চিঠিতে তাকে সতর্ক করা হয়। লেখা হয়, তিনি যদি কথা বলা অব্যাহত রাখেন, তবে তাকে আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়তে হতে পারে। গিলমোর বলতে থাকেন, জোনস একা ছিলেন না, আরও অনেকেই লিডসকে নিয়ে কথা বলার জন্য আইনি চিঠি পেয়েছেন। তবে জোনসের ছিল না কোনো আইনজীবী, যিনি তাঁর পক্ষ নিয়ে জবাব দিতে পারেন। মিডিয়াতে তাঁর কোন বন্ধু ছিল না, যারা তাকে সহায়তা করতে পারেন। তবে বহু বছর খোঁজার পর, অবশেষে তিনি দেখতে পেলেন, কেউ আছে। যারা তাঁর কথা শুনছে এবং তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জোনসের শোক কখনো কমানো যাবে না, কিন্তু এই মুহূর্তে, তাঁর অভিযোগ স্বীকৃতি পেয়েছে। স্যামুয়েল লিডসের এক মুখপাত্র টিবিআইজেকে বলে, আমাদের প্রতিবেদনটি একপাক্ষিক, আর বুচারের মৃত্যু ছিল একটি “দুর্ঘটনা”। তারা আরও বলেন, “আমাদের ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে অপমানজনক প্রচারণা চালানো হয়, তিনি আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে অযৌক্তিক এমনকি অশ্লীল এবং ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণাত্মক প্রকাশনা।” গিলমোর তাঁর বক্তব্যে তাদের প্রতিক্রিয়াগুলোও উল্লেখ করেছিলেন, যা জরুরী ছিল। আমরা তৃপ্তি বোধ করি যে, জোনসের প্রশ্নগুলো—যা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল—তা এখন চিরকাল পার্লামেন্টের রেকর্ডে রয়ে যাবে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিজয় সহজে আসে না। অনেক সময় গল্পগুলো একেবারে হারিয়ে যায়। কিন্তু আপনার শোক বিফলে যায়নি—কাউকে এই প্রমাণটা দেওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মাসব্যাপী কাজের স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি। ক্যারির পরিশ্রম বিফলে যায়নি। “কী সাহসী নারী,” গিলমোর বলেন।
আলোচনার সময় গ্রিন পার্টির এমপি সিয়ান বোরি তৎকালিন বিচার মন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডারকে সরাসরি প্রশ্ন করেন: “মন্ত্রীরা কি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন যাতে একটি শক্তিশালী, বিস্তারিত এবং পরিপূর্ণ আইন প্রণীত হয়, যা [লফেয়ার এবং স্ল্যাপ] প্রতিরোধ করতে পারে?” তবে, সমস্যাটিকে গুরুতর হুমকি হিসেবে মেনে নিলেও, আলেকজান্ডার ওই সংসদ অধিবেশনে বিষয়টির রাতারাতি সমাধান অত্যন্ত জটিল বলে মনে করেন।
যদিও তাঁর এহেন অসম্মতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের পূর্ব-প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিল। কেননা স্টারমার সাংবাদিকতাকে “আমাদের গণতন্ত্রের রক্ত প্রবাহ” হিসেবে উল্লেখ করে তা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গার্ডিয়ানের এক কলামে স্টারমার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন যে তিনি [স্ল্যাপ] ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু, আলেকজান্ডারের মন্তব্যের পর, এই প্রতিশ্রুতি কেবল মৌখিক প্রতিশ্রুতি বলে মনে হয়েছিল।
এই সংসদীয় বিতর্কের পর, আলেকজান্ডারকে সরকারের অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন আইন মন্ত্রী হন স্যাকম্যান। আমরা আশা করি তিনি এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। যদিও আমাদের প্রকল্পটি এখনও শেষ হয়নি।
দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমএকটি স্বাধীন, অলাভজনক সংস্থা যা ক্ষমতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। ২০১০ সালে ডেভিড এবং এলেইন পটারের হাত ধরে এর সূচনা। আমরা গভীর অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে বড় ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করি যা সত্য উদঘাটন করে। আমরা এমন গল্পগুলো বলি যা গুরুত্বপূর্ণ।